জ্ঞান ও সভ্যতা গ্রন্থমালা: বাংলায় জ্ঞানচর্চার এক অনন্য উদ্যোগ

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত Very Short Introduction নামে বইয়ের একটি চমৎকার সিরিজ আছে। এই সিরিজের বইগুলোর কালেবর খুব বেশি বড় নয়। জাগতিক জ্ঞানের প্রায় সকল ক্ষেত্র নিয়ে একটি একটি করে আলাদা বই আছে। বইগুলোর বৈশিষ্ট্য এমন যে, ছোট কালেবরেই যেন পাঠক কোনো একটি বিষয়ের উপর সামগ্রিক একটি ধারণা লাভ করতে পারে।

এখানের আলোচ্য বিষয়ে আছে প্রচুর বৈচিত্র্য। ক্ষুদ্র পরমাণু থেকে অতি-ক্ষুদ্র মৌলিক কণা, বিশাল সমুদ্র থেকে অতি-বিশাল মহাবিশ্ব, প্রাচীন ইতিহাস থেকে প্রাগৈতিহাসিক পুরাতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব থেকে পৌরাণিক তত্ত্ব, দর্শন থেকে বিজ্ঞান, পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্র, অধিবিদ্যা থেকে পদার্থবিদ্যা, আলকেমি থেকে রসায়ন, ভারতবর্ষ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, এরিস্টটল থেকে আইনস্টাইন কী নেই এই সিরিজে। এই সিরিজের অধীনে প্রকাশিত কয়েকটি বইয়ের নাম দিচ্ছি- Agriculture, Algebra, American Slavery, Coral Reef, Geopolitics, Hinduism, Quantum Theory, Cold War, Art History, Folk Music ইত্যাদি। কোনো সমাজে এরকম একটি সিরিজ থাকলে বলা যায়, জ্ঞান বিজ্ঞানে ঐ সমাজ আসলেই অনেক এগিয়ে গেছে।

ভেরি শর্ট ইন্ট্রোডাকশন সিরিজের কিছু চমৎকার বই; ছবি: ফাইভ প্রাইম

একজন পাঠকের প্রায় সকল বিষয়ে গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। একজনের পক্ষে তা সম্ভবও নয়। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই দুই-তিনটির বেশি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না। অধিক বিষয়ে গভীর জ্ঞান প্রয়োজন না হলেও প্রাথমিক ধারণা থাকা চাই সকল পাঠকের বেলাতেই। কোনো একটি বিষয়ের উপর সংক্ষেপে আলোচনা থাকে, তা পড়ে পাঠক আগ্রহী হলে পরে অন্যান্য বই সংগ্রহ করে আরো গভীর জ্ঞান লাভ করবে। এই কাজটাই সহজ করে দেয় সংক্ষেপে কিন্তু সামগ্রিকভাবে আলোচনা করা এরকম গ্রন্থের সিরিজ। প্রত্যেক দেশে প্রত্যেক সমাজেই এরকম গ্রন্থ সিরিজ থাকা উচিত।

আশির দশকে বাংলা একাডেমি থেকে ‘ভাষা শহীদ গ্রন্থমালা’ নামে চমৎকার একটি বইয়ের সিরিজ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সিরিজের আদলও ছিল অনেকটা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের Very Short Introduction-এর মতোই। কলেবরে ছোট, অল্প আলোচনায় কোনো একটি বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা দেবার চেষ্টা, বৈচিত্র্যময় বিষয়ের বিস্তৃতি ইত্যাদি সব মিলে খুব চমৎকার একটি সিরিজ ছিল এটি। এই সিরিজের অধীনে প্রকাশিত কয়েকটি বইয়ের নাম হলো- স্বপ্ন, গাছগাছালি, মৌলিক কণা, বিয়ে, সাহিত্যে বাস্তবতা, অস্তিত্ববাদ, বিপন্ন পরিবেশ, বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী, নারীমুক্তি আন্দোলন, সমালোচনা, শাড়ি, বই, উৎসব ইত্যাদি।

ভাষা শহীদ গ্রন্থমালা সিরিজের কয়েকটি বই; বইগুলোর প্রচ্ছদ করেছেন কাইয়ুম চৌধুরী

বই নিয়ে পাঠকদের মাঝে অল্পস্বল্প অভিযোগ থাকলেও সামগ্রিক বিবেচনায় এই সিরিজটি আসলেই অসাধারণ এবং অনেক মূল্যবান ছিল। কিন্তু কোনো এক বা একাধিক কারণে এই সিরিজ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রকাশের জটিলতা, পুনর্মুদ্রণের জটিলতা, সদিচ্ছার অভাব ইত্যাদি নানা কারণে এই সিরিজটি এখন প্রায় মৃত। টুকটাক কিছু বই মাঝে মাঝে পুনর্মুদ্রণ হয়, কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া বাংলা একাডেমির বইগুলো পাঠকের কাছে সেভাবে পৌঁছায়ও না। যারা সংগ্রহ করেন তারা জটিলতা পার হয়ে সংগ্রহ করেন। পাঠকই যদি স্বাভাবিকভাবে বই না পায় তাহলে সেই বই প্রকাশের মূল উদ্দেশ্যই তো নষ্ট হয়ে যায়। দিনশেষে সকল বই প্রকাশের উদ্দেশ্য তো পাঠকই। এ সিরিজ প্রসঙ্গে জ্ঞান ও সভ্যতা গ্রন্থমালার সম্পাদক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী লিখেন

বিশেষজ্ঞ লেখকদের অসাধারণ পাচক ছিল এই বইগুলি। সেজন্য এদের অনেকগুলিই আজও পুনর্মুদ্রিত হচ্ছে। কিন্তু সেই অসাধারণ প্রচেষ্টার কোনো ধারাবাহিকতা আমরা এখন আর দেখি না।

ঐ গ্রন্থমালার একাধিক বই পরবর্তীতে ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে– যেমন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘নন্দনতত্ত্ব’, হাসান আজিজুল হকের ‘সক্রেটিস’, জামাল নজরুল ইসলামের ‘কৃষ্ণবিবর’, এ এম হারুন-অর-রশীদের ‘মৌলিক কণা’, মুহম্মদ ইব্রাহীমের ‘বৃষ্টি ও বজ্র’, সেলিনা বাহার জামানের ‘সংখ্যা’, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর ‘অনুবাদ’, কবীর চৌধুরীর ‘অ্যাবসার্ড নাটক’, শরিফ হারুনের ‘অস্তিত্ববাদ’ ইত্যাদি গ্রন্থগুলো উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু এখনকার এই একুশ শতকের নতুন নতুন চিন্তার চ্যালেঞ্জ নেবার মতো কল্পনাপ্রসারী গ্রন্থ কোথায়? কে বলবে বিনির্মাণ কাকে বলে, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ কীভাবে ধরা যায়, টাকার অর্থনীতি কীভাবে খেলা করে, বিশ্বায়ন আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কি পরস্পর সম্পর্কিত? কে বোঝাবে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব কীভাবে ধরা যায়, মস্তিষ্কে স্বপ্ন ও কল্পনা কীভাবে খেলা করে, ভাষা কীভাবে সৃষ্টি হয়, অ-ইউক্লিডিয় জ্যামিতি কেন গুরুত্বপূর্ণ, আন্তর্জাতিক বাজার আর মুদ্রা তহবিল কীভাবে কাজ করে? এসব একুশ শতকীয় প্রশ্নের মুখোমুখি করবার লেখকই বা কই, গ্রন্থই বা কই?

এমন মুহূর্তে বাংলা ভাষায় ভালো মানের একটি সংক্ষেপ কিন্তু সার্বিক আলোচনার গ্রন্থ সিরিজ থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর জরুরি হয়ে পড়েছে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের আধুনিক শাখায় পারদর্শী কিছু লেখক। দীর্ঘদিন ধরে অভাবের এই দিকটা শূন্যই ছিল। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের দিকে ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী ও ফিরোজ আহমেদের উদ্যোগে ‘জ্ঞান ও সভ্যতা গ্রন্থমালা’ নামে একটি সিরিজের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এ সিরিজের উদ্দেশ্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধারণ শাখাগুলোর পাশাপাশি আধুনিক দিকগুলোকেও তুলে আনা।

জ্ঞান ও সভ্যতা সিরিজের কিছু বই; বইগুলোর প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা

কলেবর খুব বেশি হবে না, ৮০ থেকে ৯০ পৃষ্ঠার মাঝেই শেষ হয়ে যাবে আলোচনা। এই কলেবরে কোনো একটি বিষয়ে গভীর চুলচেরা বিশ্লেষণ সম্ভব না হলেও অন্তত সন্তোষজনক একটি ধারণা পাওয়া যাবে। সিরিজের বইয়ের ভাষার উপস্থাপনাও হবে পাঠকবান্ধব। খুব রাশভারী আলোচনা হবে না, বইয়ের শুরুটা হবে হালকা চালের এবং ধীরে ধীরে সামনের দিকে বিষয় প্রবেশ করে গভীর থেকে গভীরে। ১৮ থেকে ২৪ বছরের পাঠকদের কথা মাথায় রেখে যেরকম ভাষায় উপস্থাপনা করা প্রয়োজন সেরকমই হবে বইয়ের ভাষা

গত তিন বছরে বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে এর অধীনে। বর্তমানে কয়েকটি বই প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। বইগুলোর লেখকেরা জ্ঞান বিজ্ঞানের দস্তুর গবেষক, শিক্ষক কিংবা তুখোড় ছাত্র। বইয়ের বিষয়বস্তুও চমৎকার। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত কয়েকটি বইয়ের নাম দেখলেই বোঝা যাবে- ১) প্রাচীন মেলুহা: সিন্ধু সভ্যতার ইতিবৃত্ত ২) মস্তিষ্ক, ঘুম ও স্বপ্ন ৩) প্রত্নচর্চায় বাংলাদেশ ৪) কণাজগৎ ও মহাজগৎ ৫) ডার্ক ম্যাটার ৬) প্রাচীন বিজ্ঞান ৭) বঙ্গীয় ব-দ্বীপের অতীত ও ভবিষ্যৎ।

এখানে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইগুলোর প্রচ্ছদ ও বইগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

১. প্রাচীন মেলুহা

লেখক: ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

বইটি সম্বন্ধে বইয়ের লেখক বলছেন,

“প্রাচীন সিন্ধু নিয়ে আলোচনা আমাদের দেশে ইদানীংকালে দেখেছি বলে মনে হয় না। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত কুশ দাশগুপ্তের সিরিজ বা সেরকম কিছু বই আমাদের বাল্যকালে ছিল। কিন্তু এখন এমন বই আর দেখা যায় না। যা দেখা যায় তা একদম শিশুদের জন্য। এ শূন্যস্থান পূরণ করতেই এই বইটির প্রয়াস। সিন্ধুর কথা লিখতে গিয়ে ইরফান হবিব, শিরিন রত্নাগর, রামশরণ, দীলিপ চক্রবর্তী প্রমুখকেই আদর্শ ধরেছি। কাজেই বইয়ের মেটেরিয়াল খুব স্ট্যান্ডার্ড মেটেরিয়াল। তবে সিন্ধু সভ্যতার অবসান নিয়ে হালের জলবায়ু বিজ্ঞানীরা কিছু নতুন কথা বলেছেন। সেসব যোগ করেছি, ফলে বইটি ইতিহাসের হলেও সেখানে সামান্য বিজ্ঞানও থাকছে।”

২. মস্তিষ্ক, ঘুম ও স্বপ্ন

লেখক: আরাফাত রহমান

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিজ্ঞান লেখক আরাফাত রহমান দীর্ঘদিন ধরে লিখেছেন বিজ্ঞান ব্লগ ও মাসিক বিজ্ঞান সাময়িকী জিরো টু ইনফিনিটিতে। ঘুম আর স্বপ্ন মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ডের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বপ্ন-ঘুম-মস্তিষ্ক এ তিনটিই পরস্পরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটিকে আলোচনা করতে গেলে আরেকটি লাগে।

লেখক শুধু স্বপ্ন নিয়ে কিছু একটা লিখতে চেয়েছিলেন। পরে খেয়াল করলেন, স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করতে হলে ঘুমের ক্রিয়াকৌশল আলোচনা করা লাগে। ঘুম নিয়ে আলোচনা করতে হলে মস্তিষ্কের অলিগলি আলোচনা করা লাগে। আবার ঘুমের অবাস্তব ঘটনা (স্বপ্ন) আলোচনা করতে গেলে বাস্তব ঘটনা (চোখের দেখা) আলোচনা করা দরকার। তাই লেখক প্রথমেই সব পরিস্কার করে নিয়েছেন, যাতে পাঠক গোটা ব্যাপারটা নিয়েই একটা ভালো ধারণা পান।

৩. প্রত্নচর্চায় বাংলাদেশ

লেখক: আদনান আরিফ সালিম

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী এবং সাধারণ উৎসুক পাঠককে প্রাথমিকভাবে প্রত্নতত্ত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক চর্চার ইতিবৃত্ত এবং প্রাচীনত্ব অনুযায়ী প্রত্নস্থানগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও স্থান পেয়েছে এ গ্রন্থে। লেখক আদনান আরিফ সালিম নিজেও প্রত্নতত্ত্বের ছাত্র ও গবেষক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে গবেষণায় যুক্ত আছেন।

৪. কণাজগৎ ও মহাজগৎ

লেখক: মল্লিকা ধর

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

মহাবিশ্ব এবং মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র কণিকাদের নিয়ে এই বই। লেখক মল্লিকা ধর পশ্চিম বাংলার নাগরিক। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণারত। তিনি সেখানকার ইস্ট টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক। জগতের অতি ক্ষুদ্র মৌলিক কণাদের নিয়ে কাজ করা তার শখ। ক্ষুদ্র কণাদের নিয়ে গবেষণা করে তিনি খুঁজে পান স্বপ্নীল আনন্দ। এ স্বপ্নিলতারই ছোট্ট একটি স্ফুরণ হলো এই বই।

৫. ডার্ক ম্যাটার

লেখক: ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

মহাবিশ্বের একটা বড় একটা অংশ আমরা দেখতেই পাই না। এমনকি শনাক্তও করতে পারি না। তাদের অস্তিত্ব যে আছে, এটাই শুধু জানতে পারি। আঙ্গুলের নখের মধ্যে দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে চলে যাচ্ছে ১ লক্ষ ডার্ক ম্যাটারের কণা, অথচ আমরা কিছুই টের পাই না। তাহলে এরা কারা, এদের কীভাবে ধরা যায়, কেমন তাদের প্রকৃতি? আধুনিক কসমোলজির এক দারুণ চ্যালেঞ্জ এই ডার্ক ম্যাটার খুঁজে বের করা এবং তাদের প্রকৃতি অনুসন্ধান করা। ডার্ক ম্যাটারের এসব বিষয় নিয়েই এই বই।

৬. বঙ্গীয় বদ্বীপের অতীত ও ভবিষ্যৎ

লেখক: দীপেন ভট্টাচার্য

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষক দীপেন ভট্টাচার্য। অনেক গবেষণা করে বইটি লিখেছেন। গুরুত্বের বিচারে জ্ঞান ও সভ্যতা সিরিজের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই এটি।

বাংলাদেশের অবস্থান অন্যান্য দশটি দেশের চেয়ে ব্যতিক্রম। নদী বিধৌত ও পলি নির্মিত এর ভূ-ভাগ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বদ্বীপ এই বাংলাদেশের নির্মিতি শুরু হলো কবে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে ঝুঁকিপূর্ণ এই দ্বীপের ভবিষ্যৎ কী হবে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এর আলোচনা। মাটি কেন লাল হয়, মাটি কেন কালচে, বাংলাদেশ কেন দেবে যাচ্ছে পলির গঠনগত কারণে, আবার কীভাবে বিপুল পরিমাণ নতুন পলি এসে একে জাগিয়েও রাখছে, হাজার হাজার বছর ধরে আস্ত এই ব-দ্বীপটা কীভাবে গড়ে উঠলো, এর নদীগুলো কীভাবে বারবার খাত বদলে আমাদের চেনা ভূখণ্ডটার চেহারা প্রদান করলো, সুন্দরবনের মতো আশ্চর্য একটি বিস্ময় কীভাবে জীবন্ত হলো, এমনই অজস্র প্রশ্নের উত্তর মিলবে বইটিতে।

৭. প্রাচীন বিজ্ঞান

লেখক: খান রুহুল রুবেল

প্রকাশক: প্রকৃতি পরিচয়

প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা

মানব সভ্যতার উন্মেষকাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানের যে অভিযাত্রা, প্রাচীন সভ্যতা পর্যন্ত এসেছে তা নিয়ে এই বইয়ের আলোচনা। এখানে আলোচিত হয়েছে, বিজ্ঞানের সূচনা, প্রথম অভিযাত্রা, মিশর, ব্যাবিলন, প্রাচীন ভারত, প্রাচীন চীন ও অন্ধকার বিরামকালের সূচনা পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও প্রচেষ্টার ইতিহাস। প্রাচীন বিজ্ঞান সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী নবীন পাঠকদের জন্য উপযুক্ত এই বইটি।

জ্ঞান ও সভ্যতা গ্রন্থমালা শত শত সৃজনশীল বিষয়ে ভালো ভালো মানের বই প্রকাশ করে যাক এটাই প্রত্যাশা। তাদের প্রকাশনা যেন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতেই থাকে এবং পাঠকের কাছেও জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে এমন কামনা রইলো।

এবারের বইমেলায় প্রকৃতি পরিচয় প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাবে বইগুলো। স্টল নাম্বার ১১৭ (সোহরাওয়ার্দি উদ্যান)। পরিবেশক সংহতি প্রকাশনী থেকেও বইগুলো সংগ্রহ করা যাবে। সংহতি প্রকাশনীর স্টল নাম্বার ৫৯৬-৫৯৭।

ফিচার ছবি- বুকস্ট্রিট

Related Articles

Exit mobile version