প্রুশিয়া থেকে জার্মানি (পর্ব-৪৮): সাত সপ্তাহের যুদ্ধ

১৮৬৬ সালের প্রুশিয়া আর অস্ট্রিয়ার সংঘাত ইতিহাসে পরিচিত সেভেন উইকস ওয়ার নামে। অস্ট্রিয়ান আর জার্মানদের কাছে এই সংঘাত ছিল জার্মান যুদ্ধ বা ভ্রাতৃঘাতী লড়াই।

দ্য ট্রায়াম্ভিরেট

প্রশিয়ার রাজা উইলিয়াম হলেও ক্ষমতার কেন্দ্রে তিন ব্যক্তি, বিসমার্ক, যুদ্ধমন্ত্রি আলবার্ট ভন রুন এবং চীফ অফ জেনারেল স্টাফ হেলমুট ভন মল্টকে। এদের সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বল্প সময়ের মধ্যেই জার্মান একত্রীকরণ সম্পন্ন হয়। জার্মানি পরিণত হয় ইউরোপের অন্যতম শক্তিতে।

বিসমার্ক আর ভন রুন পাদপ্রদীপের আলোয় থাকলেও মল্টকে তখন অবধি খুব একটা পরিচিত নাম ছিলেন না। ডেনমার্কের বিপক্ষে তার সুচারু পরিকল্পনাতেই প্রুশিয়ার বিজয় নিশ্চিত হয়। অস্ট্রিয়ার সাথে লড়াই তার অসাধারণ সমরকুশলতা সামনে নিয়ে আসে। মল্টকে কিন্তু জন্মগতভাবে প্রুশিয়ান নন। তার জন্ম জার্মানির ম্যাক্লেনবার্গে ১৮০০ সালে। পাঁচ বছর বয়সে তার পরিবার হোলস্টেইনে এসে ড্যানিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিল। তিনি ডেনমার্কের সেনাদলে প্রশিক্ষণও নেন। তবে ১৮২২ সালে তিনি প্রুশিয়ার সৈন্যদলে নাম লেখান।

১৮৩৫ সালে মল্টকেকে পাঠানো হয়েছিল অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের বাহিনী আধুনিকীকরণে সহায়তা করতে। সেখান থেকে ১৮৩৯ সালে বার্লিনে ফিরে এসে মল্টকে লেখালেখির কাজে হাত দেন। সাথে সাথে প্রুশিয়ান সেনাবাহিনীর ধাপ বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করেন। এর চূড়ান্ত রূপ ১৮৫৭ সালে চিফ অফ জেনারেল স্টাফ হিসেবে তার নিয়োগ। এরপর শুধুই সাফল্যের গল্প।

এক ফ্রেমে বিসমার্ক, ভন রুন এবং মল্টকে; image source: implyfriday.com

সামরিক শক্তি

প্রুশিয়ার পেশাদার সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৩,৩৫,০০০, যারা নয়টি কর্পসে ভাগ করা। এই সংখ্যা জনসংখ্যার এক শতাংশের সামান্য বেশি। এরা মূলত জার্মান। এছাড়া সংরক্ষিত সেনা ও মিলিশিয়া মিলিয়ে আরো প্রায় সমসংখ্যক লোক প্রস্তুত ছিল। মে মাসের শুরুতে যুদ্ধের সম্ভাবনায় সেনা সমাবেশ শুরু হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যেই পেশাদার বাহিনী আর মিলিশিয়া মিলে প্রায় পাঁচ লাখ লোক সৈনিক তারা জড়ো করে। এদের থেকে ৩,২৫,০০০ জুনের ৫ তারিখেই শত্রুদেশগুলোর সীমান্তে অবস্থান নেয়। মল্টকে অস্ট্রিয়াকে দ্রুত ধরাশায়ী করবার নিখুঁত পরিকল্পনা তৈরি করেন। এই লড়াইতে তৎকালীন রেলপথ সাফল্যের সাথে ব্যবহার করে প্রুশিয়ান সেনারা।

প্রুশিয়ার বিরুদ্ধশক্তিগুলো চলছিল ঢিমেতালে। তাদের সামরিক কাঠামো প্রুশিয়ার মতো সুসংগঠিত ছিল না। অস্ট্রিয়ার মতো দেশ, যার লোকসংখ্যা প্রুশিয়ার দ্বিগুণ, তারা এপ্রিলে সেনা সমাবেশ আরম্ভ করেও তখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। তাদের হাতে এককালীন ৩,৮৪,০০০ সৈন্য মজুদ ছিল, সংরক্ষিত বাহিনী ডাক দিলে এই সংখ্যা সাত লাখে উন্নীত হয়। কিন্তু অস্ট্রিয়ান সেনারা অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকলেও তাদের পরিকল্পনা আর সংগঠন ছিল তথৈবচ। প্রুশিয়ানদের ড্রেইস বন্দুকের বিপরীতে তারা মান্ধাতা আমলের লরেঞ্জ মাযল লোডিং রাইফেলই তখনও ব্যবহার করছিল। প্রুশিয়ান জেনারেল স্টাফের মতো কার্যকরী ব্যবস্থাও তাদের ছিল না, ছিল না ভন মল্টকের মতো অসাধারণ সমরবিদ। তাদের সেনারাও এসেছিল হাবসবুরর্গদের অধীন নানা দেশের লোক থেকে, যেমন- ক্রোট, হাঙ্গেরিয়ান, অস্ট্রিয়ান, জার্মান ইত্যাদি। ফলে তাদের একতা প্রুশিয়ানদের তুলনায় কম।

অস্ট্রিয়ার সাথে জোট বেধেছিল মূলত দক্ষিণ জার্মানির রাষ্ট্রগুলো। প্রধান সমর্থক ছিল হ্যানোভার, স্যাক্সোনি, হেসে-কেসেল, ভুর্তেমবার্গ, ব্যাডেন, হেসে-কেসেল আর নাসাউ। বোহেমিয়া তো অস্ট্রিয়ার প্রদেশই। এরা জড়ো করেছিল প্রায় ১,৫০,০০০ সৈন্য। তবে জার্মান জোটের সেনারা প্রশিক্ষণ আর দক্ষতায় প্রুশিয়ানদের থেকে যোজন যোজন পিছিয়ে। একসাথে লড়াই করবার অভিজ্ঞতাও তাদের নেই। ফলে তাদের সেনাধ্যক্ষদের মধ্যে অনৈক্য ছিল প্রকট।

প্রুশিয়ার সাথে মূলত গাঁটছড়া বাধে উত্তর জার্মানির ছোট ছোট কয়েকটি ডাচি, যাদের সৈন্য সংখ্যা সাকুল্যে ৩০,০০০ হবে কিনা সন্দেহ। ইতালিয়ানরা ২,০০,০০০ সৈনিক একত্রিত করলেও তাদের ব্যবস্থাপনা আর দক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। তবে বিসমার্ক আর মল্টকে ইতালির জয়-পরাজয় নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন না। ইতালিয়ানদের দায়িত্ব অস্ট্রিয়ান সেনাদের একাংশ সেদিকে ব্যস্ত রাখা। তারা সাফল্যের সাথে সেই কাজ সমাধা করে। তিনটি অস্ট্রিয়ান কর্পস ইতালির দিকে প্রেরণ করতে অস্ট্রিয়ান সম্রাট ফ্রাঞ্জ জোসেফ বাধ্য হন।

সাত সপ্তাহের যুদ্ধের দুই পক্ষ; image source: reddit.com

ভৌগলিক বিবেচনা

নেপোলিয়নের পরাজয়ের পর ওয়েস্টফ্যালেয়া আর রাইনল্যান্ডের যে সুবিশাল অংশ প্রুশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় তা মূল ভূখণ্ড থেকে হ্যানোভার আর হেসে-কেসেল দিয়ে আলাদা করা ছিল। এই দুটি রাজ্য উত্তর জার্মানির হলেও প্রুশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তাদের সাথে সীমান্ত ছিল দক্ষিণ জার্মানির অনেক রাজ্যের যারা অস্ট্রিয়াকে সমর্থন দিচ্ছিল।

প্রুশিয়ার দোরগোড়ায় স্যাক্সোনি আর অস্ট্রিয়ান বোহেমিয়া। বার্লিন থেকে তাদের অবস্থান খুব বেশি দূরে নয়। সিলিসিয়ার রাজধানী ব্রেস্লাউ তো আরো কাছে। প্রুশিয়া মোটামুটি চারদিক থেকে তাই শত্রুভাবাপন্ন বাহিনীর চাপে। অস্ট্রো-স্যাক্সোন বাহিনীর মোকাবেলা করতে গেলে পেছন থেকে হ্যানোভার আর হেসে-কেসেল আঘাত করে বসবে। আবার দক্ষিণ জার্মান কনফেডারেট সেনারা সেই সুযোগে অস্ট্রো-স্যাক্সোনদের সাথে যোগ দিয়ে ফেলবে।

সেনাবাহিনীর অবস্থান

১৪ জুন প্রুশিয়ানরা কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে অবস্থান নেয়। তিনটি প্রধান আর্মি গঠিত হয়: আর্মি অফ এল্বা, ফার্স্ট আর্মি আর সেকেন্ড আর্মি। আর্মি অফ এল্বার দায়িত্ব নেন জেনারেল বিটেনফিল্ড, ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার প্রিন্স ফ্রেডেরিক চার্লস আর ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক নিলেন সেকেন্ড আর্মির ভার। মল্টকের পরিকল্পনা ছিল এই তিনটি প্রধান বাহিনী অস্ট্রিয়ানদের মোকাবেলা করবে। পেছন থেকে হ্যানোভার আর হেসে-কেসেল যাতে বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য ছোট ছোট কয়েকটি বাহিনী প্রস্তুত করা হলো। হোলস্টেইনে ভন ম্যান্টফেল, রাইন-ওয়েস্টফ্যালেয়ার অন্তর্গত মিন্ডেন শহরে ভন ফ্যালকেনস্টেইন আর হেসের কাছে ওয়েজলার নগরীতে ভন বেয়ার।

প্রিন্স ফ্রেডেরিক চার্লস; image source: Wikimedia Commons

অস্ট্রিয়ান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল বেনেডেক। জার্মানিতে তার অধীনে সাতটি কর্পস বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে আছে। স্যাক্সোন যুবরাজের নেতৃত্বে ২৫,০০০ সৈনিকের সেনাদল রাজধানী ড্রেসডেনে ঘাঁটি করেছে। বাভারিয়ার প্রিন্স চার্লস মেইন নদী ধরে অ্যাম্বার্গ আর উজবার্গ শহরের মাঝে সবেমাত্র একত্রিত হচ্ছেন। তার সাথে ৫২,০০০ জার্মান। হেসে, নাসাউ, ব্যাডেন আর ভুর্তেমবার্গের সম্মিলনে জার্মান কনফেডারেট বাহিনী তখনো ফ্রাঙ্কফুর্টে নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি। ৪২,০০০ সেনার এই দলের নেতা হেসের রাজপুত্র অ্যালেক্সান্ডার। ওদিকে ইতালিয়ানদের মুখোমুখি হয়েছেন আর্চডিউক অ্যালব্রেখট তিনটি অস্ট্রিয়ান কর্পস নিয়ে।

বেনেডেকের প্ল্যান ছিল আক্রমণাত্মক। প্রুশিয়ানদের তিনি গোনাতেই ধরতেন না। তিনি প্রুশিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। এমনকি গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেলের মতো শত্রু অঞ্চলের অভ্যন্তরে বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি নিজ সৈনিকদের ব্যবহার কেমন হবে সেই বিষয়ে নির্দেশও জারি করে দেন। কিন্তু মল্টকে তাকে সেই সুযোগ দিলেন কই।

লুদ্ভিগ ভন বেনেডেক; image source: Wikimedia Commons

হেসে এবং হ্যানোভারের পতন

ফ্যালকেনস্টেইন আর ম্যান্টফেল নিজ নিজ অবস্থান ছেড়ে হ্যানোভারের দিকে এগিয়ে গেলেন। বেয়ার প্রবেশ করলেন হেসে-কেসেলে। অস্ট্রিয়ার সাথে মূল সংঘর্ষে এরা যাতে বাগড়া দিতে না পারে সেজন্য প্রথমেই মল্টকে এদের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন। প্রুশিয়ানদের এগোতে দেখে অপ্রস্তুত হ্যানোভারিয়ান সেনারা ১৫ জুন রাতে তাড়াহুড়ো করে রেলপথে পালাল গোটিংগেন শহরে, তাদের সাথে দৃষ্টিহীন রাজা জর্জ। তাদের ফেলে যাওয়া গোলাবারুদ আর রসদপত্র প্রুশিয়ান বাহিনীর হস্তগত হয়। এক সপ্তাহের ভেতরে একমাত্র গোটিংগেন ছাড়া পুরো হ্যানোভারেই প্রুশিয়ান আধিপত্য কায়েম হলো।

হ্যানোভারের সর্বশেষ রাজা পঞ্চম জর্জ; image source: Wikimedia Commons

এদিকে বেয়ারের অগ্রাভিযানে হেসে-কেসেলের সেনারা পিছু হটে চলে যায় ফ্রাঙ্কফুর্টের ২৫ কিলোমিটার পূর্বে মেইন নদীর তীরবর্তী হানাউতে। এখানে দক্ষিণ জার্মান কনফেডারেট বাহিনী তাদের সাথে মিলিত হয়। এরা অগ্রসর হলো হেসের ফুল্ডা শহরের দিকে। এদিকে ১৯ জুন বেয়ার হেসের প্রধান শহর কেসেল দখল করে নেন। হ্যানোভারিয়ানদের চিন্তা ছিল এই পথে জার্মান মিত্রদের সাথে যোগ দেবার। এখন তাদের মধ্যে প্রুশিয়ান বাহিনী এসে উপস্থিত। 

গোটিংগেনে প্রস্তুতি শেষে ২১ জুন হ্যানোভারের সেনাদল যাত্রা করে ফুল্ডার দিকে। কেসেল এড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাইলিংস্টাড আর ল্যাঙ্গেনজাইৎসার (Langensalza) ভেতর দিয়ে রাস্তা করে নেবার। পথে পড়বে গোথা আর আইজনাখ শহর। ফ্যালকেনস্টেইন তাদের ধাওয়া করেন। অতিরিক্ত সেনা পাঠানো হলো গোথাতেও। বেয়ার এগিয়ে এলেন আইজনাখের দিকে। ফলে গোথা বা আইজনাখ দিয়ে যাবার কোনো পথ রইল না। এই পরিস্থিতিতে হ্যানোভার আলোচনার প্রস্তাব দেয়। ২৪-২৬ জুন অস্ত্রবিরতির ফাঁকে কথাবার্তা ফলপ্রসু হল না। এর মধ্যেই ৩০,০০০ প্রুশিয়ান সেনা ভাগ হয়ে আশপাশের শহরে অবস্থান নিয়ে প্রায় অর্ধ-চন্দ্রাকৃতি আকারে হ্যানোভারিয়ানদের ঘিরে ফেলেছে। জেনারেল ফ্লাইসকে ফ্যালকেনস্টেইন ইতোমধ্যে গোথা পাঠিয়ে দিয়েছেন সেখানকার বাহিনী শক্তিশালী করতে।

অস্ত্রবিরতি ভেস্তে গেলে জেনারেল ফ্লাইসের ৯,০০০ সৈন্য ল্যাঙ্গেনজাইৎসার দিকে এগিয়ে এলো। এখানে তখন হ্যানোভারের বাহিনীর মূল ঘাঁটি। সংঘর্ষে ফ্লাইস পিছিয়ে যেতে বাধ্য হন। হ্যানোভারিয়ানরা তাকে তাড়া করে নিয়ে গেল ভার্জা শহর অবধি। কিন্তু এই জয় ছিল মূল্যহীন। প্রুশিয়ান মূল বাহিনী ততদিনে তাদের চারদিক থেকে বেষ্টন করে ফেলেছে। ভার্জাতেও ফ্লাইসের সাথে আরো সেনা যোগ দেয়। তদুপরি আইজনাখ থেকে আরো প্রুশিয়ান সেনা ভার্জার দিকে অগ্রসর হলো। এর ভেতর ম্যান্টফেলও উত্তর দিক থেকে হ্যানোভারিয়ানদের কাছাকাছি চলে এলে এবার ৪০,০০০ সেনা হ্যানোভারের বাহিনীকে আটকে ফেলে। পরিস্থিতির অসহায়ত্ব অনুভব করে ২৯ জুন হ্যানোভার আত্মসমর্পণ করল। তাদের সেনাবাহিনী ভেঙে সৈনিকদের বাড়ি ফিরে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়। জর্জকে মেনে নিতে হলো নির্বাসন।

স্যাক্সোনি অভিযান  

সেকেন্ড আর্মিকে সিলিসিয়াতে রেখে আর্মি অফ এল্বা এবং ফার্স্ট আর্মি ১৬ জুন স্যাক্সোনির সীমান্ত অতিক্রম করে। বাভারিয়া আর হ্যানোভারের মতো স্যাক্সোনরাও অপ্রস্তুত অবস্থায় ধরা খেয়ে পিঠটান দিল বোহেমিয়ার দিকে। চলার পথে রেলপথ ধ্বংস করে দিয়ে তারা প্রুশিয়ানদের দেরি করিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কিন্তু খুব বেশি সফল তারা হতে পারেনি। দুদিক থেকে প্রুশিয়ান বাহিনী রাজধানী ড্রেসডেনের দিকে অগ্রসর হয়। ১৮ তারিখ আর্মি অফ এল্বা ড্রেসডেন অধিকার করল। বোহেমিয়া থেকে অস্ট্রিয়ানরা যাতে সাহায্য পাঠাতে না পারে সেজন্য বোহেমিয়া-স্যাক্সোনির সীমান্তবর্তী রাইখেনবার্গ আর গ্যাবেল উপত্যকায় ফার্স্ট আর্মির সেনাদল নজর রাখল।

১৯ তারিখ এল্বা আর ফার্স্ট আর্মির মূল অংশ মিলিত হয়। ঝড়ের গতিতে পতন ঘটে স্যাক্সোনির আরো অনেক শহরের। ড্রেসডেনসহ অন্যান্য দখলকৃত শহরের প্রতিরক্ষা শক্ত করে দুই আর্মির কম্যান্ড একত্রে অর্পণ করা হল ফ্রেডেরিক চার্লসের কাছে।

যুদ্ধ শুরুর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই অস্ট্রিয়ান সমর্থক জার্মান জোট খোঁড়া করে দেয় প্রুশিয়া। হ্যানোভার, হেসে-কেসেল আর স্যাক্সোনি সম্পূর্ণ তাদের অধিকারে। হ্যানোভারের রাজা নির্বাসিত, হেসে-কেসেলের শাসক বন্দি, আর স্যাক্সোনির রাজা বোহেমিয়াতে পলাতক। ফ্যালকেনস্টেইন এবার পূর্ণ মনোযোগ দিলেন বাভারিয়া আর কনফেডারেট বাহিনীর দিকে। প্রুশিয়ানদের তাড়া খেয়ে তারা অস্ট্রিয়ানদের সাথে যোগ দেবার মওকা পেল না।

মল্টকের পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখতে থাকে। প্ল্যান মোতাবেক সিলিসিয়া থেকে সেকেন্ড আর্মি আর স্যাক্সোনি থেকে এল্বা আর ফার্স্ট আর্মি বোহেমিয়াতে বেনেডেকের উপর আঘাত করার জন্য প্রস্তুত হলো। বেনেডেক সব বুঝতে অনেক দেরি করে ফেললেন। প্রুশিয়াতে আক্রমনের চিন্তা বাদ দিয়ে তার এখন নিজেকে রক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হয়। ১৮ জুন থেকে তিনি সেনাদের সন্নিবেশ করতে শুরু করেন। আইজার নদীর দক্ষিণে স্যাক্সোনির পালিয়ে আসা সেনাদের সাথে এক কর্পস অস্ট্রিয়ান যোগ দেয়। কাউন্ট ক্ল্যাম-গ্যালাসের নেতৃত্বে এদের উপর দায়িত্ব বর্তাল ফ্রেডেরিক চার্লসকে প্রতিহত করবার। ছয়টি কর্পস নিয়ে বেনেডেক নিজে চললেন সেকেন্ড আর্মিকে বাধা দিতে।

This is a Bengali language article about the rise and eventual downfall of Prussia and how it led to a unified Germany. Necessary references are mentioned below.

References

  1. Clark, C. M. (2007). Iron kingdom: The rise and downfall of Prussia, 1600-1947. London: Penguin Books.
  2. Wagner A. L. (2015). The Campaign of Königgrätz. A Study of the Austro-Prussian Conflict in the Light of the American Civil War; Project Gutenberg Ebook.

Feature image© Emil Hünten/Wikimedia Commons

Related Articles

Exit mobile version