বইটি হাতে নিয়ে প্রচ্ছদের অপর পিঠ পড়া শুরু করতে পারেন। পড়তে পড়তে আটকে যেতে পারেন একদম শেষ লাইনে। আপনার জন্যই সেখানে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয়েছে,
“মানুষের মাংসের রং কেমন? লাল না?”
প্রশ্নের উত্তর তোলা থাক। প্রচ্ছদ উল্টে আমরা বরং ঢুকে পড়ি বইয়ের একদম ভেতরে। বইয়ের জনরা কঈ হবে? কাল্ট? ক্লাসিক? থ্রিলার? নাকি হরর? সেই সিদ্ধান্তের দায়ভার আপনার ওপর বর্তানো যাক। আমরা বরং ঢুকে যাই বইয়েই। কোন বই? বইয়ের নাম ‘পিনবল’, লিখেছেন এম. জে. বাবু। বইটি প্রকাশ করেছে সতীর্থ প্রকাশনা। বইটি নিয়ে অবশ্য প্রকাশক নিজেই বেশ উচ্ছ্বসিত। বইয়ের শুরুতেই তিনি ‘প্রকাশকের কথা’ অংশেই বলেছেন,
আমরা বিদেশী থ্রিলার লেখকদের বইয়ের প্রতি যে আকর্ষণটা দেখি, তার খুব সামান্যই দেশী থ্রিলার লেখকদের বইতে দেখি। তবে এই বইটা প্রকাশের মাধ্যমে আশা করি, বিদেশী পটভূমিতে লেখা যেকোনো থ্রিলার বইয়ের মাঝে এই বইটি এগিয়ে থাকবে।
কাহিনী
প্রকাশক নিজেই যেমনটা বলছিলেন, বইটি লেখা হয়েছে বিদেশী পটভূমিতে। আরেকটু ভাল করে বললে, লন্ডনের অদূরে নিরিবিলি শহর উইন্ডেনের পটভূমিতে লেখা হয়েছে বইটি। বইয়ের শুরুতেই দেখা যায় বিষণ্ন ডিটেক্টিভ উইল টুরক এক মদের বারে নিজের মতো করে সময় কাটাচ্ছেন। হঠাৎ নিজের পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা ফোন আসে তার কাছে, আর তিনি জানতে পারেন- নিজের শহরেই ঘটে গেছে এক দুর্ধর্ষ খুনের ঘটনা। উইল টুরক তড়িঘড়ি করে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখানে গিয়ে যা দেখেন, তাতে আত্মা হিম হয়ে আসে তার। বইয়ের বর্ণনাতেই লেখক যেমনটা লিখেছেন,
দেয়ালে লাইন ধরে ছয়টা মাথা লাগানো। তাদের কপালের মাঝখান দিয়ে পিন মেরে দেয়ালে টাঙানো হয়েছে। তাদের মুখের ওপর এমনভাবে পিন মারা যেন কে সেটা চেনা দায়।… একজন দানব মানুষের দুই পা ধরে টান দিয়ে যদি আলাদা করে মাটিতে আছাড় দেয় তাহলে এভাবে বিভিন্ন জায়গায় মাংস ছড়িয়ে যাবে, যদি সে আটার খামিরের মতো হয়।
উইন্ডেনের বার্ডার স্ট্রিটে ঘটে যায় এমনই এক নৃশংস হত্যাকান্ড। দেখে মনে হচ্ছিল, কোনো মানুষ নয়। এ যেন সাক্ষাৎ শয়তানের কাজ। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে যাওয়ার আগে এই কেস আসে সেখানেরই পুলিশের ডিটেক্টিভদের হাতে। আর এখানেই আমাদের সাথে পরিচয় হয় উইল টুরক আর হ্যামলেটের। উইল আর হ্যামলেট একসাথে নিজেদের মতো করে কেসটির তদন্ত করতে থাকেন। তদন্তের স্বার্থে তাদের ছুটে বেড়াতে হয় বিভিন্ন জায়গায়। তবে একসময়ে এসে উইলের সময় থমকে যায়। তিনি দেখতে পান, মানুষ না, তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ধেয়ে আসছে এক কালো ছায়া।
কিন্তু কী এই কালো ছায়া? কখনও মনে হয় কোনো শয়তান, কখনও শতবর্ষী কোনো গুপ্তসংঘ, আবার কখনও কেয়ামত নিজেই যেন সন্নিকটে। এভাবেই মিথ, ইতিহাস, কাল্ট আর শয়তানের সাথে লড়তে দেখা যায় দুই ডিটেক্টিভকে। নৃশংস এক খুনের তদন্ত করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে যেন ফণা তুলে ফেলল সাক্ষাৎ কেউটে!
চরিত্র বিশ্লেষণ
উইল টুরক
বইয়ের প্রধান চরিত্র উইল টুরক। পুরো গল্পই পাঠককে পড়তে হয়েছে এই উইলের জবানীতেই। তবে গল্পের শুরুতেই উইলকে নিজের অতীত নিয়ে বেশ বিহ্বল অবিস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। গল্পের বেশিরভাগ জায়গাতেই উইলের এই অতীত যেন বার বারই চলে আসে। নিজের পুরনো প্রেমিকা এলসাকে নিয়ে বারংবারই স্মৃতিচারণ করতে দেখা যায় তাকে। সেই হিসেবে এলসা সত্যিকার অর্থেই গল্পে না থাকলেও বার বার উঠে এসেছে ‘উইল’ চরিত্রটির হাত ধরে। নিজের ভালবাসা নিয়ে গল্পের শুরুতেই গল্পকথক আক্ষেপ করে বলেছেন,
কাউকে ঘৃণা করে জীবন পার করলে পদে পদে হোঁচট খেতে হয় না, কিন্তু ভালোবাসার বেলায় সেটা সত্যিই হয়; বিশেষ করে যখন ভালোবাসা পেয়ে আবার হারানো হয়। জীবন পানসে হয়ে যায়, প্রত্যেকটা অনুভূতি পাহাড়ের মতো বড় হয়ে বুকের ওপর চেপে বসে।
উইলের জবানীতে তাকে সঙ্গী হারানোয় কাতর একটি মানুষ হিসেবে আমাদের মনে হয়। তবে শুধু অতীতই নয়, উইলকে দেখা যায় নিজের বর্তমান নিয়েও বেশ আক্ষেপ করতে। বইয়ের মাঝেই তিনি বলেছেন,
আমি প্রতিনিয়ত ভাবি, ইশ যদি আমি উইন্ডেনে না থাকতাম, তাহলে কতই না ভাল হতো।
এজন্য অবশ্য উইলকে দোষ দেওয়া যায় না। এমন নৃশংস খুনের দৃশ্য কে-ই বা দেখতে চায়? তবে বাস্তুব জীবনে এসব আক্ষেপ থাকলেও লেখক উইলকে বেশ সাহসী একটি চরিত্র হিসেবে অঙ্কন করেছেন। গল্পের প্রায় জায়গাতেই আমরা তাকে বেশ কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে দেখি। তবে সেসব সিদ্ধান্তের অনেকাংশই অবশ্য সাহসী থেকে বেপরোয়াতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। সেরকম চিন্তা করলে উইলকে বেপরোয়া একটি চরিত্র চিন্তা করলে আমাদের খুব একটা ভুল হবে না।
তবে আপনি যদি উইলকে একেবারেই বেপরোয়া ভেবে ফেলেন, তাহলে কিছুটা সমস্যা থেকে যায়। নিজ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনি বেপরোয়া হন বটে, কিন্তু ঘটনার ‘হিট অফ দ্য মোমেন্ট’-এ তাকে মাথা ঠান্ডা রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, উইলের সেসব সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ সময় ফলপ্রসূ হয়েই দেখা দেয়।
উইলের আরেকটি গুণ গল্পে বেশ প্রকট হয়ে দেখা দেয়, আর সেটি তার ‘জেদ’। তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের মর্জিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। আমার মনে হয়, লেখক এক্ষেত্রে উইল চরিত্রের মধ্যে একজন চোয়াল আঁটা ডিটেক্টিভের ছাপই দেখতে চেয়েছেন। যেমনটা আমরা সচারচর দেখে থাকি। ধর্মীয় বিশ্বাসে উইল নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়, তবে কোনো ধর্মের প্রতি তাকে বিদ্বেষ পোষণ করতে দেখা যায় না। বিশেষত, বন্ধু হ্যামলেট যেখানে নিখাদ ক্যাথলিক, সেখানে হ্যামলেটের কোনো আচরণ নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা যায় না তাকে। সেই মোতাবেক উইলকে আমরা একজন সহনশীল ব্যক্তি হিসেবে ভেবে নিতে পারি।
‘উইল’ চরিত্রটি অঙ্কনের সময় লেখক চিরাচরিত ডিটেক্টিভদের কথা মাথায় রেখেছিলেন কিনা কিংবা ছোটবেলা থেকে পড়া ডিটেক্টিভ গল্প তাকে অবচেতনভাবেই এই চরিত্র গড়তে প্রভাব ফেলেছিল কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ, উইল পুলিশ অফিসার হলেও বেশিরভাগ সময়েই অস্ত্রের চেয়ে নিজের মগজ খাটাতেই তিনি বেশি ভালবাসেন, যেমনটা আমরা পূর্বে পড়া আইকনিক গোয়েন্দা চরিত্রগুলোতে দেখেছি। তবে এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায়- ‘উইল’ চরিত্রের মধ্যে লেখক কর্তৃত্বপরায়ণ ভাব পুরে দিয়েছেন ষোলআনা। হ্যামলেটের সহযোগী হলেও গল্পের বেশিরভাগ সময়েই তাকে নিজ সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্তৃত্ব ফলাতে দেখা যায়।
হ্যামলেট
হ্যামলেট মূলত গল্পের মূল চরিত্র ‘উইল’-এর সহযোগী। চরিত্রটি গল্পের প্লটে উইলের উর্ধ্বতন হলেও তাদের মধ্যে বেশ বন্ধুভাবাপন্ন সম্পর্ক দেখা যায়। বন্ধুবৎসল ছাড়াও হ্যামলেটের আরেকটি গুণ- সে পরিবারঘেঁষা। স্ত্রী লরার প্রতি হ্যামলেটের ভীষণ ভালবাসা ও সহমর্মিতা চোখে পড়ে। এছাড়াও, হ্যামলেট একজন দায়িত্ববোধসম্পন্ন মানুষ। তবে উইলের উর্ধ্বতন হলেও গল্পে হ্যামলেটকে উইল কর্তৃক প্রভাবিত হতে দেখা যায়। উইলের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত সে সহজভাবেই মেনে নেয়।
তবে বইয়ের কোথাও কোথাও হ্যামলেটকে উইলের প্রতিচ্ছবি চরিত্র বলেও মনে হতে পারে। কেননা, যেসব ঘটনা উইলের সাথে ঘটে, তার অনেক ঘটনারই সাক্ষী হ্যামলেটও। কিন্তু এই বইয়ের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, বইয়ের শেষাংশের আগ অবধি হ্যামলেটকে বাহুল্য বলে মনে হয়। মনে হয়, এই চরিত্র না থাকলেও গল্পে বিশেষ ফারাক থাকত না। কিন্তু এই ভাবনা দূর হয়ে যায় বইয়ের একদম শেষে গিয়ে। কেন এমনটা মনে হয় সেটা জানতে হলে অবশ্য বইটি পড়তে হবে।
নিউট
কখনও কখনও গল্পে এমন কিছু চরিত্র থাকে যারা বেশিরভাগ সময় আড়ালে থাকলেও গল্পে বিশাল এক ছাপ রেখে যায়। ‘পিনবল’-এর নিউট অনেকটা সেরকম এক চরিত্র। বেশিরভাগ দৃশ্যায়নেই সে খুব বড় পরিসরে নিজের ভূমিকা জানান দেয়নি। পেশায় সে-ও পুলিশের চাকরি করে বটে, কিন্তু সে উইল কিংবা হ্যামলেটের মতো ডিটেক্টিভ নয়। সে মূলত উইন্ডেন পুলিশের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের প্রধান। উইন্ডেনে যে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটে, সেখানে অবশ্য ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের কাজ একটু বেশি থাকে। কিন্তু গল্পের সব দৃশ্যে উইল কিংবা হ্যামলেটের যে নির্বিঘ্ন চলাচল দেখা যায়, সেরকমটা নিউটের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
তবে, তাই বলে নিউটকে একেবারে কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবলে ভুল হবে। গল্পে সে এক বিশাল গুরুত্ব বহন করে থাকে। হ্যামলেটের মতোই নিউটের গুরুত্ব বুঝতে ‘পিনবল’ শেষ পর্যন্ত পড়ে যেতে হবে।
কাল্ট ও মিথ
‘পিনবল’ বইয়ে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু প্রাচীন কাল্টের কথা বলা আছে। সেসব কাল্ট নিয়ে বেশ কিছু মিথেরও উল্লেখ আছে বইতে। মূলত এ ধরনের কিছু কাল্টের অস্তিত্ব ইংল্যান্ডে একেবারেই ছিল না তা নয়। ২০১৫ সালেই ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ উল্লেখিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ‘রয়্যাল কোর্ট অব লন্ডন’ এর এক বিচারক দাবি করেন- চলমান এক মামলায় একটি শিশু নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল শুধু কিছু মানুষের ‘স্যাটানিক কাল্ট’ এর সংস্কৃতি চরিত্রায়ন করতে গিয়ে।
‘পিনবল’-এ এরকম কিছু ‘স্যাটানিক কাল্ট’-এর উল্লেখ পাওয়া যায়, এবং যেহেতু গল্পের প্লট লন্ডন থেকে কাছেই, তাই প্লটের কাল্টবিষয়ক ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়ার কিছু নেই। কারণ ইংল্যান্ডে এর প্রচলন ভালভাবেই ছিল।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
যেমনটা বার বার বলা হয়েছে, ‘পিনবল’ লেখা হয়েছে বিদেশী পটভূমিতে। প্রথমে একে পড়ে তাই অনুবাদ ঘরানার মনে হলেও এটি আসলে একটি মৌলিক বই। বাংলা থ্রিলার সাহিত্যে এই বইটি একটি বিশেষ আবেদন রাখে। কারণ, ইতিপূর্বে লন্ডনের স্থানীয় কাল্ট ও মিথ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য কোনো মৌলিক থ্রিলার গল্পের রচনা হয়নি। এছাড়াও, আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ করতে হয়, বইয়ে নৃশংস জায়গাগুলো লেখক বেশ ভালভাবেই বর্ণনা করতে পেরেছেন। এতে হরর-থ্রিলার জনরার যে উদ্দেশ্য- পাঠকের মনে ভীতির সৃষ্টি করা, সেটি বেশ ভালভাবেই পূরণ হয়েছে বলে মনে করি। বইটির প্রকৃত স্বাদ পেতে গেলে অবশ্য আপনাকে এই বই শেষ অব্দি পড়ে ফেলতে হবে। কখনও কখনও আপনার একে ‘কাঁচা হাতে লেখা বাংলা থ্রিলার গল্প’ মনে হতে পারে, কিংবা আপনি একে ব্যাখ্যাহীন হরর তকমা দিয়ে ফেলে দিতে পারেন। কিন্তু আমি নিশ্চিত, গল্পের শেষে গিয়ে কিছুটা হলেও আপনার ভাবনার পরিবর্তন হবে। এ কথাটি অবশ্য লেখক নিজেই শুরুতে বলে নিয়েছেন,
গতানুগতিক হরর-থ্রিলার মনে করে বইটি রেখে দিয়েন না। একদম শেষ পর্যন্ত না যাওয়ার আগে হররের স্বাদ পেলেও থ্রিলারের স্বাদ পাবেন না।
শুধু তা-ই নয়, এই যে গল্পের শেষাংশে যে টুইস্টের দেখা মেলে, সেটাকেও গতানুগতিক টুইস্টের সাথে মেলানো যাবে না। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, বেশিরভাগ পাঠকই পড়তে পড়তে এমন কিছু আন্দাজ করতে পারবেন না।
তবে এত কিছু ভাল-র সাথে কিছু দৃষ্টিকটু ব্যাপারও বইয়ে চোখে পড়েছে। যেমন- মূল চরিত্রগুলো বাদে পার্শ্ব চরিত্রগুলোর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখককে বেশ তাড়াহুড়া করতে দেখা যায়। অনেক সময় হুট করে একেকটি চরিত্র সামনে আনা হয়, যেখানে ঐ চরিত্র সম্বন্ধে পর্যাপ্ত তথ্য পাঠকের কাছে দেওয়া হয় না। এমনকি, উইলের জবানীতে তদন্তের সময় কিছু অংশে অসংলগ্ন দৃশ্যের অন্তর্ভুক্তি চোখে পড়ে। যেমন- বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে তদন্তের স্বার্থে ‘ফোনবুথ’-এর কাছে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু, কোন সূত্র ধরে হ্যামলেট উইলকে সেই কথা বলেছে তার উল্লেখ নেই। এমনকি, এই প্রসঙ্গও পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার বেশ কিছু স্থান ও সময়ের হিসেব লেখক গুলিয়ে ফেলেছেন। ‘অধ্যায় বাইশ’ এই একবার লেখক বলেছেন ক্রুশ তিনি দরজায় ঝুলিয়েছেন, পরক্ষণেই বলেছেন সেটি নাকি তার হাতে। এ ধরনের অসংলগ্নতা এমন দুর্দান্ত বইয়ের মাঝে কাম্য নয়।
আবার অনেকাংশে পড়ে মনে হয়েছে, লেখক বইটি বেশ লম্বা সময় পর পর লিখতে বসেছেন। যেমন- বইটির ‘অক্টোবর ২০২১’ সংস্করণের ১৯১ পৃষ্ঠাতেই হ্যামলেটের উক্তিকে গল্পকথক নিউটের উক্তি বলে উপস্থাপন করেছেন। ‘অধ্যায় আটাশ’-এও গার্সিয়াকে লেখক ‘ভিনসেন্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন, যেখানে ‘ভিনসেন্ট’ সম্পূর্ণ আলাদা এক চরিত্র। এই ব্যাপারগুলো পড়ার সময় বেশ বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। এছাড়াও, আরো যে ব্যাপারে বিরক্তি চলে আসে, সেটি হলো বইয়ের বানান ও সম্পাদনা। বিশেষ করে ‘আমি’ এর পর যে ‘পায়নি’র বদলে ‘পাইনি’ হয়, সেটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে (পৃষ্ঠা ২৬)। শুধু তা-ই নয়, উত্তম পুরুষের জবানীতে যে বানান ‘যায়’ এর বদলে ‘যাই’ হয়, সেটিও এখানে মানা হয়নি। এছাড়া বইয়ে বানান ভুলের আধিক্য আছে, যেটি টান টান দৃশ্যের উত্তেজনার সুতো কেটে দেয়। অবশ্য বানান বিষয়ক ভুলের জন্যে প্রকাশক পরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে দুঃখও প্রকাশ করেছেন।