শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উত্তরসূরি হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেন ২০১৭ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অনেকগুলো প্রচলিত সমীকরণকে বদলে দিয়েই প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগের প্রেসিডেন্টদের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার সদস্য ছিলেন না, তার ছিল না সামরিক বাহিনীতে কাজ করার অভিজ্ঞতাও। বেশ কয়েকবার দল পরিবর্তন করে শেষদিকে এসে রিপাবলিকান পার্টিতে থিতু হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছিল না আগের কোন প্রেসিডেন্টের কেবিনেটে কাজ করার অভিজ্ঞতাও।
প্রথাগত রাজনৈতিক কাঠামোর বাইরে থেকে উঠে আসা এই ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্পেইনের শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন তার বিতর্কিত মন্তব্যগুলোর জন্য। খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন শো-ম্যান হিসেবেও। ‘আউটসাইডার’ এই প্রেসিডেন্ট অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কাঠামোর পাশাপাশি বদলে দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকেও। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পলিসিতে জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছিলেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকেও।
জনতুষ্টিবাদী এই রাজনীতিবিদ দ্বিতীয় মেয়াদে আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেননি, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরেছেন ওবামা আমলের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত আন্তর্জাতিক রাজনীতির কাঠামোর অন্যতম সমর্থক জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছেন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে। দায়িত্ব নিয়েই জো বাইডেন ট্রাম্প আমলের এলোমেলো আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সাথে তৈরি হওয়া নীতিগত দূরত্ব কমিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
আন্তর্জাতিক মিত্রদের সাথে সম্পর্কোন্নয়ের পাশাপাশি জো বাইডেন চেষ্টা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু দেশের উপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে। ইরানের সাথে জো বাইডেন সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া আর ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে এখন পর্যন্ত বড় কোনো হস্তক্ষেপ করেননি জো বাইডেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে এনেছেন প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে, যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাতেও।
এসবের পাশাপাশি বাইডেন প্রশাসনের সামনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে চলমান মহামারি থেকে পৃথিবীকে বের করে আনায় নেতৃত্ব দেওয়া, বৈশ্বিক ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেওয়া। তবে, সবকিছুকে ছাপিয়ে, বাইডেন প্রশাসনের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে, চীনকে মোকাবেলা করে এশিয়াতে নিজের প্রভাব বজায় রাখা, পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান ঠেকানো।
বাইডেনের প্রশাসনের এশিয়া পলিসি
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কেবিনেট পরিচিত ছিল ‘টিম অব রাইভেলস’ নামে। ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে লড়া জো বাইডেনের পাশাপাশি ওবামার কেবিনেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ছিলেন হিলারি ক্লিনটন, যিনি ২০০৮ সালের ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে বারাক ওবামার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। হিলারি ক্লিনটনের পরবর্তীতে সেক্রেটারি অব স্টেটের দায়িত্ব পালন করা জন কেরিও ছিলেন হেভিওয়েট ডেমোক্রেটিক নেতা, ২০০৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জর্জ ডব্লিউ বুশের বিপরীতে ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
ওবামার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কেবিনেট ছিল অনেকটা ‘টিম অব আউটসাইডারের’ মতো। ট্রাম্পের আমলে গুরত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তার মেয়ে ইভাংকা ট্রাম্প, মধ্যপ্রাচ্যের মতো অস্থিতিশীল জায়গায় ট্রাম্পের পলিসি বাস্তবায়ন করেছেন তার জামাতা জ্যারেড কুশনার। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো এদের কারোরই প্রথাগত রাজনীতির অভিজ্ঞতা খুব একটা সমৃদ্ধ নয়।
পূর্বসূরিদের তুলনায় জো বাইডেনের প্রচেষ্টা ছিল, নিজের অনুগত আর পছন্দের প্রার্থীদের দিয়ে কেবিনেট গঠন করার। বাইডেনের কেবিনেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ছেন টনি ব্লিনকেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন জ্যাক স্যুলিভান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে জো বাইডেন নিয়োগ দিয়েছেন কলিন কালকে। বাইডেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এদের সবাই দায়িত্ব পালন করেছেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া লয়েড অস্টিন ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সময় কাজ করেছেন বাইডেনের সাথে। কেবিনেটের সদস্যদের সাথে বাইডেনের পূর্বের কাজ করার অভিজ্ঞতা প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াবে, বাইডেনের জন্য সহজ হবে ট্রাম্পের আমলের এলোমেলো পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে।
আফগানিস্তান সংকট
নাইন-ইলেভেনের পরে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধে জড়িয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র, যার শুরুটা হয় আফগানিস্তানে। গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচের এই যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৩,৫৬২ জন আমেরিকান সৈন্য, গুরুতর আহত হয়েছে আরো প্রায় পনের হাজারের মতো সেনা। আফগানিস্তান সামরিক বাহিনীর পয়ষট্টি হাজার যোদ্ধার পাশাপাশি এই যুদ্ধে নিহত হয়েছে প্রায় বাহাত্তর হাজার তালেবান সৈন্য। দুই দশকের এই যুদ্ধ সীমাহীন দূর্ভোগ নিয়ে এসেছে আফগানদের জন্য, হতাহতের পাশাপাশি হয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষতিও।
এতকিছুর পরেও, আফগানিস্তানে তালেবানদের হারানো সম্ভব হয়নি, সম্ভব হয়নি আফগানিস্তানের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার। বরং, শহরগুলোর বাইরে বিকল্প সরকার ব্যবস্থা চালায় তালেবানরা, তাদের রয়েছে নিজস্ব শাসনতান্ত্রিক কাঠামো।
বাইডেনের পূর্বসূরি আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে তালেবানদের সাথে চুক্তি করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসন পূর্বসূরির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তেই বহাল আছেন, ঘোষণা দিয়েছেন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের।
তবে, সৈন্য প্রত্যাহারের পরও বাইডেনকে কিছু মৌলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে আফগানিস্তান ইস্যুতে। আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে যাবে আমেরিকান সৈন্যরা ছেড়ে চলে যাবার পরে? ভূরাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের সরকার পরিবর্তন যদি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়, বাইডেন প্রশাসন সেটা কীভাবে মোকাবেল করবে? তৃতীয়ত, আফগানিস্তান যে আবারো সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে না, তার নিশ্চয়তা কি?
মোহাম্মদ বিন সালমানের ভবিষ্যৎ ও মধ্যপ্রাচ্য
সৌদি রাজপরিবারের অনেকগুলো প্রথা ভেঙে শাসনকাঠামোর শীর্ষে আরোহণ ঘটে বর্তমানের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের। ক্ষমতায় উত্থানের পর থেকেই একের পর এক বিতর্কের জড়িয়েছেন তিনি, আলোচনা সমালোচনায় হয়েছেন বৈশ্বিক সংবাদমধ্যমগুলোর শিরোনাম। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মোহাম্মদ বিন সালমান একদিকে যেমন সেক্যুলারদের দমন করেছেন, দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল অংশের সাথেও। একদিকে সংস্কারপন্থীদের উপর নিপীড়ন চালিয়েছেন, আবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন প্রথাগত সৌদি আরবের রাজনীতির কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকগুলোর সাথেও। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জামাল খাসোগজির হত্যা এখনো নৈতিকতার সংকটে রেখেছে মোহাম্মদ বিন সালমানকে। ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য দায়ী করা হয় মোহাম্মদ বিন সালমানকে, তার বেপরোয়া রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্যকে আরো অস্থিতিশীল করছে।
সৌদি আরবকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আধিপত্যবাদী রাজনীতি। ফলে, জামাল খাসোগজি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে এর নির্দেশদাতা মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার একটা চাপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নৈতিক দিক থেকে ছিলো, চাপ ছিলো মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও। ট্রাম্প সেই চাপকে অগ্রাহ্য করেছেন। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের সামনে আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন বাস্তবতায় এই চাপকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
ফলে, বাইডেন প্রশাসনকে সম্ভবত ক্রাউন প্রিন্স পদে মোহাম্মদ বিন সালমানের পরিবর্তে অন্য কাউকে নিয়ে আসতে হতে পারে। সেটা সাবেক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ হতে পারেন, হতে পারেন সৌদি রাজপরিবারের দশ হাজার যুবরাজের অন্য যে কেউ।
সৌদি আরবকে কেন্দ্র করেই বরাবরের মতো আবর্তিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যনীতি। ইরানকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র সৌদি-আমিরাত-ইসরায়েল বলয়কে ব্যবহার করবে, রুখতে চাইবে মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব। তবে, সৌদি আরবের সাথে তুরস্কের কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়লে তা নতুন চ্যালেঞ্জ হতে পারে বাইডেন প্রশাসনের জন্য।
চীনকে মোকাবেলায় চতুর্দেশীয় নিরাপত্তা সংলাপ (কোয়াড)
২০০৭ সালে কোয়াডের যাত্রা শুরু হলেও, সেসময় অস্ট্রেলিয়ার রক্ষণশীল রাজনীতিতে এই কাঠামোটি আলোর মুখ দেখেছিল, নিরপেক্ষ থাকার রক্ষণশীলতা ছিল ভারতের মধ্যেও। এই অবস্থা থেকে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন করে শুরু হয়েছে কোয়াডের যাত্রা। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাণিজ্য অবরোধ নিয়ে দূরত্ব তৈরি হয়েছে চীনের, লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোলের বিভিন্ন ফ্রন্টে চীনের সংঘাত হচ্ছে ভারতের সাথেও। কোয়াডের চতুর্থ সদস্য জাপানের সাথে ঐতিহাসিক শত্রুতা রয়েছে চীনের, রয়েছে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব।
গত শতাব্দীতে রাশিয়ার সাথে অর্ধশতাব্দী ব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধ চালানো যুক্তরাষ্ট্রকে এই শতাব্দীতে এসে নতুন একটি স্নায়ুযুদ্ধের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু, বিংশ শতাব্দীর যে স্নায়ুযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র জিতেছিল, বর্তমান পরিস্থিতি তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রযুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিচ্ছে চীন, উদ্ভাবনেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে চীন। অর্থনৈতিকভাবেও, যুক্তরাষ্ট্রকে দ্রুত ছাড়িয়ে যাবে চীন। এ অবস্থায়, নতুন স্নায়ুযুদ্ধে চীনকে টেক্কা দিতে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে সমমনাদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতে। কোয়াডের কাঠামোকে পুনরায় সক্রিয় করার মৌলিক ভিত্তি এটাই।
তাইওয়ান সংকট
সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সামরিক দক্ষতা দ্রুত বাড়ছে, অর্থনৈতিক উদ্বৃত অংশটাকে ব্যবহার করছে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে। সামরিক বাহিনীর এই আধুনিকায়নের ফলাফল হিসেবে সংঘাত তৈরি হয়েছে ভারতের সাথে, হংকংয়ে বেড়েছে চীনের সামরিক উপস্থিতি, চীনের আগ্রাসনের মুখে পড়েছে তাইওয়ানও। এই বাস্তবতায় চীনকে মোকাবেলায় বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক আর সামরিক সহায়তা দিয়েছেন তাইওয়ানকে। ফলে, প্রায় ৫৩ শতাংশ তাইওয়ানিজ ডোনাল্ড ট্রাম্পের তাইওয়ান পলিসিকে সমর্থন করেছিল, অসন্তুষ্ট ছিল ৩১ শতাংশ তাইওয়ানিজ। অবশ্য, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সমানভাবেই যোগাযোগ রক্ষা করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টি আর রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধিদের সাথে।
আগামী দিনগুলোতে বাইডেনের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে তাইওয়ানের স্বাধীনতা রক্ষা করা, তাইওয়ানকে চীনের অধিগ্রহণ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক পদক্ষেপের দিকে যেতে হতে পারে, অঞ্চলটিতে বাড়াতে হতে পারে সামরিক উপস্থিতি।
কর্তৃত্ববাদী শাসকদের নিয়ন্ত্রণ
এশিয়ার দেশগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে কর্তৃত্ববাদী শাসকদের উত্থান ঘটছে, উত্থান ঘটছে জনতুষ্টিবাদী শাসকদেরও। কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিগুলোর অপব্যবহার করেন, সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে রাজনীতি করেন, নিশ্চিহ্ন করে দিতে চান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের। কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে মোটাদাগে অভিযোগ উঠছে নাগরিক অধিকার হরনের, বিরুদ্ধ মতকে চূড়ান্তভাবে দমনের, সিভিল সোসাইটির কন্ঠস্বরকে রুখে দেওয়ার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে হরণ করার।
এই কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা নিজেদের শাসনের বৈধতা অর্জনের জন্য বা নাগরিকদের মনোযোগ সরিয়ে রাখার জন্য উন্নয়নের গল্প ফাঁদেন। উন্নয়নের গল্প তৈরির জন্য অর্থনৈতিক সামর্থ্য প্রয়োজন। কর্তৃত্ববাদী এই শাসকদের অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে ঋণ নিয়ে হাজির হয় চীন, বিনিময়ে চায় রাজনৈতিক আনুগত্য। ফলে, মোটাদাগে, কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা চীনের রাজনৈতিক ব্লকে ঢুঁকে যায়।
এশিয়াতে চীনের প্রভাব যদি বাইডেন প্রশাসন ঠেকাতে চায়, তাহলে এই কর্তৃত্ববাদী শাসকদের জবাবদিহিতার আনার ব্যবস্থা করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে, জোর দিতে হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোর উপর। এসব দেশের নাগরিকেরা যে উন্নয়নের জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো বিসর্জন দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করেছে, সেখান থেকেও নাগরিকদের বের করে আনতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।