আপনার হাতের ফোনটি কীসের ভিত্তিতে চলে? আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ফোন কোন ক্যাটাগরির? এরকম বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনি পাবেন আজকের এই আলোচনায়। সেই সাথে নতুন একটি দুনিয়ার সন্ধানও পেতে পারেন টেক নার্ড না হলে।
মূল আলোচনায় যাবার পূর্বে চলুন কিছু পরিসংখ্যান জেনে নিই। তবে এরও পূর্বে জানতে হবে ফোনের ক্যাটাগরি। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের ফোন সাধারণত তিনটি ক্যাটাগরির হয়ে থাকে।
সেলফোন
এই ফোন ব্যবহার করে কল করা যায় এবং টেক্সটের আদান-প্রদান করা যায়। এর বাইরে এর কোনো ধরনের কাজ নেই বললেই চলে। এটি সি এবং সি++ এর সমন্বয়ে গঠিত একটি এম্বেডেড সিস্টেম চালিত।
ফিচার ফোন
ফিচার ফোন সেলফোন থেকে একটু উন্নত ধরনের। এতে জাভা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়। ফোন বা টেক্সট মেসেজিং ছাড়াও আরো কিছু সুবিধা এতে পাওয়া যায়। যেমন, প্রথমবারের মতো ক্যামেরা ব্যবহার, অডিও, ভিডিও প্লেয়ার ইত্যাদি।
স্মার্টফোন
এবং অবশেষে হালের স্মার্টফোন। স্মার্টফোন সাধারণত অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, উইন্ডোজ ইত্যাদি মাধ্যমে চালানো হয়।
***
চলুন, এবার কিছু পরিসংখ্যানের দিকে নজর দেয়া যাক।
সারা বিশ্বে সক্রিয় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩.৫ বিলিয়ন। আবার মোট মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪.৭৮ বিলিয়ন। অর্থাৎ প্রায় ১.২৮ বিলিয়ন মানুষ এখনো সেলফোন বা ফিচার ফোন ব্যবহার করে। ফিচার ফোন বা সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না, এটা কম-বেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু পৃথিবীর বৃহৎ একটি অংশ এখনো ফিচার ফোন অথবা সেলফোনের উপর নির্ভরশীল। তাদেরকে কী করে ইন্টারেনেটের আওতায় আনা যাবে, এটি নিয়ে প্রতিনিয়তই চলছে গবেষণা। কেননা, সামনের পৃথিবী হতে যাচ্ছে আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস)-নির্ভর। সেই পৃথিবীকে ফলপ্রসূ করতে হলে সবাইকে ইন্টারনেটের আওতায় নিয়ে আসা খুবই জরুরি।
আবার ফিচার ফোনে ইন্টারনেট চালাতে হলে প্রয়োজন অ্যান্ড্রয়েড বা উইন্ডোজের মতো কোনো কমপ্লেক্স অপারেটিং সিস্টেম, যা আদতে সম্ভব নয়। কেননা, ফিচার ফোন বা সেলফোনে র্যাম-রম খুবই কম। তাই এই প্রকল্পকে সফলতা দিতে মজিলা ফায়ারফক্সের একদল ডেভেলপার তৈরি করলেন একটি লাইটওয়েট অপারেটিং সিস্টেম। নাম দেয়া হলো কাই ওএস।
কাই ওএস নামটি মূলত চীনা এক ব্যক্তির নাম থেকে, যার নাম 开 (kāi)। এর অর্থ উন্মুক্ত। ফায়ারফক্স ওএস অবশ্য বলছে, এটি ভুল করে হয়েছে। তবে যেভাবেই হোক না কেন, কাই ওএস একটি ওপেন প্লাটফর্ম। এই অপারেটিং সিস্টেমটির প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘সবার জন্য ইন্টারনেট’। সত্যিকার অর্থেই এই অপারেটিং সিস্টেমে চলা ডিভাইসে আপনি পাবেন থ্রিজি এবং ফোরজি সুবিধা। সেই সাথে চালাতে পারবেন প্রায় অধিকাংশ বহুল ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন। যেমন: ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ইত্যাদি। সেই সাথে আপনি গুগলের যাবতীয় সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টের সেবাও পাওয়া যাবে অপারেটিং সিস্টেমটিতে।
কাই ওএস মূলত লিনাক্স কার্নেলভিত্তিক গঙ্ক ডিস্ট্রোর একটি অপারেটিং সিস্টেম, যেখানে প্রতিটি অপারেশন সংঘটিত হয় ওয়েবসাইটে। অর্থাৎ, ফোনের অভ্যন্তরে শুধুমাত্র কিছু ক্যাশ মেমোরি ব্যতীত আর কিছুই থাকে না। গঙ্ককে বলা যায় অপারেটিং সিস্টেমটির ‘ব্ল্যাকবক্স’।
কাই ওএসের ফ্রন্টএন্ড ডিজাইনে ব্যবহৃত হয় ‘গাইয়া’, যা কাই ওএসের ইউজার ইন্টারফেস।কাইস্টোরের প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশনই ওয়েবভিত্তিক। এইচটিএমএল, সিএসএস এবং জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে তৈরি করা এসব অ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং সার্ভারেই সীমাবদ্ধ থাকে, ফলে শুধুমাত্র একটি শর্টকাটের মাধ্যমেই অ্যাপ্লিকেশনের সেবা পৌঁছে দিয়ে থাকে। এখানে মূলত বুট টু গিকো নামক একটি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। গিকো ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেম কর্তৃক তৈরি করা একটি প্রযুক্তি, যা এইচটিএমএল, সিএসএস এবং জাভাস্ক্রিপ্টকে রেন্ডার করে গ্রাহককে প্রদর্শন করে। নেটওয়ার্ক, গ্রাফিক্স, লেআউট, বিভিন্ন এপিআই কানেকশনসহ অভ্যন্তরীণ প্রায় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে গিকো।
সারা বিশ্বের প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষের হাতের ফিচার ফোনে কাই ওএস এর মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া যেতে পারে ইন্টারনেট সেবা। ইতোমধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপারেটিং সিস্টেমের তকমা দখল করে নিয়েছে কাই ওএস। ২০১৮-তে মার্কেটে এসে ইতোমধ্যে ভারতের বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা অ্যাপলের আইওএসকে ঠেলে দিয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। ভারত এবং আফ্রিকায় এখন পর্যন্ত ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের হাতে পৌঁছে গিয়েছে কাই ওএস।
স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়, গুগলের তৈরি করা অ্যান্ড্রয়েডের সাথে কি তাহলে পাল্লা দিতে যাচ্ছে কাই ওএস? নাকি হুয়াওয়ের নিয়ে আসা হংমেং বা ওক ওএস এসে বিপত্তি বাড়াবে এখানটায়? সেটা যা-ই হোক না কেন, আগামীতে আমরা অ্যান্ড্রয়েডের একাধিপত্য থেকে বেরিয়ে কিছুটা অন্যরকম স্বাদ পেতেই পারি। সময়ই বলে দেবে অপারেটিং সিস্টেমের রাজত্বে কে কতটুকু ভাগ বসাতে পারবে।