পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইউরোপের সাথে আফ্রিকার যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার সাথে সাথেই দুই মহাদেশের মধ্যে শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য, শুরু হয় সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান। সময়ের সাথে দাস ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে ইউরোপীয়রা, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে স্থাপন করে উপনিবেশ। পুরো সময় জুড়ে ইউরোপ থেকে বিভিন্ন কারণে মানুষ আফ্রিকায় এসেছে, আফ্রিকা ইউরোপীয়দের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছে এর সম্পদ আর কাঁচামালের ভাণ্ডারের জন্য। তবে শুরুর দিকে ইউরোপীয়দের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতেই, ম্যালেরিয়াতে মৃত্যুর ভয়ে ভূখণ্ডের খুব বেশি ভেতরের দিকে যায়নি ইউরোপীয়রা।
সম্পদের প্রাচুর্য আর বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় আফ্রিকায় আসা ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর পরোক্ষ উপনিবেশের অধীনে ছিল প্রায় চার শতক, প্রত্যক্ষ উপনিবেশ ছিল গড়ে প্রায় সাত দশক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে স্বাধীনতা অর্জন করে আফ্রিকার দেশগুলো।
আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের বিভিন্ন পর্যায়
আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশবাদকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় তিন দশক আফ্রিকাতে পরোক্ষ উপনিবেশবাদ চলে ইউরোপীয় দেশগুলোর। এ পর্যায়ে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আফ্রিকানদের বন্দী করে জোরপূর্বক দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয় উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা আর ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে, বিভিন্ন পণ্য কম দামে আফ্রিকা থেকে কিনে নিয়ে বিক্রি করতে থাকে ইউরোপের বাজারে, ইউরোপের বণিকদের নজর পড়ে আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদের দিকেও। মোটামুটি আফ্রিকায় আগমনের পর থেকে ১৮৮০ সালের ঘটনাপ্রবাহ পর্যন্ত সময়কে প্রথম পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলো জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে সাম্রাজ্যে বিস্তারের নেশায় সরাসরি উপনিবেশ স্থাপন করতে থাকে আফ্রিকাতে, নিতে শুরু করে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। জার্মানির বিসমার্ক আর ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জুলিফেরির আগ্রহে হওয়া বার্লিন সম্মেলনে আফ্রিকা ভাগ হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর মধ্যে। এ পর্ব চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি পর্যন্ত। সরাসরি উপনিবেশ স্থাপনের সময়টাতে নির্বিচারে আফ্রিকানদের হত্যা করে ইউরোপীয় শক্তিগুলো। তাদের কাছ থেকে ভূমি কেড়ে নিয়ে নিজেদের কাজে ব্যবহার শুরু করে, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন করে সেগুলো পাচার করে দিতে থাকে মূলভূমিতে। এ সময় বহু আফ্রিকান রাজনৈতিক হত্যার শিকার হন ইউরোপীয়দের হাতে।
তৃতীয় পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির পর থেকে দেশগুলোর স্বাধীনতা অর্জনের সময় পর্যন্ত। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত আফ্রিকানদের একটি অংশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দাবি জানাতে থাকে উপনিবেশ শাসন থেকে সমাপ্তির, নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার নিজেদের হাতে পাওয়ার। এ অংশের দাবিগুলো জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয়তা পেলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো উপনিবেশ টিকিয়ে রাখতে স্বশাসনের অধিকার দিতে শুরু করে আফ্রিকানদের, উন্মুক্ত করে দেয় রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ।
আফ্রিকা মহাদেশের বিউপনিবেশায়ন
মানবসভ্যতার অন্যতম ধ্বংসাত্মক আর বিস্তৃত যুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আর বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে তৈরি হওয়া মূল্যবোধ স্থায়ীভাবে বদলে দেয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে। জাতিসংঘের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরির সাথে সাথে স্বীকৃতি আসে বিশ্বজনীন মানবাধিকার আর রাজনৈতিক অধিকারের। সাম্রাজ্যবাদের যুগ থেকে পৃথিবী প্রবেশ করে জাতিরাষ্ট্রের যুগে, স্বাধীনতা অর্জন করে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের উপনিবেশগুলো।
ভারতীয় উপমহাদেশ বিশ্বযুদ্ধের পরপরই স্বাধীনতা অর্জন করলেও আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন আর সংগ্রাম করতে হয় আরো বছর দশেক থেকে কয়েক দশক পর্যন্ত। আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছিল বেশ কিছু রাজনৈতিক আর সাংস্কৃতিক নিয়ামক; কিছু নিয়ামকের ফলে স্বাধীনতার প্রক্রিয়া হয়েছিল ত্বরান্বিত।
জাতীয়তাবাদের উত্থান
আফ্রিকা মহাদেশের সামাজিক কাঠামো মোটাদাগে গোষ্ঠীকেন্দ্রিক। দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রব্যবস্থাও আবর্তিত হয়েছে গোষ্ঠী আর গোষ্ঠীস্বার্থকে কেন্দ্র করে। গোষ্ঠীবদ্ধ কাঠামোতে আফ্রিকার নাগরিকেরা সভ্যতার সাথে এগিয়েছে, গোষ্ঠী কাঠামোতেই ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধ করেছে আফ্রিকানরা। ভাষা, অঞ্চল আর ধর্মকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছে গোষ্ঠীগুলো, তৈরি হয়েছে নৃতাত্ত্বিক পরিচয়। চার হাজার ভাষা আর পাঁচশোর বেশি ধর্মের সম্মিলন ঘটেছে আফ্রিকা মহাদেশে। ফলে, আফ্রিকা মহাদেশের মানুষদের মধ্যে ছিল ভাষাকেন্দ্রিক বিভাজন, ধর্মকেন্দ্রিক বিভাজনের সাথে ছিল অঞ্চলভিত্তিক স্বার্থের দ্বন্দ্বও।
এসব বিভাজনকে সাথে নিয়েও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে, জাতীয়তাবাদীরা সম্মিলিত চেষ্টা শুরু করে আফ্রিকা মহাদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর শাসনের অবসান ঘটাতে। এ উত্থান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ইউরোপের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর উপনিবেশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের।
আটলান্টিক চার্টার
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একত্র হন মিত্রশক্তির দুই প্রধান শক্তির রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বের মূল্যবোধ আর কাঠামোর আলোচনায় তারা একমত হন, উপনিবেশ শাসনের অধীনে থাকা রাষ্ট্রগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের ব্যাপারে, যা পরিচিতি পায় আটলান্টিক চার্টার হিসেবে। এ আলোচনার উপর দুই দেশের মধ্যে চুক্তি না হলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের ব্যাপারে চাপ দিতে থাকে যুক্তরাজ্যকে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ভূমিকা উৎসাহিত করে আফ্রিকান জাতীয়তাবাদীদের, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল গোষ্ঠী তৈরি হয়। ফলে, স্বাধীনতার দাবি জোরদার হয় আফ্রিকানদের, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকেও স্বাধীনতা দিতে হয় উপনিবেশগুলোকে।
রাজনৈতিক দল তৈরি
সাধারণত রাজনৈতিক কাঠামোতে একই ধর্ম, ভাষা, অঞ্চল বা আদর্শের মানুষেরা একত্র হয়ে রাজনৈতিক দল তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে এই দলগুলো তাদের নাগরিক অধিকার চর্চার সুযোগ তৈরি করে দেয়, সুযোগ করে দেয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে, সুযোগ করে দেয় নিজেদের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে। উপনিবেশ শাসনের অধীনে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দল তৈরির প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে আগে শুরু হয় নাইজেরিয়াতে। ১৯৪০ সালে সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় নর্দার্ন পিপলস কংগ্রেস, পরের বছর প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর নাইজেরিয়ান কংগ্রেস।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আফ্রিকার দেশগুলোতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো যখন স্বশাসন চালুর চেষ্টা করে, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গড়ে ওঠে অনেকগুলো স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দল। আলজেরিয়াতে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মুভমেন্ট ফর দ্য ট্রায়াম্ফ অভ ডেমোক্রেটিক লিবার্টিজ (এমটিএলএফ), পরের বছর ঘানাতে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনাইটেড গোল্ড কোস্ট কনভেনশন নামক রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল তৈরির এ প্রক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে সেনেগাল, ক্যামেরুন, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, কেনিয়া, উগান্ডার মতো ঔপনিবেশিক দেশগুলোতেও। এই দলগুলো জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করে, স্বাধীনতার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে, স্বাধীনতার জন্য সামষ্টিক চাপ প্রয়োগ করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর উপর।
উপনিবেশ শাসন থেকে মুক্তির সাধারণ আকাঙ্ক্ষা
বহু মত আর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বিভাজনে থাকা আফ্রিকার মানুষেরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একটি সাধারণ আকাঙ্ক্ষায় একত্র হয়- উপনিবেশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীনতা অর্জন। ধর্ম, ভাষা, নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের উর্ধ্বে আফ্রিকার সব মানুষই ইউরোপীয়ানদের শোষণের শিকার হয়, অনেকে ইউরোপীয়দের কাছে হারায় ভূমি আর বাসস্থান। আফ্রিকানদের দাসত্বে বাধ্য করেছিল ইউরোপীয়রাই, কেড়ে নিয়েছিল মানুষ হিসেবে পাওয়া প্রাকৃতিক অধিকারগুলো। এই সামষ্টিক ক্ষোভ এক করে দেয় আফ্রিকানদের, সামষ্টিক সংগ্রামে ইউরোপীয়রা বাধ্য হয় উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা দিতে।
ইউরোপীয়রা কি স্বেচ্ছায় স্বাধীনতা দিয়েছিল?
আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর স্বাধীনতা অর্জনের ঘটনাপ্রবাহকে ‘বিউপনিবেশায়ন’ শব্দ দ্বারাই ব্যাখ্যা করা হয় আন্তর্জাতিক রাজনীতি সংক্রান্ত লেখাগুলোতে। শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আফ্রিকার এই স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়াকে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ‘স্বেচ্ছাসেবামূলক’ কাজ হিসেবে দেখানোর একটি প্রবণতা আছে। বাস্তবিকভাবে, আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোর স্বাধীনতা অর্জনের প্রক্রিয়া কখনোই ইউরোপীয় দেশগুলোর ইচ্ছায় হয়নি।
প্রথমত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো অর্থনৈতিকভাবে সংকোচনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, বিপুল সামরিক ব্যয় হ্রাস করেছিল সাধারণ নাগরিকদের জীবনমান। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন, ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপের শিল্পকাঠামো। ফলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন ছিল দ্রুত অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক করার। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর জন্য আফ্রিকান উপনিবেশগুলো এর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারত। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ হাউজ অভ কমন্সে তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ. ভি. আলেকজেন্ডার বলেন,
“আমাদের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের জন্য আমাদের অধীনে থাকা বিদেশি সম্পদগুলোর পূর্ণ ব্যবহার প্রয়োজন। ঔপনিবেশিক সম্পদগুলোর ব্যবহার ছাড়া দেশের অভ্যন্তরের জীবনমানে কোনো বড় উন্নতি করা সম্ভব নয়”।
অর্থাৎ, অর্থনৈতিকভাবে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো স্বেচ্ছায় আফ্রিকানদের স্বাধীনতা দেওয়ার কোনো কারণ ছিল না।
দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ হাজির হয় পশ্চিমা শক্তিগুলোর সামনে। মতাদর্শ হিসেবে গণতন্ত্রের বিপরীতে লড়াইয়ে নামে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিজম। মতাদর্শ হিসেবে কমিনিজম বিস্তারের জন্য আফ্রিকা মহাদেশ হতে পারত আদর্শ জায়গা, যা বদলে দিতে পারত আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণ, বাধাগ্রস্ত করত মুক্তবাণিজ্যের বিকাশ। ফলে, পশ্চিমাদের লক্ষ্যই ছিল, আফ্রিকাতে কমিউনিজমের বিকাশ যেকোনোভাবে আটকানো। অর্থাৎ, রাজনৈতিকভাবেও স্বেচ্ছায় আফ্রিকা মহাদেশকে স্বাধীনতা দেওয়ার কোনো কারণ নেই ইউরোপীয় দেশগুলোর।
দীর্ঘ রাজনৈতিক আন্দোলন আর সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে আফ্রিকার দেশগুলো স্বাধীনতা অর্জন করলেও এখনো আফ্রিকাতে চলছে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর পরোক্ষ উপনিবেশবাদ, চলছে শোষণ। আফ্রিকার ১৪টি দেশের মুদ্রা ছাপা হয় ফ্রান্সের টাকশালে, বৈদেশিক মুদ্রার ৮৫ শতাংশ জমা রাখতে হয় ফ্রান্সের কাছে, ভাড়া দিতে হয় উপনিবেশ আমলের নির্মিত অবকাঠামোগুলোর জন্য। আফ্রিকায় উৎপাদিত তেল আর অন্যান্য খনিজের সিংহভাগ লভ্যাংশই যায় ইউরোপীয় পুঁজিপতিদের হাতে, শান্তিরক্ষী মিশনগুলো অংশ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের এ শোষণে, বিভিন্নভাবে জিইয়ে রাখছে ক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত আর সহিংসতা।
পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোকে, আরো কয়েক প্রজন্মকে রাজনৈতিক প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে তরুণ প্রজন্মকে।