অ্যাডলফ হিটলার একবার পাঁচদিন ধরে ক্রিকেট দেখেছিলেন বলে গল্প শোনা যায়। পাঁচদিন ধরে খেলার পরেও যখন জানতে পারলেন, ম্যাচটি নিষ্ফলা, তখন নাকি বেশ রেগে গিয়ে বলেছিলেন,
‘এই একটা খেলা শেষ হতে যত সময় লাগছে, ততক্ষণে আমি তিনটা দেশ জয় করে ফেলতে পারতাম।’
উপরের ঘটনাটুকু নিখাদই গল্প। তাতে সত্য-মিথ্যার ভাগ কতটুকু, সে যাচাই না করলেও চলবে। তবে, যাচাই যদি করতেই হয়, তবে চট করে বলে ফেলুন তো, ক্রিকেট খেলাটায় আছেটা কি? ওই তো পাঁচ আউন্সের একটা বল ছুঁড়ে দেয়া হবে, এক কাষ্ঠদণ্ড হাতে ব্যাটসম্যান তা ফিরিয়ে দেবেন, খেলাটা তো পানির চেয়েও সরল। সারাদিন ব্যাট-বলের এই ঠুকঠুকানি কত আর সহ্য করা যায়!
সেটা যে বেশ সহ্য করা যায়, ১৪২ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটের ব্যাপ্তিই এর প্রমাণ। সহজ-সরল, মাঝেমধ্যে ‘নিষ্ফল’ এই ক্রিকেটেও কত না উত্তেজনা, কত না রোমাঞ্চ!
এই রোমাঞ্চের বেশিরভাগটাই হয় নিয়ম ভাঙার কারণে, ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে নতুন কোনো কারিকুরি দেখার কারণে। ক্রিকেটের খোলনলচে বদলে ফেলা এমন পাঁচ উদ্ভাবন, কিংবা ‘নিয়ম ভাঙার গল্প’ নিয়েই বাকি লেখাটুকু।
ওভারআর্ম বোলিং
ক্রিকেট খেলাটা এখন বড্ড বেশি ‘ব্যাটসম্যানবান্ধব’ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ শোনা যায়। সমস্ত নিয়ম-কানুন যেন বানানো হয়েছে বোলারের ছুঁড়ে দেয়া বলটাকে সীমানাছাড়া করতেই। ভাবুন তো একবার, আজকের সমস্ত নিয়মকানুনের সঙ্গে যদি এখনও আন্ডারআর্ম বোলিংয়ের সেই নিয়মটিও চালু রইতো!
তা যে হয়নি, তার জন্যে আজকের বোলাররা কৃতজ্ঞতা জানাতে পারেন টম ওয়াকার আর জন উইলস নামের দুই ভদ্রলোককে। এ দু’জন নিয়ম ভেঙেছিলেন বলেই তো আজ বোলিংটা অনেক গতিময়। হাফ ভলি ডেলিভারিতে চার খাওয়ার পরের বলটাই বোলার ছুঁড়ে দিচ্ছেন বাউন্সার। আন্ডারআর্ম বোলিংয়ে এই সুযোগটাই তো ছিল না!
১৭৮০-র দিকে প্রথমবারের মতো ক্রিকেটে রাউন্ডআর্ম বোলিং এনেছিলেন টম ওয়াকার। উদ্দেশ্য ছিল, পিচ থেকে বাড়তি বাউন্স আদায়। যদিও হ্যাম্বলডন ক্লাব সে বছরই এই রাউন্ডআর্ম বোলিং অবৈধ ঘোষণা করে। তবে অন্যান্য ক্লাবে এই রাউন্ডআর্ম বোলিংয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তখনও আসেনি। বেশ কয়েক বছর আন্ডারআর্ম এবং রাউন্ডআর্ম বোলিং সমানতালে চলার পরে বিপত্তি বাধে ১৮১৬ সালে। সে বছর প্রতিবাদের মুখে রাউন্ডআর্ম বোলিংকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়।
টম ওয়াকার উদ্ভাবন করেছিলেন, আর আইন ভেঙেছিলেন কেন্টের জন উইলিস। সে বছরের ১৫ জুলাই ‘ক্রিকেটের মক্কা’খ্যাত লর্ডসে হাত ঘুরিয়ে বল করে আম্পায়ারের ‘নো বল’ ডাকের কবলে পড়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জন উইলিস এতটাই নাখোশ ছিলেন যে, গ্যালারিভর্তি দর্শকের সামনে তৎক্ষণাৎ ঘোড়ায় চড়ে স্টেডিয়াম ছেড়েছিলেন তিনি। তার দাবি ছিল,
‘আমার বোন স্কার্ট পড়ে আন্ডারআর্ম বোলিং কীভাবে করবে!’
তার দাবিটা অবশ্য ফেলনাও নয়। তখনকার দিনে মেয়েদের ফ্যাশনে চলছিলো ভলিউমিনাস স্কার্ট, যে পোশাক পড়ে আন্ডারআর্ম বোলিং করাটা সত্যিই খুব মুশকিল ছিলো। বাগানে জন উইলিস যখন তার বোনের বোলিং খেলতেন, বোন ক্রিস্টিনা উইলিসকে বাধ্য হয়েই কিছুটা হাত ঘুরিয়ে বল করতে হতো। জন উইলিসও রাউন্ডআর্ম বোলিংয়ের আইডিয়াটা তার কাছ থেকেই পেয়ে গিয়েছিলেন। এরপর সেটা মাঠে পরীক্ষা করতে গিয়েই বাধে ‘বিপত্তি’।
সে ঘটনার বছর দশেক পর কাউন্টি ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হবার খেতাব অর্জন করে সাসেক্স, তবে তা মেনে নিতে আপত্তি ছিলো অনেকেরই। কেননা, এই সাফল্য এসেছিলো দুই রাউন্ডআর্ম বোলার জেমস ব্রডব্রিজ আর উইলিয়াম লিলিহোয়াইটের কাঁধে চড়ে। যদিও আম্পায়াররা তাদের বোলিংয়ের ব্যাপারে আপত্তি তোলেননি। ক্রিকেটের আইনপ্রণেতা সংস্থা এমসিসিও তখন প্রথমবারের মতো একটু নরম হয়, কনুই অব্দি হাত তোলার অনুমতি দেয়। কিন্তু বোলারদের আবদার একটু একটু করে বেড়েই চলে, কনুই থেকে শুরু করলেও কাঁধ অবধি হাত তোলা পর্যন্ত এমসিসি নমনীয় হয়।
তবে বোলাররা যে ওই রাউন্ডআর্ম অ্যাকশনেই থেমে থাকেননি, ১৮৬২ সালে এডগার উইলশায়ারের ওভারআর্ম বোলিং অবৈধ ঘোষিত হওয়াই প্রমাণ করে। কাকতালীয় বলতে হবে, সে ম্যাচের আম্পায়ার ছিলেন জন লিলিহোয়াইট, বছর চল্লিশেক আগে যার বাবার অ্যাকশন নিয়েও তোলপাড় হয়েছিলো।
পরেরদিন আর লিলিহোয়াইট মাঠে আসেননি। বদলে খেলা পরিচালিত হয়েছিলো এক নতুন আম্পায়ারের অধীনে, যিনি উইলশায়ারের বোলিংয়ে কোনো ডাকাডাকির কারণ খুঁজে পাননি। ক্রিকেটের আইন প্রণেতা সংস্থা এমসিসিও আর এই আন্ডারআর্ম-ওভারআর্মের ঝামেলায় যায়নি। বছর দুয়েক পর, ১৮৬৪ সালে ওভার দ্যা আর্ম বোলিংকে সিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
আর এরই ফলশ্রুতিতে আমরা দর্শকেরা এখন জেফ থমসন কিংবা শোয়েব আখতারে মুগ্ধ হবার সুযোগ পাই!
গুগলি
গত কয়েক বছরে ক্রিকেটের নিদেন অনুসারী হলে আপনি নিশ্চয়ই রশীদ খানকে চেনেন। একের পর এক রেকর্ড ভেঙে, ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্তিতে ফেলে স্ট্যাম্প ভেঙে, ক্রিকেট থেকে হারাতে বসা লেগ স্পিন শিল্পটাকে পুনরায় জীবিত করে তুলেছেন যেন! তার চেয়েও বড় কথা, লেগ স্পিনের সংজ্ঞাটাই যেন বদলে দিয়েছেন আফগানিস্তানের এই বিশ বছর বয়সী ক্রিকেটার। লেগ স্পিন মানে যে এখন আর বল বাঁক খেয়ে বেরিয়ে যাওয়া নয়, তাঁর কল্যাণে বল হঠাৎ ভেতরে ঢোকানোটাও এখন লেগ স্পিনারের বড় অস্ত্র। রং’আন, বেন্ডার, ব্রেকিং বল, কিংবা আবিষ্কর্তা বার্নার্ড জেমসের ডাকনামে ‘বসি’, সব ছাপিয়ে যে ডেলিভারি পরিচিত গুগলি নামে।
বার্নার্ড জেমস টিন্ডাল বোসানকুয়েট, সতীর্থদের আদরের ‘বসি’, এই ডেলিভারিটি আবিষ্কার করেছিলেন এক পার্লার গেম খেলতে গিয়ে। যেখানে তার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছিলো, বল ছুঁড়ে অপর প্রান্তে দাঁড়ানো খেলোয়াড়কে পরাস্ত করা।
বসির অ্যাকশনে ‘এগেইনস্ট দ্য ক্লক’ স্পিনটাই ছিল স্বাভাবিক। অথচ হাতের কব্জিতে সামান্য পরিবর্তন এনে বার্নার্ড জেমস বলের গতিপথ দিলেন উল্টে। স্বাভাবিক লেগ স্পিনের অপেক্ষায় থাকা অপর প্রান্তের খেলোয়াড়টিও তাই চোখে বিস্ময় নিয়ে দেখলেন, বল পড়ে ‘উইথ দ্য ক্লক’ বাঁক খেয়ে চলে গেলো অন্যদিকে। ফলাফল? তিনি পরাস্ত!
ক্রিকেট ম্যাচে প্রথম এই বলে পরাস্ত হয়েছিলেন লেস্টারশায়ারের স্যামুয়েল কো, অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেয়া বল দেখে যিনি ডাউন দ্য উইকেটে এগিয়ে এসেছিলেন বলকে সীমানাছাড়া করতে। কিন্তু বলের টার্ন পড়তে না পেরে তিনি মিস করেছিলেন লাইন, বল স্ট্যাম্পে সরাসরি আঘাত না করলেও স্ট্যাম্পিংয়ের জন্যে কিপার তো ছিলেন!
অবশ্য হালের রশীদ খানের গুগলি দেখা ক্রিকেট দর্শকদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে, ‘বসি’র সেই ডেলিভারি কিপার অব্দি পৌঁছানোর পূর্বে ক্রিজে ড্রপ খেয়েছিলো কয়েকবার।
যদিও এর আগেই উইলিয়াম অ্যাটওয়েল কিংবা এজি স্টিলের হাত থেকে গুগলি বেরিয়েছিলো, কিন্তু তারা নিজেরাও ঠিক জানতেন না, ওটা গুগলি ছিল। যেহেতু জেনেবুঝে, স্বেচ্ছায় বার্নার্ড জেমসই প্রথম এই ডেলিভারি করেছিলেন, সেজন্যে তিনিই হয়ে যান গুগলির আবিষ্কারক। রশীদ খানরা যে অস্ত্রে শাণ দিয়ে এখন র্যাংকিংয়ের ‘নাম্বার ওয়ান’ বোলার।
রিভার্স সুইং
আচ্ছা, রিভার্স সুইং জিনিসটা আসলে কী? কিছুটা পুরোনো ক্রিকেট বল, একদিকে যেতে যেতে হঠাৎই দিক বদলে অন্য দিকে যেতে শুরু করলো, হঠাৎই গোত্তা খেয়ে স্ট্যাম্পে কিংবা পায়ে আঘাত হানলো, এই জাদুকলার মন্ত্রটা কি আপনি জানেন? না জানলেও নিজেকে ক্রিকেট দর্শক হিসেবে অচ্ছুত ভাববেন না। বিশ্বাস রাখুন, আপনি তো আপনি, ক্রিকেট প্লেয়ার থেকে শুরু করে অনেক বিশ্লেষকও এই রিভার্স সুইং ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন!
রিভার্স সুইং নিজে যেমন রহস্যময়, তেমনি কোত্থেকে এই জাদুবিদ্যা আবিষ্কৃত হলো, তা আজও রহস্যে ঢাকা। কেউ কেউ বলেন, পাকিস্তানের মুলতানের কিছু নওজোয়ান বাতাসে বলের গতিপথ পরিবর্তনের এই কৌশল রপ্ত করেছিলেন। তবে এই দাবির চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়, ষাটের দশকে খেলা পাকিস্তানের মিডিয়াম পেসার সেলিম মিরের দ্বারা রিভার্স সুইং আবিষ্কৃত হওয়ার তত্ত্ব। যিনি এই ডেলিভারির ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন সরফরাজ নেওয়াজের হাতে, রিভার্স সুইং যার হাতে হয়ে উঠেছিলো শিল্প।
তিনি এই কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন ইমরান খানকে, যিনি নিজে গড়ে তুলেছিলেন রিভার্স সুইংয়ের সবচেয়ে ভয়ংকর দুই শিল্পী, ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনিসকে। যাদের কল্যাণে গত শতকের শেষ দশকে ইনিংসের শেষ দিকে বাতাসে বলের সাঁতরে বেড়ানোটাই হয়ে গিয়েছিলো নিয়তি।
‘টু ডব্লিউ’ অবধি কেবল পাকিস্তানিরাই এই শিল্পের কারিকুরি জানলেও, এরপরই নড়েচড়ে বসে বাকি বিশ্বের পেসাররা। তাদের আগ্রহেই জানা যায়, বল কেবল পুরোনো হলেই বাতাসে বাঁক খেয়ে বেড়াবে তা নয়, এর সঙ্গে কব্জির শক্তি, স্ট্যামিনাসহ আরও বহু ব্যাপার জড়িত। এমনকি দলের বিশুদ্ধতম ব্যাটসম্যান, যিনি আজ অবধি ক্রিকেট ম্যাচে বল করেননি, রিভার্স সুইংয়ে ভূমিকা থাকতে পারে তারও। বলের একপাশ চকচকে রাখার কাজটা তো করতে হয় তাকেও!
(ক্রিকেটটা ধীরে ধীরে ব্যাটিংবান্ধব হয়ে যাচ্ছে, এ দাবি একেবারে অগ্রাহ্য করারও উপায় নেই। কেননা, বোলাররা যাতে রিভার্স সুইং ততটা আদায় করতে না পারেন, তার জন্যে একদিবসী ক্রিকেটে দু’প্রান্ত থেকেই নতুন বল ব্যবহার শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে। অন্য সব শর্ত পূরণ হলেও ‘বল পুরোনো হতে হবে’ শর্তটাই যে পূরণ হচ্ছে না!)
ক্যারম বল
হ্যামফ্রে ডেভিকে আপনি না চিনলেও থমাস আলভা এডিসনকে বোধহয় চেনেন। অথচ, সব ঠিক থাকলে আজ হ্যামফ্রে ডেভি নামটাই আপনার পরিচিত ঠেকতো। তা যে হয়নি, এর কারণ, বৈদ্যুতিক বাল্বের আবিষ্কারক হিসেবে বইতে এডিসনের নামই লেখা থাকে, আসল আবিষ্কর্তা ডেভির নাম নয়!
ঠিক যেমন করে ক্যারম বল বললেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন কিংবা অজন্তা মেন্ডিসের মুখটাই চোখে ভাসে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ইভারসনকে আপনি চেনেনই না।
বলকে মধ্যমার সাহায্যে টোকা দিয়ে বাইশ গজ পার করানো… রীতিমতো অবিশ্বাস্য এক আবিষ্কার। আর এই অবিশ্বাস্য ব্যাপারটিকেই প্রথম বাস্তব করেছিলেন জ্যাক ইভারসন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাত্র পাঁচ টেস্ট খেলেই ক্রিকেটকে বিদায় বললেও ক্রিকেটকে যে তিনি ঋণী করে গিয়েছেন, তা তো বলাই যায়। বিশ্বাস হলো না? অশ্বিন কিংবা মেন্ডিসকেই জিজ্ঞাসা করে দেখুন!
সুইচ হিট
‘সোজা খেলো।’
আজ ক্রিকেট খেলা শুরু করা শিশুটিকেও তার কোচ সর্বপ্রথম ব্যাটিংয়ের এই পাঠটিই দিয়ে থাকেন। অবশ্য ব্যাটসম্যানটির নাম যদি হয় কেভিন পিটারসেন, উনি এর থোড়াই কেয়ার করেন। দারুণ খেলতে থাকা অবস্থায়, সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও অনায়াসে আড়াআড়ি ব্যাট চালাতে পারেন, সুলিমান বেনের বলে ক্রস ব্যাটে সুইপ শট খেলতে গিয়ে ৯৭ রানে আউট হতে পারেন। ‘আমি এভাবেই খেলি’, প্রমাণ করতেই বোধহয় বারবারই এমন ঘটনার জন্ম দেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ৯৪ রানে দাঁড়িয়ে অহেতুক লং-অনে ক্যাচ তুলে দেন।
তবে তিনি ঠিক কীভাবে খেলেন, তার এক সার্থক বিবরণ যেন পাওয়া যায় ২০০৬ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে।
ব্যাটসম্যানরা এর আগে যে ক্রিকেট ব্যাকরণের বাইরে যাননি, ব্যাপারটা এমন নয়। একদিবসী ক্রিকেট আসার সুবাদে ব্যাটসম্যানরা তখন অনেকটাই হাত খুলে খেলছেন, ইম্প্রোভাইজ করছেন। স্কুপ-রিভার্স সুইপ তখন যেন অনেকটা ক্রিকেট ব্যাকরণেরই অংশ হয়ে গিয়েছিলো। তবে তখন অবধি টেস্ট ক্রিকেটটা এই আঁচড় থেকে মুক্তই ছিলো। অতঃপর কেভিন পিটারসেন তার ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুললেন, সেটাও আরেক বোলিং জাদুকর মুরালিধরনের বলে।
ইংল্যান্ডের রানটা তখন পাঁচ উইকেটে ২৮৪। দ্বিতীয় নতুন বলের জন্যে অপেক্ষাটা আর কয়েক ওভারের। ডানহাতি কেভিন পিটারসেনকে মুরালিধরন বল করছিলেন ওভার দ্য উইকেটে। ৭৪ নম্বর ওভারের তিন নম্বর বলটা করতে গিয়েই যেন বাধলো যত বিপত্তি, ডানহাতি পিটারসেন যে স্ট্যান্স বদলে ততক্ষণে বাঁহাতি হয়ে গিয়েছেন! যে বলটা হবার কথা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে হাফভলি, সেটাই হয়ে গেলো লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে লোপ্পা ফুলটস, যার পরবর্তী গন্তব্য সোজা মিড উইকেটের গ্যালারি।
ওডিআই ক্রিকেটেও পিটারসেন এ শট খেলেছেন বেশ কয়েকবার। তবে আজকের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মেলায় ব্যাটসম্যানরা যে উদ্ভাবনী শটের পসরা সাজিয়ে বসেন, এর নেপথ্যে বোধহয় পিটারসেনের ওই শটটাই। ক্রিকেটের বিশুদ্ধতম সংস্করণটিতেও সেদিনই লেগেছিলো উদ্ভাবনী শটের ছোঁয়া।
ক্রিকেট বদলে যেতে আর কী লাগে!