এক বনে দুই বাঘ থাকতে পারে না –ফুটবলে এই কথাটা অনেক বেশি প্রচলিত। মূলত আক্রমণভাগে দুজন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের একই দলে মানিয়ে নিতে যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, সেই দিকটি বুঝানোর জন্য এই কথাটি ব্যবহার করা হয়। দলে যদি কোনো বড় তারকা থাকেন, তবে অধিকাংশ সময়েই সেই তারকাকে কেন্দ্র করে আক্রমণভাগ সাজানোর কৌশল গ্রহণ করা হয়। এখন দলে দুইজন বড় তারকা থাকলে স্বাভাভিকভাবেই কোচ চাইবেন সেই কৌশল থেকে সরে আসতে।
সমস্যাটা হচ্ছে, নিজের উপরে থাকা পাদপ্রদীপের আলো কিছুটা কমে যাওয়া অনেক খেলোয়াড়ই মেনে নিতে পারেন না, আর একারণেই বিশ্বসেরা দুইজনকে একই দলে খেলানোটা কিছুটা দুষ্কর হয়ে পড়ে। অবশ্য ব্যতিক্রম উদাহরণও আছে, ব্রাজিলের ইতিহাসে সেরা দুজন খেলোয়াড়ের নাম বললে চলে আসবে পেলে আর গারিঞ্চার কথা, তারা কিন্তু সমসাময়িক সময়ে খেলেই সেরা হয়েছেন। জুটি হিসেবে তাদের রেকর্ডও ঈর্ষণীয়, দুজন একসাথে খেলেছেন এমন কোনো ম্যাচে হারের মুখ দেখেনি ব্রাজিল! হালের মেসি-সুয়ারেজ-নেইমার জুটির কথাও উল্লেখ করা যায়, তিনজন অসাধারণ খেলোয়াড় সব সংশয় দূরে সরিয়ে দিয়ে দারুণ এক ত্রয়ী গঠন করেছিলেন। তবে ২০১৮ সালে নেইমারের বার্সা ছাড়ার কারণটা কিন্তু আমাদের প্রথম কথাটিকে মনে করিয়ে দেয়।
এতক্ষণ যাদের কথা বলা হলো, তারা কেউই একই পজিশনের ছিলেন না। পেলে যেখানে ছিলেন সেন্টার ফরোয়ার্ড, সেখানে গারিঞ্চা ছিলেন রাইট উইঙ্গার। রাইট উইং ধরে খেলে পুরো মাঠ নিয়ন্ত্রণ করা মেসির সাথে জুটি বাঁধা নেইমার ছিলেন লেফট উইঙ্গার। তবে ফুটবল ইতিহাসে এমন দুজন খেলোয়াড় আছেন, যারা একই পজিশনে খেলেও গড়েছিলেন অনবদ্য এক জুটি। সেই জুটির স্থায়িত্বকাল হয়তো খুব বেশি ছিল না, কিন্তু তাদের সেই রসায়নে এতটাই জাদু ছিল যে ফুটবল বিশ্ব এখনো সেই জুটির স্থায়িত্বকাল কম হওয়া নিয়ে আফসোস করে। বলছিলাম ব্রাজিলের ইতিহাসে সেরা দুই সেন্টার ফরোয়ার্ড –রোমারিও ও রোনালদোকে নিয়ে তৈরি ‘রো-রো’ কথা।
এই জুটির একসাথে পথচলার শুরুটা ১৯৯৪ বিশ্বকাপের মাধ্যমে, সেই আসরে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের মধ্যমণি ছিলেন রোমারিও। অন্যদিকে ক্রুজেইরোতে অল্প সময়েই সবার নজরে চলে আসার পুরস্কারস্বরূপ ১৭ বছর বয়সী রোনালদোকে সেই দলে রাখা হয় মূলত অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। অবশ্য রোমারিওর সাথে বেবেতোর জুটি জমে যাওয়ায় সেই আসরে এক মিনিটের জন্যেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি তিনি।
তবে সাইডলাইনে বসে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, সেটাও কম কিছু ছিল না। তখন রোমারিও ছিলেন নিজের জীবনের সেরা ছন্দে, আসর শুরুর আগেই দাম্ভিকতার সুরে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, “এটা হবে রোমারিওর বিশ্বকাপ।” কথাটি যে ফাঁকা বুলি ছিল না, তা খুব ভালোভাবেই প্রমাণ করেছিলেন তিনি। দলের সবচেয়ে বিপদের সময়ে বারবার জ্বলে উঠে ২৪ বছর পর ব্রাজিলকে বিশ্বজয়ী করার পথে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন তিনিই। যার স্বীকৃতিস্বরূপ জিতেছিলেন সেই আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
খুব কাছ থেকে নিজের স্বদেশীকে এমন দুর্দান্ত পারফর্ম করে দেখাটা সেই সময়ের কিশোর রোনালদোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, নিজেকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করতে গেলে ঠিক কী করতে হবে তা রোমারিওকে দেখে বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। এই ব্যাপারে তিনি বলেন,
“জিকোর সাথে খেলার সৌভাগ্য আমার হয়নি, তবুও বলবো আমার দেখা ব্রাজিলের সেরা ম্যাচ উইনার ছিলেন রোমারিও। গোল করার অদম্য এক নেশা, নিখুঁত নিশানা আর সাথে দুর্দান্ত সব স্কিল – আমার মনে হয় আমি তার কাছ থেকেই এসব কিছু শিখেছি।”
১৯৯৪ রোমারিওর পরামর্শেই ডাচ ক্লাব পিএসভিতে যোগ দেন রোনালদো, এই ক্লাব থেকেই ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজের ক্যারিয়ারের শুরু করেছিলেন রোমারিও। পিএসভিতে দুই মৌসুমে রোনালদো খেলেছিলেন ৪৬ ম্যাচ, করেছিলেন ৪২ গোল। এমন দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের কারণে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা দলে ভেড়ায় তাকে, মজার ব্যাপার হচ্ছে পিএসভি ছেড়ে দেওয়ার পর রোমারিওর গন্তব্যস্থানও ছিল বার্সেলোনা! তবে রোনালদো আসার এক মৌসুম আগেই সেই ক্লাব ছেড়ে দিয়েছিলেন রোমারিও।
নিয়তি এই দুজনকে নিয়ে অন্যরকম একটা খেলা চালিয়েছিল। যে দরজাটা রোমারিওর জন্য বন্ধ হচ্ছিল, সেই একই দরজাটা পরে খুলে যাচ্ছিল রোনালদোর জন্য। আর এ কারণে ক্লাব ফুটবলে দুজনের কখনোই একসাথে খেলা হয়নি। তবে ব্রাজিল জাতীয় দলের কল্যাণে এই দুজনকে একসাথে দেখার ইচ্ছাটা পূরণ হয়।
১৯৯৭ সালের কোপা আমেরিকা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলিভিয়ায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত হওয়ায় এখানে খেলতে এসে অধিকাংশ অতিথি দেশেরই নাভিশ্বাস বের হয়ে যায়। এই প্রতিকূল অবস্থাতেই জাদু দেখায় রো-রো জুটি, গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকাকে ৫-০ গোলে হারায় ব্রাজিল আর সেই ম্যাচে একটি করে গোল করেন রোমারিও ও রোনালদো। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে রোনালদোর জোড়া গোলে প্যারাগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে চলে যায় ব্রাজিল।
সেমিফাইনালে পেরুর বিপক্ষে গোলের বন্যা বইয়ে দেয় সেলেসাওরা, ৭-০ গোলের জয়ে রোনালদো গোল না পেলেও রোমারিও করেন জোড়া গোল। ফাইনালে অবশ্য পরীক্ষাটা কঠিন ছিল, বলিভিয়াকে তাদের ঘরের মাঠে হারানোটা তো সবসময়ই কিছুটা দুষ্কর। প্রথমার্ধের খেলা ১-১ গোলে শেষ হলেও ৭৯ মিনিটে গোল করে ব্রাজিলকে ২-১ গোলে এগিয়ে দেন রোনালদো। শেষপর্যন্ত ৩-১ গোলের জয় নিয়ে রো-রো জুটির খেলা প্রথম টুর্নামেন্টেই শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেন রোনালদো।
এরপর সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় কনফেডারেশন্স কাপেও প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল এই জুটি। গ্রুপ পর্বে রোমারিও গোল পেলেও নিষ্প্রভ ছিলেন রোনালদো, তবে এই জুটির আসল জাদুটা দেখা যায় সেমিফাইনাল ও ফাইনালের মঞ্চে।
সেমিফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ হলেও দ্বিতীয়ার্ধে রোমারিও ও রোনালদোর গোলে জয় তুলে নিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে সেলেসাওরা। সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া, শক্তির বিচারে অজিরা যোজন যোজন পিছিয়ে থাকলেও এই দলের বিপক্ষেই গ্রুপ পর্বে ড্র করেছিল ব্রাজিল। তা-ই ফাইনাল শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়া দলটাও আত্মবিশ্বাসী ছিল, তাদের কোচ তো বলেই দিয়েছিল যে ফাইনালে নাকি দুই দলই সমান ফেভারিট!
অস্ট্রেলিয়ার সেই ইংলিশ কোচ টেরি ভেনাবলেস হয়তো তখনো ভাবতেও পারেননি ফাইনালে তার দলের জন্য ঠিক কোন ধরনের ঝড় অপেক্ষা করছে। গ্রুপ পর্বে সেই ড্রয়ের ঝাল মেটাতে শুরু থেকে অজিদের উপর তাণ্ডব চালাতে লাগলেন রোমারিও ও রোনালদো। এই জুটির দারুণ রসায়নে পুরো ম্যাচে অজি ডিফেন্ডাররা বারবার খেই হারাতে লাগল। শেষপর্যন্ত রোমারিও ও রোনালদো উভয়ে হ্যাটট্রিক করলে ৬-০ গোলের বড় জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কনফেডারেশন্স কাপের শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। একসাথে খেলে মোট ৩৪ গোল করেছিল এই জুটি, যার মধ্যে ১৯ গোলই ছিল রোমারিওর।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে একই পজিশনে খেলা সত্ত্বেও কেন এই দুইজন একসাথে খেলে এতটা সফল ছিলেন? আসলে সেই সময়ে এই দুজনের কেউই প্রথাগত পোচার ছিলেন না। যারা ২০০২ বিশ্বকাপ দেখে রোনালদোর সাথে পরিচিত হয়েছেন তাদের কাছে হয়তো রোনালদোকে সাধারণ পোচার বলেই মনে হবে, কিন্তু আমরা যে সময়ের কথা বলছি সেই সময়ে রোনালদো ছিলেন ক্ষিপ্রগতির এক চিতা। দুর্দান্ত ফিনিশিংয়ের সাথে নিঁখুত পাসিং আর অসাধারণ প্লেমেকিং ক্ষমতা থাকায় তাকে অনেকেই সর্বকালের সেরা পরিপূর্ণ স্ট্রাইকার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল।
অন্যদিকে রোমারিও ছিলেন পেনাল্টি বক্সের ত্রাস, তাই সেই সময়ের স্কিলফুল রোনালদোর সাথে ৪-৪-২ ফর্মেশনে তার রসায়নটা না জমার কোনো কারণই ছিল না। সর্বকালের অন্যতম এই সেরা স্ট্রাইকিং জুটি নিয়ে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে হট ফেভারিট হয়ে আসর শুরু করার প্রত্যাশায় ছিল ব্রাজিল। কিন্তু আসর শুরুর আগেই একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেল। হুট করে জানা গেল পেশির ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছেন রোমারিও, সময়ের মধ্যে সেরে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত তাকে ছাড়াই দল ঘোষণা করেন সেই সময়ের ব্রাজিল কোচ মারিও জাগালো।
কান্নায় ভেঙে পড়েন রোমারিও। তখন পূর্ণাঙ্গ ফিট না হলেও আসর চলাকালীন সময়ের মাঝেই ফিট হয়ে যাওয়ার দাবিও করেন তিনি। অনেক বিশেষজ্ঞও সেই কথায় সায় দেন তবে জাগালো নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। অবশ্য সেই আসরে রোনালদো একাই এমন জাদু দেখাচ্ছিলেন যে তখন মনে হচ্ছিল রোমারিওর অভাব বুঝি ব্রাজিল সেভাবে টেরই পাবে না। রোনালদোর ৪ গোল ও ৩ অ্যাসিস্টে ভর করে ফাইনালে চলে যায় ব্রাজিল। কিন্তু ফাইনালের আগে রহস্যময় এক ইনজুরিতে পড়েন তিনি, চিকিৎসকরা তাকে মাঠে নামার জন্য ছাড়পত্র না দিলেও কোচকে অনুরোধ করে ফাইনালে মাঠে নামেন তিনি।
কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। খেলতে নামার অনুপযোগী রোনালদো যেভাবে ফাইনালে নিষ্প্রভ ছিলেন, তার দল ব্রাজিলও ছিল তেমন অনুজ্জ্বল। জিনেদিন জিদানের জোড়া গোলে ফ্রান্সের কাছে ৩-০ গোলে হেরে ভেঙ্গে যায় সেলেওসাওদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। এই ফাইনালের পর রোমারিওকে দলে না নেওয়ার আফসোস বহুগুণ বেড়ে যায়। সেদিন স্কোয়াডে যদি রোমারিও থাকতেন, তাহলে হয়তো হাফ ফিট রোনালদোকে মাঠে নামতে হতো না, ফাইনালে ব্রাজিলকে অসহায় আত্মসমর্পণও করতে হতো না।
এরপর পাল্টে যায় অনেক কিছু, ভয়ঙ্কর দুই ইনজুরিতে পড়ে ক্ষিপ্রগতির অনেকটাই হারিয়ে ফেলেন রোনালদো, অন্যদিকে রোমারিওর বয়সও বেড়ে যায় অনেকখানি। তাই তখন আর দুজনকে একসাথে খেলানো খুব একটা সহজ ছিল না, স্ট্রাইকার হিসেবে যেকোনো একজনকেই বেছে নিতে হতো। মূল একাদশে একসাথে না থাকুক, অন্তত ২৩ সদস্যের স্কোয়াডে হয়তো দুইজনই থাকতে পারতেন। কিন্তু আজীবন খামখেয়ালী আচরণ করা রোমারিও এই বিশ্বকাপের আগেও নিজের আগের স্বভাব বজায় রেখে সেই সময়ের ব্রাজিল কোচ স্কলারির সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে যান, ফলে তাকে বাদ দিয়েই ২৩ সদস্যের দল ঘোষণা করেন স্কলারি।
রোমারিও না থাকলেও পোচার হিসেবে রোনালদোর অসাধারণ পারফরম্যান্স আর সাথে রিভালদো-রোমারিওর যোগ্য সমর্থনে পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। তবে এই বিশ্বকাপের মাধ্যমেই রো-রো জুটিকে আবারো একসাথে দেখার স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায়।
ফুটবল ইতিহাসের সেরা দুই স্ট্রাইকারকে একসাথে দেখার আনন্দ ঠিক কতটা গভীর ছিল, তা হয়তো তাদের একসাথে খেলা ম্যাচগুলো না দেখলে বোঝা সম্ভব না। দুইজনই আলাদাভাবে নিজেদেরকে কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন, নিজ দেশকে বিশ্বকাপও জিতিয়েছেন আলাদাভাবে অথচ নিয়তির নির্মম পরিহাসে দুইজন একসাথে কোনো বিশ্বকাপ ম্যাচে নামতেই পারেননি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে যদি এই ‘রো-রো’ জুটি একসাথে খেলতে পারতো, তবে ইতিহাসের অনেকিছুই হয়তো পরিবর্তিত হয়ে যেতো। পেলে-গারিঞ্চাকে ছাড়িয়ে গিয়ে হয়তো এই জুটির নামটাই বেশি উচ্চারিত হতো, সত্তর দশকের ব্রাজিল দলকে হটিয়ে হয়তো নব্বই দশকের ব্রাজিল দলই সর্বকালের সেরা দলের সম্মান পেতো। সব চাওয়া তো আর পূরণ হয়না, তাই ভাঙা মন আর একরাশ আফসোস নিয়েই ‘রো-রো’ জুটির সেই জাদুকরী স্মৃতি স্মরণ করা হবে।