ইউরোপের এই ভয়াবহ যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি যুক্তরাষ্ট্র। বস্তুত, তখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে একমাত্র লাভবান রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র। ভয়াবহ রকমের ব্যয়বহুল এই যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই নিঃস্ব হতে শুরু করে। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ব্যাপকহারে দ্রব্য আমদানি শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই সময়ই বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্কে স্থানান্তর হতে থাকে। উল্লেখ্য, শক্তিশালী নৌবাহিনী থাকায় ব্রিটেন ইংলিশ চ্যানেল আর উত্তর সাগরে অবরোধ তৈরি করে। তারা জার্মানিগামী সকল মালামাল জব্দ করতে থাকে। ফলে, চরম খাদ্যাভাব দেখা দিলেও জার্মানি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রব্য আমদানি করতে পারেনি।
১৯১৭ সালের প্রথমদিকে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা যুদ্ধকে তার অন্তিম পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। এই ঘটনাগুলোর সময়রেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কোনো একটি ঘটনা আগে অথবা পরে ঘটলে যুদ্ধের পরিণতি ভিন্ন হতে পারত। এতদিন পর্যন্ত জার্মানি তাদের সাবমেরিনের ব্যাপক ব্যবহার শুরু করেনি। কারণ, সাবমেরিন বেসামরিক জাহাজ আক্রমণ করলে বহু আমেরিকান নাগরিক হতাহত হবে, এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে প্রবেশ করবে। কিন্তু ব্রিটেনের নৌ-অবরোধের কারণে জার্মানিতে মালামালের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দেয়। তারা এবার ব্রিটেনকে একই সংকটে ফেলার পরিকল্পনা করে। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জার্মান সাবমেরিন নির্বিচারে হামলা শুরু করে ব্রিটিশ মালবাহী জাহাজের উপর। প্রথমদিকে এই আক্রমণ ব্যাপক সফলতা লাভ করে। এক মাসে প্রায় ৫ লক্ষ টন মালামাল ডুবিয়ে দিতে সক্ষম হয় জার্মান সাবমেরিন।
জার্মানি যখন নির্বিচারে সাবমেরিন-হামলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা জানত যে পরিণামে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করতে পারে। তাই পূর্ব-পরিকল্পনা হিসেবে তারা মেক্সিকোর সাথে আঁতাতের চেষ্টা করে। উল্লেখ্য, এই সময় মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভাল ছিল না। ১৯১৭ সালের জানুয়ারি মাসে জার্মানি থেকে মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে একটি টেলিগ্রাম পাঠানো হয়। টেলিগ্রামে মেক্সিকোকে জার্মানির সাথে জোট গঠনের আহ্বান জানানো হয়। বিনিময়ে জার্মানি জয়লাভ করলে টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো আর অ্যারিজোনায় তাদের অতীতে হারানো অঞ্চল ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় মেক্সিকোকে। কিন্তু ব্রিটিশরা এই টেলিগ্রাম লাইনে আগে থেকেই আড়িপেতে ছিল। ফলে এই গোপন প্রস্তাব ফাঁস হয়ে যায়। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্র এই টেলিগ্রামকে ব্রিটিশদের চাল মনে করে উড়িয়ে দেয়। কিন্তু মার্চ মাসে জার্মান পররাষ্ট্র-সচিব এই টেলিগ্রামের সত্যতা স্বীকার করেন। নির্বিচার সাবমেরিন-হামলা আর এই টেলিগ্রামের জের ধরে ১৯১৭ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
ইতোমধ্যে, মার্চে যুদ্ধের আরেকটি অন্যতম গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা মঞ্চস্থ হতে শুরু করে রাশিয়ায়। মার্চ বিপ্লব নামে পরিচিত এই ঘটনা শুরু হয় খাদ্যাভাব ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মাধ্যমে। সাধারণ জনগণই শুরু করে এই বিপ্লব। ধীরে ধীরে এই বিক্ষোভ সহিংস হতে থাকে। বিক্ষোভ সামাল দিতে সেন্ট পিটার্সবার্গে থাকা সৈন্যদের আদেশ দেয়া হয় বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে। কিন্তু অনেক সৈন্য এই আদেশ অমান্য করে ও বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেয়। বিক্ষোভের আগুন পুরো রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উপায় না দেখে সম্রাট প্রথম নিকোলাস পদত্যাগ করেন, পতন ঘটে ২০০ বছরের রাশিয়ান সাম্রাজ্যের। যদিও বিপ্লবের পর গঠিত অস্থায়ী সরকার যুদ্ধ থেকে রাশিয়াকে পুরোপুরি গুটিয়ে নেয়নি, তবে এটা বিশ্ববাসীর কাছে প্রতীয়মান হয় যে যুদ্ধে রাশিয়া আর কোনো বড় ভূমিকা রাখতে পারবে না। ফলে জার্মানি ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে পূর্ণ শক্তি দিয়ে আক্রমণ করতে পারবে।
রাশিয়াকে যুদ্ধ থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দেবার জন্য জার্মানি এমন এক পদক্ষেপ নেয় যা শুধু এই যুদ্ধ নয়, আগামী ৮০ বছরের বিশ্ব ইতিহাসকেই বদলে দেয় অনেকখানি। সেই সময় বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির লেনিন ছিলেন সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত। রাশিয়ায় জারের পতনের পর লেনিন চেয়েছিলেন রাশিয়ায় ফিরে আসতে। কিন্তু ভয়ানক এই যুদ্ধের মাঝে সুইজারল্যান্ড থেকে রাশিয়ায় যাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় জার্মানির তৎকালীন সেনাপ্রধান লুদেন্দরফ এক বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেন, যা লেনিনকে সুইজারল্যান্ড থেকে রাশিয়াতে নিয়ে যায়। লেনিন রাশিয়া পৌঁছানোর কিছুদিনের মাঝেই বলশেভিকরা ক্ষমতা দখল করে, এবং যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ায় রাশিয়া।
রাশিয়ার বিপ্লব জার্মানিকে বিজয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারত যদি জার্মানি ইতোমধ্যে নির্বিচার সাবমেরিন-হামলা শুরু না করত। ইতোমধ্যে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টে আরও বেশ কিছু আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকে। এপ্রিল মাসে ফরাসি সেনাপ্রধান নুভেল এক ঝটিকা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন। তিনি দাবী করেন- এই আক্রমণে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জার্মান প্রতিরোধ ভেঙে ফেলা হবে। বিনিময়ে সর্বোচ্চ ১০ হাজার সৈন্য হতাহত হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে জার্মান বাহিনী তাদের প্রতিরোধ অনেক উন্নত করে ফেলেছে। তারা এমনভাবে তাদের প্রতিরোধ সাজিয়েছে যাতে আক্রমণকারী বাহিনী শুরুতে খুব বেশি বাধার মুখোমুখি না হয়। ফলে তারা অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে। এরপর শুরু হয় তাদের উপর চারদিক থেকে আক্রমণ। নুভেলের বাহিনী এই ফাঁদে পা দেয়, এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। আবারও সোমের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। কিন্তু এবার সৈন্যরা নিশ্চিত মৃত্যুর পথে পা বাড়াতে অস্বীকৃতি জানায়। ফরাসি বাহিনী জুড়ে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই বিদ্রোহে সৈন্যরা তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করেনি। তারা স্বেচ্ছায় ট্রেঞ্চে থেকে প্রতিরোধ বজায় রাখতে থাকে, কিন্তু শত্রুপক্ষের উপর আক্রমণ চালাতে অসম্মতি জানায়। ফলে নুভেল-আক্রমণ পরিত্যাগ করা হয় এবং নুভেলকে চাকরিচ্যুত হয়। ফ্রান্সের নীতিনির্ধারকরা বুঝতে পারেন- তাদের পক্ষে আর বড় কোনো আক্রমণ চালানো সম্ভব না।
এরপরের বড় আক্রমণ চালায় ব্রিটিশ বাহিনী, জুলাই মাসের শেষে। বেলজিয়ামের ইপ্রে শহরের কাছে প্যাসেন্ডেলে শুরু হয় এই আক্রমণ। অন্য সব আক্রমণের মতো এই আক্রমণও শুরু হয় ব্যাপক গোলাবর্ষণ দিয়ে। কিন্তু যা এই আক্রমণকে অন্য সব আক্রমণ থেকে আলাদা করে তা হলো কাদা। আক্রমণের শুরু থেকে চলতে থাকে লাগাতার বৃষ্টি। পুরো যুদ্ধক্ষেত্র ভরে যায় কাদায়। তার উপর যেসব জায়গায় গোলা নিক্ষিপ্ত সেখানে তৈরি হয় বিশাল কাদা ভর্তি গর্ত। চোরাবালির মতো কাজ করে এসব গর্ত। একবার পড়লে আর ওঠার উপায় নেই ধীরে ধীরে নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া। প্যাসেন্ডেলে সহযোদ্ধার পরিণতি এভাবেই বর্ণনা করে এক সৈন্য,
আমাদের এক সহযোদ্ধা দুর্ভাগ্যক্রমে কাদার ডোবায় পড়ে যায়। আমরা চারদিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে তাকে ওঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। কোমর-সমান কাদায় ডুবে থাকা হতভাগা সেই সেনা বুঝতে পারে যে তার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই। সে আমাকে আকুতি জানায় তাকে গুলি করার জন্য। কাদায় ডুবে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ভয়ানক মৃত্যু সে চায় না। কিন্তু আমার সাহস হয়নি। আমরা তাকে রেখেই এগিয়ে যাই ফ্রন্টলাইনের দিকে। দুদিন পর যখন আমরা ফিরি, তখনও তাকে দেখতে পাই। তখন সে গলা-সমান কাদায় ডুবে পাগলের মতো প্রলাপ বকছিল।
এরকম হাজারো ভয়াবহ ঘটনা প্রতিদিন ঘটতে থাকে। প্রায় চার মাস ধরে চলে এই আক্রমণ। উভয় পক্ষের প্রায় ৫ লক্ষ সৈন্য হতাহত হয়। সামান্য কয়েক মাইল এলাকা দখল করতে সক্ষম হয় ব্রিটিশ বাহিনী।
জার্মান বাহিনী ব্রিটিশ বা ফ্রান্সের এসব আক্রমণ সহজেই প্রতিহত করতে পারলেও তাদের জন্য আরেক শত্রু আসতে শুরু করে। খুব শীঘ্রই লক্ষ লক্ষ আমেরিকান সৈন্য ইউরোপে অবতরণ করবে তাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। তাই আমেরিকানরা এই যুদ্ধে যোগদানের আগেই এই যুদ্ধ শেষ করে দেয়ার পরিকল্পনা করে জার্মানি। তারা তাদের সেরা সৈন্যদের জোগাড় করে ভয়াবহ এক আক্রমণের পরিকল্পনা করে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট জুড়ে। কাইসারস্লাখ নামে পরিচিত এই আক্রমণের প্রথম তিন দিনে অনেকটাই এগিয়ে যেতে সক্ষম হয় জার্মান বাহিনী। কিন্তু ক্রমশ তারা শক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে যেতে থাকে। অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় রসদ পৌঁছাতে পারে না এই সৈন্যদের কাছে। আর ট্রেঞ্চে থাকাকালে যেমন সৈন্যদের পালাক্রমে ফ্রন্টলাইনে পাঠানো হয়, আক্রমণের সময় সেই সুযোগ নেই। খাবার আর ঘুম ছাড়া টানা কত দিন আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া যায়? আর এই পর্যায়ে জার্মানরা আরেক যুদ্ধাস্ত্রের ব্যাপক অভাব বোধ করে। তাদের এমন এক প্রযুক্তি লাগত যা তাদের মেশিনগানের গুলি থেকে ঢাল দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তাদের লাগত ট্যাঙ্ক। কিন্তু জার্মান বাহিনী ট্যাঙ্ক নির্মাণে ছিল অনেক পিছিয়ে। প্রথম কিছুদিন এগোতে পারলেও সেটা চালিয়ে যেতে পারেনি জার্মান বাহিনী। ১৫ এপ্রিল বাতিল ঘোষণা করা হয় এই আক্রমণ। এরপর আরও কয়েকবার জার্মানি আক্রমণের চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সৈন্যরা মানসিকভাবেও অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আরেক ভয়াবহ শত্রুর আবির্ভাব ঘটে। জার্মান শিবিরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে স্প্যানিশ ফ্লু। জুন-জুলাই মাসে প্রায় ৫ লাখ জার্মান সৈন্য স্প্যানিশ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়। বাকি আক্রমণগুলোও কোনো ভাল ফলাফল বয়ে আনতে পারেনি।
ইতোমধ্যে আমেরিকান সৈন্যরা যুদ্ধে যোগদান শুরু করে। ব্রিটিশ-ফরাসি যৌথবাহিনী বুঝতে পারে- এটাই তাদের সুযোগ। আগস্ট মাসে তারা প্রতি-আক্রমণ চালায় ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট জুড়ে। ব্রিটিশরা কয়েক বছর ধরে তাদের ট্যাঙ্ক প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে আসছিল। এই আক্রমণে তারা সেটার সুফল ভোগ করে। জার্মান ডিফেন্স অনেক জায়গায় ভেঙে যেতে থাকে। যুদ্ধ তার অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।
যদিও ধারণা করা হতো যে ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টেই যুদ্ধের পরিণতি নির্ধারিত হবে, কিন্তু বাস্তবে এর আগেই পতন শুরু হয়। ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে উসমানী সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। ঠিক এই সময়ই ইউরোপের হর্তাকর্তারা বুঝতে পারে- মানবসভ্যতায় খনিজ তেল কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে। আর খনিজ তেলের ভাণ্ডার উসমানী সাম্রাজ্য এবং এর আশেপাশের এলাকা জুড়ে। ফলে অধিকাংশ উসমানী অধিকৃত এলাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয় ফরাসি আর ব্রিটিশরা। গোড়াপত্তন ঘটে মধ্যপ্রাচ্য বা মিডল ইস্টের।
এরপর, নভেম্বরের শুরুতে পতন ঘটে অস্ট্রো-হাঙ্গেরির। একইসাথে জার্মান বাহিনীতে, বিশেষ করে নৌবাহিনীতে ব্যাপক আকারে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। জার্মান সেনাপ্রধান লুডেনডর্ফ বুঝতে পারেন- পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। তিনি সম্রাট দ্বিতীয় উইলহেলমকে চাপ দিতে থাকেন শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে শুরু হয় যুদ্ধে হারের দায় অন্য কারো ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা। হুট করেই বেসামরিক সরকার পুনর্গঠন করা হয় যাদের দায়িত্ব পড়ে শান্তিচুক্তির প্রস্তাব দেয়ার। ৫ নভেম্বর যৌথবাহিনী যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ১১ নভেম্বর সকাল ১১টায় যুদ্ধের অবসান ঘটে।
যুদ্ধবিরতি শেষে আরও কয়েক দফা আলোচনা চলে, এবং ১৯১৯ সালের ২৮ জুন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা ভার্সাই চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তি অনুযায়ী জার্মানি তাদের বেশ কিছু ভূখণ্ড হারায়। তাদের সব কলোনি ত্যাগে বাধ্য করা হয়। তাদের সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা এক লক্ষে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়। সর্বোপরি, যুদ্ধের দায় তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে বিশাল অংকের ক্ষতিপূরণ দাবী করা হয়। এই চুক্তি জার্মানির জন্য এতটাই অপমানজনক ছিল যে, সেই আবেগকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে হিটলার ও তার নাৎসি বাহিনী ক্ষমতায় আসে, যা পৃথিবীকে আরেক মহাযুদ্ধের দিকে এগিয়ে নেয়।
৪ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ শেষে জার্মান, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান, উসমানী এবং রাশিয়ান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। পরিবর্তন আসে ইউরোপের বেশ কিছু রাষ্ট্রের সীমারেখায়। ব্যাপক পরিবর্তন আসে বিশ্বের আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায়। হতাহত হয় বিশ্বের প্রায় ৪ কোটি মানুষ।