দ্বিতীয় মিথ্রিডেটিক যুদ্ধ (৮৩-৮২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
প্রথম যুদ্ধের সমাপ্তির পর সুলা তার ঘনিষ্ঠ সহকারী মুরেনাকে এশিয়াতে রোমের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তার দায়িত্ব ছিল রোমের অধিকৃত অঞ্চলসমুহ পুনর্গঠন এবং কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ণ রাখা। মিথ্রিডেটসের সাথে নতুন করে লড়াইয়ে জড়ানো সুলার উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি সর্বান্তকরণে পন্টাসের রাজার সাথে চুক্তি বহাল রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মুরেনা চাইছিলেন, মিথ্রিডেটসকে পরাজিত করে তার রাজ্য রোমের অধীনে নিয়ে আসা। তিনি আশা করছিলেন, এর মাধ্যমে তিনি রোমে তার খ্যাতি ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারবেন। হয়তো সিনেট তাকে ট্রায়াম্ফও দিতে পারে।
এদিকে কলচিস আর বস্ফরাসের পার্শ্ববর্তী ক্রিমিয়ান এলাকা, যা মিথ্রিডেটসের এলাকাভুক্ত ছিল, সেখানে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দানা বেঁধে ওঠে। মিথ্রিডেটসের ছেলে ফিলাডেলফাসকলচিসের শাসনক্ষমতা নিলে ওই অঞ্চল শান্ত হয়ে আসে। কিন্তু ক্রিমিয়ান এলাকা ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকলে মিথ্রিডেটস সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য হন। এজন্য তিনি সেনা সমাবেশ করতে থাকেন। এদিকে সুলার সাথে করা চুক্তি অনুযায়ী কাপ্পাডোসিয়া সম্পূর্ণ ত্যাগ করার কথা থাকলেও মিথ্রিডেটস গড়িমসি করছিলেন। কাজেই মুরেনা ধরে নেন, মিথ্রিডেটস হয়তো তার নতুন সেনাদল দিয়ে পুনরায় কাপ্পাডোসিয়াতে প্রভুত্ব স্থাপনের চেষ্টা করবেন। পন্টিক জেনারেল আর্কেলাস, যিনি মিথ্রিডেটসের দরবার থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তিনিও মুরেনার এই ধারণার পালে হাওয়া দিলেন।
যুদ্ধের ঘটনাগুলো
এই যুদ্ধ ছিল সংক্ষিপ্ত। মুরেনা প্রথমে আক্রমণ করেন। তিনি কাপ্পাডোসিয়ার ভেতর দিয়ে মিথ্রডেটসের রাজ্যভুক্ত কোমানা শহরে গিয়ে হাজির হন। মিথ্রিডেটস যুদ্ধ এড়াতে চেষ্টা করলেন। তিনি মুরেনার কাছে দূত পাঠিয়ে ব্যর্থ হলেন। শেষ চেষ্টা হিসেবে তিনি রোমে প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। এদিকে মুরেনা শহরে লুটতরাজ করে শীতকালীন বিরতিতে গেলেন।
শীত শেষ হলো। মুরেনা আবার সেনাদল নিয়ে পন্টাসের এলাকাতে প্রবেশ করলেন। মিথ্রিডেটস এবার রুখে দাঁড়ালেন। জেনারেল গর্ডিয়াস রোমের এলাকাতে পাল্টা হামলা চালান। হ্যালিস নদীর (বর্তমান তুরস্কের Kızılırmak) ধারে শেষপর্যন্ত মুরেনা আর গর্ডিয়াস মুখোমুখি হলেন। মিথ্রিডেটস নিজে একদল সেনা নিয়ে গর্ডিয়াসের সাথে মিলিত হলেন। সম্মিলিত পন্টিয়াক বাহিনীর সাথে লড়াইতে মুরেনা হেরে যান। তিনি ও অবশিষ্ট রোমান সেনারা পর্বতের মধ্য দিয়ে ফ্রাইজিয়াতে পালিয়ে গেলেন।
যুদ্ধের এই পর্যায়ে তার কাছ থেকে মুরেনার কাছে মিথ্রিডেটসকে আক্রমণ না করার স্পষ্ট নির্দেশ এসে পৌঁছে। সুলার মধ্যস্ততায় কাপ্পাডোসিয়ার কিছু এলাকা মিথ্রিডেটসের সাম্রাজ্যভুক্ত হল, তার নাবালিকা কন্যার সাথে আরিওবার্জানেসের বিয়ের কথা চূড়ান্ত করা হয়। পরবর্তী আট বছর এই চুক্তি টিকেছিল। কিন্তু সুলার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যেতে থাকে। এদিকে মিথ্রিডেটসের আর্মেনিয়ান মিত্র টিগ্রানেস ৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিরিয়া ও পরে বৃহত্তর কাপ্পাডোসিয়ার অনেক এলাকা নিজের দখলে নিয়ে নেন।
তৃতীয় মিথ্রিডেটিক যুদ্ধ (৭৪-৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)
৭৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিথাইনিয়ার রাজা তৃতীয় নিকোমেডেসের মৃত্যু রোম ও কিংডম অভ পন্টাসের ঝুলে থাকা সন্ধির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল। নিকোমেডেস রোমের কাছে তার রাজ্য অর্পণ করে যান। কিন্তু মিথ্রিডেটস নিকোমেডেসের কথিত এক পুত্রকে সমর্থন দিতে থাকেন। তার ইচ্ছে ছিল, বিথাইনিয়ার সিংহাসনে নিজের কথামতো চালানো যাবে এমন কাউকে বসানো। রোমের সাথে এ নিয়ে সংঘাত অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে তিনি সেনা ও নৌবাহিনী শক্তিশালী করেন।
ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে জলদস্যু আর হিস্পানিয়াতে সিনেটের শাসনের বিপক্ষে লড়তে থাকা বিদ্রোহী মারিয়ান সার্টোরিয়াসের সাথে জোট গঠন করা হলো। সার্টোরিয়াস তার বিশ্বস্ত সহকারী ভ্যারিয়াসকে পাঠিয়ে দেন। তিনি মিথ্রিডেটসের সেনাদের রোমান কৌশলে প্রশিক্ষিত করেন। সব আটঘাট বেঁধে ৭৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শুরুতে মিথ্রিডেটস বিথাইনিয়াতে ঢুকে পড়েন।
রোমান প্রস্তুতি
৭৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের রোমের কন্সাল ছিলেন লুসেলাস আর কটা। লুসেলাসের ভাগে পড়ে এশিয়া মাইনর আর সিলিসিয়ার শাসনভার। মিথ্রিডেটসের বিরুদ্ধে সার্বিক কম্যান্ডও তার হাতে ন্যস্ত করা হলো। কটা পেলেন বিথাইনিয়া। হেলেস্পন্ট সুরক্ষিত রাখতে একটি নৌবহরও তার দায়িত্বে ছিল।
যুদ্ধের সূচনা
মিথ্রিডেটস যখন বিথাইনিয়াতে ঢুকে পড়লেন, তখন তার সামনে ছিলেন কেবল কটা। লুসেলাস তখন উত্তর ফ্রাইজিয়াতে সেনাবাহিনী প্রস্তুত করছেন। উদ্দেশ্য, সেদিক থেকে পন্টাসে অনুপরবেশ করা।
আপিয়ানের বর্ণনায় মিথ্রিডেটসের বাহিনীতে দেড় লাখের বেশি সেনা ছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকরা একে অতিরঞ্জন মনে করলেও একথা সত্যি যে রোমানদের তুলনায় তার সেনাদল অনেক বড় ছিল। এর সাথে সাথে সেনাদের চলাচল, খাবারদাবার, মালামাল বহন ইত্যাদির জন্য প্রায় সমসংখ্যক সাহায্যকারী ছিল। লুসেলাসের সাথে ছিল পাঁচটি লিজিয়ন।
ব্যাটল অভ চ্যালসেডন
বর্তমান তুরস্কের মারমারা সাগরের প্রাচীন নাম প্রোপোন্টিস, যার অবস্থান বস্ফরাসের প্রবেশমুখের খুব কাছে। এর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে চ্যালসেডন নগরী। মিথ্রিডেটসের বিরাট বাহিনী বিথাইনিয়ায় প্রবেশ করলে কটা চ্যালসেডনের দিকে সরে এলেন। রোমান অফিসার নুডাসের নেতৃত্বে সেনাদলের একাংশ শহরের বাইরে অবস্থান নিল, আর রোমান জাহাজ অবস্থান করছিল চ্যালসেডনের বন্দরে।
মিথ্রিডেটসের জেনারেল হিমোক্রেটস আর ট্যাক্সাইল নুডাসের উপর হামলা করলে রিমান বিন্যাস ভেঙে পড়ে। তারা শহরের দিকে পিছিয়ে যেতে থাকে। শত্রুরা যাতে ঢুকতে না পারে, সেজন্য নগরের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হয়। মিথ্রিডেটস সাগরপথেও বন্দরের দিকে থেকে আক্রমণ করে তিনটি রোমান জাহাজ ডুবিয়ে দিলেন। প্রোপোন্টিসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে মিথ্রিডেটস সাগর পাড়ি দিয়ে সাইজিকাস অবরোধ করলেন।
সাইজিকাসের অবরোধ
প্রোপোন্টিসের অপর তীরে অবস্থিত দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে সাইজিকাস নগরী। মূল দ্বীপের থেকে এই অংশ ছিল মোটামুটিভাবে বিচ্ছিন্ন। চারদিকে পর্বতবেষ্টিত এই শহরের সাথে স্থলসংযোগ হিসেবে মূল দ্বীপের সাথে সংকীর্ণ একটি পথ ছাড়া আর কিছু ছিল না।
শীত এগিয়ে আসতে থাকে। মিথ্রিডেটসের বাহিনীতে খাবারের অভাব দেখা দেয়। অসুস্থ ও আহত সেনাদের অশ্বারোহীদের প্রহরাতে বিথাইনিয়াতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হল। এরা লুসেলাসের হাতে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত মিথ্রিডেটস অবরোধ তুলে নেন। তিনি সাগরপথে পালিয়ে যান, আর তার সেনাদল পশ্চিম দিকে উপকূল ধরে ল্যাম্পাস্কাস বন্দরের দিকে চলতে শুরু করে। লুসেলাস তাদের ধাওয়া করে প্রচুর ক্ষতিসাধন করলেন। খুব কম সেনাই ল্যাম্পাস্কাসে পৌঁছতে সক্ষম হয়। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ভ্যারিয়াস। তিনি পরে মিথ্রিডেটসের সাথে যোগ দিলেন। মিথ্রিডেটস নতুন করে বাহিনী গঠন করলেন।
মিথ্রিডেটসের বিপর্যয়
বেশিরভাগ সেনা নিয়ে মিথ্রিডেটস নিজে নিকোমেডিয়ার দিকে যাত্রা করেন। ৫০টি জাহাজ আর ১০,০০০ সেনা দিয়ে ভ্যারিয়াসকে ইজিয়ান সাগরে পাঠান হলো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ঝড়ে তার বেশ কিছু জাহাজ ডুবে যায়। এদিকে লুসেলাস এর মধ্যে নৌবহর জড়ো করে ফেলেছেন। তিনি প্রোপোন্টিসে পাহারা বসিয়ে বাকি জাহাজ নিয়ে ভ্যারিয়াসের পিছু নিলেন। ইলিয়ামের কাছে লুসেলাস ১৩টি শত্রুজাহাজ দখল করে নেন। সর্বশেষে লেম্নসের কাছে ভ্যারিয়াসের বহর ধ্বংস হয়ে যায়। ভ্যারিয়াস লড়াইতে নিহত হন।
প্রোপোন্টিসে রেখে আসা সেনারা ইতোমধ্যে পশ্চিম বিথাইনিয়াতে অভিযান চালায়। এখানে তাদের হাতে অনেকগুলো শহরের পতন ঘটলে মিথ্রিডেটস নিকোমেডিয়া ছেড়ে পালিয়ে নিজ রাজ্যের দিকে পালিয়ে যান।
কিংডম অভ পন্টাসের পতন
লুসেলাস সেনাবাহিনী নিয়ে পন্টাসে প্রবেশ করলেন। বেশ কিছু শহর অবরোধ করে তিনি রাজকীয় শহর ইউপাটোরিয়া দখল করেন। মিথ্রিডেটস তাকে বাধা দিতে লাইকাস নদীর উপত্যকায় ক্যাবিরা শহরে নতুন করে ৪০-৪৫,০০০ সেনার একটি বাহিনী তৈরি করলেন। ৭২/৭১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লুসেলাস পার্বত্য এলাকা ধরে এখানে এসে হাজির হন। তিনি নদী তীরবর্তী অঞ্চলে শিবির ফেললেন। সংঘর্ষের শুরুতে মিথ্রিডেটসের অশ্বারোহী দল রোমান ঘোড়সওয়ারদের পিছু হটিয়ে দেয়। রোমানরা ক্যাম্পে ঢুকে তাদের প্রতিহত করে। বেশ কিছুদিন এই আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকে।
রোমানদের রসদপত্র আসছিল বৃহত্তর কাপ্পাডোসিয়ার অন্তর্গত এলাকা থেকে। মিথ্রিডেটস এই সরবরাহ বন্ধ করতে চাইলেন। রসদ নিয়ে আসার সময় সংকীর্ণ এক গিরিপথে মিথ্রিডেটসের সেনারা রোমানদের উপর হামলা করল। কিন্তু এখানে তাদের অশ্বারোহী বাহিনী কাজে লাগানোর মতো উপযুক্ত পরিবেশ ছিল না, ফলে রোমানরা তাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে। মিথ্রিডেটসের সেনাদলের বড় অংশ এখানে ধ্বংস হয়ে যায়। পরাজয় অত্যাসন্ন বুঝতে পেরে মিথ্রিডেটস সীমান্ত পার হয়ে আর্মেনিয়া পালিয়ে গেলেন।
লুসেলাস পন্টাসকে পুরোপুরিভাবে রোমের অধীনে নিয়ে আসার কাজ চালিতে যেতে লাগলেন। ইত্যোবসরে তার প্রতিনিধি হিসেবে ক্লডিয়াস টিগ্রানেসের কাছে গিয়ে মিথ্রিডেটসকে রোমের হাতে তুলে দেয়ার দাবি করেন। টিগ্রানেস নিজের শ্বশুরকে রোমের হাতে তুলে দিতে রাজি হলেন না। ক্লডিয়াস ৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লুসেলাসের কাছে ফেরত আসলেন।
এই সময়ের পন্টাস এশিয়াতে রোমের প্রদেশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং লুসেলাস প্রাদেশিক নানা সমস্যার প্রতিবিধান করছিলেন। এশিয়ার অধিবাসীদের উপর রোমান ব্যাংকাররা উচ্চ সুদ ধার্য করায় তারা অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছিল। লুসেলাস সুদের হার কমিয়ে দেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা সহজ করেন। ফলে তিনি প্রভাবশালী রোমান ব্যাংকারদের চক্ষুশূলে পরিণত হন। তারা রোমের লুসেলাস বিরোধী নেতাদের সাথে এশিয়া মাইনর থেকে লুসেলাসকে সরিয়ে দেবার চক্রান্ত করতে থাকে।
আর্মেনিয়া আক্রমণ
৬৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লুসেলাস ১৬-২০,০০০ যোদ্ধা নিয়ে আর্মেনিয়াতে প্রবেশ করলেন। তিনি রাজধানী টিগ্রানোসার্টার কাছে এসে পড়লে টিগ্রানেস তাকে বাধা দিলেন। টিগ্রানেসের বাহিনী ছিল রোমানদের প্রায় দশগুন ছিল। শক্তিতে মদমত্ত টিগ্রানেস মিথ্রিডেটসের পরামর্শ উপেক্ষা করে সরাসরি রোমানদের সাথে লড়াই করতে চাইলেন।
দু’পক্ষকে আলাদা করে রেখেছিল একটি নদী। রোমানরা তা অতিক্রম করে আর্মেনিয়ানদের ডানবাহুতে তাদের অশ্বারোহী দলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদেরকে উত্যক্ত করে রোমান সেনারা পিছিয়ে আসতে থাকলে টিগ্রানেস তাদের অনুসরণ করলেন। লুসেলাস তখন তার পদাতিক সেনাদের আর্মেনিয়ান অশ্বারোহীদের ডানে এক পাহাড়ের উপর বিন্যস্ত করলেন। সেখান থেকে তারা শত্রুদের উপর পাশ থেকে প্রচণ্ড আঘাত হানে। আর্মেনিয়ান সেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালাতে থাকে। টিগ্রানেস রাজধানী ত্যাগ করে পার্বত্য অঞ্চলে পালিয়ে গেলেন।
সেখান থেকে তিনি পুরনো রাজধানী আর্টাক্সাটাতে চলে যান। পরের লুসেলাস আর্সেনিয়া নদীর কাছে মিথ্রিডেটসের অধীনে আরেকটি বাহিনী পরাস্ত করলেন। এখান থেকে আর্টাক্সাটার দিকে যেতে চাইলে তিনি নিজ সেনাদের বাধার সম্মুখীন হন। তারা আর লুসেলাসের অধীনে মার্চ করতে চাইছিল না। বাধ্য হয়ে তিনি দক্ষিণ দিকে নিসিবিস শহর অধিকার করে এখানে শীত কাটালেন। এর মধ্যে নতুন রোমান কন্সাল ৬৭ মার্সিয়াস খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিলিসিয়ার দায়িত্ব পেলে আর্মেনিয়া তার অধীনে চলে যায়।
এদিকে লুসেলাস আর্মেনিয়াতে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিয়ে মিথ্রিডেটস আবার পন্টাসে চলে আসেন। এখানে ৮,০০০ সেনা নিয়ে তিনি ৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফ্যাবিয়াসের অধীন রোমান দুটি লিজিওনকে পরাজিত করে ক্যাবিরাতে অবরুদ্ধ করেন। পরে আরেকটি রোমান সেনাদল ফ্যাবিয়াসের সহায়তায় এগিয়ে আসলে মিথ্রিডেটস পিছিয়ে যান। লুসেলাস পন্টাসের দিকে অগ্রসর হলে মিথ্রিডেটস দ্রুত ফ্যাবিয়াসের মিলিত সেনাদের উপর হামলা চালালেন। রোমানরা পরাজিত হলো। মিথ্রিডেটস আবার পন্টাসের সিংহাসনে বসলেন।
এদিকে ৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে লুসেলাসের বিরোধীদের চেষ্টায় তাকে সেনাদায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। নতুন সেনানায়ক হিসেবে এশিয়া মাইনরে দায়িত্ব পেলেন কন্সাল গ্লাব্রিও। এ খবর লুসেলাসের কাছে পৌঁছলে সেনারা তার অধীনে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তিনি গ্যালাশিয়াতে শিবির করে গ্লাব্রিওর অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিন্তু গ্লাব্রিও নিজেও পন্টাসের দিকে অভিযান চালাতে ইচ্ছুক ছিলেন না। রোমানদের দ্বিধার সুযোগে মিথ্রিডেটস তার হারানো অনেক এলাকা ফিরিয়ে নেন।
পম্পেইয়ের আগমন
এশিয়া মাইনরে অচলাবস্থায় সিনেট ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা নতুন কাউকে প্রাচ্যের সেনানায়ক নিযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। সৌভাগ্যবশত এমন একজন এশিয়া মাইনরের কাছেই ছিলেন। পম্পেই। ৬৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিনেট তাকে ভূমধ্যসাগরে জলদস্যুদের দমনের দায়িত্ব দিয়েছিলে। তিনি তাদের প্রতিবিধান করে নতুন কোনো সামরিক সাফল্যের সন্ধান করছিলেন। সিনেটের অনিচ্ছা থাকলেও ৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ট্রিবিউন ম্যানিলিয়াসের উদ্যোগে বিশেষ আইনে অভূতপূর্ব ক্ষমতা পম্পেইয়ের হাতে তুলে দেয়া হলো। পার্থিয়ার রাজা ফ্রাটেসের সাথে পম্পেই চুক্তি করলেন। সে মোতাবেক ফ্রাটেস আর্মেনিয়া আক্রমণ করেন। পম্পেইয়ের উদ্দেশ্য ছিল টিগ্রানেসকে ব্যস্ত রাখা, যাতে তিনি শ্বশুরের সাহায্যে এগিয়ে না আসতে পারেন।
পম্পেই এবার মিথ্রিডেটসের কাছে শান্তির প্রস্তাব পাঠালেন। তার শর্ত মিথ্রিডেটস প্রত্যাখ্যান করেন। লাইকাসের উপত্যকায় আবারো যুদ্ধ হল। মিথ্রিডেটস এবার অবস্থান নিয়েছিলেন সুরক্ষিত এক দুর্গে। প্রায় ৪৫ দিন দুর্গ ঘিরে লড়াই চলে। অবশেষে পরাজয় বুঝতে পেরে মিথ্রিডেটস অবশিষ্ট সেনাদের নিয়ে পূর্বদিকে পালালেন। পম্পেই ধাওয়া করে তৃতীয় দিনে তাদের ধরে ফেলেন। এখানে ব্যাটল অভ নিকোপলিসে মিথ্রিডেটসের বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। মিথ্রিডেটস আবার আর্মেনিয়া চলে গেলেন। কিন্তু এবার তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। পার্থিয়ানদের সাথে যুদ্ধে টিগ্রানেসের এক ছেলে তার বিপক্ষে চলে গিয়েছিল। যুদ্ধের পর সে মিথ্রিডেটসের সাথে যোগ দিয়েছে মনে করে টিগ্রানেস মিথ্রিডেটসের মাথার উপর পুরস্কার ঘোষণা করলেন। মিথ্রিডেটস ক্রিমিয়ার দিকে পালিয়ে যান।
এদিকে পম্পেই আর্টাক্সাটার দিকে অগ্রসর হলে টিগ্রানেস আত্মসমর্পণ করলেন। পম্পেই টিগ্রানেসের মূল রাজ্য অক্ষত রাখলেও তার দখলকৃত সমস্ত এলাকা রোমের প্রদেশভুক্ত করে নেন। এরপর তিনি ককেশাস অঞ্চলে প্রবেশ করলেন। এখানে ৬৬-৬৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি আইবেরিয়ান আর আলবেনিয়ান গোত্রগুলোকে পরাজিত করেন। এরপর পন্টাস থেকে প্রচুর অর্থসম্পদ অধিকার করে ৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পম্পেই সিরিয়াতে চলে যান। সেখান থেকে ৬১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি রোমে ফিরে গিয়ে ট্রায়াম্ফ গ্রহণ করেন।
মিথ্রিডেটসের মৃত্যু
কৃষ্ণসাগরীয় এলাকাতে গিয়ে মিথ্রিডেটস নতুন করে সামরিক শক্তি গঠন করার চেষ্টা চালাতে থাকেন। এই এলাকাতে তখনও তার ক্ষমতা কায়েম ছিল। কিন্তু ৬৩/৬২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তার ছেলে ফার্নাসেস বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। দুই কন্যাকে বিষ খাইয়ে মেরে মিথ্রিডেটস তার দেহরক্ষী বিটুইটাসকে নির্দেশ দেন তাকে হত্যা করার জন্য। বিটুইটাস তার মনিবের শেষ নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করেছিলেন।