টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান এবং বোলারদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় উইকেটরক্ষককে। স্বাভাবিকভাবে একজন বোলার কিংবা ব্যাটসম্যান প্রতি ম্যাচে নিজের সেরাটা দিতে পারবেন না। কিন্তু একজন উইকেটরক্ষককে প্রতিটি ক্যাচই দক্ষতার সাথে তালুবন্দী করতে হয়, কারণ একটি ক্যাচ ফসকে গেলে পুরো ম্যাচ জুড়েই এর খেসারত দিতে হয় দলকে। একটা সময় শুধুমাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে একজন ক্রিকেটার দলে সুযোগ পেতেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যেমনই হোন না কেন, উইকেটরক্ষক হিসেবে হতে হবে সেরাদের সেরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অবশ্য এই ধারণা বদলাতে শুরু হয়। উইকেটরক্ষকরাও ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়তে শুরু করেন।
অ্যালান নট, ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার, সৈয়দ কিরমানি, রড মার্শ, জেফ ডুজন, ইয়ান হিলি, গ্রান্ট ফ্লাওয়ার এবং অ্যালেক স্টুয়ার্টরা যুগে যুগে বুঝিয়ে দেন যে, শুধুমাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে একাদশে জায়গা করে নেয়ার যুগ শেষ। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মহেন্দ্র সিং ধোনি, মার্ক বাউচারদের যুগের পর এখন আর কোনো সন্দেহ নেই যে, শুধুমাত্র উইকেটরক্ষক হিসেবে দলে সুযোগ পাওয়া যায় না। সেই সাথে স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানও হতে হয়। তবে এখনও টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালিষ্ট উইকেটরক্ষকদের গুরুত্ব অনেক। পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও পারদর্শিতা থাকা চাই।
বর্তমানে প্রায় সব উইকেটরক্ষকই ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করছেন। তা না হলে দলে জায়গা পেতে যে মুশকিল হয়ে যাবে, সেটা তারা নিজেরাও জানেন। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক তো ওয়ানডেতে দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন। সরফরাজ আহমেদ, ঋষভ পান্ত, ঋদিমান সাহা, মুশফিকুর রহিম, টিম পেইনরা ব্যাটসম্যান হিসেবেও সুপরিচিত। উইকেটরক্ষক স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে তাদের নামডাক রয়েছে। সেই হিসেবে নিউ জিল্যান্ডের উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংকে নিয়ে তেমন ডামাডোল পেটানো হয় না। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তার পারফরমেন্স বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, টেস্ট ক্রিকেটে সময়ের সেরা উইকেটরক্ষকদের একজন তিনিই।
আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করা এবং পর্দার আড়ালে থাকা বিজে ওয়াটলিংয়ের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার সম্পর্কে জেনে আসা যাক চলুন।
১.
বিজে ওয়াটলিং দলের বিপর্যয়ের মুখে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়েন। উইকেটরক্ষক হিসেবেও তিনি বিশ্বস্ত। সেই হিসেবে তিনি খুব একটা আলোচনায় আসেন না। তিনি নিজেও আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। নিজেকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন না। নিজেকে সেরাদের একজনও মনে করেন না। তার ভাষ্যমতে, তার চেয়ে আর ভালো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান বর্তমানে আছে, তিনি সেরাদের একজনও নন। তিনি শুধুমাত্র তার ক্যারিয়ারের শেষের সময়গুলো উপভোগ করতে চান।
বিজে ওয়াটলিংয়ের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ২০০৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৫৯টি টেস্ট ম্যাচ। এর মধ্যে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলেছেন ৫১টি টেস্ট। তার অভিষেকের পর থেকে তার চেয়ে বেশি বল মোকাবেলা করতে পারেননি আর কোনো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। তিনি উইকেটরক্ষক হিসেবে ৭৯ ইনিংসে ৬,২৪১ বল মোকাবেলা করেছেন। দ্বিতীয়তে থাকা মুশফিকুর রহিম ৭৫ ইনিংসে ৫,৯৫০ বল মোকাবেলা করেছেন ওয়াটলিংয়ের অভিষেকের পর থেকে। এ সময়ে মহেন্দ্র সিং ধোনি ৫০ ম্যাচ, ম্যাট প্রিয়র ৫৬ ম্যাচ, সরফরাজ আহমেদ ৪৯ ম্যাচ এবং জনি বেয়ারস্টোর মতো উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানরা ৪১ ম্যাচ খেলেও ওয়াটলিংয়ের কাছ ঘেষতে পারেননি।
তিনি এখন পর্যন্ত উইকেটরক্ষক হিসেবে ৫টি শতক এবং ১৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৯.৭৭ ব্যাটিং গড়ে ২,৬৬৫ রান সংগ্রহ করেছেন। কিউই উইকেটরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান তোলার দিক দিয়ে তার উপরে আছেন শুধুমাত্র ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তিনি ৩৪.১৮ ব্যাটিং গড়ে ৫টি শতক এবং ১৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২,৮০৩ রান তুলেছেন। সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের দিক দিয়েও তিনি জাতীয় রেকর্ড গড়ার পথে। মাত্র ৫১ ম্যাচ ১৯০টি ক্যাচ এবং ৭টি স্ট্যাম্পিং করে মোট ১৯৭টি ডিসমিসাল আছে তার নামের পাশে। কিউইদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২০১টি ডিসমিসাল আছে অ্যাডাম প্যারোরের। প্রতি ইনিংসে শতকরার হিসেবে গড়ে তার চেয়ে বেশি ডিসমিসাল আছে শুধুমাত্র তিনজন উইকেটরক্ষকের।
২.
ব্রাডলি জন ওয়াটলিং ১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিজে ওয়াটলিং নামেই পরিচিত। মাত্র দশ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে সপরিবারে নিউ জিল্যান্ড পাড়ি জমান তারা। সেখানে তিনি হ্যামিল্টন বয়েজ হাই স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকেই শুরু হয় তার পথচলা। নিউ জিল্যান্ডের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার ক্রিস কুগেলেইজনের কোচিংয়ে তিনি স্কুল ক্রিকেট খেলেন। এরপর ২০০৪ সালে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেন নিউ জিল্যান্ডের হয়।
২০০৪ সালের ৬ ডিসেম্বর নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে আট নাম্বারে নেমে তিনি ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে নামেন ওপেনিংয়ে। নিজের প্রথম দুটি ফার্স্টক্লাস ম্যাচে তিনি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে খেললেও পরবর্তীতে ওপেনার হিসেবে খেলেন। লিস্ট-এ ক্রিকেটেও তিনি ওপেনার হিসেবে খেলেন।
বিজে ওয়াটলিংয়ের টেস্ট ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটে ওপেনার হিসেবে। তখন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান করার সুবাদে ২০০৯ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে পিটার ফুলটনের ব্যর্থতার কারণে তৃতীয় টেস্টে মূল একাদশে সুযোগ পান ওয়াটলিং। টিম ম্যাকিনটশের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দুই ইনিংসেই অর্ধশত রানের জুটি গড়েন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৬০ রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে অবিচ্ছিন্ন ৯০ রানের জুটি গড়েছিলেন ম্যাকিনটশের সাথে। এর মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৬২ বলে অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস খেলেন।
নিউ জিল্যান্ডের নিয়মিত উইকেটরক্ষক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হওয়ার জন্য টেস্ট ক্রিকেটে শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা শুরু করার পর ওয়াটলিং গ্লাভসজোড়া পরে নেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলতে নেমে নিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচেই শতকের দেখা পান তিনি, যা ছিলো তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। নেপিয়ারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাত নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে ১৪৯ বলে অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।
উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলা শুরু করার পর বদলে যায় তার টেস্ট ক্যারিয়ার। টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের প্রধান দায়িত্ব থাকে দক্ষতার সাথে কিপিং করা। তিনি সেই কাজ ভালোভাবেই সম্পূর্ণ করছেন। সেই সাথে লোয়ার-অর্ডার কিংবা শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের সাথে জুটি বেঁধে প্রতিনিয়ত দলকে বিপদের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছেন। এখন পর্যন্ত ৫৯টি টেস্ট খেলে ৬টি শতক এবং ১৬টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৭.৭৪ ব্যাটিং গড়ে ৩,০৫৭ রান করেছেন ওয়াটলিং।
৩.
২০১৪ সালের ভ্যালেন্টাইন ডে’তে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের মুখোমুখি হয় নিউ জিল্যান্ড। ফেব্রুয়ারিতে শীতের দিনে শুরু হওয়া এই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ছিলো নিউ জিল্যান্ড। সিরিজ জিততে হলে শেষ এবং দ্বিতীয় টেস্ট ড্র করলেই চলতো স্বাগতিকদের। অন্যদিকে ভারতের জয়ের কোনো বিকল্প ছিলো না। জয়ের লক্ষ্যে ভারত ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। ওয়েলিংটন টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে জয় থেকে ভারতের দূরত্ব ছিলো সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ওয়েলিংটন টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো ভারত। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করে নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানে গুটিয়ে দেয় ভারতীয় পেসাররা। জবাবে ভারত নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৩৮ রান সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে আবারও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউ জিল্যান্ড। মাত্র ৯৪ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৫ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। এরপর ৬ষ্ঠ উইকেট উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম এবং বিজে ওয়াটলিং। এদিন ম্যাককালাম দীর্ঘ সময় ধরে উইকেটে টিকে থাকার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। প্রয়োজন ছিলো অপরপ্রান্ত থেকে আরেকজন ব্যাটসম্যানের সমর্থন। এই সমর্থন দেন ওয়াটলিং।
এই দুজন ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৫২ রান যোগ করে ভারতের জয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেন। সেসময় ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটি সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিলো, যা একবছর পর কেন উইলিয়ামসন এবং বিজে ওয়াটলিং জুটি টপকে যায়। এর একবছর পর ২০১৬ সালে বেন স্টোকস এবং জনি বেয়ারস্টো ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৯৯ রান যোগ করে বিশ্বরেকর্ড নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছেন।
ওয়েলিংটনে ভারতের বিপক্ষে ৩৫২ রানের জুটিতে বিজে ওয়াটলিংয়ের ১২৪ রান। তিনি ৫১০ মিনিট ব্যাট করেছিলেন এবং ৩৬৭ বল মোকাবেলা করেছিলেন। তার ইনিংসের কল্যাণে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম প্রথম কিউই ব্যাটসম্যান হিসাবে ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। শেষপর্যন্ত দাপটের সাথে ম্যাচ ড্র করে সিরিজ জিতে নিয়েছিলো স্বাগতিকরা। নায়ক হতে না পারলেও পার্শ্ব-নায়ক হয়ে বহু ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের পিঠ বাঁচিয়েছিলেন ওয়াটলিং। এজন্যই হয়তো ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ফেভারিট প্লেয়ার তিনি। কেন উইলিয়ামসন তার সাথে ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন।
৪.
২০১৫ সালের ৩রা জানুয়ারি, আবারও ওয়েলিংটনে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন ওয়াটলিং। এবার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসনকে। টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নিউ জিল্যান্ড ২২১ রান সংগ্রহ করেছিলো। জবাবে শ্রীলঙ্কা ৩৫৬ রান সংগ্রহ করে ১৩৫ রানের লিড নেয়। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার পক্ষে বাজি ধরতে লোকের অভাব হবে না। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেও নিউ জিল্যান্ডের টপ অর্ডাররা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। লিড যখন মাত্র ২৪ রান, তখন প্রথম সারির পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে।
এরপরের গল্পটা কেন উইলিয়ামসন এবং বিজে ওয়াটলিংয়ের। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে তারা অবিচ্ছিন্ন ৩৬৫ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে পুরোপুরি ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে দেন। ওয়াটলিং ৪৭৯ মিনিট ক্রিজে থেকে ৩৩৩ বলে অপরাজিত ১৪২ রানের ইনিংস খেলে উইলিয়ামসনকে যোগ্য সমর্থন যুগিয়েছিলেন। উইলিয়ামসন খেলেছিলেন ২৪২* রানের ইনিংস। তাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের পর বোলারদের কল্যাণে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৩ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছিলো কিউইরা।
পরবর্তী ম্যাচ খেলেন তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। লর্ডসে ঐ ম্যাচের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৬১* এবং ৫৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। তবুও দলকে পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি। এরপর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তার অনবদ্য ১২০ রানের সুবাদে ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানোর গৌরব অর্জন করেছিলো নিউ জিল্যান্ড। লিডসে এই ম্যাচে শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ১২০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি, যার ফলে ইংল্যান্ডকে ১৯৯ রানের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলো সফরকারীরা। সবসময় পার্শ্বনায়ক হয়ে থাকা ওয়াটলিং এই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছিলেন।
এশিয়ার মাটিতে তার প্রথম শতকটিও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি ১০৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তিনি যখন ২৮ রানে ব্যাট করছিলেন, তখন দলের শেষ ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্ট ক্রিজে আসেন। তার সাথে দশম উইকেট জুটিতে ১২৭ রান যোগ করে নিজের শতক পূর্ণ করেন ওয়াটলিং, দশম উইকেট জুটিতে যা নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
দলের বিপর্যয়ের মুখে টেল-এন্ডারদের সাথে জুটি বেঁধে দলকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে সিদ্ধহস্ত ওয়াটলিং। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এমনই এক ইনিংস খেলেন তিনি। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৬৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে নিউ জিল্যান্ড। এরপর সেখান থেকে টিম সাউদিকে সাথে নিয়ে ১০৮ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি। তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৬ রান।
ক্রাইস্টচার্চে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুরু হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও নিউ জিল্যান্ডকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচান ওয়াটলিং। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের করা ৩০৭ রানের জবাবে মাত্র ৩৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো নিউ জিল্যান্ড। সেখান থেকে তার ৮৫ রানের ইনিংসের উপর ভর করে নিউ জিল্যান্ড ২৭৮ রান সংগ্রহ করেছিলো, যার ফলে শেষপর্যন্ত ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয়েছিলো নিউ জিল্যান্ড।
বিজে ওয়াটলিং নিজেকে সেরা মানতে নারাজ। পাঁচদিন কঠোর পরিশ্রম করে দলকে নিজের সেরাটা দিয়ে জয় উপহার দিতে পারলেই তিনি খুশি। তিনি এজন্যই ক্রিকেট খেলেন, আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করা ৩৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার নিজের ক্যারিয়ারের শেষ কয়েক বছর নিজের মতো করে উপভোগ করতে চান।