১৯০৩ সালে, ‘দ্য ট্রেইন রবারি’র মাধ্যমে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় ওয়েস্টার্ন ধারার সিনেমার সাথে। শুরুর সময় থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এই ধারার সিনেমাগুলোর বিষয়বস্তু যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা সমাজের স্বকীয়তা ও জাতিগত ঐতিহ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
কিন্তু এর পরিবর্তন ছিল নির্ধারিত। বিশেষ করে পঞ্চাশের দশক থেকে ধারাটি পরিবর্তিত হয় নতুন এক রূপে। শুরুর পরিবর্তনগুলো এসেছে খুব ধীরে ধীরে এবং পরে সেটা দ্রুত রূপ বদল করেছে। প্রত্যেক দশকে বিভিন্ন ওয়েস্টার্ন সিনেমাতে পশ্চিমা সমাজকে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন আদলে। প্রথম দিকে তুলে ধরা হয়েছে এর জাতি-বিদ্বেষ আর বর্ণবাদের ইতিহাস এবং পরের দিকে এসেছে সমাজ আর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বল চিত্র।
ওয়েস্টার্ন সিনেমার পরিবর্তিত এই ধারাকে বলা হয় নিও কিংবা মডার্ন ওয়েস্টার্ন। জন ওয়েইনের ‘দ্য সার্চার‘ থেকে শুরু করে ক্লিন্ট ইস্টউডের ‘আনফরগিভেন‘, ট্যারান্টিনোর ‘জ্যাংগো আনচেইনড‘ কিংবা ডেভিড ম্যাকেনজির ‘হেল ওর হাই ওয়াটার‘- এর মতো সফল চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে ওয়েস্টার্ন অঞ্চলের পরিবর্তনশীল চিত্র। আজকে আমরা জানবো এই ধরণের চারটি চলচ্চিত্র সম্পর্কে।
নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান (২০০৭)
হরিণ শিকারের এক পর্যায়ে যুদ্ধফেরত লিলেন মস খুঁজে পায় সদ্য ঘটে যাওয়া নৃশংস এক ড্রাগ ডিলের অংশবিশেষ। সেখানে পরে থাকা টাকাগুলো সাথে করে নিয়ে আসার কারণে শিকারি মস নিজেই পরিণত হয় শিকারে, সেই টাকার সূত্র ধরে তার পিছে লাগে এন্টন নামের এক অ্যাসাসিন; আর তার হাত থেকে মসকে বাঁচানোর চেষ্টায় এগিয়ে আসে শেরিফ বেল।
পুরস্কার বিজয়ী করম্যাক ম্যাকার্থির একই নামে বের হওয়া বিখ্যাত উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে বানানো হয়েছে নো কান্ট্রি ফর ওল্ডম্যান। সিনেমাটি, অর্থের কারণে হত্যা আর নারকীয়তা এবং নতুনত্বের কাছে পুরনোদের অসহায়ত্বের এক জমজমাট উপাখ্যান। এতে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে পৃথিবী ধীরে ধীরে হিংস্র দিকে বাঁক নিচ্ছে। আগে যেখানে কোনো বয়স্ক ব্যক্তি লাঠি নিয়ে আগালেই তার প্রতি সবাই নুয়ে সম্মান দেখাতো, এখন প্রবীণ পুলিশকে দেখলেও কেউ সহজে ভয় পায় না। সিনেমার মাধ্যমে উঠে এসেছে এই সময়ের বাস্তব রূপ। তাই বিষয়গুলোকে শুধু একটি দৃষ্টান্ত মনে করা ভুল হবে।
কোয়েন ভ্রাতৃদ্বয় মাকার্থির বই থেকে বিভিন্ন দৃশ্য নির্ধারণ করেছেন নিখুঁতভাবে। উপন্যাসটির মুল বিষয়গুলোকে তারা যেভাবে সুস্পষ্টরূপে সিনেমায় তুলে ধরেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। বরাবরই কোয়েন ব্রাদার্সের সিনেমায় থাকে অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি। ব্যতিক্রম হয়নি এই সিনেমার ক্ষেত্রেও। মাকার্থির বইয়ের চিত্র তারা দৃশ্যায়ন করেছেন নিজস্ব অসাধারণ ভঙ্গিমায়। যার ফলস্বরূপ ২০০৭ সালে অস্কারে সিনেমাটি জিতে নিয়েছে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার। একই সাথে তাদের হাতে এনে দিয়েছে সেরা পরিচালক আর সেরা অভিযোজিত চিত্রনাট্যের পুরষ্কারও।
সিনেমাতে মস চরিত্রে অভিনয় করে জোশ ব্রোলিন, প্রবীণ শেরিফের চরিত্রে ছিলেন টমি লি জোন্স এবং এন্টন চরিত্রে হাভিয়ের ভার্দেম। গল্পের পাশাপাশি সিনেমাতে তাদের অভিনয় ছিল শক্তিশালী, হাভিয়ের ভার্দেম তো বাগিয়ে নিয়েছেন পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতার অস্কার।
ট্রিভিয়া: সিনেমার চিগারহ্ চরিত্রের জন্যে কোয়েন ভাইরা যখন হাভিয়ের ভার্দেমের কাছে গেলেন, তখন স্ক্রিপ্ট পড়ে তিনি তাদেরকে বলেন “আমি গাড়ি চালাতে পারি না, আমি ঠিকঠাক ইংরেজি বলতে পারি না এবং আমি সহিংসতা অপছন্দ করি।” জবাবে তারা বলেন, “আর সেজন্যই আমরা তোমার কাছে এসেছি।” পরে ভার্দেম বলেন, তার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল কোয়েন ব্রাদার্সের ছবিতে অভিনয় করার, তাই শেষমেশ রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
ছবিতে টাকা রাখার জন্যে যে ব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছিল, একই ব্যাগ কোয়েন ব্রাদার্স ১৯৯৬ সালে তাদের অন্য চলচ্চিত্র ফার্গোতে ব্যবহার করেছিলেন।
এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে হাভিয়ের ভার্দেম একজন স্প্যানিশ অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মতো অস্কার জিতে নেন।
কোয়েন ব্রাদার্সের কোনো মুভি ২ ঘণ্টার বেশি দীর্ঘ হয় না, নো কান্ট্রি ফর ওল্ডম্যান-ই তাদের প্রথম মুভি, যা দুই ঘণ্টা অতিক্রম করেছে।
ছবির চরিত্র পাওয়ার দু’দিন পরেই অভিনেতা জশ ব্রোলিন মটর সাইকেল দুর্ঘটনায় কাঁধে আঘাত পান। তিনি চরিত্রটি হারাবার দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মজার ব্যাপার হলো, সিনেমার শুরুর দিকেই তার চরিত্রের কাঁধে গুলি খাওয়ার দৃশ্য রয়েছে, তাই চরিত্রটা তো হারাতে হয়ই-নি বরং ভাঙা কাঁধ পুরো ব্যাপারটাকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।
সিনেমাটির IMDb রেটিং: ৮.১/১০
রোটেনটোম্যাটোস: ৯৩%
ট্রু গ্রিট (২০১০)
জন ওয়েইনের অভিনীত অরিজিনাল ‘ট্রু গ্রিট’ হয়তো অনেকের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা দখল করে রেখেছে, তবে কোয়েন ব্রাদার্স পরিচালিত এই রিমেকটি আপনাকে দেবে ভিন্ন এক আনন্দ। এর নিখুঁত চিত্রনাট্য, শক্তিশালী অভিনয় আর আকর্ষণীয় চিত্রগ্রহণের পাশাপাশি চমৎকার কিছু গানফাইট সিকোয়েন্স আপনাকে মুগ্ধ করবে।
২০১০ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবির কাহিনী ম্যাটি রস নামের এক চৌদ্দ বছর বয়সী বালিকাকে নিয়ে। সে তার বাবার হত্যাকারী টম চ্যানিকে খুঁজছে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে। জুয়ায় হেরে সামান্য কয়টি টাকার জন্য তার বাবাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে টম। কিন্তু সমস্যা হলো, মেয়েটির বয়স খুবই কম, তার একার পক্ষে চ্যানিকে অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তাই সে সহায়তা পাবার জন্য ভাড়া করে এক প্রবীণ মার্শাল রুস্টার কগবার্নকে। মাঝপথে তাদের সাথে যোগ দেয় আরেক টেক্সান রেঞ্জার লা বুফ, সে নিজেও চেনিকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল আইনের আওতায় আনার জন্য। এই তিন চরিত্রকে নিয়েই চলচ্চিত্রটি সামনে আগাতে থাকে।
কেউ ভাবেনি, মাত্র তেরো বছর বয়সেই এতো সুন্দর পরিপক্ক অভিনয় দিয়ে সবার নজর কাড়বেন হেইলি স্টেইনফিল্ড। তাছাড়া ম্যাট ডেমন, জেফ ব্রিজেস আর জশ ব্রোলিন প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন চমৎকারভাবে।
ট্রিভিয়া: সিনেমাটি দশ-দশটি অস্কার মনোয়ন পেয়েও, জিততে পারেনি একটিও পুরষ্কার।
এটি ছিল কোয়েন ব্রাদার্সের প্রথম সিনেমা, যার আয় মার্কিন বক্স অফিসে ১০০ মিলিয়ন অতিক্রম করে।
সিনেমার কগবার্ন চরিত্রটির বয়স ছিল চল্লিশোর্ধ। কিন্তু জন ওয়েইন এবং জেফ ব্রিজেস যখন চরিত্রে অভিনয় করেন, তাদের দুজনেরই বয়স ছিল ষাটের কোঠায়।
ছবির মূল চরিত্র ম্যাটি রস চরিত্রে অভিনয় করতে আবেদন করেছিল প্রায় পনের হাজার তরুণী। এর মধ্য থেকে বেছে নেয়া হয় হেইলি স্টেইনফিল্ডকে। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর এবং ট্রু গ্রিট ছিল তার প্রথম চলচ্চিত্র।যদিও ম্যাটি রস চরিত্রটি ছিল সিনেমার মূল প্রটাগনিস্ট এবং অধিকাংশ সময় জুড়ে পর্দায় তাকেই দেখা গিয়েছিল, তবুও হেইলি স্টেইনফিল্ডকে ২০১০ সালে অস্কারে সহকারী চরিত্রে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়।
শিশু-শ্রম আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে, কোয়েন ব্রাদার্সের পক্ষে হেইলিকে নিয়ে মাঝরাতের দৃশ্যগুলো ধারণ করা সম্ভব ছিল না। অথচ ছবিতে বেশ কিছু রাতের দৃশ্য ছিল। তারা বাধ্য হয়ে হেইলির একজন প্রাপ্তবয়স্ক ডবল জোগাড় করেন এবং রাতের দৃশ্যগুলোর ধারণ করা হয় তার পেছন থেকে, যাতে বোঝা না যায়, চরিত্রটি হেইলি নন।
সিনেমাটির IMDb রেটিং: ৭.৬/১০
রোটেনটোম্যাটোস: ৯৬%
দ্য হেইটফুল এইট (২০১৫)
মার্কিন গৃহ যুদ্ধের কিছুদিন পরের কথা। বাউন্টি হান্টার জন রুথ তার কয়েদী ডেইজি ডমারগিউকে নিয়ে বরফ ঢাকা প্রান্তর পেরিয়ে যাচ্ছিলেন রেড রকে, যেখানে তার কয়েদিকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। মাঝপথে তাদের সাথে সওয়ার হয় শেরিফ ক্রিস ম্যানিক্স আর এক কৃষ্ণাঙ্গ বাউন্টি হান্টার মার্কি ওয়ারেন। তুষারপাত বেড়ে গেলে প্রচণ্ড তুষারঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে তারা আশ্রয় নেয় মিনির সরাইখানায়। সেখানে সঙ্গী হিসেবে জোটে মূল মালিকদের বদলি হিসেবে দায়িত্বে থাকা এক মেক্সিকান লোক বব, এক ইংরেজ হ্যাংম্যান অসওয়াল্ডো মোব্রে, কাউবয় জো গেজ এবং কনফেডারেট আর্মির জেনারেল স্যান্ডি স্মিদার্স।
এই আটজনের কাণ্ডকারখানা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিখ্যাত পরিচালক কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনোর অষ্টম চলচ্চিত্র ‘দ্য হেইটফুল এইট’। ২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমার সেই আটজন মানুষের দুনিয়া সেদিন সরাইখানা আর ৭০ মিলিমিটার ফ্রেম ফরম্যাটে সীমাবদ্ধ থাকলেও, এর গল্পটি আটকে থাকেনি সরাইখানার চার দেয়ালের মধ্যে। তাদের মধ্যকার সংলাপ ছোড়াছুড়ি আর কিছু ঘটনার মাধ্যমে পরিচালক তুলে ধরেছেন ওয়েস্টার্ন সমাজের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি আর জাতিবিদ্বেষের কলুষিত ইতিহাস।
ছবিতে ছিল রবার্ট রিচার্ডসনের দুর্দান্ত চিত্রধারণের সাথে ইতালিয়ান কিংবদন্তী সুরকার এনিও মরিকোনির মৌলিক আবহসঙ্গীত, যা চলচ্চিত্রে দিয়েছে ভিন্ন এক প্রাণ। ছবিতে অভিনয়ে ছিলেন- স্যামুয়েল এল জ্যাকসন, অ্যাম্বার ট্যাম্বলিন, ওয়ালটন জগিনস, মাইকেল ম্যাডসেন, ব্রুস ডার্ন, জেমস পার্কস প্রমুখ।
ট্রিভিয়া: স্ক্রিপ্ট অনলাইনে ফাঁস হয়ে যাবার কারণে পরিচালক ট্যারান্টিনো চলচ্চিত্রটি আর নির্মাণ করতে চাননি। কিন্তু এর অভিনেতাদের স্ক্রিপ্ট পড়ে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া দেখে আর স্যামুয়েল এল জ্যাকসনের পীড়াপীড়িতে তিনি শেষমেশ সিনেমাটি বানাতে রাজি হন। মূল স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী বব চরিত্রটি ফ্রেঞ্চ হবার কথা ছিল, মেক্সিকান নয় ।
ছবিতে ব্যবহৃত আবহ সঙ্গীত এনিও মরিকোনি রচনা করেছিলেন ১৯৮২ সালের ‘দ্য থিং’ চলচ্চিত্রের জন্য। সেখানে ব্যবহার না করায় পরে সেগুলো কাজে লাগে দ্য হেইটফুল এইটের জন্য। ‘দ্য থিং’ ছিল হরর ধারার সিনেমা তাই হেইটফুল এইটের আবহ সঙ্গীত মাঝেমধ্যে হরর ছবির মতোই শিহরণ জাগায়।
‘জ্যাঙ্গো আনচেইনড’-এ যেভাবে তার আবহ সঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছিল, তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে এনিও মরিকোনি ঠিক করেছিলেন, তিনি আর ট্যারান্টিনোর সাথে কাজ করবেন না। পরে তিনি তার মত পরিবর্তন করেন এবং ট্যারান্টিনোর এই ছবিতে কাজ করতে রাজি হন।
সিনেমাটির IMDb রেটিং: ৭.৮/১০
রোটেনটোম্যাটোস: ৭৪%
হেল অর হাই ওয়াটার (২০১৬)
স্বল্প পরিসরের এই চলচ্চিত্রের মুল কাহিনী আপাতদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ। পশ্চিম টেক্সাসের দরিদ্র এক পরিবারে জন্ম নেয়া দুই ভাই ঠিক করে ব্যাংকের দেনা শোধ করবে ব্যাংকেরই টাকা দিয়ে, আর সাথে দূর করবে নিজেদের উপর থেকে দরিদ্রতার অভিশাপ। জেল খেটে আসা বড় ভাই ট্যানারকে নিয়ে টবি পরিকল্পনা করে মিডল্যান্ড ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় ডাকাতি করার। পরিকল্পনা মাফিক কাজেও নেমে পড়ে, তবে এর মধ্যে বিপত্তি ঘটান প্রবীণ দুই টেক্সান রেঞ্জার। দুই ভাই যখন ডাকাতিতে ব্যস্ত, রেঞ্জার দু’জন তখন বসে প্ল্যান কষছেন তাদেরকে জেলে ভরার।
আধুনিক পশ্চিম টেক্সাস নিয়ে এই অসাধারণ চলচ্চিত্রের পরিচালনায় ছিলেন ব্রিটিশ চিত্র পরিচালক ডেভিড ম্যাকেনজি এবং এর স্ক্রিপ্ট লিখেছেন সিকারিও সিনেমার চিত্রনাট্যকার টেইলর শেরিডান। টবি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্রিস পাইন্স, ট্যানারের চরিত্রে বেন ফস্টার আর দুই রেঞ্জারের একজন ছিলেন জেফ ‘দ্য ড্যুড’ ব্রিজেস, অন্যজন গিল বার্মিংহাম।
চলচ্চিত্রে পরিচালক চেষ্টা করেছেন সেখানকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা ফুটিয়ে তোলার। তিনি তুলে ধরেছেন ভূমিহীন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে সেখানকার ব্যাংকগুলোর অবিচারের দৃশ্য। অতি পরিচিত ধারার চলচ্চিত্র হওয়ার পরেও, ছবির চিত্রনাট্য আর সিনেমাটোগ্রাফি ছিল মুগ্ধ করার মতো। এছাড়া এতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার সব সাউন্ডট্র্যাক। এই বছরের অস্কারে কোনো পুরষ্কার জিততে না পারলেও, ছবিটি নমিনেশন পেয়েছে চারটি ক্যাটাগরিতে।
ট্রিভিয়া: পরিচালক সিনেমাটি উৎসর্গ করেছেন তার বাবা-মাকে। সিনেমার শুটিং চলাকালীন তারা দুজনেই মারা যান।
টেক্সাস কেন্দ্রিক এই সিনেমাটির একটা দৃশ্যও ধারণ করা হয়নি টেক্সাসে। এর শুটিং হয়েছে নিউ মেক্সিকোর পুর্বাঞ্চলে।
সিনেমার মূল নাম ছিল ‘কমাঞ্চেরিয়া’। পরে এর নাম রাখা হয় ‘হেল অর হাই ওয়াটার’। নামটি এসেছে “Come hell or high water” থেকে, সাধারণভাবে যার মানে করলে দাঁড়ায়, “Do whatever needs to be done, no matter the circumstances”, অর্থাৎ “পরিস্থিতি যাই হোক, যেটা করার সেটা করতেই হবে।” এছাড়া নামটি ইজারার চুক্তিতে ব্যবহার করা “Hell or High Water Clause”-এর দিকেও নির্দেশ করে, সেটা হচ্ছে দেনাদারদের যে কোনো মূল্যে ঠিক সময়ে দেনা পরিশোধ করতে হবে। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন অংশে এই সংজ্ঞাগুলো ব্যবহার করতেও দেখা গেছে।
ছবির বেশ কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ‘রাউট ৬৬ ক্যাসিনো’তে। ক্যাসিনোর কর্মচারীরা নিজ থেকেই সিনেমার ‘এক্সট্রা’ হিসেবে কাজ করতে রাজি হন।
সিনেমাটির IMDb রেটিং: ৭.৭/১০
রোটেনটোম্যাটোস: ৯৭%
এরকম আরও সিনেমা রয়েছে, যেগুলো দেখার পর সুপরিচিত ওয়েস্টার্ন ধারাটি আপনার চোখে ধরা দেবে ভিন্ন রূপে। নিও ওয়েস্টার্ন ধারার চমৎকার ৩০টি সিনেমার নাম পেতে ক্লিক করুন এখানে।
ফিচার ছবিসূত্র: FaenaArt