ফুটবলে দলবদল এক নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এই দলবদলকে ঘিরে প্রতিবারই নাটকীয় ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এমন কিছু ঘটনা থাকে যেগুলো এক একটা সময়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমনই দশটি ঘটনা নিয়ে আজকের লেখাটি সাজানো।
১০. সোল ক্যাম্পবেল (টটেনহ্যাম থেকে আর্সেনাল)
লন্ডনে ফুটবল ক্লাবের কোনো অভাব নেই। কিন্তু চেলসি, টটেনহ্যাম আর আর্সেনালের ত্রিমুখী বৈরিতার মাত্রাটাই আলাদা। টটেনহ্যামের আবার প্রধান লন্ডন রাইভাল ক্লাব হলো আর্সেনাল। সোল ক্যাম্পবেল তখন টটেনহ্যামের ডিফেন্সের স্তম্ভ, ইংলিশ লিগের সেরাদের একজন তিনি। তার গোড়াপত্তনও এই ক্লাবের যুব একাডেমিতে। ২০০০ সালের দিকে ইংল্যান্ডে ছিল আর্সেন ওয়েঙ্গারের আর্সেনালের দাপট। খেলার স্টাইল বা সাফল্য সবদিক দিয়েই আর্সেনাল তখন টটেনহ্যামের চেয়ে উত্তম। আর্সেনালের ইচ্ছে ছিলো ইংলিশ এই সেন্টার ব্যাককে কেনার, কিন্তু টটেনহ্যাম তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে তাকে বিক্রি করবে না।
এমন অবস্থায় সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ক্যাম্পবেল অচিন্ত্যনীয় এক কাজ করে বসলেন, চুক্তি নবায়ন করলেন না টটেনহ্যামের সাথে! ১২ বছর এই ক্লাবে কাটিয়েও ফ্রিতে টটেনহ্যাম ছেড়ে ২০০১ সালে শত্রুশিবিরে যোগ দিলেন তিনি। এরপর যখনই আর্সেনালের হয়ে টটেনহ্যামের মাঠে খেলতে যেতেন ক্যাম্পবেল, তার আগের ক্লাবের সমর্থকরা আর্সেনাল দলের চেয়েও বেশি টিটকারী দিত তাদেরই একসময়কার এই প্রিয় খেলোয়াড়কে। ক্যাম্পবেল আর্সেনালে গিয়ে সেই বিখ্যাত ‘ইনভিন্সিবল’ দলের অংশ হন, যেটি কোনো ম্যাচ না হেরেই লিগ জিতেছিল।
৯. জন ওবি মিকেল (লিও থেকে চেলসি)
লিওতে মিকেল নামে এক আফ্রিকান মিডফিল্ডার দারুণ খেলছে তখন। তার ওপর চোখ পড়ল দুই জায়ান্ট চেলসি এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। স্যার অ্যালেক্স বোর্ডকে বললেন দ্রুত সাইন করে ফেলতে মিকেলকে। সেই মাফিক ক্লাবকর্তারা লিওর সাথে ৪ মিলিয়ন ইউরোতে চুক্তি করে ফেলে এবং ঘোষণা দিয়ে দেয় যে, তারা লিওর সাথে চুক্তিতে পৌঁছেছে মিকেলকে কেনার ব্যাপারে। কিন্তু মিকেলের মত না নিয়েই, মোটামুটি বলা যায় তার এজেন্টকে বাইপাস করে লিও চুক্তি করে ফেলেছিল। মিকেল এরপর লাপাত্তা হয়ে যান, ৮ দিন কোনো খোঁজ নেই তার।
ভাবা হচ্ছিল, কিডন্যাপ হয়ে গেছেন তিনি। নবম দিন দেখা গেল হাস্যোজ্জ্বল মিকেল চেলসির হয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করছেন! ১৬ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে কিনে নেয় চেলসি। লিওকে তারা দেয় ১২ মিলিয়ন আর ম্যানইউকে ৪ মিলিয়ন ইউরো।
৮. তেভেজ ও মাসচেরানো (করিন্থিয়ান্স থেকে ওয়েস্ট হ্যাম)
২০০৬ সালের দিকে দুই আর্জেন্টাইন তেভেজ ও মাসচেরানো ব্রাজিলিয়ান জায়ান্ট ক্লাব করিন্থিয়ান্সে খেলতেন। দারুণ প্রতিভাবান উঠতি এই দুই তরুণকে কিনতে চেলসি, ইউনাইটেড, আর্সেনাল, লিভারপুল এমন অনেকেই ইচ্ছুক ছিল। সেসময়ে ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্টহ্যাম টেবিলের নিচের সারির দল, কোনোমতে রেলিগেশন এড়ায়। হঠাৎই সারা বিশ্বকে চমকে দিয়ে ওয়েস্ট হ্যাম এই দুই অসম্ভব প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে কিনে নেয়। সবার চোখ কপালে! তদন্ত শুরু হলো, বেরিয়ে এলো তারা দুজনই ‘থার্ড পার্টি ওনারশিপ’ বা তৃতীয়পক্ষ মালিকানার জালে আবদ্ধ এবং এই তৃতীয় পক্ষটি হলো লন্ডনভিত্তিক এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওয়েস্টহ্যাম ক্লাবটিও লন্ডনেরই। তেভেজ লিগের শেষ ম্যাচে গোল করে দলের রেলিগেশন বাঁচালেও ক্লাব জরিমানা থেকে বাঁচতে পারেনি। এফএ ক্লাবটিকে ৫.৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করে। ওয়েস্টহ্যামও আর তেভেজ-মাসচেরানোকে ধরে রাখতে পারেনি এত বিতর্কের মাঝে।
এই ট্রান্সফার কাহিনী বের হওয়ার পর সবিস্তারে বেরিয়ে আসে কীভাবে তৃতীয় পক্ষ মালিকানা ব্যবস্থায় লাতিন আমেরিকার তরুণ খেলোয়াড়দের বিক্রি করে একটি ব্যবসায়ী শ্রেনী লাখ লাখ ডলার কামিয়ে নিচ্ছে।
৭. তেভেজ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে ম্যানচেস্টার সিটি)
দুই বছর ওয়েস্টহ্যাম থেকে লোনে ইউনাইটেডে এসে তেভেজ বেশ সফল ছিলেন। টানা দুটো লিগ জেতেন সে সময়। রুনি-রোনালদোর সাথে গড়ে তোলেন দুর্ধর্ষ এক জুটি। ফ্যানরা চাচ্ছিলেন তাকে স্থায়ীভাবে রেখে দেয়া হোক, এই নিয়ে স্টেডিয়ামে তারা গলাও ফাটিয়েছে। কিন্তু বোর্ড তাকে কন্ট্রাক্ট দেয়নি। সেই রাগে তিনি নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেন। ম্যানসিটি ফ্যানরা তখন শহরের বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ডে তাকে আনার ওয়েলকাম মেসেজ দিয়ে রাখে রেড ডেভিল ফ্যানদের কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়ার জন্য।
স্যার অ্যালেক্স একবার বলেছিলেন, তার জীবদ্দশায় তিনি ম্যানসিটিকে লিগ জিততে দেখবেন না। ২০১২-তে সিটি যখন লিগ জেতে, তখন তেভেজ তাকে উদ্দেশ্য করে প্ল্যাকার্ড দেখান, যাতে লেখা ছিল- ‘R.I.P. FERGIE’!
৬. ইয়োহান ক্রুয়েফ (আয়াক্স থেকে ফেইনুরদ)
ডাচ কিংবদন্তী ইয়োহান ক্রুয়েফ অনেকের চোখেই ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি ছিলেন আপাতমস্তক একজন আয়াক্স-ম্যান। আয়াক্সের প্রতীক ছিলেন তিনি, অসম্ভব সাফল্য তার আয়াক্সে। আয়াক্স থেকে বার্সায় গিয়ে দারুণ এক বার্সা অধ্যায় শেষে সেখান থেকে তিনি ১৯৮০ সালে আবার আয়াক্সে ফিরে আসেন। এরপর আবারও আয়াক্সের ‘ফালক্রাম’ হলেন। তবে দলকে ১৯৮২ সালে অসাধারণ নৈপুণ্য দিয়ে লিগ জেতানোর পরেও ক্লাব তাকে নতুন চুক্তির কোনো প্রস্তাব দিল না। ক্লাব ভেবেছিলো, তার বয়স হয়ে আসছে। এতে ক্রুয়েফ প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করলেন। এরপর তিনি ঘটালেন অভাবনীয় এক ঘটনা, যোগ দিলেন আয়াক্সের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফেইনুরদে, যারা ডাচ লিগে আয়াক্সের দাপটে কোণঠাসা ছিল। সে আমলের সাপেক্ষে ক্রুয়েফের আয়াক্স ছাড়াটা অনেকটা মেসির বার্সা ছেড়ে মাদ্রিদে যাওয়ার মতোই ঘটনা। পুরো হল্যান্ডে আলোড়ন উঠল এরপর।
সেবার আয়াক্স ফেইনুরদকে ৮-২ গোলে হারায়, অনেক ঠাট্টা হতে থাকে ক্রুয়েফকে নিয়ে, কিন্তু শেষ হাসি তিনিই হাসেন। আয়াক্সকে টপকে তিনি ফেইনুরদকে লিগ জিতিয়ে অপমানের জবাব দেন। কিন্তু মৃত্যুর আগ অবধি তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন আয়াক্স ও বার্সা অনুগত প্রাণ।
৫. এশলে কোল (আর্সেনাল থেকে চেলসি)
‘হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ’ কথাটি যে এমনভাবে ঘুরে আসবে, তা আর্সেনাল ভুলেও ভাবেনি। কোল তখন ইংলিশ লিগের অন্যতম সেরা লেফট ব্যাক, আর্সেনালের নিয়মিত খেলোয়াড়। সাপ্তাহিক ২৮,০০০ ডলার বেতন তার, তিনি তা বাড়ানোর দাবি করলেন। তার দাবি ছিল সাপ্তাহিক ৬০,০০০ ডলার। আর্সেনাল বোর্ড বেতন কাঠামোর ব্যাপারে খুব শক্ত। বোর্ড তাকে ৫৫,০০০ ডলার অফার করল, প্রস্তাবের সাথে ফারাক মাত্র ৫,০০০ ডলার। কোল এতে প্রচণ্ড খেপে গেলেন। এই সুযোগ কাজে লাগালো আগে থেকেই তাকে পেতে ইচ্ছুক চেলসি। মরিনহো-ওয়েঙ্গারের দ্বন্দ্ব তো সর্ববিদিত, কেউ কাউকে ছাড় দেবেন না। ওয়েঙ্গার বিক্রি করতে অনিচ্ছুক আর মরিনহো নেবেনই। শেষপর্যন্ত ১৬.৫ মিলিয়ন ইউরোতে নিজের ইচ্ছার জোরেই সাপ্তাহিক ৯০,০০০ ডলার চুক্তিতে চেলসিতে যোগ দেন তিনি।
ক্যাম্পবেলকে টটেনহ্যাম থেকে আনার মাত্র ৫ বছরের মাথায় তাদেরই এক দারুণ প্রতিভাবান প্লেয়ার যোগ দিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চেলসিতে। এরপর থেকেই তাকে আর্সেনাল ফ্যানরা ‘ক্যাশলি হোল’ বা এমন আরো বহু নামে টিটকারী মারত। ঠিক ক্যাম্পবেল যেমন আচরণটা পেতেন টটেনহ্যাম ফ্যানদের থেকে, কোলও এমনই আচরণ পেতেন গানার ফ্যানদের কাছ থেকে।
৪. ব্যাজ্জিও (ফিওরেন্টিনা থেকে জুভেন্টাস)
১৯৮৯-৯০ সালের ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে ফিওরেন্তিনার মুখোমুখি হয় জুভেন্টাস। ফিওরেন্তিনা ৩-১ গোলে হেরে যায় প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে। কিন্তু আসল হারটা হয় মাঠের বাইরে। এর কয়েকদিন পরই ফিওরেন্তিনা সমর্থকদের সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়, ইতালি তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ফরোয়ার্ডকে কিনে নেয় ইতালিয়ান জায়ান্ট জুভেন্টাস, অনেকটা তার মতের বাইরে গিয়েই।
ফিওরেন্তিনা ফ্যানরা মেনে নিতে পারেনি এটি, তারা রাস্তায় বেরিয়ে আসে। একটা দাঙ্গাও হয়ে যায় এ নিয়ে, যেটা ‘রায়ট ইন ফ্লোরেন্স’ নামে পরিচিত। জুভেন্টাসের হয়ে যেবার প্রথম ফিওরেন্তিনার মাঠে খেলতে আসেন তিনি, জুভেন্টাস একটি পেনাল্টি পায়। সাধারণত তিনিই দলের সব পেনাল্টি নিতেন। কিন্তু প্রিয় ক্লাবের বিরুদ্ধে পেনাল্টি নিতে আসেননি ব্যাজ্জিও, ক্যাপ্টেন বলার পরেও। ডাগআউটে কোচ রেগে তাকে তুলে নিলেন। বেরিয়ে আসার সময় ফিওরেন্তিনা ফ্যানের ছোঁড়া এক ব্যাজে চুমু খেয়ে তিনি ক্লাবের প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
৩. নেইমার (সান্তোস থেকে বার্সেলোনা)
সাম্প্রতিক সময়ে এর চেয়ে বড় ট্রান্সফার বিতর্ক আর হয়নি, এই বিতর্ক কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে যোগ দেয়া থেকে না, আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে। মিডিয়ায় জানানো হয়, নেইমার ৫৭ মিলিয়নে বার্সায় যোগ দেন। ওদিকে তার ক্লাব সান্তোস জানায়, তারা ১৭.১ মিলিয়ন ইউরো পেয়েছে। বাকিটা দেয়া হয়েছে তৃতীয় পক্ষ মালিকানা প্রতিষ্ঠানকে আর তার বাবার ‘কফি খাবার টিপ’ হিসেবে (ঠিক এই ভাষাটাই সান্তোস প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করেন)। কে পেল, কত পেল, কেন কম পেল, কীভাবে পেল- এমন বহু প্রশ্নের তোড়ে তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে বিপুল আর্থিক অসংগতি বেরিয়ে আসে, ‘কফি টিপ’ যা ছিল তা দিয়ে অনেকের এক জীবনের রাজকীয় চলার খরচ হয়ে যেত! সে তদন্তে বার্সার তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট স্যান্দ্রো রোসেল দোষী সাব্যস্ত হন এবং ক্লাব থেকে পদত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি জেলে রয়েছেন! এই ট্রান্সফার অসংগতি বার্সা বোর্ডকে টালমাটাল করে দেয়।
২. আলফ্রেড ডি স্টেফানো (মিলোনারিস থেকে রিয়াল)
এই ট্রান্সফারটিকে খুব সহজে রিয়ালের ইতিহাস বদলে দেয়া ট্রান্সফার বলা যায়। ডি স্টেফানো তখন আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভার প্লেট মাতাচ্ছেন। রিয়াল, বার্সা দু’দলই তাকে কিনতে পাগলপ্রায়। রিভারপ্লেটের সাথে কোনো কারণে বনিবনা না হওয়ায় তিনি কলম্বিয়ান ক্লাব মিলোনারিসে চলে যান। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এত সহজ ছিল না। বার্সেলোনা রিভার প্লেটের খেলোয়াড় ভেবে তাদের সাথেই ডিল করে ফেলে, কিন্তু আসলে ততদিনও তিনি মিলোনারিসের খেলোয়াড়ি ছিলেন। রিয়াল তখন চুক্তি করে বসল মিলোনারিসের সাথেই। এবার এক অভূতপূর্ব ঝামেলা তৈরি হলো, আসলে স্টেফানো কার? বার্সার দাবি, তারা সময়মতোই রিভারের সাথে চুক্তি করেছে। আবার রিয়ালের দাবি, তারা সঠিক উপায়ে খেলোয়াড় কিনেছে মিলোনারিসের কাছ থেকে। শেষ পর্যন্ত স্টেফানো রিয়ালেই যান।
এ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব আছে। বলা হয়ে থাকে, তৎকালীন একনায়ক ফ্র্যাঙ্কোর চাপেই নাকি স্টেফানো রিয়ালে যান! সে যা-ই হোক, সেই সময় বার্সার দাপটে ম্লান হয়ে যাওয়া রিয়ালকে টানা পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতান এই স্টেফানো, পালটে দেন গোটা ক্লাবেরই ইতিহাস। রিয়ালের সর্বকালের সেরা হিসেবেও তাকেই ভাবা হয়ে থাকে।
১. লুই ফিগো (বার্সেলোনা থেকে রিয়াল মাদ্রিদ)
কোন ট্রান্সফারই ফুটবল বিশ্বকে এতটা নাড়া দিতে পারেনি এই ট্রান্সফারের মতো। ফিগো ছিলেন বার্সার প্রাণভোমরা, ক্যাপ্টেন। কাতালানরা তাকে ঘরের ছেলের মতোই ভাবতো। তিনি ছিলেন বার্সার প্রতীক। ওদিকে রিয়াল চার বছরের ব্যবধানে দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। এদিকে তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন রিয়ালে। যেহেতু দল সফল, তাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জোই ফেভারিট সে নির্বাচনে। তাকে চ্যালেঞ্জ জানালেন স্পেনের অন্যতম সেরা ধনী ব্যবসায়ী ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। পেরেজের প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি নির্বাচিত হলে বার্সার প্রতীক ফিগোকে দলে আনবেন। এর জন্য ফিগোর এজেন্টের সাথে গোপনে তার চুক্তিও হলো। এটা প্রকাশিত হলে স্পেনে তথা পুরো ফুটবল জগতে আলোড়ন পড়ে যায়। তীব্র বচসা চলতেই লাগল দু’দলের মাঝে। অনেকে সন্দেহ করলেন, পেরেজ পারবেন কিনা। তখন পেরেজ ঘোষণা দেন, তিনি নির্বাচিত হয়ে যদি ফিগোকে না আনতে পারেন, তবে সারা বছর তিনি ৮৮,০০০ রিয়াল ফ্যানকে বিনা টিকিটে খেলা দেখাবেন মাঠে। পেরেজ জিতলেন, বহু কাহিনীর পর রেকর্ড ফি দিয়ে ফিরিয়ে আনলেন ফিগোকে।
রিয়ালের হয়ে বার্সার একসময়কার প্রতীক যখন বার্সার মাঠে খেলতে যান, সারা স্টেডিয়াম যেন ফেটে পড়ে। স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে ঝোলানো ছিলো ‘Pigo’, ‘Traitor’ এমন সব ব্যানার। ফিগো কর্নার নিতে যাওয়ার সময় তার দিকে সমানে লাইটার, আপেল, বোতল, কমলা এসব ছুঁড়ে মারতে থাকে দর্শকরা। সব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠে একটি শুকরের কাটা মাথা, যেটি ফিগোকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে মারা হয়। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও এটিকে রেখে দেয়া হয় সযত্নে। একে বার্সা ফ্যানরা তাদের দলের প্রতি বেইমানির প্রতীক হিসেবেই ভেবে থাকে।
ফিচার ইমেজ- Sportyou