Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য ব্যাটম্যান সিনেমার অজানা যত দিক

ব্যাটম্যান, সুপারহিরো জগতে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এবং প্রগাঢ় এক চরিত্রের নাম। ১৯৪০ সালের দিকে কমিক বইয়ের পাতায় অভিষেক ঘটলেও ষাটের দশকে সেলুলয়েডের পর্দায় বিচরণ ঘটে তার। এবং তা সুদূরপ্রসারী হয় নব্বইয়ের দশকে এসে। ততদিনে ব্যাটম্যানের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। দর্শকপ্রিয়তায় বার বার এসেছে ট্রিলজি, বার বার হয়েছে ব্যাটম্যান-কেন্দ্রিক সিনেমার রিবুট। ভক্তদের চাপে মুখ্য-চরিত্রের মুখ বদল করার মতো ঘটনা ঘটেছে বহুবার। ব্যাটম্যান চরিত্রে পর্দা কাঁপিয়ে গেছেন মাইকেল কিটন, ক্রিশ্চিয়ান বেল, বা বেন অ্যাফ্লেকের মতো শক্তিমান অভিনেতারা। পরিচালক হিসেবে ব্যাটম্যানকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী গড়েপিটে নিয়েছেন টিম বার্টন, ক্রিস্টোফার নোলান বা জ্যাক স্নাইডাররা। সর্বশেষ ব্যাটম্যান চরিত্রে অভিনেতা রবার্ট প্যাটিনসনকে নিয়ে বড় একটা দাও মেরেছেন পরিচালক ম্যাট রিভস। ২০২২ সালে উপহার দিয়েছেন ‘দ্য ব্যাটম্যান’ সিনেমা। পুরো বিশ্ব ভুগেছে প্যাটিনসনের ব্যাটম্যান জ্বরে। দর্শক, সমালোচক, কিংবা বক্স-অফিস সবজায়গাতেই আলোর মুখ দেখেছে এই ছায়াছবি। দ্য ব্যাটম্যান সিনেমার অজানা কিছু দিক নিয়েই আজকে আলোচনা।

The Batman (2022); Image Source : Warner Bros.

বেন অ্যাফ্লেকের ব্যাটম্যান

প্রথমদিকে প্রোডাকশন হাউজের পরিকল্পনা ছিল- দ্য ব্যাটম্যান মুভি DCEU (DC Extended Universe) এর অংশ হবে। মূল চরিত্রে, লেখক, এবং পরিচালক হিসেবে DCEU-এর ব্যাটম্যান বেন অ্যাফ্লেকেরই থাকার কথা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হওয়ায় সর্বকালের অন্যতম সেরা সুপারহিরোকে নিয়ে আর সামনে বাড়তে পারেননি অ্যাফ্লেক। তখন ব্যাটম্যানের এই প্রজেক্ট ওয়ার্নার ব্রাদার্স বুঝিয়ে দেন মার্কিন পরিচালক ম্যাট রিভসের হাতে। শুরুতে ডেনিস ভিলনুভ, জর্জ মিলার, রিডলি স্কট, ম্যাট রস, অনেকেরই পরিচালক হিসেবে থাকার কথা থাকলেও শেষমেশ ম্যাট রিভসকেই বেছে নেওয়া হয়। এর আগে যিনি বিশ্ববাসীকে ‘Cloverfield’, ‘Let Me In’ ‘War for the Planet of the Apes’, ‘Dawn of the Planet of the Apes’ এর মতো জনপ্রিয় এবং সমালোচক প্রশংসিত সিনেমা উপহার দিয়েছেন। রিভসও প্রথমে এই মুভিকে DCEU-এর একটি অংশ হিসেবে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ ‘ক্রিয়েটিভ ফ্রিডম’-এর অভাবে রিভস এই ব্যাটম্যানকে আলাদা এক ইউনিভার্সে নিয়ে আসার প্রস্তাব রাখেন ওয়ার্নার ব্রাদার্সের কাছে। ওদিকে জ্যাক স্নাইডারের সাথেও সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছিল ওয়ার্নার ব্রাদার্সের। আবার, প্রোডাকশন হাউজ চাচ্ছিল ডিসির মাল্টিভার্স ধারণাকে সিনেমায় নিয়ে আসতে। তাই, গ্রিন সিগনাল পেয়ে যান রিভস। DCEU-এর (ব্যাটফ্লেক) অল্টারনেট ইউনিভার্স হিসেবে রবার্ট প্যাটিনসনের ইউনিভার্সকে ‘Earth – 2‘ নামকরণ করা হয়েছে।

বেন অ্যাফ্লেক; Image Source : Alpha Coders.

সিনেমার অনুপ্রেরণা

রবার্ট প্যাটিনসনের মাধ্যমে ব্যাটম্যানকে নতুন রূপে প্রকাশ করা বড় এক চ্যালেঞ্জ ছিল। সেজন্য রিভসকে প্রচুর কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন ব্যাটম্যানের কিছু কমিক বুক এবং গোটাকতক বিখ্যাত হলিউড মুভির। কমিক বইয়ের মধ্যে Batman: The Long Halloween, Batman Noir: Dark Victory, Batman: Year One, Batman: Zero Year, Batman: Earth One, Batman: No Man’s Land, Batman: Hush ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

দ্য ব্যাটম্যান মুভি ব্যাটম্যানের যে যে কমিক থেকে অ্নুপ্রাণিত; Image Source : DC Comics.

সিনেমার কথা বললে ‘Mind Hunter’ (1995), ‘The French Connection’ (1971), ‘Chinatown’ (1974), ‘All the President’s Men’ (1976) ইত্যাদি থেকে তিনি অনুপ্রেরণা নিয়েছেন।

দ্য ব্যাটম্যান সিনেমা নির্মাণে ম্যাট রিভস যেসব সিনেমার অনুপ্রেরণা নিয়েছেন; Image Source : IMDb.

নোলান ও প্যাটিনসন

ব্যাটম্যান চরিত্রের জন্য অডিশন দিতে গিয়ে প্যাটিনসনকে দারুণ বেগ পোহাতে হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘Batman & Robin’ সিনেমায় অভিনয় করা জর্জ ক্লুনির ব্যাটস্যুটকে ‘অডিশন টেস্ট স্যুট’ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন প্যাটিনসন। অধিক পুরুত্বের এই ব্যাটস্যুট মোটামুটি প্রায় ৮ ঘণ্টা পরে থাকতে হয়েছিল তাকে। স্বাভাবিকভাবেই গরমে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার।

জর্জ ক্লুনির ব্যাটস্যুট; Image Source : Warner Bros.

অডিশনের সময়ে প্যাটিনসন আবার ক্রিস্টোফার নোলানের Tenet (2020) মুভির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাই, অডিশনে যাওয়ার সময় প্যাটিনসন নোলানকে পারিবারিক সমস্যার বাহানা দিয়ে কিছু সময় চেয়ে নিতেন। কিন্তু ওয়ার্নার ব্রাদার্স এবং নোলানের মধ্যে বেশ দহরম-মহরম থাকায়, নোলান প্যাটিনসনের অডিশনের খবর জানতে পেরেছিলেন। প্যাটিনসনকে অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ পছন্দ করতেন নোলান। সেজন্য তিনি তাকে ছাড়ই দিয়েছেন বলা যায়। ব্যাটম্যান চরিত্রে নির্বাচিত হওয়ার পর প্যাটিনসনকে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন নোলান। প্যাটিনসন ছাড়াও নিকোলাস হল্ট, অ্যারমি হ্যামার, অ্যারন টেইলার জনসনকে ব্যাটম্যান চরিত্রের শর্ট লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

ক্রিস্টোফার নোলান (বাঁয়ে) ও রবার্ট প্যাটিনসন; Image Source : Warner Bros.

ব্রুস ওয়েনের অনুপ্রেরণা

কয়েক বছর ধরেই ‘টোয়াইলাইট’-এর রোমান্টিক ইমেজের খোলস ভেঙে চুরে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্যাটিনসন। বিভিন্ন ধরনের ছবিতে বৈচিত্র্যময় সব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘দ্য লাইটহাউজ’ সিনেমা ডার্ক শেডের চরিত্রে অভিনয় করায় দারুণ প্রশংসায় ভাসেন তিনি।
দ্য ব্যাটম্যান সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখক, পরিচালক ম্যাট রিভস প্যাটিনসনকে মাথায় রেখেই মুভির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। কারণ, Goodtime (2017) মুভিতে প্যাটিনসনের অভিনয় দেখে দারুণ অভিভূত হন রিভস। ব্রুস ওয়েনের গতানুগতিক নারী-ফুর্তিবাজ চরিত্র থেকে বের হয়ে ডিটেকটিভ ব্রুসের চরিত্রকে গড়ে তোলেন তিনি। এই চরিত্রের ভাবমূর্তি তিনি সাজিয়েছিলেন নিরভানা ব্যান্ডের গায়ক কার্ট কবাইনের অনুসারে। প্রয়াত এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে সিনেমায় নিরভানা ব্যান্ডের ‘Nevermind’ অ্যালবামের ‘Something in the Way’ গানটি যুক্ত করা হয়েছে। গানটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯১ সালে। দ্য ব্যাটম্যান রিলিজের পর গানটি বুস্ট করে ৭৩৪% হারে। এক লাফে স্পটিফাইয়ের ‘Daily USA Top 50’ গানের মধ্যে পাঁচ নম্বরে জায়গা করে নেয় সেটি।

নিরভানা ব্যান্ডের গায়ক কার্ট কোবেইন; Image Source : Frank Micelotta/Getty Images.

পেঙ্গুইন প্রসঙ্গে

পেঙ্গুইন চরিত্রটি লেখার সময় পরিচালক ‘দ্য গডফাদার’-এর ফ্রেডো চরিত্র থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। প্রস্থেটিক মেকআপে সেরা চাল দিয়েছেন কলিন ফেরেল। প্রথম দেখায় পেঙ্গুইনের অবয়ব দেখে কেউই আঁচ করতে পারবে না, মেকআপের আড়ালে যে কলিন ফেরেল লুকিয়ে আছেন। যেন কমিক বইয়ের রঙিন পাতা থেকে সেলুলয়েডের পর্দায় জীবিত হয়েছেন পেঙ্গুইন। তবে চেহারায় যত বেশি পরিমাণ পরিবর্তন, তত বেশি খাটুনি। এজন্য ছয় প্রকার আলাদা আলাদা প্রস্থেটিক মেকআপ বসানো হয়েছিল। ছয় ঘণ্টা পর শেষ হতো মেকআপের কাজ। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে কলিনকে চেয়ারে বসে থাকতে হতো। তবে, পেঙ্গুইনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য প্রথমে প্রস্তাব দেওয়া হয় মার্কিন অভিনেতা জোনাহ হিলকে। কিন্তু তিনি রিডলারের চরিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারে নাছোড়বান্দা ছিলেন। এজন্য তিনি পেঙ্গুইনের রোলে অভিনয়ের কথা মানা করে দেন।

পেঙ্গুইন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলিন ফেরেল; Image Source : Variety.

রিডলার চরিত্রের অনুপ্রেরণা

সিনেমায় রিডলারের চরিত্র বোনা হয়েছে ১৯৬০ দশকের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ‘Zodiac‘ এর উপর ভিত্তি করে। ১৯৬৮-৬৯ সাল পর্যন্ত সরাসরি মোট পাঁচটি হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুর্ধর্ষ এই খুনি ছিল সকলের ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিটি খুনের পর সে একটা ধাঁধা রেখে যেত। স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সারাজীবনে সে সর্বমোট ৩৭ জনের মতো মানুষ খুন করেছে। পরবর্তীতে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

১৯৬০ এর দশকের কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার জোডিয়াকের কল্পিত মুখাবয়ব; Image Source : Sunday World.

রিডলারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমেরিকান অভিনেতা পল ডানো। নিজ চরিত্রে ঢুকে যাওয়ার জন্য তাকে সিরিয়াল কিলিংয়ের সাথে সংযুক্ত বহু বিষয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। একসময় এসব বিষয় তাকে মানসিকভাবে এতটাই পীড়া দিচ্ছিল যে, একা একা আর পড়তে সাহস পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি তা কোলাহলপূর্ণ স্থানে পড়তে শুরু করেন। রিডলার মুখে যে মাস্ক পরেছিল, সেটা মূলত মার্কিন সেনাবাহিনীর ‘Winter Combat Mask’, যা মুভির কস্টিউম ডিজাইনার জ্যাকলিন ডোরান ইবে (eBay) থেকে কিনেছিলেন।

রিডলার চরিত্রে পল ডানো; Image Source : Warner Bros.

জোকারের উপস্থিতি

পুরো সিনেমায় ব্যাটম্যানের ভিলেন প্যাঙ্গুইন, রিডলারের সরব উপস্থিতি থাকলেও জোকারেরও অল্প সময় স্ক্রিনে থাকার কথা ছিল। আইরিশ অভিনেতা ব্যারি কোঘান জোকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যেহেতু ব্যাটম্যানের সাথে সাথে জোকারের ফ্যান্ডমও বেশ বড়, রিভস এই মুভিকে রিডলারকেন্দ্রিক রাখতে চেয়েছিলেন। ফলে জোকারের দৃশ্য মুভি থেকে ছাটাই করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে তা অনলাইন রিলিজ দেওয়া হলে সেটা ব্যাপক সাড়া ফেলে।

দ্য ব্যাটম্যান মুভিতে জোকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ব্যারি কোঘান; Image Source : Warner Bros.

রিডলারের প্রচেষ্টা

সিনেমার একসময়ে রিডলার আর ব্যাটম্যানের ভিডিও কলে কথা বলার দৃশ্য রয়েছে। সেই ভিডিও কল পুরোপুরি বাস্তব হিসেবে উপস্থাপনের জন্য পল ডানোকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে। মনমতো আউটপুট পাচ্ছিলেন না বলে প্রায় ২০০ বারের মতো শট নিয়েছিলেন তিনি। প্রতিক্ষেত্রেই তিনি আলাদা আলাদা ভঙ্গি ব্যবহার করেছিলেন।

দ্য ব্যাটম্যান সিনেমার শুটিংয়ে ম্যাট রিভস; Image Source : Warner Bros.

সিগারেট বিভ্রাট

কমিক বুক এবং ব্যাটম্যান অ্যানিমেশন সিরিজে প্রায়সময়ই পেঙ্গুইনকে সিগারেট হাতে দেখা গেছে। ম্যাট রিভসও চেয়েছিলেন সিনেমায় পেঙ্গুইনকে ধূমপান করতে দেখা যাবে। কিন্তু ওয়ার্নার ব্রাদার্স কোনোভাবেই ধূমপানকে প্রমোট করতে চাচ্ছিল না। এজন্য রিভসকে সিগারেটের ব্যাপারে তারা সাফ মানা করে দিয়েছিল। ধূমপান করতে না দেওয়া হোক, অন্তত পেঙ্গুইন হাতে সিগারেট ধরে রাখুক- এমনটা চাচ্ছিলেন রিভস। কিন্তু শেষমেশ সে ব্যাপারেও প্রোডাকশন হাউজের থেকে গ্রিন সিগনাল পাননি তিনি।

সিগারেট হাতে কমিকবুকে পেঙ্গুইন; Image Source : DC Comics.

টিম ড্রেক

সিনেমার শুরুতেই ব্যাটম্যানকে বিখ্যাত সেই ডায়লগ “I’m vengeance” বলে গোথামের কিছু ছিঁচকে চোর-গুণ্ডাকে ধবল ধোলাই করতে দেখা যায়। এই ডায়লগের প্রস্তাব রাখেন প্যাটিনসন নিজেই, এবং তিনি এর ধারণা পান ব্যাটম্যানের বিখ্যাত অ্যানিমেশনের সিরিজ থেকে। অপরাধীদের দলে নবাগত এক সদস্যকে লক্ষ্য করা যায়, যে মূলত ডিসির টিভি সিরিজ ‘Titans’-এ টিম ড্রেকের চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা জে লাইকারগো।

দ্য ব্যাটম্যান মুভিতে জে লাইকারগো; Image Source : Warner Bros.

ব্যাটস্যুট ও ব্যাটমোবাইল

দীর্ঘ এক বছরের প্রচেষ্টায় ব্যাটস্যুট ডিজাইন করেন সুপারভাইজর ডেভ ক্রসম্যান এবং কনসেপ্ট আর্টিস্ট গ্লিন ডিলন। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল এমন ব্যাটস্যুট বানানো, যা দেখতে আসল ব্যাটসুটের মতোই লাগবে। দেখলে যাতে মনে হয়, সাধারণ রক্তমাংসের কোনো মানুষই তা বানিয়েছে। Taxi Driver সিনেমার ট্র‍্যাভিস বিকেলের ফায়ারআর্ম থেকে ব্যাটস্যুটের ফায়ারআর্মের অনুপ্রেরণা এসেছে। স্যুটে যুক্ত করা হয়েছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম। এছাড়াও এই স্যুট নির্মাণে চিত্রশিল্পী লি বার্মিহোর ব্যাটম্যান ড্রয়িং, ষাটের দশকের অ্যাডাম ওয়েস্টের ব্যাটম্যান টিভি শো, ‘Batman: The Legend of Dark Knight’ কমিক বুকের অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। বহু প্রচেষ্টার পর আইকনিক এক ব্যাটস্যুট গায়ে চাপিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন রবার্ট প্যাটিনসন। ব্যাটমোবাইলের নকশা করেছেন অ্যাশ থ্রপ এবং ম্যাট রিভস নিজে। ১৯৮৩ সালের Christine মুভির গাড়ি থেকেও অনুপ্রেরণা নেয়া হয়েছে। 

প্যাটিনসন বলেন,

“ছবিতে ব্যবহৃত ব্যাটস্যুটের ওজন ছিল প্রায় সাড়ে ২৭ কেজি। তবুও এই স্যুট উপভোগই করেছি। স্বস্তি পেয়েছি। একটু ভারী হলেও স্যুটটা দারুণভাবে ডিজাইন করা। পরে থাকতে কষ্ট হয় না।”

রবার্ট প্যাটিনসনের ব্যাটস্যুট; Image Source : Warner Bros.

 

বক্স-অফিস ও অন্যান্য

সিনেমা বিষয়ক বিভিন্ন মুভি সাইটের তথ্যমতে- দ্য ব্যাটম্যান সিনেমার বাজেট ছিল ১৮৫-২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। box-office mojo সাইট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মুভিটি বক্স-অফিসে আয় করেছে ৭৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রযোজক এবং হল মালিকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বক্স অফিসে হয়েছে সুপারহিট। এপ্রিলের ১৮ তারিখ অনলাইন স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম HBO Max-এ মুক্তির পরে সেখানেও আগুন ঝরায় সিনেমাটি। এক সপ্তাহে ৪.১ মিলিয়ন ভিউয়ারশিপ নিয়ে রেকর্ড তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে মুভিটি। প্রথম সপ্তাহের ভিউয়ারশিপে পেছনে ফেলেছে ‘The Suicide Squad’ (৩.৫ মিলিয়ন), ‘Wonder Woman 1984’ (৩.২ মিলিয়ন), ‘The Matrix Resurrections’ (৩.২ মিলিয়ন), ‘Dune’ (২.৩ মিলিয়ন), এবং ‘Zack Snyder’s Justice League’ (২.২ মিলিয়ন)-কে। অল্পের জন্য ‘Mortal Combat’ (৪.২ মিলিয়ন)-এর রেকর্ড ভাঙতে পারেনি ‘The Batman’।

সমালোচক ও দর্শকমহলেও ভূয়সী প্রশংসায় ভেসেছে এই ছবি। মুভিটির বর্তমান IMDb রেটিং ৮/১০, রটেন টম্যাটোজে ৮৫% ফ্রেশ, এবং মেটাক্রিটিকে ৭২% মেটাস্কোর।

ব্যাটমোবাইলের সাথে ব্যাটম্যান; Image Source : Warner Bros.

 

সিনেমার ভবিষ্যৎ

ওয়ার্নার ব্রোস দ্য ব্যাটম্যান মুভির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আশাবাদী। যে-কারণে তারা এই ব্যাটম্যানকে কেন্দ্র করে আলাদা এক ইউনিভার্স তৈরির চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে এর সিকুয়েলের ঘোষণা এসেছে, যা ২০২৪ সালের দিকে মুক্তি পেতে পারে। সম্ভবত প্রোডাকশন হাউজের নজর আরেকটি ব্যাটম্যান ট্রিলজির দিকে। তাই সামনের সিনেমায় ব্যাটম্যানের আরও দুর্ধর্ষ কিছু খলনায়ক আসতে যাচ্ছে। HBO Max-এ দ্য ব্যাটম্যান মুভির স্পিনঅফ হিসেবে পেঙ্গুইনকে নিয়ে আলাদা সিরিজ নির্মাণ হবে বলে জানানো হয়েছে। স্পিনঅফ সিরিজ Gotham PD আসার কথা থাকলেও, এর সম্ভাবনা বাতিল করেছেন রিভস। এর বদলে Arkham সিরিজ আসতে পারে, যা Arkham Asylum এর আলাদা আলাদা ভিলেনের উপর ফোকাস করবে।

কোনো নির্দিষ্ট সিনেমার ছাঁচে ‘দ্য ব্যাটম্যান’-কে ফেলা কঠিন। ম্যাট রিভস ছবিটি সাজিয়েছেন নিও-নোয়ার, ডিটেকটিভ, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের উপাদানে, যা গড়পড়তা সুপারহিরো ছবির একেবারে বিপরীত।

Related Articles