বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইউরোপ ও জার্মান ফুটবলের অবিসংবাদিত ও জনপ্রিয় ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্যতম। জার্মানি ছাড়াও সারাবিশ্বে ক্লাবটির রয়েছে অগুনতি ভক্ত সমর্থক। ডর্টমুন্ডের বিপুল জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে মাঠে ও মাঠের বাইরে ক্লাবটির হার না মানা মানসিকতা এবং একদল নিঃস্বার্থ সমর্থকদের ত্যাগ ও সমর্থনের অনন্য দৃষ্টান্ত। মাত্র ৫টি বুন্দেসলিগা, ৪টি ডিএফবি কাপ ও ১টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার ক্লাবটির রয়েছে উত্থান-পতনের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য যা পূর্ণতা পেয়েছে মূলত তাদের সমর্থকদের অকুণ্ঠ ভালোবাসার মধ্য দিয়েই। প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া, স্টেডিয়ামে ইউরোপের সবচেয়ে বেশি দর্শক উপস্থিতি, টিকেটের অপেক্ষাকৃত কম দাম, তরুণ তারকাদের আঁতুড়ঘর এবং ‘সত্যিকার ভালোবাসার’ চেয়েও বেশি কিছু ধারণ করা ক্লাবটির ভক্ত হয়ত আপনিও। যদি তা না-ও হয়ে থাকেন, ডর্টমুন্ড সম্বন্ধে জেনে নিন কিছু তথ্য। এরপর হয়তো আপনিও হয়ে যেতে পারেন নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার এই ক্লাবটির ভক্ত।
অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের বিস্ময়কর আখ্যান
বরুশিয়া ডর্টমুন্ড তাদের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয় করে ১৯৯৭ সালে। বুন্দেসলিগাতে, তথা গোটা ইউরোপেই একটি শক্তিশালী ক্লাব হিসেবে তাদের উত্থানের তখন সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তখন কি কেউ জানতো যে, মাত্র সাত বছরের মাথায় ক্লাবটির অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়তে যাচ্ছে? উত্থানের পিছনের গল্পের সূচনাই যে পতনের উপসংহার টেনে দিতে পারে, তার অন্যতম উদাহরণ ছিল ২০০৩-০৪ মৌসুম নাগাদ ডর্টমুন্ডের প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা।
নব্বই দশকের শুরু থেকেই ডর্টমুন্ড নিতে থাকে উচ্চাভিলাষী ও ব্যয়বহুল সব প্রকল্প। তখন তাদের লক্ষ্য ছিল বুন্দেসলিগায় নিজেদের এতটা শক্তিশালী করে গড়ে তোলা, যেন তারা বায়ার্ন মিউনিখের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে তারা বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে থাকে এবং ১৯৯৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ের পর খেলোয়াড়দের বেতনের চাহিদাও বেড়ে যায়। তাদের চূড়ান্ত পরিণতির সবচেয়ে বিপদজনক ঘণ্টা বেজে উঠে ২০০৪ সালের দিকে, যখন তারা ঠিকমতো খেলোয়াড়দের বেতনও দিতে পারছিলো না। ডর্টমুন্ডকে তখন বিপদের হাত থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বায়ার্ন মিউনিখ। ক্লাবটিকে বিনা সুদে ২ মিলিয়ন ইউরো ঋণ দেয় বায়ার্ন। ডর্টমুন্ড সাময়িকভাবে ধাক্কা সামাল দিতে পারলেও, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে ২০০৫ সালে এবং ডর্টমুন্ড তখন ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ঋণের বোঝা ঘাড়ে নিয়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করা থেকে খুব বেশি দূরে নয়।
ডর্টমুন্ডের ভাগ্য নির্ধারণের দিনক্ষণ ঠিক করা হয় ২০০৫ সালের ১৪ই মার্চ, ডুসলডফ বিমানবন্দরের একটি অট্টালিকায় তখন ৪৪৪ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সামনে ডর্টমুন্ডের একজন প্রতিনিধি। বিনিয়োগ তহবিলের মাধ্যমে এই বিনিয়োগকারীদেরকে বলা হয় ক্লাবটিকে অর্থ ঋণ দিতে। কিন্তু এই ঋণ পরিশোধ করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ তখন কোনও নির্দিষ্ট চুক্তিতে আসতে পারবে না, কারণ ক্লাবটির কোষাগারে তখন এক কানাকড়িও নেই! সবকিছুর সাথে ডর্টমুন্ডের এই ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থকদের এটাও জানিয়ে দেয়া হয় যে, তারা যদি ‘না’ ভোট দেয় তাহলে ক্লাবটি প্রায় সাথে সাথে দেউলিয়া হয়ে যাবে। আরও ছয় ঘণ্টার প্রশ্নোত্তর ও ব্যাখ্যার পর বিনিয়োগকারীরা ক্লাবটিকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজি হয় এবং ভক্তদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার দরুন ক্লাবটি সে যাত্রায় টিকে যায়। এই নিঃস্বার্থ ফুটবলপ্রেমী ও ডর্টমুন্ড সমর্থকেরা সেদিন এগিয়ে না আসলে আজকে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড নামের কোনও ক্লাব থাকতো কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর খুব একটা জটিল নয়। ডুবতে থাকা সেই ডর্টমুন্ড ২০১৭-১৮ মৌসুমের মোট আয় দেখিয়েছে প্রায় ৫৩৬ মিলিয়ন ইউরো, অর্থনৈতিকভাবে ক্লাবটির এই শক্ত অবস্থানের জন্য ক্লাব কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি সমর্থকদের অবদান কোনও অংশেই কম নয়।
ইদুনা পার্কের ‘হলুদ দেয়াল’
মহাশূন্য থেকে ইদুনা পার্ক দেখা যায় না, কিন্তু এই স্টেডিয়ামের হলুদ দেয়ালের বিস্তৃতি ও শব্দ তারকারাজি পর্যন্ত পৌঁছে যায়; ডর্টমুন্ডের মাঠের দক্ষিণ স্ট্যান্ড তথা হলুদ দেয়ালটিকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বুন্দেসলিগা’র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। ডর্টমুন্ডের স্টেডিয়ামের প্রাণকেন্দ্রই হল এই দক্ষিণ স্ট্যান্ড, যেখানে প্রায় ২৫,০০০ সমর্থক টানা নব্বই মিনিটই দাঁড়িয়ে থেকে সমস্বরে গলা ফাটিয়ে দলকে সমর্থন জানিয়ে যায়। বলে রাখা ভালো, এই স্ট্যান্ডে কোন বসার আসন নেই, ইউরোপ তথা জার্মানির বিখ্যাত এই স্ট্যান্ডের অন্যতম বিশেষত্বই এটি। তাছাড়া, ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্ট্যান্ডও এটি। তাই বরুশিয়া ডর্টমুন্ড তো বটেই, জার্মান ফুটবলেরও বিশাল এক গর্বের জায়গা এই স্ট্যান্ডটি।
এই স্ট্যান্ডে দাঁড়ানো প্রায় ২৫,০০০ মানুষের গণজোয়ার ডর্টমুন্ডের ম্যাচের দিনে ছেয়ে যায় হলুদ জার্সি, স্কার্ফ, পতাকা ইত্যাদিতে – দেখে নেহায়েত হলুদ দেয়াল বলে ভ্রম হতেই পারে। এই হলুদ দেয়ালটিকে রূপক অর্থে ডর্টমুন্ডের দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবেও অভিহিত করা হয়। গগনবিদারী চিৎকারে এই স্ট্যান্ডই যেন প্রতিপক্ষের জালে বল ঢুকিয়ে দেয়, কিংবা প্রতিপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করে। ডর্টমুন্ডের কিংবদন্তী গোলরক্ষক রোমান ভাইডেনফেলা হলুদ দেয়ালের অসাধারণ অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন এভাবে,
“আপনি যদি প্রতিপক্ষ হন, তাহলে এটি আপনাকে গুঁড়িয়ে দেবে। কিন্তু গোলরক্ষক হিসেবে আপনার পিছনে ওদেরকে পেলে তা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।”
ইদুনা পার্কের এই হলুদ দেয়াল শুধুই একটি স্ট্যান্ড নয়; এটি ডর্টমুন্ড ভক্তদের আবেগ, ভালোবাসা, উন্মাদনা, সমর্থন ও অনুপ্রেরণার অন্যতম প্রতীক, যা প্রতিপক্ষের বুকেও কাঁপন ধরিয়ে দেয় ম্যাচের প্রথম সেকেন্ড থেকেই।
ইউরোপে গড় সর্বোচ্চ দর্শক উপস্থিতি
বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ কিংবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নয়, গত মৌসুমে ইউরোপে ম্যাচপ্রতি সর্বোচ্চ গড় উপস্থিতির রেকর্ডটা ডর্টমুন্ডের সিগনাল ইদুনা পার্কের। সিগনাল ইদুনা পার্কে ডর্টমুন্ড সমর্থকদের গড় উপস্থিতি ৮০,৮৩০ জন, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে এই সংখ্যা ৫,০০৩ জন বেশি। ক্লাবের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা ও সমর্থন ছাড়াও সিগনাল ইদুনা পার্কে বিপুল দর্শক সমাগমের আরেকটি অন্যতম কারণ টিকেটের মূল্য নির্ধারণে কর্তৃপক্ষের উদার মনোভাব। সিগনাল ইদুনা পার্কে প্রবেশের সর্বনিম্ন মূল্য মাত্র ১১ ইউরো এবং সর্বোচ্চ মূল্যও তুলনামূলকভাবে অনেক কম, মাত্র ৯০৭ ইউরো।
ইউরোপের জনপ্রিয় লিগগুলোর মধ্যে দর্শক উপস্থিতির বিচারে বুন্দেসলিগাকে শক্ত ও সুদৃঢ় অবস্থান এনে দেওয়ার পিছনে ডর্টমুন্ডের একনিষ্ঠ সমর্থকদের বড় ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া ফুটবলপাগল জার্মানদের ক্লাবের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রমাণও পাওয়া যায় একই তালিকা থেকে, গড় দর্শক উপস্থিতির তালিকায় প্রথম ৩০টি ক্লাবের মধ্যে ১০টি ক্লাবই জার্মানির।
ইউরোপের মঞ্চে ডর্টমুন্ড এবং জাদুকর ক্লপ
বুন্দেসলিগা প্রতিষ্ঠার পর ডর্টমুন্ড আসরে অংশগ্রহণ করেছিল জার্মানির চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই, কিন্তু বুন্দেসলিগার শিরোপা জিততে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩২ বছর! কিংবদন্তি কোচ ওটমার হিৎজফেল্ডের হাত ধরে অবশেষে ক্লাবটি ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুইবার জিতে নেয় বুন্দেসলিগার শিরোপা। এরপর ১৯৯৭ সালে ইউরোপের সেরা আসর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জিতে ইউরোপের মঞ্চে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার বার্তা পৌঁছে দিলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
২০০২ সালে তৃতীয়বার জার্মানির চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুললেও ২০০৫ সালের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক খেলোয়াড় হারাতে হয় ডর্টমুন্ডকে। স্থানীয় ও তরুণ প্রতিভার উপরে নির্ভরশীল ডর্টমুন্ডের শোচনীয় অবস্থার হাল ধরতে ২০০৮ সালে নিয়োগ করা হয় ক্লপ নামের এক খ্যাপাটে কোচকে।
ক্লপের হাত ধরে ফিনিক্সের মতো জেগে উঠতে শুরু করে ডর্টমুন্ড, ইউরোপে আবারও তাদের প্রত্যাবর্তন হয় হার না মানা যোদ্ধার ন্যায়। ক্লপের প্রেসিং ফুটবলের হাত ধরে ২০১১ ও ২০১২ সালে আবারও টানা দুইবার বুন্দেসলিগার সেরার মুকুট মাথায় পড়ে নেয় ডর্টমুন্ড। ডিএফবি কাপ ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে ৫-২ গোলে পরাজিত করে শিরোপা জয়ের মুহূর্ত ক্লাবটির সমর্থকেরা মনে রাখবে আজীবন।
হৃদয়ভঙ্গের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ২-১ গোলে পরাজিত না হলে ডর্টমুন্ডের ঘরে থাকত আরেকটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা। তবে ক্লপের হাত ধরে ডর্টমুন্ডের ফুটবলীয় দর্শনে যে পরিবর্তন এসেছে, তা ক্লাব ও সমর্থকদের আবেগের জায়গায় একই সুতোয় গাঁথা। তাই ক্লপ চলে গেলেও সমর্থকেরা আজও তাদের প্রিয় দলের খেলায় তার ফুটবলীয় দর্শনই দেখতে চায়।
তরুণ প্রতিভার আঁতুড়ঘর
বুন্দেসলিগা শিরোপাজয়ী ক্লপের ডর্টমুন্ড দলের গড় বয়স ছিল ২২.৮ বছর। বর্তমান ডর্টমুন্ড দলেও রয়েছে একঝাঁক তরুণ খেলোয়াড়, যাদের উপরেই নির্ভর করছে ডর্টমুন্ডের ভবিষ্যৎ। বর্তমান দলটিরও গড় বয়স খুব একটা বেশি নয়, মাত্র ২৪.৬ বছর। দলের দায়িত্বে রয়েছেন লুসিয়ান ফাভ্রের মতো পরীক্ষিত কোচ, যিনি প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে ও তাদের সেরাটা বের করে নেওয়ার ব্যাপারে দারুণ সিদ্ধহস্ত।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই ডর্টমুন্ডের হয়ে প্রায় ১০০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন দলটির অন্যতম তারকায় পরিণত হওয়া ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচ। ১৮ বছর বয়সী জ্যাদন সাঞ্চোকে নিয়ে সমর্থকেরা ভীষণ আশাবাদী, তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও বেশ পরিপাটি ও ইতিবাচক। তাছাড়া বর্তমান দলে রয়েছেন ড্যান অ্যাক্সেল (২২), দাহুদ (২২), আইজ্যাক (১৯) ও দিয়ালোর(২২) মতো সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়েরা, যাদের নিয়ে ডর্টমুন্ড তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করতেই পারে। সিগনাল ইদুনা পার্ক থেকেই মূলত বর্তমান সময়ের সেরা স্ট্রাইকারে পরিণত হয়েছিলেন বর্তমানে বায়ার্নে খেলা লেভান্ডভস্কি ও আর্সেনাল স্ট্রাইকার অবামেয়াং। ডর্টমুন্ডের হয়ে লেভান্ডভস্কি ১৩১ ম্যাচে করেছেন ৭৪ গোল এবং অবামেয়াং ১৪৪ ম্যাচে বল জালে জড়িয়েছিল ৯৮ বার।
‘এসটে লিবে’- সত্যিকার ভালোবাসা, যা স্লোগানের চেয়েও বেশি কিছু
ডর্টমুন্ডের সাথে তার সমর্থকদের সম্পর্ক ঠিক অন্য দশটা ক্লাবের মতো নয়। ডর্টমুন্ড হয়তো ভবিষ্যতে আরও অনেক শিরোপা জিতবে, অনেক কিংবদন্তি উঠে আসবে তাদের সবুজ ঘাসের মাঠ থেকে, কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড় গর্বের জায়গা সবসময়ের জন্য ঐ স্ট্যান্ডে থাকা ৮১,০০০ জনেরও বেশি সমর্থক ও হলুদ দেয়াল। ‘এসটে লিবে’, বা ‘সত্যিকার ভালোবাসা’ – ডর্টমুন্ড ও তার সমর্থকদের সম্পর্ক এক কথায় প্রকাশ করার সবচেয়ে নিখুঁত স্লোগান। ম্যাচের প্রথম সেকেন্ড থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত, প্রতিটি মুহূর্ত এই সমর্থকদের গগনবিদারী উল্লাসে মুখরিত ইদুনা পার্কের পরিবেশের সাথে আর কোনও স্টেডিয়ামের তুলনা চলে না।
সমর্থকদের এই সমর্থন, উল্লাস, উন্মাদনা ও আবেগ কখনোই দলের শিরোপা, লিগে অবস্থান কিংবা ম্যাচের ফলাফলের উপর নির্ভর করে কম বেশি হয়নি। এখানেই ‘এসটে লিবে’ ও ডর্টমুন্ড সমর্থকদের সার্থকতা। ডর্টমুন্ড সমর্থকদের এই সত্যিকার ভালোবাসার যদিও কোনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন ছিল না, তবুও তারা জিতেছে ফিফার দেওয়া সেরা সমর্থকের পুরষ্কার। ডর্টমুন্ড ভক্তদের ভালোবাসার আরেকটি বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম হলো ‘You will never walk alone’ গানটি। এই জনপ্রিয় গানটি শুধু লিভারপুলেরই নয়, ডর্টমুন্ডেও ব্যাপক জনপ্রিয় এবং তারাও ক্লাবের প্রতি নিজেদের আবেগ ও সমর্থন প্রকাশ করতে এই গানটিই ব্যবহার করে।
ডর্টমুন্ড সত্যিই এমন একটি দল, যে ক্লাবের সাফল্য ও গৌরবগাঁথা শুধুমাত্র তাদের শিরোপা বা ফলাফলনির্ভর নয়। ‘সত্যিকার ভালোবাসা’র সমর্থকেরাও তাদের গর্বের বড় অংশ, যাদের ঘিরেই আবর্তিত হয় তাদের প্রতিটি মুহূর্ত।
Featured Image Credit : theplayerstribune.com