ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর ছিলো কোনটা? ১৮৭৭, যে বছরে প্রথমবারের মতো স্বীকৃত টেস্ট ক্রিকেট আরম্ভ হয়? ১৯৭৭, যে বছরে কেরি প্যাকারের ‘ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেট’-এর হাত ধরে ক্রিকেটে নতুন যুগের আবির্ভাব হয়? নাকি ২০০৮, যেদিন প্রথমবারের মতো আইপিএলের হাত ধরে ক্রিকেটের যুগান্তর ঘটিয়ে দেয় টি-টোয়েন্টি? আচ্ছা, এই ছোট্ট তালিকাতে কি ২০১৭ কোনোক্রমেও উঁকি মারে?
প্রশ্ন যতটা সহজ, উত্তরটা ঠিক ততটা সহজে বলে দেওয়া চলে না। দেখতে দেখতেই শেষ হয়ে গেলো ২০১৭, ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে নতুন আরেকটি বছরও। ঘটনাবহুল ২০১৭-তে জমেছে হাসি-কান্না, আনন্দ-ব্যর্থতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির নানা গল্প, নানা সমীকরণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও সেই ধারার বাইরে নয়; এ বছর আইসিসির গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তন, বেশ কিছু ক্রিকেটীয় আইনকানুনের রদবদলসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেমন এসেছে, তেমনি সারাবছর জুড়েই নজরকাড়া সব পারফরম্যান্সের পসরা সাজিয়েছেন ক্রিকেটাররা। এমনই কিছু ঘটনাবলী নিয়ে এবার সালতামামিতে থাকছে এক নজরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হালহকিকতের গল্প।
পাকিস্তানের আনন্দ-আক্ষেপের কাব্য
গত বছর বেশ কিছু সুসংবাদ পেয়েছে পাকিস্তান। গত বেশ কিছু বছর ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পাকিস্তানে অনুপস্থিত। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের একটি ঝটিকা সফর ছাড়া আর কোনো আন্তর্জাতিক সিরিজ বা টুর্নামেন্টই পাকিস্তানে সেভাবে আয়োজিত হয়নি। তবে এই বছরে পিসিবি প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান সুপার লীগ, ওয়ার্ল্ড ইলেভেন স্কোয়াড এবং শ্রীলংকার সঙ্গে একটি ম্যাচ আয়োজনে সক্ষম হয়েছেন।
শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলগুলো কি তাহলে এরপর পাকিস্তান সফর করবে? উত্তরটা সম্ভবত নেতিবাচকই। কিন্তু এটাও একটা শুরু, আর সেটাই অনেক কিছু। তবে এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সমর্থকদের উদযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও চমক দেখিয়েছে তাঁরা। সেরা আট দলের লড়াইয়ে শেষ দল হিসেবে যখন টুর্নামেন্টে জায়গা করে নিয়েছিলো পাকিস্তান, তখন কি আদৌ কেউ ভাবতে পেরেছিলো ভারতের মতো দুরন্ত এক দলকে রীতিমতো গুড়িয়ে দিয়ে তারাই জিতবে শিরোপা? খুব বেশি মানুষকে এই বাজি ধরতে দেখা যাবে না। ফর্মের তুঙ্গে থাকা ভারত-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে পাকিস্তানের এই অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স চমকে দিয়েছিলো গোটা বিশ্বকেই। বাবর আজম-ফখর জামান-হাসান আলী-মোহাম্মদ আমির-ইমাদ ওয়াসিমদের মতো তরুণ তুর্কিদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দারুণ একটা ভবিষ্যতের স্বপ্নই দেখাচ্ছে পাকিস্তানকে।
তবে অসাধারণ একটি বছরের হিসেবে একমাত্র কাঁটা হিসেবে বিঁধছে পাকিস্তান ক্রিকেটের দুই মহীরূহ ইউনিস খান এবং মিসবাহ-উল-হকের বিদায়। ১৯৩ টেস্টের অভিজ্ঞতা, ১৫ হাজারেরও বেশি রানের নির্ভরতা, নানা ঝড় সামলে দলকে বুকে আগলে রাখার মতো অভিভাবক হারিয়ে ফেলাটা নিতান্ত সামান্য ধাক্কা নয় বটে!
‘আন্ডারডগ’ বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সাফল্য
ধারাবাহিক সাফল্য পেতে থাকা বাংলাদেশ ছয় নম্বরে হঠাৎই উঠে আসাতে কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিলো গোটা বিশ্বই। তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো না কারো মনেই। তামিম-সাকিব-রিয়াদ-মুশফিকদের নিয়ে গঠিত অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপের সাথে সাব্বির-মোসাদ্দেক-তাসকিন-মুস্তাফিজদের মতো তরুণ তুর্কিদের নিয়ে গঠিত ওয়ানডে দলটি যে নিজেদের দিনে যেকোনো দলকেই ধ্বসিয়ে দিতে পারে, সেটা জানা ছিলো গোটা বিশ্বেরই। কিন্তু কার্ডিফে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে যেটা ঘটেছিলো, তা খুব সম্ভবত কেউই কল্পনাও করতে পারেননি!
বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি ছিলো ‘ডু অর ডাই’, না জিতলেই টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়তে হতো বাংলাদেশকে। এমনই পরিস্থিতিতে কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেইলরের ব্যাটে চড়ে নিউ জিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া ২৬৫ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে যখন মাত্র ৩৩ রানেই চার উইকেট খুঁইয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ, তখনই ২২৪ রানের জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সবাইকে স্তম্ভিত করে দিয়ে দুর্দান্ত এক জয় ছিনিয়ে আনে বাংলাদেশ।
বেশ কয়েকবার অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরে আসার গুঞ্জন উঠলেও নানা অজুহাতে পিছিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। কখনো পিছিয়েছে নিরাপত্তার অজুহাতে, আবার কখনো এফটিপি ফাঁকা না থাকার অজুহাতে। বহুদিন পর বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে নেমেই ২০ রানের অপ্রত্যাশিত পরাজয়ের স্বাদ পায় ‘ক্যাঙ্গারু’রা। নড়েচড়ে বসে গোটা ক্রিকেট-বিশ্ব, প্রশ্ন ওঠে এটি ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অঘটন কিনা। তবে এই জয়টাকে আদৌ অঘটন বলা যায় কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ নেহায়েত কম নয় বৈকি!
ডেভিড মিলারের দ্রুততম টি-২০ সেঞ্চুরি
সময়টা খুব একটা ভালো কাটছিলো না মিলারের। নিজের ‘কিলার মিলার’ নামটার সার্থকতাটা ঠিক প্রমাণ করতে পারছিলেন না, এমনকি প্রশ্ন উঠছিলো ছক্কা মারার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললেন কিনা তিনি। এমনই এক সময়ে তিনি ঠিক করলেন, এবার জ্বলে উঠবেন।
আর সেই মিলার-অনলে দগ্ধ হলো বাংলাদেশ। শূন্য রানেই প্রথমবার জীবন পাওয়ার পর সুযোগটা লুফে নিলেন তিনি। একের পর এক শট খেলে বাংলাদেশের বোলারদেরকে তটস্থ রাখতে থাকলেন, সঙ্গে নিয়মিত বিরতিতে প্রান্তবদল করে প্রতিপক্ষকে ব্যস্ত রাখছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা বোধহয় জমিয়ে রেখেছিলেন শেষের জন্য।
ততক্ষণে ১৮ ওভার শেষ, বোলিংয়ে এসেছেন গোটা ম্যাচেই দারুণ বোলিং করতে থাকা তরুণ পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। মিলারের রান তখন ২৫ বলে ৫৭, নিঃসন্দেহে কারো দৃষ্টিসীমাতেই শতকটা থাকার কথা নয়। কিন্তু তিনি যে ‘কিলার মিলার’! ক্রুর হাসলেন মনে মনে, এরপর নিজের হাতে ইতিহাস লিখলেন। টানা ৫ বলে ৫টি ছক্কা মেরে সাইফুদ্দিনের ওই ওভার থেকে নিলেন ৩১ রান, এরপরের ওভারে আরো ১৩ রান নিয়ে গড়লেন টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম শতকের রেকর্ড!
রোহিত শর্মার ডাবল ধামাকা
ওয়ানডেতে ‘দ্বিশতক’ পূর্ণ করাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। ২০১৭ সালের শেষ পর্যায়ে এসে শ্রীলংকার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক দ্বিশতকের মাধ্যমে নিজের নামটিকে ওয়ানডে ইতিহাসে পাকাপোক্তভাবে তুলে ফেলেছেন তিনি।
সিরিজে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে ম্যাচটি ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ‘ফ্ল্যাট উইকেট’ পেয়ে বোধহয় গোঁফের নিচে বাঁকা হাসি হেসেছিলেন রোহিত, “এবার জমবে মজা!” এরপর পাওয়ার-হিটিংয়ের দুর্দান্ত প্রদর্শনীতে অনায়াসেই তুলে নিলেন নিজের তৃতীয় ওয়ানডে দ্বিশতক! শুধু এই কথাটুকু আসলে রোহিতের আক্রমণটা বুঝাতে পারে না। সেদিন তাঁর ব্যাট এতটাই প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠেছিলো যে নিজের রানের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি রান তিনি করেছিলেন শেষ দশ ওভারেই!
অথচ কে-ই বা ভেবেছিলো, ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিশতক রান এতটা সহজলভ্য হয়ে উঠবে? আর পেছন ফিরে অতীত ঘাঁটলে যে সেখানে রোহিত শর্মার অবদানটা স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে, সেটা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্যের অবকাশ নেই!
সেখানেই অবশ্য থেমে থাকেননি রোহিত। এরপর টি-টোয়েন্টিতে আরেকটি কুইকফায়ার সেঞ্চুরি করে নিজের সক্ষমতার জানানটা আরেকবার দিলেন তিনি, প্রতিপক্ষ সেই শ্রীলংকা। শুধু তা-ই নয়, সেঞ্চুরিটি করলেন মাত্র ৩৫ বলে! ঠিক ধরেছেন, দু’মাস যেতে না যেতেই মিলারের দ্রুততম শতকের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন রোহিত। এই ইনিংস খেলার পথে রোহিত ১২টি চার এবং ১০টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন, যা তাঁর মোট রানের শতকরা ৯১ শতাংশ! তার চেয়েও বিস্ময়কর তথ্য, তিনি যখন আউট হলেন, ইনিংসের বাকি তখনও প্রায় সাত ওভারেরও বেশি!
টি-টোয়েন্টিতে দ্বিশতক আসতে বুঝি আর খুব বেশিদিন দেরি নেই!
অ্যাশেজে ফিক্সিং-কলঙ্ক
ক্রিকেটানুরাগীদের জন্য অ্যাশেজ নেহায়েত একটি টেস্ট সিরিজ নয়। ‘অ্যাশেজ’ আদি ক্রিকেটের বার্তাবাহক; পেশাদারিত্ব এবং আত্মনিবেদনের চূড়ান্ত এক নিদর্শন। ক্রিকেটবিশ্বের সবচেয়ে মহিমান্বিত এবং প্রাচীনতম টেস্ট সিরিজ, যার জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড শুধু নয়, গোটা ক্রিকেটবিশ্বই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। এই সিরিজের সঙ্গে মিশে আছে মৈত্রী-বৈরিতা, মাঠে ও মাঠের বাইরে নানা ঘটন-অঘটন, তর্কবিতর্ক, আনন্দ-বেদনার নানা কাব্য। তবে ইতিহাসের প্রথমবারের মতো অ্যাশেজের গায়ে এবার লেগেছে ফিক্সিং-কলঙ্কের কালিমা।
পার্থ টেস্ট চলাকালে দ্য সান কর্তৃক হঠাৎই অভিযোগ করে, দুই ভারতীয় বাজিকর নাকি আগেভাগেই একটি আর্টিকেলে কিছু কথা লিখে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে। দ্য সানের দাবি অনুসারে, তাঁদের সাংবাদিককে ওই দুই বাজিকর ১,৪০,০০০ ইউরোর বিনিময়ে তথ্য বিক্রয়ের ইচ্ছা জানিয়েছে। ওই সাংবাদিক সত্যতা সম্পর্কে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয়, ম্যাচের আগে আগে কোনো একটি নির্দিষ্ট ওভারে কত রান হবে, সেটা তাঁকে ঠিকঠাক জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্দ্বিধায় সেগুলোকে সত্যি বলে ধরে নিতে বলেন সেই বাজিকর, এমনকি ক্রিকেটারদেরকে ‘পাণ্ডুলিপি মেনে চলা পুতুলমাত্র’ বলেও আখ্যা দেন তাঁরা।
তবে আইসিসি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এই অভিযোগের সত্যতা পায়নি বলে বিবৃতি দেয়।
পুনেতে পিচবিকৃতি
ভারত বনাম নিউ জিল্যান্ড সিরিজে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের আগে অপ্রত্যাশিত এক বিতর্কের মুখোমুখি হয় ভারত। ‘ইন্ডিয়া টুডে’ টেলিভিশনের সাংবাদিকদের ক্যামেরায় কিউরেটর পান্দুরাং সালগাওকার কর্তৃক পিচ টেম্পারিং করার ভিডিও ফুটেজ ধরা পড়ে। জানা গেছে, ‘ইন্ডিয়া টুডে’ টেলিভিশনের ওই দুই সাংবাদিক বাজিকরের ছদ্মপরিচয়ে কিউরেটরকে গিয়ে বলেন, দুজন বোলার পিচে বাউন্স চান, এই মুহূর্তে সেটা সম্ভব কিনা। উত্তরে কিউরেটর বলেন, “চাইছেন যখন, হয়ে যাবে।”
অভিযোগের সত্যতা পাওয়ামাত্র বিসিসিআই ওই কিউরেটরকে বহিষ্কার করে।
ক্রিকেটে নতুন কিছু নিয়ম
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে আইসিসি কর্তৃক প্রবর্তিত নতুন কিছু নিয়ম কার্যকর করা হয়। উক্ত নিয়মগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
- ক্রিকেট ব্যাটের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে তেমন পরিবর্তন না এলেও ব্যাটের পুরুত্বকে নির্দিষ্ট সীমারেখায় বেঁধে ফেলা হয়। এর ফলে ডেভিড ওয়ার্নারের মতো ব্যাটসম্যান নিজের ব্যাট পরিবর্তনে বাধ্য হন।
- আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নতুন নিয়মানুসারে, কোনো কারণে ইনিংস অন্তত ১০ ওভারের বেশি কর্তন হলে একজন বোলারের কোটা থেকে সর্বোচ্চ দুই ওভার কর্তন করা যাবে।
- ২০১২ সালে বেলের আঘাতে ক্রিকেট ক্যারিয়ারই চিরতরে শেষ হয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী উইকেটরক্ষক মার্ক বাউচারের। তাই উইকেটরক্ষকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এখন থেকে ‘ক্রিকেট বেল’ নরম প্লাস্টিক দিয়ে বানানো হবে।
- ‘অবস্ট্রাক্টিং-দ্য-ফিল্ড’ এবং ‘হ্যান্ডলড-দ্য-বল’ দুই ধরনের আউটকেই এখন থেকে একই ক্যাটাগরিতে দেওয়া হবে।
- ক্রিকেটের নতুন আইনানুসারে, কোনো ক্যাচ ফিল্ডারের হেলমেটে লাগার পর ধরলেও সেটা আউট হবে।
- কোনো বোলারের বল পিচে দু’বার বা তার বেশি বাউন্স খেলে সেটিকে নো বল ডাকবেন আম্পায়ার। এর আগে দু’বারের বেশি বাউন্সে নো বল ডাকার নিয়ম ছিলো।
- ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্যে বল থ্রো করলে শাস্তির সম্মুখীন হবেন বোলার।
- কোনো বোলার ইচ্ছাকৃতভাবে নো-বল করলে সেই ম্যাচে তিনি আর বোলিং করতে পারবেন না।
- এর আগে রানআউট থেকে বাঁচার সময় ডাইভ করার পর কোনোক্রমে ব্যাট উঠে গেলে আউট হতেন ব্যাটসম্যান। এখন থেকে ডাইভ দেওয়ার সময় ব্যাট মাটিতে থাকলে আর ব্যাটসম্যান একবার ক্রিজে পৌঁছে গেলে এমন ক্ষেত্রে তিনি আউট হবেন না।
স্মিথ-কোহলির দ্বৈরথ
দিনশেষে দর্শককে মাঠে আনে ক্রিকেট, সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেন ক্রিকেটাররাই। আর এদিক থেকে এই বছরের অবিসংবাদিত দুই রাজার নাম স্টিভেন স্মিথ এবং বিরাট কোহলি। দুজন রীতিমতো পুতুলনাচ নাচিয়ে ছেড়েছেন বোলারদেরকে, রানবন্যা বইয়ে দিয়ে নিজেদের করে নিয়েছেন গোটা বছরকেই।
দুজনের মধ্যে দৃশ্যমান সামঞ্জস্য বেশ রয়েছে। দুজনই অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন একই সিরিজে, দুজনই অধিনায়ক হিসেবে নিজেদের প্রথম ইনিংসেই শতক হাঁকিয়েছেন। স্মিথ অধিনায়ক হিসেবে যেখানে প্রথম পাঁচ ইনিংসে তিনটি শতক হাঁকিয়েছিলেন, সেখানে কোহলি প্রথম তিন ইনিংসেই শতক হাঁকিয়ে প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। তবে এরপর যেন কিছুটা ‘পিছিয়ে’ পড়লেন কোহলি; ২৭ টেস্টে যেখানে ১৩টি শতক হাঁকিয়েছেন স্মিথ, সেখানে কোহলি ৩১ টেস্টে করতে পেরেছেন ‘মাত্র’ ১২টি শতক! আবার অন্যদিকে ডাবল সেঞ্চুরির দিক থেকে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় উঠেছেন কোহলি, অধিনায়ক হিসেবে করেছেন ছয়টি দ্বিশতক, যার মধ্যে তিনটি ছিলো এই বছরই!
কোহলি এ বছর ১০টি টেস্ট খেলে ৭৫.৬৪ গড়ে করেছেন ১০৫৯ রান, যেখানে একটিমাত্র অর্ধশতকের পাশে শতক ছিলো পাঁচটি! অন্যদিকে স্মিথ ১১ টেস্টে ৭৬.৭৬ গড়ে করেছেন ১৩০৫ রান, যেখানে তিনটি অর্ধশতকের পাশে রয়েছে ছয়টি শতকও! দু’জন মিলে গোটা বছরজুড়েই রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন, টেস্ট ক্রিকেটে হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য! সেটার পরিচয় পাওয়া যায় শুধু একটি পরিসংখ্যান থেকেই। গোটা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ৭৫ বা এর বেশি গড়ে কোনো অধিনায়কের এক বছরে ১০০০ বা এর বেশি রান সংগ্রহের নজির রয়েছে মাত্র আটটি, এর মধ্যে দুটো ঘটেছে ২০১৭ সালেই!
অ্যান্ডারসনের মুকুটে নতুন পালক
বয়স যে কেবলই একটি সংখ্যা, সে কথাটাকেই বিভিন্নভাবে বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব যেন নিজ থেকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন ইংলিশ ফাস্ট বোলার জেমস অ্যান্ডারসন। বয়স ৩৫ ছুঁয়েছেন, ইতোমধ্যে খেলে ফেলেছেন ১৩৩ টেস্ট। তবু জার্সিটা গায়ে দিয়ে মাঠে নামলেই যেন চিরতরুণ হয়ে ওঠেন তিনি, গতি-সুইংয়ে এখনও ব্যাটসম্যানদেরকে রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষায় ফেলেন।
এ বছরই যেমন ১১ টেস্টে মাত্র ১৭.৫৮ গড়ে তুলে নিয়েছেন ৫৫ উইকেট, সাথে আগুনঝরা কিছু স্পেল তো আছেই! ঠিক যেন সেই ২১ বছরের টগবগে তরুণ, বিন্দুমাত্র বদলায়নি মাঠে তাঁর শরীরী ভাষা। এখনো প্রতি ম্যাচে মাঠে নামেন প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেতে, আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করে তুলতে। আর এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর গোটা টেস্ট ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় পেসার এবং প্রথম ইংলিশ বোলার হিসেবে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরপর অ্যাশেজে ‘বক্সিং ডে’ টেস্টে কোর্টনি ওয়ালশের ৫১৯ উইকেটের রেকর্ড টপকে উঠে এসেছেন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় পাঁচ নম্বরে।
নারী ক্রিকেটের জাগরণ
একটা সময় ছিলো, যখন মেয়েরাও ক্রিকেট খেলতে পারে কথাটা শুনলে নাক সিঁটকানোর মানুষের অভাব হতো না। ভ্রূ কুঁচকে নাক উঁচু করে এমনভাবে তাকাতেন কেউ কেউ, মেয়েদের খেলার ইচ্ছের অর্ধেকটা মরে যেতো ওখানেই। সময়টা এখন বেশ বদলেছে, মেয়েরাও এখন পাল্লা দিয়ে ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে। প্রমীলা টেস্ট ক্রিকেট আরম্ভ হয়ে গিয়েছে, সেটাও বেশ কিছুদিন হয়ে গেলো। কিন্তু নামে শুরু হলেও সেই মাপের জনপ্রিয়তাটা কেন যেন ঠিক আসছিলো না। অবশেষে সেটা এলো, সাথে এলো স্বীকৃতিটাও।
শেষ যেবার লর্ডসে প্রমীলা বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো, সেটা প্রায় ২৪ বছর আগের কথা- ১৯৯৩ সালে। সেই ম্যাচে মাত্র হাজার পাঁচেক দর্শকের উপস্থিতিতে খেলা হয়েছিলো, যাতে ইংল্যান্ড নিউ জিল্যান্ডকে পরাজিত করে বিশ্বকাপের স্বাদ পায়। অবশেষে এবার প্রমীলা বিশ্বকাপ ফাইনাল আবারও লর্ডসে অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি পায়, বিস্ময়করভাবে সবগুলো টিকেটও বিক্রি হয়ে যায়! ইংলিশ ক্রিকেটার অ্যালেক্স হার্টলি বলেন, “এটাই প্রমাণ করে, মানুষ প্রমীলা ক্রিকেটকে সত্যিই এখন সিরিয়াসলি নিচ্ছে!”
সে আর বলতে!
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ৫০ ওভারের ওয়ানডে লীগের প্রচলন
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে এ বছরই অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি’র বৈঠকে অনুমোদন পায় বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ২০১৯ সালে এই চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হবে, যাতে শীর্ষ নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশ অংশগ্রহণ করবে। দুই বছরে প্রত্যেকটি দল ছয়টি করে সিরিজ খেলবে, যার মধ্যে তিনটি হবে দেশের মাটিতে এবং বাকিগুলো দেশের বাইরে। আর টুর্নামেন্টের শীর্ষ দুই দল লর্ডসে ফাইনাল খেলবে।
একই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০-২১ মৌসুম থেকে শুরু হবে ১৩ জাতির ওয়ানডে লীগ। দুই বছরব্যাপী এই লীগ চলবে ২০২৩ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত, এমনকি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব হিসেবেও স্বীকৃত হবে এই লীগই। তবে ২০২৩ বিশ্বকাপের পর এই লীগ চলবে তিন বছরব্যাপী, যাতে অংশ নেবে ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লীগের চ্যাম্পিয়ন দলটি।
এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনে সাড়া দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে চারদিনের টেস্ট আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে পরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি দিবারাত্রির চারদিনের টেস্ট খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা।
চারদিনের টেস্ট এবং ব্যর্থ প্রচেষ্টা
টেস্ট ক্রিকেটকে আরো একটু প্রাণোচ্ছ্বল, আরো একটু উত্তেজনাকর করে তুলতে পরীক্ষামূলকভাবে জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে অনুষ্ঠিত একমাত্র দিবারাত্রির টেস্ট খেলানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তবে পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত ওই টেস্টটি শেষপর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি। দেখবে কীভাবে? দু’দিনেই যে সেই গল্পের ইতি ঘটে গিয়েছে!
বেশ পুরনো একটা প্রশ্ন আজকাল মাঝেমধ্যেই উঁকিঝুঁকি মারে- টেস্ট ম্যাচ আসলে কতদিন ধরে চলা উচিত? একটা সময় ছিলো, যখন ‘টাইমলেস টেস্ট’ ছিলো, অর্থাৎ কোনো বাঁধাধরা সময় ছিলো না। এরপর যথাক্রমে ছয়দিনের এবং চারদিনের ম্যাচ পরীক্ষামূলকভাবে চলার পর অবশেষে ১৯৭২-৭৩ সাল নাগাদ পাঁচদিনের ম্যাচে এসে থিতু হলো টেস্ট ক্রিকেট। তবে দিবারাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের প্রচলন হওয়ার পর এই প্রথম চারদিনের টেস্ট ম্যাচের চেষ্টা করা হলো, যাতে ডাহা ফেল মেরেছে জিম্বাবুয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ইনিংস ও ১২০ রানের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছে। সঙ্গে এটাও কিছুটা হলেও প্রতীয়মান, অন্তত আরো কিছুদিনের মধ্যে এই ফরম্যাট চালু হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা নেই।
আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের টেস্ট স্ট্যাটাস
আফগানিস্তান এখন গোটা বিশ্বের কাছে বিশাল এক বিস্ময়। প্রতি বছরই কোনো না কোনো বিস্ময় উপহার দিতে ভুলছে না যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি। এ বছরই যেমন হুট করেই পেয়ে বসলো টেস্ট স্ট্যাটাস!
নাহ, ‘হুট করে’ শব্দজোড়া ঠিক যেন যাচ্ছে না আফগানিস্তানের সঙ্গে। আফগানিস্তান এখন দারুণ এক উঠতি শক্তি, ধীরে ধীরে বিকাশমান ক্রিকেট কাঠামো, সাথে একঝাঁক দারুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার- সব মিলিয়ে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় থাকা যাকে বলে, সেটাই হলো। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই চিন্তাভাবনা চলছিলো নতুন দুটি দেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস দেওয়ার, আর ঠিক এমন সময়ই আফগানিস্তানের উত্থান। ফলাফলও তাঁরা পেয়ে গেলো হাতেনাতেই, মিললো টেস্ট স্ট্যাটাস।
আফগানিস্তানের সাথে টেস্ট স্ট্যাটাস মিলেছে আয়ারল্যান্ডেরও। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে আয়ারল্যান্ডের নাম, তবে ব্যাটে-বলে ঠিক মিলছিলো না। অবশেষে এবার আফগানিস্তানের সাথে সাথে ভাগ্যের শিঁকে ছিড়লো আয়ারল্যান্ডেরও। তাই পাকিস্তানের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের এবং ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের টেস্ট অভিষেক যে ২০১৮ সালের সবচেয়ে বড় আকর্ষণগুলোর একটি হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
শততম টেস্টে বাংলাদেশের জয়
এ বছরই নবম দল হিসেবে শততম টেস্ট খেললো বাংলাদেশ। এর আগে যে দেশগুলো অন্তত একশটি টেস্ট খেলার সৌভাগ্য অর্জন করেছে, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুততম সময়ে (১৬ বছর ৪ মাস ৬দিন) শততম টেস্ট খেলেছে। সবচেয়ে বেশি পরাজয় (৭৬) এবং সবচেয়ে কম ড্র (১৫)-এর মতো লজ্জাজনক রেকর্ড গড়লেও শততম টেস্টের মতো ঐতিহাসিক একটি ঘটনাকে বাংলাদেশ বর্ণিল করে রেখেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক অসাধারণ জয়ের মধ্য দিয়ে।
সময়টা কিছুটা ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ছিলো, আগের টেস্টে ব্যর্থতার জের ধরে গুরুত্বপূর্ণ এই টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়েন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দুই সেনানী মুমিনুল হক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর মাহমুদউল্লাহ আদৌ স্কোয়াডে আছেন কি নেই, তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো, আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা, টেস্ট শুরুর আগে দলীয় ফটোসেশনে মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতি বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। তবে মাঠের বাইরের এই অস্থিরতা মাঠে সেভাবে প্রভাব ফেলেনি, ব্যাটে-বলে দারুণ দাপট দেখিয়ে ম্যাচটি জিতে নেয় বাংলাদেশ।
অতঃপর ‘ভিরানুষ্কা’
বিরাট কোহলি এবং আনুশকা শর্মা- দুই ভুবনের দুই হার্টথ্রব। একজন ব্যাট হাতে কাঁপান কয়েক কোটি ক্রিকেট ভক্তের হৃদয়, আরেকজন রূপালি পর্দায় মাতিয়ে রাখেন কয়েক কোটি যুবকের হৃদয়। দুজনই নিজ নিজ ভুবনে অন্যতম সেরা, দুজনই দারুণ সফল। আর গত বছর গোটা সময়টা জুড়েই নানাভাবে শিরোনামে ছিলেন দু’জনই। রীতিমতো ঈর্ষণীয় ভালোবাসার নজির স্থাপন করে বিরাটের খেলা দেখতে বিশ্বের নানা প্রান্তে হাজির হয়ে গিয়েছেন আনুশকা, আবার খেলা শেষ করেই বিরাটও ছুটে গিয়েছেন আনুশকার কাছে। অবশেষে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর গাঁটছড়া বাধলেন দুজনে। ‘হাই-প্রোফাইল’ এই বিয়ে যে ২০১৭ সালের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এবং ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’
সব শেষে এবার পালা ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’-এর। কারা হতে পারেন এই পুরষ্কারটির যোগ্য দাবিদার? বিরাট কোহলি কিংবা স্টিভ স্মিথ, যারা গোটা বছর জুড়েই রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন? আফগানিস্তানের তরুণ তুর্কি রশিদ খান, যিনি তাঁর কবজির মায়াজালে গোটা বছরজুড়েই মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন ক্রিকেটভক্তদের? নাকি প্রমীলা ক্রিকেটের জাগরণ ঘটা এই বছরের অন্যতম সেরা দুই পারফরমার দীপ্তি শর্মা কিংবা এলিসিয়া পেরি, যারা ব্যাটে-বলে রেখেছেন দারুণ সামর্থ্যের স্বাক্ষর?
নাহ, এদের মধ্যে সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন পর্দার আড়ালের একজন। শ্রীনিবাসনের একের পর এক হঠকারী সব সিদ্ধান্তে যখন খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো ক্রিকেট, আইসিসি যখনই গ্রহণযোগ্যতা হারাতে শুরু করেছিলো, তখন ত্রাণকর্তা হয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন শশাঙ্ক মনোহর। এ বছর নিজের অসাধারণ কূটনৈতিক ক্ষমতার নিদর্শন রেখে ‘তিন মোড়ল’ তত্ত্বের অবসান ঘটিয়েছেন, অধিকাংশ ক্রিকেট বোর্ডের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে দারুণ একটি এফটিপি ক্যালেন্ডার তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন, বহুদিন ধরে অপেক্ষমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ওয়ানডে লীগের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন, বিশ্বায়নের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে টেস্ট খেলুড়ে পরিবারের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন, সর্বোপরি স্বীয় সুখ্যাতি, কূটনীতি এবং কৌশলগত অবস্থানের মাধ্যমে গোটা ক্রিকেটবিশ্বের উপর বিসিসিআই এর অযাচিত ছড়ি ঘোরানোর অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। যদি কোনো কারণে ২০১৭ সাল ক্রিকেট ইতিহাসে অমর হয়ে থাকার যোগ্যতা অর্জন করে থাকে, সেই কৃতিত্বের সবচেয়ে বড় দাবিদার তিনিই। আমাদের চোখে তাই ‘ম্যান অফ দ্য ইয়ার’ তিনিই, আইসিসি প্রেসিডেন্ট ‘দ্য গ্রেট’ শশাঙ্ক মনোহর!
ফিচার ইমেজ: New Indian Express