তারপর ঈশ্বর বললেন, “মানুষের নিঃসঙ্গ থাকা ভালো নয়। আমি ওকে (আদম) সাহায্য করার জন্যে ওর মতো আরো একটি মানুষ তৈরি করব।”… ঈশ্বর মানুষটির পাঁজরের সেই হাড় দিয়ে তৈরি করলেন একজন স্ত্রী। তখন সেই স্ত্রীকে প্রভু মানুষটির সামনে নিয়ে এলেন। সেই মানুষটি বলল, “অবশেষে আমার সদৃশ একজন হলো। আমার পাঁজর থেকে তার হাড়, আর আমার শরীর থেকে তার দেহ তৈরি। যেহেতু নর থেকে তার সৃষ্টি, সেহেতু ‘নারী’ বলে এর পরিচয়। (বাইবেল- জেনেসিস-২: ১৮-২৪)
সেমেটিক ঐতিহ্য এবং ইব্রাহিমি ধর্মগুলোতে পৃথিবী সৃষ্টির বর্ণনায় বিশেষ প্যাটার্ন আছে। খোদা শূন্য থেকে ধাপে ধাপে মাটি, আকাশ এবং উভয়ের মধ্যে বিরাজমান সমস্ত কিছু তৈরি করেন। আয়োজন শেষ হলে সৃষ্টি করা হয় মানুষ। সেই ব্যক্তি মানুষ তার সঙ্গিনী সমেত বসবাস করে স্বর্গে। তারপর শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে নেমে আসে দুনিয়ায়। বিশেষ কোনো ধর্মে বর্ণনা এদিক সেদিক হলেও মোটাদাগে এই বয়ানই পাওয়া যায়। কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। পৃথিবী সৃষ্টির পেছনের গল্পটা আসলে কী? ওই গাছটা দ্বারা আসলে কী বুঝায়, যার কারণে স্বর্গ থেকে আদম বিচ্যুত হলো? পৃথিবী, মানুষ আর ঈশ্বরের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক কী? এমন অজস্র উত্তরহীন প্রশ্ন মাথায় ঘোরাঘুরি করে প্রায়শ। ড্যারেন এরোনফস্কি দুঃসাহস দেখিয়েছেন সেই গল্প নতুন করে বলার, তাও রূপালি পর্দায়।
ড্যারেন এরোনফস্কির সিনেমা মানেই স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। বিশেষ করে ধর্ম আর উপকথার রূপকগুলোকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে হাজির হয় পর্দায়। ১৯৯৮ সালের পাই, ২০০৬ সালের দ্য ফাউন্টেন এবং ২০১৪ সালের নোয়াহ তার অন্যতম উদাহরণ। প্রথমটাতে ইহুদি অতীন্দ্রিয়বাদ, দ্বিতীয়টিতে মানুষের মৃত্যুর বিবলিক্যাল তর্জমা আর তৃতীয়টিতে সেমেটিক নবি নুহের বিবরণ। কিন্তু ‘মাদার’ নির্মাণে যেন সকল সীমাবদ্ধতাকে ছাপিয়ে গেলেন ড্যারেন। তোলে আনলেন পৃথিবী সৃষ্টির ভিন্ন গল্প। মানুষ কীভাবে গ্রহণ করবে, সেই ভয় সবারই থাকে। তবুও পা বাড়িয়েছেন। তার ভাষ্যে, “আমার সমস্ত কাজ আসে ভেতরের কোনো এক জায়গা থেকে। বিষয়টা প্রচণ্ড আবেগের। সিনেমা তৈরি করা কঠিন। মানুষ অনবরত ‘না’ বলতে থাকে।“
নুহের প্লাবনের মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হয় পৃথিবী সৃষ্টি আর পুনঃসৃষ্টির ঘটনা। বাইবেলে সরাসরি বলাও হয়েছে সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টির ভেতর দিয়ে নেন। কোরানে ১০:৩৪ এবং ২৭:৬৪-এর মতো অনেক জায়গাতেই পৃথিবী সৃষ্টি আর পুনরাবৃত্তির কথা উদ্ধৃত হয়েছে। যেমন, “তারা কি দেখে না আল্লাহ কীভাবে সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর পুনরাবৃত্তি ঘটান? নিশ্চই এটি আল্লাহর জন্য সহজ” (কোরান- ২৯:১৯)।
ভারতীয় ধর্মগুলোতে এই সৃষ্টি-স্থিতি আর বিনাশের চক্র স্পষ্ট। ব্রহ্মা, বিষ্ঞু এবং শিব সেখানে যথাক্রমে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং সংহারকর্তার প্রতিমূর্তি। নির্বাণ বলতে ভারতীয় দর্শনে সময়ের এই অনন্ত চক্র থেকে বের হওয়াকেই বুঝানো হয়। প্রাচীন সুমেরিয় এবং মিশরীয় সভ্যতায় রাত-দিন, মাস এবং বছরের মতো সকল কিছুকেই চক্রাকারে বুঝার প্রবণতা ছিল। চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি, কিংবা সূর্যের উদয়-অস্তও এর বাইরে না। অর্থাৎ সেক্যুলার চোখে সময়কে সরলরৈখিক মনে হলেও ধার্মিক চোখে চক্রাকার। সময়ের ঠিক এই প্যাটার্নটাই ড্যারেনকে অনুরিত করেছে। সমস্ত উপকথা ঘাটলেও প্রধান উপজীব্য করেছেন খ্রিষ্টান ধর্মতত্ত্বের বয়ান।
(স্পয়লার সতর্কতা)
মূলত রিভিউ না; সিনেমাটা দেখার সময় কিংবা পরে যাদের কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রয়োজন, লেখাটা তাদের জন্য। সিনেমার শুরু আগুনে বিধ্বস্ত বাড়ির অবশিষ্ট অংশে। খুব যত্ন করে একটা স্বচ্ছ ক্রিস্টাল যথাস্থানে তুলে রাখলেন বিখ্যাত কবি (হাভিয়ার বারডেম)। সাথে সাথে গোটা বাড়ি ভস্ম থেকে নতুন হয়ে উঠলো। বিছানায় ঘুম থেকে জেগে উঠলো স্ত্রী (জেনিফার লরেন্স)। কবি বর্তমানে রাইটার্স ব্লকের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। অবিরাম চেষ্টা করছেন তা থেকে বের হতে। অন্যদিকে স্ত্রীর নজর স্বামীর দিকে। বাড়ির ক্ষত হয়ে থাকা দেয়াল মেরামতের দিকে। বাড়িটাকে তিনি স্বর্গ বানাতে চান। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যায় হঠাৎ অতিথি (এড হ্যারিস)-এর আগমনে। কবিপত্নী বিব্রত ও বিরক্ত হলেও স্বামীর আগ্রহে বাসায় ঠাঁই দেয়া হয়। কবির পাগলা ভক্ত অতিথি। মৃত্যুর আগে তার সাথে দেখা করতেই এতোদূরে আসা।
দিন কয়েকের মাথায় হাজির তার স্ত্রীও। কবি তার ব্লক ঠেকে উঠার চেষ্টা বাদ দিয়ে উপভোগ করতে থাকেন কর্মকাণ্ড। কিন্তু বাড়ির উপর অত্যাচার আর পতির অমনোযোগ আহত করে কবিপত্নীকে। বাড়িতে যতদিন খুশি থাকার অনুমতি পায় অতিথি দম্পতি। কেবল স্টাডি রুমের ক্রিস্টালের কাছে যাওয়া নিষেধ। সেই ভুলটাই তারা করে। তাদের অতি কৌতূহলে ভেঙে যায় ক্রিস্টাল। রাগে-ক্ষোভে স্টাডি রুম সিলগালা করে দেন কবি। তবু দয়াপরবশ হয়ে বাসা থেকে বের করে দেন না। এ সময় বাড়িতে উত্তেজিত অবস্থায় প্রবেশ করে অতিথি দম্পতির দুই পুত্র। উত্তরাধিকার নিয়ে তাদের তর্কাতর্কি। সবার সামনেই একজন আরেকজনকে মাটিতে ফেলে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকে। কবিপত্নী শান্ত বাড়িটাতে ক্রমবর্ধমান বিশৃঙ্খলা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে থাকেন। চেষ্টা করেও আহত সেই সন্তানকে বাঁচানো যায়নি।
বিবলিক্যাল নেরেটিভের কথা জানা থাকলে বুঝতে কষ্ট হবার কথা না। রাইটার্স ব্লকে স্টাডি রুমে বসে থাকা সেই মহান কবি চরিত্র অঙ্কিত হয়েছে সৃষ্টিকর্তার আদলেই। স্টাডিরুমের সেই ক্রিস্টাল নির্দেশ করে স্বর্গে রাখা গন্ধম ফলকে। এবার বোধ হয় স্পষ্ট, অতিথি দম্পতি আদম এবং ইভ। কাবিল যেমন হাবিলকে খুন করেছিল, তাদের একপুত্রও সেভাবে আরেক পুত্রকে হত্যা করে। তাহলে কবিপত্নীর দ্বারা কাকে নির্দেশ করতে চান পরিচালক ড্যারেন? খোদ প্রকৃতি নাকি গ্রিক উপকথার গায়া নাকি খ্রিষ্টান ন্যারেটিভের মাতা মেরি? নাকি তিনটি চরিত্রের মিশেল? সেই অভিযাত্রা নিয়েই গোটা মুভি। যেখানে একের পর এক রূপক হিসাবে উঠে এসেছে নুহের প্লাবন, নতুন জীবনযাত্রা, নতুন বাণী অবতীর্ণ হওয়া, প্রকাশের পর অনুসারী বৃদ্ধি এবং মাতার সন্তান জন্মদান।
১৯৬৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয়া ড্যারেন এরোনফস্কির মুন্সিয়ানা পরাবাস্তব দুনিয়া চিত্রিত করায়। মা শর্লোট এবং বাবা আব্রাহাম এরোনফস্কি দুইজনেই পেশায় শিক্ষক। ইহুদি পরিবেশে বেড়ে উঠায় আধ্যাত্মিকতা চর্চায় হাজির থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছে। জানা হয়েছে জীবন ও জগৎ সম্পর্কিত বিবলিক্যাল ব্যাখ্যা। পিতামাতার সাথে থিয়েটারে যাতায়াতের অভ্যাস ছিল। শিশুমনে দাগ কেটে যায় সেই মুহূর্তগুলো। তার মাঝেই ভবিষ্যৎ জড়িয়ে ফেলার স্বপ্ন আসে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন সোশ্যাল এনথ্রোপোলজিতে। শেখেন চলচ্চিত্র নির্মাণবিদ্যাও। ১৯৯১ সালে সেখান থেকে বের হয়ে পরিচালনার দরস নেন আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। মাত্র ৬০ হাজার ডলার পুঁজি নিয়ে তৈরি করা সিনেমা পাই কেবল ব্যবসাসফলই হয়নি, এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পদক এবং খ্যাতি। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বোদ্ধা মহলে সাড়া ফেলে দেয় অনবদ্য সৃষ্টি ব্ল্যাক সোয়ান। নোয়াহ তো রীতিমতো স্থান করে নেয় ব্লাকবাস্টার তালিকার প্রথমে। চিন্তা আর দক্ষতায় ড্যারেন তখন আরো পরিপক্ক। পরিচালনার সপ্তম পদক্ষেপ হিসাবে কাজ শুরু হয় ‘মাদার’-এর।
ড্যারেন তার পূর্বতন সিনেমাগুলো করার সময় বাইবেলের ইহুদি তাফসির অনুসরণ করলেও মাদার-এ এসে দারস্থ হয়েছেন খ্রিস্টান তাফসিরের। খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব মোতাবেক ঈশ্বরপুত্র যীশু মানুষের জন্যই জন্মলাভ করেন এবং মানুষের স্বার্থেই জীবন বিসর্জন দেন। ড্যারেন তাকে চিত্রিত করেছেন অন্য মাত্রায়। একদিকে ক্রমশ একা হতে থাকা গর্ভবতী কবিপত্নী আর অন্যদিকে ভক্ত নিয়ে ব্যস্ত হতে থাকা কবি। ক্রমশ বাড়ি হয়ে উঠতে থাকে জনসমুদ্র। যে যার মতো ব্যবহার করছে, হইচই করছে, নোংরা করছে। একটা দৃশ্যের কথা আনা যায় প্রসঙ্গক্রমে। জনৈক ভক্ত কম্বল বিছিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়তে চাইলে কবিপত্নী বাঁধা দেন।
_নাহ, আপনি এখানে শুতে পারবেন না।
_কেন? আপনি কি এখানে থাকেন?
_আমি এখানেই বসবাস করি। এটা আমার বাড়ি।
_আপনার বাড়ি! কিন্তু কবি তো বলেন, এইটা সকলের বাড়ি।
ভক্তদের প্রত্যেকেই কবির স্মৃতি নিজের কাছে রেখে দিতে চায়। সুতরাং বাড়ি থেকে নিয়ে যায় এটা ওটা প্রয়োজনীয় জিনিস। কার আগে কে নেবে, সেই প্রতিযোগিতায় শুরু হয় ভাঙচুর। আহত পত্নী অভিযোগ করে কবিকে। তোমার ভক্তরা সব নষ্ট করে দিচ্ছে। কবির সদয় উত্তর- ‘ওগুলো বস্তু মাত্র, প্রতিস্থাপন করা যাবে। চিন্তা করো না’। ধর্মতত্ত্বে যীশুর মৃত্যুবরণ বিবৃত হয়। কবিপত্নীর গর্ভে জন্ম নেয়া শিশুর পরিণতি কি তেমনই নৃশংস? সেই চিত্রায়ন আরো বেশি রূপকময়।
বিখ্যাত অভিনেত্রী র্যাচেল ওয়াইসের সাথে ২০০৫ সালে পরিণয়ে সূত্রে আবদ্ধ হন ড্যারেন। পরের বছরেই এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। হঠাৎ করে ২০১০ সালের দিকে পৃথক হয়ে যান। মাদার সিনেমার কাজ চলাকালে জেনিফার লরেন্সের সাথে সম্পর্ক হতে থাকলেও ২০১৭ সালের নভেম্বরেই সমাপ্তি ঘটে গল্পের। হতে পারে ব্যক্তিগত জীবনটাকে সেভাবে গুছিয়ে নেওয়া হয়ে ওঠেনি। ভেনিস এবং বার্লিনে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে থেকেছেন প্রধান বিচারকের পদে। জিতেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার। মাদার তাত্ত্বিকতার জন্য দর্শকপ্রিয়তায় আশানুরূপ সাড়া না ফেললেও বোদ্ধামহলের প্রশংসিত হয়েছে দারুণ।
যাহোক, এইবার ধর্মতত্ত্ব মোতাবেক সৃষ্টির পৌণপুনিকতায় আসা যাক। নৃশংসভাবে সন্তানের অকাল মৃত্যুতে উন্মত্তপ্রায় মা। কবি তাকে সান্ত্বনা দেন। ভক্তদের অপরাধকে ক্ষমা করতে বলেন। নতুন করে শুরু করতে চান সব কিছু। কিন্তু মায়ের ধৈর্য্যের বাধ ভেঙে গেছে। তিনি তার সমস্তটা নিয়ে কবিকে ঘিরে রেখেছিলেন। অথচ সবটাই ভক্তদের দিয়ে দিলো কবি! এমনকি পুত্রটাকেও! আর আশা নেই। পেট্রোল ফেলে আগুন দিয়ে দেয় স্বপ্নের বাড়িটাতে। মুহূর্তেই ছাই হয়ে যায় গোটা বাড়ি। আগুনের মধ্য দিয়ে অক্ষত কবি পুড়ে দগদগে হয়ে থাকা পত্নীকে কোলে করে নিয়ে যান বিধ্বস্ত বিছানায়। এখনো শেষ হয়নি। স্ত্রীর ভালোবাসাটুকুই তাকে নিতে হবে। মৃত্যুশয্যায় স্ত্রী সেই অনুমতিও দেন। বুক চিড়ে হৃৎপিণ্ড বের করেন কবি। কবিপত্নীর হৃৎপিণ্ডই সেই ক্রিস্টাল। কবির স্টাডিরুমে সাজিয়ে রাখা সেই ক্রিস্টাল, যার কাছে যাওয়া সকলের জন্য নিষেধ। খুব যত্ন করে স্বচ্ছ ক্রিস্টালটা যথাস্থানে তুলে রাখলেন মহান কবি। হাসলেন। সাথে সাথে গোটা বাড়ি ভস্ম থেকে নতুন হয়ে উঠলো। বিছানায় ঘুম থেকে জেগে উঠলো স্ত্রী। যেন আবার সব শুরু হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ধর্ম আর উপকথায় বিধৃত সৃষ্টির পুনরাবৃত্তির মতো।
গোটা সিনেমা জুড়ে রূপক। কবিপত্নী প্রায় সময়ই ব্যথিত এজন্য যে, কেন অতিথিরা বাড়ির প্রতি অমন শ্রদ্ধাহীন! কবি তার একঘেয়েমি থেকে বের হতেই মনোযোগী হন অতিথিতে। কাবিলের হাতে হাবিলের খুনের মতো অতিথি দম্পতির একপুত্র আরেক পুত্রকে হত্যা করে। শেষকৃত্যের পরে মেহমানে বাড়ি ভরে গেলে মানুষের কর্মদোষেই পানির লাইন ভেঙে যায়। মূলত এই পানির ঘটনা নুহের মহাপ্লাবনকে প্রতীকায়িত করে। মা যেন প্রকৃতির মতোই দিয়ে যাচ্ছেন, আর মানুষ তাদের অকৃতজ্ঞতা দেখিয়েই যাচ্ছে। কবি যেন স্রষ্টার মতোই মানুষকে প্রশ্রয় আর ক্ষমা করে যাচ্ছেন। এমনকি তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিজের পুত্রকেও। অনেকটা সে জন্যই শেষ দিকে কবিপত্নীকে প্রতিশোধপরায়ণ মূর্তিতে দেখা যায়।
ধর্মকে এভাবে ব্যবহার করার জন্য তার নামে সমালোচনা হয়নি, তা না। কিন্তু ড্যারেন মেনে নিয়েছেন সহাস্যে। উপরন্তু তুলে ধরেছেন নিজের ভেতরের আবেগকে। তার ভাষ্যে, ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে সুন্দর চিত্রকল্প বের করে আনা সম্ভব। গ্রিক মিথোলজিতে ইকরাসকে মোমের পাখা লাগিয়ে আকাশে উড়তে দেখা যায়। সূর্যের এতটা কাছে চলে গিয়েছিল যে, তার পাখা তাপে গলে যায়। সে সমুদ্রে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। গল্পটা সত্য হওয়া জরুরি না। জরুরি এইখান থেকে পাওয়া শিক্ষাটা। যা আমাদের জীবনযাপনে মধ্যমপন্থা অনুসরণের নির্দেশনা দেয়। জরুরি সেই চিত্রকল্প, যা আমাদের উড়ার অনুভূতি দেয়। জরুরি সেই অনুভূতি, যা জীবনকে অর্থবাচকতা দেয়। ড্যারেন এরোনফস্কির ‘মাদার’-কেও তাই সত্য হতে হবে, সেই পূর্বধারণা থেকে সরে এসে মুভিটা দেখলেই পুরো স্বাদ পাওয়া সম্ভব।