গত জানুয়ারি মাসের ২৬ তারিখে ক্রিকইনফোতে পাকিস্তানি ক্রিকেটার মোহাম্মদ রিজওয়ানের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ পায়। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন তার ক্রিকেট জীবনের পরিবর্তন, তার ক্রিকেট ও জীবনের দর্শন, ক্রিকেট মাঠে তিনি কীভাবে চিন্তা করেন এবং সেই চিন্তা কীভাবে কাজে লাগান, এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সেই সাক্ষাৎকারটা ছিল অত্যন্ত সুখপাঠ্য। মোহাম্মদ রিজওয়ানের গত বছরের পারফরম্যান্স যাদের মনে আছে, তাদের রিজওয়ানকে নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হবার কথা এবং সেই সাক্ষাৎকার পাঠ তাদেরকেও আনন্দ দিবে বলেই আশা করা যায়।
আপনি যখন আপনার গত বছরের কথা চিন্তা করেন তখন আপনার মাথায় প্রথম কোন জিনিসটা আসে?
পুরো বছর? মনে হয় আগের থেকে কিছুটা ভিন্নভাবে টি-টোয়েন্টি খেলেছি, যেমনটা আগে খেলিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, আমার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শেষ।
২০২১ সালের আগে আমি বেশিরভাগ সময় বেঞ্চে ছিলাম, এত সুযোগ পাইনি; আর যখন পেয়েছি, তখনও ৬-৭ নাম্বারে। তারপর ২০২০-২১ সালের নিউ জিল্যান্ড সিরিজ এলো। প্রথম ম্যাচটি সেরকম ভাল হয়নি, দ্বিতীয়টাও তথৈবচ। আমার মনে আছে তৃতীয় ম্যাচের আগে ইফতেখার (আহমেদ)-এর কাছে বলেছিলাম,
“এটাই আমার ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।”
একজন খেলোয়াড় হিসাবে আপনার এমন কিছু শক্তি আছে যার প্রতি আপনার বিশ্বাস থাকবে অটুট। আর আমার এই বিশ্বাস ছিল যে আল্লাহ যেহেতু আমাকে সেই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, তাহলে তিনি নিশ্চয়ই আমার খেয়াল রাখবেন।
অথচ আপনি ভেবেছিলেন যদি স্কোর না করেন, তাহলে টি-টোয়েন্টিতে আপনার ক্যারিয়ার শেষ?
আমি এর আগে কোনো সাক্ষাৎকারে এই কথা বলিনি, কিন্তু সত্যিই তাই ভেবেছিলাম। আমি তখন আমার পিএসএল ফ্র্যাঞ্চাইজির (করাচি কিংস) হয়ে খেলিনি। আমি জাতীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলেছিলাম, আর মিসবাহ-উল-হক (তৎকালীন কোচ) এরপর আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় টি-টোয়েন্টি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে তো একটা তফাৎ রয়েছে। ততদিনে অনেকেই আমার পিছনে “তুমি আন্তর্জাতিক মানের নও” ধরনের কথা বলা শুরু করেছে।
তারপর নিউ জিল্যান্ডে সুযোগ পেলাম। সেই সিরিজে ওপেন করার পরিকল্পনাই ছিল শুরু থেকেই। নেটেও আমি ওপেন করছিলাম। জাতীয় টি-টোয়েন্টি কাপে মিসবাহ আমাকে বলেছিলেন, “এখানে ওপেন করো।” আর টি-টোয়েন্টিতে উইকেটরক্ষকদের জন্য যে এটা খুব বিশাল কোনো রোল, এমনটাও নয়। একজন উইকেটরক্ষকের কাছে হয়তো সাকুল্যে ২০-২৫টা বল আসতে পারে, যদি খুব বেশি হয়। তাই মিসবাহ বললেন, “যদি তোমাকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করি, তাহলে হয়তো দলের উপকার হবে।”
২০২০ সালের আগে আপনি ৭৫ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে মাত্র ৮ বার ওপেন করেছেন। কেন মনে হলো যে ওপেনিংয়ে চেষ্টা করে দেখা যায়?
ঠিক বলেছেন। আর ওই আটবারই ছিল একটাই টুর্নামেন্টে, সুই নর্দার্ন গ্যাস পাইপলাইন্স লিমিটেডের (Sui Northern Gas Pipelines Limited) হয়ে। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। পাঁচ-ছয়-সাত-আট, এমনকি নয় নাম্বারেও ব্যাট করেছি; তাই ভেবেছিলাম যে ওপেনিংয়েও দেখা যাক। সুইং থাকবে, নতুন বল থাকবে, কিন্তু সেই চাপ সামলাতে পারব। একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, আর আমি বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত ছিলাম। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল, দাঁড়িয়ে ছিলাম টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের যবনিকাপাতের খুব কাছাকাছি।
ওয়াকার ভাই (ওয়াকার ইউনিস, যখন তিনি ২০১৬ সালে কোচ ছিলেন) আমাকে একবার ওয়ান-ডাউন পজিশনে চেষ্টা করতে বলেছিলেন। জায়গাটা খালি ছিল আর দলের কাউকে দরকার ছিল। আমি সেই ম্যাচে রান-আউট হয়েছিলাম এবং পরে সেই বছরই বাদ পড়েছিলাম। কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছিল এটাই: আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে কি হবে না। আর নিউ জিল্যান্ডে ওপেনিং সহজ কথা নয়; সুইং, নতুন বল, দুর্দান্ত সব বোলাররা…।
নিউ জিল্যান্ডে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতেও সেই ইনিংসের শুরুতে আপনি কিছুটা স্ট্রাগল করেছিলেন।
জানেন তো, এই তিনটি খেলাতেই আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। তিনটিতেই, বাউন্স আর সুইংয়ে খেই হারিয়ে আমরা শুরুতেই সার্কেলের ভিতর উইকেট হারিয়ে ফেলেছিলাম, বল এসে সোজা আমাদের আঙুলে আঘাত করছিল। আমি তবু শট খেলছিলাম, সেগুলো পার হচ্ছিল। এখান দিয়ে একটি চার, সেখান দিয়ে একটি ছক্কা… ব্যাটিংটা নেহায়েত মন্দ হচ্ছিল বলে মনে হয়নি।
আমি প্রথম ম্যাচে কয়েকটি বাউন্ডারি মেরেছি, তারপর দ্বিতীয় ম্যাচে কয়েকটি ড্রাইভ এবং কাটও মেরেছি। ভালো কিছু বাউন্ডারি ছিল, তাই সেটা থেকে কিছুটা আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম। ডিফেন্ডও করছিলাম ভালোই। টিম সাউদি যে বিশ্বের সেরা বোলারদের একজন, সেটা তো বলাই বাহুল্য। ওকে ম্যানেজ করতে পারছিলাম। আউট হয়েছিলাম, কিন্তু আমার মনে হয়েছিল যে আমার পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
তারপর ফাইনাল খেলায়, ট্রেন্ট বোল্টও ফিরে এলো। কিন্তু আমি ভাবছিলাম, “যদি আমি একটি বল পাই, আমাকে সেটাই কাজে লাগাতে হবে। ছেড়ে দেওয়া চলবে না।” আমি বোল্টের প্রথম দুই বলেই চার মেরেছিলাম (রিজওয়ান প্রথম ওভারের প্রথম ও পঞ্চম বলে একটি দুই এবং একটি চার মারেন বোল্টকে)। আমি ইতিবাচকই ছিলাম, ভয় পাইনি।
আপনি আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছেন। ২০২১ সালে যা করেছেন, তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন?
আমি যদি কিছু সময় উপভোগ করার বা সত্যিই উদযাপন করার সুযোগ চাইতাম, তবে আমি গত পিএসএলে মুলতানের জয়ের জন্য চাইতাম। আমি যদি সত্যিই একটি মুহূর্তও আমার বন্ধুদের সাথে, দলের সাথে, সতীর্থদের সাথে উপভোগ করতে চাই, সেটা ছিল ঐ পিএসএল।
পিসিবি পুরষ্কার (মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার) ছিল বিশাল এক অর্জন, আর আমি ভেবেই রেখেছিলাম যে আমি এটি জিততে চাই। কিন্তু ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি হবে সেটা। আইসিসি পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার কথাও ভাবিনি, জেতার কথা ছেড়েই দিন। আমি সত্যিই ভিড়মি খেয়ে গিয়েছিলাম। খবর হচ্ছে, আমি ইন্টারভিউ দিচ্ছি, যেন স্বপ্ন সত্যি হয়েছে আমার।
কী ছিল সেই স্বপ্নটা?
এই যেমন ধরুন… আমি জানি যে এটা মানুষের মুগ্ধতার আতিশয্যেরই একটা রূপ, কিন্তু আমি এর গভীরতাটা পুরোপুরি ঠাহর করে উঠতে পারিনি। এই ব্যাপারটা এখনও হজম করতে পারি না যে, লোকে আমাকে এতটাই চেনে যে মহল্লায় ঢুকলে একটা বাচ্চাও বলে উঠবে, “ওই যে দেখ, রিজওয়ান।”
আমরা বাংলাদেশ থেকে ফিরছিলাম (নভেম্বর ২০২১ সালে), বিমানবন্দরে শাহীন শাহ আফ্রিদির সঙ্গে বসেছিলাম। সে বলল, ওখানে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক আছেন, তিনি যুগ যুগ ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন! সে বলল, “তোমার সাথে একটি ছবি তুলতে চেয়েছিলেন।” তিনি বেশ বয়স্ক ছিলেন; আমি তার কাছে গেলাম, ছবি তুললাম, আর তারপর শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরলেন তিনি। একদম রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা। দলের একজন খেলোয়াড় আমার কাছে এসে আমাকে বললেন, “রিজওয়ান এটা সেই মঞ্চ, যেখানে শুধু খ্যাতি নেই, তোমার ইজ্জত আছে।” লোকটা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল, আমার জন্য! পুরো পাকিস্তান দল সেখানে ছিল, বিশাল নামের সব খেলোয়াড় ছিল; আর উনি অপেক্ষা করছিলেন স্রেফ আমার জন্য!
এর আগে পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি কিছু। এর আগে অব্দি তো আমি ভাবতাম যে মানুষ আমাকে নিয়ে মজা করত। সামনে কেউ বলেনি হয়তো, কিন্তু এমন কিছু যে সত্যিই হয়, সেটা জানতাম। লোকেরা আমাকে উপহাস করে “ব্র্যাডম্যান” বা “স্যার রিজওয়ান” বলে ডাকত। কিন্তু ওই একটা মুহূর্তই আমার জন্য সবকিছু বদলে দিয়েছে।
এসব তো ছিলই। তারপরে সম্প্রতি করাচি বিমানবন্দরে আসার সময় একটি ছোট মেয়ে আমাকে দেখে চিৎকার করে বলেছিল, “আরে, রিজওয়ান!” আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম, এবং সে ছুটে এল জড়িয়ে ধরতে। কাঁদতে লাগল। তখন আমার মনে হলো, “আরে, আল্লাহ আমাকে এখন কোথায় নিয়ে এসেছেন! আমি কি সত্যিই এসবের যোগ্য?”
পুরো বছরটা বাবলসের মধ্যেই কাটিয়ে দেওয়ার জন্য কি এই মুহূর্তগুলোর মাহাত্ম্য আরো বেড়ে গেছে?
হতে পারে। আমরা যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছিলাম, ভারতের বিপক্ষে খেলার আগে অনেক শুনছিলাম, “ইয়ার, আগামীকাল ভারতের সাথে খেলা, বিগেস্ট গেইম”, এই সেই অনেক কিছু। আমি তাদের বলছিলাম, “আরে এটা শুধুই আরেকটা ম্যাচ, স্বাভাবিক জিনিস। আলাদা কিছু মনে করছি না।” কিন্তু হলফ করে বলছি, সেই খেলার পরে আমি যা দেখেছি, সেই অভ্যর্থনার সাথে আর কিছুর তুলনাই হয় না। একে তো এটা ভারতের বিপক্ষে আমার প্রথম খেলা, বিশ্বকাপে আমার প্রথম ম্যাচ, তার উপরে আবার যে ভালবাসা এবং স্তুতি আমরা পেয়েছি, সেটার রেশ এখনও রয়ে গেছে৷ মনে পড়ছে খেলার আগে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কথা, একজন বলেছিল, “আপনি একজন তারকা; কিন্তু আপনি যদি আগামীকাল পারফর্ম করেন, তবে সুপারস্টার হওয়ার জন্য একটি জায়গা ফাঁকা রয়েছে।” আমি শুধু বলছিলাম, “প্লিজ দোয়া করেন যেন পাকিস্তান জিতে যায়।”
আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি এখন কেমন অনুভব করছি… অদ্ভুত। বাচ্চারা আমাকে চিনছে, বয়স্ক মানুষ চিনছে, হাজারো পরিবার চিনছে, ছবি তুলতে চাইছে, এসব আমি এখনো বিশ্বাস করেই উঠতে পারছি না।
গত বছর আপনার সবচেয়ে প্রিয় ইনিংস কোনটি?
আমার সবসময় মনে থাকবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলা ইনিংসটার কথা। জশ হ্যাজলউড আমার খেলা সবচেয়ে কঠিন বোলার, সেদিন ওকে খেলেছিলাম (শুধু খেলেননি, উড়িয়েই দিয়েছিলেন একরকম; হ্যাজলউড ওই ম্যাচে ৪ ওভারে ৪৯ রান দিয়েছিলেন)। খুব কঠিন বোলার। তার উপরে পিচ, কন্ডিশন, সবই আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। ব্যাটিং ছিল দুরূহ, আর আমি কঠিন লড়াই করেছিলাম। আইসিইউ থেকে বের হয়েই মাঠে যেতে হয়েছিল আমাকে, সেটা ছিল ভিন্ন আরেকটা চ্যালেঞ্জ।
ভারতের বিপক্ষে ইনিংসটা কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি থেকেও বেশি?
অনেকেই বলবে যে ভারতের বিপক্ষে ইনিংসটাই সেরা, তবে আমি জানি কোনটি সবচেয়ে কঠিন ছিল। আমি ওই ইনিংসটা খেলতে গিয়ে যেই লড়াইটা করছিলাম, নিজের বিরুদ্ধে, বোলারদের বিরুদ্ধে… অস্ট্রেলিয়ার বোলিং সবসময়ই শক্তিশালী। বল পিচে একরকম আটকে যাচ্ছিল, ব্যাটে আসছিল না ঠিকঠাক; তারাও একদম ঠিকঠাক স্পটেই বল ফেলছিল। আমি যেটা করতে চেষ্টা করছিলাম, সেটা করতে পারছিলাম না। তাই আমি “ধুত্তোরি, নিকুচি করেছে” বলে লড়াই করেছি। শেষের দিকে আমি কানেক্ট করা শুরু করি, যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম এতটুকু সময়। সে কারণেই এই ইনিংসটা সবার সেরা।
চ্যালেঞ্জই আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে, ঠিক বললাম তো? আপনার টেস্ট অভিষেকে আপনাকে পইপই করে বলার পরও হুক করে আউট হয়েছেন। দল পরিবর্তন না করার পরামর্শ সত্ত্বেও আপনি আপনার ঘরোয়াতে দল পরিবর্তন করেছেন। আপনার বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্রিকেটকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
আর কিছু জানি না, তবে এটা নিশ্চিত যে আমি ঠিক ‘ফলোয়ার’ নই। কেউ এভাবে পোশাক পরে বলেই আমি পরব না। এমনকি আমার বিয়েটাও আমি এমন তারিখে ব্যবস্থা করেছি যা অন্যদের কাছে অদ্ভুত বলে মনে হতে পারে। আমার বাগদান সেরেছি ঈদের দিন। অনেকে চাঁদ রাতে (ঈদের আগের দিন) করতে পারে হয়তো, ঈদের দিনে মানুষের কাজের এমনিও শেষ নেই। কিন্তু আমি তবুও করে ফেলেছি।
আমি সবসময়ই অন্যদের থেকে আলাদা কিছু করতে চেয়েছি, এখনও করি; এমন কিছু, যা অন্য কেউ করে না বা করতে পারে না। আমি প্রায়ই আমার স্ত্রীকে এটাই বলি। আমি অনন্য হতে চাই।
বাবরের সাথে আপনার পার্টনারশিপটা এই বছর রীতিমতো অভূতপূর্বই বলতে হবে। ছয়টি শতরানের পার্টনারশিপ, ৪ বার ছাড়িয়েছে ১৫০ রানও। আপনাদের দু’জনের মধ্যে রসায়নটা এমন জমজমাট কীভাবে?
শুরুর দিকে আমাদের দু’জনকে নিয়েই অনেক প্রশ্ন ঘুরছিল। যেমন, পাওয়ারপ্লে চলাকালীন আমরা যথেষ্ট মারি না। তবে বাবরের সাথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট। আমাদের মধ্যকার জুটিগুলো কিন্তু রানিংয়ের উপরই তৈরি হয়েছে, যাতে বাউন্ডারি না এলেও প্রতি ওভারে ছয়-সাত রান দৌড়েই নিয়েছি। এটা আমাদের বোঝাপড়া থেকেই সম্ভব হয়েছে। দু-একটা রান-আউট হয়েছে বটে, কিন্তু আমরা একজন আরেকজনকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারি। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমরা পরিস্থিতি আর পিচের দাবি মূল্যায়ন করি। যদি ২০০ রানের পিচ হয়, সেভাবে এগোই। আর যদি ১৫০ রানের পিচ হয়, তাহলে সেটাকেই লক্ষ্য করি। এই কারণেই সম্ভবত আমরা এতটা সফল হয়েছি, কারণ পরিস্থিতিগুলো খুব ভালোভাবে মূল্যায়ন করতে পেরেছি।
আপনি যে অন্ধ বিশ্বাসের কথা বলছেন – সময়ের সাথে সাথে আসে না সেটা?
পার্টনারের ফিটনেস কেমন, সেটা থেকেই এই বিশ্বাসটা আসে। আপনার যদি বিশ্বাস থাকে যে স্ট্রাইকে থাকা পার্টনার দ্রুত সিঙ্গেল নেবে না, তাহলে আপনি আত্মবিশ্বাসী হবেন না। আপনার সেই বিশ্বাসটাই থাকবে না। ফিটনেস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ আপনি একটি নির্দিষ্ট দিকে একটি শট খেলার পর আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে যে আপনার পার্টনার এই সিঙ্গেলটি নিতে পারবে। আপনাকে এটাও জানতে হবে, কোনদিকে বলটা থাকলে সে সিঙ্গেলটা নিতে পারবে না। যদি আমি সেই দিকে হ্যাঁ বলি, তাহলে সঙ্গী সাথে সাথে দৌড় শুরু করবে, যাচাই বা দ্বিধা ছাড়াই। ওরা জানে আমি হ্যাঁ বলার পর আর ঘুরব না। বাবর আর আমি এর আগে প্রায়ই একসঙ্গে নেটে অনুশীলন করেছি, এমনটা নয়। মাত্রই গত বছরের কথা; এর আগে এত কথা বলিনি বা একসঙ্গে খেলিনি। সে ছিল ৪ নাম্বারে, আমি ছিলাম লোয়ার অর্ডারে।
কিন্তু আমরা সবে শুরু করেছি, আমরা বারকয়েক কথা বলেছি, ব্যস। আমরা বলেছিলাম যে আমাদের দু-একটা রান-আউট হলেও সেটা বড় কথা নয়, কাজ করা যেতে পারে সেটা নিয়ে; তবে এই রানিংটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই জুটি নিয়ে প্রায়শই একটা চিন্তা থাকে যে, পাওয়ারপ্লেতে আপনাদের একজনকে আরও একটু আগ্রাসী হওয়া প্রয়োজন।
হ্যাঁ, এই চিন্তা করা যেতেই পারে যে আমরা যে কেউই সেটা করতে পারি। তবে এটা দিনশেষে অধিনায়কেরই সিদ্ধান্ত; আর অধিনায়ক নিজেই ওপেনার। ক্যাপ্টেন যদি পিচে থাকেন, তিনি পিচ, কন্ডিশন, গ্রাউন্ড মূল্যায়ন করছেন; যেটা ১৭০ রানের পিচ, সেখানে পাওয়ারপ্লেতে আপনি সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ পাবেন, আপনি সেখানে ৭০-৮০ পাবেন না। আবার যদি ২০০ রানের পিচ হয়, নিশ্চিতভাবেই আপনি ৬০-৭০ রানের লক্ষ্য রাখতে পারেন। কিন্তু টি-টোয়েন্টিতে আমাদের শক্তি হলো, আমরা পাওয়ারপ্লেতে উইকেট হারাই না এবং আমাদের বোলাররা পাওয়ারপ্লেতে উইকেট নেয়।
যদিও আমরা বাইরের এসব কথাবার্তার দিকে খুব বেশি মনোযোগ দিইনি। ওরকম হিসেবে তো একটা সময় আমরা দু’জনের কেউই ভালো খেলোয়াড়ই ছিলাম না।
আপনাদের পাওয়া সাফল্যটাও তো সাহায্য করেছে তাতে।
হ্যাঁ, আমরা অনেকগুলো বড় পার্টনারশিপ করেছি। আমরা ২০০ তাড়া করে জিতেছি; ২০০ তাড়া করার পথে একটা ১৫০ রানের জুটি গড়েছি।
আপনাকে দেখতে হবে পিচের চাহিদা। বিশ্বকাপের আগে আমরা যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে ১২০-১২৮ ধরনের পিচ ছিল। বাংলাদেশে আমরা ১২৮ রান তাড়া করতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। এটা অনেকটা নির্ভর করে পিচ কেমন তার উপর। সেটার উপরই সিদ্ধান্ত নেই, কী ধরনের পিচ, তাতে ভালো স্কোর কী, ন্যূনতম স্কোর কেমন হতে পারে। এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে আমরা উন্নতি করতে পারি, অবশ্যই, নো কোয়েশ্চেন। পাওয়ারপ্লেতে আমাদের গড় হল ৪৩-৪৪, তাই আমরা এটিকে ৪৮-৪৯, এমনকি ৫০-এ নিয়ে যেতে চাই।
আপনার ট্রেডমার্ক pasliyon waala shot নিয়ে কিছু বলুন। পাঁজর বরাবর ছুটে আসা বলগুলোতে যেসব পুল-ফ্লিক আপনি খেলেন।
এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে গিফট বলে মনে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে প্যাট কামিন্স আমার হার্টের কাছে আমার পাঁজরের ঠিক উপরে আঘাত করেছিল। আমি বলটি ছেড়েছিলাম আর সোজা আমার বুকে আঘাত করেছিল। ব্যাটই আমার হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল। তখন ভাবলাম, এরকম বলের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলেও হয়তো একটা শট হাতে রাখতে হবে আমার; কারণ অস্ট্রেলিয়া এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনি এরকম একটা শট খেলতে পারলে জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
এটা রাতারাতি ঘটেনি। ধীরে ধীরে আমি শর্ট বলের অনুশীলন করছিলাম এবং বুঝতে পারছিলাম যে আমি এটা টি-টোয়েন্টিতেও ব্যবহার করতে পারি। কঠিন ব্যাপারটা হলো সঠিক লেংথ বিচার করা। যদি মাথা বরাবর আসে, তাহলে শটটা নিচে রাখা বা নিরাপদ রাখা কঠিন। যদি একটু লোয়ার হয়, তাহলে বিকল্প থাকে কিছু।
লেংথটাই হলো মূল, কিন্তু নতুন বলে এই শটটা কিন্তু বেশ ভালো। আমি ভুবনেশ্বর কুমারকেও (বিশ্বকাপে) এই শটে খেলেছি, যেটা একটু বেশি কঠিন ছিল কারণ সে আউটসুইঙ্গার করেছিল। আমাকে সেই লাইন এবং মুভমেন্টের সাথে মেলাতে হয়েছিল, তারপর লেংথ ধরতে হয়েছিল। এই যে এত কিছু মেলানো, শটটা খেলা সবসময় সহজ নয়।
এটা তো আপনার টি-টোয়েন্টি শটের বহর বাড়ানোর অংশ হিসেবেই এসেছে, তাই না?
একদম। আপনাকে এই স্তরে এসে এটুকু তো করতেই হবে। মনসুর রানা (টিম ম্যানেজার) আমাদের বলেন, “যদি কোনো খেলোয়াড় পাকিস্তান দলে এসে থেমে যায়, তার নিজের স্তরকে আরও উপরে না নিয়ে যায়, একটি নতুন বল বা একটি নতুন শট না শিখতে পারে, তাহলে তারা আবার পিছলে যাবে।” আপনি এই অবধি আসলে আপনাকে উত্তরোত্তর উন্নতি করতেই হবে। হ্যাঁ, তবে শুধুমাত্র সার্ভাইভ করার জন্যই নয়, বরং আরও ভাল করার জন্যও।
ট্যুরের সময়সূচী বেশ ব্যস্ত হয়ে গেলে আপনি কখন এই জাতীয় জিনিসগুলিতে কাজ করার সময় পান?
ব্যাপারটা হলো কী, আপনার ইতোমধ্যেই শটের একটা ভিত হয়েই আছে। যেমন ধরুন, আপনি জানেন যে লেগে ফ্লিকই আপনার শক্তিশালী শট। তাহলে আপনি ঐ শট খেলার সময়ই সূক্ষ্ম একটা পরিবর্তন করে নিরীক্ষা চালাতে পারেন। আপনি এমনভাবেই শটটা তৈরি করবেন যেটা মূল শটের যথেষ্ট কাছাকাছি। আমি যদি একটু হেঁটে শটটা খেলি, তবে কিছুটা সোজা ব্যাটে খেলতে পারি আর স্কয়ারের পরিবর্তে সেটাকে ওয়াইড মিড-অনে পাঠাতে পারি।
সফরে আপনি আমূল কোনো পরিবর্তন করতে পারবেন না, যেমন লেগে ফ্লিক আপনার শক্তির জায়গা হলে হঠাৎ করে সেটা আপনি কভারের উপর দিয়ে পারবেন না। সময় নেই। আপনি যেটা করতে পারেন শেষ পর্যন্ত, জিনিসগুলোকে একটু ঘষামাজা করা, একটু টুইক করবেন। একটা ভিন্ন অ্যাঙ্গেল নিয়ে, একটা সামান্য আলাদা স্টান্স… এমন কিছু। আপনি ক্রিজটি আরও ভালোভাবে ব্যবহার শুরু করতে পারেন, শাফলে আরেকটু উন্নতি করবেন, আপনার মুভমেন্ট একটু পরিমার্জন করবেন। এই ছোট ছোট জিনিসগুলোর কিন্তু প্রভাবটা বেশ বড়, এসব করাও সহজ কথা নয়।
গত বছরে খেলেছেন, এমন কোনো স্পেশাল শট আছে আপনার মাথায়?
কোন বোলার, মনে নেই। তবে অফ-স্ট্যাম্পের একটি বলের উপর আমি একপাশে সরে গিয়ে মিড-অফের উপর দিয়ে একটা শট খেলেছিলাম যেটা প্রায় ছক্কা হয়ে গিয়েছিল। আসলে প্রথমে আমি (তাবরেজ) শামসিকে এক্সট্রা কভারে চার মারলাম, তারপর ঐ ম্যাচেই আমি সেই বাঁহাতি ফাস্ট বোলারকে (বিউরান হেনড্রিকস) মিড অফের উপর দিয়ে একটু সরে গিয়ে শটটা খেলি।
আপনার গেমে ডেটা এবং বিশ্লেষণ কতটা ভূমিকা পালন করে?
আমরা যে মাঠে খেলছি, সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিই আমি। আগের ম্যাচগুলো কেমন ছিল, পিচ কেমন আচরণ করেছে, বাউন্ডারি কত বড়, বাতাস কোন দিকে বয়ে যায় – এসবই দেখি।
ডেটা যা করে তা হলো আপনাকে কিছু জিনিস সম্পর্কে ভাল ধারণা দেয়। একজন বোলার সবসময় একই ধরনের ডেলিভারি করবে না। উদাহরণস্বরূপ, হয়তো কোনো একদিন একজন আউটসুইংনির্ভর বোলার স্বাভাবিক আউটসুইং পাবে না, হয়তো সারাদিনেও পারবে না। সে হয়তো স্ট্রেইট বল করবে, এমনকি কিছুটা ইনসুইংও পেতে পারে। তখন আপনি কী করবেন?
অবশ্যই আমি খেলোয়াড়দের টুকিটাকি বোঝার জন্য ভিডিও দেখি, বিশেষ করে নতুন খেলোয়াড়দের জন্য। টিম সাউদির কথা ধরুন, সারা বিশ্ব জানে সে কেমন বোলিং করে। কিন্তু যদি একজন নতুন কেউ আসে, তাহলে আমি দেখতে চাইব সে আসলে কেমন করে। এই ধরনের ব্যাপারগুলো তো নিঃসন্দেহেই সাহায্য করে। বলটা কীভাবে ছাড়ছে, কীভাবে সুইং করেছে, গতির পরিবর্তনটা কেমন করছে, কিংবা গ্রিপগুলোই বা কেমন – এরকম কিছু। যেমন ধরুন, কেউ যখন ব্যাক-অফ-হ্যান্ড রিলিজ বোলিং করে, তখন তারা কীভাবে সেট আপ করে তা দেখতে দারুণ লাগে।
বাংলাদেশের মতো জায়গায়, সে চার ওভারে নয়-দশ রান দেবে এবং প্রচুর উইকেট পাবে কারণ তারা সেখানে আধিপত্য বিস্তার করে। হঠাৎ তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গেলেন এবং বল সেখানে ঘুরছে না। এরপর তিনি সেখানে ৪০-৪৫ রান দিতে পারেন।
ম্যাচ-আপ’এর দিকে খেয়াল করেন?
সহজ ব্যাপার – আমি কোনো বোলারের চেয়ে বেশি টার্গেট করতে চাই বাউন্ডারিকে। প্রায়শই মাঠের একদিকে তুলনামূলক ছোট সীমানা থাকবে, বাতাস একটি নির্দিষ্ট দিকে বইবে, তাই আমি এটাকেই বেশি প্রাধান্য দেই। আপনাকে পিচের কথাও ভাবতে হবে, তাই শারজাহর মতো একটি লোয়ার-বাউন্স সারফেসে আপনি দেখবেন কীভাবে নির্দিষ্ট কোনো ফাস্ট বোলারদের খেলা যায়। কিন্তু বাউন্ডারির দিকে আরো সূক্ষ্ম নজর রাখতে হবে।
আমরা মাঝে মাঝে ডেটার দিকে তাকালে পিচের কথা ভুলে যাই। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন লেগি ১০টি ম্যাচে ২০ উইকেট নিয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে দেখতে হবে উইকেটগুলো সে কোথায় নিয়েছে, তাই না? বাংলাদেশের মতো জায়গায় সে চার ওভারে নয়-দশ রান দেবে এবং প্রচুর উইকেট পাবে, কারণ তারা সেখানে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। অথচ অস্ট্রেলিয়ায় গেলে দেখবেন বলই ঘুরছে না, সেখানে হয়তো চার ওভারে ৪০-৪৫ রান দিয়ে দিতে পারে। তাই পিচের মূল্যায়ন অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আপনি টি-টোয়েন্টিতে প্রায়ই লম্বা সময় ধরে ব্যাট করেন। ২০২১ সালে আপনি ১৪ ইনিংসে ডেথ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করেছিলেন – শুধুমাত্র বাবর আজমই এর চেয়ে বেশিবার করেছেন সেটা (১৫ বার)। কিন্তু আবার সেখানে আপনার স্ট্রাইকরেটও ২০০-এর উপরে!
কিছু জিনিস তো অধিনায়ক এবং কোচের দিক থেকে চাহিদা থাকেই। আন্তর্জাতিক ম্যাচে আমাদের লক্ষ্য ছিল আমাদের দু’জনের একজন যেন শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে। তবে আমার ব্যাটিং স্টাইলটা একটু ভিন্ন। বাবর এবং আমার মধ্যে প্রথম পার্থক্য হলো, আমি একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। অনুশীলনের সময় বাবর যদি চার ঘণ্টা ব্যাট করে, তাহলে আমি দুই ঘণ্টা ব্যাট করি; বাকি দুই ঘণ্টা আমি কিপিংয়ে সময় দিই। স্বাভাবিকভাবেই একটা পার্থক্য তাতে আসেই।
আমি যদি আরও স্টাইলিশ খেলোয়াড় কিংবা অন্য রকমের ব্যাটার হওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে সেটা আমার কিপিংকে প্রভাবিত করতে পারে। আমি হয়তো কিছু জিনিস করতে পারব না যা আমি এখন করি। কিপিংয়ে আপনার ফ্লেক্সিবিলিটি প্রয়োজন। আমার মতে, স্টাইলিশ খেলোয়াড়রা সবসময়ই বেশি স্থিতধী থাকেন, তাদের তুলনামূলক বেশি ব্যালান্স দরকার পড়ে; কেননা, তাদের খেলাটা এর উপরই নির্ভর করে অনেকটা।
আমার বিভিন্ন রকমের মুভমেন্ট করতে হয়। আমাকে ডাইভ করতে হয়, অনেকটা সময় ধরে ঝুঁকে থাকতে হয়, আর এই ব্যাপারটা আমার ব্যাটিংয়েও প্রভাব ফেলে। আমি ভাগ্যবান যে গত বছরে কিছু রান করেছি, বেশ কিছু অর্জনও আছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে আমি মূলত একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার।
নিঃসন্দেহে ডেথ ওভারে আমার পাওয়ার-হিটিং নিয়ে কিছুটা কাজ করেছি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে (মোহাম্মদ) হাফিজ ভাই আমাকে কাজ করার জন্য কয়েকটি ‘ড্রিল’ দিয়েছিলেন। শহীদ (আফ্রিদি) ভাই আমাকে কিছু টিপসও দিয়েছিলেন। রমিজ রাজা যখন একজন ধারাভাষ্যকার ছিলেন, আমার সাথে টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে কথা বলেছিলেন। বছরদুয়েক আগের কথা মাত্র, ২০২০।
শহীদ ভাই বলেছিলেন, “ফেস করার সময় মাথাটা স্থির রাখবে।” রমিজ ভাই বলেছিলেন, “পাওয়ারের জন্য হাত আর ভিত্তি-ভারসাম্যের জন্য পা’র ব্যবহার নিয়ে কাজ করো।” হাফিজ ভাইও আমার স্টান্স, ব্যালান্স এবং শট নিয়ে ডিসিশন-মেকিং নিয়ে সাহায্য করেছিলেন। যেমন, কোন শট কী ধরনের ফলাফল দেবে, এবং কীভাবে নির্দিষ্ট কোনো শটে আরও শক্তি উৎপন্ন করা যায়, এগুলো।
অধিনায়কত্ব ব্যাপারটাকে কেমনভাবে দেখছেন?
উইকেটরক্ষক হিসেবে এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো বেশ জটিল হলেও কিছু সুবিধাও আছে। যেমন, হঠাৎ কোনো পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে চাইলে বোলারের কাছে যাবেন, আলোচনা করবেন, ফিরে আসবেন, রীতিমতো বেশ চাপের ব্যাপার। কিন্তু আমার এই অভ্যাস আছে। কোনো বোলারের সাথে আমি পারতপক্ষে গিয়ে আলাপ করি না যতক্ষণ না তারা দুটো বাউন্ডারি না খায়।
কেন? কারণ, আমি প্রথমে চাই বোলারদের পরিকল্পনাকে প্রাধান্য দিতে। তার সেই পরিকল্পনাটা যথাসাধ্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। কিন্তু যদি সে দুটো বাউন্ডারি খেয়ে বসে, তাহলে আমি দৌড়ে তার কাছে গিয়ে বলবো, “আচ্ছা, আমার পরিকল্পনা এটা, এবার এটা চেষ্টা করা যাক।”
আমি নরম, এমনটা নয়। আমাকে যখন কঠিন হতে হবে, তখন আমি তাই।
অধিনায়কত্বের সবচেয়ে কঠিন দিক কোনটা?
জীবন আর অধিনায়কত্বের সবচেয়ে কঠিন জিনিসটা একই – এমন সময় আসবে যখন সততা এবং ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা আপনাকে কিছুটা ঝামেলাতেই ফেলে দেবে। যদি সৎ থাকেন, আপনার সদুদ্দেশ্যে অটল থাকেন, আপনি আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন, দেখবেন কঠিন সেই পথেও উনি বাকিটা রাস্তা আপনাকে পরিচালিত করবেন।
মুলতান গত বছর পিএসএলে মাঠে খেলোয়াড়দের ডাগআউট থেকে কোডেড সংকেত ব্যবহার করছিল। সেগুলোর সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিতেন?
জানেন, একটা ম্যাচে আমি পুরো খেলায় ডাগআউট থেকে আসা কোডগুলি খুঁজছিলাম। একটাও খুঁজে পাইনি। তো আমি আমার নিজের কাজই করলাম। কসম খেয়ে বলছি, খেলা শেষ করে গিয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছি যে কোড কই গেল! ম্যানেজমেন্ট বলল, “আরে এই তো এগুলো”। অথচ আমি খোঁজ করছিলাম অন্য কিছুর।
কখনও কখনও কোডগুলো ছিল ব্যাটারকে বিরক্ত করার জন্য। কোডগুলো ছিল মূলত কোচের পরামর্শের মতো যে তিনি কী ভাবছেন। আমার যে সেটাই করতে হবে, এমন না। এরকম নমনীয়তা আছে যে আমি এটি ব্যবহার করব যদি প্রয়োজন মনে করি। এই কারণেই বলছি যে এমনও কয়েকটা ম্যাচ গেছে যেখানে আমি সেই কোডগুলো ব্যবহারই করিনি। এত কিছু হয়ে যায় চারপাশে যে মাঠের বাইরে তাকানোরই তো সময় থাকে না।