মানুষে মানুষে মতের অমিল হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। তখন সাধারণত সবাই চেষ্টা করে নিজেদের বিচার-বিবেচনাবোধ খাটিয়ে এমন একটি সমাধানে আসতে, যাতে করে উভয়পক্ষের দাবিই যথাসম্ভব রক্ষা পায়। তবে সবসময় এমনটা ঘটে না। এই যেমন আজকের লেখার কথাই ধরুন। আজ যে নারীদের নিয়ে আলোচনা করা হবে তাদের কেউ প্রেমিকের মন জয়ে, কেউ অনুষ্ঠানে সাজসজ্জা নিয়ে, কেউবা ছোটখাট বিষয় নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন অপর এক নারীর সাথে। সেটা যদি কেবলমাত্র মৌখিক বিবাদ হতো, তাহলেও নাহয় মানা যেত। সেগুলো ছিলো একেবারে মারামারি পর্যায়ের বিবাদ। তা-ও খালি হাতের মারামারি না; তলোয়ার, বর্শা, পিস্তলের মতো ভয়ঙ্কর যুদ্ধাস্ত্র দিয়েই মারামারি!
নারীদের মাঝে সংঘটিত ইতিহাসের এমন অদ্ভুত কিছু দ্বন্দ্বযুদ্ধ নিয়েই জানানো হবে আজ।
১) পেটিকোট ডুয়েল
ডুয়েলটির নাম দেখে যে কারোরই ধাক্কা খাওয়ার কথা। কেউ কেউ ভাবতে পারেন এটা নারীদের পরনের পেটিকোট বা সায়ার সাথে সম্পর্কিত কোনো বিবাদ কিনা। প্রকৃতপক্ষে পেটিকোট শব্দটির বাংলা অর্থ যেমন ‘সায়া’, তেমনি ‘মেয়েলী’ও বটে। অর্থাৎ দুজন নারীর মাঝে এ দ্বন্দ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিলো বলেই একে ‘পেটিকোট ডুয়েল’ তথা ‘নারীদের দ্বন্দ্বযুদ্ধ’ বলা হয়।
১৭৯২ সালে লন্ডনে ঘটেছিলো উদ্ভট এ মারামারির ঘটনা। সামাজিক জীব হিসেবে আমরা প্রায়সময়ই প্রতিবেশীদের বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজখবর নিয়ে থাকি। মিসেস এলফিনস্টোনও তেমনিভাবে দেখা করতে গিয়েছিলেন লেডি আলমেরিয়া ব্র্যাডকের সাথে। খোশগল্পের একপর্যায়ে মিসেস এলফিনস্টোন মজা করে লেডি আলমেরিয়ার বয়স নিয়ে বলে ফেলেছিলেন, “আপনি যত বলেন, আপনার বয়স কিন্তু আসলে তার থেকে বেশি!” আর যায় কোথায়? এমন কৌতুককে মোটেও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন নি আলমেরিয়া। এককথা, দু’কথা করে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা সিদ্ধান্ত নেন, এভাবে তর্ক করে কোনো ফায়দা হবে না। এর চেয়ে বরং দ্বন্দ্বযুদ্ধের মাধ্যমেই এর ফলাফল নির্ধারিত হবে। ঠিক হয় হাইড পার্কে হবে সেই যুদ্ধ।
নির্ধারিত দিনে দুজনই সেখানে উপস্থিত হলেন। যুদ্ধ শুরু হলো পিস্তল দিয়ে। গোলাগুলি করে কেউই কারো কোনো ক্ষতি করতে পারলো না, শুধুমাত্র লেডি আলমেরিয়ার হ্যাটটি গুলি লেগে ফুটো হয়ে গিয়েছিলো। যেহেতু পিস্তল দিয়ে মীমাংসা হলো না, তাই এবার তারা হাতে তুলে নিলেন তলোয়ার। শেষপর্যন্ত জয় পান লেডি আলমেরিয়া, প্রতিপক্ষের হাতে তলোয়ার দিয়ে জোরেশোরেই আঘাত হানতে সক্ষম হন তিনি। এরপর আর লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি ছিলো না মিসেস এলফিনস্টোনের। পরবর্তীতে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে তিনি চিঠি লিখেছিলেন লেডি আলমেরিয়ার কাছে।
২) ডুয়েলো ডি মুজেরেস
প্রেমের জন্য মারামারির ঘটনা সবসময় ছেলেদের মাঝেই হতে শোনা গিয়েছে, দেখা গিয়েছে দীর্ঘদিনের বন্ধুদের মাঝে ভাঙনের মতো ঘটনাও। তবে এখন যে ঘটনা শোনানো হবে, সেটা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও আসলেই এককালে সেটা ঘটেছিলো।
ইসাবেলা ডি কারাজ্জি এবং ডিয়াম্ব্রা ডি পট্টিনেলা, দুজনই ছিলেন সম্ভ্রান্ত বংশীয় রমণী, দুজনের মাঝে ভালো বন্ধুত্বও ছিলো। কিন্তু দুই বান্ধবীর চমৎকার এ সম্পর্কের মাঝে ভাঙন ধরান একজন সুপুরুষ! সুদর্শন সেই পুরুষের নাম ফাবিও ডি জেরেসোলা। ষোড়শ শতকে নেপলসের অগণিত নারীর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন ফাবিও।
একবার এক বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হয় এ তিনজনের। ইসাবেলা ও ডিয়াম্ব্রা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলেন। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ডিয়াম্ব্রার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন ফাবিও। তবে সেটা ছিলো বিশেষ ধরনের চাহনি। পাশে দাঁড়িয়ে এটা দেখার পর ইসাবেলার পিত্তি জ্বলে যায়। তিনি অনুমান করেন, ফাবিওর হয়তো মনে ধরেছে ডিয়াম্ব্রাকে, ওদিকে তিনি নিজেও ভালোবাসতেন ফাবিওকে।
এরপর সবার সামনেই শুরু হয় দুই বান্ধবীর ঝগড়াঝাটি। দুজনই ফাবিওকে নিজের এবং নিজেকে ফাবিওর বলে দাবি করতে থাকেন। ঝগড়া একপর্যায়ে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, তারা যে বান্ধবী ছিলেন কয়েক মুহূর্ত আগেও, সেটা বোঝার কোনো উপায়ই থাকে না। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, সেদিন থেকে ছ’দিন পর এক খোলা ময়দানে দ্বন্দ্বযুদ্ধে নামবে দুই বান্ধবী।
নির্ধারিত দিনে নেপলসের গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তিই সেখানে এসে উপস্থিত হন। এমন অদ্ভুত কারণে লড়াইয়ের সাক্ষী হওয়ার লোভ সামলাতে পারে নি অনেকেই। ইসাবেলা সেদিন হাজির হয়েছিলেন নীল রংয়ের পোশাকে, মাথায় থাকা হেলমেটে শোভা পাচ্ছিলো ডায়মন্ড। নিজের পোশাকের রংয়ের সাথে মিলিয়ে সঙ্গে আনা ঘোড়াটিকেও পরিয়েছিলেন বেগুনী রংয়ের কাপড়। ডিয়াম্ব্রার পরনের পোশাকটি ছিলো সবুজ রংয়ের, হেলমেটে শোভা পাচ্ছিলো স্বর্ণখচিত সাপের প্রতীক।
যুদ্ধে দুই নারীর হাতে ছিলো বর্শা আর তলোয়ারের মতো অস্ত্র। যুদ্ধে যে ঠিক কে বিজয়ী হয়েছিলেন তা জানা না গেলেও অমীমাংসিত এ যুদ্ধই স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। ১৬৩৬ সালে চিত্রশিল্পী জোসে ডি রিবেরা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি বিখ্যাত চিত্রকর্মও এঁকেছিলেন, নাম ‘ডুয়েলো ডি মুজেরেস’, যার অর্থ ‘নারীদের দ্বন্দ্বযুদ্ধ’।
৩) টপলেস ডুয়েল
১৮৯২ সালে অস্ট্রিয়ার দুই সম্ভ্রান্ত বংশীয় নারীর মাঝে সংঘটিত হয়েছিলো এ দ্বন্দ্বযুদ্ধ। সংবাদপত্রের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সেই দুই নারী ছিলেন প্রিন্সেস পলিন মেটারনিখ এবং কাউন্টেস আনাস্তাশিয়া কিয়েলমেনসেগ। সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সময়কালে প্যারিসে অস্ট্রিয়ার অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছিলেন পলিনের স্বামী। ১৮৯২ সালে ভাদুজে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তিনি। সমাজের উচ্চশ্রেণীর সদস্য হিসেবে সেই অনুষ্ঠানটিতে যাতে কোনোরকম কমতি না হয়, সবদিক থেকে দেখতেই যেন সেটিকে অসাধারণ সুন্দর দেখায়, এটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই অনুষ্ঠানেই ফুলের সাজসজ্জা কেমন হবে এটা নিয়ে কথাবার্তা চলতে চলতে একপর্যায়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন পলিন ও আনাস্তাশিয়া।
ডুয়েলো ডি মুজেরেসের মতো টপলেস ডুয়েলেও প্রকৃত বিজয়ী কে ছিলেন তা অমীমাংসিত থেকে গিয়েছিলো। যুদ্ধরত দুই রমণীই কমবেশি আহত হয়েছিলেন। পলিনের আঘাত লেগেছিলো নাকে, ওদিকে আনাস্তাশিয়ার হাত কিছুটা কেটে গিয়েছিলো। এ যুদ্ধটির তত্ত্বাবধায়কদের মাঝে একজন ছিলেন ব্যারনেস লুবিন্সকা, চিকিৎসাবিদ্যা সম্পর্কে টুকটাক জ্ঞান ছিলো তার। তিনিই তাদেরকে বলেছিলেন, শরীরের উপরের অর্ধাংশে কাপড় পরে যুদ্ধ করা যাবে না, অর্থাৎ যুদ্ধ হবে টপলেস অবস্থায়!
বিচিত্র এ যুদ্ধ দেখতে যে লোকসমাগম কম হয় নি, তা তো বলাই বাহুল্য। আর দর্শকদের মাঝে পুরুষও নিতান্ত কম ছিলো না, সেটা যে যুদ্ধে পোশাক সংক্রান্ত নীতিমালার কারণে, সেটা বোধহয় না বললেও চলে। তখন পুরুষদের উদ্দেশ্যে লুবিন্সকা চিৎকার করে বলছিলেন, “চোখ বন্ধ কর, যত্তসব কামোত্তেজিত হতচ্ছাড়ার দল!”
৪) আবারো প্রেমের জন্য যুদ্ধ
এবারের যুদ্ধটাও ছিলো ডুয়েলো ডি মুজেরেসের মতো প্রেমের জন্য। তবে এবার সময়কাল আর স্থান- দুটোই পাল্টে গিয়েছিলো। আঠারো শতকে সংঘটিত এ দ্বন্দ্বযুদ্ধটি হয়েছিলো ফ্রান্সে। মাদাম ডি পলিগনাক এবং মাদাম ডি নেসলে নামক দুই প্রেমাকাঙ্ক্ষী রমণী ছিলেন এ ঘটনার মূলে। তারা দুজনেই ভালোবেসেছিলেন রশেঁল্যুর ডিউককে। একসময় নেসলে বুঝতে পারেন, তার ভালোবাসাকে দ্বিপাক্ষিক করার পথে সবচেয়ে বড় কাটা হলেন পলিগনাক। তাকে সরাতে পারলে তবেই যাওয়া যাবে স্বপ্নপুরুষের কাছে, তাকে জানানো যাবে তার মনের গভীরে লুকনো সুতীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা।
সবকিছু ভেবে-চিন্তে একদিন তিনি ডাকলেন পলিগনাককে, জানালেন দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান। পলিগনাকও তাতে সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলেন। কারণ ডিউককে তিনিও ভালোবাসতেন। তাই তিনিও চাচ্ছিলেন এর একটা মীমাংসা হয়ে যাক। তলোয়ার কিংবা বর্শার বদলে তারা বেছে নিয়েছিলেন পিস্তল।
নির্ধারিত দিনে দুজনেই পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। প্রথমেই যুদ্ধের নিয়ম নির্ধারণের পালা। ঠিক হলো একটি স্কার্ফের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ যতটুকু হতে পারে, ঠিক তত দূর পর্যন্ত একে অপরের বিপরীতে অবস্থান নিবেন তারা। এরপর যে কেউই কোনো ঘোষণা ছাড়াই গুলি করে বসতে পারবে! প্রথম গুলিটি ছুঁড়েছিলেন এ দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বায়ক নেসলেই। কিন্তু আফসোস, তার বুলেটটি পলিগনাকের ধারেকাছে দিয়েও যায় নি। এবার পলিগনাকের পালা। পলিগনাক কিন্তু ঠিকই নেসলেকে আহত করতে পেরেছিলেন, তার গুলিটি আঘাত হেনেছিলো নেসলের কাঁধে।
এ যুদ্ধে কে বিজয়ী হয়েছিল জানতে চান? সেটা জেনে আসলে কোনো লাভই নেই। কারণ লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে নেসলে আর পলিগনাক ডিউককে ভালোবাসতেন, একবারও কি বলা হয়েছে ডিউক তাদের ভালোবাসতেন কিনা? তিনি আসলে তাদের কাউকেই ভালোবাসেন নি। তাই যুদ্ধের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, দ্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত দুই নারীর কেউই শেষপর্যন্ত তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে পান নি!
৫) কারণ যখন দেশপ্রেম
দেশপ্রেমের কারণে যুদ্ধ মানবজাতি দেখে আসছে বহুকাল আগে থেকে। সেসব যুদ্ধে একদল যোদ্ধা যুদ্ধ করতো আরেক দলের বিপক্ষে। এখন যে যুদ্ধের কথা বলা হবে, সেটাও মূলত দেশপ্রেমের জন্য হয়েছিলো। তবে পার্থক্য হলো, সেই যুদ্ধটি হয়েছিলো কেবল দুজন নারীর মাঝেই!
উনিশ শতকে ফ্রান্সে সংঘটিত সেই দ্বন্দ্বযুদ্ধের একপক্ষে ছিলেন আমেরিকান নারীবাদী মিস শেলবি এবং অপরপক্ষে ছিলেন ফরাসি নারীবাদী মাদাম মেরি-রোজ আস্তি দি ভালসায়ার। তাদের তর্কের বিষয়টি ছিলো বেশ অদ্ভুত। আলোচনা শুরু হয়েছিলো ফ্রান্স না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভালো মানের নারী ডাক্তার আছে সেটা নিয়ে। একসময় সেটাই তিক্ত ঝগড়ার রুপ নেয়। শেষপর্যন্ত দুজনে ঠিক করেন একপক্ষ পর ওয়াটারলু প্রান্তরে মিলিত হবেন তারা, হবে দ্বন্দ্বযুদ্ধ। সেখানে যে জিতবে, তার মতই বিজয়ী বলে গণ্য হবে।
পনের দিন পর কেন? আস্তি দি ভালসায়ার তার প্রতিপক্ষকে এ সময়টুকু দিয়েছিলেন যেন শেলবি দুই সপ্তাহ ধরে তলোয়ার চালনা শিখে নিতে পারেন। অবশ্য তাতে কোনো লাভ হয় নি। দু’সপ্তাহ পরের সেই দ্বন্দ্বযুদ্ধে হার হয় মিস শেলবিরই। কাঁধে তলোয়ারের আঘাত পাবার পরই পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হন মার্কিন এ নারীবাদী।
৬) দুই প্রজন্ম ধরে চলেছিলো যে দ্বন্দ্বযুদ্ধ
ওলগা জাভারোভা এবং একাতারিনা পলেসোভা, দুজনই ছিলেন বিশাল বিত্ত-বৈভবের অধিকারিণী। তারা দুজন আবার একে অপরের প্রতিবেশীও ছিলেন। আর এটাই ছিলো যত ঝামেলার মূল। নানাবিধ বিষয় নিয়ে সবসময় এ দুই প্রতিবেশীর নারীর মাঝে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো। অবশেষে একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, এভাবে আর চলতে পারে না। চিরতরে এ বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে হবে। তবে কেউই যেহেতু পরমতসহিষ্ণু ছিলেন না, তাই দ্বন্দ্বযুদ্ধই ছিলো একমাত্র সমাধান। এটা ছিলো একটা ‘ডু অর ডাই’ ইভেন্ট।
নির্ধারিত দিনে তলোয়ার হাতে হাজির হন ওলগা এবং একাতারিনা। দুজনই সাথে এনেছিলেন তাদের চৌদ্দ বছর বয়সী দুই মেয়ে এবং সেই মেয়েদের গৃহশিক্ষিকাদের। খুব বেশিক্ষণ না চললেও দ্বন্দ্বযুদ্ধের ফলাফল হয়েছিলো মারাত্মক। ওলগার মাথায় আঘাত লাগায় তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। তবে মৃত্যুর আগে তিনিও একাতারিনার পাকস্থলিতে মরণ আঘাত হানতে সক্ষম হন। একাতারিনাও আর বাঁচতে পারেন নি। পুরো একটি দিন নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে অবশেষে তিনিও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এরপর পেরিয়ে যায় পাঁচটি বছর। ওলগার মেয়ে আলেক্সান্দ্রা এবং একাতারিনার মেয়ে অ্যানা, দুজনেরই বয়স তখন উনিশ বছর। পারিবারিক গন্ডগোলের জের ধরে মায়েদের মৃত্যু দেখেছিলো তারা দুজনই। প্রতিশোধের আগুন টগবগ করে ফুটছিলো তাদের রক্তেও। দুজনেই তাই সিদ্ধান্ত নেয় মায়েদের মৃত্যু যেহেতু চূড়ান্ত কোনো ফলাফল বয়ে আনতে পারে নি, তাই দ্বন্দ্বযুদ্ধ আবারো হবে। নির্ধারিত দিনে তারা মুখোমুখি হলো, তাদের মায়েরা যেখানে লড়াই করেছিলো সেই একই জায়গায়। সেদিনও তাদের সেই আগের দুই গৃহশিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ এবার নিতে সক্ষম হয় আলেক্সান্দ্রা। তার হানা এক চরম আঘাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অ্যানা।
৭) এ কেমন ভালোবাসা!
আজকের লেখায় ভালোবাসা নিয়ে দ্বন্দ্বযুদ্ধ সংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে দুটি। শেষটাও নাহয় একই বিষয় দিয়েই করা যাক।
ঘটনাটি ঘটেছিলো ১৯০০ সালে মেক্সিকোতে। প্রেমিক রাফায়েল রিকেলমেকে নিয়ে এক বল ড্যান্সে অংশ নিয়েছিলেন মার্তা দুরান। সেখানেই জুয়ান লুনা নাম্নী এক তরুণী রাফায়েলের মনোযোগ কেড়ে নেয়। ওদিকে প্রেমিক যে আরেক নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে, এটা টের পেয়ে গিয়েছিলেন মার্তা। স্বাভাবিকভাবেই এটা তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তবে এজন্য প্রেমিককে দোষ না দিয়ে তিনি বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন জুয়ানের সাথে। জুয়ানও হয়তো রাফায়েলকে পছন্দ করে ফেলেছিলেন, নাহলে তিনিই বা সেই তর্ক চালিয়ে যাবেন কেন? অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় দ্বন্দ্বযুদ্ধ হবে রাফায়েলের মন জয় করতে চাওয়া দুই রমণীর মাঝে।
পরদিন সকালেই মুখোমুখি হলেন দুজন, দুজনের হাতেই শোভা পাচ্ছিলো তলোয়ার। প্রথম রাউন্ড সাদামাটাভাবে কেটে গেলেও উত্তেজনা শুরু হয় দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। জুয়ান ভালোভাবেই আঘাত করেন একবার মার্তার গায়ে। তৃতীয় রাউন্ডে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের দরুন বেশ দুর্বল হয়ে পড়েন মার্তা। এর পুরোপুরি সদ্বব্যবহার করেন জুয়ান। এবার তিনি মার্তার তলোয়ার ধরে রাখা হাতটিতে আরেকটি বড় ধরনের আঘাত হানেন।
এ যুদ্ধে জয়টা শেষপর্যন্ত জুয়ানই পেয়েছিলেন। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, মার্তা কিংবা জুয়ান কেউই আর রাফায়েলের কাছে ফিরে যান নি। বরঞ্চ দুজনই রাফায়েলের জীবন থেকে সরে যান!