ফরাসি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে, আলজিয়ার্সের প্রাচীন দুর্গ-নগরী কাসবার সরু অলিগলি পেরিয়ে তিন আলজেরীয় নারী যখন তাদের গোপন আস্তানায় প্রবেশ করলেন, তখন তাদের আপাদমস্তক ঢাকা ছিল উত্তর আফ্রিকার নারীদের ঐতিহ্যবাহী সাদা রংয়ের আলখাল্লা দ্বারা। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করেই সাদা কাপড় খুলে রেখে তারা পরে নিলেন ইউরোপীয় নারীদের গ্রীষ্মকালীন পোশাক স্কার্ট এবং স্লিভলেস শার্ট।
নিজেদের লম্বা চুল কেটে ছোট করে, চুলে সোনালি রং করে, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিয়ে এবং কড়া মেকআপ নিয়ে তারা ধারণ করলেন ইউরোপীয় নারীদের ছদ্মবেশ। আয়নায় নিজেদেরকে দেখে মোটামুটি সন্তুষ্ট হলেন তারা। হ্যাঁ, তাদেরকে দেখতে এখন ঠিক ফরাসি নারীদের মতোই মনে হচ্ছে। ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনটি পরিচালনা করার জন্য এবার পুরোপুরি প্রস্তুত তারা!
যথাসময়ে আস্তানাটিতে প্রবেশ করলেন দলটির দলনেতা, এফএলএন (ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট) এর আলজিয়ার্স অটোনমাস জোনের কমান্ডার, সাদি ইয়াসেফ। ছদ্মবেশধারী তিন নারীকে তিনি তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। তাদের কাজ হবে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া ফরাসি নারীদের ছদ্মবেশে সুইমিং স্যুটের ব্যাগের ভেতরে করে বোমা নিয়ে দখলদার ফরাসিদের কোয়ার্টারে প্রবেশ করা এবং আলজেরিয়ান জনগণের উপর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ হিসেবে ফরাসিদের কোয়ার্টারের তিনটি জনাকীর্ণ স্থানে সেই বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটানো!
এই তিন নারী ছিলেন এফএলএনের ‘ভলান্টিয়ার্স ফর ডেথ’ স্কোয়াডের তিন কিংবদন্তী নারী গেরিলা, পরবর্তীতে যারা ‘দ্য বম্ব ইনস্টলার’ হিসেবে পরিচিত অর্জন করেছিলেন। এদের মধ্যেই একজন ছিলেন জামিলা বুহের্দ, যার সাহসিকতা এবং দেশের জন্য আত্মত্যাগের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল আলজেরিয়ার গন্ডি পেরিয়ে সমগ্র বিশ্বে। গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হওয়ার পর তার মুক্তির জন্য সারা বিশ্বের পাশাপাশি আন্দোলন করেছিল খোদ ফরাসি জনগণও! অন্যায়ের বিরুদ্ধে তার বিপ্লবী ভূমিকা যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নারীদেরকে। যৌক্তিকভাবেই আরব বিশ্বে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন ‘আরবের জোয়ান অব আর্ক’ হিসেবে।
১৯৩৭ সালে এক মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে যখন জামিলা বুহের্দ জন্মগ্রহণ করেন, তখন আলজেরিয়া নামে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ছিল না। একশ বছরেরও অধিক সময় ধরে ঔপনিবেশিক ফরাসিদের অত্যাচার আর দমননীতির ফলে নতুন প্রজন্মের আলজেরিয়ানদের অনেকেই তখন তাদের জাতিগত পরিচয় ভুলতে বসেছিল। আলজেরিয়ান বাবা এবং তিউনিসিয়ান মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেও ফরাসি স্কুলে পড়াশোনা করা জামিলাও তাই তার সমবয়সী আর দশজনের মতো নিজেকে আরব হিসেবে বিবেচনা না করে ফরাসি হিসেবেই বিবেচনা করতে শিখেছিলেন।
জামিলা বুহের্দ কখনও তার মাতৃভাষা আরবি পড়তে বা লিখতে শেখেননি। আলজিয়ার্সের যে ফরাসি স্কুলে তিনি পড়াশোনা করতেন, সেখানে তাদেরকে শেখানো হতো ফ্রান্সই তাদের মাতৃভূমি, প্যারিসই তাদের রাজধানী, ফ্রান্সের জাতীয় পতাকাই তাদের জাতীয় পতাকা এবং ফরাসি ভাষাই তাদের রাষ্ট্রভাষা। এই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা জামিলার পক্ষে তাই ফ্রান্সের প্রতি অনুগত হিসেবে বেড়ে ওঠাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছিল সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা।
১৯৪৫ সালের সেতিফ গণহত্যার পর আলজেরিয়াতে যখন ধীরে ধীরে স্বাধীনতার আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকে, তখন তা আলোড়িত করে কিশোরী জামিলাকেও। ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে শেখেন, আলজেরিয়াই তার মাতৃভূমি, আর ফরাসিরা কেবলই দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তি। সেই স্কুলজীবনেই ফ্রান্সের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পরিবর্তে অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে তিনি গেয়ে উঠতেন, “আল-জেজায়েরু উম্মুনা”। অর্থাৎ, “আলজেরিয়া আমাদের মা”। এর জন্য তাকে শাস্তিও কম পেতে হতো না। কিন্তু দেশের জন্য শাস্তি ভোগ করার অভ্যাসটা তিনি তখনই আয়ত্ত্ব করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় ১৯৫৪ সালের পহেলা নভেম্বর, এফএলএনের (FLN) সশস্ত্র আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে। জামিলা তখন সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার ভাইয়েরা ছিলেন একেবারে শুরুর দিকেই এফএলএনে যোগ দেওয়া গেরিলা যোদ্ধা। কাসবাতে তাদের বাড়িটি ছিল এফএলএনের বিপ্লবী গেরিলাদের অস্থায়ী মিলনকেন্দ্র। এফএলএনের আলজিয়ার্স অটোনমাস জোনের কমান্ডার সাদি ইয়াসেফসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরই তাদের বাসায় যাতায়াত ছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামের একেবারে শুরুতেই ভাইদের হাত ধরে জামিলা এফএলএনে যোগ দেন। জামিলা ছিলেন তার নামের অর্থের মতোই সুন্দরী। ফরাসিদের মতো পোশাক পরে তিনি সহজেই নিজেকে ফরাসি নারী হিসেবে চালিয়ে দিতে পারতেন। সাদি ইয়াসেফ তার গেরিলা যুদ্ধের কৌশল হিসেবে জামিলার মতো ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রীদেরকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। জামিলা ছিলেন এফএলএনের সেই নারী সদস্যদের মধ্যে অগ্রগামী। শুরুতে তিনি সংগঠনটির লিঁয়াজো এজেন্ট এবং সাদি ইয়াসেফের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু শীঘ্রই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে তিনিও অবতীর্ণ হন গেরিলা যুদ্ধে।
শুরুর দিকে এফএলএনের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র ফরাসি পুলিশ এবং সেনাসদস্যরা। গেরিলাদের প্রতি কমান্ডারদের পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, তাদের আক্রমণে যেন কোনো নারী বা শিশু আক্রান্ত না হয়। কিন্তু ফরাসিদের নির্বিচার আক্রমণ, গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়ায় এফএলএনও ধীরে ধীরে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের ১০ আগস্ট যখন আলজিয়ার্সের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফরাসি সেটলারদের বোমা হামলায় নারী-শিশুসহ ৭০ জন বেসামরিক আলজেরিয়ান নিহত হয়, তখন এফএলএনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এল-আরাবি বেন এমহেইদি সাদি ইয়াসেফকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার নির্দেশ দেন।
সাদি ইয়াসেফের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা হিসেবে এগিয়ে আসেন জামিলা বুহের্দ। তিনি আরও দুই নারীযোদ্ধা জোহরা দ্রিফ এবং সামিয়া লাখদারিকে রিক্রুট করেন তার সহযোদ্ধা হিসেবে। সাদি ইয়াসেফের তত্ত্বাবধানে তাদের তিনজনসহ আরও কিছু নারীকে নিয়ে গঠিত হয় এফএলএনের গোপন একটি সেল, ‘ভলান্টিয়ার্স ফর ডেথ’। সিদ্ধান্ত হয়, তারা কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে ফরাসিদের ইউরোপিয়ান কোয়ার্টারে প্রবেশ করবেন এবং সেখানকার বিভিন্ন জনাকীর্ণ স্থানে বোমা রেখে এসে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটাবেন।
১৯৫৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হয় তাদের অভিযান। ফরাসি নারীদের মতো পোশাক পরে, তাদের ছদ্মবেশে তিন নারী গেরিলা বোমা নিয়ে প্রবেশ করেন ইউরোপিয়ান কোয়ার্টারে। জোহরা দ্রিফ তার বোমাটি স্থাপন করেন মিল্ক বারে, আর সামিয়া লাখদারি স্থাপন করেন একটি জনপ্রিয় ক্যাফেটেরিয়াতে। তাদের দুজনের বোমাই যথাসময়ে বিস্ফোরিত হয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। কিন্তু জামিলা বুহের্দ এয়ার ফ্রান্সের অফিসের সামনে বোমাটি স্থাপন করলেও কারিগরি জটিলতায় সেটি বিস্ফোরিত হতে ব্যর্থ হয়।
বোমা হামলাকারীদের খোঁজে ফরাসিরা বিশাল অভিযান পরিচালনা করে এবং সন্দেহভাজন অনেককে গ্রেপ্তার করে। প্রথম কিছু দিন আত্মগোপনে থাকলেও এরপর জামিলা এবং তার সঙ্গীরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। প্রায় ছয়মাস পর, ১৯৫৭ সালের এপ্রিল মাসে, কাসবা থেকে বের হওয়ার সময় তিনি ফরাসি সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে যান। সে সময় তার কিছুটা পেছনেই সাদা কাপড়ে মহিলার ছদ্মবেশে অবস্থান করছিলেন সাদি ইয়াসেফ। জামিলাকে গ্রেপ্তার হতে দেখেই তিনি তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এই আশঙ্কায় যে, জীবিত ধরা পড়লে ফরাসিরা হয়তো নির্যাতন করে তার মুখ থেকে সংগঠনের অন্যান্য সদস্যদের পরিচয় বের করে ফেলবে।
গুলিতে জামিলা সামান্য আহত হয়েছিলেন। ফরাসিরা তাকে প্রথমে জেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরেই বন্দী অবস্থায় তার উপর শুরু করে অবর্ণনীয় নির্যাতন। কিন্তু শত নির্যাতনের পরেও ফরাসিরা তার মুখ থেকে একটি তথ্যও বের করতে পারেনি। স্বাধীনতার জন্য, সহযোদ্ধাদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য ১৭ দিন ধরে ইলেক্ট্রিক শক এবং ওয়াটারবোর্ডিং সহ্য করে গেছেন ২০ বছর বয়সী বিপ্লবী তরুণী জামিলা বুহের্দ। নির্যাতনের সময় অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যেই তিনি একাধিকবার বলে উঠেছিলেন, “আল-জেজায়েরু উম্মুনা”।
জামিলা যখন বন্দী, বাইরে থেকে তখন সাদি ইয়াসেফ তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এক গোপন বার্তার মাধ্যমে তিনি জামিলাকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, জামিলা যেন সাদির গোপন আস্তানা দেখিয়ে দেয়ার নাম করে ফরাসি সেনাদেরকে সাথে কাসবার ভেতরে আসে। তাহলে আগে থেকে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা গেরিলারা ফরাসি সেনাদের উপর হামলা করে জামিলাকে মুক্ত করতে পারবে। কিন্তু জামিলা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সহযোদ্ধা ভাইদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলার পরিবর্তে নিজের উপর নির্যাতন এবং সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডকেই তিনি বেছে নিয়েছিলেন।
জামিলার মুখ থেকে কোনো তথ্য বের করতে না পেরে ফরাসিরা তাকে বিচারের সম্মুখীন করে। তার ফরাসি আইনজীবি জ্যাঁক ভার্জেস তাকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তারপরেও ১৯৫৭ সালের ১৪ই জুলাই আদালত তাকে গিলোটিনে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়। ফ্রান্সের আদালতে জামিলা সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন আলজেরিয়ার তিন রংয়ের পতাকার মতো জামা পরে। রায়ের পর তার আইনজীবি যখন তাকে অনুরোধ করেছিলেন আদালতের কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার জন্য, উত্তরে জামিলা বলেছিলেন, একজন যোদ্ধা কখনও দখলদার শক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে পারে না।
জামিলার মৃত্যুদণ্ডের রায়ে বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। কিছু কিছু আরব রাষ্ট্রের উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রান্সের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। ইংল্যান্ডের লেবার পার্টির ৭৬ জন এমপি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট রেনে কোটিকে চিঠি দেন জামিলার মৃত্যুদণ্ড রহিত করার জন্য। লন্ডনে ফরাসি দূতাবাসের সামনে তিন দিনব্যাপী জামিলার মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিশাল সমাবেশ হয়। ফ্রান্সের বুদ্ধিজীবি মহলও জামিলার পক্ষে সোচ্চার হয়ে ওঠে। বিশেষ করে জামিলার আইনজীবি জ্যাঁক ভার্জেসের লেখালেখি এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অবশেষে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নতি স্বীকার করতে বাধ্য হন। ১৯৫৮ সালের ১৩ই মার্চ তিনি জামিলার মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার নির্দেশ দেন। ১৯৬২ সালে আলজেরিয়ার স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত জামিলা ফ্রান্সের কারাগারে বন্দী অবস্থায় কাটান। স্বাধীনতার পর অন্য অনেক বন্দীর সাথে তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর তিনি আলজেরিয়াতে ফিরে আসেন এবং তার ফরাসি আইনজীবী জ্যাঁক ভার্জেসের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জ্যাঁক ভার্জেস ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং মানসুর নাম গ্রহণ করেন।
জামিলা বুহের্দকে আরব বিশ্বের সেরা নারী বিপ্লবীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্বাধীনতার পর তিনি বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণে সেসব দেশ ভ্রমণ করেন এবং তাদের কাছ থেকে সম্মাননা লাভ করেন। তাকে নিয়ে আরবিতে রচিত হয়েছে শত শত গান এবং কবিতা, যাদের মধ্যে আছে সিরিয়ান কবি নিজার কাব্বানির লেখা কবিতা এবং লেবানিজ শিল্পী ফাইরুজের গাওয়া গান। তার জীবনী নিয়ে ১৯৫৮ সালে মিসরীয় চলচ্চিত্রকার ইউসুফ শাহিন নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র “Jamila the Algerian”। ১৯৬৬ সালের অস্কার মনোনীত চলচ্চিত্র “The Battle of Algiers” এ যে তিন নারীর কাহিনী দেখানো হয়, সেখানে একজন ছিলেন জামিলা বুহের্দ।
জামিলার সহযোদ্ধাদের অধিকাংশই মৃত্যুবরণ করেছেন। ৮৩ বছর বয়সী জামিলাও হয়তো মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু এই বয়সে এসেও তিনি দেশের প্রতি তার দায়িত্বের কথা ভোলেননি। আলজেরিয়ার ৮২ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট আব্দুল আজিজ বুতাফ্লিকা হুইল চেয়ারে আটকে থাকা সত্ত্বেও পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আলজেরিয়াতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলনে জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য আলজিয়ার্সের রাজপথে নেমে এসেছেন এককালের বিপ্লবী জামিলা বুহের্দও। এখনও তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর আলজেরিয়ার ভবিষ্যতের, যে আলজেরিয়ার স্বপ্ন তারা দেখা শুরু করেছিলেন ছয় দশক আগে।
ফিচার ইমেজ: আলজেরিয়ান নারী গেরিলা