‘সিরিয়াল কিলার’ টার্মটার মধ্যে একধরনের পাশবিকতা ও ভয়াবহতা থাকা সত্ত্বেও, এমন অনেক লোকের এই দুনিয়াতে অস্তিত্ব আছে, সিরিয়াল কিলারদের জীবন, কর্মকাণ্ড ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে যাদের আগ্রহের সীমা নেই। সাধারণত লোকজন কেউ একটি অথবা দুইটি খুন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অথবা ঠাণ্ডা মাথায় করেছে শুনলে নাক সিঁটকায় ও আতঙ্কিত হয়ে থাকে। কিন্তু সিরিয়াল কিলারদের ক্ষেত্রে তাদের মনোভাব যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সিরিয়াল কিলাররা তাদের কুখ্যাতির কারণে মানুষের মনে ঘৃণার থেকেও বেশি কৌতূহলের জন্ম দিয়ে থাকে। বাস্তব জগতের সিরিয়াল কিলাররা যদি মানুষকে এতটা উৎসুক করে তুলতে পারে, তাহলে সেলুলয়েড জগতের সিরিয়াল কিলাররা তো স্বাভাবিকভাবেই আরও এগিয়েই থাকবে। আর তাই তো, আমাদের চারপাশে এমন বহু সিনেমা অথবা সিরিজপ্রেমীর সন্ধান মিলবে, যারা কিনা সিরিয়াল কিলিং নিয়ে নির্মিত সিনেমা/ সিরিজ দেখতে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। আর সত্যি বলতে কি, দুনিয়াব্যাপী সিরিয়াল কিলিংকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সিনেমার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। হলিউড থেকে শুরু করে বলিউড, কোরিয়ান ইন্ডাস্ট্রি, এমন অনেক ইন্ডাস্ট্রি ও দেশে এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়ে চলেছে অসাধারণ সব সিনেমা। তার মধ্যে আবার কিছু সত্য ঘটনা অবলম্বনেও রয়েছে। তবে সিরিজের কথা উঠলে, সিরিয়াল কিলিংকে বিষয়বস্তু ধরে আজ অবধি যে সব সিরিজই বানানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ‘ডেক্সটার’ টিভি সিরিজটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
আজ থেকে প্রায় বারো বছর আগে, আমেরিকান স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ‘শো-টাইম’ এর হাত ধরে ‘ডেক্সটার’ নামক টিভি সিরিজটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমেরিকান ক্রাইম নভেলিস্ট জেফ লিন্ডসের ২০০৪ সালে প্রকাশিত ‘ডার্কলি ড্রিমিং ডেক্সটার’ উপন্যাস থেকে সিরিজটির মূল প্লট ধার নেওয়া হয়েছিল। সিরিজটির প্রথম সিজনে উপন্যাসের গল্পকে পরিমার্জিত করে পর্দায় উপস্থাপন করা হলেও, বাকি সাতটি সিজন সিরিজটির নিজস্ব চিত্রনাট্যকার আমেরিকান টিভি রাইটার জেমস ম্যানোস জুনিয়র নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখেছিলেন। তাই বলা যায়, সিরিজের বাকি সিজনগুলোর গল্প শুধুই উপন্যাসের পরিবর্ধিত রূপ নয়, বরং জেফের ডেক্সটার চরিত্রের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বিকশিত রূপও বটে।আর সেই গল্পের ভেতর থেকে সেলুলয়েড জগত পেয়েছিল তার সর্বকালের অন্যতম সেরা সিরিয়াল কিলার ডেক্সটার মরগানকে।
তাহলে এখন ডেক্সটার মরগান নামের সেই টিভি পর্দা কাঁপানো ও লাখো দর্শকের মন জয় করে সিরিয়াল কিলারের সাথে পরিচিত হয়ে আসা যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাদুর শহর’ বলে খ্যাত শহরটির নাম জানেন তো? ‘ডেক্সটার’ টিভি সিরিজের গল্প কিন্তু সেই শহরকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে। মায়ামি নামের আমেরিকার এই শহরটিতে যেমন নানা দেশ, বর্ণ, জাতির মানুষের অবাধ বিচরণ, ঠিক তেমনি অপরাধ জগতের সাথে এই শহরের সম্পৃক্ততাও বেশ মজবুত। মাদক ব্যবসা, চুরি, জালিয়াতি, খুন, ধর্ষণ ইত্যাদি ইত্যাদি সব ধরণের অপরাধ বছরের ৩৬৫ দিনই মায়ামি শহরকে উত্তাল করে রাখে। আর সিরিজের গল্পে এমন এক শহরের অপরাধ জগতকে বশে আনতে ও অপরাধ সংক্রান্ত সকল কর্মকাণ্ডকে দমন করতে সদা সচেষ্ট ও কর্মঠ মায়ামি মেট্রো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সচিত্র রূপ তুলে ধরা হয়েছে।
আর এই পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ফরেনসিক এক্সপার্ট ও ব্লাড অ্যানালাইসার হিসেবে কর্মরত ছিল ডেক্সটার মরগান নামের একজন ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষ। কর্মক্ষেত্রে সবার প্রিয়ভাজন ও দায়িত্ববান ডেক্সটার ব্যক্তি হিসেবে ছিল বেশ চুপচাপ ও আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের। তার মনের ভেতর কী চলছে, সেটা খুব কমসময় বাইরের লোকজনকে বুঝতে দিত সে। জগত সংসারে তার আপন বলতে ছিল শুধু ডেব্রা নামের একটি বোন। ডেব্রা মরগানও একই পুলিশ ডিপার্টমেন্টে ফিল্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিল। ডেক্সটার তেমন একটা রসিক ও রোমান্টিক না হবার ফলে, ডেব্রাই তার ভাইয়ের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি নজরদারি করতো। ডেক্সটারের অতীতের গল্প তুলে ধরা হলে, দর্শক দেখতে পাবে যে, ছেলেবেলায় নিজের বায়োলজিক্যাল বাবা-মাকে হারানোর পর এই একই ডিপার্টমেন্টের ডিটেকটিভ হ্যারি মরগান ডেক্সটারকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালনের জন্য দত্তক নেন। পালিত পিতার পরিবারে নতুন বাবা-মা ও একমাত্র বোন ডেব্রাকে পেয়েছিল ডেক্সটার। যদিওবা ছোট থেকেই বাবার সাথে তার সখ্য বেশি ছিল বলে, বাবার সান্নিধ্যে থেকে জীবনকে খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও দুনিয়াতে টিকে থাকতে হলে করণীয় সব খুঁটিনাটি শিক্ষা গ্রহণ করেছিল সে।
তবে এসব কোনোটাই সিরিজের আলোচ্য বিষয় নয়। সিরিজের আসল গল্প এই আট-দশটা পুরুষের মতো কর্মজীবী ও খুব সাদামাটা ব্যক্তিগত জীবনের অধিকারী ডেক্সটারের জীবনকে ঘিরে নয়। ডেক্সটার নামের এই সুশিক্ষিত, সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও আপনজনদের ভিড়ে ভালোবাসার স্পর্শে মিশে যাওয়া মানবটির যে পেছনে যে এক পৈশাচিক সত্তা লুকিয়েছিল, সেটিই সিরিজের কাহিনীর প্রতিপাদ্য বিষয়। ডেক্সটার দিনের আলোতে জনসম্মুখে যে সত্ত্বা নিয়ে চলাফেরা করতো, অনেক রাতে ঠিক তার বিপরীতমুখী সত্ত্বা নিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে রাতের অন্ধকারে বিচরণ করতো। আর সেই সত্ত্বাটি ছিল একজন রক্তপিপাসু ও ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের খুনির।
‘ডেক্সটার’ সিরিজের যত গভীরে প্রবেশ করতে থাকবেন, দর্শক তত ডেক্সটারের জীবনের অনেক রহস্যের চাদরে ঘেরা বাস্তবতা ও গোপনীয় সত্যের সাথে একে একে পরিচিত হতে থাকবেন। ডেক্সটারের অতীত ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে তার এমন হিংস্র ও রক্তের নেশায় আসক্ত হয়ে উঠার পেছনের কারণ সিরিজটি যত এগোবে, তার সাথে সাথে খোলাসা হতে থাকবে। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কারভাবে আগে থেকে জানিয়ে রাখা ভালো, ডেক্সটার কিন্তু নির্দোষ ও কোনো রকম অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, এমন কাউকে জানে মারতো না। খুন করা তার নেশা ও বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদার মতো অপরিহার্য উপাধান হলেও, সে এমন লোকজনকেই নিজের শিকার হিসেবে বেছে নিতো, যারা কিনা বড়সড় অপরাধের সাথে জড়িত। একদিক থেকে বিবেচনা করলে দর্শক উপলব্ধি করতে পারবেন, মায়ামি শহরে দুষ্টের দমন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ টিকিয়ে রাখার জন্য ডেক্সটারের ভূমিকা অনেক সময় সুপারহিরোর তুলনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি মায়ামি মেট্রো পুলিশ এই অজানা সিরিয়াল কিলারকে যতই হন্যে হয়ে আইনের আওতাধীন করে শাস্তির জন্য খুঁজে বেড়াক না কেন, তাদের চলমান কেসগুলোতে এই অদৃশ্যমানবের খুনে হাত বেশ উপকারী প্রভাবও রেখেছিল, তা মানতে নারাজ ছিল না।
সিরিজের প্লট ও গল্প আপাতত এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাক। এবার ‘ডেক্সটার’ সিরিজের কলাকুশলীদের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। সিরিজটিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমেরিকান অভিনেতা মাইকেল এইচ. হল। মজার ব্যাপার হলো, মাইকেল নিজের নাম ও পরিচয়ে যতটা না শো-বিজ জগতে পরিচিত, তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ‘ডেক্সটার’ পরিচয়ে। আসলে টিভি সিরিজের ক্ষেত্রে এমনটা নতুন অথবা অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। বেশিরভাগ টিভি অভিনেতারাই নিজেদের চরিত্রের মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ দর্শক মনে চিরস্থায়ী আসন গড়ে থাকেন। কিন্তু খুনি চরিত্রে অভিনয় করেও, এমন ভালোবাসা ও খ্যাতি যে পাওয়া যেতে পারে, মাইকেল এইচ. হল তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। টানা আট বছর তো তিনি টিভি পর্দায় দাপটের সাথে রাজত্ব করে বেড়িয়েছেনই, এমনকি সিরিজটি শেষ হবার পরেও আজও লোকজন ডেক্সটারকে স্মরণে রেখেছে। তার অভিনয়শৈলী নিয়ে বলার আসলে কিছু নেই। এটা শুধুই শ্রবণ ও দর্শন ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগ করার মতো বিষয়।
এছাড়া ডেক্সটারের বোন চরিত্রে জেনিফার কার্পেন্টারের অভিনয় সিরিজের মাত্রায় যোগ করেছিল ভিন্ন স্বাদ। ডেব্রা চরিত্রটা যেন ছিল সিরিজের প্রাণসঞ্চারক। জেনিফারের দস্যিপনা, সরলতা ও দুঃসাহসিক চরিত্র তার প্রতি দর্শকদের মনে আলাদা ভালোলাগা জাগিয়ে তুলেছিল। তাছাড়া ডেক্সটার ও ডেব্রা জীবনকে ঘিরে থাকা কলিগ, বন্ধু ও বিভিন্ন সময়ে কাছের হয়ে উঠা নানান মানুষেরা সিরিজটির পূর্ণ বিকাশে দারুণ অবদান রেখেছে। ডেক্সটারের জীবনে বিভিন্ন সিরিজে আগত বিভিন্ন প্রেমিকাদের মধ্যে হ্যানাহ চরিত্রকে বেশি গুরুত্বের সাথে দেখানো হয়েছিল। তার উপস্থিতি ডেক্সটারের পর্দার স্ত্রী রিটা থেকে কম হলেও, চরিত্রটি যতক্ষণই স্ক্রিনে ছিল, বেশ শক্তিশালী অভিনয় পটুতা দেখিয়েছে। ডেক্সটার সিরিজটির সবকিছুই বেশ ভালোলাগার মতো হলেও, ডেক্সটারের স্ত্রী রিটা চরিত্রটি সংখ্যাগুরু দর্শকদের মনে বিরক্তির উদ্রেক করাবে, এমনটাই স্বাভাবিক। সিরিজের শেষ সিজনে ডেব্রার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটো দর্শক মনকে যতটা না ভেঙে গুড়িয়ে দেবে, সিজন ৪ এ রিটার সিরিজ থেকে অকালে হারিয়ে যাওয়া ঠিক ততটাই আনন্দ বয়ে আনবে বলে খুব সহজেই ধারণা করে নেওয়া যায়।
এবার সিরিজের কিছু অর্জনের কথা বলি। মেটাক্রিটিক ও রোটেন টম্যাটোসের রেটিং দেখেন তাহলে দেখবেন, ডেক্সটারের সিজন ২ সবথেকে পজিটিভ রিভিউ পেয়েছে। এমনকি ডেক্সটার সিজন ২ এ এসেই দর্শকজনপ্রিয়তার দিক থেকে তুঙ্গে উঠে। ২০০৭-২০০৮ এর দিকে শো টাইমের এই সিরিজ দর্শকদের মাঝে আলাদা এক ধরণের সিরিয়াল কিলার নিয়ে আমেজ তৈরি করে। অন্যদিকে, সিজন ৬ ছিল ডেক্সটার সিরিজের বাকি সিজনগুলোর মধ্যে সবথেকে কম রেটিং প্রাপ্ত ও দর্শকপ্রিয়তার দিক থেকেও কম জনপ্রিয় সিজন। এই সিজনটি শুধুমাত্র ডেক্সটার চরিত্রটির জন্য সিরিজটিকে পরবর্তী সিজন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রেখেছে বলেই সমালোচকেরা মন্তব্য করেন।
এছাড়া ডেক্সটারের আরও কিছু অর্জনের কথা না বললেই নয়। ডেক্সটার এমন এক সিরিজ, যা ২০০৮-২০১১ সাল পর্যন্ত টানা চারবার প্রাইম টাইম এমি এওয়ার্ডে সেরা টিভি সিরিজের ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পায়। এমনকি ডেক্সটার চরিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের জন্য মাইকেল এইচ. হল টানা পাঁচবার প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ড এ সেরা টিভি অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। তাছাড়া মাইকেল তার অনবদ্য অভিনয়শৈলী দিয়ে ডেক্সটার চরিত্রটাকে পর্দায় এতটা জীবন্তভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য ২০১০ সালে গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছিলেন। ডেক্সটার সিরিজটি খ্যাতি এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে, সিরিজটির নানা রকম আইপ্যাডে ও আইফোনে গেমস বের হয়েছিল। এমনকি মার্ভেল কমিকস ২০১৩ সালে ‘ডেক্সটার লিমিটেড সিরিজ’ প্রকাশ করে। এর লেখক ছিলেন, ডেক্সটার চরিত্রের জনক জেফ লিন্ডসে। ডেক্সটারের কিছু কিছু এপিসোড, বিশেষ করে সিজন ফাইনালগুলো দর্শকদের টানার দিক থেকে শো টাইমের আগের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। সিজন ৭ সবথেকে বেশি দর্শক দেখেছিল বলে তা শো টাইমের জন্য যুগান্তকারী রেকর্ড গড়েছিল।
ডেক্সটার সিরিজের কিছু খারাপ দিক মানুষের মনের উপর খারাপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের নানা জায়গায় ঘটিত নানা অপরাধ করার পর অপরাধীরা ডেক্সটার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে করেছে এমন দাবি করেছে। তার মাঝে ব্রিটিশ এক তরুণের দুইটি মেয়ের হত্যা অন্যতম। সুইডেনে এক নারী নিজেকে ‘দ্য ডেক্সটার উইমেন’ বলে দাবি করতেন। তিনি তার পিতাকে কুপিয়ে হত্যা করেন। একবার এক ১৭ বছরের ছেলে নিজের ১০ বছর ভাইকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে সে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়, “আমি ডেক্সটারকে নিজের মধ্যে অনুভব করি”। এছাড়া আরো অনেক এমন গল্প রয়েছে। এমনকি ডেক্সটার সিরিজকে যাতে টিভিতে না দেখানো হয়, তা নিয়ে ইউটিউবে ও নানা আন্দোলনও প্যারেন্টস প্রটেকশন কাউন্সিল নামক একটি সংস্থা বেশ তোড়জোড়ে করেছিলো।
‘ডেক্সটার’ সিরিজে মোট আটটি সিজনের প্রতিটিতে রয়েছে বারোটি এপিসোড। প্রায় ঘণ্টাখানেকের ব্যাপ্তিকালের এই এপিসোডগুলোর পেছনে আপনাকে ব্যয় করতে হবে আপনার মহামূল্যবান সময় থেকে প্রায় ৯৬টি ঘণ্টা। তবে এই সময়টুকু ক্ষয় করা নিয়ে আপনার মনে কখনো আফসোস জাগবে না, এটি প্রায় নিশ্চিত। ব্যস্ততাপূর্ণ এ যুগের রুটিনবাঁধা জীবনযাত্রা থেকে খানিকটা পরিতৃপ্তি ও বিনোদন পেতে এই সিরিজটি একদম সোনার হরিণের মতো। আর ভালো কথা, সিরিজের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের স্কোরগুলো কিন্তু একদম একশতে একশ দেওয়ার মতো শ্রুতিমধুর।
এবার সিরিজটির আটটি সিজনের কাহিনী সম্পর্কে অল্প কথায় একটু জেনে আসা যাক।
সিজন ১: সিরিজের এই সিজনের গল্প সরাসরি ‘ডার্কলি ড্রিমিং ডেক্সটার’ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। এই সিজনে ডেক্সটার ও মায়ামি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ‘দ্য আইস ট্রাক কিলার’ নামে একজন সিরিয়াল কিলারের খোঁজে ব্যস্ত ছিল। এই কিলার পতিতাদের নির্মমভাবে হত্যা করার জন্য সেই সময় পুরো শহর জুড়ে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছিল। ডেক্সটারের ব্যক্তিগত জীবনে এ সময় ধীরে ধীরে রিটার প্রবেশ পরিলক্ষিত হয়ে থাকবে।
সিজন ২: এই সিজনে এসে দেখা যাবে, ডেক্সটারের কলিগরা ‘ব্যা হারবার বুচার’ নামক এক ছদ্মবেশী সিরিয়াল কিলারের তল্লাশে নেমেছে। তারা জানেই না, এই সিরিয়াল কিলার তাদের ডিপার্টমেন্টেই ব্লাড অ্যানালাইসিস্ট। অন্যদিকে, ডেক্সটারকে এই সিজনে রিটাকে বাড়িতে ফেলে লায়লা নামক এক রহস্যময়ী মানবীর সাথে প্রেমে মত্ত থাকতে দেখা যাবে।
সিজন ৩: এই সিজনে একদিকে মায়ামি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট ‘দ্য স্কিনার’ নামের নতুন এক সিরিয়াল কিলারের সন্ধানে মাঠে নামবে। আর ডেক্সটার ঘটনাক্রমে জড়িয়ে যাবে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি মিগেলের সাথে, যা সিরিজের গল্পকে মোড় ঘুরিয়ে দেবে। এই সিজনে ডেক্সটার ও রিটাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেও দেখা যাবে।
সিজন ৪: এই সিজনের প্লট ‘ট্রিনিটি কিলার’কে ফোকাসে রেখে লেখা হয়েছে। এই কিলার ডেক্সটারের জীবনে দারুণ ও ভয়াবহ এক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল এই সিজনে।
সিজন ৫: ডেক্সটারকে এই সিজনে গত সিজনের দুর্ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে দেখা যাবে। লুমেন নামের এক নারীর আবির্ভাব ঘটবে তার জীবনে। আর অন্যদিকে, মায়ামি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জন্য ‘সান্তা মুয়ের্তে’ নামক এক খুনির।
সিজন ৬: এই সিজনের আসল আকর্ষণ হচ্ছে, ‘দ্য ডুমসডে কিলারস’ নামে ছাত্র ও শিক্ষকের এক মাস্টারপ্ল্যানকারী জুটির। এই সিজনে ডেব্রার মনে ডেক্সটারের জন্য অন্যরকম এক অনুভূতি জন্ম নিতে থাকে। এই সিজনের সবথেকে চমকপ্রদ ব্যাপারটি দেখানো হয় লাস্ট এপিসোডের একদম শেষ দৃশ্যে।
সিজন ৭: এই সিজনে ডেক্সটারের জীবনের রহস্যের উপর থেকে যেন একে একে পর্দা উঠতে শুরু করে। ডেক্সটারের পরিচয় হয় হ্যানাহ নামের এক রমণীর সাথে, যাকে ধীরে ধীরে নিজের সোলমেট হিসেবে আবিষ্কার করতে শুরু করেছিল সে।
সিজন ৮: এই সিরিজের ডেক্সটার মুখোমুখি এমন এক মহিলার সাথে, যিনি তার জন্মদাত্রী না হয়েও, তার জীবনে অনেক গুরুত্ব বহন করেন। এই সিজনে শুধু বাইরের দুনিয়ার কাছে নয়, ডেক্সটারের কাছেও নিজের অতীতের অনেক লুকানো সত্য উন্মোচিত হতে থাকে। আর এভাবে বারোটি পর্বের নানা উত্থান-পতন দেখানোর পর, বেশ করুণভাবেই সিরিজটির সমাপ্তি টানা হয়েছিল।
ডেক্সটার সিরিজটা অনেকটা হতাশার মধ্য দিয়ে ইতি টানলেও, আজও প্রায় পাঁচ বছর পর দর্শক অধীর আগ্রহে প্রহর গুণছে, এই সিরিজের আর কোনো সিজন আসে কিনা আশায়। ডেক্সটার সিরিজের জনপ্রিয়তা ও দর্শকদের হৃদয়কে এই সিরিয়াল কিলার কত জোরালোভাবে স্পর্শ করেছে, শুধু একটা ছোট কথার মাধ্যমেই বলি। কয়েকদিন আগে নেটফ্লিক্সে ‘সেফ’ নামের একটা মিনি সিরিজ এসেছে, শুধুমাত্র মাইকেল এইচ. হল সেটাতে অভিনয় করেছেন শুনে সিরিজপ্রেমীরা চোখ বন্ধ করে সেই সিরিজ দেখতে শুরু করে দিয়েছিলেন। তাই যারা ক্রাইম ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের মিশেলে কিছু দেখার জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তারা বিনা দ্বিধায় ‘ডেক্সটার’ দেখা শুরু করে দিতে পারেন। কথা দিচ্ছি, এক বিন্দু আফসোস করবেন না। তাহলে দেরি কেন, আজ রাত থেকেই শুরু করে দিন না?
“Maybe, Tonight is the night!”
ফিচার ইমেজ- BsnSCB.com