সাদাকালো ফ্রেমে একটি অপরিচ্ছন্ন পাথুরে মেঝের চিত্র ফুটে উঠবে। কয়েক সেকেন্ড মেঝের এমন স্থির চিত্রের দিকে তাকিয়ে দর্শক যখন মেঝেতে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা সেটা অনুসন্ধান করতে তৎপর হবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এক ঝটকা পানি এসে মেঝেটাকে ভিজিয়ে দেবে। পাশাপাশি দর্শককে দিয়ে যাবে নতুন এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সন্ধান। ভেজা মেঝেতে ফুটে উঠবে মুক্ত আকাশের স্পষ্ট প্রতিফলন। খোলা আকাশে শোঁ শোঁ গতিতে ছুটে অন্তিম সীমানায় হারিয়ে যেতে দেখা যাবে একটি বিমানকে।
দর্শক যখনই বিমানের গতিপথের দিকে মনোযোগ দেবেন, তখনই আরও কয়েক ঝটকা সাবানের পানির স্রোত এসে সেই মনোরোম দৃশ্যে ব্যঘাত ঘটিয়ে যাবে। একের পর এক পানির ধারা শুধু মেঝেকে পরিষ্কারই করবে না, দর্শকদের মনে জাগিয়ে তুলবে এক নব ভাবনা। মানব জীবনটাই কি এমন নয়? মেঝেতে জমা ময়লার মতোই মানবজীবন কষ্ট-বেদনায় জরাজীর্ণ। আকাশের প্রতিবিম্বের মতো অল্প একটু সুখ এসে ধরা দিলে, মানব মন যখনই কিছুটা আত্মতৃপ্তির স্বাদ পেয়ে বসে। তখনই নদীর স্রোতের ন্যায় কোনো এক নতুন ঝড় এসে সব উলটপালট করে দিয়ে যায়। আবার ঝড়ের রেশ কেটে গেলে, ঝকঝকে মেঝের মতো জীবনকে নতুন ছন্দে সাজানোয় ব্যস্ত হয়ে উঠে মানুষ।
উপরের অনুচ্ছেদটিতে একটি সিনেমার প্রথম দৃশ্যের এক ঝলক তুলে ধরার ক্ষুদ্র একটু প্রয়াস করা হয়েছে। যে সিনেমার নির্মাতা আলফোনসো কুয়ারোন আর যেটিকে শুধু গত বছরের সেরা সিনেমাই নয়, সিনেজগতের সর্বকালের অন্যতম সেরা সৃষ্টির কাতারে স্থান দেওয়া হচ্ছে, সে সিনেমাকে নিয়ে মন্তব্য করা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। কুয়ারোনের সৃষ্টিকর্ম ও সৃষ্টিশীলতা সম্পর্কে যাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, তারা জানেন, কুয়ারোনের সিনেমা মানেই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা। কুয়ারোনের সিনেমা মানেই, অভিনব এক শিল্পের আবির্ভাব। আর উপরে বর্নিত ‘রোমা’ সিনেমাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১৮ সালের সিনে দুনিয়া আলোকিত করে উদয় হওয়া সিনেমা ‘রোমা’ নিয়ে এই লেখাটি।
‘রোমা’ সিনেমাটিকে আপাতদৃষ্টিতে ড্রামা জনরার সিনেমা হলেও এটি আসলে সেমি-অটোবায়োগ্রাফিক্যাল ড্রামা। কুয়ারোনের জীবনের বিশেষ এক সময়ের, বিশেষ কিছু ঘটনা, বিশেষ একটি স্থান ও বিশেষ এক চরিত্রের অবতারণা ঘটেছে সিনেমাটিতে। লাতিন- মেক্সিকান পরিচালক হিসেবে প্রথম অস্কারজয়ী কুয়ারোনের শৈশবকাল কেটেছে মেক্সিকো সিটির কোল ঘেঁষে গড়ে উঠে রোমা এক নগরীতে। আর তাই রোমার প্রতি আলাদা এক আবেগ, টান ও কৌতূহল কাজ করাটাই স্বাভাবিক তার। তাছাড়া সে সময় মেক্সিকোতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধ চলমান থাকার ফলে কুয়ারোনের স্মৃতির খাতায় সে সময়টা ছিল অমলিন। আর তাই তো, স্মৃতিকে রোমন্থন করে নান্দনিক চিন্তাধারা ও কৌশলগত বিদ্যার সমন্বয়ে তিনি জন্ম দিয়েছেন ‘রোমা’ নামক শিল্পকে।
সময়টা ১৯৭০-৭১ সাল। রোমা নামের এলাকায় বসবাস করতো একটি মধ্যবিত্ত পরিবার। উচ্চশিক্ষিত স্বামী-স্ত্রী জুটির সংসার আলোকিত করে ছিল চারটি ফুটফুটে সন্তান। তাদের সাথে থাকতেন গৃহকর্তার মা। এছাড়া যারা কাগজে কলমে পরিবারের সদস্য না হলেও, পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হতো, তেমন দুজন গৃহপরিচারিকা। আর তাদের একটি পোষা কুকুর। সিনেমায় পুরো পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের অনেক ছোট ছোট মুহূর্ত থেকে শুরু করে বড় বড় পরিবর্তনগুলো সমান্তরালে দেখানো হয়েছে।
আর বেশিরভাগ সিনেমার মতো এতেও একটি চরিত্রকে কেন্দ্রীয় হিসেবে গণ্য করে সিনেমার কাহিনীকে চিত্রায়িত করা হয়েছে। আর এ সিনেমায় মূল চরিত্রে ছিল ক্লেও। সে ছিল সেই দুজন গৃহপরিচারিকার একজন। মেক্সিকোর কোনো এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে পেটের দায়ে আগত ক্লেও হয়তো নামে গৃহপরিচারিকা ছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, সে ছিল সেই সংসারের চালিকাশক্তি। পরিবারের ভরণপোষণের দায়ভার হয়তো কর্তা-কর্ত্রীর কাঁধে ছিল। তবে পরিবারের নিত্যদিনের সকল কার্যকলাপেই ক্লেওর ভূমিকা ছিল সক্রিয়।
সূর্যোদয় থেকে শুরু করে রাতে চারপাশ নীরব না হওয়া পর্যন্ত ক্লেওর ছুটোছুটি চলতেই থাকত। বাচ্চাদের ঘুম থেকে ওঠানো, স্কুলের জন্য তৈরি করা, নাস্তা খাওয়ানো, স্কুল থেকে আনা, ঘুম পাড়ানো ইত্যাদি সব কাজই করতে হতো তাকে। এছাড়া গৃহস্থালির অন্যান্য কাজ তো আছেই। কুকুরের বিষ্ঠা পরিষ্কার থেকে শুরু করে খাবার তৈরি করা, কাপড় ধোয়া, ঘরদোর সাফ-সুতরো সবই ছিল দায়িত্ব। গৃহপরিচারিকা আদেলা অন্যান্য কাজে তাকে সাহায্য করলেও, বাচ্চাগুলোর শুধু ক্লেওর সাথেই সখ্যতা ছিল।
কিন্তু শুধু একজন গৃহপরিচারিকা হিসেবে পরিচয় দিয়েই তো ক্লেওকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা যায় না। সেও একজন রক্তে-মাংসে গড়া মানবী। বাকি সব যুবতী নারীর মতো তার দেহ-আত্মা- মন জুড়েও আবেগ অনুভূতি সঞ্চারিত হয়। তারও নিজস্ব কিছু চাওয়া-পাওয়া, ভালো লাগা আছে। তারও ভালোবাসার মানুষ খোঁজার ও ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। আর তাই তো, শত কাজের ফাঁকে খানিকটা অবসরের দেখা পেলে ব্যক্তিগত জীবনটাকে উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ত ক্লেও।
আদেলার প্রেমিক রামোসের আত্মীয় ফার্মিনের সাথে প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে পড়ে ক্লেও। আর সেই প্রেমের সূত্র ধরে ফার্মিনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলে এক সময় সে গর্ভবতীও হয়ে পড়ে। কিন্তু ক্লেওর বাচ্চার বাবা হওয়া সত্ত্বেও সে খবর শোনামাত্র কাপুরুষের মতো পালিয়ে যায় ফার্মিন। আর সে সময়েই সিনেমার মোড় অন্য একদিকে ঘুরতে শুরু করে। এরপরে যে ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকে, এতে ক্লেওর স্বাভাবিক জীবনের ইতি ও সংগ্রামী ক্লেওর যাত্রাপথের প্রারম্ভ হবে।
ক্লেও ছাড়াও সিনেমায় আরও একজন নারীর জীবনের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গৃহকর্ত্রী মিসেস সোফিয়াকে সিনেমার প্রথমাংশে দর্শক স্বামী আন্তোনিও ও চার সন্তান পাকো, পেপে, তোনিও, সোফি ও ঘর-সংসার নিয়ে সুখী মনে হবে। কিন্তু গল্প যত এগুবে ক্লেওর পাশাপাশি মিসেস সোফিয়ার জীবনেও কালো মেঘ ছেয়ে আসবে। তার স্বামী আন্তোনিও ডাক্তার হবার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় কনফারেন্সে যাবার নাম করে স্ত্রী ও সন্তানদের যে অনেকদিন যাবত ধোঁকা দিয়ে আসছিলেন, তা হুট করে সোফিয়া জানতে পারেন।
পরকীয়ায় আন্তোনিও এতটাই মজে ছিলেন যে, একটিবার পরিবারের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকাতেও রাজি হননি। মিসেস সোফিয়া কিন্তু ক্লেও থেকে কোনো ক্ষেত্রেই কম আত্মনির্ভরশীল ও শক্ত মন-মানসিকতার নারী ছিলেন না। নিজের মানসিক অবস্থা যাই হোক না কেন, সন্তানদের বর্তমান ও ভবিষতের কথা চিন্তা করে বাস্তবতাকে মোকাবেলা করতে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন তিনি।
সিনেমাটি ক্লেও ও মিসেস সোফিয়া এ দুই নারীর জীবনের অন্তর্দ্বন্দের প্রতিচ্ছবি। পুরুষতান্ত্রিক এক সমাজে দুইজন নারী যখন দুজন ভীরু ও স্বার্থপর পুরুষের বেইমানি, অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার শিকার হয়, তখন তাদের জীবনের গতিপথ যেদিকে প্রবাহিত হয়, তারই চিত্ররূপ সিনেমাটি। এছাড়া আপনজনদের মুখের দিকে চেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনুকূলে আনার প্রচেষ্টারত একজন মা ও একজন মাতুল্য নারীর জয়গান গাওয়া হয়েছে সিনেমায়।
ক্লেওর বিপদের দিনে তাকে যেমন নিজের ছায়াতলে আশ্রয় দিয়েছিলেন মিসেস সোফিয়া, ঠিক সেভাবে তার দুঃসময়ে তার পরিবাকে পরম মমতায় বুকে আগলে রেখেছিল ক্লেও। মিসেস সোফিয়া ও তার পরিবার না থাকলে যেমন ক্লেও দুমড়ে মুচড়ে গুড়িয়ে যেত, তেমনি ক্লেও এর অনুপস্থিতিতে মিসেস সোফিয়া ও তার বাচ্চাদের জীবনে নেমে আসত বিশৃঙ্খলা। এভাবেই মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠেছিল ক্লেও ও মিসেস সোফিয়ার নিঃসঙ্গতা ও বিরহ ব্যাথায় বোনা গল্প।
‘রোমা’ সিনেমায় ক্লেও চরিত্রে ইয়ালিৎজা আপারিশিও এক কথায় ছিলেন, অতুলনীয়া। এই প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়কারী এ অভিনেত্রী প্রতিটা দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করে যাবে। ক্লেও সামান্য একটি চরিত্র নয়, ক্লেও একজন সাহসী ও মায়াবতী নারীর বিমূর্ত প্রতীক। পরিচালক নিজের শৈশবের আয়ার চরিত্রটি যে নিপুণতায় পরিবেশন করতে চেয়েছেন ক্লেও চরিত্রের মাধ্যমে ইয়ালিৎজার তার ষোল আনাই পূর্ণ করেছেন। এছাড়া মিসেস সোফিয়া চরিত্রে মারিনা দে তাভিরা চমৎকার অভিনয় করেছেন। এ দুজন নারীকেই কখনও হাসতে, কখনও কাঁদতে, কখনও কথার ফুলঝুরি ঝরাতে আবার কখনও নিশ্চুপ নীরবতায় হারিয়ে যেতে দেখবেন দর্শক। তাছাড়া বাচ্চাগুলোর অভিনয় বেশ সরলতা ও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর ছিল।
‘রোমা’ সিনেমাটির সবথেকে অপূর্ব দিক হচ্ছে, এর সিনেমাটোগ্রাফি। সিনেমার শুরুর দিকে বাড়িটির আঙিনা, প্রতিটি ঘর, প্রতিটি আসবাবপত্র, ছাদে শুকাতে দেওয়া কাপড়, পড়ন্ত বিকেলের এক মুঠো রোদ ইত্যাদি ক্যামেরায় ধারণের কৌশল দেখলেই সেটা বুঝে যাওয়ার কথা। যেহেতু পরিচালক ও চিত্রনাট্যকারের পাশাপাশি সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবেও কুয়ারোন নিজেই ছিলেন। তাই প্রতিটি শট নিজস্ব ঢঙেই নিয়েছেন তিনি।
পর্দায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করলে দর্শক ধরতে পারবেন যে, কোনো চরিত্র, বস্তু অথবা স্থানকে শুধু নির্দিষ্ট করে তুলে না ধরে, পারিপার্শ্বিক অবস্থাকেও বিশাল পরিসরে ক্যামেরাবন্দী করেছেন তিনি। যাতে দর্শকের চোখে সামগ্রিক পরিবেশ একইসাথে ধরা দেয়। সাদাকালো ফ্রেমকে ক্যামেরার কারসাজিতে তিনি জীবন্ত ও বর্ণিল সৌন্দর্যে এঁকেছেন।
দরজা লাগানোর শব্দ থেকে শুরু করে কুকুরের ঘেউ ঘেউ, শিলাবৃষ্টির আওয়াজ, চায়ের কাপের টুংটাং শব্দ, গাড়ির হর্ণের শব্দ, রাস্তাঘাটের কোলাহল সবকিছুতে কেমন যেন এক সূক্ষ্মতার রেশ। অনেক মনোমুগ্ধকর ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরকেও হার মানাবে এসব বাস্তবিক শব্দের খেলা। মেক্সিকো সিটির পথেঘাটের চিত্র, বাসিন্দাদের চলাফেরা ও জীবনযাত্রার একটি অংশ দেখতে পাওয়া যায় সিনেমাটিতে। এছাড়া এর আশেপাশে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা ও গ্রামবাসীর রীতিনীতিরও এক ঝলক দেখা গিয়েছে। তবে সবথেকে যে প্রেক্ষাপটি দর্শক হৃদয়কে নাড়া দেবে, তা হলো ১৯৭১ সালের ২০ জুনের চিত্র।
‘কর্পাস ক্রিস্টি হত্যাকাণ্ড’ নামে এ ঐতিহাসিক ঘটনায় ছাত্র আন্দোলনে প্রায় ১২০ জন নিহত হয়েছিল। সিনেমায় ক্লেওর জীবনের বিভীষিকাময় অধ্যায়ের সাথে এ ঘটনার মেলবন্ধন ঘটানো হয়েছে।
‘রোমা’ কোনো দুর্ধর্ষ থ্রিলার, রোমাঞ্চকর অভিযান অথবা গৎবাঁধা রোমান্টিক গল্পের উপর নির্মিত সিনেমা নয়। কিন্তু এর সাদামাটা গল্পে যে অকৃত্রিমতার আঁচ ও নিরেট ভালোবাসার আভাস দর্শক খুঁজে পাবেন, তা নিতান্তই তুচ্ছ নয়। রোমাতে মিশে আছে বাস্তব দুনিয়ার এক অতি সাধারণ নিয়তির করুণ পরিহাস। কিন্তু রোমা প্রতিটি ফ্রেমে, প্রতিটি দৃশ্যপটে, প্রতিটি চরিত্রে ও প্রতিটি মুহূর্তে যে মায়ার আবেশ জড়িয়ে আছে, তা সত্যিই অপ্রতুল। ‘রোমা’ আর যাই হোক, যেকোনো সিনেমার সাথে এক সারিতে ফেলা যাবে না। কারণ রোমা হচ্ছে ‘চিলড্রেন অব ম্যান’, ‘ই তু মামা তাম্বিয়ান’ এর মতো অবিস্মরণীয় সিনেমাগুলোর নির্মাতারই নিজ হাতে গড়া সিনেমা। তাও ব্যক্তিগতভাবে তার সবথেকে প্রিয় সৃষ্ট। কুয়ারোন সিনেমাটি নিয়ে বলেন,
সমাজের বুকে আঁচড় কেটে যাওয়া সময় ও জীবন থেকে নেয়া কিছু মুহূর্তের সমন্বয়েই গড়ে ওঠে আমাদের ব্যক্তিত্ব, স্থান, কালের সীমায় আবদ্ধ থেকেও আমাদের এ জীবনকে করে তোলে অর্থবহ। কারণ ভিন্ন ভিন্ন প্রাণের সাথে আমাদের যে বন্ধন, তারাও যে ভেসে চলেছে সময়ের অভিন্ন স্রোতে, পাড়ি দিচ্ছে অভিন্ন সীমারেখা, ঠিক আমাদেরই মতো। আমার জীবনের প্রায় ৫০ বছরের পুরনো স্মৃতিকে পর্দায় বন্দী করার এক প্রচেষ্টার নাম রোমা। যে গল্পে উঠে এসেছে মেক্সিকোর সামাজিক যাজকতন্ত্র। সমাজের শ্রেণী বিভাজন ও জাতিতত্ত্ব যেখানে মিলেমিশে হয়ে গেছে একাকার। আর সবকিছু ছাপিয়ে সে গল্পে ফুটে উঠেছে এক নারীর অপরূপ প্রতিচ্ছবি যার রহস্যমাখা ভালোবাসায় কেটেছিল আমার শৈশব। স্থান, কাল ও স্মৃতির মলিন বলিরেখা পেরিয়েও যে ভালোবাসা রয়ে গেছে অমলিন।
গত বছরের ৩০ আগস্ট ৭৫তম ভেনিস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটি প্রথমবারের মতো পর্দায় উন্মোচিত হয়। এরপর একে একে টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, স্যান সেবাস্টিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, নিউইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, নিউ অরলিন্স ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছিল।
রটেন টমেটোসে ৩০০ রিভিউয়ের ভিত্তিতে ৯৬% রেটিং প্রাপ্ত হয়েছে সিনেমাটি। টরেন্টো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘পিপল চয়েজ অ্যাওয়ার্ডে’ সেকেন্ড রানার আপ ও ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন লায়ন’ পুরস্কার জিতে নিয়েছে সিনেমাটি। তবে এতেই শেষ নয়। ৭৬তম গোল্ডেন গ্লোবে কুয়ারোনের সেরা পরিচালকের পুরস্কার ও ‘বেস্ট ফরেইন ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভের সাফল্য তো আছেই। এবার ৯১তম অস্কারের পালা। সেখানেও বেশ ক’টি শাখায় মনোনয়ন পেয়েছে ‘রোমা’, দেখা যাক ক’টা পুরস্কার ঝুলিতে আসে।
সিনেমা সম্পর্কে আরও জানতে আজই পড়ুন এই বইগুলো