দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সবচেয়ে বড় এবং ভয়ংকর নৌযুদ্ধগুলো হয়েছিল জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে। জাপান আগে থেকেই দ্বীপরাষ্ট্র বিধায় মধ্যযুগ থেকেই শক্তিশালী নৌবাহিনীর দিকে নজর দেয়। আবার আঠারো শতকের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রও তাদেরকে বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে দেখতে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে শুরু করে।
মূলত শক্তিশালী নৌবাহিনীর প্ৰয়োজনীয়তা প্রাচীনকাল থেকেই ছিল। এজন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নৌযুদ্ধগুলো ছিলো অনেক ভয়ংকর। শক্তিশালী জাপানিজ ইম্পেরিয়াল নেভি ও মার্কিন নেভির মধ্যে কামান দাগানোর অনেক ঘটনা ঘটেছে। ‘ব্যাটল অফ মিডওয়ে’ নামে আজকে যে নৌযুদ্ধের কথা বলা হবে তা তীব্রতার হিসেবে বেশিরভাগ গবেষকের মতে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। তবে কেউ কেউ একে প্রথম স্থানেও রাখেন। এই যুদ্ধে জাপানের নৌবাহিনীর পরাজয়ের ফলে তাদের যে ক্ষতি হয় সেটা তারা আর কখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এবং যুদ্ধে জাপানের চূড়ান্ত পরাজয়ের পেছনে ব্যাটল অফ মিডওয়ের অনেকটাই ভূমিকা আছে!
প্রেক্ষাপট
১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে জাপানের আক্রমণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। পার্ল হারবারে আক্রমণের ৬ মাস পরে জাপানি অ্যাডমিরাল ইসোরোকু ইয়ামামোতো প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপের মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান নৌঘাঁটিতে পার্ল হারবার স্টাইলে আবারও আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জাপান আর্মি চেয়েছিল নৌবাহিনী এবার প্যাসিফিক ক্যাম্পেইনে অন্য অঞ্চলগুলো দখল করার জন্য সেনা পাঠানোর অপারেশনে যেন সাহায্য করে। কিন্তু ইয়ামামোতো পার্ল হারবারে মার্কিন ব্যাটলশিপ ফোর্সের ৮টি জাহাজ ডুবিয়ে/ক্ষতিগ্রস্ত করেও শান্তি পাচ্ছিলেন না। কেননা পরিকল্পনা মোতাবেক ফ্লিট ক্যারিয়ারগুলোকে পার্ল হারবারে পাওয়া যায়নি। তার মূল উদ্দেশ্য ছিল সেখানে থাকা আমেরিকান ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপগুলোসহ অন্য যুদ্ধজাহাজগুলো ধ্বংস করা। কারণ এই ঘাঁটি ব্যবহার করে প্রায়ই জাপান অধিকৃত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বোমা হামলা চালাতো। মিডওয়েতে হামলার কিছুদিন আগে ১৮ এপ্রিল, ১৯৪২ সালে ইউএসএস হর্নেট নামের একটি মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার জাপানি উপকূলে গিয়ে ১৬টি হেভি বোম্বার বিমান লঞ্চ করে।
ইতিহাসে The Doolittle Raid নামে বিখ্যাত এই ‘হিট এন্ড রান’ অপারেশনে জাপানের রাজধানী টোকিও ও আশেপাশের এলাকায় অতর্কিতভাবে হামলা করে দ্রুত পালিয়ে গিয়েছিল। প্রায় অরক্ষিতভাবে সাপোর্টিং যুদ্ধজাহাজ ছাড়া এভাবে শুধুমাত্র এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দিয়ে হামলার ঘটনা একদমই বিরল ঘটনা। মূলত এ ঘটনার পর পরই ইয়ামামোতোর থিওরিতে জাপানি নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করতে শুরু করে যে ‘মার্কিন ক্যারিয়ারগুলো জাপানের জন্য এখন বিরাট হুমকি’। এমনকি জাপানি মূলভূমিও এখন আর নিরাপদ নয়। ফলে ইয়ামামোতোর অপারেশন পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
কিন্তু পার্ল হারবারের মতো এবার হাওয়াই দ্বীপের নৌঘাঁটিতে হামলার পরিকল্পনা একেবারে আত্মহত্যার শামিল। যুক্তরাষ্ট্র এবার দ্বিগুণ সতর্ক তো বটেই, তারা এবার পার্ল হারবারের ১৮টি যুদ্ধজাহাজ হারানোর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আরো যুদ্ধজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনে এখানে মোতায়েন করেছে। এছাড়া সাগরে সর্বদা ঘুরে বেড়ানো মার্কিন সাবমেরিন ফ্লিট ও হাওয়াই, হনলুলু, গুয়াম ইত্যাদি দ্বীপের লংরেঞ্জ পেট্রোল বিমানগুলোর নজর এড়িয়ে হামলা করা একেবারেই অসম্ভব। তাই ফাঁদ পেতে মূল ঘাঁটি থেকে মার্কিন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রূপকে বের করে এনে হামলার পরিকল্পনা করেন এডমিরাল ইসোরোকু ইয়ামামোতো।
এজন্য তিনি মিডওয়ে আইল্যান্ডকে বেছে নেন। এটি হাওয়াইয়ান আইল্যান্ড থেকে ১,৩০০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই এখানে একটি সাবমেরিন রিফুয়েলিং বেজ স্থাপন করেছিল যার সাহায্যে ১,২০০ মাইল এলাকায় নিয়মিত টহল দিত মার্কিন সাবমেরিন বহর। এছাড়া এখানে সি-প্লেন ও লংরেঞ্জ B-17 বোমারু বিমানের ঘাঁটি বানানো হয়েছিল যার সাহায্যে প্রশান্ত মহাসাগরে জাপান অধিকৃত দ্বীপগুলোর উপর নিয়মিত হামলা করা হতো সবচেয়ে বড় কথা ছিল জাপানি বাণিজ্যিক জাহাজগুলো প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছিলো মার্কিন সাবমেরিনের হাতে। দ্বীপরাষ্ট্র জাপান এ কারণে বেশ সমস্যায় পড়ে যায়। তাই মার্কিনীদের পাল্টা জবাব দিতে ও ক্যারিয়ার ফ্লিটকে অ্যাম্বুশের সময় মিডওয়ে থেকে তেমন বড় ধরনের সাপোর্ট আসবে না (বোমারু বিমানগুলো যুদ্ধজাহাজে হামলার উপযোগী নয়) জেনে এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয় জাপানী হাই-কমান্ড।
প্রস্তুতি
পার্ল হারবারে আক্রমণ আসলে আমেরিকার অগোচরে হয়নি। রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই আক্রমণ করে জাপান! জাপানি অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতো চাননি কোনো ঘোষণা ছাড়াই কাপুরুষের মতো আমেরিকায় হামলা করে বসতে। তিনি চেয়েছিলেন আক্রমণ শুরুর আগেই আমেরিকাকে একটা বার্তা দিতে যাতে তারা হামলার কথা জানতে পারে!
মেসেজ তাদের হাতে পড়ার ঠিক আধাঘণ্টা থেকে একঘণ্টার মধ্যে জাপান পার্ল হারবারে বোমা ফেলবে। কিন্তু সাংকেতিক মেসেজের অর্থ বের করতেই কয়েক ঘন্টা লাগিয়ে ফেলে তারা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, জাপান আক্রমণে যাবার ঠিক আগের দিন সন্ধ্যায় তাদের জাতীয় সব দৈনিকে “আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ ঘোষণা” সংক্রান্ত এই খবর খোলাখুলি ছাপিয়েছিলো। কিন্তু আমেরিকার কেউ জাপানি পেপারগুলো আক্রমণের আগে আগে হাতে পায়নি। তাই পার্ল হারবারে আক্রমণ মার্কিন গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা নাকি যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপারটা জেনেও চুপ ছিল সেই প্রশ্ন কিন্তু অনেকেই তুলেছেন। যা-ই হোক, সেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আজকের আলোচনার মুখ্য বিষয় নয়।
তবে পার্ল হারবার আক্রমণের পর মার্কিন নেভাল ইন্টেলিজেন্সকে শক্তিশালী করা হয়। যার ফলে জাপান পার্ল হারবার আক্রমণের প্রস্তুতি খোলাখুলিভাবে নিলেও হাওয়াই দ্বীপে আক্রমণের প্রস্তুতি অনেক গোপনীয়তার সাথে নিয়েছিল। কিন্তু এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই আক্রমণের কথা গোয়েন্দাদের মাধ্যমে জানতে পেরে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেয়। মূলত ক্যাপ্টেন জোসেফের নেতৃত্বে থাকা মার্কিন ক্রিপ্টোগ্রাফারগণ জাপানীদের নেভাল কমিউনেকেশন কোড ভেঙে ফেলতে সক্ষম হন। ফলে অনেক গোপন মেসেজের অর্থ জানা সম্ভব হয়।
এপ্রিলের ঐ হামলার পর পরই প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, বিশেষত মিডওয়ে অঞ্চলের বিভিন্ন কমান্ডারের সাথে অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতোর রেডিও যোগাযোগ বেড়ে যায়। ফলে মার্কিনীদের সন্দেহ হয় যে জাপানিরা মিডওয়েকে ঘিরে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা করছে। ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে তারা কিছু ভুয়া তথ্য রেডিওতে ছড়ায়। যেমন- মিডওয়ে দ্বীপে বেশ বড়সড় এয়ারফিল্ড রয়েছে। একে জাপানিরা AF দ্বারা রেডিওতে চিহ্নিত করতো। AF যে Air field বোঝায় সেটা তো সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু সমস্যা হলো, পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অসংখ্য দ্বীপে মার্কিন এয়ারফিল্ড ছিল। তাই প্রকৃত টার্গেট কোনটি সেটি বোঝা যায়নি। এসময় তারা ভুয়া নিউজ ছড়ায় যে মিডওয়ের পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টে সমস্যা দেখা দিয়েছে। জাপানিরা মার্কিন রেডিও মেসেজ ইন্টারসেপ্ট করে হেডকোয়ার্টারে খবর পাঠায় যে ‘AF এর পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টে সমস্যা’। ব্যস! আর যায় কোথায়। আক্রমণ যে মিডওয়েতে হবে সেটি নিশ্চিতভাবে জেনে যায় যুক্তরাষ্ট্র।
মিডওয়েতে পাল্টা হামলার দায়িত্ব দেয়া হয় এডমিরাল চেস্টার ডব্লিউ নিমিটজকে। এছাড়াও আরো ছিলেন অ্যাডমিরাল হ্যালসি, জোসেফ ফ্লেচার ও রেমন্ড স্প্রুয়েন্স। কিন্তু মার্কিনীদের হাতে পাল্টা আক্রমণের জন্য মাত্র এন্টারপ্রাইজ ও হরনেট নামে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ছিল। ইউএসএস এন্টারপ্রাইজ ও ইউএসএস হরনেট নামের মাত্র দুটো যুদ্ধজাহাজকে দ্রুততার সাথে প্রস্তুত করা হয়। কিছুদিন আগেই হওয়া ‘ব্যাটল অব কোরাল সি’ এর যুদ্ধে ইউএসএস ইয়র্কটাউন খুব বাজেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জাপানি বোমার আঘাতে এর ফ্লাইট ডেকে কয়েক ফুট ব্যাসের বিরাট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণভাবে মেরামত করার জন্য প্রায় ৩ সপ্তাহ সময় লাগতো। কিন্তু অ্যাডমিরাল নিমিটজ ইয়র্কটাউনকে মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে পানিতে ভাসানোর নির্দেশ দেন।
১,৪০০ শ্রমিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কাজটি সময়মতো করা সম্ভব হয়। মার্কিন নাবিকরা ইয়র্কটাউনকে এত তাড়াতাড়ি ফ্লিটে যোগ হতে দেখে একেবারে অবাক হয়ে যান। সব মিলিয়ে তিনটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অ্যাডমিরাল নিমিটজের ফ্লিটে যোগ দেয়। ইউএসএস সারাটোগা নামের আরেকটি ক্যারিয়ার যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঠানো হলেও সেটি সময়মতো ফ্লিটে যোগদান করতে পারেনি। ইম্পেরিয়াল জাপানী নেভির এই আক্রমণের কমান্ডার ছিলেন অ্যাডমিরাল ইসোরোকু ইয়ামামোতো, চুইচি নাগুমো এবং নাবুটাকে কন্ডোর নেতৃত্বাধীন জাপানী কম্বাইন্ড ফোর্স।
চলুন দেখে নেয়া যাক কার শক্তিমত্তা কেমন ছিল।
মার্কিন নৌবাহিনীর মূল শক্তি ছিল ৩টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। পার্ল হারবার আক্রমণের পরপরই প্রচলিত নৌ-যুদ্ধের ধরণ বদলে যায়। ব্যাটলশিপের বদলে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারকে কেন্দ্র করে নৌবহর সাজানোর কৌশল গড়ে উঠে। ক্যারিয়ার গ্রূপে ছিল ২৩৩টি বিমান। এছাড়া আরো ১২৭টি বিমান নিকটস্থ মিডওয়ে এয়ারবেজ থেকে এই অপারেশনে অংশ নেয়। ক্যারিয়ার গ্রূপ শত্রু যুদ্ধজাহাজ ও বিমান হামলা থেকে রক্ষার জন্য ৭টি হেভি ক্রুজার, ১টি লাইট ক্রুজার, ১৫টি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ এই বহরে যোগ দেয়। এছাড়া ১৬টি সাবমেরিন জাপানি নৌবাহিনীর জাহাজের উপর পানির নিচ থেকে আক্রমণের জন্য বহরে যোগ করা হয়।
ইম্পেরিয়াল জাপানিজ নেভি তাদের প্রায় সর্বশক্তি নিয়ে এই যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতোর ফ্লিটে ছিল প্রায় ২০০ যুদ্ধজাহাজ! দুটো ক্যারিয়ার ডোবানোর জন্য তিনি অল-আউট ব্যাটলের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন। অপারেশন প্ল্যান মোতাবেক তিনি মার্কিনীদের ধোঁকা দিতে অ্যাডমিরাল নাবুটাকে কন্ডোকে এলিউশন দ্বীপে হামলা করার নির্দেশ দেন যেন অ্যাডমিরাল নিমিটজ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে হনলুলু, হাওয়াই এর মার্কিন ঘাঁটিকে রক্ষা করার জন্য ফোর্স পাঠান। এই সুযোগে এডমিরাল চুইচি নাগুমোর বাহিনী মিডওয়েতে মার্কিন ক্যারিয়ার ফ্লিটের উপর অতর্কিত হামলা করবে। তার কয়েকশ মাইল পিছনেই থাকবে এডমিরাল ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্স। সামনে থাকা দুই নৌবহরকে প্রয়োজনে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে এবং অবশিষ্ট মার্কিন নৌ-শক্তির যথাসাধ্য ক্ষয়ক্ষতি করবে।
চুইচি নাগুমোর মূল বাহিনীতে ছিল ৪টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও ২৪৮টি ক্যারিয়ারভিত্তিক যুদ্ধবিমান। পার্ল হারবার আক্রমণে অংশ নেয়া ৬টি ক্যারিয়ারের ৪টি মিডওয়ের যুদ্ধে অংশ নেয়। এদের সাথে ছিল ২টি ব্যাটল ক্রুজার, ২টি হেভি ক্রুজার, ১টি লাইট ক্রুজার ও ১২টি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ। এছাড়া গোয়েন্দা মিশন পরিচালনার জন্য ১৬টি যুদ্ধজাহাজভিত্তিক সি-প্লেন এই অপারেশনে অংশ নেয়। এছাড়া জাপানি সাপোর্টিং ফ্লিটে ছিল ৪টি হেভি ক্রুজার, ২টি ডেস্ট্রয়ার ও ১২টি সি-প্লেন। এদেরকে মূল নৌবহরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে সঙ্গে আনা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরের রাজা ছিল জাপান। তাই অসংখ্য যুদ্ধজাহাজ মিডওয়ের আশেপাশের অঞ্চলে মোতায়েন ছিল। দরকার হলে তারাও যেন মিডওয়ের যুদ্ধে অংশ নেয় সেই নির্দেশনাও ছিল। জাপানি ফ্লিটে ছিল কিন্তু যুদ্ধে অংশ নেয়নি এমন যুদ্ধজাহাজের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। ২টি লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ৫টি ব্যাটলশিপ, ৪টি হেভি ক্রুজার, ২টি লাইট ক্রুজার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজসহ ৩৫টি লজিস্টিক সাপ্লাই জাহাজ যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি অঞ্চলে মোতায়েন ছিল। এগুলো ছিল অ্যাডমিরাল ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্সের অধীনে। তিনি মূলত মিডওয়েতে ফাঁদে পড়া মার্কিন নৌবাহিনীর জন্য রিএনফোর্সমেন্ট হিসেবে আসা যুদ্ধজাহাজদের ঠেকানোর জন্য এত বেশি সংখ্যক যুদ্ধজাহাজ মিডওয়ের যুদ্ধে স্ট্যান্ডবাই রেখেছিলেন। কিন্তু মার্কিনীরা তো আগেই অ্যাম্বুশের কথা জেনে গেছে। ফলে শিকার হয়ে গেছে শিকারি!
অ্যাডমিরাল নিমিটজ এলিউশন দ্বীপে হামলার জবাবে পার্ল হারবার থেকে সেখানে অযথা নৌ-শক্তি মোতায়েন করেননি। একই সঙ্গে ইয়ামামোতোর সেন্টার ফোর্সকে আক্রমণের জন্যও কোনো জাহাজ পাঠাননি। বরং মিডওয়েতে ৩টি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারসহ অন্যান্য সাপোর্ট শিপ পাঠিয়েছিলেন পাল্টা অ্যাম্বুশের জন্য। হায় ইয়ামামোতো! তিনি যদি জানতেন যে মার্কিন ক্যারিয়ার দুটি নয় বরং তিনটি, তবে কি এলিউশন দ্বীপে অযথা হামলা করতেন? (চলবে)
[২য় বিশ্বযুদ্ধে সম্পর্কে আরও জানতে যে বইগুলো কিনতে পারেন।]