হঠাৎ এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গেছে তার জীবন।
ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভ স্মিথ শুধু অস্ট্রেলিয়া দলের নেতাই ছিলেন না, তার ছিলেন এই দলের ব্যাটিংয়ের প্রাণভোমরা, বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যান। কেপ টাউনে এক বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারি দু’জনকেই এক বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে ছিটকে দিয়েছিলো।
সেই এক বছরের শেষদিকে এসে দু’জনে একসাথে এসেছিলেন বিপিএল খেলতে। আবার দু’জনেই কনুইয়ের ইনজুরিতে ফিরে গেছেন দেশে।
এই আসা-যাওয়ার মাঝে ওয়ার্নার একটু বেশি সময় পেয়েছেন বিপিএল, তথা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কাছ থেকে দেখার। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে তিনটি ফিফটি করে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।
ফিরে যাওয়ার আগে ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ইনজুরি, বিপিএল অভিজ্ঞতা ও নিষেধাজ্ঞাপর্ব নিয়ে কথা বলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার।
আপনার ইনজুরির এখন কী অবস্থা?
এটা (কনুইয়ের ইনজুরি) তো গতকাল ঘটেনি। এটা এমন একটা ব্যাপার, যেটা আসলে সময়ের সাথে বেড়েছে এবং সন্ধিস্থলে এখন তরল এসে জমা হচ্ছে। আপাতত আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে, এবং দেখতে হবে যে এটা কী অবস্থায় দাড়ায়। এটা আগে ছোট একটা ব্যথার মতো ছিলো। একেবারেই হঠাৎ করে সন্ধিস্থলে তরল এসে জমতে শুরু করেছে। এটা অজানা একটা কারণে বেড়ে যাওয়া একটা ব্যাপার। ফলে আমাকে দেশে ফিরে যেতে হবে এবং পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, আমার সতর্কতা হিসেবে আর কী কী করার আছে। কারণ এখানে তো আমরা সবই করেছি। আমি এখানে বরফ দিয়েছি এবং ফোলা প্রতিরোধক ইনজেকশন নিয়েছি। কিন্তু মনে হচ্ছে যে ফোলাটা কিছুতেই কমছে না। ফলে এই মুহূর্তে আমাকে বাড়ি ফিরেই যেতে হচ্ছে। দেশে ফিরে সম্ভবত আরও পরীক্ষা করে দেখা হবে যে, আসলে কী ঘটছে। একবার পরীক্ষা হয়ে গেলে আমি একটা বিবৃতি দিয়ে জানাবো যে, আমার পক্ষে কি আর ফেরা সম্ভব, নাকি আমি বেশিদিনের জন্য ছিটকে যাচ্ছি। এখনও আমি নিশ্চিত নই।
এক বছরের একটা নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর এই কঠিন পর্বের ভেতর দিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?
আপনি যখন খেলবেন না, সেটা কঠিন একটা ব্যাপার। তবে আমার জন্য বাস্তবতাটা হলো, আমার কাছে ক্রিকেট ছাড়াও জীবনের অনেক দিক আছে। আমরা তো আসলে একটা বুদবুদের ভেতর বাস করি। আমাদের জন্য অনেক কিছুই আছে, যেটা আমরা সবসময় সূচী ধরে করি। সকালে উঠে আপনি ট্রেনিংয়ে যান, এরপর ক্রিকেট খেলেন, এরপর বাসায় ফেরেন এবং ঘুমাতে চলে যান। আবার সকালে ওঠেন, ব্যাগ গোছান, পরের কোনো গন্তব্যে উড়াল দেন, এবং আবার ফিরে আসেন। আমি গত ছয়-সাত বছর ধরে তিন ফরম্যাটেই এই একই কাজ করে আসছি। আসলে আমার নিজেরও কিছু সময় দরকার ছিল সতেজ হওয়ার জন্য।
আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো, আমি এই সময়ে আমার পরিবারের সাথে অনেকটা সময় কাটিয়েছি, যেটা আমার কাছে অনেক অর্থ বহন করে। আমার জীবনে আমি যা করি, সেখানে তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা রাখে। আমাকে ক্রিকেট খেলতে দেওয়ার জন্য, যে খেলাটা আমি ভালোবাসি, সেটা খেলতে দেওয়ার জন্য আমার স্ত্রী ও আমার বাচ্চাদের যে ত্যাগ, সেটা আমাকে গত ১০ মাস খুব উপকৃত করেছে। আমি আবার মাঠে ফিরেছি খেলার জন্য। এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলছি, দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার যে, বিশ্বমানের সব খেলোয়াড়রা খেলছে, এমন এই টুর্নামেন্টের অংশ হতে পেরেছি।
অস্ট্রেলিয়ান সতীর্থদের কতটা মিস করেন?
আমি প্রত্যেককে মিস করি। আপনি জীবনে সবসময়ই লোকেদের মিস করবেন। আর এটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আবার অসাধারণ একটা ব্যাপার। এখানে আপনার ভিন্ন কিছু বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে। এটা নতুন একটা মৈত্রী এবং পরিবেশ তৈরি করে।
আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, আপনার ও স্মিথের উপস্থিতিতে সম্প্রতি শেষ হওয়া ভারতের বিপক্ষে সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার ফলাফল অন্যরকম হতে পারতো?
আমি আর স্মিথ থাকলে কী হতো, এটা তো আমি বলতে পারি না। কারণ, আমরা তো ওখানে নেই। আমি শুধু ভারত যেভাবে খেলেছে, সেটা বিচার করতে পারি। কারণ, তারা অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। তারা আমাদের উড়িয়ে দিয়েছে। টিম পেইন বলেছে, সিরিজের স্কোরলাইন আসলে যেকোনো দিকে যেতে পারতো। কিন্তু আমি আসলে খুব বেশি খেলা দেখতে পারিনি। কারণ, আমি বাসায় খুব ব্যস্ত ছিলাম। তার মধ্যে আমি যা দেখেছি, তাতে ভারতকে অসাধারণ খেলতে দেখেছি। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া যেরকম ব্যাট করলে তারা খুশি হতো, সেটা করতে পারেনি। আর বোলিংয়ের ব্যাপার যদি বলি, তারা শুরুতে উইকেট নিতে পারেনি। আর ভারত এটার সুবিধা নিয়েছে। এর একটা বড় কৃতিত্ব দিতে হবে পুজারা যেভাবে ব্যাট করেছে, সেটাকে। কারণ, ভারতের হয়ে ও-ই আসলে সিরিজটা জিতে গেছে বলবো। অসাধারণ ব্যাট করেছে। প্রতিবার ব্যাট করতে নেমে সে ৩০০ থেকে ৪০০ বল খেলে ফেলেছে। আর অসাধারণ একটা খেলার পরিকল্পনা ছিলো ওর। সে ছিল দুই দলের মূল পার্থক্য, সাথে বোলাররাও (ভারতীয়) ছিল অসাধারণ।
আপনি নিশ্চয়ই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেই দলে ডাক পাওয়া আশা করছেন। সেক্ষেত্রে এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেই কি আপনাকে দেখা যেতে পারে?
এখন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আমার জন্য কী বলে, বা কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমি আসলে একটা করে পদক্ষেপ নিয়ে ভাবতে চাই। এখানে খেলা শেষ করে আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। তারপর নিজের মূল্যায়ন করতে হবে। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া দলে ফেরার পর আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জ কী হতে যাচ্ছে?
আমাকে ভালোভাবে ফেরাটা নিশ্চিত করতে হবে, এবং অনেক রান করতে হবে। কারণ ওটাই আমার কাজ। আদৌ যদি আমি দলে নির্বাচিত হই, আমি চেষ্টা করবো অনেক রান করার। আর সেই সাথে আমি আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে খেলার চেষ্টা করবো, এবং সবসময় আমি দলের জন্য যা করি, সেটাই করার চেষ্টা করবো। আমার কাজ রান করা, আমার কাজ প্রাণোচ্ছ্বল থাকা, আমার কাজ মাঠে নেতৃত্ব দেওয়া। আমি এসবই সবসময় করে এসেছি, এখনও আমি এসবই করবো।
আপনি কি মনে করেন যে, বল টেম্পারিং কান্ডে আপনাদের যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, এটা একটু বেশি হয়ে গেছে?
বোর্ড যে কারণে এবং যে অপরাধে আমাদের শাস্তি দিয়েছে, তারা মনে করেছে, এটাই ঠিক আছে। ফলে তারা শাস্তি দিয়েছে, এবং আমরা মেনে নিয়েছি।
আপনি কি কখনো মনে করেছেন, আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে?
আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়… নাহ।
আপনি কি আবার বিপিএল খেলতে আসবেন?
আমি যদি তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে থাকি, সেক্ষেত্রে এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সূচীর ওপর নির্ভর করে। আমি বিপিএল নিয়ে আগ্রহী না হলে তো এবারই আমি বিপিএল খেলতে আসতাম না।