১৯৭১ সালের ঘটনা। সুনামগঞ্জ জেলা সংলগ্ন ভারতের বালাট অঞ্চলে যুদ্ধবিতাড়িত বাঙালিদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শরণার্থী শিবির। সেখানে আশ্রয় নিয়েছে কয়েক লাখ বাঙালি শিশু, নারী ও বৃদ্ধ। তাছাড়া যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণরত কয়েকদল বাঙালি তরুণেরও আশ্রয় মিলেছে এখানে। স্বজনহারাদের আহাজারি ও ত্রস্ত, ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্নার আওয়াজে শিবিরের বাতাস এক অদ্ভুত শোকে ভারী হয়ে আছে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে। শিবিরে দেখা দেয় চরম শৃঙ্খলাহীনতা। এ সময়ে শিবিরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় স্থানীয় খাসিয়া জনগোষ্ঠীর আগ্রাসনে। সময়-অসময়ে খাসিয়া সন্ত্রাসীরা শরণার্থী শিবিরে হানা দিয়ে চাঁদাবাজি করতে থাকে। এদের হাতে মারধোরের শিকার হতে থাকে অসহায় বাঙালিরা।১
এমন পরিস্থিতিতে উদ্বুদ্ধ হলো এক তরুণ। খাসিয়াদের উচিত শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি আরও কয়েকজন তরুণকে নিয়ে একটি দল গড়ে তুললেন। এরপর একদিন সুযোগ বুঝে আক্রমণকারী সন্ত্রাসীদের পাল্টা আঘাত করে বসে তার দল। অপ্রস্তুত খাসিয়া সন্ত্রাসীরা এতে হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে পিছু হটতে বাধ্য হয়। তার মাঝে কয়েকজন খাসিয়া সেই দলটির হাতে ধরা পড়ে। এদের পাহাড়ি নদীর চরে এনে মেরে ফেলা হলো। খাসিয়ারা সেদিনের পর আর কোনোদিন বাঙালি শিবিরে আক্রমণ করার সাহস করেনি।
এক বাঙালি তরুণের অসীম সাহসিকতায় দমে যায় খাসিয়ারা। সেই তরুণের নাম জগৎজ্যোতি দাস। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি যুদ্ধে যোগদান করেন এবং হয়ে উঠেন এক বিশেষ গেরিলা দলের নেতা। তার নামানুসারে এই দলটির নামকরণ করা হয় ‘দাস পার্টি’।২
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর এই দাস পার্টির খোঁজে বের হলেন লেখক হাসান মোরশেদ। দীর্ঘ ১ বছর ধরে দাস পার্টির যুদ্ধস্থল সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ অঞ্চল চষে বেড়ান। কথা বলেন এই গেরিলা দলের সদস্যদের সাথে। তার সেই প্রয়াসের লিখিতরূপ হিসেবে প্রকাশিত হয় এক মৌলিক মুক্তিযুদ্ধের আখ্যান। এর যুতসই নাম দেওয়া হয় ‘দাস পার্টির খোঁজে’।
লেখক পরিচিতি
বই নিয়ে আলোচনায় যাবার আগে বইয়ের লেখক সম্বন্ধে পরিচিত হওয়া দরকার। ১৯৭৬ সালের ৩ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন বইয়ের লেখক হাসান মোরশেদ। বইয়ে উল্লেখ করা পরিচতি থেকে জানা যায়, শৈশবে সিলেটেই বড় হয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে শিক্ষা এবং কর্মসূত্রে ভারত ও যুক্তরাজ্য পাড়ি জমিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ কামব্রিয়া থেকে পর্যটন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। অনলাইনে সচলায়তন, সারাবাংলাসহ বিভিন্ন পোর্টালে তিনি মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি এবং সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন।
‘দাস পার্টির খোঁজে’ তার লেখা ৩য় বই। এর আগে তিনি রাজনৈতিক ফিকশন ‘শমন শেকল ডানা’ এবং অরুন্ধিতী রায়ের আলাপচারীতার অনুবাদ ‘দানবের রূপরেখা’ প্রকাশ করেছেন। ২০১৮ সালে তার ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ নির্মাণ’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া ‘নারী সাক্ষ্যে জেনোসাইড (২০২০)’ এবং ‘জেনোসাইড ৭১ তত্ত্ব তর্ক তথ্য (২০১৯)’তার লেখা উল্লেখযোগ্য বই।
টেকেরঘাট সাব-সেক্টর ও দাস পার্টি
মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র বাংলাদেশকে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। সেক্টরগুলোতে নিয়মিত বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন অপারেশনের প্রয়োজনে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠন করে আক্রমণ চালানো হতো হানাদারদের ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে সেক্টরগুলোকে আরও কয়েকটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ৩টি সেক্টরের অধীনস্ত ছিল- ৩, ৪ এবং ৫ নং সেক্টর। এদের মধ্যে ৫ নং সেক্টরের একটি সাব-সেক্টর হচ্ছে বড়ছড়া বা টেকেরঘাট সাব-সেক্টর। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার একাংশ, জামালগঞ্জ, দিরাই এবং শাল্লা অঞ্চল ছিল এই সাব-সেক্টরের অধীনে।
জুন-জুলাই মাসে যখন এই সাব-সেক্টর গঠনের নির্দেশ আসে, তখন এ অঞ্চলের সড়ক ও রেলপথে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের কারণে পাকিস্তানিরা অস্ত্র ও রসদ পরিবহন করতে সাহস পেত না। তাই তারা স্টিমারে করে অস্ত্র চালান শুরু করে। জলপথে পাকিস্তানিদের অস্ত্রের চালান বন্ধ করা তাই মুক্তিবাহিনীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
কিন্তু জলপথে আক্রমণ করার জন্য প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দলের। তাই এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয়ক সালেহ চৌধুরী বিশেষ দল প্রেরণের আবেদন জানান ভারতীয় কমিউনিকেশন জোন ওয়ানের অধিনায়ক মেজর জেনারেল গুরবগ সিং গিলের নিকট।৩ সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাছাই করা সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ দলকে দিরাই অঞ্চলে পাঠানো হয়। এই দলটিই ছিল ‘দাস পার্টি’; যার প্রধান ছিলেন বালাট শরণার্থী শিবিরের সেই জগৎজ্যোতি দাস।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের জলসুখা গ্রামে তার জন্ম। রাজনৈতিকভাবে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন গ্রুপ) কর্মী ছিলেন। ২২ বছর বয়সী এই তরুণের নেতৃত্বে থাকা দাস বাহিনীর চৌকস গেরিলারা পরবর্তীতে এ অঞ্চলের রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিকট ত্রাস হয়ে ওঠে। দাস পার্টির সদস্যসংখ্যা ছিল ছত্রিশের মতো। সিলেট অঞ্চল ছাড়া কিশোরগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকেও মুক্তিযোদ্ধারা এই দলের সদস্য ছিলেন। দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন আলী আমজদ। আরও ছিলেন সফিকুল হক চৌধুরী, ইলিয়াস চৌধুরী, আব্দুর রশিদ, গোপেন্দ্র দাস, আতাউর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম, মতিউর রহমান, নিলু মিয়া, আব্দুল মজিদ, বিনোদ বিহারি, আয়ুব আলী, ধীরেন্দ্র কুমার দাস, নূর মিয়া, অক্ষয় কুমার বৈষ্ণব, আলী হায়দার, সুনীল বর্মনসহ প্রমুখ গেরিলা যোদ্ধা।৪
জুলাই-ডিসেম্বর সময়টুকু টেকেরঘাট অঞ্চলে বহু অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তানিদের ভিত কাঁপিয়ে দেন এই যোদ্ধারা। ১৬ নভেম্বর দলনেতা জগৎজ্যোতি দাস শহীদ হন। কিন্তু তারপরেও থেমে যায়নি দাস পার্টি। তার পর এই দলের হাল ধরেন সফিকুল হক চৌধুরী। তাদের সামরিক পরামর্শক ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর ভাট এবং ক্যাপ্টেন ভার্মা।
বইয়ের খোঁজে
দাস পার্টির খোঁজে বইটি মেরিট ফেয়ার প্রকাশনীর মাধ্যমে প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। বইটির বিষয়বস্তু এবং লেখকের ভাষাশৈলী খুব সহজেই পাঠকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে নভেম্বর মাসের আগেই প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, বই হিসেবে প্রকাশের পূর্বে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ তিনি ধারাবাহিকভাবে দাস পার্টি সম্পর্কিত লেখাগুলো প্রকাশ করেছিলেন। পরের বছর দ্বিতীয় মুদ্রণের পাশাপাশি ‘The Café Table’ প্রকাশনার উদ্যোগে ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালে বইটি প্রকাশিত হয় ঐতিহ্য প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে।৫
লেখক হাসান মোরশেদ দীর্ঘ ১ বছর ধরে দাস পার্টির ঘটনা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দিরাই থেকে শুরু করে হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ঘুরেছেন। সাথে সঙ্গী হয়েছেন সচলায়তন-এর ব্লগার নজরুল ইসলাম, অনিন্দ্য রহমান এবং তানিম নামক একজন সিনেমা নির্মাতা। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জীবিত গেরিলা যোদ্ধা এবং অন্যান্য দলের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলেছেন। মুক্তিযোদ্ধার বাইরে গণহত্যার সাক্ষী নির্যাতিত সাধারণ মানুষজনেরও সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তারা। তারপর সবকিছু সংকলন করেছেন অনেকটা বিস্তৃত দিনলিপি আকারে।
তার এই যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সালেহ চৌধুরীর উত্তরার বাসা থেকে দাস পার্টির অনুসন্ধান শুরু। সেখান থেকে তারা চলে যান সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের সদরপুর ব্রিজে, যেখানে দাস পার্টি প্রথম অপারেশন চালিয়েছিল। এখান থেকে জয়কলস বাজার, জামালগঞ্জ, লম্বাবাঁক গ্রাম- এভাবে দাস পার্টির স্মৃতিবিজড়িত একের পর এক স্থান ভ্রমণ করেন। তাদের এই যাত্রা শেষ হয় শ্যামারচর ও পেরুয়া গ্রামে। কাকতালীয়ভাবে বইয়ের সর্বশেষ দিনলিপিটি লেখা হয় ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ সালে।৬ ১৯৭১ সালের এই তারিখেই দাস পার্টির নেতা জগৎজ্যোতি দাস শহীদ হয়েছিলেন।
পর্যালোচনা
দাস পার্টির খোঁজে বইটি পাঠকদের পছন্দ হবে লেখকের প্রাঞ্জল ভাষাশৈলীর কারণে। একের পর এক গ্রামে তিনি বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা করেন এবং একটু একটু করে দাস পার্টির পরিচয় পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন। এর ফলে বইয়ের শুরু থেকে একধরনের কৌতূহল সৃষ্টি হয়, যা পুরো বই শেষ না করলে তৃপ্ত হয় না। বইয়ের শিরোনাম এবং মূল বিষয়বস্তু ‘দাস পার্টি’ সম্পর্কিত হলেও এখানে আরও বহু ঘটনার স্মৃতিচারণ হয়েছে। উঠে এসেছে গ্রামে গ্রামে পাকিস্তানিদের গণহত্যার বিভীষিকাময় চিত্র। প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে জলসুখা, মাকলাকান্দি, পেরুয়া গণহত্যার বিবরণ শুনে পাঠকদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। চোখের সামনে একাত্তর যেন জীবন্ত হয়ে উঠবে। বইয়ের ভেতর দরকারমতো যুদ্ধকালীন মানচিত্র এবং সাক্ষাৎকার দেওয়া মানুষজনের ছবি দেওয়া হয়েছে। বর্ণনা করা হয়েছে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা এবং তাদের প্রতি সমাজের চরম অবহেলার কথা। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সম্মানে নির্মিত স্থাপনাগুলো এবং শহীদদের কবরগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে যে বেহাল অবস্থায় রয়েছে, সে কথাও এখানে সচিত্র বর্ণনা করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক তথ্যবহুল গ্রন্থগুলোর মধ্যে এই বইটি এক অনন্য সংযোজন। যুদ্ধকালীন বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন করতে গিয়ে বিশেষ গেরিলা দলগুলোর অমিত সাহস ও আত্মত্যাগের যে অসাধারণ চিত্র এই বইয়ে ফুঁটে উঠেছে, তা এককথায় অতুলনীয়। বইয়ে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার এবং কিছু ঘটনার কারণে লেখকের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে আজমিরীগঞ্জ আদালতে মানহানির মামলা করা হয়েছিল।৭ বইয়ের নতুন সংস্করণের শেষাংশে এই মামলা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য লেখক বর্ণনা করেছেন। সৌভাগ্যক্রমে, মামলা লড়তে গিয়ে তিনি খুঁজে পান ‘মেঘনা রিভার ফোর্স’ নামক আরেকটি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা দলকে। এই মামলার প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য আপনার ‘দাস পার্টির খোঁজে’ বইটি একবার পড়া থাকতে হবে। মামলার কথা লিখতে গিয়ে লেখকের কথায় মেঘনা ফোর্সের গেরিলদের সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা উঠে এসেছে সাবলীলভাবে।
দু’য়েক জায়গায় ঘটনাপ্রবাহের সময়কাল আগে পিছে হওয়ায় পাঠকদের সামান্য অসুবিধা হতে পারে। তবে সেটি বইয়ের সাথে পাঠকের মনের সংযোগ হওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে উঠেনি। সামগ্রিকভাবে এটি তথ্যবহুল ও সুখপাঠ্য একটি বই। মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী এবং জ্ঞানপিপাসুদের নিকট বইটি যথার্থরূপে সমাদৃত হবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যায়।
“আমি যাইগ্যা”!
দাস পার্টির খোঁজে বইয়ের লাল প্রচ্ছদের পেছনের দিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলামের তার বাবাকে লেখা একটি চিঠি সংকলিত হয়েছে। চিঠির শেষদিকে তার বাবাকে তিনি আবেগজড়িত ভাষায় লেখেন,
“মৃত্যুর মুখে আছি। যেকোনো সময় মৃত্যু হইতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত। দোয়া করিবেন মৃত্যু হইলেও যেন দেশ স্বাধীন হয়। তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে বাংলার বুকে পুত্রহারাকে বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন।”৮
একজন মুক্তিযোদ্ধার তার দেশের প্রতি ভালোবাসার চূড়ান্ত প্রতিচ্ছবি এই চিঠির ভাষা। তাদের আত্মত্যাগের ফলে পাকিস্তানিদের বিতাড়িত করে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধাই ভালো নেই। তাদের দেওয়া হয়নি প্রাপ্য সম্মান। বইটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দুরবস্থার যে চিত্র দেখানো হয়েছে, তা দুঃখজনক। শহীদ সিরাজুল ইসলাম তার পিতাকে যে স্বাধীনতার আশ্বাস দিয়েছেন, তা কি আদৌ অর্জন হয়েছে, এমন প্রশ্ন যেন মনের অজান্তেই চলে আসে।
শহীদ জগৎজ্যোতি মৃত্যুর আগে তার সহযোদ্ধাদের বলেছিলেন, “আমি যাইগ্যা!” কিন্তু জগৎজ্যোতি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তিনি হারিয়ে যাননি। লেখকের ভাষায় কিছু কথা লিখে আজকের আলোচনা শেষ করছি। জগৎজ্যোতি দাস নিয়ে তিনি শেষদিকে মন্তব্য করেন,
“’যাইগ্যা’ বলে চলে গেলেও জগৎজ্যোতি দাস তবু থেকে যান, তবু দাস পার্টির খোঁজে একটা জনপদ চষে বেড়িয়ে জানা হয়- মুক্তিযুদ্ধ ফুরোয়নি, গণযুদ্ধ ফুরায় না- গণমানুষের সমাজ ও রাষ্ট্র নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত।”৯