গেম অফ থ্রোন্স: শুধুমাত্র কল্পনা নয়, ইতিহাসের পাতায়ও যে গল্পের সন্ধান মেলে

বর্তমান সময়ের সবচাইতে জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গেম অফ থ্রোন্স। এর একেকটি পর্বের জন্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ, একেকটি সিজনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে থাকেন টিভি সিরিজ ও গেম অফ থ্রোন্স ফ্যানরা। এই তুমুল জনপ্রিয়তার পেছনে কাজ করে এর কাহিনী, প্রযোজনা এবং কাল্পনিক সব চরিত্র ও উপাদান।

ড্রাগন, গড অফ লাইট অ্যান্ড ডার্ক, তিন চোখা কাকের মতো কাল্পনিক উপাদানের ভরপুর এই টিভি সিরিজ কি কেবলই কল্পনাপ্রসূত রুপকথা? নাকি এর সাথে ইতিহাসের ও সাদৃশ্য রয়েছে? ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রাচীন ইংল্যান্ডের কিছু কিছু ইতিহাসের সাথে এই টিভি সিরিজের কিছু কিছু কাহিনীর মিল রয়েছে। এছাড়াও প্রাচীন গ্রিস, মঙ্গোলিয়ান গোষ্ঠীর সাথেও মিল দেখা যায়। কাল্পনিক উপাদানগুলো ব্যতিরেকে, এই টিভি সিরিজের কিছু কিছু ঘটনা পৃথিবীর বাস্তব ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায়।

ওয়ার অফ ফাইভ কিংস অ্যান্ড ওয়ার অফ রোজেস

জর্জ আর আর মার্টিনের ‘দ্য সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার’ বইয়ের ভিত্তিতে নির্মিত গেম অফ থ্রোন্সে যে ‘ওয়ার অফ ফাইভ কিংস’ গল্প বলা হয়, তা অনেকাংশেই মধ্যযুগীয় ব্রিটেনের নর্থ হাউজ অফ ইয়র্ক এবং সাউথ হাউজ অফ ল্যানকাস্টারের ইংল্যান্ড সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হবার ওয়ার অফ রোজেসের সাথে মিলে যায়। ওয়ার অফ ফাইভ কিংসের একদিকে ল্যানিস্টাররা, আরেক দিকে হাউজ অফ স্টার্ক যথাক্রমে ইংল্যান্ডের ওয়ার অফ রোজেসের হাউজ অফ ল্যানকাস্টার এবং হাউজ অফ রোজেসেরই মধ্যযুগীয় উপাখ্যানের প্রতিরূপ। ড্রাগন, জাদুবিদ্যা এবং পরাবাস্তবতার মতো কাল্পনিক ব্যাপারগুলো বাদ দিলে গেম অফ থ্রোন্সের অন্যতম চরিত্র, রবার্ট ব্যারাথিয়নের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ওয়ার অফ ফাইভ কিংস।

অন্যদিকে, ওয়ার অফ রোজেস শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ডের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। রবার্ট ব্যারাথিয়ন এবং রাজা তৃতীয় এডয়ার্ড- দুজনেরই মৃত্যু হয়েছিল যথাক্রমে শিকারে বের হয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে। তাদের মৃত্যুকালীন এবং মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাক্রমও অনেকটা একই রকম। গেম অফ থ্রোন্সের রবার্ট ব্যারাথিয়ন তার মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, তার পুত্র যেন উত্তরাধিকারসূত্রে সিংহাসনে বসতে না পারে।

ঠিক যেমনটা ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড তার মৃত্যুশয্যায় চেয়েছিলেন তার পুত্র যেন ইংল্যান্ডের শাসন ভার না নিতে পারে। এভাবেই শুরু হয়েছিল ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ। গেম অফ থ্রোন্সে যার নাম দেয়া হয়েছিল ওয়ার অফ ফাইভ কিংস। অপরদিকে ইংল্যান্ডের ইতিহাস বলে, এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পর গৃহযুদ্ধের নাম ওয়ার অফ রোজেস। 

war of roses
ওয়ার অফ রোজেস; Image Source: newhistorian.com

দ্য ওয়াল এবং হ্যাড্রিয়ান ওয়াল

গেম অফ থ্রোন্স দেখেছেন কিন্তু দ্য ওয়ালের কথা জানেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই টিভি সিরিজের দ্য ওয়াল হচ্ছে একটি বিশালাকার উঁচু প্রাচীর, যা কি না প্রাচীরের বাইরের ভয়ংকর বুনো দৈত্য থেকে রাজ্যের মানুষদেরকে সুরক্ষিত করে রেখেছে। যারা অদূর ভবিষ্যতে, প্রবল শীতে দীর্ঘ অন্ধকার সময়ের কথা ভেবে স্পষ্টভাবেই দুঃস্বপ্নে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। রাজ্যের ভেতর বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা তৈরি করা অপরাধীরা এই প্রাচীরের দেখা-শোনা এবং পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত।

এসব অপরাধীর শাস্তিস্বরূপ এই প্রাচীর পাহারার কাজে নিয়োজিত করা হয়। দ্য ওয়ালের ঐতিহাসিক প্রতিরূপ হচ্ছে ইংল্যান্ডের হ্যাড্রিয়ান ওয়াল। রোমানরা ইংল্যান্ড জয় করার পর, রোমান সাম্রাজ্যকে এর বাইরের অংশ- বর্তমান স্কটল্যান্ড থেকে নিজেদের বিভক্ত করার জন্য এই হ্যাড্রিয়ান ওয়াল তৈরি করেছিল। বিভক্ত করার জন্য এত উঁচু একটি দেয়াল তৈরি পেছনে কারণ ছিল পিক্ট এবং ক্যাদোনিয়ানদের প্রতি রোমানদের ভয়।

তারা মনে করতো, স্কটল্যান্ডের তৎকালীন এই অধিবাসীদের বিপক্ষে তাদের বিজয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব নয়। গেম অফ থ্রোন্সের দ্য ওয়ালের মতো হ্যাড্রিয়ান ওয়ালও সমুদ্র থেকে সমুদ্র জুড়ে বিস্তৃত। টিভি সিরিজের কাল্পনিক উপাদানগুলোকে বাদ দিলে, হ্যাড্রিয়ান ওয়াল গঠনগত দিক দিয়ে পাথরের তৈরি, যা রাজা হ্যাড্রিয়ানের নির্দেশে তৈরি করা হয়েছিল। কালের বিবর্তনে এই হ্যাড্রিয়ান ওয়াল এখন ইংল্যান্ডের অন্যতম পর্যটন স্থান।

Hadrian wall
হ্যাড্রিয়ান ওয়াল; Image Source: National Geographic

রেড ফেইথ এবং জরোয়াস্ট্রিয়ানিজম

গেম অফ থ্রোন্সের চরিত্র কিং স্ট্যানিসের উপদেষ্টা মিলাসান্দ্রেকে যথাযথভাবেই রেড ওমেন নামে ডাকা হয়। আলোর দেবতা রহলারের পূজারি এই নারী আগুনের দিকে তাকিয়ে, তার দূরদৃষ্টির মাধ্যমে রাজা স্ট্যানিসকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন। গেম অফ থ্রোন্সে পৃথিবীর দ্বৈবিধ্য আলোর দেবতা এবং অন্ধকারের দেবতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এই দেবতাদ্বয় যথাক্রমে আগুন ও দিন এবং শ্বৈত্য ও রাতের নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

রেড ফেইথ বা রহলারের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে, আলোর দেবতার আশীর্বাদ নিয়ে একজন মহান যোদ্ধার জন্ম হবে এবং সে অন্ধকারের অনুসারীদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পৃথিবীর পরিণতি নির্ধারণ করবে। পৃথিবীতে নতুন একটি শাসনচক্র গড়ে উঠবে। জরোয়াস্ট্রিয়ানিজম হচ্ছে এই রূপকথার বাস্তব উদাহরণ। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন একটি ধর্ম, যা খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ সালে উৎপত্তি লাভ করেছিল। এই ধর্মের মূল কথা হলো, একজন দেবতা রয়েছেন, যিনি পৃথিবীর রাত-দিন, ভাল-খারাপ সব রকমের দ্বৈরথ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

জরোয়াস্ট্রিয়ানিজমের অনুসারীরা পৃথিবী এবং প্রকৃতির এই দ্বৈরথকে তাদের জীবনযাত্রার মূল স্তম্ভ বলে মনে করতেন। তাদের কর্ম এবং বিশ্বাসই ঠিক করে দেয়, ভাল এবং খারাপের মধ্যে কে কোন দলের অন্তর্ভুক্ত। যদিও জরোয়াস্ট্রিয়ানিজমে আগুনের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার রেওয়াজ নেই, কিন্তু তারা দুর্গে আলোকসজ্জা করে আলোর গুণগান করে থাকেন, যেমনটা রেড ফেইথের অনুসারীরাও করেন।

ZOROASTRIANISM
জরোস্টিয়ানিসমের অনুসারী কয়েকজন; Image Source: zoroastrianismscm.weebly

ডথ্রাকি এবং যাযাবর গোষ্ঠী

গেম অফ থ্রোন্সে ডথ্রাকি নামক একপ্রকার যাযাবর যোদ্ধা জনগোষ্ঠীকে দেখা যায়। এরা এসোসের অধিবাসী হলেও কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। দূরদূরান্ত বিস্তৃত সমতল ভূমিতে তারা ঘুরে বেড়ায়। ইতিহাসের বিবর্তনে তাদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। টিভির পর্দা থেকে যদি মানব ইতিহাসের দিকে তাকান; তাহলে শিক্তিয়ান, এলান, কুমান্স এবং মঙ্গোলিয়ান জাতির খোঁজ পাওয়া যায়, যারা সমতল ভূমিতে যাযাবর জীবনযাপন করতো।

বিশেষভাবে ঘোড়ায় চড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর, ক্ষিপ্র আক্রমণ এবং ধূর্ততার জন্য তারা ইতিহাসে পাতায় বেশ সুপরিচিত। টিভির পর্দায় এই যাযাবর যোদ্ধারা শক্তিশালী খাল বংশের এবং এর সম্পর্কিত বংশগুলোর অংশ। অন্যদিকে বাস্তব ইতিহাসে অনেক যাযাবর যোদ্ধাই খান বংশের উত্তরসূরি।

Mongolians warriors
শিল্পীর আঁকা মঙ্গোলিয়ানদের যুদ্ধ; Image Source: Timetoast

ওয়াইল্ড ফায়ার এবং গ্রিক ফায়ার

গেম অফ থ্রোন্সে ব্যবহৃত ওয়াইল্ড ফায়ার একপ্রকার সবুজ রঙের দাহ্য তরল পদার্থ, যা কোনো কিছুর উপর ঢালা বা নিক্ষেপিত হলে, তার দাহ্যতা বস্তুকে আগুনে ঝলসে দেয়। যতক্ষণ না এই তরল নিঃশেষ হয়, তা অন্য বস্তুকে পুড়ে ছাড়খার করে দিতে থাকে। মনে করা হয়ে থাকে, এই দাহ্য তরলের সাথে যাদুবিদ্যার যোগসাজশ রয়েছে। এছাড়া এই তরল পদার্থ তৈরি করাই বেশ শ্রমসাধ্য ব্যাপার বলে ধারণা করা হয়।

কিংস ল্যান্ডিংয়ে কিং স্ট্যানিসের আক্রমণ এবং বিশাল নৌবাহিনীর বহরকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য টিরিয়ন ল্যানিস্টারকে এই ওয়াইল্ডফায়ার ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ ওয়াইল্ড ফায়ার ব্যবহার করে শত্রু দমনে টিরিয়ন সফল হয়েছিল। টিভির স্ক্রিনে এসব দামামা দেখে আমরা অনেকেই বিমোহিত হই, কিন্তু বাস্তব পৃথিবীতেও এমন বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে বাইজান্টাইন গ্রিক ফায়ার এরই অন্যতম উদাহরণ। গ্রিক ফায়ার ব্যবহার করে কন্সটান্টিনোপলের উপর যেকোনো শত্রুপক্ষের আক্রমণ দমনের ক্ষেত্রে এই গ্রিক ফায়ার খুব কার্যকর অস্ত্র হিসেবে কাজ করতো। এমনকি দ্বিতীয়বার আক্রমণের আগে প্রতিপক্ষ এই গ্রিক ফায়ারের ভয়াবহতার কারণে পিছিয়ে গিয়েছিল।

Greek-Fire-Byzantine-Empire
ছবিতে গ্রিক ফায়ারের যুদ্ধ; Image Source: warfarehistorynetwork.com

আয়রন থ্রোন এবং থ্রোন অফ ব্রিটেন

রবার্ট ব্যারাথিওন মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, তার বংশের কেউ যেন আয়রন থ্রোনের উত্তরাধিকার না হতে পারে। তাই তার মৃত্যুর পর এই আয়রন থ্রোন নিয়ে চলতে থাকে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি। অনেকগুলো তরবারি গলিয়ে আয়রন থ্রোনটি বানানো হয়েছে। মূলত টারগারিয়ান পরিবারের শত্রু, যারা ওয়েস্টেরস দখল করেছিল, তাদের তরবারি গলিয়েই এই দানব স্বরূপ ভয়ংকর সিংহাসনটি বানানো হয়েছিল। সিংহাসনের এমন ভয়ংকর রূপ দান করা হয়েছিল, কারণ এই সিংহাসনে বসে যেন কেউ স্বস্তি বোধ করতে না পারে।

এই অদ্ভুতুড়ে গঠন ব্যতীত, বাকি বিষয়টি থ্রোন অফ ব্রিটেইন বা ব্রিটেনের সিংহাসনের সাথে মিলে যায়। এই সিংহাসনটি ছিল তৎকালের সবচেয়ে আরাধ্য এবং মনে করা হয়, এটি অসংখ্য স্বর্ণ এবং অলঙ্কার সজ্জিত। গেম অফ থ্রোন্সে যেমন ৫ জন রাজা আয়রন থ্রোনের জন্য যুদ্ধ করেন, তেমনি থ্রোন অফ ব্রিটেনের জন্যও ৫ রাজা যুদ্ধ করেছিল।

গেম অফ থ্রোনসের আয়রন থ্রোন পরিদর্শন করছেন রানী এলিজাবেথ; Image Source: The Verge

আনসালিড এবং গ্রিসের স্পার্টান

গেম অফ থ্রোন্সে আনসালিড বা নিষ্কাম নিষ্কলুষ ক্রীতদাসদের একটি সৈন্যবাহিনী দেখা যায়, যারা একপ্রকার ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে কাজ করে। ডিনারিস টারগারিয়ান তাদেরকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে নিজের বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তুলেছেন। লম্বা লম্বা বর্শা এবং বৃত্তাকার ঢাল ব্যবহার করে যুদ্ধ করা এই সৈনিকদের সাথে প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টানদের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। তারা স্পার্টার ক্রীতদাস ছিল এবং অল্প বয়সেই তাদেরকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো।

যদিও তারা ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ করতো না। ভাড়াটে আনসালিডরা শত্রুপক্ষের রাজত্ব এবং সাম্রাজ্যের বিপক্ষে যুদ্ধবিগ্রহ করে সফল হলে, তাদেরকে হাতব্যাগ ভর্তি করে অর্থ মুদ্রা দেওয়া হতো এবং জয়ী রাজার একান্ত সেবক হিসেবে নিয়োজিত করা হতো। অপরদিকে স্পার্টানরা তাদের সাফল্যের প্রতিদান স্বরূপ, বর্তমান গ্রিসে, বিশেষ করে এথেন্সে আরো বড় বড় যুদ্ধ করার সুযোগ পেতেন। এমনকি এই আধুনিক সময়ে, স্পার্টানরা গ্রিসের ইতিহাসের অন্যতম সেরা যুদ্ধ থারমোপাইলের নায়ক হিসেবে সুপরিচিত। স্পার্টানরা এই যুদ্ধে পারসিয়ানদের পরাজিত করে বলকান রাজ্যে তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলো। 

Ancient-Greek-Sparta
প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টা বাহিনী; Image Source: Ancient Greece Facts.com

রেড ওয়েডিং অ্যান্ড ব্ল্যাক ডিনার

জে জে মার্টিনের দ্য সং অফ ফায়ার অ্যান্ড আইসের পাঠক এবং গেম অফ থ্রোন্সের দর্শকরা ভালভাবেই জানেন যে, রেড ওয়েডিং এর ঘটনায় স্টার্ক বিদ্রোহের অবসান ঘটে এবং স্টার্ক বাহিনীর নেতা রব স্টার্ক, তার মা ক্যাটালিন স্টার্ক এবং তাদের সেনাবাহিনীদের হত্যা করা হলে স্টার্ক পরিবারে বিপর্যয় নেমে আসে। ওয়াল্টার ফ্রের হলরুমে অনুষ্ঠিত রেড ওয়েডিংয়ের অতিথিদের রুজ বোল্টন বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে। এই কাজের জন্য ল্যানিস্টাররা তাকে বিপুল অর্থ দান করে পুরস্কৃত করেছিল।

অনেকটা একই রকম ঘটনা মধ্যযুগীয় স্কটল্যান্ডে দ্য ব্ল্যাক ডিনারে দেখা গিয়েছিল। দ্য ব্ল্যাক ডিনার স্কটল্যান্ডের বালক রাজা দ্বিতীয় জেমস এবং শাসনকর্তা উইলিয়ামসের সাথে সম্পর্কিত। উইলিয়ামস ছিলেন তার পূর্ববর্তী শাসক এবং আর্লের সন্তান। এই দুই সন্তানকে স্কটল্যান্ডের দুই অভিজাত এবং উচ্চবংশীয় নেতা স্যার ক্রিচটন এবং স্যার আলেক্সেন্ডার লিভিংস্টোন তাদের দুর্গে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই দুই নেতা নিজেদের মধ্যে আঁতাত করে সিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

আমন্ত্রিত দুজন অতিথিকে রাজসিক আতিথেয়তা প্রদান কথা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু প্রমোদপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে আকণ্ঠ পান করে কিছুটা মাতালও হয়ে গিয়েছিলেন। সবশেষে রাজদরবারের প্রহরীরা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং একদল ব্যাগপাইপার দুর্গের ভেতর বাদ্য বাজানো শুরু করে। টেবিলের উপর মৃত্যুর পরোয়ানা হিসেবে একটি ষাঁড়ের খণ্ডিত মাথা রাখা হয় এবং বালকদ্বয়কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। 

ছবিতে ১৪৪০ সালের ব্ল্যাক ডিনার; Image Source: legendariummedia.com

গেম অফ থ্রোন্সের কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং অদ্ভুত সব চরিত্রের মাঝে লুকিয়ে আছে পৃথিবীর ইতিহাসের কত নিদর্শন। কিছু কিছু আভাস পাওয়া গেলেও, কাল্পনিক চরিত্র এবং উপাদানেরও অভাব নেই। বস্তুত, ইতিহাস এবং কল্পনার এই সংমিশ্রণই চরম নাটকীয় এই টিভি সিরিজের সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। 

ফিচার ইমেজ – iSerbia

Related Articles

Exit mobile version