প্রথম পর্বটি দেখুন এখানে: ইংল্যান্ডের স্বপ্নযাত্রার শেষ এখানেই? | প্রথম পর্ব
[প্রথম পর্বে উঠে এসেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ইংল্যান্ড দলের স্বপ্নযাত্রার পেছনের গল্পগুলো। দ্য ক্রিকেট মান্থলিতে প্রকাশিত দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে উঠে এসেছে ইংল্যান্ডের এই স্বপ্নযাত্রার ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও শঙ্কাগুলো।]
যে স্বপ্নযাত্রার শুরুটা হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে, যে স্বপ্নযাত্রার চূড়াটা ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে, সেই স্বপ্নযাত্রার শেষ এখানেই? ইংল্যান্ডের এই স্বপ্নযাত্রা কি চলবে আরো অনেকদিন, নাকি দারুণ এই যাত্রাটার ইতি এখানেই? নাকি নতুন শুরুটা এখানেই?
ওয়ানডের গুরুত্ব কমে গেছে ইংল্যান্ডের কাছে?
চার বছর আগের লর্ডসের ঐ ফাইনালের পর থেকে ইংল্যান্ডের কাছে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের গুরুত্ব যেন কমে গেছে অনেকটাই। ঐ বিশ্বকাপের পর দুটো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, ইংল্যান্ডের নজরও টি-টোয়েন্টির ওপর পড়েছে অনেকটাই। আর ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে রব কী-এর নিয়োগের পর থেকে টেস্ট ক্রিকেটকেই ইংল্যান্ড অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ৫০ ওভারের ফরম্যাটটা গুরুত্ব হারিয়েছে অনেকটাই। সর্বশেষ তিন বছরে এই ফরম্যাটের সাথে মিলে যাচ্ছে একশত বলের ক্রিকেট ‘দ্যা হান্ড্রেড’-এর সময়সূচি, দেশসেরা সাদা বলের ক্রিকেটাররা তাই পঞ্চাশ ওভারের বদলে বেছে নিচ্ছেন দ্য হান্ড্রেডকে।
এই ব্যাপারটার ছাপ পড়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। ২০১৫ আর ২০১৯ বিশ্বকাপের মাঝে ইংল্যান্ড খেলেছিল ৮৮টা ওয়ানডে। অপরদিকে ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে এই পর্যন্ত ইংল্যান্ড খেলেছে মাত্র ৪৩টা ওয়ানডে। অবশ্য পুরো বিশ্বেই ব্যাপারটা প্রায় একই। কোভিড মহামারী আর বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের আধিক্যের কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটের আবেদন কমে গেছে অনেকটাই।
আর ২০১৯ এর পর থেকে ইংল্যান্ড যখনই ওয়ানডে খেলেছে, খুব কম ক্ষেত্রেই পুরো শক্তি নিয়ে খেলেছে।
“‘১৫ থেকে ‘১৯ এর মধ্যে সকল দ্বিপক্ষীয় সিরিজে আমরা পূর্ণশক্তির দল নিয়ে খেলেছি, অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তবে ‘১৯ এর পর থেকে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন, আর এর পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। শুধু আমরা নই, বরং সব দলের কাছেই পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটটা একটু গুরুত্ব হারিয়েছে।”
-জো রুট, ব্যাটসম্যান, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
ইংল্যান্ড দলেও বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে এর মধ্যে। ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ইয়োন মরগান আর লিয়াম প্লাঙ্কেট। টম কারেন, লিয়াম ডসন, জেমস ভিন্সরা দলে আপাতত জায়গা হারিয়েছেন। জফরা আর্চার বিশ্বকাপে যাচ্ছে ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে।
রান আর উইকেটের ফুলঝুরি ছুটিয়ে, এদের পরিবর্তে দলে জায়গা করে নিয়েছেন যথাক্রমে ডেভিড মালান আর ডেভিড উইলি। লিয়াম লিভিংস্টোন, স্যাম কারেন, রিস টপলি, গাস অ্যাটকিনসনরাও সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বকাপ দলে। এদের মধ্যে ডেভিড উইলিকেই যা একটু অভিজ্ঞ বলা চলে, অন্য দিকে তিন বছর ধরে ইংল্যান্ডের সাদা বলের ক্রিকেটের সাথে জড়িত থাকার পরও লিয়াম লিভিংস্টোনের ঝুলিতে রয়েছে মোটে ১২টা ওয়ানডে।
তবে দলে কিছু পরিবর্তন এলেও, ইংল্যান্ডের এই দলের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। কোভিডের পরপরই শেষ মুহূর্তে দল সাজিয়েও পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করেছিল ইংল্যান্ড। নিজের বাড়িতে বসে ঐ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটা দেখেছিলেন মরগান, দেখেছিলেন এজবাস্টনের মাটিতে ইংল্যান্ডকে ৩৩২ রান করতে।
“আমাদের খেলার ধরণটা ধীরে ধীরে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। ২০১৫ সালে আমরা যে পরিস্থিতিতে ছিলাম, সেই বিবেচনায় এই অর্জন বিশাল। আর এই অর্জনের পেছনে বিশ্বকাপ দলের সদস্যদের অবদান অনেক বেশি।”
-ইয়োন মরগান, সাবেক অধিনায়ক, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
ভারতীয় অভিজ্ঞতা
ইংল্যান্ডের ২০১৫ বিশ্বকাপ দলে যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে মাত্র দু’জনের আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল, ইয়োন মরগান এবং রবি বোপারা। এর মধ্যে রবি বোপারা আবার ইংল্যান্ডের বিদায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। অপর দিকে, চলতি বছরের একটা সময়ে ইংল্যান্ডের ১৭জন ক্রিকেটারের সাথে আইপিএলের বিভিন্ন দলের চুক্তি ছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই আবার বেশ কয়েক বছর ধরে খেলছেন একই দলে। আরো একটা পরিসংখ্যান দেওয়া যাক। বিশ্বকাপের জন্য ইংল্যান্ড যে প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছিল, এর মধ্যে শুধুমাত্র গাস অ্যাটকিনসনের আইপিএল অভিজ্ঞতা শূন্য।
গত বছরেই ইংল্যান্ডের সাদা বলের ক্রিকেটের কোচের আসনে বসা ম্যাথু মট এই ব্যাপারটাকে দেখছেন খুবই ইতিবাচকভাবে, পাদপ্রদীপের আলোয় আসাকে বরাবরই সমর্থন করেন তিনি।
“বিশ্বের সব দেশের সেরা ক্রিকেটাররা খেলেন আইপিএলে, এই অভিজ্ঞতাকে আপনি টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন না।”
-ম্যাথু মট, ওয়ানডে ও টি২০ কোচ, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
এই প্রসঙ্গে মঈন আলীর উদাহরণও টেনেছেন মট। গত টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে মঈন চেয়েছিলেন যেন টসে জিতলে ফিল্ডিং নেওয়া হয়। ঐ ম্যাচে ভারতের শুরুটা হয় ধীরগতিতে, পরবর্তীতে যা প্রতীয়মান হয় ম্যাচ হারের অন্যতম কারণ হিসেবে। দশ উইকেটে জিতে ফাইনালে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।
“মঈন বলছিল যেন টসে জিতলে আমরা ভারতকে লক্ষ্য তাড়া করার সুযোগ না দিই, বরং লক্ষ্য নির্ধারণের কাজটা যেন ওদেরকেই করতে দিই। এই ব্যাপারগুলো বুঝতে হলে আপনাকে ওদের সাথে নিয়মিত খেলতে হবে, নিজেকে অভ্যস্ত করে নিতে হবে। মঈনের সেই অভিজ্ঞতা আছে, আমাদের ড্রেসিংরুমে ঐ অভিজ্ঞতার মূল্য অনেক বেশি।”
-ম্যাথু মট, ওয়ানডে ও টি২০ কোচ, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
ওয়ানডে ক্রিকেটের ওপর আইপিএলের প্রভাব কতটুকু, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে একটা নির্দিষ্ট ব্যাপার উল্লেখ করতে চাইলে, আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতাটা ক্রিকেটারদের স্পিন খেলার দক্ষতা বাড়িয়েছে অনেকটাই। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্পিনের বিপক্ষে ইংল্যান্ড দল রান তুলেছিল ৫.০৩ করে, টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে যা দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ‘১৯ বিশ্বকাপে সেই ইংল্যান্ডই রান তুলেছে ৬.৭৯ করে, সব দলের মধ্যে যে এটিই ছিল সর্বোচ্চ, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। জো রুটও এই ব্যাপারটার উল্লেখ করলেন আলাদাভাবে।
“গতবার বিশ্বকাপ হয়েছিল আমাদের নিজেদের মাটিতে, সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এবার বিশ্বকাপ ভারতে, আমাদের প্রস্তুতির ধরণে তাই বদল এসেছে। আমাদের বাড়তি কিছু দক্ষতার প্রয়োজন, পাশাপাশি বিভিন্ন ম্যাচে বিভিন্ন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেই শিরোপাটা ধরে রাখতে হবে আমাদের।”
-জো রুট, ব্যাটসম্যান, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের প্রথম ম্যাচ ৫ অক্টোবর, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আহমেদাবাদে। আইপিএল খেলার সুবাদে এই মাঠটা ইংরেজ খেলোয়াড়দের অপরিচিত নয় একেবারেই।
ফিটনেস
গত তিন বছর ধরেই ইংরেজ বোলাররা লড়ছেন চোটের সাথে। বিশ্বকাপের আগেও বেশ কয়েকজন পেসারদের ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা ছিল, আর্চারকে তো রাখতে হলো ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবেই।
সেদিক থেকে ২০১৯ বিশ্বকাপটা অনেকটাই ভিন্ন ছিল। ছোটখাট কিছু চোট নিয়েও পুরো বিশ্বকাপের এগারোটা ম্যাচেই খেলেছেন জফরা আর্চার, আদিল রশিদ এবং ক্রিস ওকস। দশটা ম্যাচে খেলেছিলেন মার্ক উড, ফাইনালে নিজের শেষ ওভারের বোলিং করতে দিয়ে পড়েছিলেন সাইড স্ট্রেইনে।
“আমি আর ওকসি (ক্রিস ওকস) ঐ বিশ্বকাপের ছবিগুলো দেখি, আমরা দুজনেই কী হালকা-পাতলা গড়নের ছিলাম! আমি অবশ্য সবসময়ই হালকা-পাতলা, তবে ঐ বিশ্বকাপটা আসলে আমাদের ওপর দিয়ে অনেক ধকল বইয়ে দিয়েছিল।”
-মার্ক উড, পেস বোলার, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
এ বছরও ইংল্যান্ডকে কাটাতে হবে ব্যস্ত সময়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খেলতে হবে দেশের বাইরে। চোটমুক্ত থেকে বিশ্বকাপ শেষ করাতে পারলে সেটা ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের, বিশেষত পেসারদের জন্য অলৌকিক ঘটনা হিসেবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। সেটা সম্ভবও হয়ে ওঠেনি ইংল্যান্ডের পক্ষে; বাংলাদেশের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করা রিস টপলি নাম লেখালেন ইনজুরির খাতায়, শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপটাই। সাথে ‘হাফফিট’ ব্রুক যিনি বোলিংটাই করতে পারলেন না, আর স্টোকসও ‘১৯ বিশ্বকাপে তার করা ‘গেমচেঞ্জিং পারফরম্যান্স’ ফিরিয়ে আনতে পারলেন না। ইংল্যান্ডের হয়ে গত বিশ্বকাপে ম্যাচ খেলেছিলেন মাত্র ১২ জন খেলোয়াড়, তবুও বিশ্বকাপটা জিতেছিল তারা। অথচ এবার তাদের দেখতে হলো আকস্মিক পতন।
ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা
বয়সের বিবেচনায় ইংল্যান্ডের এবারের স্কোয়াডটা সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বয়সী একাদশ। হ্যারি ব্রুককে বাদ রাখলে, এই দলের তরুণতম ব্যাটসম্যান লিভিংস্টোনও এ বছরের শুরুতে ত্রিশ পূর্ণ করেছেন। হ্যারি ব্রুকও দলে ঢুকেছেন পরে, শুরুর পনেরোতে তিনি ছিলেন না। চূড়ান্ত দল ঘোষণার সময়ে জেসন রয়কে সরিয়ে দলে টানা হয় হ্যারি ব্রুককে।
তবে বয়স যে বিশ্বজয়ের বাধা নয়, তার দৃষ্টান্ত দেখা গেছে ষোল বছর আগেই। ২০০৭-এর বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলে তারুণ্যের বদলে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞতাকে। ৩৫ বছর বয়সী ম্যাথু হেইডেন আর ৩৭ বছর বয়সী গ্লেন ম্যাকগ্রাই টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন যথাক্রমে সর্বোচ্চ রান আর উইকেট সংগ্রাহক হয়ে। ফাইনালের একাদশের গড় বয়স ছিল একত্রিশের কিছু বেশি, ইংল্যান্ড এবার ফাইনাল খেললে তাদের গড় বয়স হওয়ার কথা বত্রিশের আশেপাশে।
“আমার মনে হয় ইংল্যান্ডে বয়সের ব্যাপারটাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। বয়সী খেলোয়াড়কে সরিয়ে তার পরিবর্তে তরুণ খেলোয়াড়কে সুযোগ দিতে চান সবাই। কিন্তু সত্যিটা হচ্ছে, একজন খেলোয়াড় যতক্ষণ পারফর্ম করতে পারছেন, ততক্ষণ বয়সের ব্যাপারটা ধর্তব্যের মধ্যেই আসা উচিত নয়। পারফরম্যান্সটাই হওয়া উচিত মূল বিবেচ্য, আর এভাবেই আমরা সাফল্য পেয়েছি।”
-জস বাটলার, অধিনায়ক, ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল
তবে এই অভিজ্ঞতাকে মূল্য দেওয়ার ব্যাপারটা কিন্তু পুরো দুই বিশ্বকাপের মাঝের চক্রটাতে ঘটেনি। গত চার বছরে ইংল্যান্ড মূলত সুযোগ দিয়েছে তরুণদেরই, কিন্তু বিশ্বকাপের আগে ঠিকই ফিরিয়ে এনেছে বেন স্টোকসের মতো অভিজ্ঞদের। পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত, বিশ্বকাপের পর থেকে আবার তরুণদের সুযোগ দেওয়ার দিকেই ঝুঁকবে ইংল্যান্ড, এই বিশ্বকাপের অভিজ্ঞদের নিয়ে নিশ্চয়ই ২০২৭ বিশ্বকাপে পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্যে নামবে না তিন সিংহের দল! তাহলে এই দল সিলেকশনের পিছনে চিন্তাটা ঠিক কেমন ছিল?
দ্য ব্যালান্সিং অ্যাক্ট
গত সেপ্টেম্বরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের আগে এই বিশ্বকাপ দলের পাঁচজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য (জো রুট, বেন স্টোকস, লিয়াম লিভিংস্টোন, জনি বেয়ারস্টো, মার্ক উড) ওয়ানডে খেলেছেন এক বছরেরও আগে। গাস অ্যাটকিনসনও এর আগে খেলেছিলেন মোটে দুটো ওয়ানডে। ইংলিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ভেবেছিল গত বছরের ফর্মুলাতেই যদি এবারও যায় তারা, তবেই হয়তো সাফল্যের দেখা মিলবে। স্কোয়াডে তাই থাকলেন স্টোকস-মঈন আলীরা, সাথে লিভিংস্টোন-উইলি-ওকস-কারেনদের মতো কয়েকজন অলরাউন্ডার। এটাই ছিল ইংল্যান্ডের ‘ব্যালান্সিং অ্যাক্ট’।
ইংল্যান্ডের থিওরিটাই ছিল এমন যে শুরু থেকেই আক্রমণের পর আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে বিধ্বস্ত করে দেওয়া, এরপর সেই বিধ্বংসী শুরুটাকে পুঁজি করে বড় সংগ্রহের দিকে পৌছানো। আর স্কোরকার্ডে বড় রান উঠলে বাকিটা তাদের বোলাররা সামাল দেবে। বিশ্বকাপের আগে অবধি দারুণ কাজে দিয়েছে এই ফরমেশন, নিঃসন্দেহে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, টপ অর্ডার দারুণভাবে ব্যর্থ হলো বিশ্বকাপে, তাই সেই বিধ্বংসী শুরুটাই এলো না। ম্যাথু মটের পরিকল্পনা যেটা ছিল, সেটা তাই পুরোপুরিই ভেস্তে গেল।
“সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে লাইন অফ কমান্ড, সেটাই ব্যর্থ হয়েছে। কাঠামো বলুন কিংবা কাঠামোগত নীতিনির্ধারন – আঙুলটা স্বাভাবিকভাবেই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গদের দিকেই তুলতে হয়। রব কী-র জন্য চ্যালেঞ্জ তো ছিলই, বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ ছিল ম্যাথু মটের উপরেও। এই বিশ্বকাপ তো বটেই, ‘হয়তো’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আমেরিকা বিশ্বকাপটাও তার জন্য অগ্নিপরীক্ষাই হতে যাচ্ছে। দলটার আদ্যোপান্ত সে খুব ভালো করে জানে; তার ম্যান-ম্যানেজমেন্টটা এবার নজরদারিতে থাকবে, কেননা এই দলটার থেকে প্রত্যাশা এত সহজে যাওয়ার নয়!”
বলছিলেন ইয়োন মরগ্যান। ‘হয়তো’ শব্দটা লক্ষ্যণীয়ই বৈকি; তবে মরগ্যান কেন এই শব্দটা ব্যবহার করেছেন, সেটা বুঝতেও ঠিক বিশেষজ্ঞ হতে হয় না।
এটা ঠিক, ম্যাথু মট দারুণ সাফল্য পেয়েছেন জাতীয় দলের হয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের মতো সাফল্য তার ক্যাবিনেটে, সেটা ভুলে গেলেও চলবে না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, দলটাকে তিনি যখন হাতে পেয়েছিলেন, ইংল্যান্ড দলটা ততদিনে প্রতিপক্ষকে ছিঁড়েখুঁড়ে খেয়ে ফেলা শিখে গেছে, আর দলটাতে মটের আদতে তেমন কোনো পরিবর্তনই আনতে হয়নি। আর যখন সেটার প্রয়োজন হলো, মট-বাটলারের ‘গুড কপ-গুড কপ’ জুটি ফিরিয়ে আনল যে গত বিশ্বকাপের ফর্মুলাটাই। আর সেটা যে এবার একদমই কাজ করেনি, সেটা এখন বলাই বাহুল্য। মট দলটা হাতে পেয়েছেন খুব বেশিদিন হয়নি, সেটা সত্যি। কিন্তু যে সময়টুকুই পেয়েছেন, তাতেও খুব একটা দূরদর্শিতা দেখাতে পারেননি।
তবে ২০২৩-এর বিশ্বকাপের অভাবনীয় ব্যর্থতার পরে পরবর্তী বিশ্বকাপের চিন্তাটা হয়তো এখনই শুরু করতে চাইবে ইংল্যান্ড দল। শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে এসে দলটা বিদায় নিয়েছে মাত্র তিনটা জয়কে সম্বল করে, যার দুটো আবার এসেছে সেমিফাইনালের দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার পর। তাতেই নিশ্চিত হলো, বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপ থেকে প্রাপ্তি বলতে শুধুই পরবর্তী আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সরাসরি নাম লেখানো, বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী আলোচনায় যেটা কেউ কল্পনাতেও আনেননি। ইংল্যান্ড দলের একটা স্বপ্নযাত্রার শেষও হয়তো লেখা হয়ে গেল এখানেই, কিংবা কে জানে, হয়তো পরবর্তী স্বপ্নযাত্রার শুরুটাও এখানেই!