ওসামা বিন লাদেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের কাছে তিনি ঘৃণিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের জনক। কিন্তু এর বাইরে একদল ভক্তের কাছে তার পরিচিতি যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আরবের পুতুল সরকারগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদে নেতৃত্বদানকারী এক নেতা হিসেবে; যার বিরুদ্ধে ৯/১১ সহ অন্যান্য সন্ত্রাসবাদের অভিযোগকে তারা আমেরিকার মিথ্যা অপবাদ বলে মনে করে।
বিন লাদেনকে নিয়ে শত শত প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে, যেখানে বিশ্লেষকরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে একটি ডকুমেন্টারি আছে, যেটি অন্য সবগুলো থেকে কিছুটা ভিন্ন। সেটি হচ্ছে আল-জাজিরা নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘I Knew Bin Laden‘। বিশ্লেষকদের ভারী ভারী তত্ত্ব এবং বিশ্লেষণের পরিবর্তে এই ডকুমেন্টারিটি নির্মিত হয়েছে এমন কিছু ব্যক্তির সাক্ষাৎকারকে ভিত্তি করে, যারা বিন লাদেনকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, সরাসরি তাকে দেখেছেন। এর মধ্যে যেমন আছে তার বডিগার্ড, তার আধ্যাত্মিক গুরুর ছেলে, তেমনি আছে পাকিস্তানী গোয়েন্দা কর্মকর্তারা, আছে তার মতাদর্শ বিরোধী আরব এবং পশ্চিমা সাংবাদিকও।
যে সময়টুকুতে বিন লাদেনের উত্থান, সেসময় এই অঞ্চলে একমাত্র শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম ছিল কাতার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ইসলামাবাদে নিযুক্ত আল-জাজিরার ব্যুরো চিফ আহমেদ জিদান বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ এবং তার পরিচিত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তাদের সাক্ষাৎকারের সমন্বয়েই নির্মিত হয়েছে এ ডকুমেন্টারিটি।
আফগানিস্তান যাত্রা
আল-কায়েদার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং ওসামা বিন লাদেনের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন শেখ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আল-আজ্জাম। ফিলিস্তিনের অধিবাসী আব্দুল্লাহ আজ্জাম ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর বাস্তুহারা হয়ে জর্ডানে গিয়ে আশ্রয় নেন। শরীয়াহ্র উপর ডক্টরেট ডিগ্রিধারী, জর্ডান মুসলিম ব্রাদারহুডের এই সদস্য জর্ডান থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর সৌদি আরবে গিয়ে আশ্রয় নেন। তিনি যখন সেখানকার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন, তখন ওসামা বিন লাদেন ছিলেন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
১৯৭৯ সালে যখন আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী প্রবেশ করে, তখন আজ্জাম ছিলেন পাকিস্তানের পেশোয়ারে। প্রথমে পাকিস্তানে থেকে এবং পরবর্তীতে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে আজ্জাম মুজাহেদিনদেরকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করতে থাকেন।
আব্দুল্লাহ আজ্জামের ছেলে হুদাইফা আজ্জাম আল-জাজিরাকে জানান, ওসামা বিন লাদেন ১৯৮৪ সালে আফগানিস্তানে গিয়ে তার বাবার সাথে দেখা করেন। তিনি আজ্জামের একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। আজ্জাম যখন মাক্তাব আল-খাদামাত তথা সার্ভিসেস ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করেন, তখন বিন লাদেন তার সাথে ছিলেন। এই মাক্তাব আল-খাদামাতের কাজ ছিল ধনী আরব দানশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা আফগানিস্তানে যুদ্ধরত আফগান মুজাহেদিন এবং আরব যোদ্ধাদের সাহায্যে ব্যয় করা। হুদাইফার ভাষায়, খাদামাতের প্রতিটি কাজে বিন লাদেন তার ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে সহায়তা করতেন। উল্লেখ্য, বাবার বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ওসামা বিন লাদেনও ছিলেন অত্যন্ত সম্পদশালী।
আল-কায়েদার সৃষ্টি
হুদাইফা আজ্জামের মতে, ১৯৮৭ সাল ছিল বিন লাদেনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। তার মতে, এই সময় তার উপর মিসর থেকে আসা যোদ্ধাদের প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই মিসরীয়রাই ছিল ‘আল-কায়েদা’র আদর্শ প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল চালিকাশক্তি। হুদাইফার বক্তব্য অনুযায়ী, আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠার পেছনে বিন লাদেনের উপর তিনজন ব্যক্তির প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনজনই ছিল মিসরীয়- আবু উবায়দা আল-বানশিরি, আবু হাফস আল-মাসরি এবং সাইফ আল-আদেল।
আবু উবায়দা ছিলেন মিসরের একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তার ভাই মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। অন্যদিকে আবু হাফস আল-মাসরি ছিলেন মিসরীয় বিমান বাহিনীর পাইলট এবং সাইফ আল আদেল ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন কর্নেল। তারা দুজনেই আনোয়ার সাদাতকে যে গ্রুপটি হত্যা করেছিল, সেই ইসলামিক জিহাদ গ্রুপের সদস্য ছিলেন। এরা তিনজনই আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্যদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন এবং আবু হাফসই সেসময় পাকিস্তানের পেশোয়ারে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আব্দুল্লাহ আজ্জামকে আফগান জিহাদে অংশগ্রহণ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
১৯৮৮ সালে ইসলামিক জিহাদের নেতৃবৃন্দ, আব্দুল্লাহ আজ্জাম এবং ওসামা বিন লাদেন মিলে আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত বিরোধী জিহাদ চালিয়ে যাওয়া এবং সোভিয়েত সৈন্যদের পরাজয় ঘটলে অন্যান্য আরব দেশে এই আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮৯ সালে আব্দুল্লাহ আজ্জাম গাড়িবোমা হামলায় নিহত হলে বিন লাদেন নেতৃত্ব গ্রহণ করেন আল কায়েদার। আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা সাবেক আরব যোদ্ধা আবু আকরাম বলেন,
“ওসামা নিজে আমাকে বলেছিলেন যে, শেখ আজ্জাম ছিলেন আমাদের অভিভাবক, আমাদের জন্য তাঁবু অথবা ছাতার মতো, যিনি সর্বদা আমাদেরকে তার ছায়ায় আশ্রয় দিতেন। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনিই আমাদের নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু যেহেতু শেখ আজ্জাম রাহমাতুল্লাহ শহীদ হয়েছেন, তাই আমার দায়িত্ব এখন বেড়ে গেছে।”
একই কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্সের সাবেক কর্মকর্তা কর্নেল সুলতান আমির তারারের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, তিনি যখন সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে আফগান মুজাহেদিনদেরকে সাহায্য করছিলেন, তখন তিনি জানতে পারেন যে, এক ধনী আরব সেখানে এসেছেন, যিনি আরব যোদ্ধাদেরকে সাহায্য করছেন, তাদের জন্য রাস্তাঘাট এবং বাসস্থান নির্মাণ করছেন। যখন আব্দুল্লাহ আজ্জাম পেশোয়ারে নিহত হন, তখন নেতৃত্বশূন্যতা তৈরি হওয়ায় বিন লাদেন আরব মুজাহেদিনদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
বেনজির ভুট্টো বনাম বিন লাদেন
সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে আফগান মুজাহেদিনদেরকে অর্থ এবং অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করত যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব। আর সিআইএর পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় তাদেরকে আশ্রয় এবং ট্রেনিং দিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। সেসময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন সামরিক শাসক জিয়াউল হক। তার মৃত্যুর পর ১৯৮৮ সালে যখন বেনজির ভুট্টো ক্ষমতায় আসেন, তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ভুট্টোর সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র আফগানিস্তানে বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র আরব যোদ্ধার বিচরণে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে এবং তাদের উপর থেকে সমর্থন উঠিয়ে নিতে থাকে। বিন লাদেন নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে বিরোধী নেতা নওয়াজ শরিফের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন ভুট্টোর সরকারকে উৎখাতের জন্য।
সাবেক পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা খালিদ খাজা আল-জাজিরাকে বলেন, নওয়াজ শরিফ সৌদি আরব, আরব আমিরাত সরকারের পাশাপাশি বিন লাদেনের কাছ থেকেও নিয়মিত অর্থ সাহায্য পেতেন। তিনি দাবি করেন, নওয়াজ শরিফ প্রায়ই বিন লাদেনের কথা ইঙ্গিত করে খালিদকে বলতেন, “আমার পৃষ্ঠপোষক কোথায়? আমি তার সাথে দেখা করতে চাই।”
নওয়াজ শরিফের সাবেক অনুবাদক আলি মোহর বলেন, খালিদ খাজা ছিলেন নওয়াজ শরিফ এবং বিন লাদেন উভয়ের বন্ধু। তিনি আফগান জিহাদের একজন সমর্থক ছিলেন এবং নওয়াজ শরিফের পক্ষ থেকে বিন লাদেনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। ভুট্টোর প্রথম সরকারের সময় যখন পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী পেশোয়ারে থাকা আরব যোদ্ধাদেরকে বাধা দিতে শুরু করে, তখন এই খালিদই সর্বপ্রথম বিন লাদেনকে পরামর্শ দেন ভুট্টোর সরকারকে উৎখাতের জন্য নওয়াজ শরিফকে সাহায্য করতে।
সুদানের দিনগুলো
আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিন লাদেন আফগানিস্তান ত্যাগ করেন। সাবেক আরব-আফগান যোদ্ধা আব্দুল্লাহ আনাস বলেন, ১৯৯২ সালে তারা বিন লাদেনের বাসায় একটি বৈঠক করেন। সেখানে তারা আব্দুল্লাহ আজ্জামের প্রতিজ্ঞাকে স্মরণ করেন যে, সোভিয়েত সৈন্যদের পরাজয়ের পর যদি আফগান মুজাহেদিনদের নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষ শুরু হয়, তাহলে আরব যোদ্ধারা কোনো পক্ষে অংশ নেবে না।
হুদাইফা আজ্জাম বলেন, আফগানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি নিজে বিন লাদেনকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এখন তার পরিকল্পনা কী? বিন লাদেন বলেছিলেন, তিনি মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ সমর্থন করেন না। তিনি সব আল-কায়েদা যোদ্ধা সহ সুদানে চলে যাবেন।
আফগানিস্তান থেকে বিন লাদেন প্রথমে সৌদি আরবে ফিরে যান। কিন্তু সেখানে তিনি বেশিদিন থাকতে পারেননি। ইরাকের কুয়েত আক্রমণের পর সৌদি আরব যখন মার্কিন সেনাদেরকে সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি দেয়, তখন প্রকাশ্যে সৌদি সরকার এবং রাজপরিবারের সমালোচনা শুরু করলে সৌদি সরকার বিন লাদেনকে বহিষ্কার করে। নিউজ ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকার সম্পাদক রাহিমুল্লাহ ইউসুফজাই আল-জাজিরাকে বলেন, বিন লাদেন তাকে বলেছিলেন যে, তিনি সৌদি আরবের সমালোচনা করতেন দুটো কারণে- ধর্মীয় এবং দেশাত্মবোধক।
সুদানে তখন ক্ষমতায় ছিলেন ইসলামিস্ট নেতা হাসান তোরাবি। তিনি বিভিন্ন জিহাদী গ্রুপের বহিষ্কৃত এবং পলাতক নেতাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছিলেন। বিন লাদেন সুদানে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং তার কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মাধ্যমে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ এবং কৃষি প্রকল্পে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে নবীন এই ইসলামি রাষ্ট্রটিকে নিজ হাতে গড়ে তুলতে শুরু করেন। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সাবেক প্রধান হামিদ গুল বলেন, তিনি বিন লাদেনের সাথে সুদানে দু’বার দেখা করেছিলেন। তিনি দেখেছেন, বিন লাদেন কীভাবে রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে সুদানকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করছিলেন।
শু’আ খালাফাল্লাহ নামে এক স্থানীয় সুদানি নাগরিক আল-জাজিরাকে বলেন,
“আমরা এখানে সবাই তাকে শেখ বিন লাদেন বলে সম্বোধন করি। এখানকার সবাই তাকে খুব ভালোভাবে চিনে। সবাই তার সাথে দেখা করতে চাইত। সবার সাথেই তিনি খুব ভালো ব্যবহার করতেন। গরীবদেরকে তিনি কখনোই খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেন না।”
সুদানে মূলত জনসেবামূলক কাজ করলেও রাজনৈতিকভাবেও বিন লাদেন সক্রিয় ছিলেন। পুরো নব্বইয়ের দশক জুড়ে লন্ডনের একটি অফিসের মাধ্যমে তিনি সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতেন। সৌদি আরবের রিয়াদে বোমা হামলার পেছনে অর্থায়নের জন্য সৌদি গোয়েন্দা রিপোর্টে তার নাম উঠে আসে। ফলে সৌদি সরকার সুদানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে তাকে বহিষ্কার করার জন্য।
সোমালিয়াতে মার্কিন হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার পেছনেও বিন লাদেনের হাত আছে বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রও বিন লাদেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ১৯৯৫ সালে ইথিওপিয়ায় মিসরের প্রেসিডেন্ট হুসনি মোবারককে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়িতে গুলি বর্ষণের ঘটনার পেছনেও বিন লাদেন এবং তার আফগানিস্তান ফেরত প্রাক্তন সহযোদ্ধাদেরকে সন্দেহ করা হয়। ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপে সুদান সরকার অবশেষে ১৯৯৬ সালে বিন লাদেনকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়।
কুদস আল-আরাবি পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল বারি আতওয়ান আল-জাজিরাকে বলেন, বিন লাদেন সুদানের ভূমিকায় খুবই ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, সুদান একটি সত্যিকার ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার পথে যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তার বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করেছে।
আফগানিস্তানে ফেরত: বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের যাত্রা
১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন বোরহানউদ্দিন রাব্বানি। রাব্বানির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং হেজব-ই-ইসলামি পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। বিন লাদেন সুদানে থাকা কালেই তারা সেখানে গিয়ে তার সাথে দেখা করে এবং বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে ফিরে আসার আমন্ত্রণ জানায়। বিন লাদেন তার মিসরীয় সঙ্গী-সাথী সহ আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তাদের সাথে সেখানে গিয়ে যোগ দেয় মুস্তফা হামজা, যে ছিল মোবারক হত্যাচেষ্টার প্রধান সন্দেহভাজন।
আফগানিস্তানে থাকাকালেই তিনি ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক জানান, বিন লাদেন তাকে বলেছিলেন যে, তার অবস্থান মার্কিন জনগণের বিরুদ্ধে না, তাদের সরকারের বিরুদ্ধে। ক্যামেরাম্যান ওনিল আদনান জানান, বিন লাদেন তাকে বলেন যে, তিনি কোনো ধর্ম বা জাতির বিরুদ্ধে না। তিনি শুধু মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে, যে নীতি তারা মুসলিম বিশ্বের উপর প্রয়োগ করছে।
১৯৯৮ সালে বিন লাদেন প্রথমবারের মতো একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন ডাক্তার আইমান আল-জাওয়াহিরি এবং আল-কায়েদার সামরিক প্রধান মোহাম্মেদ আতেফ ওরফে আবু হাসান আল-মাসরি। এই সম্মেলনে তিনি ইহুদী এবং ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো আল-কায়েদা সরাসরি বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের জগতে প্রবেশ করে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিন লাদেন জানান, তাদের যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী যুদ্ধে যদি নিরীহ বেসামরিক জনগণও মারা যায়, তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। এই ঘোষণার দুই মাসের মধ্যেই বিন লাদেন তার প্রতিশ্রুতির সত্যতার প্রমাণ দেন। আল-কায়েদা সদস্যরা কেনিয়া এবং তানজানিয়ার মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলা করে। নিহত হয় ২২৫ জন।
আল-জাজিরার ডকুমেন্টারির শুরুতে পরিচিত ব্যক্তি এবং পশ্চিমা সাংবাদিকদের বর্ণনায় বিন লাদেনের চরিত্র হিসেবে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র চেহারা ফুটে ওঠে। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, তার নির্দেশেই আল-কায়েদা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, যাতে অনেক নিরীহ মানুষও নিহত হয়েছে। ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, এসব ঘটনার পেছনে অনেক সাংবাদিকই বিন লাদেনের চেয়েও আইমান আল-জাওয়াহিরির ভূমিকাকে বেশি দায়ী করেন।
আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মতো আইমান আল-জাওয়াহিরি নিজেও আনোয়ার সাদাত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সংগঠন ইসলামিক জিহাদের সদস্য ছিলেন। সাদাত হত্যাকাণ্ডের পর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে তিন বছর জেলও খেটেছিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় বন্দী নেতারা জাওয়াহিরিকে তাদের মুখপাত্র নির্বাচন করে। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে জাওয়াহিরি আফগানিস্তানে যান এবং আফগান জিহাদে অংশগ্রহণকালে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে তার সাথে বিন লাদেন ও আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সাথে পরিচয় হয়। হুদাইফা আজ্জাম অবশ্য মনে করেন, আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠার পেছনে জাওয়াহিরির ভূমিকা ছিল না।
বিন লাদেন যখন দ্বিতীয়বার আফগানিস্তানে প্রবেশ করেন, তখন জাওয়াহিরি তার সাথে যোগ দেন। এবিসি নিউজ রিপোর্টার জন মিলার মনে করেন, বিন লাদেন না, আল-কায়েদার সহিংস রূপের মূল কারিগর ছিলেন জাওয়াহিরি। তিনি যখন বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন, তখন তাকে বিন লাদেনের চেয়েও বেশি সময় কাটাতে হয়েছিল জাওয়াহিরির সাথে। জাওয়াহিরি তার কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইত তিনি কী ধরনের প্রশ্ন করবেন, কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, কী ধরনের শট নেওয়া হবে, কোন অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হবে ইত্যাদি। মিলারের মতে, বিন লাদেন ছিলেন শুধুই একজন ম্যাসেঞ্জার বা দূত। তাকে নেতা সাজিয়ে সামনে পাঠানো হতো কথা বলার জন্য, বক্তব্য প্রচার করার জন্য। কিন্তু আল-কায়েদার পেছনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে যদি কেউ থেকে থাকে, সেটা ছিল জাওয়াহিরি।
আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
১৯৯৮ এর বোমা হামলার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে বিন লাদেনের নাম আলোচিত হতে থাকে। সিআইএ বিন লাদেনকে গ্রেপ্তারের জন্য বিন লাদেন ইউনিট নামে বিশেষ একটি ইউনিট তৈরি করে এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। তারা আফগানিস্তানের তালেবান এবং পাকিস্তানের নওয়াজ শরিফ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে বিন লাদেনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। বিন লাদেনের বডিগার্ড নাসের আল-বাহরি জানান, সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং ধর্মমন্ত্রী আফগানিস্তানে গিয়ে মোল্লা ওমরের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তার উপর চাপ সৃষ্টি করে বিন লাদেনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু মোল্লা ওমর জানিয়ে দেন, তিনি কোনো মুসলমানকে কাফেরদের হাতে তুলে দেবেন না।
প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে আল-কায়েদা ঘাঁটির উপর মিসাইল আক্রমণ করে। ফলে নিহত হয় বেশ কিছু আল-কায়েদা নেতা। কুদস আল-আরাবি পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল বারি আতওয়ান বলেন, এ সময় আবু হাসান আল-মাসরি তাকে ফোন করেন এবং বলেন যে, বিন লাদেন কুদস আল-আরাবি পত্রিকার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে একটি ম্যাসেজ দিতে চান। আল-মাসরি তখন বিন লাদেনের পক্ষ হয়ে বলেন,
“আমরা এমনভাবে এর প্রতিশোধ নেব, যেটা এর আগে কেউ দেখেনি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে হাঁটু গেঁড়ে বসতে বাধ্য করব। আমরা তাদেরকে এমন শিক্ষা দেব, যেটা তারা কখনো ভুলবে না।”
আফগানিস্তানের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে আল-কায়েদা আমেরিকার মিসাইল আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। তারা ইয়েমেনের এডেন বন্দরে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধ জাহাজে একটি বিস্ফোরক বোঝাই ছোট নৌকা নিয়ে আত্মঘাতী হামলা করে। নিহত হয় ১৭ মার্কিন মেরিন সেনা। বিন লাদেনের বডিগার্ড নাসের আল-বাহরি আল-জাজিরাকে জানান, বিন লাদেনের পরিকল্পনা ছিল জাহাজের আক্রমণটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় করার জন্য। কারণ তিনি চাননি কোনো আরব দেশ এর সাথে জড়িয়ে পড়ুক। কিন্তু আত্মঘাতী হামলাকারীরা তথ্য সংগ্রহের সময় আন্তর্জাতিক সময়ের হিসেব উলটপালট করে ফেলায় ইয়েমেনের সমুদ্রসীমায় প্রবেশের আগে জাহাজটিকে দেখতে পায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা এডেন পোর্টেই আক্রমণ করে।
এই ঘটনার পর তালেবান সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্র প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। চাপে পড়ে মোল্লা ওমর বিন লাদেনকে বহিষ্কার না করলেও, তার মিডিয়াতে বক্তব্য দেওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বিন লাদেন পাকিস্তানের জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের নেতা সামিউল হককে অনুরোধ করেন, তার পক্ষ হয়ে মোল্লা ওমরের কাছে সুপারিশ করার জন্য। সামিউল হক আল-জাজিরাকে জানান, বিন লাদেনের অনুরোধের পর তিনি মোল্লা ওমরকে একটি চিঠি দিয়ে সুপারিশ করেন। ফলে মোল্লা ওমর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেন।
হালকা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিন লাদেন এবং মোল্লা ওমরের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা অটুট ছিল। সাবেক পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা কর্নেল সুলতান আমির তারার বলেন, তাদের সুসম্পর্কের কারণে বিন লাদেনই বেশি উপকৃত হয়েছিলেন। কারণ বিন লাদেনের একটি আশ্রয়ের প্রয়োজন ছিল, যেটি মোল্লা ওমর নিশ্চিত করেছিলেন। অন্যদিকে বডিগার্ড নাসের আল বাহরি বলেন, এই সম্পর্কে দুই পক্ষই উপকৃত হয়েছিল। বিন লাদেন তালেবানদেরকে সেসময় তাদের প্রধান শত্রু আহমেদ শাহ মাসুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ে সাহায্য করেছিল।
নাসেরের বক্তব্য অনুযায়ী, আহমেদ শাহ মাসুদ যখন দিনে দিনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছিল, তখন তালেবান নেতারা বিন লাদেনের সাহায্য চেয়েছিল। বিন লাদেন তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি এর সমাধান করবেন। এর কয়েক মাস পরেই ২০০১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর, ৯/১১ হামলার দুই দিন আগে আহমেদ শাহ মাসুদ আল-কায়েদার হাতে নিহত হয়।
৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলা
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর সংগঠিত হয় স্মরণকালের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পাকিস্তান সরকার মোল্লা ওমরের কাছে আইএসআই প্রধান জেনারেল মাহমুদ আহমেদ এবং বিনোরি মসজিদ ও মাদ্রাসার প্রধান মুফতি নিজামউদ্দিন শামজাইয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পাঠায় বিন লাদেনকে হস্তান্তরের ব্যাপারে তাকে রাজি করানোর জন্য।
পাকিস্তানের দারুল উলুম হাক্কানিয়া মাদ্রাসার প্রধান এবং জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের নেতা সামিউল হক আল-জাজিরার সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি পাকিস্তানের উলামাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এই প্রতিনিধি দলের পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার জন্য। কারণ তার মতে, এই প্রতিনিধি দলের অংশ হয়ে মোল্লা ওমরকে রাজি করতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে পাকিস্তান সরকারের দালালি করা।
সামিউল হক সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, মোল্লা ওমর পাকিস্তানের প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি প্রশংসা করে বলেন, পাশতুনের মানুষেরা তাদের আনুগত্যের জন্য বিখ্যাত। তার ভাষায়, তালেবানরা এমন এক ব্যক্তিকে আশ্রয় দিয়েছে, যিনি তাদেরকে তাদের জিহাদে জিততে সহায়তা করেছিলেন। সামিউল হক আরো বলেন, জালালউদ্দিন হাক্কানি যখন শুনেছিলেন যে, কিছু কিছু ধর্মীয় নেতা বিন লাদেনকে হস্তান্তরের পক্ষপাতী, তখন তিনি খুবই ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এবং তালেবান অ্যাম্বাস্যাডরকে ডেকে ও মোল্লা ওমরকে ফোন করে নিশ্চিত করেছিলেন যে, বিন লাদেনকে ধরিয়ে দেওয়া হবে না।
বিন লাদেনকে হস্তান্তর না করার ফলাফল পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য তো বটেই, আফগানিস্তান এবং বিশেষ করে তালেবান সরকারের জন্য খুবই খারাপ হয়েছিল। ২০০৬ সালে আল-জাজিরার আহমেদ জিদান আফগানিস্তানে উচ্চপদস্থ কিছু তালেবান নেতার সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। তখন মোল্লা দাদুল্লাহ নামে এক সিনিয়র তালেবান মিলিটারি কমান্ডার তার কাছে ব্যাখ্যা করেন, কেন তারা বিন লাদেনকে ধরিয়ে না দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মতো ত্যাগ স্বীকার করেছিল।
তার ভাষায়, তাদের কাছে রাষ্ট্র শাসন করার চেয়ে নীতির প্রতি অটল থাকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, শেখ ওসামা আফগান জিহাদের সময় তাদেরকে তার ধন-সম্পদ সহ সবকিছু দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। তাদের পক্ষে তাকে ধরিয়ে দেওয়া সম্ভব না।
বিন লাদেনের মৃত্যু
দীর্ঘ এক দশক আত্মগোপনে থাকার পর ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন বাহিনীর হাতে ওসামা বিন লাদেন নিহত হন। আল-জাজিরার ডকুমেন্টারিতে এটিকে সংগঠনটির জন্য বিশাল আঘাত বলা হলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়, এটি হয়তো আল-কায়েদার শেষ না হয়ে নতুন করে শুরুও হতে পারে। আল-কায়েদার পরিবর্তিত বিকেন্দ্রীভূত নীতির কারণে সম্প্রতি সংগঠনটি যেকোনো স্থানে আক্রমণের ক্ষেত্রে অতীতের চেয়েও আরও বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বলেন, এটা অনেকটা পারমাণবিক বোমা আবিষ্কারের মতো। আপনি ইচ্ছে করলে দুনিয়ার সব পরমাণু বিজ্ঞানীকে মেরে ফেলতে পারবেন, কিন্তু বোমাটা তৈরি হয়েই গেছে।
টুইন টাওয়ারে হামলার পর প্রথমে সরাসরি দায় স্বীকার না করে পরোক্ষভাবে হামলাকারীদের প্রশংসা করলেও, পরবর্তীতে ২০০৭ সালে এই হামলার সাথে ওসামা বিন লাদেন তার নিজের এবং আল-কায়েদার সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছিলেন। এমনকি তার মৃত্যুর পরেও প্রায় প্রতি বছরই দিবসটি উপলক্ষে জাওয়াহিরি সহ অন্যান্য আল-কায়েদা নেতারা বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করে আসছে।
কুদস আল-আরাবির সম্পাদক আব্দুল বারি আতওয়ান আল-জাজিরাকে বলেন, টুইন টাওয়ারে হামলার পরে যে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান আক্রমণ করেছে ও সেখানে সৈন্য পাঠিয়েছে, বিন লাদেন সেটাই চেয়েছিলেন। তিনি জানান, সাক্ষাৎকালে বিন লাদেন তাকে বলেছিলেন যে, তার মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন সৈন্যদেরকে এই এলাকায় নামিয়ে আনা, তাদের বিরুদ্ধে ইসলামী রাষ্ট্রে জিহাদ করা। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে যুদ্ধ করা কঠিন। কিন্তু যদি তাদেরকে নিজেদের মাটিতে নামিয়ে আনা যায়, তাহলে রাশিয়ানদের মতোই তাদের বিরুদ্ধে বিশাল বিজয় অর্জন করা সম্ভব হবে।
বাস্তবে অবশ্য সেরকম কিছু হয়নি। টুইন টাওয়ারে হামলার পর বিশ্ব রাজনীতিতে চেইন রিঅ্যাকশনের মতো যেসব ঘটনাবলি ঘটেছে, তাতে দেশে দেশে মুসলমানরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই সাথে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।