একটা সময় ছিল যখন অন্যান্য পজিশনের ফুটবলারদের তুলনায় ফুলব্যাকদের ভূমিকা ছিল অনেকটাই উপেক্ষিত। তাদের রোল প্রতিপক্ষ উইঙ্গারদের টাইট মার্ক করে ক্রস করার সুযোগ না দেওয়া এবং মাঝেমধ্যে প্রতিপক্ষ অর্ধে ওভারল্যাপ করে ক্রস করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ কিন্তু মডার্ন ফুটবলে সবচেয়ে বড় বিবর্তন ঘটে ফুলব্যাকদের ভূমিকায়, বর্তমান সময়ের ফুলব্যাকরা প্রতিপক্ষ উইঙ্গারদের মার্ক করা আর উপরে উঠে ক্রস করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে দলের বিল্ডআপের সময় ইনভার্টেড ফুলব্যাক রোলে সেকেন্ডারি মিডফিল্ডারের মতো বিল্ডআপে অংশ নিচ্ছে এবং হাইলাইনে উঠে বলের দখল হারালে প্রতিপক্ষের কাউন্টারের সামনে শিল্ডের মত কাজ করছে।
মডার্ন ফুটবলে ফুলব্যাকদের অনেক বিবর্তন ঘটলেও বাংলাদেশের ফুলব্যাকদের ক্ষেত্রে সেটা প্রতিপক্ষের উইঙ্গারদের আক্রমণ নষ্ট করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এর মধ্যেও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম হচ্ছে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের তরুণ লেফটব্যাক ইয়াসিন আরাফাত। খেলার ধরনে সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বাংলাদেশে কখনোই সেভাবে টেকনিক্যালি সলিড ফুলব্যাক উঠে আসেনি। কিন্তু এর মধ্যেও ইয়াসিন আরাফাতের সবচেয়ে বড় গুণাবলী হচ্ছে তার টেকনিক্যাল দক্ষতা। একজন ফুলব্যাককে যেমন দলের রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি আক্রমণেও সমানভাবে অবদান রাখতে হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তার আদর্শ বিজ্ঞাপন হতে পারেন সাইফ স্পোর্টিংয়ের এই তরুণ। ২০-২১ সিজনে প্রিমিয়ার লিগ এবং ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়ে ২২ ম্যাচে ৪ গোল এবং ৩ অ্যাসিস্ট দলের আক্রমণে তার সামর্থের জানান দেয়।
ক্যারিয়ারের শুরুতে লেফট উইংব্যাক রোলে খেলতে শুরু করলেও বর্তমানে বেশিরভাগ ম্যাচেই ইয়াসিনকে লেফটব্যাক এমকি কখনো কখনো থ্রি ম্যান ব্যাকলাইনে লেফট সেন্টারব্যাক রোলেও খেলতে দেখা গেছে।
চান্স ক্রিয়েশন
সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের মতো মাঝারি মানের ক্লাবের ডিফেন্ডার হয়েও এই সিজনে লিগে ১৬ ম্যাচে তিন অ্যাসিস্ট ফাইনাল থার্ডে ইয়াসিনের সামর্থ্যকে ভালোভাবেই জানান দেয়। বাংলাদেশের অন্যান্য ডিফেন্ডারদের সাথে চান্স ক্রিয়েশন এবং দলের বিল্ডআপে অবদান রাখার ক্ষেত্রে ইয়াসিন আরাফাতের পার্থক্য বোঝানোর জন্য চলুন একটি উদাহরণ দেখানো যাক।
এই ছবিতে নেপালের সাথে ট্রাইনেশন ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে লেফটব্যাক রোলে খেলা রিমন হোসেনের পাসিং ম্যাপ দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, রিমনের প্রায় সবগুলো পাসই ব্যাকপাস অথবা স্কয়ার পাস। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রিস্কি মুভ করতে অনীহা দেখা গেছে। মাঝেমধ্যে ওভারল্যাপ করে নেপালের থার্ডে গেলেও মিডফিল্ডারদের সাথে একেবারেই লিঙ্ক করতে পারেননি। যে কারণে ৫২ মিনিট খেলেও নেপালের বক্স এরিয়ায় তো দূরের কথা, নেপালের হাফেও রিমনের পাসের সংখ্যা শূন্য।
সেকেন্ড হাফের শুরুতেই রিমন ইনজুরিতে পড়লে তার জায়গায় মাঠে নামেন ইয়াসিন। এই ছবিতে ইয়াসিনের পাসিং ম্যাপ দেখানো হয়েছে। ইয়াসিন বেশ কয়েকবারই নেপালের বক্সে গোলস্কোরিং চান্স ক্রিয়েট করেছেন। কিন্তু নেপালের বক্সে বাংলাদেশের কোনো টার্গেটম্যান না থাকার কারণে ইয়াসিনের বেশিরভাগ পাসগুলোই নেপালের ডিফেন্ডাররা অ্যান্টিসিপেট করে ফেলে।
প্রতিপক্ষের অর্ধে টাইট স্পেসের মধ্যেও টিমমেটকে লক্ষ্য করে থ্রু পাস দেওয়া কিংবা উইং এরিয়া থেকে অ্যাকুরেট ক্রস করার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অনেক ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডারের চেয়েও ইয়াসিন আরাফাতের ভিশন এগিয়ে থাকবে।
রহমতগঞ্জের হাফে লেফট হাফস্পেস থেকে কেনেথকে লক্ষ্য করে ইয়াসিনের ভিশনারি লং বল। রহমতগঞ্জের ডিফেন্সিভ লাইন ঠিক না থাকায় একটা থ্রু পাস থেকেই রহমতগঞ্জের টাইট ডিফেন্ড আনলক হয়ে যায়।
লেফট সাইড থেকে বক্সের বাইরে ওকোলিকে লক্ষ্য করে ইয়াসিনের গ্রাউন্ড লং বল। এই পাসের মাধ্যমেও ইয়াসিনের দুর্দান্ত ভিশনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
নেপালের সাথে ম্যাচে জামালের পাস ধরে ইয়াসিন ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে আসেন এবং নেপালের বক্সে ফ্রি-স্পেসের মধ্যে ভিশনারি ক্রস করেন। কিন্তু নেপালের বক্সের আশেপাশে বাংলাদেশের কোনো স্ট্রাইকার না থাকায় খুব সহজেই নেপালের ডিফেন্ডার ক্রসটি অ্যান্টিসিপেট করে ফেলেন।
লেফট উইং থেকে সাজ্জাদের মুভমেন্ট লক্ষ্য করে ইয়াসিন রহমতগঞ্জের বক্সের ফ্রি-স্পেসে ক্রস করেন। এখানে ইয়াসিনের ভিশনের আরেকটি দুর্দান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়। ইয়াসিনের সামনে রহমতগঞ্জের তিনজন খেলোয়াড় ছিলেন। এখানে ইয়াসিনের পরিবর্তে যদি বাংলাদেশের অন্য কোনো ফুলব্যাক থাকতেন, তবে হয় ব্যাকপাস দিতেন, অথবা পাশের টিমমেটকে স্কয়ার পাস দিতেন। কিন্তু ইয়াসিন এত দূর থেকেও সাজ্জাদের মুভমেন্ট ট্র্যাক করেন এবং সেখান থেকে দ্রুত লং ক্রস সার্কুলেট করেন।
গোলস্কোরিং এবং ফিনিশিং
বাংলাদেশের ফুলব্যাকরা প্রতিপক্ষ বক্সে যাওয়ার খুব বেশি সুযোগ পান না। তার মধ্যেও এই সিজনে মাত্র ২২ ম্যাচেই ৪ গোল ইয়াসিনের লিথ্যাল ফিনিশিং সামর্থ্যের প্রমাণ করে। বাংলাদেশের ফুটবলারদের বাজে শুটিং দক্ষতা যেখানে সহজাত বিষয়, সেখানে ইয়াসিন তার ক্যারিয়ারে বক্সের বাইরে থেকে লং রেঞ্জ শটেই বল জালে জড়িয়েছেন বেশ কয়েকবার।
ইয়াসিনের ফিনিশিং দক্ষতার পাশাপাশি টিমমেটের লং বল দ্রুত কন্ট্রোলে নিয়ে ফরোয়ার্ড মুভমেন্টও প্রশংসার দাবিদার।
ডানপাশ থেকে রাখমোতুল্লায়েভ লং থ্রু-বল দিলে ইয়াসিন মিডফিল্ড থেকে ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে আসেন।
দ্রুত বলের কন্ট্রোল নিয়ে কুইক রান নিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডার নাসিরকে বিট করে সেন্টারে কাট-ইন করেন।
নাসিরকে বিট করে সেকেন্ড বারে বামপায়ে কার্ভড শট অ্যাটেম্পট নেন এবং গোল করে ফেলেন।
এখানে ইয়াসিন লেফট হাফস্পেস ধরে ওভারল্যাপ করে উঠলেও ফাহিমের কুইক পাস রিড করে সেন্ট্রাল এরিয়ায় কাট-ইন করেন এবং দুই-তিন টাচেই বল কন্ট্রোল করে বক্সে শট অ্যাটেম্পট নেন এবং গোল করে ফেলেন।
নেপালের বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিপক্ষ বক্সের বাইরে নেপালের ডিফেন্ডার রবি পাসওয়ানকে কুইক ট্যাকল করে দ্রুত বলের দখল নিয়ে বক্সের বাইরে ক্রাউডেড এরিয়ার মধ্যেই দুর্বল ডান পায়ে ইয়াসিনের দুর্দান্ত শট। শটটি যদিও একটুর জন্য অফ-টার্গেট ছিল, কিন্তু বাংলাদেশি কোনো ডিফেন্ডারের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ বক্সের বাইরে এমন আগ্রাসন সাধারণ ক্ষেত্রে কখনো দেখা যায় না।
যেকোনো দলের ক্ষেত্রেই সেটপিস টেকাররা সাধারণত দলের সবচেয়ে দক্ষ শ্যুটার হয়ে থাকেন। ইয়াসিন আরাফাত নিয়মিতই সাইফ স্পোর্টিংয়ের হয়ে ডানপাশের কর্নার কিকগুলো নিয়ে থাকেন এবং জামাল ভূইয়ার পাশাপাশি লং রেঞ্জের ফ্রি-কিকও নিয়ে থাকেন।
ফেডারেশন কাপে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে ম্যাচে বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে সাইফ স্পোর্টিং ফ্রি-কিক পেলে ইয়াসিন আরাফাত শট নেন এবং বাম পায়ের কার্ভড শটে গোল করে ফেলেন।
ওভারল্যাপিং রান এবং স্পেস ক্রিয়েশন
ইয়াসিন আরাফাতের আরেকটি বড় গুণাবলি হচ্ছে তার অফ দ্য বল মুভমেন্ট এবং ওভারল্যাপিং রান। যখন প্রতিপক্ষের খেলোয়াররা বল হোল্ডারকে প্রেস করতে থাকেন, তখন ইয়াসিনের কুইক ফরোয়ার্ড রান প্রতিপক্ষ খেলোয়ারদের কনফিউজড করে দেয় এবং বল হোল্ডার ড্রিবল করে ফরোয়ার্ড মুভ করার মতো স্পেস পেয়ে যান।
নেপালের সাথে ট্রাইনেশন কাপের ফাইনাল ম্যাচে ইয়াসিন নেপালের ক্রস দুর্বলভাবে ক্লিয়ার করেন। সেখান থেকে জামাল বল পেয়ে ফরোয়ার্ড মুভ করেন। ছবির দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, ইয়াসিন জামালের অনেক পেছন থেকে ক্ষিপ্রতার সহিত ওভারল্যাপিং রান নেন হাফ-স্পেস ধরে।
ইয়াসিনের ওভারল্যাপিং রানের কারণে নেপালের মিডফিল্ডারের জামালকে ব্লক করবে নাকি ইয়াসিনকে ট্র্যাক করবে – এই দ্বিধার কারণে জামাল অনেকটা ফ্রি-স্পেস পেয়ে যান। ফ্রি স্পেসে জামালের থ্রু-পাস থেকে ইয়াসিন ভালো একটি আক্রমণ তৈরি করেন।
লেফট হাফ-স্পেসে ফাহিম বল পেলে ইয়াসিন ওয়াইড এরিয়া দিয়ে ওভারল্যাপিং রান নেন। ফলে মোহামেডানের একজন ডিফেন্ডার ফাহিমকে মার্ক না করে ইয়াসিনকে ট্র্যাক করতে যান এবং ফাহিম জোন-১৪’এর বাইরে ফ্রি-স্পেসে কাট-ইন করার সুযোগ পেয়ে যান।
লেফট হাফ-স্পেসে ফাহিম বল পেলে ইয়াসিন ওয়াইড এরিয়া দিয়ে ওভারল্যাপিং রান নেন। ফলে মোহামেডানের একজন ডিফেন্ডার ফাহিমকে মার্ক না করে ইয়াসিনকে ট্র্যাক করতে যান এবং ফাহিম জোন-১৪’এর বাইরে ফ্রি-স্পেসে কাট-ইন করার সুযোগ পেয়ে যান।
দুর্বলতা
-
সঠিক সময়ে ট্র্যাকব্যাক না করা
বিল্ডআপের সময় দল বলের দখল হারালে সাথে সাথে ট্র্যাকব্যাক করার ক্ষেত্রে ইয়াসিনের বেশ অনীহা দেখা যায়। এ কারণে তার দলের ডিফেন্সলাইন ডিসঅর্গানাইজড হয়ে পড়ে এবং প্রতিপক্ষ সহজেই ডিফেন্সলাইনের মাঝে গ্যাপ তৈরি করে আক্রমণে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়।
এখানে বিল্ডআপের সময় ইয়াসিন হাইলাইনে উঠে গেলেও মোহামেডানের কাউন্টার অ্যাটাকের সময় নিচে ড্রপব্যাক করেননি, ফলে সাইফের ডিফেন্সিভ লাইনে গ্যাপ পড়ে গিয়েছে এবং মোহামেডান সহজেই সাইফের ডিফেন্সিভ লাইন ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয়েছে।
এখানে হাইলাইনে থাকার সময় রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডারের লং বল ইয়াসিন ঠিকভাবে ট্র্যাক করতে পারেননি। ফলে রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ড ফাইনাল থার্ডে ফ্রি-স্পেস পেয়ে যান এবং অ্যাটেম্পট নেন। অথচ এখানে ইয়াসিনের সুযোগ ছিল স্পিডি মুভ করে রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ডকে ট্যাকল করার।
বাংলাদেশের বক্সের মধ্যে নেপালের অঞ্জন বিস্তা মার্কার ফ্রি হয়ে থাকলেও ইয়াসিন বক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এক্ষেত্রে অঞ্জনের কাছে একটি পাস খুব সহজেই বাংলাদেশেন ডিফেন্সলাইন আনলক করে দিত এবং অঞ্জন সহজেই গোল করার সুযোগ পেয়ে যেতেন।
-
দুর্বল ম্যান মার্কিং এবং আগ্রাসী মনোভাবের অভাব
ইয়াসিনের আরেকটি বড় দুর্বলতা হচ্ছে টাইট ম্যানমার্কিং করতে অনীহা। ডিফেন্ডিংয়ের সময় প্রতিপক্ষ উইঙ্গারকে মার্ক করলেও বেশিরভাগ সময়ই প্রতিপক্ষের সাথে গ্যাপ বেশি থাকায় প্রতিপক্ষ উইঙ্গার সহজেই ড্রিবলিং করে ইয়াসিনকে বিট করার মত স্পেস তৈরি করে ফেলেন।
উপরের ছবিটাই ইয়াসিনের দুর্বল ম্যান মার্কিংয়ের আরেকটি প্রমাণ। চট্রগ্রাম আবাহনীর উইঙ্গারের সাথে ইয়াসিনের পজিশন গ্যাপ অনেক বেশি। এ কারণে তিনি বল কন্ট্রোলে নিয়ে টার্ন করে ড্রিবলিং করে বক্সে ঢোকার মতো অনেকটা সময় পান। কিন্তু ইয়াসিন যদি টাইট মার্ক করতেন তবে তার পক্ষে বল কন্ট্রোলে নিয়ে বক্সে টার্ন করার সুযোগ অনেক কমে যেত।
আবার ধরুন উপরের ছবিটি। এখানে ইয়াসিন অনেকটা সময় পাওয়ার পরও চট্টগ্রাম আবাহনীর উইঙ্গারকে ট্যাকেল করে বল পুনরুদ্ধারের কোনো চেষ্টা করেননি, বরং তাকে টাইট মার্ক না করে নিজের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে ফ্রি মুভ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
ইয়ং এলিফেন্ট এফসির মিডফিল্ডার অনেকটা ফ্রি-স্পেস পাওয়ার পরও ইয়াসিন তাকে একেবারেই মার্ক না করে তার মুভমেন্টকে ফ্রি করে দিয়েছেন। ফলে তিনি খুব সহজেই জোন-১৪ দিয়ে দ্রুত ফরোয়ার্ড মুভ করে এরিয়াল বলে ইয়াসিনকে বিট করে গোল করে ফেলেন।
এখানে হাইলাইনে থাকার সময় রহমতগঞ্জের মিডফিল্ডারের লং বল ইয়াসিন ঠিকভাবে ট্র্যাক করতে পারেননি। ফলে রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ড ফাইনাল থার্ডে ফ্রি-স্পেস পেয়ে যান এবং অ্যাটেম্পট নেন। অথচ এখানে ইয়াসিনের সুযোগ ছিল স্পিডি মুভ করে রহমতগঞ্জের ফরোয়ার্ডকে ট্যাকল করার।
এখানে রহমতগঞ্জের উইঙ্গারকে মার্ক করলেও তার সাথে ইয়াসিনের দূরত্ব বেশ বেশি হওয়ায় তিনি সহজেই ইয়াসিনকে ড্রিবল করে বক্সে ঢুকে যান এবং শট অ্যাটেম্পট নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। এক্ষেত্রে ইয়াসিন যদি টাইট মার্ক করতেন, তবে এভাবে ড্রিবলে বিট হতেন না।
এখানে ইয়ং এলিফেন্ট এফসির ফরোয়ার্ডের সাথে ইয়াসিনের দূরত্ব বেশি হওয়ায় তিনি ইন-বিটুইন-দ্য-লাইনে এসে বলের কন্ট্রোল নিয়ে টার্ন করার সুযোগ পেয়ে যান এবং ইয়াসিনের পক্ষে তাকে ট্যাকল করে বলের দখল নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
বলের লাইনে থাকার পরও ইয়াসিন আরাফাত মোহামেডানের ফরোয়ার্ডের কাছে এরিয়াল ক্রসে বিট হন এবং মোহামেডান ফরোয়ার্ডের ফ্রি হেডারে গোলস্কোরিং সুযোগ তৈরি হয়ে যায়।
বল নিজের দখলে থাকা এবং ক্লিয়ার করার মতো যথেষ্ট সময় পাওয়ার পরও ইয়াসিন নিজেদের বক্সের ফাঁকা জায়গায় দুর্বলভাবে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন এবং সেই ফাঁকা জায়গায় বল পেয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর রাকিব সহজেই গোল করে ফেলেন।
বাংলাদেশে কখনোই সেভাবে টেকনিক্যালি শক্তিশালী এবং আক্রমণাত্মক ফুলব্যাক উঠে আসেনি। এর মধ্যেও উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ইয়াসিন আরাফাত৷ মাত্র ৪৭ ম্যাচের ক্লাব ক্যারিয়ারেই ৬ গোল এবং ৮ অ্যাসিস্ট আক্রমণে তার দুর্দান্ত ভূমিকা এবং প্রখর ফিনিশিংয়ের বড় প্রমাণ। ডিফেন্সিভলি বেশ কিছু দুর্বলতা থাকলেও ক্যারিয়ারের শুরুর তুলনায় ধীরে ধীরে এখন সেসব ক্ষেত্রেও পরিণত হয়ে উঠছেন ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ লেফটব্যাক। আক্রমণে প্রখরতার পাশাপাশি ডিফেন্সিভলি আরেকটু উন্নতি করতে পারলে এবং এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে নিঃসন্দেহেই একদিন হয়ে উঠতে পারবেন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ফুলব্যাকদের একজন।