উন্ডেড নি ইন্সিডেন্ট: ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ আদিবাসী অভ্যুত্থান

নিজ দেশে পরবাসী হবার ঘটনা পৃথিবীতে বেশ পুরনো। এমনকি তা ততটা অভিনবও নয়। সভ্যতার শুরু থেকে আজ অবধি ক্ষমতাবান জনগোষ্ঠী নতুন ভূখণ্ডে গিয়ে স্থানীয় অধিবাসীদের ভূমি জবরদখল করেছে। ঔপনিবেশিক যুগ আসার পর এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন প্রযুক্তি, জ্ঞান, এমনকি দর্শন। আক্রান্ত জনগোষ্ঠী পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে তাদেরকে সমূলে বিনাশ করা হয়েছে। আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়ে চেপে যাওয়া হয়েছে ‘সভ্য’ পশ্চিমা সাম্রাজ্যের প্রভুত্ব বিস্তারের হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস।

আমেরিকা মহাদেশের ইতিহাসও পশ্চিমা সভ্যতার নৃশংসতার বেশ জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। ১৪৯২ সালে কলম্বাসের তথাকথিত আমেরিকা আবিষ্কারের আগে থেকেই মহাদেশটিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস ছিলো, যাদের ‘রেড ইন্ডিয়ান’ নামে দেগে দেওয়া হয়েছে। হত্যাযজ্ঞ, ভূমি জবরদখল ইত্যাদির মাধ্যমে সেদিন থেকে আজ অবধি আদিবাসীদের রিজার্ভেশনের মতো অমানবিক পরিস্থিতিতে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। তবে সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিবাহী আদিবাসীরা সব অন্যায় মুখ বুজে মেনে নেয়নি। ১৯৭৩ সালে সংঘটিত ‘উন্ডেড নি ইন্সিডেন্ট’ এমনই এক প্রতিবাদের ঘটনা।

ওউন্ডেড নি ইনসিডেন্টরের প্রতিবাদ
উন্ডেড নি ইন্সিডেন্টের প্রতিবাদ  Image Source: libcom.org

১৯৭৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটা প্রদেশের উন্ডেড নি টাউনের পাইন রিজ ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশনে আদিবাসী ওগলালা লাকোটা জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০০ সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় শহরের দখল নিয়ে নেয়। এই ঘটনা তৎকালীন প্রচারমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া জাগায়। উল্লেখ্য, ৮৩ বছর আগে, ১৮৯০ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ঠিক একই জায়গায় তৎকালীন মার্কিন সরকার আদিবাসী লাকোটা জনগোষ্ঠীর উপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়, যাতে সক্ষম পুরুষ বাদ দিয়েও নারী-শিশু-বৃদ্ধ মিলিয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ নিহত হয়। ১৯৭৩ সালে বিদ্রোহীরা সরকার ও প্রশাসনের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে একই স্থান অসহযোগের জন্য বেছে নেয়। কারণ এই ক্ষোভ একদিনে তৈরি হয়নি।

৮৩ বছর আগের সেই হত্যাকাণ্ড
৮৩ বছর আগের সেই হত্যাকাণ্ড; Image Source: learning-history.com

আমেরিকা মহাদেশে ইউরোপ থেকে আগত অভিবাসী ও উপনিবেশ স্থাপনকারীদের ক্ষেত্রে কিছু সাধারণ ব্যাপার আছে। আদিবাসী আমেরিকানরা বহু গোত্র ও উপজাতিতে বিভক্ত ছিলো। ঔপনিবেশিক শাসকরা এই সাংস্কৃতিক পার্থক্য ও বিভেদ কাজে লাগিয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পরও এই নীতির কিছুমাত্র পরিবর্তন হয়নি, বরং তা মাত্রাগতভাবে আরো বেড়ে গিয়েছিলো। সরকারের নীতি ছিলো আদিবাসীদের প্রভাব ও ক্ষমতার বিস্তার সংকুচিত করে তাদের একরকম বিশেষ অঞ্চলে স্থায়ী হতে বাধ্য করা।

১৮৮৯ সালের ২ মার্চ সাউথ ডাকোটা প্রদেশে পাইন রিজ ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিলো ওগলালা লাকোটা জনগোষ্ঠীর বিচরণ ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ করে দেওয়া। প্রতিষ্ঠা হবার শুরু থেকেই এ অঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্স এই রিজার্ভেশন দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো। লাকোটা গোষ্ঠীর নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন আদিবাসী নেতা রিচার্ড উইলসন। আর সরকার ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যস্থতাকারী সংগঠন ছিলো ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য ওগলালা নেশন’। এই গার্ডিয়ানস যতটা মধ্যস্থতার কাজ করতো, তার চেয়ে বেশি রিচার্ড উইলসনের ব্যক্তিগত সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে কাজ করত।

চেয়ারম্যান রিচার্ড উইলসন
চেয়ারম্যান রিচার্ড উইলসন; Image Source: ourcampaigns.com

১৯৭২ সালে রিচার্ড উইলসন ওগলালা লাকোটা গোত্রের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার পূর্বপুরুষ পূর্ণাঙ্গ আদিবাসী ছিলো না, তাতে শ্বেতাঙ্গ রক্তেরও মিশ্রণও ছিলো। তদুপরি তিনি বেশ দুর্নীতিগ্রস্থ ছিলেন। নির্লজ্জ স্বজনপ্রীতির জন্য তিনি বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। ইন্ডিয়ান রিজার্ভেশনে লভ্য সামান্য যেসব সুযোগ সুবিধা ছিলো, উইলসন তার সিংহভাগ নিজের কাছের লোক ও অনুচরদের জন্য সংরক্ষণ করতেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান অ্যাফেয়ার্সও নিজেদের স্বার্থে তাকে সমর্থন করতো।

রিজার্ভেশনে অনেক ছোট-বড় গোত্রভিত্তিক দল ছিলো, আর প্রত্যেক দলে নিজস্ব নেতা ও রাজনৈতিক সক্রিয়তা ছিলো। সেসব দলের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় কোন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেন না। তাছাড়া আদিবাসীদের মানবাধিকার সংগঠন আমেরিকান ইন্ডিয়ান মুভমেন্ট দেশব্যাপী আদিবাসীদের পূর্ণ রাষ্ট্রীয় অধিকারের দাবিতে সোচ্চার ছিলো। তারা রিজার্ভেশনে ফেডারেল সরকার ও রাষ্ট্রের যেকোনো রকম হস্তক্ষেপ পরোক্ষ ও অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিকতা হিসেবে সাব্যস্ত করেছিলেন। সুতরাং সাধারণ শোষিত ওগলালা লাকোটা জনগোষ্ঠীর সমর্থন আমেরিকান ইন্ডিয়ান মুভমেন্টের দিকেই ছিলো। পরে দেখা যাবে, আলোচ্য ঘটনায় এই মানবাধিকার সংগঠনের সক্রিয় উপস্থিতি ফেডারেল সরকারের দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠবে।

আদিবাসীদের সমস্যা শুধু রিজার্ভেশনের চেয়ারম্যানকে নিয়েই ছিলো না। রিচার্ড উইলসন স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ র‍্যাঞ্চারদের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক রাখতেন। তার বিরুদ্ধে রিজার্ভেশন এলাকার জমি প্রায় জলের দামে র‍্যাঞ্চার ও বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দেবার অভিযোগও ছিলো। রিজার্ভেশনের অধিবাসীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে খনিজ সম্পদের সম্ভাবনাময় অনেক জায়গা তিনি প্রাইভেট কোম্পানিকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া গার্ডিয়ানস অব দ্য ওগলালা নেশন ও শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের কার্যক্রমের ফলে রিজার্ভেশনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছিলো। ১৯৭৩ সালে উইজলি ব্যাডহার্ট বুল নামক ২০ বছরের বয়সের একজন লাকোটা শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীর হাতে হত্যার শিকার হয়। বিচার বিভাগ এই হত্যাকাণ্ডের যথাযথ তদন্তে ব্যর্থ হয়। এই হত্যায় স্থানীয় পুলিশের হাত থাকার অভিযোগ উঠেছিলো। এমন নানা রকম অমানবিক ও বৈষম্যমূলক ঘটনা উন্ডেড নি ইনসিডেন্ট ত্বরান্বিত করে তুলেছিলো।

প্রতিবাদের শুরুর দৃশ্য
প্রতিবাদের শুরুর দৃশ্য  Image Source: marpnews.org

আদিবাসী নেতৃবৃন্দ ও আমেরিকান ইন্ডিয়ান মুভমেন্টের সদস্য রাসেল মিন্স ও ডেনিস ব্যাংকস এর উপস্থিতিতে ১৯৭৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক উন্ডেড নি এলাকায় গণঅবস্থানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাদের দাবি ছিলো রিচার্ড উইলসনের অপসারণ ও রিজার্ভেশনে মানবেতর জীবনের অবসানের জন্য ফেডারেল সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ।

ফেডারেল সরকারের টনক আচমকা নড়ে উঠলো। প্রায় শত বছর আগের আমেরিকান-ইন্ডিয়ান যুদ্ধ পুনরায় সংঘটনের আশঙ্কায় সরকার পাইন রিজ রিজার্ভেশন এলাকায় প্রতি ১৫ মাইল পরপর রোড ব্লকের ব্যবস্থা করলেন। রিচার্ড উইসন তার নিজস্ব বাহিনী গার্ডিয়ান অব দ্য ওগলালা নেশনের সশস্ত্র সদস্যদের নিয়োজিত করলেন। ১০ দিন পর সরকার রোডব্লক উঠিয়ে নেয় এবং রিচার্ডের বাহিনী প্রত্যাহারের আদেশ দেয়। ফলে প্রচুর নতুন সমর্থক ও একটিভিস্ট এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে। আমেরিকান ইন্ডিয়ান মুভমেন্টের সদস্যরা তাদের দাবি গণমাধ্যমে দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। ফলে পুরো দেশজুড়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সংগঠনগুলো বন্দী জীবন ছেড়ে মুক্ত হবার আশা পোষণ করতে থাকে।

ঘটনাস্থল থেকে সহসা স্বাধীন সার্বভৌম ওগালা জাতিরাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়। আন্দোলনের পক্ষ থেকে ফ্রাংক ফুলস ক্রোকে প্রতিনিধি হিসেবে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রেরণ করা হয়। জাতিসংঘের স্বীকৃতি না মিললেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ব্যাপক উৎসাহ পাওয়া গিয়েছিল।

প্রতিবাদের শক্তিবৃদ্ধি
প্রতিবাদের শক্তিবৃদ্ধি; Image Source: indianz.com

তটস্থ ফেডারেল সরকার ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ইউএস মার্শাল সার্ভিস, এফবিআই এবং পাঁচ রাজ্যের ন্যাশনাল গার্ডের সশস্ত্র দল নিযুক্ত করে। বলা হয়ে থাকে, ১ লক্ষ ৩৩ হাজার রাউন্ড গুলি ও গোলাবারুদ, আর্মার্ড কার, রাইফেল, গ্রেনেড লঞ্চার, স্নাইপার, হেলিকপ্টার, ফ্লেয়ার ও এরিয়াল ফটোগ্রাফির সরঞ্জাম আনা হয়েছিলো। ১৩ মার্চ মার্কিন বিচার বিভাগের অ্যাটর্নি হার্লিংটন উড আন্দোলনকারীদের দাবি জানতে নিরস্ত্র অবস্থায় উন্ডেড নি এলাকায় যান। ক্লান্তির কারণে দরকষাকষি অসমাপ্ত থাকলেও তার কূটনীতি কিছুটা হলেও সফল ছিলো।

আদিবাসীদের সাথে এটর্নি জেনারেল হার্লিংটন উড
আদিবাসীদের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেল হার্লিংটন উড; Image Source: mprnews.org

১২ এপ্রিল মার্কিন বিচার বিভাগ কেন্ট ফ্রিজেল কে নিয়োগ করে। সরকারের কঠোর ও অনমনীয় নীতি অনুযায়ী উন্ডেড নি এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গণমাধ্যমের প্রবেশ সাময়িক সময়ের জন্য সম্পূর্ণ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা এলাকা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। আন্দোলনকারীরাও একেবারে নিরস্ত্র ছিলো না। সুতরাং সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে।

গোলাগুলিতে ইউএস ফেডারেল মার্শাল লয়েড গুরুতর আহত হন, পরে তিনি পঙ্গু হয়ে যান। ১৭ এপ্রিল চিরোকি গোত্রের আদিবাসী ফ্র্যাংক ক্লিয়ারওয়াটার ও তার গর্ভবতী স্ত্রী নিহত হন। স্থানীয় ওগালা লাকোটা নেতা লরেন্স লেমন্ট ২৬ এপ্রিল নিহত হলে রিজার্ভেশনে শোকের ছায়া নেমে আসে। গোত্রের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা আন্দোলন সমাপ্ত করার ঘোষণা দেন। ফেডারেল সরকার ও আন্দোলনকারীরা ৫ মে উভয়পক্ষের অস্ত্র সমর্পণের ঘোষণা করে।

কেন্ট ফ্রিজেল ও রাসেল মিনস সমঝোতায় সাক্ষর করছেন
কেন্ট ফ্রিজেল ও রাসেল মিনস সমঝোতায় সাক্ষর করছেন; Image Source: newsmaven.io

ঘোষণার পরপর ওগালা লাকোটা গোষ্ঠীর সদস্যরা উন্ডেড নি ত্যাগ করতে শুরু করে। ৭১ দিন ধরে চলা আন্দোলন ও সক্রিয় অচলাবস্থা ৮ মে সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়। ফেডারেল সরকার পূর্ণাঙ্গরূপে শহরের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। সরকারি হিসেবে ওগালা লাকোটা গোষ্ঠীর দুজন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট রে রবিনসন নিখোঁজ হন।

এই আন্দোলন দেশ ও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমর্থন ও সহানুভূতি অর্জনে সক্ষম হয়। হলিউড তারকা মার্লন ব্র্যান্ডো, জেন ফন্ডা, অ্যাঞ্জেলা ডেভিস, জনি ক্যাশ ও জন উইকার এই আন্দোলনকে সরাসরি সমর্থন দেন। আদিবাসী অভিনেত্রী মেরি লুই ক্রুজ (যার আসল নাম ছিলো সাচিন লিটলফিদার) ৪৫তম অস্কার পুরষ্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আদিবাসী পোশাক পরিধান করে এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন।

This Bangla article is about the 'Wounded Knee Incident' that took place at south Dacota state in the USA in 1973. The Oglala Lakota tribe of native american people occupied the area and as a result the government administration took hard line action to take control over the city again. 

01. Armed Indians Seize Wounded Knee, Hold Hostages - New York Times

02. Wounded Knee - History

03. Occupy Wounded Knee: A 71-Day Siege and a Forgotten Civil Rights Movement - The Atlantic

04. Siege at Wounded Knee, 1973 - Libcom

 

Related Articles

Exit mobile version