১
১৫৫৫ সালের ২২ জুন সম্রাট হুমায়ুন সিকান্দার শাহ সুরিকে পরাজিত করে দিল্লী পুনরুদ্ধার করেন। দিল্লী পুনরুদ্ধারের পর পরই তিনি হাত দিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের বেহাত হয়ে যাওয়া ভূখণ্ডগুলো পুনরুদ্ধারের কাজে। একে একে সেনাবাহিনী প্রেরণ করলেন আগ্রায়, সম্ভলে, বিয়ানায়, মেওয়াতে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, দিল্লী দখলের পর জীবন সম্পর্কে সম্রাটের চিন্তাধারার বেশ সূক্ষ্ম কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। এসময় আক্ষরিক অর্থেই তিনি রাজক্ষমতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ঝুঁকে পড়েন ধর্ম পালনের প্রতি। এসময় কবর দেখলেই তিনি উদাসীন হয়ে যেতেন। বারবার মৃত্যুর কথা স্মরণ করতেন।
এক পর্যায়ে সম্রাট শপথ করে বসলেন, হিন্দুস্তান- তার প্রতি সম্রাট বাবরের আমানত, যা তিনি নিজের ভাইদের অন্তর্কলহে পড়ে খুইয়ে বসেছিলেন, তা পুনরুদ্ধার করে আকবরের হাতে দিয়ে দেবেন। আর তিনি সময় কাটাবেন তার রব আল্লাহর ইবাদত করে।
২
১৫৫৬ সাল, ২৪ জানুয়ারি। শুক্রবার।
নেতৃস্থানীয় কিছু মুঘল অভিজাত ব্যক্তি, সম্রাটের সাক্ষাৎ প্রত্যাশা করছেন। এই লোকগুলো সম্প্রতি হজ্ব সম্পন্ন করে দরবারে ফিরে এসেছেন। সম্রাটও তাদের অভিজ্ঞতা জানতে উদগ্রীব। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পূর্বে তাদের সময় দেয়া হলো। উসমানীয় সালতানাতের (অটোমান সাম্রাজ্য) একজন নৌ সেনাপতি, অ্যাডমিরাল সাইয়িদি আলি রইসও সম্রাটের সাথে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাকেও সময় দেয়া হলো।
মহামান্য খলিফা সুলায়মান আল কানুনীর (সুলায়মান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট) এই অ্যাডমিরাল ১৫৫৩ সাল থেকে ১৫৫৬ সাল পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে উসমানী সালতানাতের দায়িত্ব পালন করেন। পর্তুগীজদের সাথে যুদ্ধ আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে তার নৌবহর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তিনি বাধ্য হন গুজরাটের দামান বন্দরে অবতরণ করতে। দীর্ঘ ঘটনাবহুল সময়ের পর গুজরাট থেকে আহমেদাবাদ আর মুলতান হয়ে লাহোরে গিয়ে পৌঁছান। তিনি যখন লাহোরে অবস্থান করছিলেন, তখন সম্রাট হুমায়ুন কাবুল থেকে এসে লাহোর অধিকার করেন। সম্রাটের পুনরায় দিল্লী দখল পর্যন্ত তিনি লাহোরেই ছিলেন। সম্রাটের অনুমতি পাওয়ার পর তিনি দিল্লীর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। দিল্লী পৌঁছালে সাইয়িদি আলি রইসকে সম্রাট ৪০০ হাতির বিশাল এক বহর ও দরবারের সদস্যদের নিয়ে স্বাগত জানালেন। যে কারও জন্যই এ এক বিরল সম্মাননা!
পরবর্তী কয়েকদিনে সাইয়িদি আলী রইসের সাথে সম্রাট হুমায়ুনের বেশ সখ্যতা হয়েছিলো। বিভিন্ন বিষয়েই তারা কথা বলতেন। সম্রাট মহান উসমানী সালতানাত সম্পর্কে জানতে বেশ আগ্রহী ছিলেন। তিনি আলী রইসকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন, আলী রইসও যথাসাধ্য উত্তর দিয়ে সম্রাটের পিপাসা মেটাতেন। সম্রাট এক পর্যায়ে তাকে হিন্দুস্তানেই থেকে যেতে অনুরোধ করলেন। তবে মহামান্য খলিফা সুলায়মানের প্রতি আনুগত্য আর দায়িত্বের কথা স্মরণ করে বিনয়ের সাথে সম্রাটের এই অনুরোধ ফিরিয়ে দিলেন। সম্রাট সাইয়িদি আলী রইসকে তার সাম্রাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন।
৩
যা-ই হোক, হজ্বফেরত হাজী আর সাইয়িদি আলী রইসসহ আরও বেশ কয়েকজনের সাথে সম্রাট সাক্ষাৎ করলেন। এর কিছুক্ষণ পর তিনি তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীর ছাদে উঠে গেলেন। আসন্ন মাগরিবের নামাজের জন্য সমবেত হওয়া মানুষরা সম্রাটকে ছাদে দেখে সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে মাথা নাড়লেন। সম্রাটও তাদের পাল্টা অভিবাদন জানালেন। এরপর শুক্র গ্রহকে পর্যববেক্ষণ করার জন্য জ্যোতির্বিদদের ডেকে পাঠালেন।
মাগরিবের আযান তখনও দেওয়া হয়নি। আর কিছুক্ষণের মাঝেই দেয়া হবে। সালাত আদায়ের জন্য সম্রাট তাই ছাদ থেকে নিচে নেমে আসছিলেন। সিঁড়িতে পা দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই আযান শুরু হয়ে গেলো।
সালাতের প্রতি আহ্বান শুরু হলে সেই আহ্বানকে সম্মান জানানোর জন্য সম্রাট সবসময়ই বিশেষ একটি কাজ করতেন। সালাতের আহ্বান শোনা মাত্রই তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, হাঁটু ভাজ করে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে পড়তেন তিনি। দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশত সম্রাট সেদিনও সিঁড়িতে বসে পড়তে চাইলেন। শীতের কারণে এসময় সম্রাটের গায়ে পশুর চামড়া দিয়ে বানানো লম্বা একধরনের ওভারকোট ছিলো। সম্রাট যখন হাঁটু ভাজ করে বসতে গেলেন, তখনই লম্বা ওভারকোটের একাংশ তার পায়ে সাথে আটকে গেলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সম্রাট মাথা নিচের দিকে দিয়ে সিঁড়ির নিচের ধাপে পড়ে গেলেন। মাথা নিচে থাকায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। আঘাতের কারণে সম্রাটের ডান কান দিয়ে তখন ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ঝরছিলো।
৪
মুহূর্তেই হৈচৈ পড়ে গেলো। অচেতন সম্রাটকে মূল প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পরই সম্রাট জ্ঞান ফিরে পেলেন। তবে মাথার আঘাত তাকে প্রচণ্ড দুর্বল করে ফেলতে লাগলো।
রাজকীয় চিকিৎসকরা দ্রুত সম্রাটের চিকিৎসা শুরু করে দিলেন। তবে অবস্থা যতটুকু মনে দেখাচ্ছিলো, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও খারাপ। চিকিৎকরা বুঝে গেলেন, পরিস্থিতি তাদের আওতার বাইরে। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। তাদের করার মতো আর কিছুই নেই।
এদিকে সম্রাটের অবস্থা আশঙ্কাজনক, আর অন্যদিকে যুবরাজ আকবর তখন পাঞ্জাবে। দ্রুতগামী ঘোড়া দিয়ে পাঞ্জাবে আকবরের কাছে বার্তা পাঠানো হলো। বার্তায় অল্পই জানানো হলো। সম্রাট সিঁড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন, তবে ভালো আছেন; দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু, আসল সত্য তো সম্পূর্ণ বিপরীত। সম্রাটের অবস্থা মোটেও ভালো না। দ্রুতই তার পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
মাথায় আঘাত পাওয়ার দু’দিন পর, অর্থাৎ, ২৬ জানুয়ারি সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে সম্রাট হুমায়ুনের জীবনাবসান ঘটলো।
৫
মানবজীবনে আর কিছুর নিশ্চয়তা থাকুক আর নাই থাকুক, একটি জিনিসের কিন্তু নিশ্চয়তা আছে। আর তা হলো মৃত্যু। মৃত্যু আমাদের সবারই হবে। তবে কবে হবে কেউ জানে না। ফলে মৃত্যুর জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে প্রস্তুতিও নেয়া যায় না। মৃত্যু একেবারে হুট করে সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। প্রস্তুতি নেয়ার বিন্দুমাত্র সময়ও দেয় না। সম্রাট হুমায়ুনকে মৃত্যু সময় দেয়নি। কে আশা করেছিলো, দীর্ঘ ১৫ বছর কষ্টের পর যখন সম্রাট তার হারানো সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করবেন, তখন তাকে এভাবেই সব ছেড়েছুড়ে চলে যেতে হবে!
তবে, এত কিছুর মাঝে একমাত্র স্বস্তির ব্যাপারটি হলো, সম্রাট তার সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করে যেতে পেরেছিলেন। মহান মুঘল সাম্রাজ্য আবারও তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার পথে যাত্রার সুযোগ পেয়েছিলো।
তবে সম্রাটের এই হঠাৎ মৃত্যুতে এই যাত্রা কিছুটা হলেও হোঁচট খেয়ে গেলো। সম্রাট হুমায়ুন আর নেই, সাম্রাজ্যের প্রশাসন বিশৃঙ্খল, সম্রাটের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অংশ তখনও বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে ব্যস্ত। আর অন্যদিকে যুবরাজ আকবরকে তখনই নাবালকই ধরা যায়। এরকম অবস্থায় বাইরের শত্রু থেকে যেমন আক্রমণের আশঙ্কা থাকে, ঠিক তেমনি ঘরের শত্রুরাও সুযোগ বুঝে ছোবল মেরে বসে। কে বলতে পারে যে মুঘল সেনাবাহিনীর কোনো জেনারেল নিজেই ক্ষমতা দখল করে বসতে চাইবেন না? গোটা পরিস্থিতি বিচারে সম্রাটের সভাসদরা বেশ ঘাবড়ে গেলেন।
অবশেষে সম্রাটের মৃত্যুসংবাদ গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। কাজটি করা হলো সিইয়িদি আলি রইসের পরামর্শ অনুযায়ী। উসমানী খলিফা প্রথম সেলিমের মৃত্যুর পর একই কাজ করা হয়েছিলো। খলিফা সেলিমের মৃত্যুর পর তার উজির পীর-ই-পাশা খলিফার মৃত্যু সংবাদ গোপন রাখনে এবং খলিফার পুত্র সুলায়মান কনস্টান্টিনোপোল এসে ক্ষমতা নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা গোপনই রাখা হয়েছিলো।
সে যা-ই হোক, মৃত্যুর খবর তো গোপন করা হলো, কিন্তু সম্রাটের দাফন তো করতে হবে। দ্রুত জানাজার পর দিল্লির পুরাতন দুর্গেই সম্রাটকে দাফন করা হলো। সম্রাটের মৃত্যুর কয়েকমাস পরেই আদিল শাহের হিন্দু সেনাপতি হিমু দিল্লী অধিকার করে বসে। হিমুর দিল্লি অধিকার করার আগেই সম্রাটের মৃতদেহ সরিয়ে অস্থায়ীভাবে সিরহিন্দে দাফন করা হয়েছিলো। মুঘলরা পুনরায় দিল্লী অধিকার করার পর সম্রাটের মৃতদেহ দিল্লী এনে তার স্বপ্নের দীন-পানাহ নগরে দাফন করা হয়। সর্বেশেষে সম্রাটের পত্নী বেগা বেগমের নির্দেশনায় তৈরি করা ‘মকবরা-ই-হুমায়ুন’-এ শেষবারের মতো দাফন করা হয়। সম্রাট হুমায়ুন আজও শান্তিতে মকবরা-ই-হুমায়ুনে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
৬
গোপনীয়তা যেখানে ভর করে, গুজব সেখানে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এক্ষেত্রেও তা-ই হলো। কীভাবে যেন জনগনের কানে খবর গেলো যে তাদের সম্রাট মারা গেছেন। অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই রাজপ্রাসাদ থেকে ঘোষণা দেয়া হলো যে সম্রাট জীবিত এবং সুস্থ আছেন। শুধু তা-ই নয়, শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য তিনি ঘোড়ায় চড়ে জনগনের সাথে দেখাও করবেন! পরে আবহাওয়া খারাপ- এই অযুহাতে ঘোড়ায় চড়ে যাত্রা স্থগিত করা হলো।
পরবর্তীতে ঘোষণা দেওয়া হলো, সম্রাট তার প্রজাদের সাথে রাজদরবারে দেখা করবেন। কিন্তু, সেই ঘোষণাও বাতিল করা হলো। এতে জনগনের মনে বদ্ধমূল ধারণা হলো যে তাদের সম্রাট মারা গিয়েছেন। সম্রাটের মৃত্যুর খবরে প্রজাদের ভেতরে যেমন অস্থিরতা বাড়ছিলো, ঠিক তেমনই অস্থিরতা বাড়ছিলো সেনাবাহিনীতে। যোদ্ধারা সম্রাটকে নিজেদের চোখে দেখার দাবি জানাতে থাকলো। মুহূর্তেই অবস্থা এত খারাপ হয়ে গেলো যে, যেকোনো মূল্যেই সম্রাটকে প্রজাদের সামনে দাঁড় করানো জরুরি হয়ে পড়লো!
অবশেষে হাজির করা হলো মোল্লা বকসি নামের এক ব্যক্তিকে। মোল্লা বকসি নামের এই ব্যক্তির শারীরিক গঠন অনেকটা সম্রাটের মতোই ছিলো। দূর থেকে দেখলে সম্রাট হুমায়ুন ভেবে যে কেউই বিভ্রান্ত হবে। সভাসদরা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এই ব্যক্তিটিকেই কাজে লাগালেন।
মোল্লা বকসিকে সম্রাট হুমায়ুনের মতো রাজকীয় পোষাকে সজ্জিত করা হলো। সম্রাট প্রাসাদের যেই বারান্দা থেকে জনগণকে দেখা দিতেন, তাকেও সেই বারান্দায় দাঁড় করানো হলো। রাজকীয় প্রথা অনুযায়ীই তার সামনে-পেছনে রাজকর্মচারীরা দাঁড়ালেন, যেমনটা করা হতো সম্রাটের বেলায়। রাজকীয় পোশাকে সজ্জিত মোল্লা বকসী জনগণের উদ্দেশে হাত নাড়লেন। জনগণ বিভ্রান্ত হলো। সৈন্যরাও বিভ্রান্ত হলো। তারা ধরে নিলো, সম্রাট হুমায়ুন জীবিত আছেন। তার মৃত্যুর ব্যাপারে যা শোনা যাচ্ছিলো, নিশ্চিতভাবেই সেসব গুজব ছিলো। যেহেতু সম্রাট জীবিত, কাজেই কোথাও কোনো সমস্যা নেই। সবাই খুশিমনে যে যার কাজে চলে গেলো। সৈন্যরাও শান্ত হলো। এভাবে ১৭ দিন পর্যন্ত সম্রাটের মৃত্যুর খবর গোপন রাখা হলো।
১৭ দিন পর সম্রাটের মৃত্যুর খবর প্রচার করা হলো। এরপর দ্রুত দিল্লীর মসজিদে আকবরকে সম্রাট হুমায়ুনের বৈধ এবং একমাত্র উত্তরাধিকারী ঘোষণা করে তার নামে খুতবা পড়ানো হলো।
৭
এদিকে পাঞ্জাবের কালানৌরে তড়িঘড়ি করে চলছে আকবরের অভিষেকের কাজ।
বৈরাম খান সম্রাটের মৃত্যুর খবর পান ১১ ফেব্রুয়ারি। সম্রাটের মৃত্যুর পর তার করণীয় কাজ সম্পর্কে সহজেই বুঝে গেলেন তিনি। দ্রুত আকবরকে অভিষেক সম্পন্ন করতে হবে। এদিকে পিতার এই আকস্মিক মৃত্যু সংবাদে বালক আকবর অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছেন। সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া অবশ্য আপাতত আর কিছু করার নেই। আকবর যত ছোটই হোক না কেন, তাকে এই চিরন্তন সত্য মেনে নিতে হবে। তার মাথার উপর আর তার বাবা নেই। তাকেই নিজের দায়িত্ব নিতে হবে এখন। অবশ্য শুধু নিজের দায়িত্ব নিলেই হবে না, মহান মুঘল সাম্রাজ্যের দায়িত্বও তার কাঁধে চাপতে যাচ্ছে কিছুক্ষণ পরেই।
অভিষেকের জন্য বড় কোনো আয়োজন করা হলো না। হাতে সময় নেই। সম্রাটের মৃত্যুর খবর প্রচার হয়ে গেছে। এখন যত বেশি সময় মসনদ ফাঁকা থাকবে, আকবরের হাত ফসকে সেই মসনদ বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও ততই বেড়ে যাবে। কারণ, মসনদে কোন উত্তরাধিকারী নেই। সম্রাটের আত্মীয়দের মধ্য থেকে বা সেনাবাহিনীর মধ্য থেকে যে কেউই মসনদ দাবি করে বসতে পারে। আর একবার দাবি করা হয়ে গেলে এই সমস্যা যুদ্ধের মাঠ পর্যন্ত গড়াবে।
তাই দ্রুত হাতের কাছে যা পাওয়া গেলো, তাই দিয়ে সাধারণ একটি মঞ্চ তৈরি করা হলো। এই মঞ্চ থেকেই সম্রাটের আকস্মিক মৃত্যুর ঘোষণা দেয়া হলো। একইসাথে সম্রাটের পর তার একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে আকবরের নাম ঘোষণা করে তাকে পরবর্তী মুঘল বাদশাহ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলো। এসময় আকবরের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ বছর। অভিষেক উপলক্ষে আকবরের নতুন নাম হলো জালালউদ্দিন মুহম্মদ আকবর বাদশাহ গাজী। দিনটি ছিলো ১৫৫৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার ‘বাদশাহ নামদার’ বইয়ে বলেছেন, “রাজা যায়, রাজা আসে।” বাস্তবতাও তা-ই। এক রাজার পর আরেক রাজা আসে। কারও জন্যই কিছু থেমে থাকে না। সম্রাট হুমায়ুন বলতে গেলে তার পুরোটা জীবনই মুঘল সাম্রাজ্যের জন্য সংগ্রাম করে কাটিয়েছেন। তবে এখন আর সম্রাট নেই। তার অসমাপ্ত সেই কাজের দায়িত্ব এখন চেপেছে আকবরের কাঁধে। নতুন সম্রাট জালালউদ্দিন মুহাম্মদ আকবর বাদশাহ গাজীর দায়িত্ব হলো, মুঘল সাম্রাজ্যের পুরনো গৌরব পুনরুদ্ধার করে গৌরবের চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যাওয়া। অবশ্য ১৩ বছরের এক বালক সম্রাটের জন্য সত্যিকার অর্থেই অনেক কঠিন কাজ বটে!
[এই সিরিজের পূর্ব প্রকাশিত পর্বটি পড়ুন এখানে। সিরিজের সবগুলো লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।]