১৭ ডিসেম্বর, ২০১০। তিউনিসিয়াতে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দেন বুয়াজিজি। গ্র্যাজুয়েট এই বেকারকে ভ্যান নিয়ে রাস্তার পাশে বসার জন্য দাবি করে ঘুষ, ঘুষ না পেয়ে রাস্তার পাশে ভ্যান নিয়ে বসতে দেয়নি পুলিশ। প্রতিবাদে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় বুয়াজিজি, গায়ে আগুন লাগানোর ছবি ছড়িয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। উত্তাল হয়ে ওঠে তিউনিসিয়া, শুরু হয় প্রেসিডেন্ট বেন আলির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন। আন্দোলন চলাকালে জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘাত হয় আন্দোলনকারীদের, নিহত হন এগারো আন্দোলনকারী। গণআন্দোলন আর ব্যাপক চাপের মুখে স্বৈরশাসক বেন আলির সরকারের পতন হয়, প্রেসিডেন্ট বেন আলি পালিয়ে যান সৌদি আরবে।
তিউনিসিয়ার আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় লিবিয়াতে। মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয় বেনগাজীতে। লিবিয়ার গাদ্দাফিবিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় গৃহযুদ্ধে। লিবিয়াকে সংঘাতের অসীম চক্রের মধ্যে ফেলে বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন স্বৈরশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। মিসরেও পতন ঘটে দীর্ঘ সময়ের স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের, ইয়েমেনে আলি আব্দুল্লাহ সালেহও ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিরিয়াতেও, তবে এখনও ক্ষমতায় টিকে আছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
আরব বসন্তের এক যুগেরও বেশি সময় পরে, আরব বসন্ত থেকে প্রাপ্তির খেরোখাতা মেলাচ্ছেন আরবরা, হিসাব কষছেন নিজেদের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে ফারাকের। একমাত্র তিউনিসিয়া ছাড়া আর কোথাও গণতন্ত্র আসেনি আরব বসন্তের পরে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি নির্বাচিত সরকার। বরং, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে আরবে, অর্থনৈতিকভাবেও একটি সংকটময় সময় পার করছেন আরব বসন্তে উত্তাল হওয়া মানুষেরা। গণতন্ত্রের প্রতি তাদের অনাস্থা বাড়ছে।
আরবদের গণতন্ত্রের প্রতি অনাস্থা
আরব ব্যারোমিটার হচ্ছে একটি নির্দলীয় গবেষণা নেটওয়ার্ক যেটি নাগরিকদের সামাজিক, রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক বিষয়ে মতামত নিয়ে কাজ করে, আরবের মানুষদের মূল্যবোধগুলোর সাথে জনমতের সম্পর্ক মূল্যায়ন করে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকদের তত্ত্বাবধানে চলা আরব ব্যারোমিটার ২০০৬ সাল থেকে কাজ করছে। সম্প্রতি তারা একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে গণতন্ত্রের প্রতি আরবদের অনাস্থার ব্যাপারে। নয়টি দেশের উপর পরিচালিত জনমতের উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিবিসির আরবি সংবাদ বিভাগ।
আরব ব্যারোমিটার তাদের জরিপ পরিচালনা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের উপর, ২০২১-২২ সালে পরিচালিত জরিপের সাথে তুলনামূলক একটি মূল্যায়ন দেখিয়েছে ২০১৮-১৯ সালের সাথে। জরিপের ফলাফল বলছে, আরবের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, গণতন্ত্রের অধীনে অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে, সরকারের নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার কারণে সংকটময় অবস্থায় পড়ছে অর্থনীতি। ২০১৮-১৯ সালে পরিচালিত গবেষণার তুলনায় সর্বশেষ গবেষণায় গড়ে ২৫ শতাংশ বেশি মানুষ বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রের অধীনে অর্থনীতি দুর্বল হয়।
আরবের অধিকাংশ মানুষই পছন্দ করেন শক্তিধর নেতা, যিনি একটি কর্মক্ষম সরকার উপহার দিতে পারবেন, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল করতে পারবেন। ইরাকে ৮৭ শতাংশ মানুষ, তিউনিসিয়ায় ৮১ শতাংশ মানুষ, লেবাননে ৭৩ শতাংশ ও লিবিয়াতে ৭১ শতাংশ মানুষের পছন্দ শক্তিধর নেতা; আরবের অন্যান্য দেশেও একই অবস্থা। আরবরা একটা দীর্ঘ সময় ধরে শক্তিমান নেতা দেখে অভ্যস্ত, যারা নিজেদের বিভিন্ন সময়ে ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থাপন করতে অভ্যস্ত ছিলেন। ঘটনার পরম্পরা আরবে রাজনৈতিক অবতারবাদের জন্ম দিয়েছে, যার কারণে আরবরা এখনও শক্তিমান নেতাদেরই পছন্দ করেন, যিনি প্রয়োজনে আইন ভাঙবেন।
আরব ব্যারোমিটারের জরিপে উঠে এসেছে, অন্য যেকোনো ইস্যুর চেয়ে আরবরা এখন অর্থনীতিকেই বড় ইস্যু মনে করছেন। তারা দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা কিংবা কোভিড-১৯ এর চেয়ে অর্থনীতিকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তিনজনের মধ্যে একের অধিক ব্যক্তি কেবল খাবার সংগ্রহ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। মিশর, মৌরিতানিয়া, সুদান, ইরাক, তিউনিসিয়া, লিবিয়ারর মতো দেশগুলোতে মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। খাদ্য সংকটের প্রভাব আরো গুরুতর হয়েছে বৈশ্বিক মহামারি আর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে।
অধিকাংশ মানুষই তাদের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী, আশাবাদী সংকট থেকে উত্তরণের ব্যাপারে। তবে, অধিকাংশ আরবের কাছেই শাসকের বৈধতা বড় কোনো প্রশ্ন হিসেবে আবির্ভূত হয়নি। শাসক গণতান্ত্রিক নাকি স্বৈরাচারী, সেটি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেননি। গণতন্ত্র নিয়ে তারা হতাশ, হতাশ আরব বসন্তের ফলাফল নিয়েও। অনেকেই মনে করেন, আরব বসন্ত তাদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে এসেছে।
আরব বসন্ত কি ব্যর্থ হয়েছে?
আরব বসন্ত বিপুল প্রত্যাশার জোয়ার নিয়ে এসেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, তৈরি করেছিল সাংবিধানিক রাষ্ট্রকাঠামো আর গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের আবেদন। এক যুগ পর সেই প্রত্যাশার বেশিরভাগই অপ্রাপ্তির খাতায় পড়ে আছে, অপূর্ণ রয়েছে তরুণদের গণতান্ত্রিক দেশে ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন। সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তিউনিসিয়াতেও রাজনৈতিক উত্থান-পতনের পর প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করেছেন পার্লামেন্ট, প্রতি পাঁচজন তিউনিসিয়ার নাগরিকের চারজন সমর্থন করেন প্রেসিডেন্টের এই অগণতান্ত্রিক উদ্যোগ।
মিসরে এখনও টিকে আছে গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে দেওয়া সিসির সামরিক সরকার; গৃহযুদ্ধের অন্তহীন চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়া। বাস্তবতা আমাদের মধ্যে উপলব্ধি তৈরি করতে পারে। গণতন্ত্রের জন্য আরবের এই ত্যাগ ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়েছে তাদের সুন্দর আগামীর স্বপ্ন। ব্যর্থ হয়েছে আরব বসন্ত। বাস্তবিকভাবে, আরব বসন্ত ব্যর্থ হয়নি। আরব বসন্ত হয়তো বিপুল জীবনের ত্যাগ আর অর্থনৈতিক ক্ষতির বিনিময়ে আরবদের গণতান্ত্রিক কাঠামো এনে দিতে পারেনি।
গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ প্রয়োজন
কার্যত, কোনো দেশই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ত্যাগ ছাড়া গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র পায়নি, পায়নি নাগরিক স্বাধীনতা আর রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা। ইউরোপে বর্তমানে অন্যতম শক্তিশালী দেশ ফ্রান্স, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদের পাশাপাশি আফ্রিকাসহ পৃথিবীজুড়ে এই দেশের রয়েছে বিপুল প্রভাব। ফ্রান্সের গণতান্ত্রিক যাত্রার দিকে তাকালে আমরা দেখব- প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ফরাসিরা গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, নাগরিক স্বাধীনতার প্রতি আকাঙ্ক্ষায় ফ্রান্স হয়ে উঠেছিল ইউরোপের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের আন্দোলনগুলোর কেন্দ্রস্থল।
বহু প্রাণ আর ত্যাগের বিনিময়ে সফল হয় ফরাসি বিপ্লব, ফরাসি রাজতন্ত্রের পতন ঘটে প্রতিষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক শাসন। প্রথম রিপাবলিক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই শাসনতন্ত্র ছিল রাজনৈতিক সংকট আর হত্যায় পরিপূর্ণ। সেই সাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠার অল্পদিনের মধ্যেই উত্থান ঘটে নেপোলিয়ান বেনোপার্টের, তৈরি করেন প্রথম ফরাসি রাজতন্ত্র। ইংল্যান্ডের সাথে নেপোলিয়নের পরাজয়ের পরে পতন ঘটে প্রথম ফরাসি রাজতন্ত্রের, প্রতিষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় রিপাবলিক।
দ্বিতীয় রিপাবলিকেও ছিল রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর অস্থিতিশীলতা। ১৮৪৮ সালে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক শ্রেণী আর বুর্জোয়ারা মিলে বসন্ত নিয়ে আসে ইউরোপে, ইউরোপীয় বসন্তের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে ফ্রান্সের প্যারিস। এর মধ্যে উত্থান ঘটে নেপোলিয়নের ভাতিজার, যিনি প্রতিষ্ঠা করেন দ্বিতীয় ফরাসি রাজতন্ত্রের। সেখান থেকে আবার গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ফিরতে ফরাসিদের সময় লাগে দুই দশক, প্রতিষ্ঠিত হয় তৃতীয় রিপাবলিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠিত হয় চতুর্থ রিপাবলিক।
দুই রিপাবলিকেই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব ছিল, ঘন ঘন ঘটেছে সরকারের পরিবর্তন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে, ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে ফ্রান্সে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন ১৮ জন, একজন ক্ষমতায় টিকেছেন গড়ে মাত্র ৯ মাস সময়। বর্তমানে ফ্রান্সে পঞ্চম রিপাবলিক রয়েছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট ক্ষমতার বিভাজন রয়েছে। এর মধ্যেও ফরাসিরা ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে অসন্তুষ্ট, অসন্তুষ্ট ক্ষমতা কাঠামো নিয়ে। রাজনৈতিক কর্মীদের একাংশ এখন আন্দোলন করছেন ষষ্ঠ রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা নিয়ে।
একই ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিটি গণতান্ত্রিক দেশই গেছে। আরবদেরও একই ধরনের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, প্রতিনিয়ত ত্যাগ স্বীকার করতে হবে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য। আরব বসন্ত কয়েক মাসের মধ্যে কয়েক হাজার বছরের রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে চিরস্থায়ী গণতন্ত্র নিয়ে আসবে, এমনটা আরব বসন্তের শুরুতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও প্রত্যাশা করেননি। আরবদের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য আরো আরব বসন্ত তৈরি করতে হবে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্ন
আরবদের ধারণা, একজন শক্তিমান নেতা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হবেন, সক্ষম হবেন অর্থনৈতিক দূরবস্থার সমাপ্তি টানতে। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ সবসময় অর্থনৈতিক অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভালো অর্থনীতি শাসকগোষ্ঠীকে বৈধতা দেয়, সংকটে পড়ে অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে। আবার, অর্থনীতিও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে প্রভাবিত হয়, কারণ আইন তৈরির মাধ্যমে নীতিগত সিদ্ধান্ত রাজনীতিবিদেরাই নেন। রাজনীতি আর অর্থনীতির মধ্যে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরও শাসনব্যবস্থা আর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে সরাসরি কোনো সম্পর্ক গবেষকরা তৈরি করতে পারেননি। অর্থাৎ, একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনেও হতে পারে, একইভাবে হতে পারে স্বৈরশাসকের অধীনেও।
তবে, দুই শাসনব্যবস্থার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পার্থক্য আছে। স্বৈরশাসকের অধীনে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয় একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে, বিজনেস এলিটদের সুবিধাকে বিবেচনা করে। স্বৈরশাসকেরা একটি স্থিতিশীল ভিত্তি নিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তৈরি করার চেয়ে প্রাধান্য দেন চক্ষুশীতলকারী প্রবৃদ্ধির দিকে। গণতান্ত্রিক শাসকেরাও ভোটের রাজনীতির জন্য একই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, তৈরি করতে পারেন অপ্রয়োজনীয় বড় বড় অবকাঠামো। তবে, গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নাগরিক স্বাধীনতা আর রাজনৈতিক অধিকার থাকে বলে একটি উদ্যোক্তাসহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারলে অর্থনীতির ভিত্তি আপনাআপনিই তৈরি হয়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদে স্বৈরশাসকদের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অভিজাত শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল হওয়া, কতিপয় স্বার্থগোষ্ঠীকে ক্রমাগত সুবিধা দিতে গিয়ে স্বৈরশাসকেরা একসময় নিজেদের পতন ডেকে আনেন। স্বৈরশাসকের পতনের পর চারটি সম্ভাব্য ফলাফল আসে। নতুন স্বৈরশাসক, দুর্ভিক্ষ, গৃহযুদ্ধ অথবা দুর্বল গণতন্ত্র। স্বৈরশাসকদের পতনের পর আরবে যে গৃহযুদ্ধ চলছে, দুর্ভিক্ষের অবস্থা তৈরি হয়েছে, এটি কোনো ব্যতিক্রমী ফলাফল নয়। এজন্য দায়ী শক্তিমান স্বৈরশাসকেরাই, আর সেসব শাসককে বৈধতা দেওয়ার শাস্তি নাগরিকেরা পাচ্ছেন অর্থনৈতিক সংকটের মাধ্যমে। গৃহযুদ্ধের কারণে কয়েক দশক পিছিয়েছে আরবের অর্থনীতিগুলো, দুর্ভিক্ষ এনে দাঁড় করিয়েছে একটি মানবিক সংকটের সামনে।
ফলে, আরবদের এখন সংকটের সমাধান হিসেবে আবার শক্তিমান স্বৈরশাসক খোঁজা তাদেরকে অন্তহীন একটি চক্রেই প্রবেশ করাবে। যেখানে স্বৈরশাসকের উত্থান ঘটবে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হবে, স্বৈরশাসকের পতনের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে সেই অর্থনীতি ধসে যাবে। আবার উত্থান ঘটবে নতুন স্বৈরশাসকের।
পড়তে পারেন: স্বৈরশাসকের পতনের পর রাষ্ট্রের পরিণতি কী হয়?
ক্ষমতার ভারসাম্য আর বিকেন্দ্রীকরণের নীতি থাকায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা একটি দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে যাওয়া থেকে কার্যকরভাবে আটকাতে পারে সংলাপের সংস্কৃতি থাকায়। সংলাপের মাধ্যমেই স্বার্থের সংঘাত সমাধান করতে পারে রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো, বিভিন্ন ইস্যুতে প্রয়োজনে পৌঁছাতে পারে ঐক্যমতে। সশস্ত্র সংঘাতের পথ বেছে নেওয়ার প্রয়োজন তাদের পড়ে না।
মোটাদাগে, আরব বসন্ত ব্যর্থ হয়নি। বিপ্লবের অংশ হওয়া তরুণ-তরুণীদের সকল প্রত্যাশা হয়তো আরব বসন্ত পূরণ করতে পারেনি, নিয়ে আসতে পারেনি কার্যকর শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন, কিন্তু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো আমাদের বলছে, শাসনতান্ত্রিক বিবর্তন ধীরে ধীরেই ঘটে, বিবর্তনের সাথে জড়িয়ে থাকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর সচেতনতার প্রশ্ন।