১.
আধুনিক ফুটবল যখন নতুন ফর্মেশনে ব্যতিব্যস্ত, তখন সাধারণ দর্শকদের খেলা দেখার চোখেও পরিবর্তন আসে।
সময়টা ষাটের দশক। ল্যাটিন আমেরিকান ফুটবলীয় সৌন্দর্য্যের পসরা বসানো দল ব্রাজিল ফুটবলে নিয়ে এলো নতুন ‘ব্যাক ফোর’ সিস্টেম। সাফল্যও আসতে থাকলো হাতেনাতে। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের পর ’৬২ ও ’৭০ দুইটি বিশ্বকাপই গেল সেলেকাওদের ঘরে। ফলাফল, চিরদিনের মতো জুলেরিমে ট্রফিটি হাতিয়ে নিলো ‘সাম্বা’খ্যাত ব্রাজিল। তবে দর্শকদের খেলার চোখ আমূলে পালটে দিয়েছিলেন পেলে-টোস্টাও-গ্যারিঞ্চারা।
‘আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, রক্ষণভাগ জেতাবে শিরোপা।’ ফার্গির সেই বিখ্যাত উক্তিটি সবাই মনে মনে মানুক আর না মানুক, খেলার সময় মানুষ পছন্দ করতো বেশি বেশি গোল কিংবা আক্রমণাত্মক ফুটবল। অবশ্য কাউকে বিশেষ দোষারোপ করেও লাভ নেই, সেই চিন্তাভাবনা থেকে ফুটবলীয় দর্শকসমাজ এখনও বের হয়ে আসতে পারেনি। আচ্ছা, যাক সেসব কথা।
ব্রাজিলের আক্রমণাত্মক ফুটবলের দরুন মানুষের আগ্রহের বিশাল অংশ হেলে পড়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়ের দিকে, আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ‘ফ্রন্ট থ্রি’। আক্রমণভাগের মূল চাবিকাঠি যে তিনজনের কাছে, তাদের দিয়েই দলের শক্তিমত্তা মাপতে শুরু করে ভক্তকূল। বড় বড় ক্লাবগুলোও তখন দলে নিতে শুরু করে জিভে জল আনার মতো সব ‘ফ্রন্ট থ্রি’। সাম্প্রতিককালের মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ কিংবা বেল-বেনজেমা-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। সেই তারার হাট ভাঙলেও বর্তমানে সানে-গ্যানাব্রি-লেভানডস্কি কিংবা নেইমার-এমবাপে-ডি মারিয়ারাও আলো কেড়ে নিয়েছেন।
তবে বিগত এক দশকে মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের মতো হাইপ তৈরি করতে পারেননি আর কোনো ত্রয়ীই। তবে বার্সেলোনার ইতিহাসে শুধু ‘এমএসএন’ই নন, প্রতিপক্ষকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছেন এমন অনেক ত্রিমূর্তির আবির্ভাবই হয়েছে। ‘ন্যু ক্যাম্প’ নামের সেই তীর্থস্থান মাতিয়ে যাওয়া রথী-মহারথীর সংখ্যাও কম নয়। এমনকি ‘ফ্রন্ট থ্রি’ বিবেচনা করলেও মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের পাশাপাশি নাম চলে আসবে মেসি-ইতো-ভিয়া, মেসি-পেদ্রো-ভিয়া, মেসি-সানচেজ-পেদ্রোর নামও। কিন্তু ‘এমএসএন’এর মতো বিধ্বংসী ট্রায়োকে বিশ্লেষণ করতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে ‘৯০-এর দশকে। সেই সময়টা ছিল শুধুই রোমারিও- লাউড্রপ-স্টইচকোভের।
২.
ক্রুইফ ন্যু ক্যাম্পের ডাগআউটে এসেছিলেন ১৯৮৯ সালে। সেই বছরই আগমন মাইকেল লাউড্রপের। পরের মৌসুমে দলে আসেন বুলগেরিয়ান ‘ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়’ রিস্টো স্টইচকোভ। তবে ‘ডেডলি ট্রায়ো’-এর জন্য ক্রুইফকে অপেক্ষা করতে হয় আরো ৩ বছর। ১৯৯৩তে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রোমারিও’র ন্যু ক্যাম্পে আগমনের ফলে ষোলকলা পূর্ণ হয়। তবে বার্সেলোনার এই ট্রায়োর মেয়াদকাল ছিল মোটে এক বছর, ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম। কারণ, তারপরই ক্লাব ছাড়েন লাউড্রপ৷ তবে এক মৌসুমেই প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন এই তিনজন। কিন্তু… কতটা?
ক্রুইফের ভাষ্যমতে, একবার রোমারিও ব্রাজিলের কোনো এক কার্নিভালে যাওয়ার জন্য ট্রেইনিং ডে’তে ছুটি চেয়েছিলেন। ক্রুইফ তাকে বলেছিলেন, পরদিন তুমি যদি দুই গোল করতে পারো, তাহলেই তোমার ছুটি মিলবে। পরেরদিন ম্যাচটা শুরু হলো, আর ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় ২ গোল করে রোমারিও ছুটে আসলেন ক্রুইফের কাছে। বললেন,
‘আর ১ ঘন্টা পরই আমার ফ্লাইট। আমাকে এখনই যেতে দিন!’
ম্যাচটি কার বিপক্ষে ছিল, জানেন? রিয়াল মাদ্রিদ! পেলের পর একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ১০০০-এর বেশি গোল (অফিসিয়াল ও আনঅফিসিয়াল) করা রোমারিওর প্রতিভা নিয়ে কখনোই কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু এই ঘটনা ছিল রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ করে দেওয়ার মতো!
তবে রোমারিও আদতেই ছিলেন এক খামখেয়ালি সম্রাট। কিন্তু ক্রুইফ নিজের ‘ড্রিম টিম’ গঠন করেছিলেন রোমারিওকে কেন্দ্র করে, যার ফলে পুরো মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত খেললেও হুটহাট ফুটবলটা ভুলে বসতেন বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা। এই ‘ডেডলি ট্রায়ো’ প্রথম ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন রাইভাল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেই। রোমারিওর অনবদ্য হ্যাটট্রিকে মাদ্রিদকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে মৌসুমের যাত্রা শুরু করেছিল ক্রুইফ শিষ্যরা। মাদ্রিদের বিপক্ষে সেই ৯০ মিনিটের খেলা ছিল দর্শকদের জন্য এক অর্কেস্ট্রা। টোটাল ফুটবলের উপর দাঁড়িয়ে পুরো মাঠে শিল্পীর মতো তুলির আঁচড় দিয়ে জয়গান গেয়েছিলেন লাউড্রপ-স্টইচকোভরা।
মাইকেল লাউড্রপকে তখন ডাকা হতো ‘মেইড ইন লাউড্রপ’। পিএসভির হয়ে ১৪২ ম্যাচে ১২৭ গোল করা রোমারিও যখন বার্সেলোনায় আসলেন, তখন তিনি লাউড্রপ-বন্দনায় মুখর।
‘আপনি শুধু দৌঁড় দেবেন। কোনো না কোনোভাবে সে আপনার পায়ে বল পৌঁছে দেবেই।’
লাউড্রপকে নিয়ে এমনটাই অভিব্যক্তি ছিল রোমারিওর। তবে রোমারিও নিজেও কম যান না। পিএসভি’তে তিনি কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন গাস হিডিঙ্ককে। গাসের ভাষ্যমতে, প্রায়ই যখন তিনি কোনো ম্যাচের আগে দুশ্চিন্তায় থাকতেন, রোমারিও এসে বলতেন,
‘দুশ্চিন্তা করবেন না। আমি কমপক্ষে দুইটি গোল করবো, আর আমরা ম্যাচটা জিতবো।’
সে তো যে কেউই বলতে পারেন। তবে গাসের কাছে অবাক করা বিষয় ছিল, ১০ বারের মধ্যে ৯ বারই নিজের কথাকে সত্যিতে পরিণত করতেন রোমারিও।
সবশেষে স্টইচকোভ। ‘ক্ষ্যাপাটে ষাঁড়’ উপাধিই বুঝাতে সক্ষম, মাঠে কতটা হিংস্র ছিলেন স্টইচকোভ। শুধু বল পায়েও না, মাঠের শরীরী ভাষাতেও ছিলেন একই রকম। একটা সময় মানুষজন বলাবলি করত, স্টইচকোভকে থামাতে হলে আপনাকে সত্যিকারের পিস্তল নিয়েই মাঠে নামতে হবে।
কিন্তু সেই মৌসুমে খামখেয়ালিপনা পেয়ে বসা ছিল যেন বার্সেলোনার স্বভাবজাত। রিয়ালের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পরের ম্যাচে সেভিয়ার সাথে গোলশূন্য ড্র, তারপর হেরে বসা সোসিয়েদাদের কাছে! গা ঝাড়া দিয়ে উঠে অবশ্য রিয়াল জারাগোজাকে ৬-৩ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে ট্র্যাকে ফিরলো ক্রুইফের দল। পুরো মৌসুমজুড়ে অধারাবাহিক থেকেও সেই মৌসুমে বার্সেলোনা গোল করেছিল ৯১টি, তৎকালীন সময়ে যা ছিল এক মৌসুমে করা সর্বোচ্চ গোল। এর জন্য পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার রোমারিও-স্টইচকোভ-লাউড্রপ ট্রায়ো।
অবাক করা ব্যাপার, এত গোল করেও ভাগ্যের ছোঁয়া না পেলে শিরোপা ছুঁয়েও দেখা হতো না বার্সেলোনার। লিগের শেষ ম্যাচের আগ পর্যন্ত ১ পয়েন্ট এগিয়ে থেকেই মাঠে নেমেছিল দেপোর্তিভো লা করুনা। বার্সেলোনার দরকার ছিল জয়, আর পাশাপাশি প্রয়োজন ছিল দেপোর্তিভোর পয়েন্ট হারানোও। নিজেদের ম্যাচে প্রথমার্ধ্বে পিছিয়ে থেকেও ‘ফ্রন্ট থ্রি’র অনবদ্য পারফরম্যান্সে বার্সা ম্যাচ জিতে নেয় ৫-২ গোলে। ঈশ্বর হয়তো ‘সৌন্দর্য্যের পূজারী’ ক্রুইফের দিকেই তাকিয়েছিলেন৷ তা না হলে শেষ মুহূর্তের পেনাল্টি মিসে কেনই বা নিজেদের নিঃশ্বাস দূরত্বে থাকা শিরোপা হাতছাড়া করবে দেপোর্তিভো লা করুনা! অথচ বার্সেলোনার ৯১ গোলের বিপরীতে সেবার দেপোর্তিভো লিগে গোল করেছিল মোটে ৫৪টি৷ তাতেই বোঝা যায়, বার্সার আক্রমণভাগ ঠিক কতটা ছড়ি ঘুরিয়েছিল সেবার!
তবে লিগের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে ভাগ্য আশীর্বাদ হয়ে আসেনি বার্সেলোনার জন্য। ক্যাপেলোর মিলানের সাথে ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার আগে পরিষ্কার ফেভারিট ছিল বার্সেলোনাই। পুরো মৌসুমে আঁটসাঁট রক্ষণ দিয়ে মাত্র ৩৫ গোল করেই এসি মিলান ‘স্কুদেত্তো’ জিতেছিল সেবার। অথচ ফাইনালের আগে ইনজুরিতে মাঠের বাইরে দুই রক্ষণস্তম্ভ বারেসি ও কস্তাকুর্তা, এমনকি ছিলেন না মার্কো ফন বাস্তেনও। তবে ক্রুইফ নিজের কফিনে নিজেই পেরেক মেরেছিলেন লাউড্রপকে বেঞ্চ করে। পরবর্তীতে ক্যাপেলো বলেছিলেন, লাউড্রপকে প্রথম একাদশে না দেখেই নাকি তার দল চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। কারণ একমাত্র লাউড্রপকে নিয়েই নাকি ভয়ে ছিলেন ক্যাপেলো।
সেবার পুরো চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ ২২ গোল করা বার্সেলোনা ফাইনালে গোলের মুখই ভুলে গিয়েছিল। ফলাফল, মিলানের সাথে ফাইনালে ৪-০ ব্যবধানে হার। আর এই ম্যাচ দিয়েই পরিসমাপ্তি ঘটে বার্সার ইতিহাসে অন্যতম ডেডলি ট্রায়োর। ক্রুইফের উপর বিরক্তি নিয়ে পরের মৌসুমে লাউড্রপ নাম লেখান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদে। দুই বছর পর ক্লাব ছাড়েন স্টইচকোভ-রোমারিও।
৩.
‘তারা যদি ৪ গোল করতে পারে, আমরা ৬টি করতে সক্ষম। যদি ১% সুযোগ থাকে, তাহলে দরকার ৯৯% বিশ্বাস।’
পিএসজির বিপক্ষে বার্সেলোনার সেই ঐতিহাসিক জয় দাগ কেটে রাখবে সব ফুটবলপ্রেমীদের। সেই জয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নেইমার, ২ গোল আর ১ অ্যাসিস্ট করে। স্কোরশিটে নাম তুলেছিলেন লিওনেল মেসি আর সুয়ারেজও। কিন্তু কেউই জানত না, সেদিনই ছিল এই ত্রয়ীর ভয়ঙ্কর রূপ একসাথে দেখার শেষ দিন। অবশ্য তখন কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি, মৌসুমশেষে নেইমার পাড়ি জমাচ্ছেন এই পিএসজিতেই।
তবে ৩ বছরের মধ্যেই এই ত্রয়ী যা করে দেখিয়েছেন, ইতিহাসের পাতায় অমরত্বের জন্য তা যথেষ্ট।
‘এমএসএন’-ত্রয়ীর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন ছিলেন লুইস সুয়ারেজ। ২০১৪ বিশ্বকাপে ‘কিয়েল্লিনি কামড়’ কাণ্ডে যখন সুয়ারেজকে নিয়ে টালমাটাল গোটা ফুটবলবিশ্ব, সেই সময়টাতেও তার উপর ভরসা রেখেছিল বার্সা। ২০১৪ সালে বার্সেলোনায় যোগদানের পর সেই ভরসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন ‘এল পিস্তেলোরো’।
এই ত্রয়ী যে ইউরোপ জয় করতে এসেছে, সেই বার্তা প্রথম আসে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারিতে ৩-১ গোলের জয়ে গোলমুখ খুঁজে পেয়েছিলেন ৩ জনই। তার আগেই অবশ্য অক্টোবরে এল ক্ল্যাসিকোতে নেইমার করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এক গোল। সেই সময়টাতে অবশ্য চার মাসের নিষেধাজ্ঞায় সুয়ারেজের সময় কাটছিল বেঞ্চে। লিওনেল মেসিও ছিলেন ইনজুরিতে৷
তবে জানুয়ারিতে তিনজনে একত্র হওয়ার পর বেশি সময় নেননি৷ ৬ মাসের মাথায় ইউরোপ জয়; ম্যানচেস্টার সিটি, পিএসজি, বায়ার্ন, জুভেন্টাস। একের পর এক নকআউট ম্যাচে সব লিগ চ্যাম্পিয়নদেরই প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে লাগলো বার্সেলোনা। অবশ্য ‘এমএসএন’-এ ভর করে সেসব বাধা ডিঙ্গাতে একদমই কষ্ট হয়নি বার্সার। দিনশেষে ইউরোপসেরা হওয়ার প্রাক্কালে মেসি-নেইমার করেছিলেন ১০টি করে গোল, যা কি না ছিল সেই মৌসুমের সর্বোচ্চ; সুয়ারেজও পেয়েছিলেন ৯ গোল। বার্সেলোনার শোকেসেও দ্বিতীয়বারের মতো আসে আরাধ্য ট্রেবল। মেসি জিতে নেন ব্যালন ডি’অর, আর লিগে ৪০ গোলসহ সর্বমোট ৫৯ গোল করা সুয়ারেজ জিতে নেন গোল্ডেন বুট।
মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ বার্সেলোনায় একসাথে খেলেছেন তিন মৌসুম। তাতে এই ত্রয়ীর খাতায় সম্মিলিতভাবে যোগ হয়েছে ২৫০ গোল আর ১১৬ অ্যাসিস্ট। পরিসংখ্যানের খাতায় সব রেকর্ড ওলটপালট করে দেওয়া এমএসএনের সত্যিকারের মাহাত্ম্য অবশ্য পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়, মেসি-নেইমার-সুয়ারেজের নাম শুনলেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের শিরদাঁড়া বেয়ে যে হিমস্রোত বয়ে যেত, সেসব তো আর পরিসংখ্যানের পাতায় লেখা থাকবে না!
৪.
‘পরিসংখ্যান একটি ডাহা মিথ্যা’ এই প্রবাদ কম বেশ সবাই শুনেছেন। আপনি যদি পরিসংখ্যান দিয়ে মাপতে যান, তাহলে ক্রুইফের ‘ডেডলি ট্রায়ো’ বেশ নিচেই থাকবে হয়তো, এমনকি শিরোপার ক্ষেত্রেও। তাদের চেয়ে তিন গুন বেশি শিরোপা জিতেছেন এমএসএন-ত্রয়ী। কিন্তু পারিপার্শ্বিকতার বিচারে কেউই কারো থেকে কম ছিলেন না। ২০১৪ বিশ্বকাপ এর পরে যখন এমএসএন ত্রয়ী গঠিত হয় ন্যু ক্যাম্পে; তারও আগে থেকে ইউরোপে বার্সেলোনার আধিপত্য। গার্দিওলা-উত্তর যুগে বার্সেলোনা ততদিনে সর্বেসর্বা ক্লাব। এরই মধ্যে একবিংশ শতাব্দীতে বার্সার লা লিগা শিরোপা জেতা হয়ে গিয়েছিলো ১০ বার, চ্যাম্পিয়নস লিগও এসেছে ন্যু ক্যাম্পে ৩ বার। আর সাথে একটি ট্রেবলও ছিল।
অথচ ক্রুইফের শিষ্যরা খেলেছিলেন এক টালমাটাল বার্সেলোনায়৷ ক্রুইফের কোচ হিসেবে আগমনের আগে তো কোনো চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাই ছিল না বার্সার শোকেসে। লিগেও ছিলো রিয়াল মাদ্রিদের আধিপত্য। ১৯৬১ সালের পর ক্রুইফ আসার আগ পর্যন্ত লিগ শিরোপা মোটে দুইবার গিয়েছে বার্সার ঘরে। সেখান থেকে প্রভাব বিস্তার করাটা মোটেও সহজ ছিল না। রোমারিও-স্টইচকোভ-লাউড্রপ এই তিনে মিলে বার্সেলোনাকে সাহসী হতে শিখিয়েছেন, প্রতিপক্ষের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে ভূড়ি ভূড়ি গোল করা শিখিয়েছেন। শিখিয়েছেন কীভাবে খেলার আগেই প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া যায়। এমনকি টিকিটাকা ঘরানার ফুটবলও তাদেরই হাত ধরে আসা। আর সেই শিখানো পথে হেঁটেই সাফল্যের শীর্ষে উঠেছেন মেসি-নেইমার-সুয়ারেজরা। তাই বার্সেলোনার ইতিহাস যথাযথ সম্মান দিয়েই স্মরণ রাখবে দুই ত্রয়ীকেই।