২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে এক যাত্রীবাহী বিমান নিউ ইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়ে। সেখানে হামলার ৫০ মিনিট পর আরো একটি বিমান আছড়ে পড়ে ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর বা পেন্টাগনের সদরদপ্তরে। এছাড়াও অপহৃত চতুর্থ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে পেনসিলভানিয়ায় একটি খেলার মাঠে গিয়ে পড়ে। নজিরবিহীন সেই হামলায় প্রাণ হারায় ৩,০০০ নাগরিক। সংবাদমাধ্যমে হামলার ভিডিও দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে সারাবিশ্বের মানুষ। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ একে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেন।
যদিও এমন একটি হামলা হতে পারে সে ব্যাপারে একাধিকবার হুশিয়ারি পেয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এবং গোয়েন্দারা। হামলার ৮ মাস আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকির উপর একটি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে দেশটির সরকারি কমিশন। উক্ত কমিশন দীর্ঘ আড়াই বছর যাবত ২০টি দেশের একশোজনের অধিক মানুষের সাক্ষী গ্রহণের পর জানিয়েছিল দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি। কিন্তু সেটি একেবারেই আমলে নেয়নি বুশ প্রশাসন। আর এমনটাই দাবি করেন ডেমোক্রেট সিনেটর গ্যারি হার্ট। তিনি ছিলেন উক্ত সরকারি তদন্ত কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। এমনকি সংবাদমাধ্যম একে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এখানে অবশ্য হোয়াইট হাউসে নেতৃত্বের পালাবদলকে দায়ী করা যায়। কারণ ক্লিনটন প্রশাসনের নেয়া উদ্যোগের ফলাফল রিপাবলিক প্রেসিডেন্ট বুশ ক্ষমতায় আরোহনের সাথে সাথেই গুরুত্ব সহকারে নেবে না এটি খুবই স্বাভাবিক। যদিও হামলার পর প্রেসিডেন্ট বুশ বলেছিলেন, “বিমান হামলা হতে পারে এমন কিছু জানানো হয়নি কমিশনের পক্ষ থেকে।” সে যা-ই হোক, এই হামলার ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো মার্কিনিরা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে। পাল্টে যায় মার্কিনিদের জীবনযাপনের ধরণ। নড়েচড়ে বসে মার্কিন প্রশসান, জোরদার করা হয় দেশজুড়ে নিরাপত্তা।
জৈব, রাসায়নিক এবং পারমাণবিক হামলার আতঙ্কে দেশের সবকটা নিরাপত্তা বিভাগের সমন্বয়ে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জাতীয় নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দেন। পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন অভিবাসন নীতি। সীমিত করা হয় বিদেশীদের প্রবেশাধিকারসহ নানারকম সুযোগসুবিধা। কারণ এই হামলার সাথে সম্পৃক্ত অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানা গেছে একাধিক তদন্তে। এছাড়াও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গঠন করে দেশটির সরকার। পরবর্তীতে যাতে আর একজন মার্কিন নাগরিকও এমন হামলায় নিহত বা আহত না হন এটি নিশ্চিত করাই ছিল বুশ প্রশাসনের উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে, হামলার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা আরো বাড়িয়ে দেয়। বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদারসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ক্ষমতা এবং তৎপরতা বৃদ্ধির ফলে নিজেদের শত্রুদের সহজেই চিনতে শুরু করে দেশটি। তবে প্রতিশোধের জন্য এমনটা যথেষ্ট ছিল না তাদের জন্য। হয়তো এই প্রতিশোধের নীরব যুদ্ধ আমেরিকানরা আরো কয়েক দশক চালিয়ে যাবে। নাইন ইলাভেন হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রীয়ভাবে আর কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল সে সম্পর্কে আমাদের আজকের আলোচনা।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি অভিযান
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার দিন স্থানীয় সময় রাত ৮:৩০ মিনিটে জাতির উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক ভাষণ প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ। ঐ ভাষণে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসে একটি যৌথ অভিযানের প্রস্তাব পেশ করে রিপাবলিকান সরকার। ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ মূলমন্ত্র নিয়ে পরের মাসেই হামলার পরিকল্পনা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুধুমাত্র আকাশপথে হামলা নয়, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দীর্ঘস্থায়ী একটি অভিযানের কথা উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট বুশ। সেই সাথে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, মদতদানকারী নেতা এবং নেতৃত্বদাতা বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক এবং সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের পথে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। এতে সমর্থন জানায় বেশিরভাগ ডেমোক্রেট রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
একই বছরের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক বাহিনী। নাইন ইলেভেন হামলায় সন্দেহভাজন তালেবানদের উপর স্থল, আকাশপথে হামলা চালিয়ে তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে ন্যাটো। আফগান যুদ্ধের পর ন্যাটোর পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ইরাক। সেখানে হামলার কয়েক মাসের মধ্যেই আল কায়েদার অনেক শীর্ষ নেতাকে হত্যা এবং গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ন্যাটোর সেনারা। কোণঠাসা হয়ে পড়ে আল কায়েদাসহ সন্দেহভাজন অনেক জঙ্গিগোষ্ঠি। যদিও এত এত অভিযানের মাঝেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ন্যাটোর এই সামরিক অভিযান ছিল দীর্ঘস্থায়ী একটি পরিকল্পনা। তালেবান কিংবা আল কায়েদা জঙ্গিদের উপর হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি ন্যাটোর যোদ্ধারা। একের পর এক অভিযান চালিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী অধ্যুষিত এলাকায়। তবে শেষপর্যন্ত বিন লাদেনের খোঁজ তারা পেয়েছিল। নাইন ইলেভেন হামলার এক দশক পর তার খোঁজ মেলে পাকিস্তানে। ২০১১ সালের ২ মে অ্যাবটাবাদের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন নেভি সিল সদস্যরা। পরদিন রাষ্ট্রীয় এক ভাষণে জাতিকে এই সংবাদ জানান তৎকালীন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
যদিও বিন লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে শেষ হয়নি মার্কিনিদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী এই অভিযানটি। বিগত বছরগুলোতে আফগানিস্তান থেকে কিছু সংখ্যক সেনা প্রত্যাহার করে নিলেও নজরদারি একেবারেই ছেড়ে দেয়নি ন্যাটো। প্রায় ২ দশকের এই অভিযানে শত শত মার্কিন সেনা নিহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। তবে দ্বিতীয় আরো একটি নাইন ইলেভেন যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে বরাবরই সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো।
বিমান ভ্রমণের রূপান্তরকরণ
বিমান ভ্রমণের সময়কে নিরাপত্তার দিক দিয়ে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। নাইন ইলাভেন হামলার আগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হয়তো এই ঘটনা না ঘটলে বিমান ভ্রমণের নিরাপত্তার যে বিষয়টি সেটি কখনোই পরিবর্তন করা হতো না। কিংবা ঘটতে পারত এর থেকেও ভয়ানক ঘটনা। যদিও মার্কিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এভিয়েশন খাতে এটিই ছিল এযাবতকালের সবথেকে স্মরণীয় ঘটনা যাকে মার্কিনিরা প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে স্মরণ করে।
বর্তমান সময়ে শর্তবিধি মানা ব্যতীত এয়ারপোর্টে প্রবেশ করা যেমন অসম্ভব তেমনি নাইন ইলেভেন হামলার পূর্বে বিমানে প্রবেশ করা ছিল ততটাই সহজ। এমনকি সে সময় ১৯ জন সন্ত্রাসী বিমানের ককপিট অবধি পৌঁছাতে পেরেছিলেন। এটা পরিষ্কার যে নিউ ইয়র্ক কিংবা ওয়াশিংটনের মতো জায়গায় হামলার পুরো দায় মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এড়িয়ে যেতে পারে না। কিন্তু সে সময়ের এভিয়েশন খাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এর থেকেও বেশি দায়ী করা যেতে পারে একাধিক যুক্তিতে। কারণ ইতোমধ্যেই বাণিজ্যিক বিমানে একাধিক বোমা হামলাসহ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। স্কটল্যান্ডে প্যান এম ফ্লাইট ১০৩ বিমানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৮ সালে। এভিয়েশন খাতের নিরাপত্তা বিষয়ে মেট্রোপলিটন স্টেট ইউনিভার্সিটির এভিয়েশন বিভাগের অধ্যাপক জেফ্রি প্রাইস বলেন,
তখন বিমানবন্দরে ব্যাজ এবং নির্দিষ্ট স্যুট পরিহিত নিরাপত্তা কর্মী ছিলেন। যারা শুধুমাত্র মৌখিক কিংবা প্রাথমিক তল্লাশি চালাতেন। যদিও সেগুলোর কোনোটিই বর্তমান সময়ের মতো ছিল না।
প্রাইসের ভাষ্যমতে, সে সময় বিমানে প্রবেশ করার জন্য টিকিট বহন করা বাধ্যতামূলক ছিল না। এমনকি যাত্রীদের বিমানে প্রবেশকালে অভ্যর্থনা জানাতে প্রবেশপত্রে তেমন কেউ উপস্থিত থাকত না। এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হতে শুধুমাত্র পকেটে কী আছে সেগুলো দেখালেই সন্তুষ্ট হতো নিরাপত্তারক্ষীরা। এছাড়াও বেশিরভাগ এয়ারপোর্টে যাত্রীদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র স্ক্যান কিংবা যাচাই করে দেখা হতো না। মূলত নিরাপত্তা খাতে এত এত বিনিয়োগের বিষয়টি একেবারেই মাথায় আসেনি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। অতঃপর ২০০১ সালের নভেম্বরে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণাধীন ট্রান্সফরটেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা টিএসএ প্রতিষ্ঠা করে মার্কিন সরকার। পৃথিবীর প্রায় সব দেশ অনুসরণ করতে শুরু করে এই প্রক্রিয়া।
নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়, যারা টিকিট এবং পরিচয়পত্র স্ক্যান করার দায়িত্ব পান। ল্যাপটপ, কম্পিউটারসহ সকল প্রকার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যাগে বহন করে নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি জুতোজোড়া খুলে দেখাতে হতো। বিমান ভ্রমণের সময় যেকোনো তরল পদার্থ তিন আউন্সের বেশি পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও এক্স-রে মেশিন দিয়ে যাত্রীদের শরীর এবং সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র স্ক্যান করার প্রচলন ঘটে টিএসএ-র প্রটোকলের মাধ্যমে।
টিএসএ-র কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো যাতে করে যাত্রীদের যেকোনো আচরণের বিপরীতে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে পারে। অনেক সময় সন্ত্রাসীরা উদ্দেশ্যপ্রবণ হয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করত। এছাড়াও নতুন করে যারা শেভ হয়েছেন তাদের দাঁড়ি থাকাকালীন ছবি এবং বর্তমান ছবি উভয়টি যাচাইবাছাই করতে হতো তাদেরকে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মীদের মানসিক সক্ষমতা তৈরির ব্যবস্থা গ্রহণ করে টিএসএ। হামলার পর এক বছরের মধ্যে এত এত ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এফবিআই ৫০০ জন আমেরিকান নাগরিক সহ ৬,০০০ জনের একটি তালিকা প্রণয়ন করে। তাদের উপর বিমান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মাত্র এক বছরের মধ্যে দেশটির বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার দেখে উঠেপড়ে লাগে অন্যান্য দেশগুলো।
মুসলিমবিরোধী সহিংসতা বৃদ্ধি পায়
১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মার্কিনিদের মাঝে মুসলিম বিদ্বেষ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই সন্ত্রাসী হামলার মাত্র চার দিনের মাথায় অ্যারিজোনায় শুটিং সেটে হামলা চালায় একজন বন্দুকধারী। অতঃপর বন্দুকধারী ব্যক্তিটি পাশ্ববর্তী গ্যাস স্টেশনের মালিক বলবির সিং সোধিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলবির ছিলেন শিখ ধর্মাবলম্বী। মাথায় পাগড়ী পরিহিত থাকায় হামলাকারী ব্যক্তিটি তাকে মুসলিম সন্দেহ করে হত্যা করেছিল। মিনিট কয়েক পর আরো একটি গ্যাস স্টেশনের কর্মীকে গুলি করে হামলাকারী। যদিও ঐ যাত্রায় বেঁচে যান লেবানিজ বংশোদ্ভূত ব্যক্তিটি। পরবর্তীতে একটি আফগান আমেরিকান পরিবারের জানালায় একটানা কয়েক রাউন্ড গুলি চালাতে দেখা যায় তাকে।
মুসলমানদের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যারিজোনায় বন্দুকধারীর হামলার পরেই মানবাধিকার সংগঠনসহ বেশ কিছু ধর্মীয় সংগঠন মুসলিম মার্কিনিদের পাশে দাঁড়ায়। যদিও থেমে থাকেনি বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী মুসলমানদের উপর গুলিবর্ষণ কিংবা হামলা। এফবিআই-এর দেয়া তথ্যমতে, ২০০০ সালে মুসলিম বিদ্বেষী হামলার ঘটনা ঘটে ১২টি।
অন্যদিকে ২০০১ সালে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩-এ! পরবর্তীতে অবশ্য টিএসএ-র কঠোর অবস্থানের কারণে মুসলিম বিদ্বেষী হামলাগুলো কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। তবে ২০১৫ সালে হঠাৎ করে মুসলমান বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এফবিআই প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী সেবার ৯১টি হামলার ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালে অবশ্য হামলার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। সে বছর ১২৭টি মুসলিম বিদ্বেষী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
নজরদারি বৃদ্ধি
নাইন ইলেভেন হামলার ছয় সপ্তাহের মাথায় বিতর্কিত প্যাট্রিয়ট আইন পাশ করে মার্কিন সরকার। মূলত গোয়েন্দা নজরদারিতে ভুলভ্রান্তিসহ পরিচিত শত্রুদের উপর আরো বেশি নজরদারি সৃষ্টির লক্ষ্যে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ক্ষমতা আরো বেড়ে যায়। নাসা, এফবিআই-এর মতো সংস্থাগুলো জাতীয় তথ্য উপাত্তের উপর প্রভাব বৃদ্ধির সুযোগ পেয়ে যায়। যতই দিন যেতে লাগল, মার্কিনিদের মনে ভয় তত বাড়তেই থাকল। কারণ ইতোমধ্যেই একাধিক সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কে জানতে পেরেছিল এফবিআই। শহরগুলোতে সন্ত্রাসী সেল এখনো সক্রিয় ভেবে নাগরিক পর্যায়ে তল্লাশির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় মার্কিন সরকার।
কংগ্রেসের নির্দেশে নাসা এবং এফবিআইকে আরো বেশি উপাত্ত সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের ক্ষমতা দেয়া হয়। অন্যদিকে, নতুন পাশকৃত প্যাট্রিয়ট আইন প্রয়োগ করে গোয়েন্দারা চাইলেই যেকোনো লাইব্রেরি কিংবা ব্যক্তির যেকোনো বিষয়ে বিনা অনুমতিতে তল্লাশি চালাতে পারত। এতে বিভিন্ন সময় নাগরিক অধিকার রক্ষার্থে কাজ করা সংগঠনগুলো বিরোধীতা করে। যদিও পরবর্তীতে মার্কিন সরকার আরো কঠোর আইন পাশ করে। ২০০৮ সালে এফআইএসএ সংশোধনী আইনের মধ্য দিয়ে নাসাকে নাগরিক পর্যায়ে ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফোন কল, ক্ষুদে বার্তাসহ যাবতীয় অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারির ক্ষমতা দেয়া হয়। বিদেশে সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সাথে যোগাযোগ করছে এমন মার্কিনিদের খুঁজতে এমন উদ্যোগ বলে তখন জানানো হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে।