‘অপরাজেয়’। ১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর লা বম্বোনেরায় যাওয়ার আগে এই শব্দটিই ছিল রিভারপ্লেট সমর্থকদের মনে। ৯৩ বছরে একবারও অপরাজেয় থেকে লিগ শিরোপা জেতা হয়নি রিভারপ্লেটের। স্বভাবতই এই ম্যাচটি ছিলো সুপার ক্লাসিকোর চেয়েও বেশি কিছু। রবার্তো আয়ালা-মার্সেলো গ্যালার্দোসহ বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড় তখন রিভারপ্লেটে, কিন্তু পুরো মৌসুম ধরে আলো কেড়ে রেখেছিলেন এক তরুণ; আরিয়েল ওর্তেগা। সেই ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম হলো না। এক পেনাল্টি আদায় ছাড়াও দুর্দান্ত এক ভলিতে বোকার বিপক্ষে আক্ষরিক অর্থেই ২-০ গোলে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ‘এল বারিতো‘। গোলের পর ওর্তেগার জার্সি খুলে উড়ানো ছবিটি দুই দশকের বেশি সময় ধরে জায়গা করে রেখেছিল রিভারপ্লেট দর্শকদের অন্তরে।
তারও ২০ বছর আগের কথা। ১৯৭৪ সালে ওর্তেগার জন্ম বলিভিয়ান বর্ডারঘেষা জুজুই প্রদেশে। বাবা ছিলেন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রী। প্রচন্ড দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে উঠা ওর্তেগার ধ্যানজ্ঞান ছিলো ফুটবল। একবার রিভারপ্লেট কতৃপক্ষ তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় তুলে আনার জন্য একটি স্থানীয় ম্যাচের আয়োজন করে। ওর্তেগার ভাষায়,
“সেখানে প্রায় ৫০০ জন ছেলেছোকড়া ছিল। সবার মাঝ থেকে আমিই সবার আগে বল তুলে নিলাম, আর পুরো ম্যাচ জুড়ে কাউকে আমার পা থেকে বল নিতে দিইনি। পরবর্তীতে তারা (রিভারপ্লেট) আমাকে আবার ডেকে পাঠায়।”
রিভারপ্লেট তখন নিজেদের ইতিহাসের সেরা সময়ে। ১৯৮৬ সালে প্রথম কোপা লিবার্তোদোরেস জয় ছাড়াও ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপও ছিল রিভারপ্লেটের শোকেসে। তার ২ বছর পর ডাগআউটে আসেন আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি সাবেক ক্যাপ্টেন ড্যানিয়েল প্যাসারেলা। প্যাসারেলা এক দেখাতেই মুগ্ধ হন ওর্তেগায়। নিজের টাকা দিয়েই প্রথম পে-চেকটি পাঠান ওর্তেগার ব্যাংক একাউন্টে। ওর্তেগা পরবর্তীতে বলেছিলেন,
“প্যাসারেলা শুধু একজন কোচই ছিলেন না, আমার জন্য তিনি পিতৃতুল্য।”
অবশ্য ওর্তেগাকে প্রথম দেখায় মুগ্ধ হননি, এমন মানুষই কম। ছোটখাটো গড়নের বাঁ পায়ের ফুটবলার। গতি, পাসিং, মাঠে বুদ্ধিদীপ্ত কাজ — কিছুতেই কম ছিলেন না। আর স্কিলের কথা বলতে গেলে ওর্তেগা আরো এক কাঠি বেশি সরেস, আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে স্কিলফুল খেলোয়াড়দের নাম আসলে ওর্তেগার নাম সেখানে থাকাটাও অনুমিতই। ভক্তরা নাম দিয়েছিলেন ‘এল বারিতো’, যার মানে ‘ছোট গর্দভ’। না না, নামটা শুনে মুখ টিপে হাসবেন না। গাধার মতোই প্রচণ্ড পরিশ্রমী আর ক্ষুরধার পা ছিল ওর্তেগার, তাতেই এই নাম। তবে এত কিছুর মাঝে উল্টো পিঠও ছিল।
১৯৯৪ সালে ডোপ কেলেঙ্কারিতে ম্যারাডোনার অবসরের পরপরই আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ১০ নাম্বার জার্সিটি ওঠে ওর্তেগার গায়ে। গত এক দশক ধরে যাকে ঈশ্বরের আসনে বসিয়েছেন আর্জেন্টাইনরা, তার বিদায়ে তার জার্সি পড়ে খেলাটা মোটেও সহজ ছিল না। পাহড়সম প্রত্যাশার ভার বইয়ে বেড়িয়েছেন। তাই হুয়তো ম্যারাডোনার ছায়াও পেয়ে বসেছিল তাকে। শুধু খেলোয়াড়ি দিক বা খেলার ধরনেই মিল নয়, ওর্তেগা অন্যান্য দিক দিয়েও যেন ছিলেন ম্যারাডোনার কার্বন কপি। বিতর্ক, ড্রাগ কেলেঙ্কারি, মাঠে মেজাজ হারানো — সব দিক দিয়েই ওর্তেগা ছিলেন এক নাম্বারে।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে গ্রীসের বিপক্ষে গোল করার পর ক্যামেরার সামনে ম্যারাডোনার চোখ-রাঙানি উদযাপনই যে আলবিসেলেস্তেদের হয়ে সর্বশেষ হবে, সেটা কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। অ্যাপেড্রিন নেওয়ার ফলে বিশ্বকাপের মাঝপথ থেকে বিদায় নিতে হয় ফুটবল-ঈশ্বরকে। রোমানিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে হুট করেই ২০ বছরের চুপচাপ আড়ালে থাকা এক তরুণ পুরোপুরি স্পটলাইটে, ম্যারাডোনার ফেলে যাওয়া ‘এনগাঞ্চে’ রোলে যে খেলতে হবে তাকেই!
স্বভাবতই সুখকর হয়নি ওর্তেগার অভিষেক। বিপর্যস্ত আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় জর্জিও হাগির রোমানিয়া। ওর্তেগার পুরো ক্যারিয়ারের প্রতিচ্ছবি সেটিই বলতে পারবেন। প্রয়োজনের সময় নিজেকে হারিয়ে ফেলা কিংবা বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়া যেনো অভ্যাস ছিল ওর্তেগার। তাই সীমাহীন প্রতিভা নিয়ে আসার পরও ওর্তেগা গড়পড়তা মানের এক ফুটবলার হিসেবেই বিবেচিত।
ওর্তেগার ইউরোপে আগমন ১৯৯৬ সালে। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে নাম লেখান তিনি। ডাগআউটে তখন ক্লদিও রানিয়েরি। কিন্তু শৃঙ্খলাবিহীন জীবনের কারণে রানিয়েরির ‘চোখের বালি’তে পরিণত হন। প্রায়শই ট্রেইনিংয়ে অনুপস্থিত থাকতেন ওর্তেগা, পাশাপাশি অ্যালকোহল আসক্তি ছিল পুরোদমে। রানিয়েরি বলেছিলেন,
“ট্রেইনিং গ্রাউন্ডে আমি কখনোই এত অলস ও প্রচেষ্টাবিহীন খেলোয়াড় দেখিনি।”
এক বছর না গড়াতেই তাই সাম্পোদোরিয়ায় আগমন ওর্তেগার। সেখানেও টিকলেন এক বছর। সাম্পোদোরিয়া থেকে পার্মা ঘুরে শেষমেষ রিভারপ্লেটেই ফিরলেন ওর্তেগা। ঘরের মাঠে ওর্তেগা ছিলেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। রিভারের এল মনুমেন্টাল আবারও মাতিয়ে বেড়ালেন ওর্তেগা। তবে বিতর্ক বা ড্রাগ আসক্তি এতটুকুও কমেনি। নিতান্তই প্রতিভার জেরে খেলে যাচ্ছিলেন তখনো।
মাঝে ১৯৯৮ আর ২০০২ বিশ্বকাপেও ছিলেন আর্জেন্টিনার পোস্টারবয়। বিশেষ করে ‘৯৮ বিশ্বকাপের মঞ্চের আলো কাড়ার জন্য ওর্তেগাই ছিলেন অন্যতম বাজি। সিমিওনে, ভেরন, আয়ালা, বাতিস্তুতা, ক্লদিও লোপেজসহ প্যাসারেলার অধীনে আর্জেন্টিনাও ছিল বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার। তবে ওর্তেগাকে দলে নেওয়ার কারণে বেশ সমালোচনা হজম করতে হয়েছিলো প্যাসারেলাকে। কিন্তু যাকে নিজের ছেলের মতো গড়ে তুলেছিলেন রিভারপ্লেটে, তার উপর আস্থা হারাননি প্যাসারেলা।
সেই আস্থার প্রতিদান প্রথম ম্যাচেই দেন ওর্তেগা। জ্যামাইকার বিপক্ষে প্রথম দুইটি গোলই আসে ওর্তেগার পা থেকে, তাও আবার নিজের পছন্দের চিপ শটে। সাথে বাতিস্তুতার হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনার শুরুটাও হয় দুর্দান্ত। দ্বিতীয় রাউন্ডে টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে আসে আলবিসেলেস্তেরা। স্তাদে দে প্যারিসে আক্ষরিক অর্থেই তারার মেলা বসে সেদিন। মার্ক ওভারমার্স, ফ্রাঙ্ক ডি বোর, প্যাট্রিক ক্লাইভার্ট, ডেনিস বার্গক্যাম্পের হল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা।
৭৭ মিনিটে নেদারল্যান্ডের নিউম্যান লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ১-১ থাকা ম্যাচটি হেলে যায় আর্জেন্টিনার দিকে। কিন্তু গোলমাল করে বসেন ওর্তেগা নিজেই। ফন ডার সারের সাথে কথা কাটাকাটিতে মাথা দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বসেন। ফলাফল — ওর্তেগাকেও মাঠ ছেড়ে বেড়িয়ে যেতে হয়। পরবর্তীতে বার্গক্যাম্পের ৯০ মিনিটের অতিমানবীয় গোলে ছিটকে পড়ে আর্জেন্টিনা। ২০০২ বিশ্বকাপেও সুইডেনের বিপক্ষে ওর্তেগার এক গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি মিস করার খেসারত আর্জেন্টিনা দেয় গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নিয়েই। বিশ্বকাপ তাই এক দুঃস্বপ্নই ওর্তেগার জন্য।
তবে বিশ্বকাপে যা-ই করুন না কেন, রিভারের দর্শকদের কাছে ঈশ্বর-সমতুল্য ছিলেন ওর্তেগা। তার প্রতিটি মুভকেই উদযাপন করতো রিভারপ্লট সমর্থকেরা। ঘরের মাঠে ফিরে এসে পুরনো ভঙ্গিতে ফেরেন তিনি, ৫৬ ম্যাচে করেন ২৩ গোল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন স্যাভিওলা ও আইমার। ওর্তেগার দুর্দান্ত ফর্মে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আগ্রহী হয় তার প্রতি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৭.৫ মিলিয়নে ফেনারবাচে কিনে নেয় ওর্তেগাকে। পরবর্তীতে ওর্তেগা নিজের জীবনীতে লিখেছিলেন,
“আমি এখনো আফসোস করি ফেনারবাচে যাওয়ার জন্য। একেবারে শুরুর মুহূর্ত থেকেই মনে হচ্ছিল, এই দেশ কিংবা ক্লাবটি আমার জন্য নয়।”
মূলত খাবার, সংস্কৃতি কিংবা ভাষার সাথে একদমই খাপ খাওয়াতে পারেননি ওর্তেগা। তাই করে বসলেন ওর্তেগাসুলভ কাজ। আন্তর্জাতিক বিরতিতে আর্জেন্টিনায় এসে আর ফেরত যাননি। তাতে বেজায় চটে ফেনারবাচে ক্লাব। ফিফার কাছে লিখিত নালিশ জানায় তারা। যদিও ওর্তেগার এজেন্ট দাবি জানিয়েছিল, ফেনারবাচে ওর্তেগাকে দেওয়া অনেক কথাই রাখেনি। তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল, আরো কিছু আর্জেন্টাইন খেলোয়াড় দলে আনবে তারা। কিন্তু এসব কিছুই হয়নি, যার জন্য ওর্তেগা কিছুতেই খাপ খাওয়াতে পারেননি তুরস্কে। তবে এসব কিছুই ধোপে টেকেনি ফিফার সামনে; ফলাফল — চুক্তি ভঙ্গের দায়ে ১১ মিলিয়ন ক্ষতিপূরণ ও ৯ মাসের জন্য যেকোনো ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ হন তিনি।
তবে ওর্তেগার এই কঠিন সময়ে পাশে এসে দাড়ায় স্বদেশি ক্লাব নিউ ওয়েলস ওল্ড বয়েজ। ওর্তেগার বাকি চুক্তির টাকা দিয়ে তাকে কিনে নেয় এই ক্লাব। নির্বাসনের এই সময়টায় একাকী ফুটবলে মগ্ন থাকতেন তিনি। তবে হোমসিক এই মানুষটি নিজের জীবনে আনন্দ নিয়ে আসার জন্য নিউ ওয়েলসে সাথে সাথেই পুরষ্কৃত করেন। ২০০৪ সালে আর্জেন্টাইন নকআউট সিস্টেমের ঘরোয়া লিগ এপারচুরা টাইটেল এনে দেন নিউ ওয়েলসে।
রোজারিওতে যতই সুখে থাকুন না কেন, রিভারপ্লেটের ডাক কখনোই উপেক্ষা করতে পারেননি ওর্তেগা। আবার যদি সেই ডাক হয় স্বয়ং প্যাসারেলা থেকে! দ্বিতীয়বারের মতো ডাগআউটে এসে আবারও ওর্তেগাকে দলে ভেড়ান প্যাসারেলা। আর তৃতীয় মেয়াদে এল মনুমেন্টালে আসেন ওর্তেগা।
তবে প্যাসারেলা টেকেননি বেশিদিন, ২ বছর পর তাকে বরখাস্ত করে দায়িত্ব দেওয়া হয় দিয়েগো সিমিওনেকে। তবে মাঠের বাইরে ততদিনে যাচ্ছেতাই অবস্থা ওর্তেগার। ড্রাগ-আসক্তির কারনে রিহ্যাবেও সময় কাটিয়েছিলেন কিছুদিন। সাথে গুঞ্জন উঠেছিল, নিজের স্ত্রীকেও নাকি মারধর করেছেন এল বারিতো! এত ঝামেলার পাশাপাশি ট্রেইনিং এ বরাবরই অনুপস্থিত। তাই এককালের সতীর্থ সিমিওনে শেষ দুই ম্যাচের জন্য স্কোয়াড থেকেই বাদ দিয়ে দেন ওর্তেগাকে।
জুনের ২২ তারিখ। ব্যানফিল্ডকে হারিয়ে লিগ শিরোপা রিভারপ্লেটের ঘরে। বুয়েন্স আয়ার্সের রাস্তাজুড়ে রিভারপ্লেটের গাড়ির বহর। সমর্থক, শ্যাম্পেইন, আতশবাজি তো সাথে আছেই। শুধু ছিলেন না ওর্তেগা। স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছিলেন অতিরিক্ত মদ্যপান আর ট্রেইনিংয়ে অনুপস্থিতির জন্য। নিজের রাগ দমিয়ে রাখেননি তিনি,
“সে এই কাজটি কীভাবে করলো? সারা বছর আমি তার কাছে প্রয়োজনীয় ছিলাম। আর দুই সপ্তাহ আগে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়লাম?”
সিমিওনে উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি তার দলে শৃঙ্খল খেলোয়াড় চান। সেখানে ওর্তেগার জায়গা নেই। কিছুদিন পর মাতাল ওর্তেগা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করে বসেন, যদিও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সিমিওনে তখনই সিদ্ধান্ত নেন, ওর্তেগাকে ক্লাবে রাখবেন না। সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন,
“ওর্তেগাকে ট্রান্সফার লিস্টে রাখা আমার জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত।”
ইন্দিপেন্দিয়েন্তে ক্লাব ৫ লাখ ইউরোর বিনিময়ে কিনে নেয় ওর্তেগাকে। শর্ত ছিল, নিয়মিত রিহ্যাবে যেতে হবে ওর্তেগাকে। সেই শর্ত ওর্তেগা মেনে নিলেও দিনকয়েক পর ক্লাব বুঝতে পারে, মাঠে দেওয়ার মতো এই মুহূর্তে আসলে কিছুই নেই ওর্তেগার কাছে। ৩৯ বছর বয়সী ওর্তেগা তাই বিদায়ী ম্যাচ খেলার জন্য আবার ফিরে আসেন এল মনুমেন্টালে। বিদায়ী ম্যাচে নিজের ছেলেকে একটি অ্যাসিস্টও করেন। এল মনুমেন্টালও দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানায় তাদের সন্তানকে। ৬০ হাজার মানুষের “ওর্তেএএ, ওর্তেএএ” ধ্বনিতে কান্নায় আপ্লুত হন ওর্তেগা। স্টেডিয়ামের মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে ওর্তেগা বলে ওঠেন,
“Thank you very much and thank God for making me fan of River.”
ওর্তেগাকে সবচেয়ে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করেছিল ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা। ওর্তেগা ছিলেন এক ৫ বছর বয়সী শিশু। তার সামনে ছিল রঙ আর আঁকার খাতা। নিজের ইচ্ছামতো আঁকাআঁকি করে বেড়াতেন সেখানে। দাগের বাইরে রঙ গেল কি গেল না, তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তার। ওর্তেগা ছিলেন এমনই। হয়তো ফুটবলকে যা দেওয়ার কথা ছিল, তার সিকিভাগটাও দিতে পারেননি। তবে ‘ওর্তেগুই’ ভালোবেসেছিলেন ফুটবলকে, নিজের মতো করেই। ভক্তদের হতাশ করেছেন, উড়িয়েছেন, কাঁদিয়েছেন। দিনশেষে ওর্তেগা যদি ব্রায়ান লারার মতোই ‘Did I entertain you?’ প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিতেন, এল মনুমেন্টালের হাজার হাজার মানুষের ‘ওর্তে, ওর্তে’ স্তুতিই বোধহয় তার উত্তরটা দিত।