কখনো ভেবে দেখেছেন- যাত্রাপালায় কেন প্রত্যেক অভিনয় শিল্পী অতিরিক্ত অভিনয় করে? চিৎকার, হাত-পা ছোড়া, অনর্থক সুরেলা গলায় কথা বলে? তারা তো এভাবে না বলে, স্বাভাবিক অভিনয় করতে পারতো, যা আমরা সচরাচর টেলিভিশনে দেখে থাকি। এর কারণ হচ্ছে যাত্রাপালায় অভিনয় করার সময় অভিনেতাদেরকে একটি মুক্ত মঞ্চে অভিনয় করতে হয়, যেখানে থাকে না কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন, কোনো দৃশ্যপট পরিবর্তন। অভিনেতাদের একাই অভিনয় করে বোঝাতে হয় গল্পটির কোন পর্যায়ে কী অবস্থায় তারা আছে। শুনতে কঠিন হলেও কাজটি তখন সহজ ছিল, কারণ এভাবে অতিরিক্ত অভিনয় করতে তাদের কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল না।
এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে যাত্রাপালার কথা কেন আসছে? এটি বুঝতে হলে আপনাকে প্রথমে চলচ্চিত্রের ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য জানতে হবে। মেলায় বায়োস্কোপ দেখেছেন নিশ্চয়ই। এখন হয়তো ভাবছেন, এডিটিংয়ের সাথে বায়োস্কোপের সম্পর্ক কী! বায়োস্কোপের ধারণা থেকেই কিন্তু ফিল্ম/মোশন পিকচার/চলচ্চিত্রের ধারণাটি এসেছে।
বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন ও উইলিয়াম কেনেডি লরি ডিকসন নামের একজন স্কটিশ বিজ্ঞানী মিলে প্রথম কাইনেটোস্কোপ (১৮৮৯-১৮৯২) তৈরি করেন, যার সাহায্যে একজন মানুষ একটি ছিদ্র দিয়ে কয়েকটি পর্যায়ক্রমিক স্থির চিত্র পরপর বদলাতে দেখতো- ঠিক বায়োস্কোপের মতো। এটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অগাস্ট-লুই লুমিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় সিনেমাটোগ্রাফ (১৮৯৫) নামের একটি ক্যামেরা তৈরি করেন, যার সাথে ছিল একটি প্রজেক্টর। অর্থাৎ কাইনেটোগ্রাফের ছিদ্রের ছবিকে তারা প্রথমবারের মতো পর্দায় ফেললেন। সিনেমাটোগ্রাফের ধারণা আসলে ফরাসি বিজ্ঞানী লিও বৌলির, কিন্তু অর্থাভাবে তিনি তার আবিস্কারকে লুমিয়ার ব্রাদার্সের কাছে বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে লুমিয়ার ব্রাদার্স এই পদ্ধতি ব্যবহার করে মানুষকে প্রথমবারের মতো উপহার দেন চলচ্চিত্র বা মোশান পিকচার “ওয়ার্কারস লিভিং দ্য লুমিয়ার ফ্যাক্টরি”(১৮৯৫)।
চলচ্চিত্রের নির্বাক যুগ: এডিটবিহীন লুমিয়ার চলচ্চিত্র
লুমিয়ার ভ্রাতৃদ্বয় যে ধরনের ‘চলচ্চিত্র’ তৈরি করতেন তা মূলত ছিল একটি শটবিশিষ্ট। ফিল্মের ভাষায়, ক্যামেরার রোল চলার সময় থেকে শুরু করে থেমে যাওয়া পর্যন্ত যতটুকু অংশ ধারণ করে তাকে একটি শট বলে।
‘ওয়ার্কার্স লিভিং দ্য লুমিয়ার ফ্যাক্টরি’তে শুধু এটিই দেখানো হয়েছে- শ্রমিকরা ফ্যাক্টরি থেকে বের হচ্ছে। তেমনি বেবি অ্যাট দ্য লাঞ্চ টেবিল, অ্যা বোট লিভিং দ্য হার্বার ইত্যাদি চলচ্চিত্রে ঐ সামান্য অংশটুকুই দেখানো হতো এবং অবাক দর্শক পর্দায় কিছু নড়াচড়া করতে দেখেই আমোদিত হয়ে যেত।
লুমিয়ারের চলচ্চিত্রে যে দৃশ্যগুলো দেখানো হতো তা আগে থেকে ঠিক করা থাকতো না, বরং তারা যাকে/যেটিকে গ্রহণযোগ্য ‘সাবজেক্ট’ মনে করতেন তার সামনে ক্যামেরাটি বসিয়ে দিতেন। তবে ওয়াটারিং দ্য গার্ডেনার নামের একটি কমেডি তারা বানিয়েছিলেন, যাতে প্রথমবারের মতো তারা দৃশ্যে কী দেখানো হবে তা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু এগুলোতে এডিটিংয়ের ছিটেফোঁটাও ছিল না।
একটি শট যথেষ্ট নয়: জর্জ মেলিয়েঁ
ফরাসী পরিচালক জর্জ মেলিয়েঁকে বলা হয় ‘দ্য ফাদার অব স্পেশাল ইফেক্টস’। এডিটিংয়ের ইতিহাস এই মহান ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে কল্পনা করা যাবে না। স্পেশাল ইফেক্টস শুনে অনেক কিছু মনে হলেও তা এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে সামান্যই ছিল, তবে মেলিয়েঁ সেই ১৮৯৬ সালেই ফিল্ম বা মোশন পিকচারের শিল্প সম্পূর্ণ বদলে দেন। জর্জ মেলিয়েঁ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনেন- ১) ফিল্মে একাধিক শটের প্রচলন করেন এবং ২) একটি চলচ্চিত্রের সময় বৃদ্ধি করেন। যেমন, লুমিয়ার ফিল্মগুলো সর্বোচ্চ ১ বা ২ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, যে সময়কে মেলিয়েঁ বাড়িয়ে ১৪ মিনিট পর্যন্ত নিয়েছিলেন।
(উপরের ভিডিওটিই মেলিয়েঁর সিন্ডেরেলা, যেখানে স্থায়ী, সাজানো ব্যাকগ্রাউন্ড ও একই ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল রয়েছে)
লুমিয়ার ফিল্মে একটি কাজের মাত্র একটি শট দেখানো হতো বলে সময় এত কম ছিল। মেলিয়েঁ ১৮৯৯ সালে সিন্ডেরেলা নামে ৪১০ ফুট রিলের একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন। এতে তিনি ২০টি শট ব্যবহার করেন, যেখানে একটিতে সিন্ডেরেলাকে তার রান্নাঘরে কাজ করতে দেখা যায়, একটিতে তার বন্ধুদের খেলতে দেখা যায় ইত্যাদি। অর্থাৎ, প্রতিটি শটে একটি আলাদা কাজ বা ব্যক্তিকে দেখানো হয়।
শট আর সময় বাড়ানো ছাড়াও মেলিয়েঁ ফিল্মে আরো ৪টি গুরুত্বপূর্ণ এডিটিং কৌশল আবিষ্কার করেন-
(১) জাম্প কাট; এর অর্থ হলো একটি দৃশ্য, বস্তু বা সাবজেক্টের সাধারণ ধারাবাহিকতা ভেঙে নতুন একটি পরিবেশ তৈরি করা। যেমন- সিন্ডেরেলা (১৮৯৯) ফিল্মটিতে সিন্ডেরেলাকে বাঁচানোর জন্য যেভাবে পরী ধুপ করে উদয় হলো আবার চলে গেল, এটিই সিনেমাতে প্রথম জাম্প কাটের ব্যবহার।
এছাড়াও এক শট থেকে আরেক শটে যাওয়ার জন্য (২) ফেইড ইন-ফেইড আউট (ঝাপসা হয়ে যাওয়া), (৩) ডিজল্ভ বা মিশে যাওয়া এবং সবচেয়ে প্রয়োজনীয় (৪) স্টপ মোশন ফটোগ্রাফি তিনি আবিষ্কার করেন।
স্টপ মোশন ফটোগ্রাফিতে একটি সাবজেক্টকে অল্প অল্প করে নড়াচড়া করতে বলা হয় এবং এই প্রতিটি চলাচল আলাদা করে ছবি তুলে রাখা হয়। যখন এই একক, আলাদা ছবিগুলোকে পরপর দ্রুত দেখা হয়, তখন মনে হয় যেন ছবিতে থাকা সাবজেক্ট নিজে নিজেই হাত পা নাড়ছে। নিচে এর একটি উদাহরণ দেয়া হলো-
তবে মেলিয়েঁর কাজের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন- তার পর পর দেখানো কাজগুলোর মধ্যে কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না, পেছনের দৃশ্য, স্থান বা সময় পরিবর্তনও ছিল না। এখানেই সে সময়ের চলচ্চিত্রের সাথে যাত্রাপালার মিল পাওয়া যায়। মেলিয়েঁর সময়ে এডিটিং বলতে বোঝাতো এসব অধারাবাহিক কাজের যে বিভিন্ন শট নেয়া হয়েছে, তাদের কেটে একে একে সাজানো। অনেকটা আজকের দিনের প্রেজেন্টেশন স্লাইডের মতো ব্যাপার।
প্রতিটি শটের আগে একটি শিরোনাম থাকতো যা দর্শকদের এই নতুন কাজটি (শটটি) সম্পর্কে ধারণা দিত। তবে মেলিয়েঁ সিন্ডেরেলা (১৮৯৯)-তে তার বিখ্যাত ডিজল্ভ কৌশল ব্যবহার করে শট পরিবর্তন করেছেন।
মেলিয়েঁ শটের কাঠামো পরিবর্তন করেননি, শুধু সংখ্যা বাড়িয়েছেন। তাই তিনি ক্যামেরার কাজকেও গুরুত্ব দেননি। তার চলচ্চিত্রে ক্যামেরাগুলো একই জায়গায় স্থায়ী থাকতো এবং স্টেজমুখো করে রাখা হতো।
মেলিয়েঁর মাধ্যমেই চলচ্চিত্রে এডিটিং একটি মুখ্য বিষয় হয়ে গেল। কারণ একাধিক শট থাকা মানেই তাদেরকে অর্থবহ করে সাজানো প্রয়োজন, যাকে ফিল্ম সম্পাদনা বা এডিটিং বলে।
এডউইন এস. পোর্টার: দৃশ্য থেকে গল্প
মেলিয়েঁর কাজকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যান আমেরিকান এই চলচ্চিত্র পরিচালক। ১৯০১ সাল থেকেই পোর্টার এডিসন ম্যানুফেকচারিং কোম্পানির জন্য চলচ্চিত্র বানিয়ে আসছিলেন। মেলিয়েঁর মতো তিনি দর্শককে শুধু একটি দৃশ্য দেখিয়ে সন্তুষ্ট থাকলেন না। তিনি একটি গল্প বলতে চাইলেন।
(লাইফ অব অ্যান আমেরিকান ফায়ারম্যানের ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে ২ মিনিট ২১ সেকেন্ড পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান দেখানো হয়েছে)
এডিসনের পুরনো ফিল্মের মধ্যে তিনি আমেরিকার অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের একটি ফিল্ম খুঁজে পেলেন। পোর্টার ভাবলেন, এই অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের কাজের সাথে একটি গল্প জুড়ে দেবেন তিনি। এভাবেই তৈরি হয়ে গেল ১৯০৩ সালের বিখ্যাত আমেরিকান নির্বাক শর্টফিল্ম “লাইফ অব অ্যান আমেরিকান ফায়ারম্যান”। তার মতে, তিনি মেলিয়েঁর ট্রিপ টু দ্য মুন (১৯০২) দেখেই এর অনুপ্রেরণা পান।
লাইফ অব অ্যান আমেরিকান ফায়ারম্যান নামের প্রায় ৬ মিনিটের এই চলচ্চিত্রে পোর্টার প্রথমবারের মতো আগে থেকে ধারণ করে রাখা শটের সাথে নতুন, সদ্য বানানো শট জোড়া দিলেন। এটি বোঝালো যে, ফিল্মের ক্ষেত্রে শটের আলাদা কোনো অর্থ থাকে না, বরং একেবারে অপ্রাসঙ্গিক নতুন শটের সাথে পুরনো শট জোড়া দিয়ে নতুন অর্থ তৈরি করা যায়। এই ফিল্মে দেখানো হয় কী করে একদল অগ্নিনির্বাপক কর্মী একটি আগুন লাগা বিল্ডিং থেকে একজন মা ও তার বাচ্চাকে বাঁচায়। এতে, যেমনটি বলা হলো, ফায়ারম্যানদের কাজ আগে থেকেই রেকর্ড করা ছিল, যার সাথে নতুন ধারণকৃত আগুন-লাগা বিল্ডিং ও মা-সন্তানের শট জোড়া লাগানো হয়েছে।
মেলিয়েঁও পোর্টারের মতো শট ভেঙেছিলেন, কিন্তু তার কাজগুলো সম্পূর্ণ ছিল। অন্যদিকে, পোর্টার একই কাজকে আরো অনেক ছোট ছোট অংশে ভাগ করলেন। পোর্টারের সময়ও কম লাগলো। মেলিয়েঁ ‘সিন্ডেরেলাতে’ ২০টি শটে যত না কাজ দেখাতে পেরেছেন, পোর্টার মাত্র ৬ মিনিটে একটি সম্পূর্ণ রক্ষা অভিযান দেখাতে পেরেছেন। কারণ হলো তিনি এখানে একটি সম্পূর্ণ কাজ দেখাননি, বরং কাজের দরকারি অংশগুলো দেখিয়েছেন। যেমন- ফায়ারম্যানরা রাস্তা দিয়ে কাজে যাওয়ার পুরোটা সময় কিন্তু দেখানো হয়নি। শুধু ঐ অংশটুকু দেখানো হয়েছে যাতে দর্শক বোঝে যে ফায়ার ট্রাক রক্ষা অভিযানে ছুটছে।
পোর্টার দেখান, একটি অসমাপ্ত কাজের শটই যেকোনো ফিল্মের এডিটিংয়ের ভিত্তি। অর্থাৎ, এসব অসমাপ্ত ছোট ছোট শটকে নিজের মতো সাজিয়ে পরিচালক তার চলচ্চিত্রকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
(হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি)
পোর্টার আরেকটি চমৎকার জিনিস আবিষ্কার করলেন তার পরবর্তী ১১ মিনিটের শর্টফিল্ম দ্য গ্রেট ট্রেন রবারি (১৯০৩)-তে। মেলিয়েঁ এবং পোর্টার নিজেও এই পর্যন্ত শটের সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট ‘কাজের’ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছেন। যেমন- লাইফ অব অ্যান আমেরিকান ফায়ারম্যান এর ক্ষেত্রে একটি কাজ- উদ্ধার করাকে একটির পর একটি শটে ধারাবাহিকভাবে দেখিয়েছেন। কিন্তু দ্য গ্রেট ট্রেন রবারিতে পোর্টার কাজের নয়, একটি চিন্তার ধারাবাহিকতা এনেছেন!
এই ফিল্মে দুই ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড বা পরিবেশ ব্যবহার করা হয়েছে- ১) ট্রেনের বাইরের দৃশ্য ও ২) ট্রেনের ভেতরে ছিনতাইকারীদের দৃশ্য। অর্থাৎ, ভিতরে-বাইরে। শুরুর দিকে দেখা যায় ছিনতাইকারীরা ঘোড়ায় চড়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে, মাঝে একটি দৃশ্যে দেখা যায় টেলিগ্রাফ অফিসের কর্মকর্তা, যাকে বেঁধে রাখা হয়েছে, সে মুক্ত হচ্ছে। এরপরের দৃশ্যে দেখা যায় একদল লোক একটি পার্টিতে নাচছে, যেখানে হঠাৎ দরজা ভেঙে করে টেলিগ্রাফ কর্মকর্তা ঢুকে পড়েন।
এই তিনটি দৃশ্যে তিনটি ভিন্ন ধরনের কাজ দেখানোর পরও দর্শকের বুঝতে সমস্যা হয়নি যে পুরো ব্যাপারটিই ট্রেন ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। পোর্টার এই ফিল্মটিতে শট বদলের সময় ডিজল্ভ বা ফেইড ব্যবহার না করে দৃশ্যের ধারাবাহিকতা দেখালেন, যা ছিল চলচ্চিত্রে এডিটিংয়ের আরেকটি মাইলফলক।
তো এখানে ক্যামেরার ভূমিকা কী?
এডিটিং করার জন্য তো আগে কোনো কিছুর রেকর্ডিং থাকা চাই, তাই না? তবে দুঃখের বিষয়, উপরের কেউই ক্যামেরার চলাচল বা অবস্থান পরিবর্তনের চিন্তা করেননি। তাদের কাছে শটের এপাশ-ওপাশ বদল করে নতুন দৃশ্য তৈরি করাই মুখ্য কাজ ছিল।
চলচ্চিত্রে ক্যামেরা যে কী অসাধ্য সাধন করতে পারে তা প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন প্রখ্যাত আমেরিকান পরিচালক, নির্দেশক, লেখক ডেভিড ওয়ার্ক গ্রিফিথ। তিনি ডি. ডব্লিউ. গ্রিফিথ নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এই প্রতিভাধর ব্যক্তি হলিউড চলচ্চিত্রের কাঠামো গড়ে দিয়েছেন।
এডিটিংয়ের ক্ষেত্রে তার অবদান এখানে বিশদ ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। সে সম্পর্কে আমরা এ লেখার পরের অংশে জানবো। তবে মনে রাখতে হবে, এখন পর্যন্ত বলা সব চলচ্চিত্রই নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের।
নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগ বলা হয় ১৮৯০ থেকে ১৯২০ এর দশককে। তখন চলচ্চিত্রগুলো আলাদা কোনো রেকর্ড করা শব্দ, এমনকি সংলাপও ব্যবহার করতো না। সবই ইশারা-ইঙ্গিতে বলা হতো, এবং প্রতিটি দৃশ্যের আগে কার্ড দেখানো হতো, যেমনটি জর্জ মেলিয়েঁ করতেন। অনেক সময় ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ হিসেবে কোনো গান বা অর্কেস্ট্রা বাজানো হতো। শব্দ যোগ হওয়ার আগে একটি চলচ্চিত্রে শট আর ক্যামেরার পরিবর্তন দিয়েই দর্শকের কাছে একটি ঘটনা তুলে ধরতেন অভিনয়শিল্পীরা।
এডিটিংকে একটি অদৃশ্য শিল্প বলা হয়। কারণ ধরে নেয়া হয় যে, এডিটিং দর্শকের চোখে যত কম ধরা পড়বে, সেই এডিটিং তত নিখুঁত ও সফল হবে। পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলোও তাই চেষ্টা করে গেছে কী করে দর্শককে ‘দর্শকের আসন’ থেকে সরিয়ে মঞ্চে নিয়ে আসা যায়। ঘটনাগুলো যেন বাস্তবিক, ক্রমবর্ধমান মনে হয় দর্শকের কাছে, সে প্রয়াসই করেছেন তারা।
Feature Image: screencraft.org