২০১৬-১৭ মৌসুম যেন রূপকথার মতোই কেটেছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর। বলতে পারেন অন্যান্য বছর তিনি অনেক বেশি গোল করে থাকেন, এ বছর সে তুলনায় অনেক কম। কিন্তু গোলগুলোর মাহাত্ম্য যখন সবিস্তারে জানবেন। তখন আপনিও ভাববেন সত্যি কি এমন পারফর্ম্যান্সও সম্ভব? হ্যাঁ, রোনালদো এ মৌসুমে যা করে দেখিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য বললেও কম বলা হয়। সাফল্য যার পায়ে প্রতিনিয়ত লুটোপুটি খায়, তার প্রেম তো কেবল রেকর্ড গড়ার ইতিহাসের সাথেই হয়। আর এই মৌসুমে রেকর্ডের সাথে এমন অভিসার করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, তা আর কখনও দেখা যাবে কিনা সন্দেহ আছে।
এখানে আলোচনা করবো কেবল চ্যাম্পিয়নস লীগ নিয়ে। তবে লা লীগার সামান্য কিছু তথ্য তো দেওয়াই যেতে পারে। লা লীগায় এবার রোনালদো মেসি-সুয়ারেজদের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে। কারণটা সঙ্গত। গত বছরই জাতীয় দলের হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম তো বটেই, পর্তুগালের ফুটবল ইতিহাসেরই প্রথম বৈশ্বিক কোনো ট্রফি হিসেবে ইউরো জয় করেন রোনালদো। তবে ফাইনালের দিন পুরো ম্যাচ খেলতে পারেননি। খেলার শুরুর দিকেই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার পায়েটের মারাত্মক ফাউলের শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এরপর ইনজুরিতে বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরেই ছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে থাকাটা তার খেলায় প্রভাব ফেলে। ফিরে এসে ঠিক নিজেকে হারিয়ে যেন খুঁজছিলেন। কোচ জিদান তাই দলের সেরা খেলোয়াড়কে বড় ম্যাচে শতভাগ ফিট রাখতে ছোট দলগুলোর বিপক্ষে রোনালদোকে দিয়েছেন নিয়মিত বিশ্রাম। অন্যদিকে চ্যাম্পিয়নস লীগেও টানা ছয় ম্যাচে জাল খুঁজে না পাওয়ায় সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হন রোনালদো। চারদিকে গুঞ্জন শুরু হয় “রোনালদো ফুরিয়ে গেছেন”, “রোনালদো বুড়ো হয়ে গেছেন”। এমনকি অনেকে তার অবসরের কথা বলতেও ছাড়েননি। সব সমালোচনাই মুখ বুজে সয়ে গেছেন রোনালদো। কারণ তিনি যে কথায় নয়, কাজে জবাব দেন।
সমালোচকদের মুখ সেলাই করে দেওয়ার তো কেবল শেষ দিকের লা লীগা ম্যাচগুলোর কীর্তিই যথেষ্ট ছিল। লেগানেস, আলাভেজ, স্পোর্টিং গিজন, গ্রানাডার মতো ছোট দলের বিপক্ষে বিশ্রামে থাকা রোনালদো শেষ দিকের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে নিজের জাত চেনালেন ভালোমতোই। সেভিয়া আর মালাগার বিপক্ষে দুটি করে গোল করে দলকে এনে দেন শিরোপা, যেখানে একটু ভুল করলেই শিরোপা চলে যেতো বার্সেলোনার ঘরে। তবে চ্যাম্পিয়নস লীগে যা করেছেন তাকে মহাকাব্য বললেও কম হবে। সমালোচকরা তো রীতিমতো মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না তার এই অতিমানবীয় পারফরম্যান্স দেখে। গ্রুপ পর্বে মাত্র দুই গোল পাওয়া রোনালদোই কিনা টুর্নামেন্ট শেষে ১২ গোল নিয়ে শীর্ষ গোলদাতা! কী করে সম্ভব? হ্যাঁ, নামটা যখন ‘রোনালদো’ তখন সবই সম্ভব। তবে আর ভূমিকা নয়, চলুন রূপকথার রাজপুত্রের মহাকাব্যিক উপাখ্যান এক নজরে দেখে আসি।
চ্যাম্পিয়নস লীগের প্রথম ম্যাচ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের। প্রতিপক্ষ পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্টিং সিপি। ইউরোপ সেরা রিয়াল মাদ্রিদের সামনে এ আর এমন কী? কিন্তু খেলা শুরু হতেই স্পোর্টিং সিপি যেন অনেক কিছু হয়ে গেলো। কেননা ৪৮ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোলটা যে তারাই দেয় এবং লীডটা টেনে নিয়ে যায় ৮৯ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে দলটা রিয়াল মাদ্রিদ, যাদের কিনা আবার ‘রামোস টাইম’ নামে ম্যাচের এক বিশেষ মূহুর্ত আছে। ৮৯ মিনিটেই পেনাল্টি বক্সের একটু বাইরে থেকে ফ্রি কিকে অসাধারণ চোখ ধাঁধানো এক গোল করে মৌসুমে নিজের গোলের খাতা খোলেন রোনালদো। এরপর অতিরিক্ত সময়ে মোরাতা আরও একটি গোল করলে ম্যাচটা ড্র করার আশাও ভঙ্গ হয় স্পোর্টিং সিপির। পরের ম্যাচে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষেও জাল খুঁজে পান রোনালদো। গ্যারেথ বেলের অসাধারণ এক ব্যাকহিল পাসে জোরালো শটে গোল করেন রোনালদো। কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। গ্রুপ পর্বের আর কোনো ম্যাচে গোল করতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদের এই পর্তুগীজ বিস্ময়।
গ্রুপ পর্ব তো গেলোই, শেষ ষোলতে দর্শক হয়েই রইলেন রোনালদো। নাপোলির বিপক্ষে দুই লেগেই রিয়াল জেতে ৩-১ গোলের ব্যবধানে। গোল পান বেনজেমা, বেল আর রামোসরা। কিন্তু রোনালদোর কাছে গোল যেন সোনার হরিণ! তবে নাহ, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। সিদ্ধান্ত নিলেন রোনালদো, ফর্মে ফিরবেন তিনি। হ্যাঁ, বিধ্বংসী ফর্ম! কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিপক্ষ পাঁচবারের ইউরোপ সেরা দল বায়ার্ন মিউনিখ, যাদের গোলপোস্ট পাহাড়া দেন ম্যানুয়েল নয়ার এর মতো গোলকীপার। রোনালদো যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোল করবেন, কার সাধ্য তাকে ঠেকাবে? একটা নয়, দুটো গোল করেই চ্যাম্পিয়নস লীগে গোল খরা কাটালেন রোনালদো, আর দলকেও জেতালেন ২-১ গোলের ব্যবধানে।
কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচ। খেলা সান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে। নিজেদের মাঠে এমনিতেই বছরটা ভাল যায়নি লস ব্লাঙ্কোসদের। খেলার শুরু থেকেই তাদের রক্ষণে ক্রমাগত আক্রমণে কাঁপন ধরাতে থাকেন রোবেন, মুলার আর লেভানডোস্কিরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই রিয়াল ডিফেন্ডারদের ভুলে পেনাল্টি পায় বায়ার্ন, রিয়াল দুর্গ ভেদ করেন লেভানডোস্কি। পুরো বার্নাব্যু স্তব্ধ। দুই লেগ মিলিয়ে যে সমতা হয়ে গেল। কিন্তু এটাই তো আদর্শ মঞ্চ হলো রোনালদোর জ্বলে ওঠার জন্য! বড় ম্যাচের বড় নায়ক যে চাপে খেলতেই বেশি পছন্দ করেন তা দেখিয়ে দিলেন আরও একবার। ক্যাসেমিরোর করা ক্রস থেকে দুর্দান্ত এক হেডে নয়ারকে পরাস্ত করে বল জালে জড়ান রোনালদো। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের আনন্দ মাত্র দুই মিনিট স্থায়ী ছিল। ৭৮ মিনিটেই সার্জিও রামোসের আত্মঘাতী গোলে আবার পিছিয়ে যায় রোনালদোরা। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষে ২-২ এ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। তবে এবার আর কোনো প্রতিরোধই করতে পারেনি বায়ার্ন মিউনিখ। কারণটা অনুমান করতে পেরেছেন নিশ্চয়ই। ১০৫ মিনিটে রামোসের বাড়িয়ে দেয়া বল থেকে দুর্দান্ত এক গোল করে নিশ্চুপ বার্নাব্যুকে প্রাণবন্ত করে তোলেন রোনালদো। এরপর ১১০ মিনিটে মার্সেলোর পাস থেকে গোল করে হ্যাটট্রিক পূরণ করার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লীগ ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১০০ গোল করার মাইলফলক অতিক্রম করেন পর্তুগীজ তারকা।
সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ সেই পুরনো শত্রু নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ যাদের সাথে সর্বশেষ দুটি চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালে সাক্ষাৎ হয়েছে রিয়ালের। ম্যাচের আবহাওয়া এরকম ছিল যে অ্যাতলেটিকোই ফেভারিট। প্রতিশোধের একটা আবহ তো ছিলই, সাথে ছিল কিছুদিন আগেই বার্নাব্যুতে ড্র করার তাজা স্মৃতি। কিন্তু সব কিছু একদিকে ফেলে ম্যাচটা হয়ে গেলো রোনালদো বনাম অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। আর নামটা রোনালদো বলেই প্রতিপক্ষকে একেবারে কোণঠাসা করে রাজকীয় জয় তুলে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের মাত্র ১০ মিনিটেই ক্যাসেমিরোর পাস থেকে দারুণ এক হেডে রিয়ালকে এগিয়ে দেন। এরপর তো অ্যাতলেটিকো রক্ষণভাগে আক্রমণের ঝড়ই বইয়ে দেয় লস ব্লাঙ্কোসরা। এরপরের গোলটি বারবার দেখার মতোই একটি গোল। বেনজেমার পাস দেয়া বল পায়ে নিতেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে কিছুটা উপরে উঠে যায় বল। ১ সেকেন্ড, ২ সেকেন্ড, ৩ সেকেন্ড এবং গোল! একটু অপেক্ষা করেছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো বলটাকে মাটিতে পড়ার জন্য। আর এরপরই বুলেট গতির এক শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করলেন তিনি! আর ৮৬ মিনিটে লুকাস ভাসকেজের পাস থেকে গোল করে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। চ্যাম্পিয়নস লীগের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি নকআউট পর্বে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন।
ফিরতি লেগে ভিসেন্তে ক্যালদেরনে যুদ্ধংদেহী আবহ সৃষ্টি করে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। যেকোনো মূল্যেই হোক রিয়ালের তিন গোল যে পরিশোধ করা চাই! বারবার আক্রমণে শুরুতেই পর্যুদস্ত হয় রিয়ালের রক্ষণ। ১২ মিনিটে নুগুয়েজ এবং ১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গ্রীজম্যান গোল করে বিশ্বজুড়ে কোটি রিয়াল ভক্তের শরীরের রক্ত হিম করে দেয়। তাহলে বার্নাব্যুতে রিয়ালের তিন গোল কি যথেষ্ট ছিল না? কিন্তু ৪২ মিনিটে ইসকোর চমৎকার এক গোলে সব নাটকীয়তার সম্ভাবনাই শেষ হয়ে যায়। এরপর আর ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায়নি ডিয়েগো সিমিওনের শিষ্যরা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের ব্যাবধানে ফাইনালে পা রাখে রিয়াল মাদ্রিদ। প্রতিপক্ষ সেখানে জুভেন্টাস।
৪ জুন ২০১৭, স্থান কার্ডিফ। ফাইনালের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত। তর্ক সাপেক্ষে সবচেয়ে যোগ্য দুই দলই পা রেখেছে ফাইনালে। রিয়াল মাদ্রিদ যারা কিনা মৌসুম জুড়েই প্রতিপক্ষের রক্ষণ ছিঁড়ে-ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে, আর জুভেন্টাস যাদের রক্ষণ মৌসুম জুড়ে থেকেছে চীনের গ্রেটওয়াল হয়ে। হ্যাঁ, তাদের গোলকিপারের নাম যে জিয়ানলুইজি বুফন। একদিকে বুফন, অন্যদিকে বড় মঞ্চে আরও একবার নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার অপেক্ষায় রোনালদো। রেফারির বাঁশির সাথেই শুরু হলো ইউরোপ সেরার মুকুটের জন্য লড়াই। তবে রিয়াল মাদ্রিদের খেলা ঠিক রিয়াল সুলভ মনে হলো না। কোথায় তাদের আক্রমণের প্রতিপক্ষের রক্ষণে চিড় ধরবে। ঘটলো তার উল্টোটা। জুভেন্টাসের একের পর আক্রমণে বরং কোণঠাসা রামোস, কারভাহালরা। তবে রিয়ালের যে আছে একজন রোনালদো! জুভেন্টাসের ৫টা গোলমুখে শটের বিপরীতে রিয়ালের প্রথম শট ২০ মিনিট পর। আর সেই এক শটেই জুভেন্টাসের রক্ষণ দেয়াল ভেদ। কারণ শটটা যে করেছেন রোনালদো। দানি কারভাহালের সাথে দারুণ ওয়ান টু ওয়ানে ফাইনালে দলকে প্রথম গোল এনে দেন দলের সেরা খেলোয়াড় রোনালদো। আর সাথে নাম লেখান ইতিহাসের পাতায় প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লীগ ফাইনালে গোল করার। তবে নাটকীয়তা বাড়িয়ে দেয় মাত্র ৭ মিনিট পরেই মানজুকিচের গোল। অনেকের মতেই এবারের চ্যাম্পিয়নস লীগের সেরা গোল ছিল সেটি। অবিশ্বাস্য এক অ্যাক্রোব্যাটিক ভলিতে গোল করে জুভেন্টাসকে সমতায় ফেরান মানজুকিচ। এরপর প্রথমার্থে রিয়াল আর কোনো ভাল সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। বিপরীতে জুভেন্টাসের গোল হতে পারতো অন্তত আরও দুটি, যদি রিয়াল গোলকিপার কেইলর নাভাস অসাধারণ সেভগুলো না দিতেন।
দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটাই হলো একেবারে রিয়াল মাদ্রিদময়। জিদান কি কোনো জাদুমন্ত্র ফুঁকে দিয়েছিলেন কিনা কে জানে, জুভেন্টাসকে একেবারে পাড়ার ফুটবল দল বানিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলাই করে রিয়াল মাদ্রিদ। ৬১ মিনিটে গোলপোস্টের ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শটে রিয়ালকে আবারও এগিয়ে নেন ক্যাসেমিরো। মাত্র তিন মিনিট পরই লুকা মদ্রিচের জাদুকরী এক পাসে বুফনকে বোকা বানিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন রোনালদো এবং দলকে নিয়ে যান জুভেন্টাসের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বাকি সময়টা কেটে যাচ্ছিল নির্বিঘ্নেই। তবে রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহ্য ‘রামোস টাইম’-এ যে গোল করা তখনও বাকি। সে কাজটাও ৮৯ মিনিটে করে দিলেন অ্যাসেনসিও। ফলে ৪-১ গোলের বিশাল জয় নিয়ে ১২তম বার ইউরোপ সেরার মুকুট জয় করে জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা। যে জুভেন্টাস ফাইনালের আগে পুরো মৌসুমে গোল খেয়েছিল মাত্র ৩টি, তাদেরই কিনা রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ৪ গোল খাওয়ার তিক্ত স্বাদ পেতে হলো। বুফনের চ্যাম্পিয়নস লীগ জেতার স্বপ্নটাও তাই থেকে গেলো অধরা। কী আর করার? একজন রোনালদো না থাকার দোষ বুফন কাকে দেবেন?
মৌসুমের শুরুতে যিনি গোল খড়ার জন্য ‘ফুরিয়ে’ আর ‘বুড়িয়ে’ গিয়েছিলেন, সেই রোনালদোই মৌসুম শেষ ১২ গোল নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগে টানা পাঁচবারের মতো সেরা গোলদাতা হলেন। এক মৌসুমে তো তিনি ২০ গোলও করেছেন, কিন্তু এই ১২ গোলের মাহাত্ম্য যে অতুলনীয়। নয়ার, অবলাক আর বুফনের মতো গোলকীপারদের কাঁদিয়ে, কোয়ার্টার, সেমি আর ফাইনালের মঞ্চে প্রচন্ড স্নায়ুচাপকে পরাস্ত করে নকআউট পর্বের ৫ ম্যাচে করেছেন ১০ গোল। এই গোলগুলোর মাহাত্ম্য আপনি কী দিয়ে বর্ণনা করবেন? লীগে সবচেয়ে বেশি গোল ৩৬ টি রিয়াল মাদ্রিদের যার ১২টিই রোনালদোর। সবচেয়ে বেশি গোল করার সুযোগও তৈরি করছে রিয়াল(২৪৪টি), যার ৬০টিতে জড়িয়ে রোনালদোর নাম।
পরিসংখ্যানে আসলে কোথায় প্রথমে নেই তিনি? হ্যাঁ, এক জায়গায় তাকে পেছনে ফেলেছেন বার্সেলোনার ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার। নেইমারের অ্যাসিস্ট ৮টি, আর রোনালদোর ৬টি। অবশ্য এসব পরিসংখ্যান দিয়ে আর কী হবে? ক্যারিয়ারে চতুর্থ চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা তো জিতেই নিয়েছেন রোনালদো। তার যে জন্মই হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন হবার জন্য। সাফল্যই যে তার নিয়তি। তাহলে ইতিহাসের সাথে অভিসার তিনি করবেন না, তো কে করবেন?