পৃথিবীর ইতিহাসে কন্সটান্টিনোপলের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহর খুব কমই রয়েছে। পূর্ব আর পশ্চিমের যোগসূত্র এই শহরকে কেন্দ্র করে দুটো সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতন হয়েছে, এর নামও পরিবর্তন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার: বাইজান্টিয়াম, জারগ্রাদ, মিকলাগার্দ এবং সবচেয়ে বিখ্যাত কন্সটান্টিনোপল। কিন্তু কবে কন্সটান্টিনোপলের নাম পরিবর্তন করে ইস্তাম্বুল রাখা হয়েছিল?
খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিকদের হাত ধরে এখানে বসতি গড়ে ওঠে, তখন এর নাম ছিল বাইজান্টিয়ন। পরবর্তীতে এর নাম ল্যাটিনাইজড করে রাখা হয় বাইজান্টিয়াম। এর নাম রোমানরা আরও কয়েকবার পরিবর্তন করে: অগাস্টা অ্যান্টোনিনা, নোভা রোমা (নতুন রোম)-এর মতো নামে। এরপর আসেন সম্রাট কন্সটান্টিন। প্রথমে নিজের রাজধানী হিসেবে সারডিকাকে (বর্তমান সোফিয়া, বুলগেরিয়ার রাজধানী) নির্বাচন করলেও পরে একে সরিয়ে বাইজান্টিয়ামে নিয়ে আসেন, নিজের নাম অনুসারে রাখেন কন্সটান্টিনোপল।
পরবর্তী এক হাজার বছর এই নামেই পরিচিতি পায় নগরটি, তবে রোমান সাম্রাজ্যের কেউ কেউ একে বাইজান্টিয়াম বা ‘হি পোলিস (দ্য সিটি)’ বলেও ডাকতো। অন্যদিকে, বাইজান্টিয়াম সাম্রাজ্যের বাইরে থাকা আরবদের কাছে শহরটি পরিচিত ছিল ‘কন্সতান্তিনিয়ে (Konstantiniyye)’ নামে।
১৪৫৩ সালে অটোমান কন্সটান্টিনোপল শহর নিজেদের সাম্রাজ্যে অন্তর্ভুক্তির পর এর দুটো নাম ছড়িয়ে পড়ে, নথিপত্রে মূলত কন্সতান্তিনিয়ে (মূল আরবি থেকে) ব্যবহৃত হতো, অন্যদিকে শহরের বেশ কিছু বাসিন্দার কাছে পরিচিত ছিল ইস্তিনপোলিন নামে।
ইস্তিনপোলিন ও কন্সতান্তিনিয়ের এই দ্বৈরথ অবশেষে শেষ হয় ১৮৭৬ সালে, যখন সরকারি সংবিধানে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইস্তাম্বুল (Istanbul)’। তবে কন্সটান্টিনোপল নামটিই অন্যান্য দেশ ব্যবহার করে আসছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙে যাওয়ার আগপর্যন্ত। কামাল আতাতুর্ক একে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। ১৯২৩ সালে তিনি অন্যান্য দেশগুলোকেও শহরটিকে ইস্তাম্বুল নামে ডাকার আহ্বান করেন, যেটি ইতোমধ্যেই তুরস্কের জনগণ ব্যবহার শুরু করেছিল। তবে কোনো ইউরোপীয় পরাশক্তিই সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি, তারা আগের ‘কনস্টান্টিনোপল’ই চালিয়ে যেতে থাকে।
অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের আহ্বানকে সম্মান জানিয়ে ‘ইস্তাম্বুল’ ডাকা শুরু করলে তুরস্ক তাদের দাবিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার প্রয়াস নেয়। ১৯৩০ সালে তারা এক আইন পাশ করে যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কোনো ডাকে ‘কন্সটান্টিনোপল’ লেখা থাকলে সেই ডাক বা চিঠি আর প্রাপকের কাছে পৌঁছাবে না। এরপর থেকে সব দেশই ‘ইস্তাম্বুল’ নামে শহরটিকে ডাকা শুরু করে। কেবল গ্রিকরা ছাড়া, তারা এখনও ‘কনস্টান্টিনোপল’ নামেই শহরটিকে ডাকে।