মাঝে মাঝেই নতুন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র মুক্তির আগে প্রথমেই যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়ে, সেটি হচ্ছে এর পোস্টারটি বিদেশী কোনো চলচ্চিত্রের পোস্টারের নকল। অবশ্য এ কথা বলিউডের ক্ষেত্রেও সত্য। বলিউডের অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র আছে, যেগুলোর পোস্টার প্রায় হুবহু হলিউডের কোনো চলচ্চিত্রের পোস্টারের অনুকরণে তৈরি। তবে আপনি জেনে হয়ত অবাক হবেন, পোস্টার নকলের এই অভিযোগ থেকে মুক্ত না খোদ হলিউডও। আপনি যদি ভালো করে লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখতে পাবেন হলিউডে মৌলিক ডিজাইনের পোস্টারের সংখ্যা একেবারেই কম। অধিকাংশ চলচ্চিত্রের পোস্টারই পূর্বের কোনো না কোনো পোস্টারের সাথে হুবহু না হলেও আংশিক মিলে যাবে।
এ ধরনের সব পোস্টারকে অবশ্য নকল বলা যায় না। বরং এটি হলিউডের ব্যবসায় ঝুঁকি না নেওয়ার প্রবণতার একটি উদাহরণ। একটি চলচ্চিত্র সফল ব্যবসা করার পর যেরকম হলিউডে তার একের পর এক সিকুয়েল, প্রিকুয়েল নির্মিত হতে থাকে, সেরকমই কোনো জঁনরার জন্য বিশেষ কোনো ডিজাইনের পোস্টার সফল বলে মনে হলে ভবিষ্যতেও ঐ জঁনরার চলচ্চিত্রের জন্য একই টেমপ্লেটের পোস্টার ডিজাইন করাকেই প্রযোজকরা তাদের ব্যবসার জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করেন। এবং দর্শকরাও এক্ষেত্রে সহজেই পোস্টার দেখেই মোটামুটি আঁচ করতে পারে, চলচ্চিত্রটি কীরকম হতে যাচ্ছে।
আমাদের এই লেখায় তুলে ধরা হয়েছে প্রধানত হলিউড এবং সেই সাথে আরো কিছু চলচ্চিত্রে শিল্পে বহুল ব্যবহৃত কিছু ফরম্যাটের পোস্টারের বৈশিষ্ট্যগুলো। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে, পোস্টারের ডিজাইন কোনো গাণিতিক সূত্র মেনে চলে না। তাই বৈশিষ্ট্যগুলো অনেক ক্ষেত্রে মিলে গেলেও এর ব্যতিক্রমও খুঁজে পাওয়া যাবে অনেক। তবে আশা করা যায়, এই পোস্টটি পড়ার পর বিভিন্ন ধরনের পোস্টারের উপর আপনার মোটামুটি একটি ধারণা তৈরি হবে এবং ফলে ভবিষ্যতে এ জাতীয় কোনো পোস্টার দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন ঐ সিনেমাটি কোন জঁনরার হতে পারে এবং সেটি আপনার দেখা উচিত হবে কিনা।
পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ানো: রোমান্টিক কমেডি
হলিউডের পোস্টারে প্রধান অভিনেতা-অভিনেত্রী পরস্পরের পিঠে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এরকম দৃশ্য থাকলেই মোটামুটি নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যায় চলচ্চিত্রটি রোমান্টিক জঁনরার। এবং খুব বেশি সম্ভাবনা, চলচ্চিত্রটি রোমান্টিক-কমেডি। এ ধরনের পোস্টারের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলোতে সাদা রংয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত দর্শকের দৃষ্টি যেন ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে নায়ক-নায়িকার প্রতি নিবদ্ধ থাকে, সেজন্যই এরকম ডিজাইন করা হয়।
এ ধরনের পোস্টারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো How to Lose a Guy in 10 Days (2003), Four Christmases (2008), Killers (2010), No Reservations (2007), Pretty Woman (1990) প্রভৃতি। এমনকি ১৯৪৯ সালের ক্লাসিক্যাল রোমান্টিক কমেডি Adam’s Rib এর একটি বিকল্প পোস্টারেও এই টেমপ্লেট ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও অধিকাংশ রোমান্টিক চলচ্চিত্রের পোস্টারে পোশাক হিসেবে লাল রংয়ের অত্যধিক ব্যবহার লক্ষণীয়, যেহেতু লালকে বলা হয় ভালোবাসার রং। বিশেষ করে প্রধান নারী চরিত্রের পোশাকেই লাল রংয়ের ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের পোস্টারের মধ্যে আছে The Ugly Truth (2009), Intolerable Cruelty (2003), There’s Something About Mary (1998), ফরাসী চলচ্চিত্র Amélie (2001) প্রভৃতি।
সমুদ্র সৈকতের ফোরগ্রাউন্ডে বড় আকারের মুখাবয়ব: রোমান্টিক ড্রামা
হলিউড চলচ্চিত্রের পোস্টারের ক্ষেত্রে আরেকটি জনপ্রিয় ফরম্যাট হলো, সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা অথবা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকা যুগলের ছবি এবং সেই ছবির ফোরগ্রাউন্ডে পোস্টারের উপরের অংশ জুড়ে তাদের বড় আকারের মুখাবয়ব ব্যবহার করা। এ ধরনের পোস্টার দেখলেই নিশ্চিতভাবে বলে দেওয়া সম্ভব, চলচ্চিত্রটির জঁনরা রোমান্টিক ড্রামা। মিলনাত্মক না হয়ে বিয়োগাত্মক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে এ ধরনের পোস্টারে রোমান্টিক কমেডির মতো লাল রংয়ের আধিক্য দেখা যায় না। এ ধরনের পোস্টারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো City of Angels (1998), Forever Young (1992), Creation (2009), The Last Song (2010) প্রভৃতি।
বিশাল আকৃতির চোখ: হরর-থ্রিলার
হলিউডের অনেক চলচ্চিত্রের পোস্টার জুড়ে বিশাল আকারের চোখের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহৃত হয় হরর চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। চোখের ছবি দ্বারা দর্শককে এমন একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় যে, কেউ তার উপর নজরদারি করছে অথবা তার উপর কোনো অশুভ শক্তির দৃষ্টি পড়েছে। এ ধরনের পোস্টারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো The Eye (2008), The Grudge 2 (2006), The Skeleton Ke (2005), Candyman (1992) প্রভৃতি।
তবে সব সময়ই যে হরর চলচ্চিত্রে চোখের ব্যবহার হয়, এমন না। মাঝে মাঝে থ্রিলার বা সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রেও এর ব্যবহার দেখা যায়। যেমন Avatar (2009), Blindness (2008), Bionic Woman (2007)। এর বাইরে ড্রামাসহ অন্যান্য জঁনরার চলচ্চিত্রেও এর ব্যবহার হতে পারে। যেমন- ড্যারন অ্যারনফস্কি পরিচালিত Requiem for a Dream (2000) চলচ্চিত্রে মানুষের শরীরের উপর নেশা জাতীয় দ্রব্যের বিরূপ প্রভাব বোঝাতে নেশাগ্রস্ত যুবকের চোখের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
আরেক ধরনের পোস্টারের ফরম্যাটও বেশ জনপ্রিয়, যেখানে প্রধান চরিত্রের পুরো চেহারা দেখানো হয়, কিন্তু তার চোখ দুটো কোনো কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকে, অথবা চোখ ঢেকে দিয়ে সেই স্থানে মুভির নাম লেখা থাকে। এ ধরনের মুভিও হরর হতে পারে, যেমন স্প্যানিশ চলচ্চিত্র Julia’s Eyes (2010)। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ ধরনের মুভির জঁনরা হয়ে থাকে ক্রাইম থ্রিলার, যেখানে প্রধান চরিত্রকে বন্দীত্ব বরণ করতে হয় অথবা তার অতীত কৃতকর্মের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হয়। Syriana (2005), Holly (2006), Rendition (2007), Spartan (2004) ইতালিয়ান চলচ্চিত্র Garage Olimpo (1999) এরকমই কয়েকটি চলচ্চিত্র।
হলুদ ব্যাকগ্রাউন্ড: ইন্ডি মুভি
ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুভি, সংক্ষেপে ইন্ডি মুভি বিভিন্ন দিক থেকে মূলধারার চলচ্চিত্র থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রধান প্রধান স্টুডিওগুলোর নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীনচেতা নির্মাতাদের উদ্যোগে নির্মিত হয় বলে এগুলোর কাহিনী, চিত্রায়ণ সব কিছুই ভিন্নধর্মী এবং গবেষণাধর্মী হয়ে থাকে। আর সে ছাপ পড়ে এদের পোস্টারেও। অধিকাংশ ইন্ডি মুভির পোস্টারেই হলুদ ব্যাকগ্রাউন্ডের প্রাধান্য দেখা যায়। প্রধানত মূলধারার চলচ্চিত্র থেকে নিজেদেরকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করাই এর উদ্দেশ্য। এ ধরনের পোস্টারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে The King’s Speech (2010), The Help (2011), Little Miss Sunshine (2006), The Men Who Stare At Ghosts (2009) প্রভৃতি।
নীল ব্যাকগ্রাউন্ড: প্রকৃতি বিষয়ক মুভি বা ডকুমেন্টারি
প্রকৃতি বা কোনো প্রাণী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র বা পূর্ণদৈর্ঘ্য তথ্যচিত্রের পোস্টারগুলোর অধিকাংশই এই ফরম্যাট অনুসরণ করে। পেছনে মুক্ত নীল আকাশ এবং নিচে নীল সমুদ্র অথবা সবুজ ঘাস। নাম লেখার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই ব্যবহার করা হয় সাদা রংয়ের টেক্সট। যে প্রাণীর উপর নির্মিত, তার একটি বা এক জোড়ার একটি বড় ছবিও থাকে, যে ছবিটি অধিকাংশ সময় পেছন দিক থেকে অথবা পাশ থেকে তোলা হয়। নীল আকাশে মাত্রাতিরিক্ত বড় একটি সাদা রংয়ের চাঁদও ব্যবহার করা হয় অনেক সময়। উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে আছে The March of the Penguines (2005), Oceans (2009), The Blue Planet (2001), Winged Migration (2001) প্রভৃতি।
পেছন থেকে তোলা ছবি: একাকী নায়কের প্রতিশোধমূলক মুভি
কোনো মুভির পোস্টারে এর প্রধান অভিনেতা বা অভিনেত্রীর পেছন থেকে তোলা পুরো শরীরের ছবি দেখলেই মোটামুটি ধারণা করা যায়, চলচ্চিত্রটি হবে অ্যাকশনধর্মী, যেখানে এর নায়ক বা নায়িকা পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের চেষ্টা করে যাবে। মূল জঁনরা অবশ্য থ্রিলার না হয়ে ওয়েস্টার্ন বা অন্য কিছুও হতে পারে, কিন্তু এটি অ্যাকশনধর্মী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ওয়েস্টার্ন হলে পেছন থেকে দেখানো অভিনেতার মাথায় হ্যাট থাকা প্রায় নিশ্চিত। এ ধরনের পোস্টারে ডার্ক জাস্টিস বোঝাতে কালো রংয়ের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। উল্লেখযোগ্য উদাহরণের মধ্যে আছে Watchmen (2009), Shoot ‘Em Up (2007), V for Vendetta (2005), 3:10 to Yuma (2007) প্রভৃতি।
রাস্তা দিয়ে ধাবমান নায়ক: অ্যাকশন-থ্রিলার
শহরের রাস্তা দিয়ে একাকী দৌড়ে যাচ্ছে নায়ক, হয়তো হাতে আছে রিভলভার। অ্যাকশন-থ্রিলার চলচ্চিত্রের অত্যন্ত পরিচিত পোস্টার এটি। এ ধরনের চলচ্চিত্রে রহস্য থাকবে, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া থাকবে এবং কিছু অ্যাকশন দৃশ্যও থাকবে। Taken (2008), Body of Lies (2008), The Next Three Days (2010), The Bourne Ultimatum (2007), ফরাসি চলচ্চিত্র Tell No One (2006) এ ধরনের চলচ্চিত্রের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এসব ক্ষেত্রে পোস্টারে নীল এবং কালো রংয়ের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়, দৌড়ের গতি বোঝাতে ব্যাকগ্রাউন্ড ঝাপসা করে দেওয়া হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই পুরো ছবিটা একপাশে কিছুটা হেলে থাকে।
সাদাকালো এবং আগুন: অ্যাকশন মুভি
যদি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের সাদা-কালো ছবি ব্যবহার করা হয়, তাদের হাতে যদি অস্ত্র থাকে, এবং পুরো পোস্টারের একমাত্র রং যদি হয় বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট কমলা রংয়ের আগুন, তাহলে নিশ্চিত থাকা যায়, চলচ্চিত্রটি পুরোপুরি অ্যাকশনধর্মী। এ ধরনের চলচ্চিত্রে কাহিনী বা সংলাপের গভীরতা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না, অ্যাকশন দৃশ্যগুলোই এর প্রধান আকর্ষণ। Transporter সিরিজের চলচ্চিত্রগুলো ছাড়াও The Expandables (2010), Bangkok Dangerous (2008), Fast and Furious (2009) প্রভৃতি মুভির পোস্টার এই সূত্রানুসারে নির্মিত।
এই ধরনের পোস্টারের আরেকটি ভিন্ন রূপ আছে। এক্ষেত্রেও সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে চরিত্রগুলোর সাদাকালো ছবি ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এখানে কোনো বিস্ফোরণ, আগুন বা কমলা রংয়ের ইফেক্ট থাকে না। এর পরিবর্তে এখানে বড় হাতের লাল রংয়ের টেক্সটে মুভির নাম লেখা হয়। এ ধরনের চলচ্চিত্রগুলোও মূলত অ্যাকশনধর্মী হয়ে থাকে, যেখানে অস্ত্রের ব্যবহারই থাকে প্রধান। বিশেষত চলচ্চিত্রটি যদি কোনো কমিক বইয়ের কাহিনী থেকে নির্মিত হয়ে থাকে, তাহলে এ ধরনের পোস্টারের ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক। Sin City (2005), Max Payne (2008), The Punisher (2004) এ ধরনের কয়েকটি চলচ্চিত্রের উদাহরণ।
চেহারার উপর বড় হাতের অক্ষরে টেক্সট
ম্যাট ডেমনের মঙ্গল গ্রহ অভিযান নিয়ে নির্মিত রিডলী স্কটের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ভিত্তিক চলচ্চিত্র The Martian (2015) এবং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের জীবনী নিয়ে ডেভিড ফিঞ্চারের চলচ্চিত্র The Social Network (2010) সম্পূর্ণ ভিন্ন জঁনরার দুটি চলচ্চিত্র হলেও এদের পোস্টার অনেকটা একই রকম। উভয় ক্ষেত্রেই পুরো পোস্টার জুড়ে প্রধান চরিত্রের চেহারা বড় করে দেখানো হয়েছে এবং চেহারার উপর সাদা টেক্সটে বড় হাতের অক্ষরে স্থান দেওয়া হয়েছে সিনেমার ট্যাগলাইনকে। এবং উভয় ক্ষেত্রেই সিনেমার নাম লেখা হয়েছে তুলনামূলকভাবে ছোট আকারে।
শুধু এই দুটি চলচ্চিত্র না, I’m Still Here (2010), Michael Clayton (2007) সহ আরো অনেক মুভির পোস্টারেই এই একই ফরম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এ ধরনের চলচ্চিত্রগুলো হয়ে থাকে কোনো ব্যক্তির জীবনী, বা তার বিশেষ কোনো সাফল্য বা অর্জনকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কিন্তু এর বাইরেও Salt (2010) এর মতো অ্যাকশন কিংবা The Adjustment Beauroe (2011) এর মতো সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও এ ধরনের পোস্টার দেখা যায়।
মোজাইক চেহারা: মনস্তাত্ত্বিক বা হরর থ্রিলার
অনেক মুভির পোস্টারে এর প্রধান চরিত্রের চেহারার উপর মোজাইক স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়। সাধারণত প্রধান চরিত্রের মানসিক অবস্থা বোঝানোর জন্য এটা করা হয়ে থাকে। এ ধরনের চলচ্চিত্র সাধারণত সাইকোলজিকাল ড্রামা বা থ্রিলার জঁনরার হতে পারে। যেমন The Truman Show (1998), The Next Three Days (2010), Lord of War (2005), Source Code (2011) প্রভৃতি। আবার মোজাইকের পরিবর্তে গাছপালা বা অন্যান্য বস্তু দিয়ে মানুষের চেহারা ফুটিয়ে তোলার পোস্টারও লক্ষ্য করা যায়, যেগুলো প্রধানত হরর মুভির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন- Cabin Fever (2002), The Descent (2005), Thir13en Ghosts (2011) প্রভৃতি।
উপর থেকে শহরের দিকে দৃষ্টিপাত: সুপারহিরো মুভি
ব্যাটম্যাট, সুপারম্যান কিংবা স্পাইডারম্যান যা-ই হোক না কেন, সুপারহিরোদের প্রধান লক্ষ্য থাকে অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে পৃথিবীকে বা অন্ততপক্ষে নিজের শহরকে রক্ষা করা। আর সেজন্যই এ ধরনের সুপারহিরো চলচ্চিত্রের পোস্টারে প্রায়ই সুপারহিরোকে উঁচু কোনো ভবনের উপর দাঁড়িয়ে শহরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে Dread (2012), Superman Returns (2006), Spiderman 3 (2007), Catwoman (2004) প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
কমলা ও নীল: অধিকাংশ পোস্টারের সাধারণ রং
নির্দিষ্ট কোনো জঁনরার না হলেও হলিউডের সব চলচ্চিত্রই যে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ এটি।হলিউডে যেকোনো ধরনের মুভির পোস্টারে সবচেয়ে বেশি যে দুটি রংয়ের সমন্বয় দেখা যায়, তা হলো কমলা এবং নীল। Bourne Identity (2002), Australia (2008), Stardust (2007), The Dark Knight (2008), Transformers (2007) সহ হাজার হাজার মুভির পোস্টারের দিকে এক নজর তাকালেই চোখে পড়ে এই রং দুটি। নীল এবং কমলা রং দুটি কালার-হুইলের বিপরীত প্রান্তে অবস্থিত। অর্থাৎ কোনো ডিজাইনার যদি এর একটা ব্যবহার করেন, তাহলে দ্বিতীয়টি ব্যবহারের সম্ভাবনা এমনিতেই বেড়ে যায়। তবে লাল-সবুজ, সাদা-কালো বা অন্য যেকোনো বিপরীত রংয়ের চেয়ে নীল-কমলা অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হওয়ার পেছনে শুধু প্রচলিত ধারা ছাড়াও কয়েকটি কারণ আছে।
প্রথমত, নীল-কমলা রং দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত দুই ধরনের বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে, যা কালার হুইলের অন্য কোনো বিপরীত পার্শ্বস্থ রং দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। যেমন- মাটি ও আকাশ, বরফ ও আগুন, রাত ও দিন, শান্তি ও যুদ্ধ প্রভৃতি। তাই যেসব ডিজাইনার পোস্টারের রংয়ের মধ্য দিয়ে সিনেমার মূলভাব সম্পর্কে বার্তা দিতে চান, তাদের কাছে এই সমন্বয়টি অত্যন্ত প্রিয়। এছাড়াও আরেকটি কারণ হলো, প্রায় সব পোস্টারেই মানুষের উপস্থিতি থাকে। আর মানুষের শরীরের রং কমলার কাছাকাছি হওয়ায় ডিজাইনাররা তার সাথে মিল রেখে অন্যান্য স্থানেও কমলা এবং তার বিপরীতে নীল রং ব্যবহার করেন।
ফিচার ইমেজ- viralscape.com