দুয়ো শুনেছেন, ছি ছি করছে লোকে, বিদ্রুপ করছে। গত দেড় বছর ধরে কম শোনেননি সেসব। শিরিষ কাগজ দেখাচ্ছে দর্শক। তিনি যেন দেখেও দেখলেন না। আঠারো মাসে কম তো আর দেখলেন না ওসব, এখন আর না দেখলেও চলে। চোখ-কান খোলা রাখলেন, তবে সেখানে ঢুকতে দিলেন না দুয়ো বা স্যান্ডপেপার। দর্শকের দুয়ো কানে তুলল আরো ভালোর তাড়না, শিরিষ কাগজ চোখে এঁকে দিল ইস্পাত-কঠিন দৃঢ়তা। একাগ্রতা আর মনঃসংযোগের চূড়ান্ত প্রদর্শনে সময়ের গতিপথ দিলেন বদলে। দুয়ো দেয়া দর্শক হর্ষধ্বনি তুলল তার জন্য। শিরিষ কাগজ লুকালো কোথায়! করতালির অভিনন্দনের জোয়ারে অভিনন্দিত হলেন তিনি। সময়কে পক্ষে আনা ‘রাজপুত্তুর’ জয় করলেন দর্শক-হৃদয়, প্রতিপক্ষের সম্মান আর শ্রদ্ধা কুড়োলেন অবিশ্বাস্য দক্ষতায়। এগোলেন অমরত্বের পথে, উঠলেন শ্রেষ্ঠত্বের আরেক ধাপে।
১.
বিংশ শতকের আশির দশক। শ্রেষ্ঠত্বের ধাপ পরিবর্তনের সময়। সুনীল মনোহর গাভাস্কার করলেন দশহাজারী ক্লাব প্রতিষ্ঠা। রিচার্ড হ্যাডলি পেরোলেন চারশ’ উইকেটের মাইলফলক। চার অলরাউন্ডার একজন অন্যজনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ক্রিকেটকে বদলে দেয়া ১৯৮৩’র বিশ্বকাপ ট্রফি ঘরে তুলল ভারত। উইন্ডিজ ক্রিকেট সূর্যের সে কী তেজ! অ্যালান বোর্ডারের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার রাজত্বের গোড়াপত্তন হলো। ১৯৮৭’র বিশ্বকাপ এশিয়া থেকে উড়াল দিল অস্ট্রেলিয়ায়। ক্রিকেট দুনিয়া বদলে যাচ্ছে খুব দ্রুত। মানুষের জীবনযাত্রাতেও পরিবর্তনের হাওয়া।
বিশ্বরাজনীতিতে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের ইঙ্গিত। সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙনের দমকা বাতাস। মিখাইল গর্বাচেভ হয়েছেন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাগ্যবিধাতা। আমেরিকায় চলছে রোনাল্ড রিগ্যানের যুগ। লৌহমানবী মার্গারেট থ্যাচার ইংল্যান্ডকে দিচ্ছেন নেতৃত্ব। অস্ট্রেলিয়ায় লেবার পার্টির শাসনামল, প্রধানমন্ত্রী বব হ্যাওকের যুগ। ভাঙছে বার্লিন দেওয়াল।
ভাঙাগড়ার এই খেলায় ‘মন’ নিয়ে শামিল, এক সুপুরুষ অস্ট্রেলিয়ান এবং এক রূপবতী ইংলিশ রমণী।
পিটার স্মিথ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিস্ট। চাকরির সূত্রে গেছেন ইংল্যান্ড। প্রেমে পড়ে গেলেন এক ব্রিটিশ তরুণীর, গিলিয়ান। ‘অস্ট্রেলিয়া ফেরার সময় আমি অবশ্যই তাকে নিয়ে ফিরব’, ভাবলেন পিটার। জমে উঠল দু’জনের আলাপ। দেরি করতে চাইলেন না কেউ, ‘দিল্লী কা লাড্ডু’টা খেয়েই ফেললেন, সেরে ফেললেন বিয়ে। ব্রিটিশ তরুণী গিলিয়ান অস্ট্রেলিয়ান বধূ হয়ে ফিরলেন অস্ট্রেলিয়ায়, সঙ্গে স্বামী পিটার।
সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি। নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্য। রাজ্যের রাজধানী সিডনি থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণের শহরতলী, নাম কোগারাহ। সেখানেই সংসার পাতলেন পিটার ও গিলিয়ান।
দু’জনের ঘর আলো করে এলো প্রথম সন্তান, ক্রিস্টি। স্মিথ পরিবারের আনন্দ যেন ধরে না। গিলিয়ান বলেন, মেয়েটা হয়েছে তোমার মতো। নাকটা যেন কেটে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আপত্তি জানান পিটার। উঁহু, মোটেই না। চোখ দুটো দেখ, একদম মা’র পেয়েছে।
তিন বছর পর, আশির দশকের শেষ বর্ষে, স্মিথ পরিবারের আনন্দ দ্বিগুণ করে দিয়ে এল দ্বিতীয় সন্তান, এক রাজপুত্তুর। ক্রিস্টির সে কী আনন্দ! ভাইয়ের কাছে পিঠে থাকে সবসময়। পিটারের আনন্দ তার চেয়েও বেশি। এই ছেলে হুবহু যেন তার কপি। গিলিয়ান বলেন, বাবুটা একদম আমার মতো হয়েছে, না? পিটার হাসেন, বলেন না কিছু। ছেলেটার দিকে যতবার তাকান, কী এক স্বর্গীয় আনন্দে ভরে ওঠে ভেতরটা।
রাজপুত্রের একটা নাম দেয়া দরকার। নাম রাখলেন তারা, স্টিভেন পিটার ডেভের্যাক্স স্মিথ। স্টিভেন নামটা এসেছে গ্রীক ‘স্টিফেন’ বা ‘স্টিফেনাস’ থেকে, যার অর্থ মুকুট বা জয়মাল্য।
২.
একটু একটু করে বড় হচ্ছে ছেলেটা। বড্ড ক্রিকেট পাগল। বয়স সবে পাঁচ, এর মধ্যেই সুযোগ পেলে ক্রিকেট নিয়েই মেতে উঠে। সাত বছর বয়সে স্টিভ অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ হারতে দেখল। শ্রীলংকার জয়োল্লাস ওর ছোট্ট বুকটাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিল। ‘একদিন আমিই জেতাব বিশ্বকাপ, উঁচিয়ে ধরব ট্রফিটা’, ভাবে ছোট্ট স্টিভ।
স্কুলের শিক্ষক জিজ্ঞেস করেন, বাচ্চারা, বড় হয়ে তোমরা কী হতে চাও? যেমন সব স্কুলে, সব শিক্ষক, সব বাচ্চাদের জিজ্ঞেস করেন। বেশিরভাগ বাচ্চারই উত্তর, আমি শিক্ষক হতে চাই। আমি হবো ইঞ্জিনিয়ার। ডাক্তার হতে চাই আমি। পাইলট হবো। নার্স হবো। অ্যাডভোকেট হতে চাই। জর্জ হবো আমি। স্টিভকেও জিজ্ঞেস করা হলো। সে জানাল, আমি ক্রিকেটার হবো। বিন্দুমাত্র ভাবতে হয়নি তার উত্তর দিতে। যেন জানে, সে কী হবে! মাত্র আট বছর বয়স তখন ছেলেটার।
ক্রিকেট, ক্রিকেট, ক্রিকেট। ওর সকাল-সন্ধ্যে ক্রিকেট। ওর নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ক্রিকেট। ওর সমস্তজুড়েই ক্রিকেট। পিটার ছেলেকে বাধা দেন না কিছুতেই। গিলিয়ানের ছোট্ট রাজপুত্র, করুক না যা ওর ভালো লাগে। ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পড়াশোনায় ডাব্বা, ফেল করে বসল সে। ক্রিকেট বা পড়াশোনা, দুটো থেকে বেছে নিতে হতো একটিকে। স্টিভ বেছে নিল ক্রিকেট। ১২ বছর বয়সে স্কুল ছাড়ল সে।
হেডমাস্টারের অফিসরুমে ওকে নিয়ে মিটিং হলো সেদিন। মোটামুটি সবাই ঐক্যমতে পৌঁছাল, এই ছেলে বড় হয়ে একজন চমৎকার ক্রিকেটার হবে।
একদিন আমিও ওর মতো নেতৃত্ব দেব। সে-ও স্টিভ, আমিও স্টিভ। ওর মতো আমিও বিশ্বজয় করব। ঠিক ওরই মতো ছাড় দেব না একরত্তি। আমিও জিতব, একদম ওরই মতো করে। হ্যাঁ, বিশ্বের সেরা দলটাতে থাকব আমি। স্টিভ ওয়াহকে দেখে অনুপ্রাণিত হয় ‘কিশোর’ স্টিভ।
ক্রিকেটই ছেলেটার ধ্যানজ্ঞান। ক্রিকেট ছাড়া বোঝে না কিছু। বড্ড সহজ-সরল। কিন্তু এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হলো তাকে। বেছে নিতে হবে পিতৃভূমি, নয় মাতৃভূমি। কাকে বেছে নেবে স্টিভ, বাবা নাকি মা?
কেন্ট ক্রিকেট লিগে দুর্দান্ত দেখাল সে। সারে আগ্রহী হল তার ব্যাপারে। নিউ সাউথ ওয়েলসের দুয়ার খোলাই ছিল তার জন্য। সারে তাকে আরো বেশি টাকা দেবে। নিউ সাউথ ওয়েলস না সারে, ইংল্যান্ড না অস্ট্রেলিয়া?
স্টিভ বেছে নিল পিতৃভূমি। বয়স তখন সতের।
৩.
মালয়েশিয়া গেল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হয়ে। চোখে স্বপ্ন, বিশ্বকাপ জিতবে। হলুদ জার্সিটা তাকে আপ্লুত করে দেয় কেমন। সে কিছুতেই হারবে না, মার্ক টেলরের অস্ট্রেলিয়ার মতো। বরং সে হবে স্টিভ ওয়াহ’র অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্বজয়ী, হবে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়ার মতো সর্বজয়ী। পাকিস্তানের হাতে স্বপ্নভঙ্গ হলো সেবার। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই প্লেন ধরতে হলো অস্ট্রেলিয়ার। সে টেলরের অস্ট্রেলিয়ার মতোও হতে পারেনি।
ভেঙে পড়ল না তাতে। পরাজয়ে ডরে না বীর। সে বীর হবে, হার মেনে হাল ছেড়ে দেয়া কোনো কাপুরুষ নয়।
কেএফসি টি-টোয়েন্টি লীগে শীর্ষ উইকেটধারী হলো সে। শেন ওয়ার্ন তার মধ্যে দেখলেন নিজের ছায়া। নিজেই ‘টিপস’ দিতে ছুটে এলেন তার কাছে। ‘আমি কত সৌভাগ্যবান!’ ভাবে স্টিভ। আমিও ওর মতো অনেক বড় স্পিনার হব। ও অবসরে গেছে, নিশ্চয়ই ওর জায়গা নেব আমি। স্টিভের স্বপ্ন, একদিন ওয়ার্নকেও ছাড়িয়ে যাবে সে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষিক্ত হলো সে, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে দেখল। সতীর্থ পেল সাইমন ক্যাটিচ, ন্যাথান ব্র্যাকেন, ব্র্যাড হ্যাডিনকে। ‘একদিন আমিও ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ মাথায় নেব, ওদের মতো।’ স্টিভ নিজের আকাশে উড়ায় স্বপ্নের রঙিন বেলুন।
স্বপ্ন সত্যি হতে লাগল খুব দ্রুত। প্রথম হলুদ জার্সিটা চড়াল গায়ে। তবু ঠিক শান্তিটা পেল না সে, টি-টোয়েন্টি যে! ক’দিন বাদেই একদিনের ক্রিকেট, তার কয়েক মাস পরই সাদা জার্সি। ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটা মাথায় উঠে গেল তার। এত দ্রুত স্বপ্ন সত্যি হবে, কে ভেবেছিল? এত্ত সহজ ক্রিকেট খেলা!
সুখের সময়টা বেশিদিন থাকল না স্টিভের জীবনে। বুঝতে পারল, এই উঠোনটা মোটেই সরল-সোজা নয়, বড্ড আঁকাবাঁকা। হলুদ জার্সিতে টানা চতুর্থ, এবং সব মিলিয়ে মিশন পেন্টা। এশিয়ায় এল স্টিভ, ‘স্বপ্নপুরুষ’ পন্টিংয়ের নেতৃত্বে। কিন্তু কি আশ্চর্য, সে সেভাবে সুযোগই পেল না। ভারতের বিপক্ষে বিদায়টা দেখতে হলো মাঠের বাইরে থেকেই। সাম্রাজ্য হারানোর যন্ত্রণাটা নবীন বুকেও ভীষণ অনুভব করলো সে। তার কিছুদিন পরই দল থেকে বাদ পড়ল। তারও আগে বাদ পড়ল শ্বেত আঙিনা থেকে।
ইংল্যান্ডের কাছে অ্যাশেজ হারল অস্ট্রেলিয়া, ঘরের মাঠে। এই অসম্ভব ঘটনা সে জন্মের পর থেকে দেখেনি। দেখল তার প্রথম অ্যাশেজে!
৪.
কঠিন এই সময়ে সবকিছুই কষ্টের, যন্ত্রণার। আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এলো একজন – ড্যানি উইলিস। আইন বিষয়ের ছাত্রী। স্টিভ প্রেমে পড়ল ল-ইয়ারের। হারিয়ে গেল মেয়েটার সহজ-সরল কথামালায়। তার চোখে চোখ রেখে ভুলে গেল সমস্ত যন্ত্রণা। ড্যানি বুদ্ধিমতী ও প্রাণোচ্ছ্বল, বইয়ে ডুবে থাকা ভালো ছাত্রী; আর স্টিভ স্কুলই পাশ করতে পারেনি।
‘আমি মনে করি, আমার জন্য সে একটু বেশিই স্মার্ট। সে অনেক বেশি যোগ্য আমার চেয়ে। সে অনেক বেশি প্রতিভাবান, চাইলেই সে অন্য যেকোনো ছেলেকে ভালোবাসতে পারে। আমি ভাগ্যবান, মেয়েটা আমাকে পছন্দ করেছে।’ মনে মনে ভালো করার তাড়না খুঁজে পায় স্টিভ।
‘আমাকে ফিরে আসতে হবে। আমাকে প্রমাণ করতে হবে আমিই সেরা। বিশ্বের সেরা হতে হবে আমার। ড্যানির যোগ্য হতে হবে আমাকে। ওকে খুশি দেখতে চাই আমি। আর সে খুশি হবে আমার সাফল্যে।’
স্টিভের পরিশ্রম আর অধ্যবসায় আরো গেল বেড়ে। ড্যানি এই সময় নিবিড় ভালোবাসায় ঘিরে রাখল তাকে।
স্টিভ স্মিথ ধীরে ধীরে গোছালেন নিজেকে। নেট সেশনে ঘাম ঝরালেন ভীষণ। নিজেকে বদলে ফেললেন একটু একটু করে।
শেন ওয়ার্নের ছায়া থেকে বেরিয়ে কবে যেন হাঁটতে শুরু করলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ছায়ার দিকে।
৫.
প্রিয় বন্ধু ফিলিপ হিউজ। হুট করে কী যে হলো, দুম করে চলে গেল হিউজি। কিছুতেই মানতে পারেন না স্টিভ। বুকে যন্ত্রণার অশান্ত ঢেউ। তবে চাপা দিয়ে রাখলেন তা।
ওয়ার্নারের আবেগঘন সেঞ্চুরি উদযাপন দেখেছেন তিনি। আকাশপানে তাকিয়ে হিউজিকে করা উৎসর্গটা, চোখে প্রায় জল এনে দিচ্ছিল তার। কিন্তু চোখে জল এলে হবে না। তাহলে তো বল দেখবেন না, আউট হয়ে যাবেন। দলপতি ক্লার্কের উদযাপনটাও তাকে ভীষণ আবেগে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। বহু কষ্টে সামলে রেখেছেন নিজেকে। উঁহু, হিউজির জন্য আমার তো কিছু করা হয়নি এখনো।
“ঠিক ৯৮ রানে দাঁড়িয়ে আমি ভাবছিলাম, আর দুটো রান পেলেই আমি ঐ ৪০৮ লেখাটায় ছুটে যাব, এবং প্রিয় বন্ধুকে জানাব ধন্যবাদ। ব্যাটিংয়ের এই পুরোটা সময় আমার সঙ্গে থাকার জন্য।”
স্টিভের চোখে আরো একবার জল আসতে চাইল, কিন্তু সংবরণ করলেন তিনি। সফরকারী ভারত অ্যাডিলেইড ওভালে দুই ইনিংস মিলিয়ে একবারও আউট করতে পারল না তাকে। হিউজি সঙ্গে ছিলেন তার; ইশান্ত-শামি-অ্যারন ত্রয়ীর সাধ্য কী, দু-দুটো ব্যাটসম্যানকে একত্রে আউট করে?
পুরস্কার পেলেন পরের টেস্টেই, প্রমোশন হলো তার। উঠে এলেন চার নাম্বারে। অবশেষে তার সমস্ত পরিশ্রম, সমস্ত অনুশীলন, সমস্ত অধ্যাবসায় কথা বলতে শুরু করেছে। তিনি বিশ্বজয়ে নামবেন এবার। তাকে থামায়, সাধ্য কার?
৬.
অস্ট্রেলিয়ান গ্রীষ্মে, ঘরের মাঠে ‘পেন্টা মিশন’ সম্পন্ন হলো অস্ট্রেলিয়ার। বিশ্বজয়ের রঙিন যাত্রাপথের অনেকটা জুড়ে ছিলেন তিনি।
‘হিউজি! এটা তোর জন্য।’ বিশ্বজয়ের উপচে পড়া আনন্দের সন্ধ্যাতেও হিউজিকে ভুললেন না তিনি, ভোলেনি অস্ট্রেলিয়া। মাইকেল ক্লার্ক ভুলতে পারেন না কখনো। ওয়ার্নারের পুরোটা জুড়েই হিউজি, কী করে ভুলবেন তিনি? পুরো অস্ট্রেলিয়ার অসম্ভব আনন্দের দিনে না থেকেও থাকলেন ফিলিপ হিউজ।
তিনি মার্ক টেলরের পরাজিত অস্ট্রেলিয়া নয়, স্টিভ ওয়াহ-রিকি পন্টিংয়ের মতো চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলের গর্বিত সদস্য হলেন। ড্যানির কাছে বাড়ালেন নিজের যোগ্যতা। প্রতিদান দিলেন ভালোবাসার। বাবা পিটার খুব গর্বিত ছোট্ট রাজপুত্রের অনন্য অর্জনে, মায়ের খুশির অন্ত নেই। ছোট্ট স্টিভ আর ছোট্টটি নেই; বেরিয়ে পড়েছে বিশ্বজয়ে। মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস, ও আরো অনেক বড় হবে। অনেক বড়।
৭.
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আদুরে ‘ছেলে’ হয়ে উঠলেন তিনি। ‘সে হচ্ছে বাচ্চা একটা ছেলে, যে কি না বড়দের খেলায় নেমে পড়েছে।’ তাকে ঘিরে জিওফ লসনের ভাবনা ছিল এমনটা। ক্যাপ্টেন্সির ব্যাটন হাতে উঠল তার।
কাঁধটা ছোট্ট না? তিনি যোগ্য কি? পারবেন সামাল দিতে?
তিনি আমলে নেন না সেসব। তার মনে পড়ে, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল কেমন আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন সেবার। তখন সদ্য তারুণ্যে পা রেখেছেন। সিডনি সিক্সার্সের নেতৃত্ব কাঁধে। ম্যাকগিল অনেক সিনিয়র, তার গুরু ওয়ার্নের সঙ্গে ম্যাকগিল জুটি বেঁধেছিলেন একসময়। কিন্তু তখন অত কথা মাথায় ছিল না মোটেও। ফাইন লেগে ফিল্ডিংয়ে যেতে অপরগতা প্রকাশ করতেই ফোঁস করে বলে উঠেছিলেন,
‘Look mate, I am the captain, you do what I say. Now f**k off and get down there.’
ম্যাকগিল প্রথমে বিস্ময়ে বিমূঢ় হলেও পরে মেনে নিয়েছিলেন নেতার আদেশ। ছুটে গিয়েছিলেন নির্দেশিত জায়গায়।
‘আমি বিন্দুমাত্র ভীত ছিলাম না সে ব্যাপারে। এই ব্যাপারটা দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গে আসে। এবং প্রত্যেকের তা বোঝা উচিৎ। প্রথমে খানিক আশ্চর্য হলেও পরে যেখানে যেতে বলেছি, সেখানে চলে গিয়েছিল।’
আমি কি অ্যালান বোর্ডারের মতো রাফ এন্ড টাফ হবো? ম্যাকডারমটকে প্লেনে বাড়ি পাঠিয়ে দেবেন, বলেছিলেন না বোর্ডার? নাকি স্টিভ ওয়াহর মতো ইস্পাত কঠিন হবো? অথবা রিকি পন্টিংয়ের মতো কর্তব্যের ক্ষেত্রে আপোষহীন? নাকি মাইকেল ক্লার্কের মতো বন্ধুবৎসল?
উঁহু! আমি আমার মতোই হবো। ক্যাপ্টেন্সির দর্শন ঠিক করেন স্টিভ।
তরতর করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন স্টিভ। সমস্ত তার হাতের মুঠোয়। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে নামলে দুটো ঘটনা ঘটবেই; এক, স্টিভ স্মিথ টস করবেন। দুই, স্টিভ স্মিথ রান করবেন। রান করা তার সহজাত। ব্যাটের সঙ্গে তার সম্পর্ক সবচেয়ে নিবিড়। ড্যানির চেয়েও কি?
রানের ফোয়ারা ছুটল। বর্ষসেরা ক্রিকেটার হলেন, বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার, অ্যালান বোর্ডার মেডেল… ব্যক্তিগত অর্জনের খাতা ভরে উঠল কানায় কানায়।
তিনি শ্রীলংকায় সিরিজ হারলেন। বাংলাদেশে টেস্ট হারলেন। স্বদেশে হারলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করলেন, নিউ জিল্যান্ডে গিয়েও পেলেন জয়। দুর্বলতম অস্ট্রেলিয়া দলের দলপতি বলা হলো তাকে। তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন তিনি। ভারত সফরে অনেক কথা শুনলেন। কেউ তাকে বলল, ধবলধোলাই হবে অস্ট্রেলিয়া। কেউ জানাল, চরম লজ্জা নিয়ে ফিরবে অস্ট্রেলিয়া। কেউ শোনাল ভারতের শক্তিমত্তা। কেউ মনে করিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত দুর্বলতা।
তিনি সব টুকে রাখলেন, আর জবাব দিলেন মাঠেই। দুর্দান্ত লড়াই উপহার দিয়ে ভারতের নাভিঃশ্বাস তুলে ছাড়ল অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ‘দুর্বল’ অস্ট্রেলিয়া। সিরিজ হারলেও রেখে আসলেন হাল না ছাড়ার দৃঢ় ছাপ। তার ব্যাট নামের ‘রানমেশিন’ থেকে অনবরত রান বেরোতে থাকেই। সময়টা দারুণ সুখময়।
গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই ভয়ংকর কাণ্ডটা ঘটল সেখানেই।
৮.
শুরুটা হয়েছিল দক্ষিন আফ্রিকার অস্ট্রেলিয়া সফরে। চ্যানেল নাইনের ক্যামেরায় ধরা পড়লো, গোলমেলে এক কান্ড। দক্ষিন আফ্রিকার ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস, বলে মেশাচ্ছেন ললির লালা। তোলপাড় উঠলো। শোরগোল হলো। রাবাদার সেই ওভারেই পিটার নেভিল ও জো মেনি আউট হলেন। আওয়াজ উঠলো- বল টেম্পারিং হলো কি?
সুপার স্পোর্ট বুঝি তক্কে তক্কে ছিল। ফিরতি সফরে অস্ট্রেলিয়া যখন দক্ষিন আফ্রিকা গেলো, তারাও ধরলো খ্যাঁক খ্যাঁক করে। বাছাধন, পালাবে কোথায়? চ্যানেল নাইনের ক্যামেরা-ক্রু’র জবাবটা যেন তারা দিল আরো ভয়ানক এবং প্রবলভাবে।
স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল হয়ে গেল পুরো অস্ট্রেলিয়া। আচমকা এক ঝাঁকিতে দিশেহীন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।
ক্যামেরন ব্যানক্রফট, দৃশ্যপটের মূল চরিত্র। স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার, পরিকল্পনাকারী। তিন চরিত্রের এই আয়োজনে, নড়ে উঠল অস্ট্রেলিয়ার গোটা ক্রিকেটমহল।
তরুণ ব্যানক্রফট থেকে যোগ্য নেতার মতো পুরো চাপ নিজের দিকে টেনে নিলেন দলনায়ক স্টিভ স্মিথ। পিছু হটলেন না সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারও। আপাদমস্তক ক্রিকেটে ডুবে থাকা মানুষটি চোখভর্তি জল নিয়ে জানালেন,
‘হ্যাঁ, আমরা ভুল করেছি। আমরা শুদ্ধ খেলাটার সাথে প্রতারণা করেছি। আমরা স্বদেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি। আমরা কালিমা লেপন করেছি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের চির বিশুদ্ধতায়। আমরা অনুতপ্ত, আমরা লজ্জিত।’
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার আদরের আর গর্বের ছেলেটা হয়ে পড়ল চুনকালি মাখানো এক কুলাঙ্গার।
৯.
‘ওরা অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। ব্যাগি গ্রিন ক্যাপের অমর্যাদা করেছে ওরা।’
‘ওদের আজীবন নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিৎ। বের করে দাও দল থেকে। ওদের ছায়াও যেন আর না পড়ে।’
‘ক্রিকেট খেলার সাথে প্রতারণা করেছে ওরা। চির বিশুদ্ধতায় লেপন করেছে কালিমা। ওদের আর কোনোদিন টেস্ট খেলার অধিকার নেই।’
‘বল টেম্পারিং… কী জঘন্য অপরাধ! এটা ওরা করতে পারল?’
মানসিক স্থিরতা ক্ষণে ক্ষণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার। নানান কথা, তির্যক মন্তব্য, ঠাট্টা-বিদ্রুপ কানে আসছে তার। মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। ওহ, পৃথিবী এত নিষ্ঠুর হয় কী করে?
ভাগ্যিস, বাবা ছিলেন সঙ্গে। সংবাদ সম্মেলন কক্ষের পুরো সময়টা, এই কঠিন সময়জুড়ে। সেই ছোট্টটি থাকতে যেমন আগলে রাখতেন সমস্ত ঝড়ঝাপটা থেকে, এখনো তেমনি আগলে রাখছেন পিটার, তার রাজপুত্রকে। মা পাখি যেমন ডানা মেলে বাঁচিয়ে রাখে ছানাপোনাদের, মা গিলিয়ানও চেষ্টা করছেন পুরো পৃথিবী থেকে তার বাচ্চাটাকে আগলে রাখতে। তিনি মা, তিনি জানেন ও বোঝেন, বাচ্চাটা কত কষ্ট পাচ্ছে। ওরা কি জানে, ক্রিকেট খেলাটা কতটা জুড়ে আছে ওর?
ড্যানিও আছেন সঙ্গে, ছেড়ে যাননি। এই বিপদসংকুল লগ্নে তার ভালোবাসার সমস্তটুকু মেলে ধরে তাকে হয়তো বলছেন, পাশে আছি প্রিয়। তোমাকে আবার ফিরতে হবে, এই মঞ্চে, এই আঙিনায়। ভেঙে পড়লে চলবে না মোটেই।
তিনি প্রিয়জনদের চোখে দেখতে পান সেই ভরসা, সেই আশা, সেই ভালোবাসা। ‘আমি তাহলে ‘শেষ’ হয়ে যাইনি। আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারব নিশ্চয়ই!’ বন্ধুরা তাকে উৎসাহ যোগান। তার ‘হাল না ছাড়া’ মনোবৃত্তি ফিরে আসে। মনের জোর ফিরে পান তিনি। ‘আমি দেখিয়ে দেব, ওটা ক্ষণিকের ভুল ছিল। আমি প্রতারক নই, কুলাঙ্গার নই। আমি বিশুদ্ধ ক্রিকেটের প্রতি সর্বোচ্চ নিবেদিত একজন। ওরা বিশ্বাস করবে। ওদের সেই বিশ্বাস দেব আমি।’ দৃঢ়পণের আড়ালে হারিয়ে যায় স্টিভ স্মিথের চোখের পানি।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এক বছর নিষেধাজ্ঞা দেয় তাকে। তিনি অম্লান বদনে মেনে নেন শাস্তি। দলের ‘লিডারশিপ’ গ্রুপে থাকতে পারবেন না দুই বছর। আচ্ছা, তাও মেনে নেন।
এক বছরের শাস্তির সময়টায় ঘরে তোলেন প্রেয়সীকে। প্রেমের পরিণতি হয় বিয়ে, ‘প্রেমিকা’ ড্যানি এবার স্টিভ স্মিথের জীবনে আসেন ‘ঘরণী’ হয়ে।
‘আমি ওকে সুখী করব। খুব সুখী। ও আমার জন্য গর্ববোধ করবে।’ ড্যানিকে জীবনের সবটুকু সুখ দিতে চান স্টিভ স্মিথ। তার স্থির বিশ্বাস, তিনি তা দিতে পারবেন।
মরুর বুকে জয়ের সমান এক ড্র পেল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁতে দাঁত চেপে লড়লেন খাজা-হেডরা। ‘সাবাস, মেট! এভাবেই লড়ে যাও।’ মনে মনে ওদের বার্তা পাঠান স্টিভ। অবাক কাণ্ডের সাক্ষী হলেন, বড্ড কষ্ট হলো তার। ভারত অস্ট্রেলিয়ায় এসে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জিতে নিল! পূর্বসূরীদের সময়ে এই ঘটনা ঘটেনি কখনোই।
সংকল্প আরো সুদৃঢ় হয়, দৃঢ়তা পায় অসম্ভব মজবুত ভিত। তিনি ভাঙবেন না, মচকাবেন না, টলবেন না কিছুতেই। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ভুলুণ্ঠিত সম্মান পুনরুদ্ধার মিশনের নেতৃত্বে দেবেন তিনিই।
১০.
স্টিভ ফিরলেন মাঠে। বুকে একটু ধুকপুকানি থাকলেও প্রকাশ করলেন না তা। শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার অসম্ভব এক লক্ষ্য সামনে। সমস্ত মনোযোগ দিলেন সেখানে। দর্শক তাকে ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেল, কান ঝালাপালা করল, কিন্তু কোনোরূপ বিকার দেখালেন না তিনি। স্টিভ নিজেকে গড়েছেন ইস্পাত দৃঢ়তায়; ইস্পাত কখনো টলবে না, তিনি জানেন।
রঙিন জার্সি আর সাদা বল শেষ হতে না হতেই, সাদা জার্সি আর লাল বলের ক্রিকেট। চিরশত্রুর ঘরে সর্বোচ্চ সম্মান ধরে রাখার মিশন। অ্যাশেজ সিরিজ, দেড় যুগ হলো প্রায়, জেতা হয়নি ইংলিশ গ্রীষ্ম। স্টিভ জানেন ইতিহাস। সর্বশেষ জয়ী দলের নেতৃত্বে ছিলেন স্টিভ ওয়াহ।
বছর দেড়েক বাদে শ্বেত আঙিনার সবুজ মঞ্চে প্রবেশ করলেন, আর এজবাস্টনের আকাশ আলো করে উপহার দিলেন যুগল সেঞ্চুরি। ১৩৮ বছরের অ্যাশেজ ইতিহাসে মাত্রই অষ্টমবারের মতো এমন কীর্তি রচিত হলো। অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজে এগিয়ে গেল।
লর্ডসে, জোফরা আর্চারের গোলা মাথায় নিয়েও অবিচল তিনি। কিন্তু মগজে গোলমাল দেখা দিল, দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাট করা হলো না। অস্ট্রেলিয়া কোনোমতে ঠেকাল হার। হেডিংলির কোনো ইনিংসে থাকার সুযোগ পেলেন না। অস্ট্রেলিয়া হেরে গেল ম্যাচটাই। রোমাঞ্চকর ম্যাচে স্টোকস-স্পেসশীপে চড়ে ইংল্যান্ড ফেরাল সমতা। তিনি ফিরলেন ম্যানচেস্টারে, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। এবার হাঁকালেন দ্বিশতক। ইংলিশ গ্রীষ্মের অনিন্দ্য সুন্দর সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া পেল অনন্য এক বিজয়। দেড় যুগ পর নিশ্চিত হলো, ছাইদানিটা এবার আর ইংল্যান্ডে রেখে যাচ্ছে না অস্ট্রেলিয়া।
৩ টেস্ট, ৫ ইনিংস, ৬৭১ রান, ১৩৪.২০ গড়, ৩টি সেঞ্চুরি, ২টি অর্ধশতক।
দ্য ওভালের শেষ টেস্টের দুই ইনিংসে করেছেন ৮০ ও ২৩। ২০১৯-এর অনবদ্য ইংলিশ গ্রীষ্মের অ্যাশেজের শেষটাতে, আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি যেন – তিনি ‘অতিমানব’ কেউ নন, কেবলই ‘মানব’ মাত্র! তারপরও সামান্য মানুষ মনে হওয়ার কারণ নেই কোনো। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফিরেই ৭৭৪ রান, ১১০ দশমিক ৫৭ গড়, ৩টি শতক, ৩টি অর্ধশতক। কে বলে ‘সামান্য’ মানুষ তারে, অসামান্য যে জন!
অস্ট্রেলিয়ার অবাক রাজপুত্তুর ‘হতবাক’ করলেন আবার। অবিশ্বাস্য দক্ষতা আর মুন্সিয়ানার দুরন্ত প্রকাশ অবলোকনে বিহ্বল হলো বিশ্বক্রিকেট। হৃদয় সিংহাসনের উজ্জ্বলতর মুকুট অকপটে পরিয়ে দিল তাকে। ছি ছি করা লোক এবার তার বন্দনায় মত্ত। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সম্মান পুনরুদ্ধারে সবটা উজার হলেন তিনি। মাথায় পরলেন বিজয়ের উজ্জ্বলতর মুকুট। ফিরে পেলেন ব্যাটিংয়ের শীর্ষস্থান, ব্র্যাডম্যানকে ‘হ্যালো’ বললেন আবার।
অস্ট্রেলিয়া তার সেই গর্বের ধন আর আদরের ছেলেটাকে ফিরে পেল, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের সময়ে। বছর দেড়েকের অনুপস্থিতি ব্যাটে মরচে ফেলেনি মোটেও, বরং তা যেন ঠেসে ধরা ফোয়ারার মুখ। ছাড়া পেতেই উদগিরিত সমস্ত শক্তি আর প্রবল স্রোতে। রান করাই সবচেয়ে সহজ তার কাছে, আউট হওয়া সবচেয়ে অপছন্দ। পরাজিত হতে একদমই ভালো লাগে না তার। তাকে চোরা আনন্দ দেয় ‘ব্র্যাডম্যানের পিছু পিছু’ চলার দুষ্টুমি।
আপাত সহজদর্শন মানুষটার ‘কাঠিন্য’ মুগ্ধ করে বারবার। মনঃসংযোগ জাগায় সম্ভ্রম। তার অধ্যবসায় চুম্বকের মতো টেনে নেয় সমস্ত শ্রদ্ধা। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের আকাশ সাক্ষী হয় ক্ষণজন্মা এক প্রতিভার আবেগঘন উষ্ণ উদযাপনের!
পিটার ও গিলিয়ান যথার্থই রেখেছিলেন ছেলের নামটা। স্টিভ, বা স্টিভেন; নামটা এসেছে গ্রীক ‘স্টিফেন’ বা ‘স্টিফেনাস’ থেকে, যার অর্থ মুকুট বা বিজয়মাল্য।
খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/