ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কেমন?

দীপ্তিমান প্রতিভার প্রদর্শন ও চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিয়ে ফুটবল বিশ্ব সবসময়ই মাতিয়ে রাখে দর্শকদের। মনোমুগ্ধকর এই জগতটি প্রতিনিয়তই বিকশিত হয় ও দর্শকদের নতুন আনন্দের খোরাক যোগায়। এই খেলার বিকাশ ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে রসদ জোগাতে শুধু মাঠে নয়, কাজ হয় মাঠের বাইরেও। সেখানে অন্তর্নিহিত এক জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে অর্থনৈতিক লেনদেন ও দরকষাকষি। ক্লাবগুলো খেলোয়াড় কেনাবেচার জন্য ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটের উপর নির্ভর করে। এই ট্রান্সফার মার্কেট সবসময়ই ফুটবলে আলাদা একটি চিত্তাকর্ষক বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয় সমর্থক ও প্রচারমাধ্যমের কাছে। মৌসুমের বিরতিতে ক্লাবগুলোর দিকে মনোযোগ রাখতে ট্রান্সফার নিউজগুলো খুব ভাল কাজ করে। কিন্তু এই খেলার জগতে সম্প্রতি প্রবেশ করেছে একজন নতুন খেলোয়াড়, মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব পড়েছে পুরো বিশ্বে অর্থনীতিতেই, ফুটবলও এর ব্যতিক্রম নয়। ট্রান্সফার মার্কেটে প্রভাব ফেলে এটি বাধ্য করেছে ক্লাবগুলোর ট্রান্সফার কৌশলে পরিবর্তন আনতে। পুরো ক্লাবের অর্থনৈতিক অবকাঠামোই পরিবর্তন করে দিচ্ছে এই মুদ্রাস্ফীতি।  

সম্প্রতি ইতিহাসের সবচেয়ে দামি বৃটিশ খেলোয়াড় হিসেবে আর্সেনালে যোগ দিতে যাচ্ছেন ডেক্লান রাইস। রাইসের জন্য ওয়েস্টহ্যামকে আর্সেনাল দিচ্ছে ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। সাথে ভবিষ্যতে বোনাস হিসেবে থাকছে আরো ৫ মিলিয়ন পাউন্ড। রাইসের মূল্য নিয়ে সমঝোতায় আসতে দীর্ঘ সময় বসে আলোচনা করতে হয়েছে দুই পক্ষকেই। মাঝে দিয়ে এই আলোচনা আরো লম্বা হয় যখন ট্রেবল উইনার ম্যানচেস্টার সিটি রাইসের জন্য ৮০+১০ মিলিয়ন পাউন্ড অফার করে বসে। একটি সেলিং ক্লাব হিসেবে ওয়েস্টহ্যামের লক্ষ্যই থাকবে যে যত বেশি মূল্যে নিজেদের খেলোয়াড়কে বিক্রি করা যায়। ফলে ম্যানচেস্টার সিটিকে পেছনে ফেলতে আর্সেনালকে আরো বেশি পরিমান অর্থ প্রদান করতে হয়।

আর্সেনালের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে দলে যোগ দিচ্ছেন ডেক্লান রাইস; Image Credit: Fabrizio Romano

খেলোয়াড়ের দাম নিয়ে দর কষাকষি সবসময়ই হয়, কিন্তু এখানে দামের চেয়ে মূখ্য ছিল কিভাবে এটি পরিশোধ করা হবে। ওয়েস্টহ্যামের দাবি ছিল যত বেশি পরিমাণ অর্থ নগদে পাওয়া যায়, অন্যদিকে আর্সেনাল চাচ্ছিল ট্রান্সফার ফিয়ের অর্থটি কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ করার।

ট্রান্সফার ফিয়ের পাশাপাশি ফি বুঝে পাওয়া নিয়ে আলোচনার এই প্রচলন আগে কম হলেও ইদানিং ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে। এই ট্রান্সফার মার্কেটও অন্যান্য বাজারের মতো জর্জরিত হয়ে আছে মুদ্রাস্ফীতি ও সুদের কাছে। তাই তারা চাচ্ছে যেভাবেই হোক এই দুই জায়গায় নিজেদের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে।

শতাব্দীর শুরুতে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল, গত কোভিড-১৯ এর আগে অধিকাংশ দেশ তা কাটিয়ে উঠেছিল। এই দেড় যুগের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান। ফুটবলের পেছনে ব্যয় হতে থাকে কাড়ি কাড়ি অর্থ। যেকোনো দেশেই তাদের অর্থনীতির অবস্থা কেমন, তা বুঝতে দুইটা জিনিসে নজর দিলেই হয়। একটি ঐ দেশের সুদের হার, অন্যটি মুদ্রাস্ফীতি। সুদের হার শূন্যের কাছাকাছি আর মুদ্রাস্ফীতি একদম কম থাকলেই বোঝা যাবে যে দেশটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল।

এর ফলে আপনার অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল হলে আপনি চাইলেই ধার করে কোনো খেলোয়াড়ের মূল্য নগদে পরিশোধ করতে পারবেন, কিংবা চাইলে কয়েক কিস্তিতে লম্বা সময় ধরেও তা শোধ করতে পারেন। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকায় আপনার তেমন কোনো ক্ষতি নেই, কারণ ধারের উপর সুদের কার তখন নেই বললেই চলে। আবার সেখানে বিক্রেতারও ক্ষতি নাই কারণ কিস্তিতে মূল্য পেলেও মুদ্রাস্ফীতি না থাকা অর্থের মূল্যমানও কমছে না।

Trading Economics এর তথ্যমতে ফুটবলের সাথে জড়িত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দেশ ও অর্থনৈতিক জোটের বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি; Image Credit: Author

কিন্তু এই মুদ্রাস্ফীতির সময়ে এসে অন্য সবকিছুর সাথে সাথে ক্ষতির মুখে পড়েছে ফুটবলের এই প্লেয়ার ট্রান্সফার। খেলোয়াড় কেনাবেচা দূরে থাক, ফুটবল ক্লাবগুলো হিমসিম খাচ্ছে তাদের সাধারণ খরচগুলোকেই বাজেটের মধ্যে নিয়ে আসতে। এই মন্দায় তাদের জন্য কোন প্রনোদনাই কাজ করছে না। ফলে আগে যেখানে বিক্রেতা ক্লাবগুলো কিস্তিতে খেলোয়াড় বিক্রি করতে সহজেই রাজি হয়ে যেত, সেখানে মুদ্রাস্ফীতির ভয়ে তারা এখন সবকিছু নগদে চাচ্ছে।

বিষয়টিকে আরো সহজে বুঝতে আমরা একটি ট্রান্সফারকে কল্পনা করি যেখানে মূল ট্রান্সফার ফি ছিল ১০০ মিলিয়ন ইউরো। যখন মুদ্রাস্ফীতি ছিল না তখন তাদের চুক্তি ছিল যে এই ১০০ মিলিয়ন ইউরো তারা পরিশোধ করবে ৮ কিস্তিতে ৪ বছরে। ধরি এই চুক্তিটি হয়েছিল ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে। সেই হিসেবে ৬ মাস পর পর সাড়ে ১২ মিলিয়ন ইউরো করে পরিশোধ করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী শেষ কিস্তিটি পরিশোধ করতে হবে ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে। এখন আপনিই বলুন, ২০১৯ সালে সাড়ে ১২ মিলিয়ন ইউরোর যে মূল্যমান ছিল, ২০২৩ সালে এসে কি মূল্যমান একই রয়েছে? বাস্তবিকভাবে উত্তরটা হবে – না। মূদ্রাস্ফীতির কারণে মূল্যমান কমে গিয়েছে বেশ খানিকটা। ফলে এখন ক্ষতি বিক্রেতার। ২০১৯ সালের সাড়ে ১২ মিলিয়ন ইউরোর চেয়ে ২০২৩ সালের সাড়ে ১২ মিলিয়ন ইউরোর মূল্যমান ঢের কম। বলতে গেলে এখানে ক্রেতাকে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে কম।

এই মুদ্রাস্ফীতির জন্য তাই আগের তুলনায় খেলোয়াড়দের দাম বেড়ে গিয়েছে অনেক। এখন যেকোনো উদীয়মান খেলোয়াড়ের জন্যই ১০০ মিলিয়ন ইউরো দাবি করে বসে তাদের ক্লাবগুলো। বিশ্বের প্রথম ১০০ মিলিয়ন ইউরো সাইনিং গ্যারেথ বেলের দাম এই সময়ে এসে তাহলে কত হতে পারত, আন্দাজ করুন তো!

প্রাত্যহিক জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে বেড়ে গিয়েছে একটি ফুটবল ক্লাব চালানোর খরচও। কারণ খেলোয়াড়েরাও এখন কম বেতনে খেলতে রাজি নন। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এখন খেলোয়াড়দের কয়েক গুণ বেশি বেতন দিতে হচ্ছে আগের চেয়ে। বাড়তি এই টাকা উঠাতে ক্লাবগুলো তাদের তারকা খেলোয়াড়দের বেশি দামে বিক্রি করছে, ম্যাচ টিকিট ও খেলোয়াড়দের মার্চেন্ডাইজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্লাব চালানোর খরচ তারা এক প্রকার দিয়ে দিয়েছে সমর্থকদের উপর।

এই দশকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামে ট্রান্সফার হওয়া কয়েকজন খেলোয়াড়; Image Credit: Author

তবে এইখানে ক্লাবগুলোকে একটি সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেটি হলো এই খরচটি কীভাবে নথিবদ্ধ হবে, তা। খেলোয়াড় ক্রয়ের পর তার সাথে যে কয় বছরের চুক্তি হবে, সেই কয় বছরে ভাগ করে দেয়া হবে টোটাল খরচকে। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে পুরোটা একসাথে যোগ হয়। এইভাবে এটা দেখানো সহজ হয় যে ক্লাবগুলোর আয়ের চেয়ে ব্যয় কম। চেলসি এতদিন এই সিস্টেমের সুযোগ নিয়ে ফাইনান্সিয়াল ফেয়ার প্লেকে ফাঁকি দিয়েছে। এইভাবে ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে ঠিক করা হয় যে একটি ক্লাব খেলোয়াড় ক্রয়ের পেছনে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবে। এতদিন এটি ইচ্ছামতো ভাগ করতে পারলেও নতুন উয়েফা ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’র নিয়মে এটি সর্বোচ্চ ৫ বছর অব্দি ভাগ করা যাবে। এই নিয়ম আনা হয়েছে যাতে করে অন্য ক্লাবগুলো চেলসির মতো করে খেলোয়াড়দের লম্বা সময়ের চুক্তি দিয়ে এফএফপিকে ফাঁকি দিতে না পারে।

কিন্তু ক্লাবগুলোর কাছে অর্থের প্রবাহের ব্যাপারটি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এই অ্যামোরটাইজেশন বা ক্লাবগুলোর ব্যয়ের হিসেব নথিভুক্ত করার যে পদ্ধতিটি তা ক্লাবগুলোকে উদ্বুদ্ধ করেছে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধে। কারণ আপনাকে তো একসাথে দেখানো লাগছে না এত টাকা শোধ করলেন। আবার বিক্রেতা ক্লাবগুলো অর্থ প্রাপ্তি ছাড়াই পুরো টাকাটা তাদের হিসেবের খাতায় যোগ হয়ে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব গিয়ে পড়েছে এর উপরেও।

তবে যেসব ক্লাবের সুগঠিত অর্থনৈতিক কাঠামো রয়েছে, তাদের কিন্তু এভাবে বাকিতে খেলোয়াড় আনতে হয়নি। ২০০৯ সালে রিয়াল মাদ্রিদ যখন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে সাইন করায়, তখন তারা ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড অর্থের পুরোটাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে একসাথে দিয়ে দেয়। কিন্তু অন্যদিকে বার্সেলোনা উসমান দেমবেলে, ফিলিপে কৌতিনহো, আঁতোয়া গ্রিজম্যানের ট্রান্সফারের টাকাগুলো কিস্তিতে পরিশোধ করে। অনেক ক্লাব তাদের সুগঠিত এই কাঠামো হারায় করোনার সময়।

২০০৯ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; Image Credit: Reuters

মুদ্রাস্ফীতির কারণে মূল্যমান কমলেও এফএফপির এটা দেখার বিষয় না। আপনি ২০১৯ এ একজন খেলোয়াড় বিক্রি করেছেন ২০ মিলিয়ন ইউরোতে। এখন এসে সেই একই মানের খেলোয়াড় আপনি কিনলেন ১০০ মিলিয়ন ইউরোতে। ধরা যাক, সেই খেলোয়াড়ের সাথে আপনার চুক্তি হয়েছে ৪ বছরের জন্য। কাগজে কিন্তু দেখাও হবে যে আপনি ৫ মিলিয়ন ইউরো বেশি খরচ করে ফেলেছেন। এটা দেখা হবে না যে মুদ্রাস্ফীতির জন্য খেলোয়াড়ের দাম বেড়েছে। এফএফপিকে আনা হয়েছিল যাতে ক্লাবগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো খরচ করতে না পারে, বড় ক্লাব ও ছোট ক্লাবের মধ্যে যেন ব্যবধান কমে আসে, ক্লাবগুলো যেন দেউলিয়া হয়ে না যায়। কিন্তু বাড়তি ট্রান্সফার ফি ও বেতনের জন্য এগুলো এড়ানো যাচ্ছে না। ফলে যেসব ক্লাব এফএফপি ভঙ্গ করছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে ও খেলোয়াড় কেনা আটকিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ছোট ক্লাবগুলো ছাড়াও এজন্য অনেক বড়ও ক্লাবও ইদানিং তাদের এই ট্রান্সফার কৌশলে পরিবর্তন আনছে। একদম প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় না কিনে তারা কিনছে উদীয়মান খেলোয়ড়। মনোযোগ দিয়েছে স্কাউটিং ও একাডেমি ঠিকঠাক করতে। একাডেমি থেকে ভাল খেলোয়াড় উঠে এলে তাদের আর কেনা খেলোয়াড়ের জন্য বসে থাকা লাগে না। তারকা খেলোয়াড়দের কিনতে যে শুধু ট্রান্সফার ফি দেয়া লাগে, তা নয়। এখানে যুক্ত থাকে বোনাস, এজেন্ট ফি-সহ আরো নানা কিছু। তারকা খেলোয়াড়দের পুঁজি করে এজেন্সিগুলো ক্রেতা ক্লাবগুলোর কাছ থেকে কামিয়ে নিচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। চাহিদামাফিক অর্থ না পেলে তারা আটকিয়ে দিচ্ছে খেলোয়াড়দের ট্রান্সফার। এজেন্সিগুলোর কাছে একপ্রকার জিম্মি খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলো।

বিদেশি খেলোয়াড় কিনতে তো এইরকম ঝামেলা আরো বেশি। একে তো দুই দেশের অর্থের মূল্যমান সমান নয়। নির্ভর করতে হয় ডলারের দামের উপর। তার উপর রয়েছে ট্যাক্স ও এজেন্ট ফি। দুই দেশে মুদ্রাস্ফীতির অবস্থাও এখানে ভূমিকা রাখে। ফলে দিনদিন জটিলই হচ্ছে এইভাবে বাইরের মহাদেশগুলো থেকে খেলোয়াড়দের আনা।

কিস্তিতে খেলোয়াড় কেনা সবসময়ই ক্রেতা ক্লাবের জন্য লাভজনক। আপনি কিস্তিতে টাকা পরিশোধের শর্তে একেবারে কয়েকজন খেলোয়াড় কিনে ফেলতে পারেন। কিন্তু এই দেনার বোঝা আপনাকে বয়ে বেড়াতে হবে অনেকদিন। দেনা বেশি হয়ে গেলে তখন আর দরকার হলেও খেলোয়াড় কেনা সম্ভব হয় না। কারণ আপনি তখন কিস্তির টাকা দিতে দিতেই প্রতি বছরের বাজেট শেষ করছে।  নতুন খেলোয়াড় হয় এভাবে আরো বেশি কিস্তিতে আনতে হবে, নয়ত বসে থাকতে হবে।  ২০২১-২২ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের  ক্লাবগুলো ট্রান্সফার মার্কেটে তেমন একটিভ ছিল না। সে সময় এসব ক্লাবের দেনা ছিল প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরোর মতো।

২০২৩ সালের শুরুতে প্রিমিয়ার লিগের কয়েকটী ক্লাবের দেনার পরিমাণ; Image Credit: Author

মুদ্রাস্ফীতির জন্য ক্লাবগুল হিমশিম খাচ্ছে তাদের বাজেট ঠিক রাখতে। তাদের একই সাথে উচ্চমূল্যে খেলোয়াড়দের কিনতে হচ্ছে এবং বেশি বেতনও দিতে হচ্ছে। ছোট ক্লাবগুলো এজন্য আরো ট্রান্সফার মার্কেটে বড় ক্লাবগুলোর সামনে দাঁড়াতেই পারছে না। কারণ তাদের যা সামর্থ্য, তার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে বড় ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে শ্রেণি বৈষম্য দিনদিন বাড়ছেই।

তবে বড় ক্লাবগুলোও যে এত সহজে এগুলো দিতে পারছে, তাও নয়। তারা তাদের আয়ের জন্য নির্ভর করে স্পন্সর ও সম্প্রচারস্বত্ত্বের উপর। লিগ এবং ক্লাবগুলো এখন আরো বেশি অর্থ চাচ্ছে এদের কাছ থেকে। ফলে টিভিতে খেলা দেখতেও এখন আগের চেয়ে বেশি খরচ যাচ্ছে।

সুদের হার ও মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়াতে বিক্রেতা ক্লাবগুলো ইদানিং নগদে কত বেশি টাকা আদায় করা যায় তার লক্ষ্যে ক্রেতাদের চাপ দিচ্ছে। ডেক্লান রাইসের আর্সেনালে আসা এজন্যই দেরি হয়েছে। কারণ ওয়েস্টহ্যাম নগদ চাচ্ছিল বেশি। ম্যানচেস্টার সিটির সাথেও তাদের এই আলোচনা হলেও ম্যানচেস্টার সিটির অর্থ পরিশোধের ব্যাপারটি তাদের মনমতো হয়নি। কারণ এখন অর্থের যে মূল্যমান, তা আগামী বছর না-ও থাকতে পারে।

আবার কাগজে-কলমে ওয়েস্টহ্যাম ১০০ মিলিয়ন পেলেও কিস্তিতে পাওয়ায় তা একেবারে হাতে পাচ্ছে না। তো তারা তাদের খরচ মেটাতে যখন অন্য কোনো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে আর্সেনালের এই কিস্তির টাকা দেখিয়ে ধার নেবে, তখন তাদের সুদ দিতে হবে। আর বর্তমানের চড়া সুদের বাজারে আর্সেনালের কাছ থেকে তারা যা পাচ্ছে, তার থেকে বেশিই দেয়া লাগবে ওই প্রতিষ্ঠানকে। সুদের হার যখন কম ছিল তখন এভাবে টাকা নিতে কোনো সমস্যা হয়নি। ব্যাংক থেকে আপনি যখন টাকা ধার নেবেন, তখন আপনাকে কোনো একটি সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হয়। এখানে বিক্রেতা ক্লাবগুলো বন্ধক রাখে এভাবে পাওয়া কিস্তিগুলোকে।

সদ্য প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন হওয়া লেস্টার সিটি ও সাউদাম্পটন এভাবে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছিল। তারা বন্ধক হিসেবে রেখেছিল প্রিমিয়ার লিগ থেকে পাওয়া তাদের সম্প্রচারস্বত্ব থেকে পাওয়া অর্থকে। এখন সামনের মৌসুমে তারা নেই প্রিমিয়ার লিগেই। ফলে দেনা পরিশোধে তাদের এখন ভালোই ঝামেলা পোহাতে হবে। এজন্য তারা তাদের প্রধান একাদশের খেলোয়াড়দের বিক্রি করে দিচ্ছে যাতে করে এই অর্থের যোগানটা হয়ে যায়। বছরখানে পূর্বে ওয়েস্ট ব্রম অ্যালবিওনও এমন ঝামেলায় পড়ে। তখনও তারা তাদের প্রথম একাদশের খেলোয়াড়দের বিক্রির জন্য বাজারে তোলে।

ট্রান্সফার মার্কেটে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কখনোই খাটো করে দেখার মতো ছিল না। কিন্তু ইদানিং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে এর প্রভাব খুব ভালোভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এটি ক্লাবগুলোকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। তবে নতুন চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে এটি নতুন করে সবকিছু ভাবার, নতুন কিছু সৃষ্টির সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিয়েছে।

আসলে ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেট ও মুদ্রাস্ফীতির এই পারষ্পরিক ক্রিয়া আধুনিক ফুটবলকে আরো বেশি গতিশীল করছে।  আমাদের চোখের সামনে এটি পরিষ্কার যে এটি ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটে নানাবিধ সুযোগ ও বাধা সৃষ্টি করে এটিকে নতুন করে সাজানোর ব্যাপারে বলছে। ক্লাবগুলোকে বাধ্য করছে বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে খাপ খাইয়ে নতুন কাঠামোয় খেলোয়াড়দের ট্রান্সফার সম্পন্ন করতে। এটি আমাদের প্রেরণা যোগাচ্ছে বিকল্প কোনো পদ্ধতি তৈরি করতে যাতে করে ক্লাবগুলো অর্থনৈতিকভাবে টেকসই একটি অবস্থায় পৌছুতে পারে এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে পারে।

This article in in Bangla language. This is on how inflation affecting football transfer market.

Feature Image: Image Creator by Microsoft Bing powered by Dall-E

References:
1. https://www.insideworldfootball.com/2023/02/21/player-price-inflation-averaged-9-per-year-past-decade-finds-report/
2. https://theathletic.com/4651679/2023/06/30/football-transfers-inflation-declan-rice/
3. https://football-observatory.com/Monthly-Report-reveals-growing-football-transfer#:~:text=All%20things%20being%20equal%2C%20the,now%20almost%20three%20times%20more.

Related Articles

Exit mobile version