বাড়ির একটি জানালা খোলা হলো। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় সেটা ফের বন্ধ হয়ে গেলো। “নাহ! এই ঠাণ্ডায় টেকা বড় দায়। কী যে হলো এই দেশের। কই একটু ঘোরাঘুরি করে মন প্রাণ চাঙ্গা রাখবো! তা আর হলো না। শেষমেশ এই কনকনে শীতে ঘরের ভেতর বসে বসে গল্প করো, আর হুইস্কি গেলো!” কথাগুলো বলতে বলতে টেবিলের একদিকে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন পার্সি বিসি শেলি। ব্যস্ত জীবন থেকে সামান্য অবসরের সন্ধানে ভিলা ডিওডাটির বিশাল জেনেভা হ্রদের পাশের এক বাড়িতে উঠেছেন তিনি। তিনি অবশ্য একা নন। তার সাথে বন্ধু কবি লর্ড বায়রন, লেখক এবং চিকিৎসক জন পলিডরি আর শেলির প্রেমিকা মেরীও আছেন। মেরীও টুকটাক লেখালেখি করেন। সেক্ষেত্রে তাদের গল্পও জমে ভালো।
সময়টা ১৮১৫ সালের জুন মাস। সেবার দেশের আবহাওয়ার অবস্থা স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত খারাপ ছিল। তাই সব কাজ ফেলে বন্ধ দরজা, জানালার ভেতরে বসে গল্প করা ছাড়া কোনো কাজ নেই তাদের। সবাই যখন গল্পে মেতে ছিলেন, ঠিক তখন লর্ড বায়রন ফায়ারপ্লেসের দিকে একপলক তাকিয়ে ছিলেন। তিনি প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে যান। তাই কেউ তেমন ভ্রূক্ষেপ করলেন না। পলিডরি একবার জিজ্ঞাসা করলেন অবশ্য, কিন্তু বায়রন চুপ থাকলেন।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর নিজে থেকেই কথা বলে উঠলেন তিনি। সবার দিকে তাকিয়ে বেশ নাটকীয়ভাবে বলে উঠলেন, “চলো আমরা একটা প্রতিযোগিতায় নামি।” বসে বসে গল্প করে সময় নষ্ট করার থেকে ছোটোখাটো প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তাবটা সবার পছন্দ হলো। সবাই বায়রনের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকালেন। বায়রন এবার নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলতে থাকলো, “বন্ধুরা! আমাদের সবার মাঝে একটি সাধারণ গুণ হচ্ছে, আমরা সবাই কিছু না কিছু লিখতে পারি। তাই ভাবছি চারজন যে যার মতো একটি গল্প লিখে ফেলি। এরপর দেখা যাক কার গল্প সবচেয়ে সুন্দর হয়।”
কেউ কিছু বলার আগেই লাফিয়ে উঠলেন পার্সি বিসি শেলি, “তোমরা তিনজন গল্প লেখো। আমি বিচারক। আমি ওসব গল্পটল্প লেখায় নেই। কবিতা নিয়েই থাকি।” বায়রন এবার মেরীর দিকে তাকালেন। মেরী জানালেন তার কোনো আপত্তি নেই। পলিডরি বেচারা প্রশ্ন করলেন, “তা কী ধরনের গল্প লিখছো তোমরা?”
বায়রন এবার রহস্যময়ভাবে বলে উঠলেন, “আমরা ভূতের গল্প লেখবো। দেখি কে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর গল্প বলতে পারে।” সেদিনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হলো। তিনজন মিলে লেখা শুরু করলেন ভৌতিক গল্প। বায়রন এবং পলিডরি দুজনই ভ্যাম্পায়ার নিয়ে গল্প লিখে আনলেন। কিন্তু তারা কেউই গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় জিততে পারলেন না। সেদিনের বিজয়ী ছিলেন শৌখিন লেখক মেরী! তার লেখা গল্পের নামটাও বেশ চমৎকার। অতিকায় এক দানব নিয়ে রচিত সেই গল্পের নাম, ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’।
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব পরিচিতি
বইপোকাদের নিকট ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবকে নতুন করে পরিচয় করে দেয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে হররপ্রেমী পাঠকদের নিকট তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। সিনেমার দর্শকদের নিকটও সে যথেষ্ট সমাদৃত। বইয়ের পাতায় জীবন্ত হয়ে ওঠা এই দানবের প্রেমে পড়া পরিচালকদের ছোঁয়ায় রূপালী পর্দায় নতুন রূপে বেশ কয়েকবার হাজির হয়েছে এই দানব। তারপরেও তাকে নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। চলুন পরিচিত হয়ে আসি মেরী শেলির উপন্যাস ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’-এর সাথে।
তরূণ সুইস বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ইঙ্গোলস্টাড বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবদেহের শারীরতত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। প্রাণের উৎস নিয়ে যথেষ্ট উৎসাহী এই বিজ্ঞানীর স্বপ্ন ছিল তিনি এমন কিছু আবিষ্কার করবেন, যার বদৌলতে পুরো পৃথিবী তাকে আজীবন স্মরণ করবে। তিনি দিন-রাত মানবদেহ এবং এর বিভিন্ন টিস্যু নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন। কীভাবে টিস্যু ধ্বংস হয় এবং পুনরায় জন্মানো সম্ভব- এসব তথ্য নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতেন তিনি। তারপর একদিন হঠাৎ করে তিনি প্রাণের রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হলেন। ব্যস! এবার ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে রুখে কে?
তিনি এবার এমন কিছু করে দেখাতে চাইলেন, যা এর আগে কেউ করতে সাহস পায়নি। বেশ কিছু প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গের সমন্বয়ে তিনি একটি অতিকায় প্রাণী সৃষ্টি করলেন। তারপর তার গবেষণাগারের অভ্যন্তরে বৈজ্ঞানিক কায়দায় বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে এর ভেতর প্রাণের সঞ্চার করলেন। প্রাণের স্পর্শে জেগে উঠলো এক দানব! নিজের সৃষ্টির সামনে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকলেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। এটি তার নিজের সৃষ্টি, সেটা যেন বিশ্বাস করতেই কষ্ট হচ্ছিলো তার। তিনি নিজেই ভয় পেয়ে গেলেন এই দানবকে দেখে। তিনি নবজাতক দানবকে পরিত্যক্ত করলেন। নিজের মালিকের দ্বারা বিতাড়িত এই দানব উন্মুক্ত শহরে একাকী জীবন শুরু করে। এরপরই শুরু হয় দানবকে ঘিরে এক রোমাঞ্চকর গল্প।
এভাবে শুরু হওয়া গল্প ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ তার প্রথম প্রকাশের পর থেকে কখনো হতাশ করেনি প্রকাশকদের। প্রথম প্রকাশের প্রায় দুইশত বছর পরেও সমান তালে পাঠকদের মনের খোরাক জোগান দিচ্ছে এই উপন্যাসটি। সাহিত্যিকদের নিকট মেরী শেলির এই উপন্যাসটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হিসেবেও পরিচিত।
মেরী শেলির দুঃস্বপ্ন
‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’-এর স্রষ্টা ঔপন্যাসিক মেরী শেলি ছিলেন বিখ্যাত কবি পার্সি বিসি শেলির দ্বিতীয় স্ত্রী। ১৭৯৭ সালের ৩০ আগস্ট তিনি লণ্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং মুক্তমনা লেখক উইলিয়াম গডউইন এবং নারীবাদী সমাজসেবক মেরী উলস্টনক্রাফটের ঘর আলো করে জন্ম নেন এই লেখিকা। কিন্তু জন্মের পর থেকেই তাকে নিকটস্থ পরিজনের মৃত্যুর শোকের সাথে বসবাস করতে হয়। তার জন্মের বেশ কিছুদিন পরই তার মা মেরীর মৃত্যু ঘটে। পিতার সাহচর্যে বড় হওয়া মেরী শখের বশে মাঝে মাঝে লেখালেখি করতেন। কিন্তু কোনোদিন উপন্যাস রচনার চেষ্টা করেন নি।
১৮১২ সালে তার পরিচয় হয় পার্সি শেলির সাথে। দ্রুত তারা একে অপরকে পছন্দ করে ফেলেন। পার্সি বিসির সাথে চলাফেরার কারণে বেশ কিছু বিখ্যাত লেখক এবং কবির সাথে তার পরিচয় হয়। সেখান থেকেই লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মেরী শেলি। যদিও তখনও মনে রাখার মতো কালজয়ী কিছুই লিখতে পারেন নি তিনি। তারপর শেলির জীবনে ১৮১৫ সালের সেই সন্ধ্যা এসে হাজির হলো। সেদিনের সন্ধ্যায় গল্প করছিলেন শেলি দম্পতি, লর্ড বায়রন এবং জন পলিডরি। গল্পের খাতিরে ইতালীয় বিজ্ঞানী লুইজি গালভানির একটি বিখ্যাত পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা শুরু হয় তাদের মাঝে। ১৭৭০ সালে গালভানি বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে একটি মৃত ব্যাঙের পেশিতে স্পন্দন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা করেন এবং তিনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই বিতর্কিত পরীক্ষায় সফল হন। এই বিষয়ে আলোচনার কিছু মুহূর্ত পরেই বায়রনের গল্প প্রতিযোগিতা প্রস্তাবনার ঘটনা ঘটে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়, লুইজি গালভানির সেই পরীক্ষার পরোক্ষ প্রভাবেই সৃষ্টি হয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। তৎকালীন বিজ্ঞানীদের মধ্যে জোহান ডিপেলের লাশ চুরির পর তা নিয়ে পরীক্ষা চালানোর বিতর্কিত বিভিন্ন ঘটনাও মেরী শেলির লেখনীতে প্রভাব ফেলেছে বলে বিশ্বাস করেন সমালোচকগণ।
তবে অনেক বিখ্যাত সাহিত্য সমালোচকের মতে, বাল্যকালে মাতৃবিয়োগের কারণে মানুষের জন্ম-মৃত্যু নিয়ে প্রায়ই আপনমনে ভাবতেন মেরী। যার কারণে সেদিনের ঘটনা এবং আলোচনার সাথে তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। কিন্তু কোনটা সত্য? এই বিষয়ে সরাসরি মেরী শেলি কী বলেন সেটা একবার জানা যাক।
মেরী শেলি তার উপন্যাস রচনার বেশ কয়েকদিন পর ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লেখেন যে, তিনি তার উপন্যাসের দানবকে দুঃস্বপ্নে দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নকে তিনি লেখায় রূপ দেন। তার ভাষ্যমতে,
“সেই স্বপ্ন একদম বাস্তবের চেয়েও বাস্তব ছিল। আমি বলে বোঝাতে পারবো না। আমি দেখলাম মলিন পোশাকে এক ছাত্র তার সেলাই করা দানবের পাশে হাঁটু মুড়িয়ে বসে আছে। সে তাকিয়ে আছে সেই দানবের দিকে। আমি সেই বিভৎস দানবের চেহারাও দেখলাম। সে এক ভয়ার্ত স্মৃতি! তারপর এক অদ্ভুত ইঞ্জিনের সাহায্যে তার মাঝে প্রাণ দেয়া হলো। প্রাণের প্রথম লক্ষণেই নড়ে উঠলো দানবটা। সেই ধীরগতির অসামঞ্জস্যপূর্ণ স্পন্দনে আমি শিহরিত হয়ে উঠি”।
মানুষ দুঃস্বপ্নকে ভুলে যেতে চায়। কিন্তু ১৮ বছরের মেরী শেলি সেই স্বপ্নকে পুঁজি করে রচনা করলেন নতুনধারার সাহিত্য, যার নাম ‘সায়েন্স ফিকশন’ বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।
ফ্রাঙ্কেনস্টাইন: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
মেরী শেলি প্রথমদিকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব সৃষ্টি পর্যন্ত নিজের লেখনী সীমাবদ্ধ রাখেন। বলতে গেলে, তিনি ছোটগল্প হিসেবে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন রচনা করেছিলেন। কিন্তু পার্সি বিসি শেলির অনুপ্রেরণায় শেষপর্যন্ত মেরী তার চমৎকার ছোটগল্পকে আরও সম্প্রসারিত করে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসে রূপ দেন। উপন্যাস লেখা শেষ হলে বন্ধুরা মুগ্ধ হয়ে বার বার পড়তে লাগলেন। খুব দ্রুত প্রকাশ করার জন্য চাপ দিতে থাকল সবাই। ১৮১৮ সালের নতুন বছরের প্রথম দিনে লণ্ডন শহরের ‘Lackington, Hughes, Harding, Mavor & Jones’ প্রকাশনীর হাত ধরে বাজারে আসে এই উপন্যাস। উপন্যাসের প্রথম পাতায় বড় করে লেখা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’-এর নিচে কোনো ঔপন্যাসিকের নাম লেখা ছিল না। মেরী শেলি কোনো এক কারণে নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছিলেন। আবার বেশ কিছু সংস্করণে উপন্যাসের নাম লেখা হয় ‘দ্য মডার্ন প্রমিথিউস’। কিন্তু পাঠকদের নিকট তা ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ হিসেবেই সমাদৃত হয়।
খুব দ্রুত পাঠক মহলে নাম ছড়িয়ে পড়ে এই উপন্যাসের। ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের সৃষ্ট দানবের জ্বরে কাঁপতে থাকে পুরো লণ্ডন। প্রায় পাঁচ বছর পর ১৮২৩ সালে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এবার আর নাম প্রকাশে বাঁধা দিলেন না মেরী শেলি। পাঠকরাও জানতে পারলো এই রোমাঞ্চকর উপন্যাসের লেখক মেরী শেলিকে। ততদিনে (১৮২২ সালে) লণ্ডনসহ আরো কয়েকটি শহরের বিখ্যাত থিয়েটারে মঞ্চায়িত হয় ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নাটক।
একসময় কতিপয় পাঠকের নিকট থেকে অভিযোগ উঠে, ফ্রাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাসটি সব বয়সের পাঠকের জন্য উপযোগী নয়। পরবর্তীতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে মেরী শেলি ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের পরিমার্জিত সংস্করণ মুদ্রণ করেন। বিভিন্ন ভয়াল দৃশ্য হালকাভাবে বর্ণনার মাধ্যমে তা পাঠকদের নিকট পুনরায় পৌঁছে দেয়া হয়। তবে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের প্রথম সংস্করণ হারিয়ে যায়নি। ‘1818 Original Copy‘ শিরোনামে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মূল সংস্করণটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লাইব্রেরিতে আজও সংরক্ষণ করা হয়। বর্তনামে কমিক, শিশুতোষ সংস্করণসহ বিভিন্ন সংস্করণে তা পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
বিংশ শতাব্দীতে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন রূপালী পর্দায় চিত্রায়িত হয়। প্রায় এক ডজন সিনেমার ভিড়ে ১৯৩১ সালে চিত্রায়িত বরিশ কার্লফের ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন‘ দর্শক এবং সমালোচকদের নিকট সবচেয়ে বেশি সমাদৃত হয়েছে। সিনেমার শুরুতে নাটকীয়ভাবে একজন বক্তার আগমন হয়। সেখানে তিনি দুর্বল চিত্তধারীদেরকে সতর্কতার সাথে চলচ্চিত্রটি উপভোগ করতে বলেন।
কিছু মজার তথ্য
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে নিয়ে বেশ কিছু মজার ঘটনা জড়িয়ে আছে, যা অনেকেরই জানা নেই। History Extra-নামক ওয়েবসাইট ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দুইশত বছর পূর্তি উপলক্ষে এরকম বেশ কয়েকটি মজার ঘটনা তুলে ধরেছে:
- ১৮১৮ সালে প্রকাশিত প্রথম সংস্করণের ভূমিকা লিখেছিলেন কবি পার্সি বিসি শেলি। তাই অনেকেই ভেবেছিলো, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের আসল লেখক বোধহয় পার্সি শেলি। কিন্তু দ্বিতীয় সংস্করণে মেরী শেলি সবার সেই সন্দেহ দূর করেন।
- সেদিনের গল্প প্রতিযোগিতায় পলিডরি রচিত ‘দ্য ভ্যাম্পায়ার‘ গল্পটিও কিন্তু পাঠকদের নিকট সমাদৃত হয়। সেই গল্প পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্রাম স্টকার কালজয়ী উপন্যাস ‘ড্রাকুলা‘ রচনা করেন। বলতে গেলে সেদিনের বৈরী আবহাওয়াই সবার জন্য ‘শাপে বর’ হয়ে আসলো।
- মেরী শেলি পরবর্তীকালে আরও একটি উপন্যাস রচনা করেন। ‘দ্য লাস্ট ম্যান’ শিরোনামের সেই উপন্যাসটিও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো।
- ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব এবং এর বিভিন্ন সংস্করণ পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিনীত দানব চরিত্র। ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে পেছনে ফেলেছে ব্রাম স্টকারের ‘ড্রাকুলা’ চরিত্রটি।
- মেরী শেলি নাকি পার্সি বিসি শেলির মৃত্যুর পর তার হৃদপিণ্ড সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন! পরবর্তীতে তার পুত্র স্যার ফ্লোরেন্স শেলির দাফনের সময় সেটি সমাধিস্থ করা হয়। মেরী শেলি বোধহয় কোনো ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অপেক্ষায় ছিলেন।
- ২০১৩ সালের একটি নিলাম অনুষ্ঠানের ঘটনা। সেদিন একটি বই নিলামে তোলা হয়েছিলো। ‘To Lord Byron, from the author‘-এই লেখার নিচে মেরী শেলির স্বাক্ষর করা ছিল বইটির প্রথম পাতায়। ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের প্রথম সংস্করণের একটি দুর্লভ কপি হিসেবে বইটি নিলামে তোলা হয়। সেদিনের নিলামে প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার পাউণ্ডের বিনিময়ে বইটি ক্রয় করেন এক ব্রিটিশ বইপ্রেমী। এই ঘটনার দ্বারা বোঝা যায়, ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের প্রতি ভালোবাসা পাঠকদের আজও শেষ হয়ে যায়নি।
‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকার করা সেরা ১০০ উপন্যাসের তালিকায় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অবস্থান ৮ম। অসাধারণ এই উপন্যাসটি পড়তে গেলে চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে সেই দানব। ভয়, রোমাঞ্চ, ট্রাজেডি, শ্বাসরুদ্ধকর বিভিন্ন ঘটনার সমন্বয়ে রচিত এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন উপন্যাসটি আপনি পড়েছেন তো?
ফিচার ইমেজ: Liverpool Everyman