অ্যান্টিগায় সন্ধ্যে নামি নামি করছে। গোধূলিবেলার সূর্য সবটুকু লালিমা দিয়ে রাঙিয়ে দিচ্ছে নর্থ সাউন্ডের আকাশ। মাঠের কোনো কোনো পাশে দীর্ঘ ছায়া। বোলাররা সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিচ্ছেন, অধিনায়ক চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। তিনটে উইকেট বল হলেই, ব্যস, বিস্তৃত হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়া যাবে। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টেস্ট ক্রিকেটের পঞ্চম দিনের সর্বশেষ ক্ষণ উপস্থিত। স্বাগতিক উইন্ডিজ শিবিরে দোলাচল, সফরকারী ইংলিশ দল সর্বশক্তি নিয়ে মরণকামড় দিতে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত।
প্রায় পাঁচশো কিলোমিটার দূরে বার্বাডোজেও সন্ধ্যা নামি নামি করছে। সময়ের হেরফের নেই। অ্যান্টিগা থেকে বার্বাডোজে কোনো স্থলপথ সংযোগ নেই, ক্যারিবিয়ান সাগর পাড়ি দিয়েই যেতে হবে। মধ্যবয়সী এক মহিলা প্রচণ্ড উত্তেজনায় কাঁপছেন। তার আদরের পুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সম্মান রক্ষায়, কিছুতেই হার মানতে নারাজ।
মধ্যবয়সী সে রমণী বসে থাকতে পারেন না। উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়েন। তার ছেলে ৯৯-তে পৌঁছে গেছে! জেমস ট্রেডওয়েলকে লং-অফ দিয়ে ড্রাইভ করে সীমানা ছাড়া করতেই আনন্দে হুল্লোড় করে উঠেন মহিলা। একটানা চিৎকার করতেই থাকেন। আনন্দে-খুশিতে-উত্তেজনায় ঠিক কী করবেন বা কী করছেন যেন বুঝতেই পারেন না তিনি। পুরো পাড়া জমায়েত হয় তার দোরগোড়ায়। প্রতিবেশীরা আতঙ্কিত হয়ে ছুটে আসে। আনন্দের চিৎকারটাকে তারা বিলাপের হাহাকার ভেবে সন্ত্রস্ত-মনে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হলো ঘরে তোমার?’
নিজেকে সামলে নেন মহিলা। তারপর সমস্ত শান্ত হয়ে এলে কথা হয় ছেলের সঙ্গে। তিনি ছেলেকে বলেন,
“ভাগ্যিস এটা কেনসিংটন ছিল না। যদি কেনসিংটনে এই কান্ড ঘটাতাম তাহলে নির্ঘাত তোমার মাকে পুলিশে ধরে হাজতে ভরে দিত আজ। এখানেও তো তারা (পাড়া-প্রতিবেশী) ভেবেছিল বুঝি তোমার নানির খারাপ কিছু ঘটে গেছে, তাই মরণ কান্না জুড়েছি! ওহ! কী বলবো তোমাকে, আমার মনে হচ্ছিল পুরো বার্বাডোজে আমার মতো সুখী মহিলা আর একটিও নেই।”
সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে ইংলিশ ক্রিকেটের ‘বাধা’ হয়ে লড়েছেন তিনি, ইংলিশ দলপতির শত প্রচেষ্টা, নানান প্রলোভন এড়িয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন ঠাঁয়, সুবিশাল কোনো বটবৃক্ষের ন্যায় সব ঝড় সামলে, ব্রড-অ্যান্ডারসন-ট্রেডওয়েল-স্টোকসদের মোকাবিলায় দৃঢ়পদ, যেন অনড় একদম। উইন্ডিজ ক্রিকেটের একদম প্রয়োজনের সময়েই তার প্রথম সেঞ্চুরির মাহেন্দ্রক্ষণটা উপস্থিত হয়েছে। ১৫টা চারের সঙ্গে প্রায় সত্তর স্ট্রাইকরেটে সেঞ্চুরি, উইন্ডিজ ক্রিকেটকে যেন জানিয়ে দেয়া হলো, লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং নিয়ে ভাবনার সময় ফুরিয়ে গেছে। একজন এসে গেছে নির্ভরতা দিতে, একজন জেসন হোল্ডার দায়িত্ব নিয়েছেন উইন্ডিজ ক্রিকেটের ব্যাটিংয়ের লেজ-অংশের।
উইন্ডিজ ক্রিকেটের শুধু লেজ-অংশ কেন, দলটাকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্যেই তাকে উইন্ডিজ ক্রিকেট-কর্তারা চোখে চোখে ছিলেন সেই বয়সভিত্তিক দল থেকে। ছন্নছাড়া ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ভগ্নদশা কাটিয়ে দিশা ফেরাতে একজনকে দীর্ঘমেয়াদের দায়িত্ব দিতেই হতো। বিশ্বকাপের আগে আগে ডোয়াইন ব্রাভোকে সরিয়ে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের দায়িত্ব সঁপে দেয়া হলো তার কাঁধে।
বয়স মোটে তখন তেইশ তার। এত কম বয়সে উইন্ডিজের কেউ আগে অধিনায়ক হয়নি। মায়ের সঙ্গে সেই ছোট্টবেলা থেকে মধুর সম্পর্ক। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে পরামর্শ করেন মায়ের সঙ্গে। তার আনন্দ-বেদনায়, দুঃখ-সুখে মা থাকেন সবসময়। বোর্ড তাকে অধিনায়কত্বের প্রস্তাব দিলে আলোচনা করেন তিনি মায়ের সঙ্গে। মা সঙ্গে সঙ্গে ‘না না’ করে ওঠেন, ‘অধিনায়কত্বে অনেক ঝামেলা। অনেক বিতর্ক। তুমি বড্ড ছোটো। এখন নয় বাছা। আমার মনে হয়, এখনো তুমি প্রস্তুত নও।’
হোল্ডার মাকে আশ্বস্ত করেন, ‘আমি পারবো মা। ঝক্কি-ঝামেলা ঠিক সামলে নিতে পারবো।’
মা আশ্বস্ত হন। ছেলেকে তিনি বিশ্বাস করেন, তাই বিশ্বাস রাখেন। “ঠিক আছে, তোমার যদি মনে হয় তুমি পারবে, তাহলে তুমি যে-ই সিদ্ধান্তই নাও, পূর্ণ সমর্থন পাবে আমার।”
প্রথমে ওডিয়াই, মাসকয়েক বাদে টেস্টও। উইন্ডিজ ক্রিকেট এক তরুণের অনভিজ্ঞ কাঁধে সওয়ার হয়ে ফেরাতে চায় ফেলে আসা সেই সুবর্ণ অতীতকাল।
প্রক্রিয়াটা ঠিক সফল হয় না। এবি ডি ভিলিয়ার্স মাস দেড়েকেরও কম সময়ে হোল্ডারকে জানিয়ে দেন, নেতৃত্ব দেয়া সহজ কম্ম নয় হে। জোহানেসবার্গে ডি ভিলিয়ার্সের ৪৪ বলে ১৪৯ রানের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞা ভুলে যাওয়ার দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা ওঠে ৪৩৯-এর চূড়ায়, হোল্ডার গোনেন ৯ ওভারে ৯১ রান। সিডনিতেও যেন সে ধ্বংসযজ্ঞ পুনরায় সম্প্রচারের দায়িত্ব পান ডি ভিলিয়ার্স। এবারে করেন ৬৬ বলে অপরাজিত ১৬২। দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৪০৮। আর হোল্ডারের খরচ ১০ ওভারে ১০৪। সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ বোলিংয়ের রেকর্ডে যা তৃতীয়, তখন পর্যন্ত দ্বিতীয়; আর পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ছিল প্রথম। ২০১৯ বিশ্বকাপে রাশিদ খান ১১০ রান গুনে হোল্ডারকে দুইয়ে ঠেলে দেন। নিউ জিল্যান্ডের মার্টিন স্নিডেন ৬০ ওভারের ক্রিকেটে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ১২ ওভারে দিয়েছিলেন ১০৫ রান।
হোল্ডার হাল ছেড়ে দেন না, শিক্ষা নেন। নিজেকে গড়েন আরো সুদৃঢ় ও ইস্পাতকঠিন মনোবলে। টেস্টের প্রথম সেঞ্চুরিটির সময়ে তিনি উইন্ডিজ ক্রিকেটের ওডিয়াই দলনায়ক। নিজেকে একটু একটু করে নেতৃত্বের জন্য উপযুক্ত প্রমাণের পাশাপাশি ভারসাম্যপূর্ণ ও স্থিতিশীল একট দল গড়ে তোলার কাজে হাত দেন।
ছেলেবেলা থেকেই তিনি শান্ত, নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির। তার কাজ, পরিকল্পনা ও পরিশ্রম সবই তেমনই নিভৃতে, ধীরেসুস্থে। লোকজন টের পায় না, তিলে তিলে কীভাবে একজন সুবোধ-শান্ত ক্যারিবিয়ান গড়ে তুলছেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সুমহান ঐক্য ও ঐতিহ্যের প্রতীক ক্যারিবিয়ান টেস্ট ক্রিকেট দল।
নেতৃত্বের প্রথম সিরিজেই লবডঙ্কা। ডি ভিলিয়ার্সের বেধড়ক পিটুনী আর ৪-১ ব্যবধানে শোচনীয় হার। একমাত্র জয়ের ম্যাচটাতে হোল্ডার ৫৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নেতৃত্ব দেন সামনে থেকে। তিনি বুঝতে পারেন, দলের সাফল্যের জন্য তার নিজের পারফর্মের বিকল্প নেই। সঙ্গীদের সামনে উদাহরণ হতে হবে, বন্ধুদের দেখাতে হবে প্রতিপক্ষকে কীভাবে নাস্তানাবুদ করতে হয়। বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্বের সম্মান পেলেন, কিন্তু পারফরম্যান্স তথৈবচ। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গেলেন দলকে, যদিও পরের আসরে শেষ করলেন নবম হয়ে। ফলে ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাকে। কিন্তু টেস্ট দলের নেতৃত্ব এখনো তার কাঁধে। সহসা সে পদ হারাবেন, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ। যেভাবে দলটাকে গুছিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন, উইন্ডিজ ক্রিকেট তার উপর আস্থা রাখতেই পারে। অবশ্য সমালোচকদের ভিন্ন মত, যোগ্য বিকল্পের অভাবেই নাকি হোল্ডার নেতার আসনে আসীন রয়েছেন এখনো।
৩৫ টেস্টে ১১টি জয়, যা কি না গত আড়াই দশকে কোনো উইন্ডিজ অধিনায়কের সর্বোচ্চ। সর্বশেষ রিচি রিচার্ডসনের নেতৃত্বে উইন্ডিজ ১১টি জয় দেখেছিল। সেখানেও প্রশ্নের অবকাশ আছে অবশ্য। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই যে এসেছে চারটি জয়। সেক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি, পাকিস্তানের বিপক্ষে দুইটি ও শ্রীলংকার বিপক্ষে একটি জয়কে ‘ফুঁহ’ দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই নিশ্চয়?
পাশাপাশি ১৯টি পরাজয় হোল্ডারের নেতৃত্বে বড়সড় ‘দাগ’ রাখলেও, গত কয়েক বছরে উইন্ডিজ ক্রিকেটের অবনমন থেকে উত্তরণের পর্যায়টাও চোখে পড়ার মতো। যার পুরোভাগে রয়েছে হোল্ডারের কৃতিত্ব, যা অস্বীকারের উপায় নেই।
অধিনায়ক হিসেবে ৭ বার নিয়েছেন ফাইফার, পাশে এসে বসেছেন ইমরান-বেনোদের কাতারে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিবিয়ানদের সিরিজ জয়ের স্বাদ দিয়েছেন প্রায় বছরদশেক পর। ইংল্যান্ডের মাঠে গিয়ে জিতেছেন দেড় যুগ পর। নিজের বোলিংয়ে অসাধারণ উন্নতি ঘটিয়ে বনে গেছেন সময়ের অন্যতম সেরা পেসার। শেষ কয়েক বছরে অন্তত ২০ টেস্ট খেলেছেন, এমন ফাস্ট বোলারদের মধ্যে অ্যান্ডারসনের পরই সবচেয়ে ভালো বোলিং গড় হোল্ডারের।
হোল্ডার সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। রোস্টন চেজ, শেন ডওরিচ, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েইট, জার্মেইন ব্ল্যাকউড, শামারাহ ব্রুকসদের নিয়ে ব্যাটিং অর্ডার গড়ে তোলার পাশাপাশি শ্যানন গ্যাব্রিয়েল-মিগুয়েল কামিন্স-আলজেরি জোসেফ-কেমার রোচদের সঙ্গে নিজেকে জুড়ে দিয়ে সাজিয়েছেন সময়ের অন্যতম সমৃদ্ধ পেস আক্রমণ। তার নৈপুণ্যে মুগ্ধ সাবেক ইংলিশ গ্রেট ডেভিড গাওয়ার অকপটে বলেছেন,
I am very impressed with Jason Holder. A man, a captain and and a very fine all-rounder. If you had asked people which of the two star all-rounders in the game is highly ranked, most people would have gone for Ben Stokes, rather than Jason Holder. The truth is, according to ranking, Holder is No 1. The way the game went, he did a lot as a captain, as a bowler and as a batsman, to keep West Indies in the game. He deserved a lot of credit.
এখনকার সময়ে আইসিসি টেস্ট অলরাউন্ডারের তালিকায় সবচেয়ে উপরের নামটিই হলো জেসন হোল্ডার। ব্যাটিংয়েও তিনি দারুণ কার্যকর। তার অভিষেকের পর থেকে আট নাম্বার পজিশনে তার চেয়ে বেশি রান নেই আর কারো। ত্রিশোর্ধ্ব গড়, পেয়েছেন দ্বিশতকও; তাও আবার নিজের শহর, নিজের দেশ বার্বাডোজে। ১২০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে দল, সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে তিনি প্রায় পৌনে পাঁচ ঘন্টার প্রচেষ্টায় ২৩ চার ও ৮ ছয় দিয়ে ২২৯ বল থেকে বিনির্মাণ করলেন অপরাজিত ২০২ রানের সুবিশাল দৃষ্টিনন্দন অট্টালিকা, স্ট্রাইকরেট ৮৮।
সবচেয়ে দীর্ঘদেহী হিসেবে দ্বিশতকের মালিক তিনি। তার আগে এই রেকর্ড ছিল জেসন গিলেস্পির। ৬ দশমিক ৫ ফুট বা ১৯৫ সেন্টিমিটার উচ্চতাসম্পন্ন গিলেস্পি সেবার চট্টগ্রামে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নেমে দ্বিশতক পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০০৬ সালে। হোল্ডারের উচ্চতা ৬ দশমিক ৭ ফুট বা ২০১ সেন্টিমিটার।
এই উচ্চতার কারণে তিনি হতে পারতেন বাস্কেটবল প্লেয়ারও। কিন্তু বাস্কেটবলের চেয়ে তাকে বেশি টানত ক্রিকেট বল। তিনি বাড়ির উঠোনে ব্যাটিং করতেন। প্রায় সময় ছক্কা মেরে ভেঙে ফেলতেন জানালার কাঁচ। মা ডাক দিয়ে বলতেন, ‘জেসন! এই দেখো, আবার তুমি আবার জানালার কাঁচটা ভেঙে ফেলেছো। এখন এই কাঁচটার জন্য কত খরচা হবে আমার, ভাবতে পারো?’
জেসন মিষ্টি হাসতেন। ছোট্ট করে জবাব দিতেন, ‘কী করব মা, বলটা ঠিক ব্যাটের মাঝ বরাবর লাগল যে!’
মা হাসতেন। প্রথম দিকে অবশ্য রাগ হতো, কিন্তু পরে গিয়ে ছেলের প্রতিভায় আস্থা রাখতে চাইতেন।
হোল্ডারের মা এখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মহিলা মনে করেন। যখন ছেলে বল আছড়ে ফেলেন মাঠের বাইরে, যখন স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন, যখন উইকেট উদযাপনের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন মায়াবী হাসির পেখম মেলেন, যখন নেতৃত্বে ঐক্যমালা গাঁথেন ক্যারিবিয়ান ঐতিহ্যের। ছেলের সাফল্যে সুখী হন মা, সুখী হন বাবা। হোল্ডারের বাবা-মা দু’জন আলাদা থাকেন, বিমাতার ঘরেও হোল্ডারের যত্ন-আত্তি কম হয় না। ভাইয়ের সঙ্গে দারুণ ভাব। সেই ছোট্ট থেকে হোল্ডার এখনো তেমনি শান্ত, স্নিগ্ধ ও সুবোধ একজন।
এই নিরীহ, নিপাট ও স্থির ভাবমূর্তি কেমন যেন! একজন ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার হবেন দীর্ঘদেহী, তার থাকবে পেস, চোখে থাকবে আগুন, তিনি ব্যাটসম্যান তাক করে লালচে চর্মগোলকের মোড়কে ছুঁড়বেন এক-একটি আগুনে গোলা। কিন্তু হোল্ডার তেমনটি নন। তিনি ক্যারিবিয়ান, তিনি দীর্ঘকায়। তিনি বার্বাডোজের কিংবদন্তী ক্রিকেট-প্রাণ স্যার ওয়েসলি হল, জোয়েল গার্নারদের উত্তরসূরী; কিন্তু বোলিংয়ে নেই তার পেস, চোখে নেই আগুন।
তাতে কি? তার আছে নিয়ন্ত্রণ-সুইং-শৃঙ্খলা, আছে চাতুর্য। এইসব গুণের সমন্বয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো পরিবেশে তিনি হয়ে উঠতে পারেন ভয়ঙ্কর, আনপ্লেয়েবল, বিধ্বংসী। যেন সুশ্রী ও মায়াবী চেহারায় ঠাণ্ডা মাথার খুনে একজন। তিনি গর্বিত বাজান, স্যার ফ্র্যাংক ওয়ারেলের গর্বিত উত্তরসূরী, ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট ঐতিহ্যের মহান ধারক। ঠাণ্ডা মাথায়, সুনিপুণ দক্ষতায় ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সুমহান সৌন্দর্য্য সর্বোচ্চ অধিষ্ঠিত করার অভীষ্ট লক্ষ্যে তিনি অবিচল। সে লক্ষ্যে সফল হবেন কি ব্যর্থ, তা সময়ই বলবে হয়তো। তবে তার পথচলার যে ধারা, তা আমাদের জানান দিচ্ছে, তিনি ঠিক পথ ধরেই এগুচ্ছেন।
আমাদের শুভকামনা ও সমর্থন থাক তার জন্য।