ব্যাট হাতে সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা ভালো সময় কাটাননি অ্যালেস্টার কুক। ভারতের বিপক্ষে প্রথম চার টেস্টেও হতাশ করেছিলেন তার ভক্তদের। তাই ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা এই ব্যাটসম্যান ভারতের বিপক্ষে ৫ম টেস্ট শুরু হওয়ার আগেই ঘোষণা দেন, এই সিরিজের পরই তিনি সব ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন। দল থেকে বাদ পড়ার আগেই ক্লান্ত কুক নিজেই সরে দাঁড়ান।
তার বিদায়টা হয়েছিলো মুভির শেষ দৃশ্যের মতো। দুই-আড়াই ঘন্টার গল্পের শেষ দৃশ্যে মুভির হিরোর মুখে যেমন হাসি থাকে, তেমনি অ্যালেস্টার কুকের বিদায়টাও হলো হাসিমুখে। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সামনে নিজের শেষ টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৭১ এবং ১৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। সচরাচর ক্রিকেটারদের এমন বিদায় ভাগ্যে জোটেনা। গত শতকে বেশিরভাগ ক্রিকেটারদের বিদায় হতো মাঠের বাইরে থেকে, ফর্মহীনতার কারণে নির্বাচকদের চোখের আড়াল হয়ে।
বিগত শতকে ক্রিকেটের মধ্যে বেশিরভাগ ক্রিকেটারদের বিদায় নিতে হতো নির্বাচকদের ডাক না পেয়ে খেলার সুযোগ না পাওয়াতে। ডন ব্র্যাডম্যান ছাড়া খুব কম ক্রিকেটারই রাজসিকভাবে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। বেশকিছু প্রসিদ্ধ ক্রিকেটারদের বিদায়ী মুহূর্ত নিয়েই আজকের ফটো ফিচার।
১.
নিকট অতীতে সবচেয়ে জমকালোভাবে বিদায় নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অপরাজেয় দলের অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। তিনি ২০০৩-০৪ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন, যার ফলে পুরো টেস্ট সিরিজের প্রতিটি মুহূর্তে দর্শকরা তাকে বরণ করে নিয়েছিলো।
স্টিভ ওয়াহ নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেন তার ঘরের মাঠ সিডনিতে। শেষটাও করলেন নিজের স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে, নিজের শেষ ইনিংসে ১৫৯ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলে দলকে নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচান তিনি। ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও তিনি ৪০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
এই কিংবদন্তী ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৬৮টি টেস্ট ম্যাচে ৫১.০৬ ব্যাটিং গড়ে ১০,৯২৭ রান করেছেন এবং বল হাতে ৯২ উইকেট শিকার করেছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে তিনি ৩২৫ ম্যাচে ৩২.৯০ ব্যাটিং গড়ে ৭,৫৬৯ রান করেছেন এবং বল হাতে ১৯৫ উইকেট শিকার করেছেন।
২.
পাকিস্তান প্রমীলা ক্রিকেট দলের উইকেটরক্ষক বাতুল ফাতেমা নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে মাঠ ত্যাগ করার মুহূর্তে প্রতিপক্ষ এবং তার সতীর্থরা তাকে ‘গার্ড অফ অনার’ দিয়েছেন। তিনি তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন বাংলাদেশের সিলেটে, প্রমীলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচশেষে তিনি তার ১৩ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানেন।
এই প্রমীলা ক্রিকেটার পাকিস্তান দলে স্বীকৃত উইকেটরক্ষক হিসাবে খেলতেন। তিনি ৮৩ টি ওয়ানডেতে ৮.৬২ ব্যাটিং গড়ে ৪৮৩ রান করেছিলেন, টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ ম্যাচে ৫.৮১ ব্যাটিং গড়ে ৬৪ রান করেছিলেন। তবে উইকেটরক্ষক হিসাবে ওয়ানডেতে ৫৪টি ক্যাচ ও ৪৬টি স্ট্যাম্পিং করেছেন এবং টি-টোয়েন্টিতে ১১টি ক্যাচ ও ৩৯টি স্ট্যাম্পিং করেছেন।
৩.
ডন ব্র্যাডম্যানের যুগে কাউকে সম্মান জানানোর জন্য টুপি খুলে তিনবার চিয়ার্স বলা হতো। ব্র্যাডম্যানের জন্যও তাই করলো ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। ‘দ্য ওভাল’-এ স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান যখন নিজের শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নামেন, তখন ইংল্যান্ডের ফিল্ডাররা টুপি খুলে “চিয়ার্স, চিয়ার্স, চিয়ার্স” বলেন।
ব্যাট হাতে অবশ্য নিজের বিদায়ী ম্যাচ খুব একটা সুখকর ছিল না তার জন্য। নিজের নামের পাশে মাত্র চার রান যোগ করতে পারলে তার ব্যাটিং গড় দাঁড়াতো একশ’, কিন্তু তিনি কোনো রান না করেই সাজঘরে ফেরেন। মাঠের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় তাকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব। এম.সি.সি প্রেসিডেন্ট তাকে রোমান যুগের ওয়ারউইক ভেইসের রৌপ্যের রেপ্লিকা দিয়েছিলেন।
৪.
দুই যুগের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষে ২০১৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান শচীন টেন্ডুলকার। টেস্ট এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতকের শতক হাঁকানো টেন্ডুলকারের বিদায়ী অনুষ্ঠান ছিল জমকালো।
তার সতীর্থ, প্রতিপক্ষের পাশাপাশি পুরো ভারতের ক্রিকেট ফ্যান, মিডিয়া, বিশেষজ্ঞ, এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতারা তাকে সম্মানের সাথে বিদায় দেন। যদিও স্টিভ ওয়াহর তুলনায় তার প্রস্থান কিছুটা বিষণ্ন ছিল, তবুও ক্রিকেটভক্তরা তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা জানাতে মুখিয়েই ছিলেন।
৫.
স্টিভ ওয়াহর বিদায়ের তিন মৌসুম পর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ভক্তরা তাদের আরও চারজন সেরা ক্রিকেটারকে বিদায় দেন।
২০০৬-০৭ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের মাঝপথে ড্যামিয়েন মার্টিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। এরপর সিরিজ শেষে জাস্টিন ল্যাঙ্গার, শেন ওয়ার্ন, এবং গ্লেন ম্যাকগ্রা টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান।
তাদের বিদায়ী অ্যাশেজে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে ৫-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ডেমিয়েন মার্টিন, গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং শেন ওয়ার্ন প্রত্যেকেই অস্ট্রেলিয়া দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গার ১০৫ টেস্টে ৪৫.২৭ ব্যাটিং গড়ে ৭,৬৯৬ রান করেছেন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ডেমিয়েন মার্টিন ৬৭ টেস্টে ৪৬.৩৭ ব্যাটিং গড়ে ৪,৪০৬ রান করেছেন। পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা ১২৪ টেস্টে ৫৬৩ উইকেট ও শেন ওয়ার্ন ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট শিকার করেছেন।
৬.
ক্রিকেট মাঠে অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই দুর্দান্ত সব প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের পেয়েছে। প্রতিভাবান ক্রিকেটারের বোধহয় কখনও অভাব বোধ করেনি তারা। তবে একটা প্রজন্মের অবসরের পর দলটাকে গুছিয়ে নিতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গিয়েছে তাদের। যেমন বর্তমানে ক্লার্ক, জনসন, ওয়াটসন, হাসিদের অবসরের পর এবং ওয়ার্নার ও স্মিথের নিষেধাজ্ঞার পর এখনও দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি অজিরা।
১৯৮৪ সালেও এমনটা হয়েছিলো অজিদের সাথে। তাদের সেরা বোলার ডেনিস লিলি, সেরা ব্যাটসম্যান গ্রেগ চ্যাপেল এবং সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রডনি মার্শ একসাথে ক্রিকেটকে বিদায় জানান। ১৯৮৪ সালের ৬ই জানুয়ারি পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনিতে পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলেই তারা ক্রিকেটকে বিদায় জানান।
নিজেদের শেষ ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে তিনজনই অবদান রেখেছিলেন। গ্রেগ চ্যাপেল ১৮২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন এবং ডেনিস লিলি ম্যাচে আট উইকেট শিকার করেন। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান রড মার্শ ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৫ রানের ইনিংস খেলার পর ম্যাচে ছয়টি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। যার ফলে পাকিস্তানকে দশ উইকেটে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছিলো অস্ট্রেলিয়া।
অ্যালেস্টার কুক তার বিদায়ী টেস্টে শতক হাঁকানোর পর তাকে অবসরের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভাবতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ততেই অনড় ছিলেন।
যারা প্রথম এবং শেষ টেস্টে শতক হাঁকিয়েছিলেন, সেই তালিকায় কুকের সাথে বাকি পাঁচজন ক্রিকেটারের একজন গ্রেগ চ্যাপেল। গ্রেগকেও তার অবসরের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভাবতে বলা হয়েছিলো, কিন্তু তিনিও অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি।
৭.
ইংল্যান্ডের কিংবদন্তী অলরাউন্ডার ইয়ান বোথামের বিদায়টা হয়েছিলো কিছুটা নীরবে। ১৯৯৩ সালে ডারহামের হয়ে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেন তিনি।
ডারহাম ইউনিভার্সিটি মাঠে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে তার বিদায় হয়েছিলো প্যাভিলিয়ন থেকে। বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি নিষ্প্রাণ ড্র হয়েছিলো। ক্যারিয়ারে শেষ কয়েক বছর ইনজুরিতে জর্জরিত ছিলেন তিনি। ইনজুরির কারণেই ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্ট সিরিজের মাঝপথেই ছিটকে পড়েন তিনি।
এই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ১০২ টেস্টে ৩৩.৫৪ ব্যাটিং গড়ে ৫,২০০ রান করার পাশাপাশি ৩৮৩ উইকেট শিকার করেছেন। ওয়ানডেতে তার নামের পাশে ২,১১৩ রান এবং ১৪৫ উইকেট শোভা পাচ্ছে।
৮.
পাকিস্তানের দুই কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান মিসবাহ-উল হক এবং ইউনিস খান নিজেদের শেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০১৭ সালের মে মাসে।
তাদের শেষ টেস্ট ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ মিনিটে নাটকীয়ভাবে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। ম্যাচের মাত্র ছয় বল বাকি থাকতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান অহেতুক হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয় করার গৌরব অর্জন করে পাকিস্তান।
দুইজনেই নিজেদের শেষ টেস্ট ম্যাচ দলের জয়ে দারুণ অবদান রেখেছেন। মিসবাহ-উল হক প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন এবং ইউনিস খান দ্বিতীয় ইনিংসে দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন।
দুইজনই টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের বহু জয়ে অবদান রেখেছেন। ইউনিস খান ৫২.০৫ ব্যাটিং গড়ে ১০,০৯৯ রান এবং মিসবাহ উল হক ৪৬.৬৩ ব্যাটিং গড়ে ৫,২২২ রান সংগ্রহ করেছেন।
কোনো পাকিস্তানি ক্রিকেটারের মাঠ থেকে এমন জাঁকালোভাবে বিদায় নেওয়ার ঘটনা খুব কম। তবে এই দুই ব্যাটসম্যানের ভাগ্যে মাঠ থেকে সম্মানের সঙ্গে বিদায় নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো।
৯.
২০০৭ ও ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সাথে সাথে ২০০৯ ও ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার হাত থেকে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিলো, চারটি ফাইনালেই তাদের রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো। যার ফলে তাদের দুই কিংবদন্তী ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে এবং কুমার সাঙ্গাকারার বিশ্বকাপ জেতা হয়নি।
অবশেষে ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের বিশ্বকাপ জয়ের আক্ষেপ মিটলো। তাদের শেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিলো শ্রীলঙ্কা। ফাইনাল ম্যাচে ভারতের দেওয়া ১৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কুমার সাঙ্গাকারার অপরাজিত ৫২ রান এবং মাহেলা জয়াবর্ধনের ২৪ রানের উপর ভর করে শ্রীলঙ্কা ১৩ বল এবং ছয় উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয়। নিজেদের শেষ ম্যাচেও দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন তারা।
টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ানডে ক্রিকেটকেও তারা একসাথে বিদায় জানান। ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন আগে থেকেই। শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপে কতদূর পথ অতিক্রম করে, তার উপরই নির্ভর করেছিল তারা আর কয়টি ম্যাচ খেলবেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা নয় উইকেটে পরাজিত হলে কোয়ার্টার ফাইনালেই তাদের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়ে যায়।
১০.
একজন বিদায় নিলে একজনেরই বিদায় হয়। কিন্তু কার্টলি অ্যামব্রোস এবং কোর্টনি ওয়ালশের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে যখন বিদায় জানিয়েছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস, মনে হয়েছিলো দুইজনই একসাথে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন। যদিও কোর্টনি ওয়ালশ এরপর আরও মাস-ছয়েক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন।
ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান মাইক অ্যাথারটন বলেছিলেন, কোর্টনি ওয়ালশ এবং কার্টলি অ্যামব্রোসকে মোকাবেলা করা মানে নাকি দোচুঙ্গী বন্দুকের সামনে দাঁড়ানো। এই দুই কিংবদন্তী পেসার নিজেদের সময়ে ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করতেন বলে-কয়ে। অ্যামব্রোস ৯৮ টেস্টে ৪০৫ উইকেট এবং ১৭৬ ওয়ানডেতে ২২৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। দুইজনের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন, যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তার প্রয়োজনীয়তা ছিল আকাশচুম্বী।
বাংলাদেশের বর্তমান বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ ১৩২ টেস্টে ৫১৯ উইকেট এবং ২০৫ ওয়ানডেতে ২২৭ উইকেট শিকার করেছিলেন।
১১.
বেশ জনপ্রিয় এবং সম্মানিত আম্পায়ার স্টিভ বাকনার ২০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০০৯ সালের ১৯ মে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করে টেস্টে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করা থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর ২৯ মে ওয়ানডে ক্রিকেটেও আম্পায়ারের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেন তিনি।
জ্যামাইকার এই আম্পায়ার ১২৮ টেস্টে এবং ১৮১টি ওয়ানডেতে আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১২.
২০০৬ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যান্ডি টেস্ট খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন সনাৎ জয়াসুরিয়া। ঐ ম্যাচে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি স্থানচ্যুত হয়ে গিয়েছিলো, যার কারণে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে পারেননি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৭৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার ফলে আট উইকেটে পরাজিত হয়েছিলো স্বাগতিকরা।
মাঠে কেক কেটে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় উদযাপন করলেও মাত্র দুই মাস পরই শ্রীলঙ্কার নির্বাচকদের সভাপতির অনুরোধে আবারও টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেছিলেন। এরপর আরও আটটি টেস্ট ম্যাচ খেলে পরের বছর এই ক্যান্ডিতেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। এইবার বিদায়ী ইনিংসে ৭৮ রান করেছিলেন জয়াসুরিয়া।
১৩.
‘আমি শুধু এটা জিজ্ঞেস করতে চাই, ডিড আই এন্টারটেইন ইউ?’
নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার এই কথাটিই বলেছিলেন ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা। সেদিন হয়তো লাখো ক্রিকেটভক্ত একই সুরে উত্তর দিয়েছিলো, ‘হ্যাঁ প্রিন্স, নিঃসন্দেহে।’
ব্রায়ান লারা ২০০৭ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। তার শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে এক বল বাকি থাকতে এক উইকেটে পরাজিত হয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যার ফলে তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও উঠতে পারেনি। তিনি তার শেষ ওয়ানডে ইনিংসে ১৮ রান করে রানআউটের শিকার হয়েছিলেন। লারার ওয়ানডে ক্যারিয়ার থামে ২৯৯ ম্যাচেই। কিংবদন্তী এই ব্যাটসম্যান ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪০.৪৮ ব্যাটিং গড়ে ১০,৪০৫ রান করেছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে। নিজের শেষ টেস্টও তার জন্য সুখকর ছিল না। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্টে ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে শূন্য রান এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৯ রান করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঐ ম্যাচে ১৯৯ রানে পরাজিত হয়েছিলো।
১৪.
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক অনিল কুম্বলে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেন ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দিল্লি টেস্ট খেলেই ক্রিকেটকে বিদায় জানান এক ইনিংসে দশ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব অর্জন করা এই লেগস্পিনার।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্ট সিরিজের এক ম্যাচ বাকি থাকতেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে দেন তিনি। ১৩২ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি ৬১৯ উইকেট শিকার করেন, যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহের রেকর্ড।
১৫.
পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক এবং সেরা অলরাউন্ডার ইমরান খান তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ করেন দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর মধ্য দিয়ে। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে পাকিস্তান শুরুতেই আমির সোহেল এবং রমিজ রাজার উইকেট হারায়। এরপর দলকে টেনে তোলেন তিন নাম্বারে ব্যাট করতে নামা ইমরান খান। পাকিস্তানী অধিনায়ক নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং বিশ্বকাপ ফাইনালে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেন। ইংল্যান্ডের শেষ উইকেটটি শিকার করে দলের জয়ও নিশ্চিত করেন তিনি।
১৬.
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের শেষ টেস্ট সিরিজে পরাজিত দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাজকীয় বিদায় পেয়েছিলেন স্যার ফ্রাঙ্ক ওরেল। রাস্তার দুই পাশে হাজারের অধিক ক্রিকেটভক্ত এই কিংবদন্তী ব্যাটসম্যানকে বিদায় জানাতে জড়ো হয়েছিলেন।
Featured Image Credit: Adam Pretty/Getty Images