টিকটিকি নিয়ে গ্রাম বাংলায় একটি লোকবিশ্বাস প্রচলিত আছে। কেউ কোনো কথা বলার সময় যদি কোনো টিকটিকি পরপর তিনবার টিক টিক টিক করে ডেকে উঠে তাহলে সকলে ধরে নেয় কথাটি সত্য এবং সঠিক।[1] কোনো বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু জানা নেই, আনুমানিক কিছু একটা ধারণা করে কেউ কিছু একটা বললো, এমন মুহূর্তে টিকটিকি ডেকে উঠলে মানুষ ধরে নেয় ঐ ধারণাটিই সঠিক।[2]
টিকটিকি কীভাবে ঘটনা বা তথ্যের সঠিক বেঠিক সম্বন্ধে জানে? আর মানুষই বা কেন টিকটিকির ডাককে সত্য বা সঠিকের মাপকাঠি বলে ধরে নেয়? এর কারণ অনুসন্ধান করতে গেলে চলে আসবে খনা নামের এক নারীর লোকজ ইতিহাস। কথিত আছে খনা ছিলেন একজন বিদুষী নারী। তার নামে অনেকগুলো ছড়া-বচন প্রচলিত আছে গ্রামে গ্রামে মানুষের মুখে মুখে। সেসব বচনে দেখা যায় কৃষি বিষয়ে, খাদ্য বিষয়ে, আবহাওয়া বিষয়ে তার গভীর পাণ্ডিত্য। কখন কোন কাজ করলে ভালো হবে, কোন মাসে কোন ফসলের বীজ বপন করলে উত্তম হবে, কোন পরিস্থিতিতে ঝড়, তুফান, বন্যা হবে ইত্যাদি সকল বিষয়ে তার বাস্তবসম্মত উপদেশ ছিল। অনেকগুলোর মাঝে কয়েটি উদাহরণ তুলে ধরছি-
ষোল চাষে মুলা,
তার অর্ধেক তুলা;
তার অর্ধেক ধান,
বিনা চাষে পান।
এটির মানে হলো ১৬টি চাষ দিয়ে মূলা বপন করলে ফলন পাওয়া যাবে ভালো। তুলা চাষ করতে হলে এর অর্ধেক চাষ অর্থাৎ ৮টি চাষ দিলেই হবে। ধান রোপণে এত চাষের প্রয়োজন নেই, মূলার অর্ধেক পরিমাণ অর্থাৎ ৪টি চাষ হলেই যথেষ্ট। অন্যদিকে পান উৎপাদন করলে কোনো চাষেরই প্রয়োজন নেই।
শীষ দেখে বিশ দিন
কাটতে মাড়তে দশ দিন।
অর্থাৎ চাষি যখন তার ধানের গাছে শীষ দেখতে পাবে তার ঠিক ২০ দিন পরেই যেন সে ধান কেটে নেয়। শীষ বের হবার ২০ দিন পর ধান কাটার এবং মাড়াই করার উপযুক্ত সময়।
শুনরে বাপু চাষার বেটা
মাটির মধ্যে বেলে যেটা
তাতে যদি বুনিস পটল
তাতে তোর আশা সফল
অর্থাৎ বেলে মাটিতে যদি পটল চাষ করা হয় তাহলে চাষি তার আশা অনুরূপ ফলন পাবে। এগুলো বাদেও আরো শত শত খনার বচন প্রচলিত আছে লোককথায়।
কিন্তু একজন নারীর এমন প্রাজ্ঞা স্বাভাবিক ছিল না সে সময়। তার প্রজ্ঞায় ঈর্ষান্বিত হয়ে, তার কাছে তর্কে হেরে গিয়ে, তাকে দমিয়ে রাখার জন্য, চিরকালের জন্য তার মুখ বন্ধ করে দেবার জন্য শ্বশুর ও স্বামী মিলে তার জিব কেটে দেয়।[3] ঘটনাক্রমে সে জিবের কর্তিত অংশ খেয়ে ফেলে একটি টিকটিকি। ফলে টিকটিকিটিটি খনার জ্ঞান লাভ করে। ভালো-মন্দ, সঠিক-বেঠিক, সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারে। জ্ঞান লাভ করলেও মানুষের মতো কথা তো আর বলতে পারে না। তাই মানুষের কোনো কথায় সত্যতা বা সঠিকতা পেলে তাতে সমর্থন দেয় টিক টিক টিক শব্দের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে ঐ টিকটিকির বংশধর বাড়তে থাকে এবং খনার জ্ঞান সম্পন্ন টিকটিকিতে দেশ ছেয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে যেসব টিকটিকি দেখতে পাই তার সবই সেই খনার জিব খাওয়া টিকটিকির বংশধর। তারা উপযুক্ত সময়ে টিক টিক শব্দের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় সত্যের সমর্থন।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বলতে হবে টিকটিকির ঘটনার কোনো ভিত্তি নেই। কারো জিব খেয়ে কেউ তার জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। আর জ্ঞান জিহ্বাতেও থাকে না, থাকে মস্তিষ্কে। মস্তিষ্ক খেলেও কোনো লাভ নেই, সেগুলো খাবার হিসেবে পেটে গিয়ে হজম হয়ে যাবে। তাছাড়া টিকটিকির পক্ষে মানুষের ভাষাও অনুধাবন করা সম্ভব নয়। অনুধাবন করলেও তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করার ক্ষমতা নেই। এ ঘটনা স্রেফ একটি উপকথা বা লোকবিশ্বাস ব্যতীত আর কিছুই নয়।
তবে টিকটিকির জিব খাবার ঘটনা সত্য হোক আর মিথ্যা হোক, খনা নামে একজন জ্ঞানী নারীর অস্তিত্ব যে ছিল এবং কোনো কারণবশত তার জিব যে কেটে ফেলা হয়েছে এটি সত্য।[4] তার অস্তিত্ব ও তার জিব কাটার ঘটনা সম্বন্ধে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেলেও তার জন্ম কোথায় হয়েছিল, কীভাবে বেড়ে উঠেছিল, পিতামাতা কে, এসব ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। অস্পষ্ট কিছু ধারণা প্রচলিত আছে শুধুমাত্র।
একটি ধারণা অনুসারে তার জন্ম হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসতের দেউলি গ্রামে।[5] সেখানে তার বাবার নাম অটনাচার্য। বাবার নাম কীভাবে এখন বেরিয়ে এলো? অটনাচার্যই যে তার বাবা এর শক্ত কোনো ভিত্তি নেই। শুধু খনার একটি বচনে তার উল্লেখ আছে বলে একেই তার বাবা বলে অনুমান করা হয়। বচনটি এরকম- “আমি অটনাচার্যের বেটি, গণতে গাঁথতে কারে বা আঁটি।”
এটি যদি তার পরিচয় হয়ে থাকে তাহলে এই ধারণা অনুসারে খনা বেড়ে উঠেছিল রাজা ধর্মকেতুর আমলে। সে এলাকায় মাটি খনন করে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় এগুলো রাজা ধর্মকেতুর রাজ্যে চন্দ্রকেতুর ধ্বংসাবশেষ। স্থানীয় লোকেরা এখানে একটি পাকা সমাধি বা ঢিবির মতো অংশ খুঁজে পান। তাদের ধারণা এটিই খনার সমাধি। এ ধারণা থেকে তারা একে ‘খনা-মিহির ঢিবি’ বলেও ডাকে।
তবে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন এসব নিদর্শন আরো অনেক প্রাচীন। সম্ভাব্য যে যে সময়ে খনা পৃথিবীতে বিচরণ করেন তার চেয়েও অনেক আগের। সে হিসেবে এখানেই খনার সমাধি আছে এরকম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয় না।[6]
আরেকটি ধারণা বলছে, খনা ছিলেন সিংহল রাজ্যের রাজকন্যা। আর এদিকে রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ্যের জ্যোতিষবিদ ছিলেন বরাহ। জ্যোতিষবিদ্যায় তার দখল ছিল বেশ। কথিত আছে, একদিন তার পুত্র মিহিরের কোষ্ঠী গণনা করে দেখতে পান তার আয়ু আর মাত্র এক বছর আছে। এত অল্প আয়ু দেশে আশা ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে একটি পাত্রের মাঝে ভরে ভাসিয়ে দেন সমুদ্রের জলে। সেই পাত্র ভাসতে ভাসতে এসে ঠেকে সিংহল দ্বীপে। সিংহলের রাজা তাকে তুলে নিয়ে লালন পালন করতে থাকে। ছেলেটি বড় হলে নিজের কন্যা লীলাবতীর সাথে বিয়ে দেন। লীলাবতীই পরবর্তীতে খনা নামে সকলের কাছে পরিচিত হয়। লীলাবতী ও মিহির পরবর্তীতে ঘটনাক্রমে বাংলায় চলে আসেন।
তার নাম কীভাবে খনা হলো এটিও ভাবার বিষয়। প্রচলিত ধারণা অনুসারে লীলাবতীর জন্ম হয়েছিল এক শুভক্ষণে। এজন্য তিনি ক্ষণা। এখান থেকেই পরিবর্তিত হয়ে খনা নামটি এসেছে। আরেকটি ধারণানুসারে খনা নামের উৎপত্তি ভিন্ন। উড়িয়া ভাষায় খোনা মানে হলো বোবা। লীলাবতীর জিব কেটে দেবার ফলে তিনি বোবা হয়ে যান বলে সেখান থেকে তার নাম খোনা বা খনা হয়ে থাকতে পারে।
তিনি কত আগে জীবনকাল অতিবাহিত করেছিলেন সেটি নিয়েও মতভেদ আছে। কেউ কেউ অনুমান করেন ৮০০ থেকে ১১০০ খ্রিস্টাব্দের মাঝে কোনো একসময়ে তার জীবনকাল ব্যাপ্ত ছিল। কিন্তু তার শ্বশুর হিসেবে যদি রাজ জ্যোতিষবিদ বরাহকে মেনে নেয়া হয় তাহলে বাধে আরেক বিপত্তি। কারণ বরাহের জীবনকাল ৫০৫ থেকে ৫৮৭ খ্রিস্টাব্দ। তারা যদি পুত্রবধূ-শ্বশুর সম্পর্কের হয়ে থাকে তাহলে তাদের জীবনকালের মাঝে ৩০০ বছরের ব্যবধান থাকবে না কোনোক্রমেই।[7]
আবার তাকে বেশি আগের বলে ধরে নিলেও বাধে সমস্যা। কারণ তৎকালে যে ভাষার প্রচলন ছিল তার সাথে খনার বচনের মিল পাওয়া যায় না। খনার বচন অপেক্ষাকৃত আধুনিক। এ ভাষার বয়স কোনোভাবেই চার শত বছরের বেশি হবে না।
উল্লেখ্য ভাষা প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়। খুব সুন্দর একটি উদাহরণ দিতে পারি। চর্যাপদের কবিতা, মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বিবেচনা করুন। খেয়াল করলে সহজেই ধরে ফেলা যায় প্রাচীনকালের ক্রম অনুসারে এদেরকে সাজানো হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতে যে কেউই চেষ্টা করলে সহজে অনুধাবন করতে পারবে, মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা অনুধাবন করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে, কারণ কবিতার ভাষা রবীন্দ্রনাথের কাল থেকে আরো আগের। অন্যদিকে চর্যাপদের কবিতা পড়ে বুঝতে গেলে রীতিমতো গবেষক হওয়া লাগবে। এটি বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন। এই ছোট্ট একটি তুলনা থেকেও বোঝা যায় খনার বচনগুলো কখনোই চার শত বছর আগে রচিত হয়নি।
তবে এখানেও একটি কথা থেকে যায়। খনার বচনগুলোর কোনো লিখিত রূপ ছিল না। এগুলো মানুষের মুখে মুখে বেঁচে ছিল এতদিন। এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বয়ে গেছে সময়ে সময়ে। মানুষের মুখে মুখে বেঁচে রয়েছিল বলে স্বাভাবিকই এর মাঝে পরিবর্তন আসবে। সময় অনুসারে পরিবর্তন আসবে, পরিবেশ অনুসারে পরিবর্তন আসবে, সংস্কৃতি অনুসারে পরিবর্তন আসবে। এটাই স্বাভাবিক। এজন্যই সময়ের সাথে সাথে ভাষা পরিবর্তিত হয়। সে কারণে হতো খনার বচনগুলোও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। হয়তো শুরুতে বচনগুলো প্রাচীনই ছিল, সময়ের সাথে সাথে মানুষের মুখে মুখে সেগুলো বিবর্তিত হয়ে আজকের রূপে এসে দাঁড়িয়েছে।
খনার বচন নিয়ে আরো একটি প্রশ্ন দেখা দেয়। এখানে কৃষি, আবহাওয়া, খাদ্য, জ্যোতিষবিদ্যা সম্বন্ধে অনেক জ্ঞানগর্ভ কথা বলা আছে। একজনের পক্ষে এতকিছু জানা সম্ভব নয়। বর্তমানের শিক্ষা পদ্ধতিতে কেউ বই পুস্তক পড়ে স্বল্প সময়ে অনেক কিছু জেনে ফেলতে পারে। কিন্তু সে সময়ে কোনোকিছু সম্বন্ধে জানতে হলে লাগতো দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। এত বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে যে একজনের পক্ষে এত বিষয়ে অভিজ্ঞতা লাভ করা কখনোই সম্ভব নয়।
এর একটি সমাধান হতে পারে এমন- যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে নানা ধরনের শ্লোক তৈরি করেছে। সেগুলো প্রচলিতও হয়েছে। পরবর্তীতে সেসব শ্লোক বিশেষ ব্যক্তির নামে প্রচলিত না হয়ে সবগুলো একত্রে একজন ব্যক্তি খনার নামে প্রচলিত হয়েছে। এখান থেকে একটি প্রশ্ন জাগে খনা নামে কেউ কি আদৌ ছিল? খনা কি আদৌ এই বচনগুলোর প্রবক্তা?
উত্তর হলো হ্যাঁ, খনা নামে একজন নারীর অস্তিত্ব ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই।[8] পাশাপাশি তিনি বেশ কতগুলো শ্লোক বা বচন প্রদান করেছিলেন তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।[9] সন্দেহ হলো খনার বচনের সবগুলোই তিনি প্রদান করেছেন কিনা? সবগুলোর প্রদত্তা তিনি না হওয়াটাই বাস্তবসম্মত। এক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তিনি কৃষি, আবহাওয়া, খাদ্য সম্বন্ধে বেশ কিছু বচন প্রদান করেছিলেন। সেগুলো মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছিল। পরবর্তীতে কৃষি নিয়ে, আবহাওয়া নিয়ে, খাদ্য নিয়ে অন্যান্য যারাই কোনো শ্লোক বা বচন প্রদান করেছে সেগুলো খনার নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ হিসেবে গ্রাম বাংলার শত শত বছরের হাজার হাজার মানুষ খনার বচনের রচয়িতা। তারা সকলে মিলে এক অভিন্ন খনা। এটাই সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান।
এদিকে খনার পরিণতির কথাও প্রণিধানযোগ্য। খনার শ্বশুর বরাহ কাজ করতেন বিক্রমাদিত্যের রাজ্যের রাজসভায়। খনার স্বামী মিহির একসময় পিতার সাথে রাজসভায় কাজে যোগ দেন এবং জ্যোতিষবিদ্যায় বুৎপত্তি লাভ করেন। একসময় তারা গণনায় একটি সমস্যা দেখা দেয়। কোনোভাবেই সে সমস্যা সমাধান করা যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় এ সমস্যা সমাধান করে দেন লীলাবতী তথা খনা। সমাধান করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজার। এতে সভার পদ হারানোর সম্ভাবনা দেখেন শ্বশুর। একপর্যায়ে সম্ভবত খনার সাথে তার তর্কও হয়। একজন নারীর তর্কে না পেরে এবং রাজ সভাসদের পদ হারানোর ভয়ে পুত্রকে আদেশ দেন তার জিহ্বা কেটে নিতে[10], যেন আর কোনোদিন কথা বলতে না পারে।
স্বামী ও শ্বশুর মিলে তার জিহ্বা কেটে দিলে সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাতেই খনা মৃত্যুবরণ করেন। কথিত আছে, জিহ্বা কেটে ফেলার আগে তিনি ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন তার কিছু কথা বলার আছে, কারণ জিহ্বা কেটে ফেললে সেগুলো আর বলা সম্ভব হবে না। তাকে অনুমতি দেয়া হলো। একজন সে কথাগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করলো কিংবা শ্রুতিতে ধরে রাখার চেষ্টা করলো। সেগুলোই পরবর্তীতে খনার বচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
খনাকে আসলে বাহ্যিকভাবে মেরে ফেলেছে, কিন্তু এটিই তাকে আত্মিকভাবে শতগুণ শক্তিতে বাঁচিয়ে রেখেছে। তারা যদি জিহ্বা কাটার মাধ্যমে তাকে না মারতো তাহলে হয়তো লীলাবতী হারিয়ে যেতো শত শত শ্লোক ও বচন রচয়িতার মাঝে। অন্যদেরকে যেমন কেউ মনে রাখেনি, তাকেও কেউ মনে রাখতো না। তার এই মৃত্যুই যেন যুগের পর যুগ বাঁচিয়ে রেখেছে তাকে।
শোন সব্বাই খনার কাহিনী এবারে
মধ্যযুগের বঙ্গভূমিতে
এক ছিল মেয়ে, তার নাম খনা
প্রথম মহিলা কবি বাংলার
তার জিব কেটে নিলো পাঁচজনা
জিব কেটে নেওয়া খনার বচন
সাগরে পাহাড়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ল।
খনা নামের সেই মেয়েটিই শুধু
রক্তক্ষরণে মরলো।
(মল্লিকা সেনগুপ্ত, খনার গান)
তথ্যসূত্র
[1] পুরবী বসু (২০১৫), কিংবদন্তির খনা ও খনার বচন, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা
[2] পীযূষ দ্রাবিড়, বটতলার ‘খনা’ সত্য উন্মোচনের দৃশ্যকাব্য, সমকাল
[3] খনার কৃষি ও ফল সংক্রান্ত বচন, http://ubinig.org/index.php/narigranthadetails/showAerticle/28/3/bangla
[4] পুরবী বসু (২০১৫), কিংবদন্তির খনা ও খনার বচন, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা
[5] আজহার ইসলাম, খনা, বাংলাপিডিয়া
[6] পুরবী বসু (২০১৫), কিংবদন্তির খনা ও খনার বচন, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা
[7] পুরবী বসু (২০১৫), পূর্বোক্ত
[8] আলি নওয়াজ (২০১৪), খনার বচন কৃষি ও কৃষ্টি, আফসার ব্রাদার্স, ঢাকা
[9] আলি নওয়াজ (২০১৪), পূর্বোক্ত