বুদ্ধি বা শক্তিতে না; অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের ফারাক গল্প বলতে পারার যোগ্যতায়। যা ঘটেছে, তা সবাই বলতে পারে। কিন্তু মানুষই একমাত্র জীব, যে এমন কিছুও বলতে পারে যা আদতে ঘটেনি। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ‘এক দেশে ছিল রাজা’ বাক্যটা খুব সম্ভবত সবচেয়ে বিপ্লবাত্মক। দুজন ব্যক্তি মুখোমুখি হলেই- ‘শুনেছেন সেদিন কী ঘটলো’ বলে শুরু হয় আলাপ। গল্প বলা মানুষের আদিতম বৈশিষ্ট্যের একটা। আর সেই গল্পেরই একটা বিশেষ প্রকারের নাম ইতিহাস।
বস্তুত ইতিহাস হলো সময় ও সমাজের পরিবর্তন অধ্যয়ন। বিশ্বের প্রতিটি দেশে আলাদা ডিসিপ্লিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইতিহাস পাঠ। আর তাই হিরোডোটাসকে চেনে না, এমন ইতিহাসের ছাত্র দুর্লভ। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে তার রচিত ‘দ্য হিস্টোরিজ’ প্রথম ইতিহাস গ্রন্থ বলে স্বীকৃত।
আমার ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের ফল এই বইটিতে। আমার লক্ষ্য দুটি; প্রথমত, আমি আমাদের স্বজাতি এবং এশীয় জাতিগুলোর বিস্ময়কর সাফল্যসমূহ লিপিবদ্ধ করে অতীতকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। দ্বিতীয়ত, বিশেষভাবে আমি দেখাতে চাই কি করে এই দুই মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো। (ইতিবৃত্ত, হিরোডোটাসের দ্য হিস্টোরিজ এর অনুবাদ, পৃষ্ঠা- ২৯)
চমকপ্রদ এমন দুই ছত্র দিয়ে গল্প বলা শুরু করেছেন হিরোডোটাস। তারপর পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে বিভিন্ন সমাজের বৈচিত্র্য, রীতিনীতি, সংস্কার, ভূগোল, ধর্মবোধ, যুদ্ধ এবং সাফল্য-ব্যর্থতার কাহিনী। কখনো কেচ্ছা ও জনশ্রুতি থেকে, কখনো যুক্তি ও সমাজ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলোকে সাজিয়ে রাখা থরে থরে। যেন নিপুণ শিল্পীর নিয়ন্ত্রিত তুলির আঁচড়।
এশিয়া মাইনরের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের হ্যালিকার্নাসাসে জন্মগ্রহণ করেন হিরোডোটাস। সবচেয়ে প্রচলিত অভিমত অনুসারে সময়টা ৪৮৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে এথেন্স এবং মধ্য গ্রীসে। সেই হিসেবে হিরোডোটাস একজন এশিয়ান গ্রীক। বস্তুত স্বেচ্ছাচারী শাসক লিগড্যামাসের নির্দেশেই জন্মভূমি থেকে নির্বাসিত হন তিনি। ‘দ্য হিস্টোরিজ’-এ সর্বশেষ যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে তা ৪৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের। অর্থাৎ এর কাছাকাছি সময়ে তার মৃত্যু হয়েছে ধরে নেওয়া যায়।
তখন গ্রীক দর্শনের জয়জয়কার। আয়োনীয় এবং এশীয়দের জীবন-জিজ্ঞাসা অনুসন্ধিৎসু হিরোডোটাসকে নিশ্চুপ থাকতে দেয়নি। অতীতের প্রতি সহজাত আকর্ষণ, বিভিন্ন অঞ্চল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আর দর্শনের সমন্বয়ে তিনি উদ্ভাবন করলেন নতুন এক পদ্ধতি। যার বৈশিষ্ট্য- ‘প্রথমে প্রশ্ন করার পর সেই প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত ও প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোর অনুসন্ধান। তারপর আহরিত তথ্য এবং উপকরণ থেকে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া’। ঠিক এই কারণটাই তাকে ইতিহাসের জনকে পরিণত করেছে।
তার নিজের চোখে কিন্তু তিনি ইতিহাস রচনার উদ্দেশ্যে মাঠে নামেননি। তার আগে হিকাতিয়ুস একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলেন pariegesis নামে। স্পেন থেকে উত্তর আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে তাতে। তারও আগে ভূগোল নিয়ে নিজের অভিমত লিপিবদ্ধ করেছিলেন এনাক্সিমেন্ডার। প্রথম গ্রীক হিসেবে বিশ্বের মানচিত্র তৈরির কৃতিত্বও তার। হিকাতিয়ুস চেয়েছিলেন এনাক্সিমেন্ডারের ভূগোলের ভুলভ্রান্তিগুলো সংশোধন করতে। আর হিরোডোটাস চেয়েছেন হিকাতিয়ুসের গ্রন্থের অসম্পূর্ণতা দূর করতে।
হিরোডোটাসের লেখা থেকেই দেখা যায়, তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তিনি বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। কৃষ্ণসাগর থেকে ব্যাবিলন, টায়ার এমনকি থ্যামোস দ্বীপও বাদ থাকেনি। তবে সব থেকে যুগান্তকারী ছিল মিশর সফরের স্মৃতি। ‘দ্য হিস্টোরিজ’- এর দ্বিতীয় খণ্ডের পুরোটাই মিশরের বর্ণনা। খুব সম্ভবত এই সফরের সময় তিনি হিকাতিয়ুসের Perigesis এবং এনাক্সিমেন্ডারের ম্যাপের একটা করে কপি সাথে নিয়েছিলেন। সময়টা ৪৬০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ। ১৯১০ সালে ফরাসি পণ্ডিত Camille Sourdille হিরোডোটাসের যাত্রাপথের সম্ভাব্য ম্যাপ চিহ্নিত করেন, যা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য।
মিশরের বন্যা নিয়ে তিনি পূর্ববর্তী ব্যাখ্যার সমালোচনা করে নিজস্ব বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। মিশরের দ্বীপ যে নীল নদের দান, তা আগে থেকেই স্বীকৃত ছিল। হিরোডোটাস এগিয়ে গেলেন আরো কয়েক ধাপ। অতীতের বন্যায় পানির উচ্চতা কত হতো এবং তার সময়ে বন্যার জন্য পানি কত উচ্চতায় উঠা আবশ্যক- তা হিসেব করে তিনি বের করলেন সমগ্র মিশরকে গড়ে তুলতে নীলনদ বাহিত পলির কতো বছর লেগেছে। তার দাবি, নীল নদের গতি সামান্য পরিবর্তিত হয়ে পানি লোহিত সাগরে পড়লে পরবর্তী পাঁচ হাজার বছরে নতুন ভূখণ্ডের জন্ম হবে।
পিরামিড নিয়ে তার মতবাদ সত্য নয়। তারপরেও মানুষ এবং পরিবেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে চোখে আঙুল দিয়ে এর আগে কেউ দেখায়নি।
মিশর সম্পর্কে বর্ণনায় কেবল ভূগোল এবং ইতিহাস বলেই থেমে যাননি হিরোডোটাস। এনেছেন রীতিনীতি, দেবদেবী, জীবনাচার, চিকিৎসা ব্যবস্থা এমনকি নীলনদের নৌকার বিবরণ।
মৃতদেহ অক্ষত রাখার জন্য মিশরীয়দের গৃহীত ব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল। সবচেয়ে উত্তম, নিখুঁত ও ব্যয়বহুল পদ্ধতিটির বর্ণনা দিয়েছেন হিরোডোটাস এভাবে-
“প্রথমে নাকের মধ্যে লোহার বড়শি দিয়ে মগজ বের করে আনা হয়। বড়শি যেখানে পৌঁছাতে পারে না, তা বের করে আনে বিশেষ ওষুধ। ধারালো ছুরি দিয়ে পেট ছিড়ে বাইরে আনা হয় ভেতরের সব। প্রথমে তালের মদ ও পরে গুঁড়া মশলা দিয়ে নিখুঁতভাবে পরিষ্কার করা হয় পেট। খালি স্থান ভর্তি করা হয় গুঁড়া মস্তকি, ক্যাসিয়া এবং আরো সব সুগন্ধি দিয়ে। তারপর সেলাই করে দেহটি ন্যাট্রামে রাখা হয় সর্বোচ্চ সত্তর দিন। মেয়াদ শেষ হলে লাশটিকে ধুয়ে পা থেকে মাথা অব্দি ঢেকে দেওয়া হয় কয়েক টুকরা সুতি কাপড়ে। নিচের দিকটায় আঠা লাগিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের কাছে। আগে থেকেই ওই মাপে একটি শবাধার বানিয়ে রাখে পরিবার। লাশ পাবার পর তাতে রেখে সীল করে দেওয়া হয়। রাখা হয় কবরের মতো কুঠুরিতে সোজা দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে।” (ইতিবৃত্ত, হিরোডোটাসের দ্য হিস্টোরিজ এর অনুবাদ, পৃষ্ঠা- ১৪৩)
অতিপ্রাকৃতিক এবং যৌক্তিকতার মধ্যে সম্পর্ক খুঁজেছেন হিরোডোটাস। অথবা দ্বৈততাকে ঠাঁই দিয়েছেন অনায়াসে। উদাহরণ হিসেবে প্রথম খণ্ডে উদ্ধৃত লিডিয়ার রাজা ক্রিসাসের কথা স্মরণ করা যায়। বংশের প্রতিষ্ঠাতা গাইজেস প্রতারণা করে সিংহাসন দখল করেছিলেন। ডেলফির ভবিষ্যদ্বাণী ছিল পঞ্চম পুরুষে গিয়ে ক্ষমতাচ্যূত হবে গাইজেসের বংশধররা। ক্রিসাস সেই পঞ্চম পুরুষ। অর্থাৎ সাইরাসের সাথে যুদ্ধে ক্রিসাসের পরাজয় ও লিডিয়ার পতন দৈবভাবেই আগে থেকে নির্ধারিত।
হিরোডোটাস কিন্তু এই তত্ত্বে পুরোপুরি সন্তু্ষ্ট হলেন না। পাশাপাশি যোগ করলেন যৌক্তিক ব্যাখ্যাও। তার মতে, যুদ্ধ অমীমাংসিত অবস্থায় রেখে ক্রিসাস সার্দিসে ফিরে আসেন এবং মিত্রদের বিদায় করে দেন। ভেবেছিলেন সাইরাসও ক্ষান্ত দেবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা ঘটলো না। সাইরাস খুব দ্রুততার সাথে গিয়ে সার্দিসের প্রাচীরের সামনে হাজির হলেন। অপ্রস্তুত অবস্থায় পতন ঘটলো সার্দিসের। সার্দিসের পতন কি পূর্বপুরুষ গাইজেসের পাপে ঐশী ক্রোধের ফল নাকি শত্রুর শক্তি ও মনস্তত্ত্ব বিচারে ক্রিসাসের নিজের ভুল? প্রশ্নটি তুলে হিরোডোটাস নিজের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এরকম ঘটেছে জার্কসিসের পরাজয়ের মতো অন্যান্য বহু ক্ষেত্রেই।
সাইরাস পরবর্তী ক্যামবিসেসের মিশর অভিযান, পাগলামী ও মৃত্যু, দারায়ুসের উত্থান এবং সাম্রাজ্য গঠনের বিবরণী নিয়ে গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ড সজ্জিত। মজার ব্যাপার হলো, খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতকের আরবদের সম্পর্কেও বেখবর ছিলেন না হিরোডোটাস। তার মতে, আরবদের মতো কোনো জাতি চুক্তির পবিত্রতায় এতটা গুরুত্ব দেয় না।
দুজন ব্যক্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে চাইলে তৃতীয় একজন ব্যক্তির কাছে যেতে হয়। তিনি ধারালো পাথর দিয়ে তাদের হাতের তালুতে দাগ কাটেন। ফলে রক্ত বের হয়ে আসে। অতঃপর উভয়ের কাপড় থেকে পশম নেন এবং তা সেই রক্তে ডুবান। এ সময় দিওনাইসিয়াস এবং ইউরানিয়ার নাম জপতে জপতে সাতটি পাথরে রক্ত মাখিয়ে দেয়। হেরোডোটাসের দাবি, এই দুই দেবতার নাম আরবদের ভাষায় যথাক্রমে ওরোতালট এবং আলীলাত। তার এক হাজার পর মহানবী (সা.) এর যুগে আরবে ওজ্জা এবং আল-লাত নামের উপাস্যের নাম পাওয়া যায়। হিরোডোটাসের নাম সেই সব নামের অপভ্রংশ হওয়া অসম্ভব না।
বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণ মেসোপটেমীয় সভ্যতা। উন্নত সেই জনপদ সম্পর্কে হিরোডোটাসের বর্ণনা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। তিনি বলছেন, ব্যাবিলন শহরের আকার বর্গক্ষেত্রের মতো। প্রত্যেক পাশে ১৪ মাইল লম্বা এবং চারপাশে ছাপ্পান্ন মাইল। শুধু আকারে নয়, ঐশ্বর্য আর জাকজমকের দিক থেকেও দুনিয়ার সকল নগরীর চাইতে শ্রেষ্ঠ ব্যাবিলন। পানিভর্তি প্রশস্ত পরিখা দ্বারা নগরীটি পরিবেষ্টিত। প্রাচীর পঞ্চাশ হাত প্রশস্ত এবং দুইশো হাত উঁচু। নগরের দিকে দেবতা বা’লের মন্দিরে বিশাল স্বর্ণের প্রতিমা, যা নির্মাণে সোনা লেগেছে প্রায় দুই টন। এছাড়াও ব্যাবিলনের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে হিরোডোটাস আলোচনা করেছেন বিস্তর।
দারায়ুসের সাথে সিদিয়ানদের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে হিরোডোটাস তাদের বৈশিষ্ট্যের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন। তার মতে, সিদিয়ানরা খচ্চর কিংবা গাধা কোনোটাই পোষে না। তার কারণে খচ্চরের অপরিচিত চেহারা এবং গাধার অপরিচিত ডাক- দুটোই যুদ্ধের সময় সিদিয়ান বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ায়। তাদের ঘোড়াগুলো একই স্থানে কান খাড়া করে চক্কর খেতে থাকে।
এভাবে হিরোডোটাস ম্যারাথন এবং সালামিসসহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সকল সংঘর্ষকে তার পেছনের কারণ সহ বিশ্লেষণ করেন। পারস্যে সাইরাস ক্যামবিসেস, দারায়ুস কিংবা জার্কসিসের মতো শাসকদের আমলে একের পর এক অভিযান চালিত হয়েছে; হিরোডোটাস তাদের তুলে এনেছেন অত্যন্ত নিপুণ গল্পকারের মতো। লিডিয়া দিয়ে শুরু করার পেছনে রহস্য আছে। হিরোডোটাস মনে করেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দ্বন্দ্বের পেছনে মূল দায় লিডিয়ার। এশিয়া মাইনরে গ্রীক অঞ্চলগুলোকে লিডিয়াই সবার আগে পরাজিত ও দখল করে। লিডিয়ার ক্রিসাস একদিকে আয়োনিয়ান, ইতালিয়ান ও ডোরিয়ানদের কর দানে বাধ্য করেন। অন্যদিকে ল্যাসিদিমনিয়ানদের সাথে মৈত্রীচুক্তি করে। ফলে টানাপোড়েন জন্ম নেয় ও সময়ের সাথে ব্যাপকতর হতে থাকে।
মনে রাখা দরকার, হিরোডোটাস ছিলেন কিংবদন্তি গ্রীক নাট্যকার সফোক্লিসের বন্ধু। তার লেখাতেও নাটকীয়তার আভাস মেলে। ক্রিসাসের কাহিনী, সোলনের আখ্যান, সাইরাসের গল্প, পেরিআন্দারের ভয়ানক কাহিনী, পুত্র লাইকো ও যার্কসেস সম্পর্কিত রসাত্মক কাহিনী অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও সার্থকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। কিছু খুঁটিনাটি বিষয়েও তার নজর ছিল। ম্যারাথনের যুদ্ধে ক্যালিম্যাকাসের প্রতি মিলতিয়াদেসের উপদেশ, জার্কসিসের প্রতি অর্তবানুসের সতর্কবাণী এবং সালামিস যুদ্ধের আগে গ্রীক সৈন্যদের মধ্যে বিতর্কও আলোচিত হয়েছে যৌক্তিকতার আলোকে। বস্তুত একজন ঐতিহাসিক হলেও তার লেখার ধরন ছিল গল্পকারের।
হয়তো সহজেই হেরোডোটাসের লেখায় ভুলত্রুটি কিংবা অসম্পূর্ণতার খোঁজ মেলে। এককালে তাকে ‘মিথ্যার জনক’ বলা হতো। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় হিরোডোটাসকে বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। ইউরোপীয় সাহিত্যের ইতিহাসে তার ‘দ্য হিস্টোরিজ’ সর্বাধিক তথ্য ও প্রজ্ঞাপূর্ণ গ্রন্থাদির অন্যতম। কেবল প্রথম ঐতিহাসিকই ছিলেন না, ইউরোপের প্রথম সৃজনশীল গদ্যের প্রবর্তন তিনিই করেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে সিদ্ধান্তমূলক ঘটনাবলির অন্যতম পারস্য আর গ্রীকদের সংঘর্ষসমূহ। সেদিন যদি গ্রীসের পতন ঘটানো যেতো। তবে হয়তো তাদের সমৃদ্ধ জ্ঞানচর্চার সাথে পরিচিত হতে পারতো না আধুনিক মানুষ। হিরোডোটাস সেই সময়টাকে অত্যন্ত যত্নের সাথে আবদ্ধ করেছেন। সেই সাথে তুলে এনেছেন তৎকালীন জানা পৃথিবীর সার্বিক অবস্থা। সবকিছুতে বিস্মিত না হয়েও সবকিছুকে গভীরভাবে দেখার বিরল গুণ লাভ করেছিলেন তিনি। এইজন্যই হিরোডোটাস অপ্রতিদ্বন্দ্বী। যিনি আমাদের গল্প শুনিয়েছিলেন। সত্যিকার অর্থেই মানুষের গল্প।