ইন্ডাস্ট্রির দিকে একটা আয়না ধরে সেটার পুরো প্রতিবিম্ব পাওয়াটা আসলে বেশিরভাগ সময়েই অসম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি এখানে যেটা পাবেন, সেটা হলো একটা অস্পষ্ট কিংবা অস্বচ্ছ প্রতিবিম্ব। কিন্তু, সৃজিত মুখার্জীর ‘ডিরেক্টরিয়াল ডেব্যু’ অটোগ্রাফ কিন্তু আপনাকে এক্ষেত্রে মোটেও নিরাশ করবে না। দুর্দান্ত সব গান আর দারুণ কিছু ক্লিপের মাধ্যমে এটা বরং দর্শককে এটা ভাবাতে বাধ্য করবে – মনোপলি আর আকাশচুম্বি আকাঙ্খার পৃথিবীতে সাফল্য কীভাবে একটা মানুষের নৈতিক অবক্ষয় ঘটাতে পারে। ‘অটোগ্রাফ’ ইতোমধ্যেই পার করে ফেলেছে এগারো বছরের বেশি সময়। এই এগারো বছরে ‘অটোগ্রাফ’-এর প্রতি আবেদন কিন্তু মানুষের একটুও কমেনি।
সিনেমাটি আসলে সিনেমা জগতেরই এক ‘সুপারস্টার’ অরুণ চ্যাটার্জীর জীবনকাহিনী নিয়ে। চরিত্রটি অবশ্যই বাস্তব কোনো চরিত্র নয়, সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটি চরিত্র। সিনেমাতে এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়। গল্পের চরিত্রের পদবী নির্ধারণে বাস্তব অভিনেতার পদবীর যে মিল আমরা দেখতে পাই সেটা অবশ্য আমাদের সামনে এই প্রশ্ন এনে তুলে ধরে, অরুণের সাথে প্রসেনজিতের আসলে গাম্ভীর্যগত পার্থক্য কতটুকু। কেননা সিনেমার মধ্যে অরুণের ইন্ডাস্ট্রিতে যে দুর্দান্ত একচ্ছত্র আধিপত্য, বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে তো প্রসেনজিতেরও একটা সময়ে তাই-ই ছিল। আবার সিনেমার ভেতরেই অরুণের বলা সেই কথাটা-
“আমিই অরুণ চ্যাটার্জী, আমিই ইন্ডাস্ট্রি”
সেটা তো আসলে প্রসেনজিতকেই নির্দেশ করে। একটা সময়ে বাংলা সিনেমাকে তো প্রসেনজিত একাই টেনে নিয়ে গেছেন, বাংলা সিনেমার ইন্ডাস্ট্রি বলতে তো একসময় প্রসেনজিতই বুঝতো সবাই।
সে যাক, সিনেমার গল্পে ফিরে যাক। সিনেমাতে যে কয়টি চরিত্র মুখ্য চরিত্র হিসেবে কাজ করেছে তার মধ্যে একটি হল ‘শুভ’। শুভ পেশায় একজন নতুন পরিচালক যার একটা সিনেমাও তখন অব্দি মুক্তি পায়নি। ‘শুভ’ চরিত্রে সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। সিনেমার শুরুতেই দেখা যায়, আনকোরা পরিচালক শুভ’র সিনেমাতে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যান সুপারস্টার অরুণ। শুধু রাজিই নয়, একটা সময়ে তিনি সিনেমাতে লগ্নি করতেও পিছপা হননা। বনে যান সিনেমাটির প্রডিউসার। তবে আপনি যদি ভেবে থাকেন অরুণের এই অতি উৎসাহের পিছে উদ্দেশ্য হিসেবে আছে এক নতুন পরিচালককে সাহায্য করার প্রয়াস তাহলে কিন্তু একদমই ভুল করবেন। অরুণ চক্রবর্তী মূলত শুভ’র সিনেমা ‘আজকের নায়ক’-এ একজন ঘোস্ট-ডিরেক্টর হিসেবে থাকতে চান এবং পুরো ইন্ডাস্ট্রিকে দেখাতে চান- তিনি একাই একটা সিনেমা বানানোর সক্ষমতা রাখেন। আর সিনেমার এই পর্যায়েই দৃশ্যে আবির্ভাব ঘটে ‘শ্রীনন্দিতা’র। সিনেমাতে শ্রীনন্দিতা মূলত পরিচালক শুভর লিভ-ইন পার্টনার, এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন নন্দনা সেন। তবে অরুণ-নন্দিতা-শুভ’র এই ত্রিমুখী সহযোগিতায় ভাঙন ঘটে একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনার মাধ্যমে। এই ঘটনার মাধ্যমেই মূলত দেখানো হয়েছে, সাফল্য একটা মানুষকে ঠিক কতটা মরিয়া করে তুলতে পারে।
সাধারণের কেচ্ছা
বাংলার বেশিরভাগ সিনেমাতে যেটা দেখা যায়, সিনেমার পটভূমি আর সংলাপ সাধারণ দর্শকের জীবনযাত্রার থেকে একটু উপরে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু ‘অটোগ্রাফ’ এক্ষেত্রে একদমই আলাদা। শ্রীনন্দিতা আর শুভ’র সাথে তাঁর নিজেদের বন্ধুদের কথোপকথন এতটাই সাধারণ যে এই প্যাটার্নটা কোলকাতার যেকোন রাস্তাঘাটে বসে থাকা যুগলের মধ্যেই দেখা যায়। এই যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে ছুঁয়ে ফেলা, সাধারণ মানুষ যেন সিনেমাতে নিজেকে মেলাতে পারে- এদিক থেকেও ‘অটোগ্রাফ’ কেও লেটারমার্ক দিতে হবে। শুধু তাই না, সিনেমাকে আরো বেশি প্রাণচঞ্চল ও সাধারণের করে তোলার জন্যে পরিচালক এখানে চরিত্রগুলির মধ্যে ইংরেজি সংলাপেরও আবাহন ঘটিয়েছেন, সিনেমার চরিত্রেরা নিজেদের ‘তুই’ বলেও সম্বোধন করছেন। সিনেমার এই সহজবোধ্যতাই মূলত সিনেমাটিকে আপামর বাঙালির দোরগোড়ায় পৌছে দিতে পেরেছে, সিনেমাটিকে করেছে বাংলা সিনেমার যুগ পরিবর্তনের পথিকৃৎ।
পর্দার সুপারস্টার, বাইরেরও
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সিনেমাতে যিনি একজন সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার। আদতে বাস্তব জীবনেও কি তাই নন? আর এই সুপারস্টারদের দৈনন্দিন জীবনের একটা ‘সমস্যা’কেও কিন্তু সিনেমাতে তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাতে। প্রসেনজিৎ এমনভাবে ভাবেন কি না, বলা মুশকিল; কিন্তু অরুণ কিন্তু নিজের এই তারকাবহুল জীবন নিয়ে যথেষ্ট আফসোস বোধ করেন। সিনেমাতেই যেমনটা দেখা যায়, পাঁচ তারকা হোটেলের ডিনার পার্টির চাইতে একটা টং দোকানের রাতের খাবার অরুণকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় পুরনো দিনে। এই যে তারকাজীবনে থেকে সাধারণের প্রতি সম্মোহন, খুব সম্ভবত এই ব্যাপারটা অনেক তারকারই জীবনের একটি আক্ষেপ হিসেবেই মেলানো যাবে। আর অতি অবশ্যই, সাফল্যমণ্ডিত জীবনে অরুণের একাকীত্বও ছুঁয়ে যাবে দর্শককে। আর তাই অনুপম রায় যখন গেয়ে ওঠেন,
“যেটা ছিল না ছিল না সেটা না পাওয়াই থাক, সব পেলে নষ্ট জীবন…”
তখন যেন সিনেমার পর্দায় থাকা অরুণের সব না পাওয়াকেই দর্শক মিলিয়ে ফেলে নিজের জীবনের সব অপ্রাপ্তির সাথে। আর সত্যি বলতে, এমন ক্যারিশম্যাটিক একটা চরিত্র মনে হয় না প্রসেনজিৎ ছাড়া টলিউডের আর কেউ করতে পারত।
নতুন ছবি, নতুন ছবিয়াল
ইন্দ্রনীলের চরিত্রটি এই সিনেমাতে এই নতুন ছবিয়ালেরই। এমনিতে ইন্দ্রনীল বাস্তব জীবনে দুর্দান্ত একজন অভিনেতা। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি নিজের স্বভাবতজাত অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন কেড়ে নিয়েছেন। তার অভিনীত আংশুমানের ছবি ভারতের ন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালের মতো জায়গাতে নির্বাচিত হয়েছিল। এই সিনেমাতে ইন্দ্রনীলের চরিত্রটি ঠিক এই ইন্ডাস্ট্রিকে ঘিরেই। এখানে তিনি এমন একজন মরিয়া পরিচালক, যিনি নিজের মেধার স্বাক্ষর রাখতে প্রস্তুত; কিন্তু দৌঁড়ে বেড়াচ্ছেন স্রেফ একটা সুযোগের সন্ধানে। তবে সাফল্য পাওয়ার পর অবশ্য ইন্দ্রনীল আগের চাইতে একটু বেশিই অহমিকায় ভুগতে থাকেন, আর এখানেই ভিন্নতা ধরা পড়ে নন্দিতার মধ্যে। সুপারস্টার অরুণের বিপরীতে অভিনয় করলেও নন্দিতার মধ্যে অহমিকার ছিঁটেফোটাও দেখা যায় না; তিনি বরং এসব থেকে ইন্দ্রনীলকেও দূরে থাকতে পরামর্শ দেন। অবশ্য সিনেমাতে ইন্দ্রনীলের অভিনীত চরিত্র ‘শুভ’কে এজন্যে চড়া মাশুল দিতে হয়, কিন্তু তবুও নিজের ভুল থেকে চরিত্রটি কিছু শিখতে পারে কি না, সেটা সিনেমা শেষে পরিচালক পরিষ্কার করেননি। সম্ভবত দর্শকের ভাবনার দুয়ার খোলা রাখতেই এমন একটা সমাপ্তি টানা হয়েছে সিনেমাতে।
সৃজিত-অনুপম জুটি ও একটা ‘অটোগ্রাফ’
‘অটোগ্রাফ’ মুক্তির আগে সৃজিত কিংবা অনুপম দুজনেরই ঠাঁই ছিল ব্যাঙ্গালুরু। সৃজিত সেখানে চাকরি করতেন বিজনেস অ্যানালিস্ট হিসেবে, আর অনুপমও ছিলেন পুরোদস্তুর কর্পোরেট ইঞ্জিনিয়ার। বন্ধুত্ব আর আগ্রহের সুবাদে দুই বন্ধুই মাঝেমধ্যে মেতে উঠতেন চায়ের কাপের আড্ডায়। দু’জনেরই তখন পছন্দের জায়গা সিনেমা ও গান। স্বাভাবিকভাবেই আড্ডার অনেকটা জুড়ে থাকত সিনেমা আর গানই। কিন্তু সিনেমা আর গানে দু’জনের আগ্রহ এতটাই বেশি ছিল যে তা শুধু আড্ডাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাচ্ছিল না। এদিকে কর্পোরেট জগতে দুজনই হাঁপিয়ে উঠছিলেন। আর এরপরই একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, যেটা ভালবাসেন সেটাই করবেন। ব্যাঙ্গালুরুর পাট চুকিয়ে দিয়ে দুজনই চলে এলেন কোলকাতায়। সৃজিত মুখার্জী এরপরই বানিয়ে ফেললেন ‘অটোগ্রাফ’, বন্ধুর সিনেমায় গান বাধলেন অনুপম রায়ও। বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এই সিনেমার মাধ্যমে তাই শুধু একটা কালজয়ী সিনেমাই পায়নি, বরং সাথে পেয়েছে সৃজিত-অনুপমের মতো পরিচালক-গায়ককেও।
সৃজিত-প্রসেনজিৎ জুটির শুরু
একটা সফল সিনেমা উপহার দিতে হলে পরিচালকের সাথে অভিনেতা-অভিনেত্রীর রসায়নটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আর এই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কাজটাই সহজসাধ্য হয়েছে সৃজিত-প্রসেনজিতের মাঝে। অভিনেতা আর পরিচালকের মাঝে এমন দুর্দান্ত জুটি সচরাচর দেখা যায়না। আর এই জুটির প্রথম সিনেমাই কিন্তু ছিল ‘অটোগ্রাফ’। ‘অটোগ্রাফ’ এর শুরুতে প্রসেনজিতের সাথে সৃজিতের দেখা হয়েছিল অনেকটা নাটকীয়ভাবেই। নিজের ফেসবুক একাউন্টেই এক পোস্টে সেই গল্পটা শেয়ার করেছিলেন প্রসেনজিৎ। মূলত সৃজিত যখন চিন্তা করলেন সিনেমা বানাবেন, তখনই ঠিক করে নিয়েছিলেন নিজের প্রথম সিনেমা বানাবেন প্রসেনজিৎকে নিয়েই। টলিউডে প্রসেনজিৎ তখন ইন্ডাস্ট্রির সমতুল্য। আর সৃজিত তখন সদ্য ব্যাঙ্গালুরু থেকে কোলকাতায় ফিরেছেন সিনেমা তৈরির স্বপ্ন নিয়ে। সেই স্বপ্নের তাড়নাতেই কি না একদিন সৃজিত হাজির হয়ে যান প্রসেনজিতের শ্যুটিং সেটে। সৃজিতের সাথে প্রসেনজিতের পরিচয়টা তখন করিয়ে দেন নন্দনা সেন। প্রসেনজিৎও শ্যুটিং শেষে শুনলেন একটা ছেলে তার সাথে দেখা করতে এসেছে। সৃজিতের কথা শুনে তাই শ্যুটিং শেষে সৃজিতের সাথে দেখা করতে চাইলেন তিনি। তবে সৃজিত কিন্তু তখন প্রসেনজিৎকে ‘অটোগ্রাফ’-এর কথা বলেননি। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন উত্তম কুমার অভিনীত ‘নায়ক’ রিমেকের কথা। শেষ অব্দি অবশ্য সৃজিত এই নাটুকে পরিচয়টাকেই প্লট ধরে ‘অটোগ্রাফ’ বানিয়েছেন। সে যা হোক, প্রসেনজিতের কিন্তু প্রথমবারেই সৃজিতকে ভাল লেগে যায়। সৃজিতের মধ্যে নাকি তিনি দেখেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের ছায়া। আর তাই দেরি না করে সৃজিতকে নিয়ে যান প্রযোজকের কাছে। নিজের ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন,
“ওকে দেখেই কেন যেন খুব sincere মনে হলো, তাই বাড়ি নিয়ে এলাম, তারপর শুনলাম script, সৃজিত এর script লেখার ধরণ ও brief এ কেন যেন ঋতুর কথা মনে পরে গেল | তখনি ভেবে নিলাম ফিল্মটা করবো। তারপর ওকে Shrikant ও Mahendra এর কাছে নিয়ে গেলাম। and the rest is history!”
আর এভাবেই শুরু হয় বাংলা সিনেমার এক তাক লাগানো এক সিনেমা জুটির পথ চলা। একে একে এই জুটি আমাদের আরো অনেক সিনেমা উপহার দিয়েছেন।
‘অটোগ্রাফ’ এর গান’
দেবজ্যোতি মিশ্র‘র মিউজিক, সত্যি বলতে, ‘অটোগ্রাফ’ এর সবচাইতে বড় আবেদন। আর অনুপম রায়ের ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ তো কোলকাতার সিনেমা মিউজিকেরই ‘গেমচেঞ্জার’। অনুপম রায় তাই যখন গেয়ে ওঠেন “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি, যেটা ছিল না ছিল না, সেটা না পাওয়াই থাক। সব পেলে নষ্ট জীবন”, তখন আমরা আসলে লাইনগুলিকে মিলিয়ে ফেলি আমাদের জীবনের সাথেই। আমাদের মনে পড়ে, যাপিত জীবনের কোনো কোনো অপ্রাপ্তিকে আমরা পরম সত্যি বলে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম। আমাদের মনে পড়ে হারিয়ে ফেলা সেই মানুষগুলিকে, যাদের প্রতিশ্রুতি পরে আর ফুল হয়ে ফোটেনি। ঠিক এরকমভাবেই রূপম ইসলামের জোরাল কণ্ঠে যখন আমরা শুনতে পাই, “যদি কেড়ে নিতে বলে কবিতা-ঠাসা খাতা, জেনো, কেড়ে নিতে দেব না”, আমাদের মনে পড়ে এই জগতে ঠিক কোনো ক্ষুদ্র জিনিসকে আমরা পরম মমতায় আগলে রাখতে চাই, কোনো কোনো ক্ষুদ্র জিনিসকে আমরা বিশাল ভেবে রাখতে চাই একান্তই আমাদের করে। আবার মোলায়েম কিন্নরী কণ্ঠে শ্রেয়া ঘোষালের গাওয়া“চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন” কিংবা এই গানেরই সেই যে বলা“আমি ভুলে যাই কাকে চাইতাম, আর তুই কাকে ভালোবাসতিস”… এসব কি আমাদের প্রিয় মানুষকে কাছে পাওয়ার সেই সুতীব্র বাসনাকেই মনে করিয়ে দেয় না?
তবে সব মায়াবী গানের সিনেমাটোগ্রাফির জন্যে সৌমিক হালদারকেও কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না।
উত্তম কুমারের রেফারেন্স
এত সব কিছুর পরও সিনেমার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক কিন্তু সিনেমার মধ্যেই থাকা সিনেমাটি, যার নাম দেওয়া হয় ‘নায়ক’। ‘নায়ক’ মূলত উত্তম কুমার অভিনীত সিনেমা, আর এই সিনেমার বেশ কিছু অংশই দেখানো হয় অটোগ্রাফে। তবে এসবের চেয়ে বলা ভালো, অটোগ্রাফ মূলত ‘নায়ক’কে ঘিরে আবর্তিত এক দুর্দান্ত চলচ্চিত্র। কিন্তু আপনি যদি ‘নায়ক’ না দেখে থাকেন, তাহলেও অবশ্য কোনো ক্ষতি নেই, ‘অটোগ্রাফ’ নিজের জায়গাতেই কিন্তু এদিক দিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এদিক দিয়ে একটা মজার ব্যাপার জানিয়ে রাখি, সিনেমাতে যে ‘অরুণ চক্রবর্তী’ চরিত্রটি রাখা হয়েছে, এই নামটি মূলত ছিল উত্তম কুমারের আসল নাম।
অর্জন
বক্স অফিস তো ‘অটোগ্রাফ’ জমকালোভাবেই কাঁপিয়েছিল। এর পাশাপাশি অর্জনের খাতায়ও কিন্তু অটোগ্রাফের কোনো কমতি নেই। ১৭ অক্টোবর, ২০১০ সালে এই সিনেমাটি আবু ধাবি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছিল। একই বছর নিউ-ইয়োর্কে মহিন্দ্র ইন্দো-আমেরিকান আর্ট কাউন্সিলের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও এই সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়েছিল। পরের বছর ২০১১ সালে গ্লাসগো ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আর লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও এই সিনেমাটিকে চূড়ান্তভাবে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে সিঙ্গাপুরের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও মুক্ত করা হয়েছিল এই সিনেমাটি। কোলকাতাতে এই সিনামটি বক্স অফিসে চলেছিল টানা ১২০ দিন। এখন অব্দি মোট ৪১টি অ্যাওয়ার্ড এই সিনেমার ঝুলিতে রাখা আছে।