ঔপনিবেশিক ভারতের সামরিক বাহিনী: স্বাধীনতা ও ইংরেজদের বিদায় (পর্ব-৮)

সপ্তম পর্ব: ঔপনিবেশিক ভারতের সামরিক বাহিনী: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (পর্ব-৭) 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালেই ভারতের রাজনৈতিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হতে থাকে। সামরিক বাহিনীর মধ্যেও বেশ কিছু বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অসন্তোষ দেখা যায়, যদিও তা রাজনৈতিক দাবিদাওয়া ছিল না। যুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের রাজনীতিতেও পরিবর্তন দেখা যায়, নির্বাচনে চার্চিলের দলের পরাজয় এবং ক্লিমেন্ট অ্যাটলি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারতের রাজনীতিতেও দ্রুত পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে থাকে।

ক্লিমেন্ট অ্যাটলি; Image Source: Encyclopedia Brittanica

১৯৪৬ সালের ১৫ মার্চ অ্যাটলি ঘোষণা করেন যে ভারতীয়দের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে, এবং তা খুব দ্রুত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জওহরলাল নেহরু এবং দেশরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে বলদেব সিংকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরের মাসেই মুসলিম লীগ এই অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেয়। দীর্ঘদিনের আলোচনা ও পরিকল্পনা শেষে ১৯৪৭-এর ৩ জুন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ঘোষণা দেয় ১৫ আগস্টের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং এর ফলে ভারত ভাগের আভাস পাওয়া যায়। পরের মাসেই ভারত যে ভাগ হবে তা নিশ্চিত হয়ে যায় ‘ভারত স্বাধীনতা বিল’ গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে। এদিকে ভারত ও পাকিস্তান হিসেবে দুই দেশ ভাগ হয়ে গেলে দেশটির সামরিক বাহিনীও যে ভাগ হবে তা নিয়ে শুরু জল্পনা-কল্পনা। ‘কীভাবে হবে এই ভাগ? ধর্মভেদে নাকি অঞ্চলভেদে? সামরিক সরঞ্জাম কিংবা যুদ্ধাস্ত্রগুলোর পরিণতিই বা কী হবে?’- এসব প্রশ্ন উঠে আসতে থাকে।

মূলত বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই ভারতীয় বাহিনী বেশ বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুদ্ধকালীন সময়ের বিশাল বাহিনীর আর কোনো প্রয়োজন ছিল না। ফলে বাহিনী থেকে অতিরিক্ত লোক ছাটাইয়ের কাজ শুরু হয়। কমান্ডার-ইন-চিফ অকিনলেকের পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ১০ লক্ষে নামিয়ে নিয়ে আসা। সেই লক্ষ্য নিয়ে প্রতি মাসে হাজার হাজার সৈনিককে ছাটাই করা হতে থাকে। ১৯৪৭ সালের জানুয়ায়ারি মাসের মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ সৈন্যকে বিদায় করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান জানান যে, বাজেট অনুযায়ী যত সংখ্যক সৈন্য ছাটাই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা করতে আরও ২ লক্ষ সৈনিককে ছাটাই করতে হবে। তবে এই ছাটাই আর বেশিদিন হয়নি, কারণ ভারত ও পাকিস্তান, এই দুই দেশের অভ্যুদয় ক্রমেই এগিয়ে আসতে থাকে।

১নং পাঞ্জাব রাইফেলস, যাদেরকে পরে পাকিস্তান বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় (১৯৪৭); Image Source: The Indian Army – Boris Mollo

এই সময়েই অকিনলেক আরও কিছু নীতি প্রণয়নের পরিকল্পনা করেন। এর মধ্যে একটি ছিল সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ ভারতীয়করণ করা, অর্থাৎ বাহিনীতে আর কোনো ইংরেজ অফিসার কিংবা রেজিমেন্ট, কোনোটিই থাকবে না, সবকিছু থাকবে এই দেশীয়দের নিয়ন্ত্রণে। ১৯২৮ সালের সাইমন কমিশনে উল্লেখ করা হয়েছিল, অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ ভারতীয়করণ করা সম্ভব না, কারণ ইংরেজরা ভারতীয়দের চেয়ে বেশি দক্ষ এবং অফিসারদের পরিমাণও অনেক বেশি, যা পূরণ করা কঠিন। ১৯৪৬ সালেও ক্লড অকিনলেক একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন। তার মতে, ১০ বছরের কম সময়ে সম্পূর্ণ ভারতীয়করণ করলে ভারতীয় বাহিনীর দক্ষতা হ্রাস পাবে, কারণ সে পরিমাণ দক্ষ অফিসার ভারতীয়দের মধ্যে নেই। ১৯৪৬ সালের ১ জানুয়ারির রিপোর্ট অনুযায়ী দেখা যায়, বড় পদের ২৩৬৬ জন ইংরেজ অফিসারের বিপরীতে ভারতীয় অফিসারের সংখ্যা ৬৭৯ জন। এই বিরাট সংখ্যক ইংরেজ অফিসারের পরিবর্তে কীভাবে ভারতীয় অফিসার নিয়োগ দেওয়া যায়, এই ছিল ভারত সরকারের মাথাব্যথার কারণ।

বিশ্বযুদ্ধের পরপরই প্রথম প্যারাস্যুট রেজিমেন্ট গঠন করা হয়, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উন্নতির জন্য উন্নত জাহাজ ও বিমান যুক্ত করা হয়। ৩ সাবেক প্রেসিডেন্সি বাহিনীর স্যাপার দলের সাথে যুদ্ধের সময় গঠিত ৬টি নতুন স্যাপার দলকে একত্র করে রয়্যাল ইন্ডিয়ান ইঞ্জিনিয়ার (RIE) প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও সামরিক বাহিনীর নতুন অ্যাকাডেমি গঠন করা হয়, যেখানে একজন ক্যাডেট ভর্তি হয়ে ৪ বছরের মধ্যে অফিসার হিসেবে বের হবে। অকিনলেকের পরিকল্পনা অনুযায়ী বয়েজ কোম্পানিও তৈরি হয়, যেখানে ১৫ বছর বয়সেই ভর্তি হওয়া যাবে।

অকিনলেকের পরিকল্পনা আর উদ্যোগ আর অগ্রসর হওয়ার আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ১৯০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো ভারতীয়ের হাতে সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী নেহরু এবং দেশরক্ষা মন্ত্রী বলদেব সিং ১৯৪৬ সালের ৯ অক্টোবর সামরিক বাহিনীর জাতীয়করণের নীতি ঘোষণা করেন। নীতির মূল বিষয়গুলো হলো: ১। স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় অফিসার দ্বারা পরিচালিত হবে; ২। এই অফিসারদেরকে অবশ্যই উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন হতে হবে; ৩। ভারতীয় ফৌজকে কোনো দলীয় রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হতে দেওয়া যাবে না।

বলদেব সিং এবং নেহরু; Image Source: Drive to Kerala

ফৌজ ভাগের নীতি

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভারত স্বাধীনতা বিল পাস গৃহীত হওয়ার পরপরই ভারতীয় ফৌজকে দুই ভাগ করার পরিকল্পনার কাজ শুরু হয়। জুনের ৩০ তারিখে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সভাপতিত্বে বিভাগ পরিষদ (Partition Council)—এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকেই কীভাবে ভারতীয় ফৌজকে ভাগ করা হবে তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা উত্থাপন করা হয়। ৩টি ধাপে ভারতীয় ফৌজকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। ধাপগুলো হলো:

১) সাম্প্রদায়িক পদ্ধতিতে ফৌজ ভাগ: যে সকল রেজিমেন্টে মুসলমান সৈনিক বেশি থাকবে, তারা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে। অন্যদিকে যে সকল রেজিমেন্টে অমুসলিম সৈন্য বেশি থাকবে, তারা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে। এবং এই ভাগ ১৫ আগস্টের আগেই সম্পন্ন হবে।

২) আঞ্চলিক পদ্ধতিতে ফৌজ ভাগ: সাম্প্রদায়িক পদ্ধতিতে ভাগ হওয়ার পর দ্বিতীয় দফা ভাগ হবে অঞ্চল অনুসারে। যে সৈনিক যে ডোমিনিয়নের অধিবাসী সেই ডোমিনিয়নের ফৌজে সে থাকবে। অর্থাৎ, তার বাড়ি ভারতে হলে ভারতের ফৌজে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং পাকিস্তানে হলে পাকিস্তানের ফৌজে অন্তর্ভুক্ত হবে। ১৫ আগস্টের পর যতদ্রুত সম্ভব এই ভাগ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়।

৩) রাষ্ট্রানুগতিক পদ্ধতিতে ফৌজ ভাগ: দুই পদ্ধতিতে ভাগ হওয়ার পর এই ধরনের ভাগ হবে। এটি আঞ্চলিকও নয়, আবার সাম্প্রদায়িকও নয়, বরং দুইটির মিশ্রণ। এই নীতি অনুযায়ী, পাকিস্তানে বাড়ি যেকোন অমুসলিম সৈন্য ইচ্ছা করলে পাকিস্তানের ফৌজে থেকে যেতে পারবে, আবার ভারতে বাড়ি কোনো মুসলিম সৈন্যও ইচ্ছা করলে ভারতে থেকে যেতে পারবে। আবার, ভারতে বাড়ি কোনো মুসলিম সৈনিক ইচ্ছা করলে পাকিস্তানে বদলি হতে পারবে, ঠিক একইভাবে পাকিস্তানে বাড়ি কোনো অমুসলিম সৈনিকও ভারতে বদলি হতে পারবে। তবে, ভারতে বাড়ি কোনো অমুসলিম সৈনিক পাকিস্তানের ফৌজে কিংবা পাকিস্তানে বাড়ি কোনো মুসলিম সৈন্য ভারতের ফৌজে যেতে পারবে না, অবশ্য সেটি হওয়ার কোনো কারণও নেই।

ঐ বৈঠকেই যুক্ত দেশরক্ষা পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুই ডোমিনিয়নের দুই গভর্নর জেনারেল, দুই দেশরক্ষা সচিব এবং তৎকালীন প্রধান সেনাপতি, এই ৫ জনকে নিয়ে যুক্ত দেশরক্ষা পরিষদ (Joint Defence Council) গঠিত হয়। ১৫ আগস্টের পর প্রধান সেনাপতির নতুন নাম হবে সুপ্রিম কমান্ডার এবং তিনি কেবল ভাগ করার কাজে সহযোগিতা করবেন, অন্য কোনো নির্দেশ তিনি দিতে পারবেন না এবং তার কাজের মেয়াদ হবে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৫ আগস্টের পর দুই ডোমিনিয়নের দেশরক্ষা সচিবের নির্বাচিত সেনাপতি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর হাল ধরবে।

এদিকে পাঞ্জাব বিভক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পাঞ্জাব জুড়ে শুরু হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। পূর্ব ও পশ্চিম পাঞ্জাবের আনুমানিক সীমান্ত এলাকাতেই ব্যাপকহারে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, জবরদখল, উচ্ছেদ চলতে থাকে। এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সামলানোর জন্য হিন্দু, মুসলমান ও শিখ সৈনিকদেরকে নিয়ে গঠিত হয় পাঞ্জাব সীমান্ত বাহিনী, যার প্রধান হিসেবে একজন ইংরেজ মেজর জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পাঞ্জাব বিভক্তীকরণ; Image Source: WikiWand

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সত্ত্বেও সামরিক বাহিনীর বিভক্তির কাজও চলতে থাকে সমানতালে। পদাতিক রেজিমেন্ট, সাঁজোয়া দল, গোলন্দাজ দল, ইঞ্জিনিয়ার দল, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী কীভাবে ভাগ হয়েছিল তার একটি তালিকা দেওয়া হলো:

Image Credit: Usama Rafid

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ফৌজ ভাগ করে দেওয়া হলো, তার মধ্যে গুর্খা রেজিমেন্টগুলোকে ধরা হয়নি। এগুলোর কোনোটিই পাকিস্তানি বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হবে না তা আগেই ঠিক করা হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও গুর্খা রেজিমেন্টগুলো ভারত বাহিনীতে থেকে যায়। ৯ নভেম্বর নেপালের কাঠামান্ডুতে ভারত, নেপাল ও ইংরেজদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ও ইংরেজদের বাহিনীতে গুর্খাদের কাজ করার অনুমতি দেয় নেপাল রাজ। শান্তিকালীন সময়ে ইংরেজদের কাছে ৮টি গুর্খা ব্যাটালিয়ন তৈরির সীমা বলে দেয় তারা। এর ফলে ভারতীয় ফৌজের ৪টি রেগুলার গুর্খা রেজিমেন্টকে (২নং, ৬নং, ৭নং ও ১০নং) ব্রিটিশ ফৌজে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে বলামাত্রই তাদেরকে ব্রিটিশ ফৌজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, বরং গুর্খাদের মধ্যে গণভোটের আয়োজন করা হয়। প্রত্যেক গুর্খা সৈন্যকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সে কোন ফৌজে থাকতে চায়। ৪ রেজিমেন্টের ১০ হাজার গুর্খা সৈনিকের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার সৈনিক ব্রিটিশ ফৌজে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা জানায়। রেজিমেন্ট ভাগ হওয়ার পর ব্রিটিশ ফৌজে যোগ দেওয়া এই গুর্খা রেজিমেন্টগুলোকে মালয়ে পাঠানো হয়।

ভারতের স্বাধীনতার পর হংকং-এ পাঠানো ব্রিটিশ আর্মির গুর্খাদের একাংশ; Image Source: Asia Times

ইংরেজদের বিদায়

১৯৪৭ সালের ৩০ এপ্রিলেই ভারতসচিব ভারতীয় ফৌজ থেকে ব্রিটিশ অফিসারদের বিদায়ের ব্যাপারে ঘোষণা দেন। ঐ দিনই ভারতের গভর্নর জেনারেল ঘোষণা দেন যে, ভারতীয় বাহিনী থেকে যেসব ব্রিটিশ অফিসার ও কর্মচারী বিদায় নেবেন, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থ দেওয়া হবে।

তবে হঠাৎ করে সব ব্রিটিশ অফিসার একযোগে চলে বেশ কিছু বিভাগে সমস্যা হওয়ার কথা স্বীকার করে নেয় দুই পক্ষই। কারণ স্থলবাহিনীতে ভারতীয় অফিসারের পরিমাণ ঠিক থাকলেও বিমান ও নৌবাহিনীতে ব্রিটিশ অফিসার ছিল অনিবার্য, কারণ এই দুই বাহিনীতে অভিজ্ঞ ভারতীয় অফিসারের পরিমাণ ছিল বেশ অপ্রতুল। ফলে ইংরেজ সরকারের সাথে ভারত সরকারের একটি চুক্তির ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে এই ব্রিটিশ অফিসাররা ১ বছরের জন্য ভারতীয় বাহিনীর হয়ে কাজ করার কন্ট্রাক্ট নেবেন। যদি এরপরও প্রয়োজন হয়, তবে পুনরায় কন্ট্রাক্ট করে সময় বাড়িয়ে নেওয়া হবে।

ভারত স্বাধীন হওয়ার ২ দিন পর অবশেষে প্রথম ব্রিটিশ দল জাহাজে করে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমায়। ২০ নভেম্বর ভারত সরকারের সাথে ব্রিটিশ সরকারের আরেকটি নতুন চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী, স্থলবাহিনীতে ১ বছর, বিমান বাহিনীতে ২ বছর এবং নৌবাহিনীতে ৩ বছর পর্যন্ত ব্রিটিশ অফিসাররা থাকতে পারবেন। তবে যেকোনো ব্রিটিশ অফিসার ১ বছর কাজ করার পর ৩ মাসের নোটিশে যেকোনো সময়ে কাজ ছেড়ে চলে যেতে পারেন। এছাড়া ব্রিটিশ সরকার যদি মনে করে ভারতীয় ফৌজে ব্রিটিশ অফিসারদের প্রয়োজন নেই, তাহলে যেকোনো সময়ে ব্রিটিশ অফিসারদেরকে ফেরত নিতে পারে। সেক্ষেত্রে ৩ মাসের নোটিশের কোনো প্রশ্ন থাকবে না।

১৫ আগস্ট থেকে ১৯৪৮-এর ১ জানুয়ারি এই সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ অফিসারদের সংখ্যা ৩০০-তে নেমে আসে। নৌবাহিনী ছাড়া বাকি সব বিভাগই প্রায় ব্রিটিশমুক্ত হয়ে যায়। ভারতীয় বাহিনীতে প্রশিক্ষক হিসেবে থাকা রয়্যাল এয়ার ফোর্সের অফিসার ও বৈমানিকদেরকেও ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ইংরেজদের বিদায়; Image Source: Look And Learn

১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বোম্বাই থেকে জাহাজে ওঠে সমারসেট লাইট ইনফ্যান্ট্রির ১নং ব্যাটালিয়ন। এবং এভাবেই ভারত থেকে ব্রিটিশ ফৌজ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। ২০০ বছর পর ব্রিটিশরা আর ভারতীয়দের সামরিক প্রভু নয়, ভারতীয়রাও নয় সামরিক ভৃত্য।

This article is in the Bengali language. It is about the Indian Army during the colonial period.

References:
1. ভারতীয় ফৌজের ইতিহাস - সুবোধ ঘোষ - দিব্যপ্রকাশ (২০২০)
2. The Indian Army (1914-1947) - Ian Sumner - Osprey Publishing (2001)
3. The Indian Army - Boris Mollo - New Orchard Editions (1986) 

Related Articles

Exit mobile version