সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডেতে রেকর্ড বেশ নাজুক। নিজেদের শেষ দশটি ওয়ানডে সিরিজের একটিতেও সিরিজ জেতেনি তারা। ভারতের মাটিতে শেষবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল দশ বছর আগে। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ভরাডুবির পর তারকাবিহীন অস্ট্রেলিয়া দলের পরাজয় অনেকেই ধরে নিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া যেমন নিজেদের বাজে সময় কাটাচ্ছে, অন্যদিকে ভারত নিজেদের সেরা সময় কাটাচ্ছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অসাধারণ নৈপুণ্যে জয়ের পর ওয়ানডে সিরিজেও ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়া।
টি-টোয়েন্টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের খেলা, এখানে একজন একা হাতে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসতে পারেন। ওয়ানডে ম্যাচ সে তুলনায় একটু কঠিন, এখানে একক নৈপুণ্যে জয় পাওয়া বেশ মুশকিল। অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ লড়াই করলেও জয়ের দেখা পায়নি অভিজ্ঞতার কারণে।
দলে নেই স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউডের মতো পরীক্ষিত ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটাররা। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের অ্যাওয়ার্ড জেতা মার্কাস স্টোইনিসও ইনজুরির কারণে মোহালিতে খেলতে পারেননি। নাথান কোল্টার-নাইল শেষ তিনটি ওয়ানডে খেলতে পারেননি। অধিনায়ক এবং দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান অ্যারন ফিঞ্চও বেশ কিছুদিন ধরে ফর্মে নেই। তবুও শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে শেষ তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া, সেটাও আবার ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে।
অস্ট্রেলিয়ার দুর্দান্ত এই প্রত্যাবর্তনে অবদান রাখা ক্রিকেটারদের মধ্যে রয়েছেন উসমান খাজা, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, অ্যাস্টন টার্নার, অ্যাডাম জাম্পা এবং প্যাট কামিন্স। পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়া খেললে হয়তো তাদের একাদশে জায়গা পাওয়াটাও কষ্টকর ছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের নৈপুণ্যতেই ভারতের মাটিতে দশ বছর পর ওয়ানডে সিরিজ জিতলো অস্ট্রেলিয়া। চলুন জেনে আসা যাক সিরিজে এই পাঁচজনের অর্জিত সফলতা নিয়ে।
উসমান খাজা
কয়েক বছর আগেও উসমান খাজাকে স্পিনারদের বিপক্ষে দুর্বলতার কারণে উপমহাদেশের জন্য বিবেচনায় আনা হতো না। তিনি তার এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য অনেক পরিশ্রম করে বর্তমানে সফলতা পাচ্ছেন। গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুবাইতে ইয়াসির শাহ’দের ভালোভাবেই সামাল দিয়েছিলেন। চতুর্থ ইনিংসে ৩০২ বল মোকাবেলা করে ম্যাচ বাঁচাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। টেস্ট ক্রিকেটে দলের নিয়মিত সদস্য উসমান খাজা তাই স্মিথ, ওয়ার্নারদের অনুপস্থিতিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার সুযোগ পান।
ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে ভুল করেননি খাজা। কয়েক সপ্তাহ আগেও বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে তার অন্তর্ভুক্তি অনিশ্চিত ছিল। কিন্তু এই সিরিজের পর বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে থাকা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। তার দুর্দান্ত ফর্মের কারণে ওয়ানডেতে গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান শন মার্শের দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হওয়ার আগে উসমান খাজা ৩৭টি ওয়ানডে খেলে কখনও শতকের দেখা পাননি। সিরিজশেষে তার নামের পাশে দু’টি শতক। সংখ্যাটা তিন হতে পারতো, যদি না চতুর্থ ম্যাচে মাত্র নয় রানের জন্য শতক থেকে বঞ্চিত হতেন। তিনি পুরো সিরিজে ভারতীয় পেসার এবং স্পিনারদেরকে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছিলেন। বিশেষ করে স্পিনারদের বিপক্ষে নিজের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। স্পিনারদের বিপক্ষে একের পর এক সুইপ শট খেলে তিনি রান করেছিলেন।
সিরিজের প্রথম দুটি ওয়ানডেতে যথাক্রমে ৫০ এবং ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন খাজা। এই দুই ম্যাচে জয়ের দেখা পায়নি তার দল। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ১০৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক তুলে নেওয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার ৩২ রানের জয়ে অবদান রাখেন তিনি। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ৯১ রানের ইনিংস খেলে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন তিনি। সিরিজনির্ধারণী শেষ ওয়ানডেতেও তার ব্যাট থেকে রান এসেছিল। তার ১০৬ বলে দশটি চার এবং দু’টি ছয়ের মারে সাজানো ১০০ রানের ইনিংসের উপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ২৭২ রান সংগ্রহ করেছিল। পুরো সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা উসমান খাজা পাঁচ ম্যাচে দু’টি শতক এবং দু’টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৭৬.৬০ ব্যাটিং গড়ে ৩৮৩ রান সংগ্রহ করে সিরিজসেরার পুরস্কার জিতেছেন।
পিটার হ্যান্ডসকম্ব
উসমান খাজার মতো পিটার হ্যান্ডসকম্বের নামের পাশেও ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ ট্যাগ বসানো ছিল। টেস্ট স্পেশালিস্টের পাশাপাশি বর্তমান অস্ট্রেলিয়া দলে স্পিনারদেরকে সবচেয়ে ভালোভাবে খেলতে পারা ব্যাটসম্যান হিসাবেও তার নাম উচ্চারিত হয়। তাই তাকে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক ঘটিয়ে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলানো হয়, এবং ওয়ানডেতে মিডল অর্ডার সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। রঙিন পোশাকে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ ভালো ফর্মে রয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টে তার দল ভিক্টোরিয়া শিরোপা জিতেছিল, এবং বিগ ব্যাশে তার দল মেলবোর্ন স্টার্স রানার্সআপ হয়েছিল।
পিটার হ্যান্ডসকম্বও স্পিনারদের বিপক্ষে সুইপ শট খেলে সফলতা পেয়েছেন। এছাড়া আলতো ব্যাটে খেলে দৌঁড়ে দুই রান নিয়ে ফিল্ডারদের চাপে রাখেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা ভারতের স্পিনারদের বিপক্ষে ১৬৮ বলের মধ্যে ৮৯ বলে কোনো রান নিতে পারেননি। এরপর থেকে পিটার হ্যান্ডসকম্ব এবং উসমান খাজা বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ভারতীয় স্পিনারদের সামলেছেন, ঠিক যেমনটা ২০১৬ সালে টম ল্যাথাম এবং কেন উইলিয়ামসন করে দেখিয়েছিলেন।
সিরিজের চতুর্থ এবং শেষ ওয়ানডেতে উসমান খাজাকে নিয়ে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব। মোহালিতে সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের জন্য ৩৫৯ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ভারত। জবাবে মাত্র ১২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসে অজিরা। এরপর ক্রিজে আসেন হ্যান্ডসকম্ব, তিনি খাজাকে সাথে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৯২ রান যোগ করে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। হ্যান্ডসকম্ব ১০৫ বলে আটটি চার এবং তিনটি ছয়ের মারে ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকিয়ে ১১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন।
সিরিজ-নির্ধারণী শেষ ম্যাচেও তিনি উসমান খাজার সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৯ রান যোগ করেছিলেন। স্পিনারদেরকে ভালোভাবে সামাল দিয়ে ৬০ বলে চারটি চারের মারে তিনি ৫২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৪৭.২০ ব্যাটিং গড়ে ২৩৬ রান সংগ্রহ করেছেন। এই সিরিজে উসমান খাজা এবং বিরাট কোহলির পর তিনিই সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করেছেন।
অ্যাডাম জাম্পা
অস্ট্রেলিয়া এই সিরিজের আগে সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল ২০১৭ সালে। পূর্ণশক্তির অস্ট্রেলিয়া সেইবার পাঁচ ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছিল। জাম্পা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হার্দিক পান্ডিয়ার সামনে একেবারে সাদামাটা বোলার ছিলেন তিনি, তিন ম্যাচ খেলে ৬.৯৬ ইকোনোমি রেটে মাত্র চার উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে মাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ঐ ম্যাচে দশ ওভারে মাত্র ৩৪ রান দেওয়ার পর ভারতের মাটিতে প্রথম ম্যাচ থেকেই একাদশে জায়গা করে নেন জাম্পা। ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করে সিরিজে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হিসাবে সিরিজ শেষ করেছেন, স্পিনারদের মধ্যে তিনি সবার প্রথম। পাঁচ ম্যাচে ৫.৬৮ ইকোনোমি রেটে এবং ২৫.৮১ বোলিং গড়ে ১১ উইকেট শিকার করেছেন।
জাম্পা’র বলে অন্যান্য লেগস্পিনারদের মতো বড় টার্ন নেই। তিনি স্ট্যাম্প বরাবর ধারাবাহিকভাবে বোলিং করে যান, এতে করে ব্যাটসম্যানদের বোল্ড এবং এলবিডব্লিউ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বর্তমানে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম বিরাট কোহলিকে এই সিরিজে দুইবারসহ সাকুল্যে ১১ বারের দেখায় পাঁচবার আউট করেছেন। এছাড়া মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও তিনি এই সিরিজে দুইবার আউট করেছেন। বলা বাহুল্য, এই সিরিজে ধোনি আউটই হয়েছেন দুইবার।
সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩১৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বিরাটের ব্যাটে চড়ে জয়ের পথেই ছিল ভারত। ৯৫ বলে ১২৩ রান করা বিরাট কোহলিকে আউট করে অস্ট্রেলিয়াকে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন জাম্পা। ঐ ম্যাচে বিপদজনক হয়ে ওঠা ধোনি এবং কেদার যাদবকেও আউট করেছিলেন তিনি। সিরিজের পঞ্চম ম্যাচেও তিনি দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন। একই ওভারে রোহিত শর্মা এবং জাদেজাকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিলেন তিনি। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে কয়জন ভেবেছিল, ভারতের স্পিনারদের চেয়েও তার উইকেটসংখ্যা বেশি থাকবে!
প্যাট কামিন্স
মিচেল স্টার্ক এবং জস হ্যাজলউড একাদশে থাকলে সাধারণত প্যাট কামিন্সকে নতুন বলে বল করতে দেখা যায় না। ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও নতুন বলে তাকে দেখা যায়নি। বল হাতে ইনিংস উদ্বোধন করেছিলেন নাথান কোল্টার-নাইল এবং জেসন বেহরেনডর্ফ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নতুন বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দেন রোহিত শর্মাকে। এরপর শেষদিকে মাত্র সাত বলের ব্যবধানে ১১৬ রান করা বিরাট কোহলি, জাদেজা এবং কুলদ্বীপ যাদবের উইকেট তুলে নেন কামিন্স। ম্যাচে নয় ওভারে মাত্র ২৭ রান খরচায় চার উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
প্যাট কামিন্সেরও ভারতের মাটিতে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে তেমন সুখকর কোনো স্মৃতি ছিল না। পাঁচ ম্যাচে ৫৫.০০ বোলিং গড়ে মাত্র চার উইকেট শিকার করেছিলেন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বোলিং করার পরও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারণে দলকে জেতাতে পারেননি। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতেও নিজের প্রথম স্পেলে দুর্দান্ত বোলিং করে ধাওয়ান এবং রায়ুডুর উইকেট তুলে নিয়ে ভারতকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেন তিনি। ম্যাচে মাত্র ৩৭ রানের বিনিময়ে তিন উইকেট শিকার করে অস্ট্রেলিয়াকে ৩২ রানের জয় পেতে সাহায্য করেছিলেন।
মোহালি এবং দিল্লিতে সিরিজের শেষ দুটি ওয়ানডেতে দুর্দান্ত বোলিং করেছিলেন প্যাট কামিন্স। মোহালিতে শিখর ধাওয়ানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ভারত। ১৪৩ রান করা ধাওয়ানকে দলীয় ২৫৪ রানে ফেরান কামিন্স। এরপর একে একে কেদার যাদব, ঋষভ পান্ত, বিজয় শংকর এবং যুযুবেন্দ্র চাহালের উইকেট তুলে নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। তার এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদেই ভারতের রান সংখ্যা ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়নি।
দিল্লীতে সিরিজের শেষ ম্যাচে ভারতকে ২৭৩ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারত ব্যাটিংয়ে নামলে কামিন্স নিজের প্রথম স্পেলে শিখর ধাওয়ানের উইকেট তুলে নেন। এরপর দলের অন্যান্য বোলাররাও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলে ১৩২ রান তুলতেই ছয় উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। এরপর ৭ম উইকেট জুটিতে ভুবনেশ্বর কুমারকে সাথে নিয়ে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন কেদার যাদব। কামিন্স নিজের শেষ স্পেলে এসে বিপদজনক হয়ে ওঠা ভুবনেশ্বর কুমারকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে ৯১ রানের জুটি ভাঙেন। এরপর সহজেই ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। পুরো সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং করা প্যাট কামিন্স ৪.৬৪ ইকোনোমি রেটে এবং ১৫.৭১ বোলিং গড়ে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন।
অ্যাস্টন টার্নার
ভারতের কাছে অ্যাস্টন টার্নার নামটা খুব বেশি পরিচিত নয়। তাই তো সংবাদ সম্মেলনে শিখর ধাওয়ান তার নামের জায়গায় ব্যবহার করলেন ‘That Guy’।
বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা অ্যাস্টন টার্নার তারই ‘স্বীকৃতিস্বরূপ’ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে একাদশে সুযোগ পায়। নিজের অভিষেক ম্যাচে ২১ রান করার পর শন মার্শ ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে এলে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি।
দুই ম্যাচ পর মোহালিতে মার্কাস স্টোইনিস ইনজুরির কারণে খেলতে না পারলে একাদশে সুযোগ পান অ্যাস্টন টার্নার। সুযোগ পেয়ে তার উপযুক্ত ব্যবহারও করেন তিনি। ভারতের দেওয়া ৩৫৯ রানের পর্বতপ্রতীম লক্ষ্য অতিক্রম করা যখন অসম্ভব মনে হচ্ছিলো, তখনই ব্যাট হাতে নিজের জাত চেনান টার্নার। বর্তমানে ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা দুইজন ডেথ বোলার ভুবনেশ্বর কুমার এবং জাসপ্রিত বুমরাহকে তুলোধুনো করে মাত্র ৪৩ বলে পাঁচটি চার এবং ছয়টি ছয়ের মারে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়া অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন তিনি। তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের দরুন অস্ট্রেলিয়া ৩৫৯ রানের লক্ষ্য ১৩ বল বাকি থাকতেই টপকে যায়।
অস্ট্রেলিয়া চাইলেই বিশ্বকাপে ‘ঠাণ্ডা মাথার খুনি’ হিসাবে তাকে খেলাতে পারে। তিনি যেমন বড় শট খেলতে পারেন, তেমনি তার টেম্পারমেন্টও অসাধারণ। বিশ্বকাপের আগে এমন একজন ক্রিকেটারের উঠে আসা অস্ট্রেলিয়ার জন্য নিঃসন্দেহে আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি বিশ্বকাপের মূল একাদশে জায়গা না পেলেও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টোইনিসের ভালো বিকল্প হতে পারেন।