নোম চমস্কির সাথে আলাপচারিতায় আন্দ্রে ভিচেক। দুজনের কথোপকথনে উঠে এসেছে পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদের অজানা ইতিহাস। বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের অজানা এক অধ্যায়কে তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ের পাতায়।
ইউরোপ থেকে আফ্রিকা, এশিয়া থেকে আমেরিকা- সবখানেই একই চিত্র। রাষ্ট্র নামক ক্ষমতার ছায়াতলে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারে মগ্ন রাজারা। ঠুনকো ক্ষমতার কাছে লক্ষ-কোটি মানুষের জীবন বড্ড অসহায়। কঙ্গো থেকে সুদান সবখানে মারা যাচ্ছে অসহায় মানুষ। ইরাক থেকে ইরান সবখানে একই চিত্র।
ক্ষমতাধর ইউরোপের হাতে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের এই ইতিহাস লেখা নেই ইতিহাসের পাতায়। দু’মলাটের ভেতর এসব ইতিহাস লিখতে সাহস করেনি কেউ কখনও। কিন্তু নোম চমস্কি ও আন্দ্রে ভিচেক, দুজন মানুষ ঘুরে বেড়িয়েছেন মেরু থেকে মরু। আর সংগ্রহ করেছেন সেসব তথ্য, যার ইতিহাস মানুষের অজানা।
হিরোশিমা থেকে ড্রোনযুদ্ধ কোন সময়ের ইতিহাসকে নির্দেশ করে?
‘হিরোশিমা থেকে ড্রোনযুদ্ধ‘ শিরোনামটি হয়তো পরিষ্কারভাবে একটি সময়কে নির্দেশ করছে। কিন্তু পাঠকের এটা বোঝা জরুরি যে, হিরোশিমা থেকে ড্রোনযুদ্ধ কেবল একটি সময়ের দুটি ঘটনাকে নির্দেশ করে না। বরং পৃথিবীর ইতিহাসে পশ্চিমা আগ্রাসনের চরিত্রের বদল এবং তাদের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে উঠেছে সেই কথাও উল্লেখ করে। এই বইয়ের মধ্যে পাওয়া যাবে কীভাবে পশ্চিম শক্তি তার কৌশল পাল্টাচ্ছে, কীভাবে কর্পোরেট স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য গণতান্ত্রিক শক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে সেই ইতিহাস। অর্থাৎ শুধুমাত্র সময়কাল হিসেবে ধরে নিয়ে এই বই পাঠ করাটা যুক্তিযুক্ত হবে না। বরং সাম্রাজ্যবাদের চরিত্রের যে অদল বদল ঘটেছে গত শতাব্দীতে, সেই সময়ের গোটা ইতিহাস বর্ণনা করে এই বইটি।
সন্ত্রাসবাদের যে ইতিহাস আমরা জানি সেটা কি আদৌ সত্য?
ঘটনা কিংবা ইতিহাস উঠে আসে মিডিয়ার কল্যাণে। প্রতিদিন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঘটে অজস্র ঘটনা, মিডিয়ার মাধ্যমে সেসব আমাদের জানা। কিন্তু মিডিয়া কি সবসময় নিরপেক্ষ তথ্য প্রচার করে? অনেক সময়ই মূল ঘটনা থেকে যায় অধরা, মিডিয়ায় চলে কারসাজি। মিডিয়া চায় টিআরপি আর রাষ্ট্র চায় ধামাচাপা ইতিহাস।
পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করুন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রোপাগান্ডা, চীনের ভূমি দখল, ভারতে ইংরেজ শাসন, মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্ত, লাতিন আমেরিকা কিংবা আফ্রিকার গণহত্যা! শতাব্দী ধরে চলে এসেছে এসব আগ্রাসন আর গণহত্যা। কিন্তু কোথায় সেসব তথ্য? এসব ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে পশ্চিমা মিডিয়া এবং তাদের অব্যর্থ কৌশলগুলো। এই বইয়ের পাতায় উঠে এসেছে সন্ত্রাসবাদ এবং মিডিয়ার কারসাজি। তাই তো মিডিয়ার এমন কারসাজি দেখে বলতেই হয়, আমরা যা জানি তা কি আদৌ সত্য? আর এই সত্য-মিথ্যার ইতি টেনে মোদ্দা ঘটনাগুলো উঠে এসেছে এই বইটির বর্ণনায়।
লক্ষ নাকি কোটি মানুষ বলি হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার জেরে? আসল সংখ্যাটি কত?
পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে চলেছে অজস্র গণহত্যা। গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র কত শত মানুষকে যে হত্যা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। সংখ্যাটা পাঁচ কিংবা দশ কোটির বেশি হতে পারে। শুধুমাত্র কঙ্গোতেই তো কোটি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এত এত হত্যা, কিন্তু সেই ইতিহাস লেখা নেই কোনো বইয়ের পাতায়। মিডিয়াগুলো শাক দিয়ে মাছ ঢেকেছে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধিতে।
কিন্তু অনুসন্ধানী পাঠকসমাজের মনের খোরাক জুগিয়েছেন একজন সত্যকথক। বিশ্বব্যাপি চষে বেড়িয়েছেন আর সন্ধান করেছেন সেসব গণহত্যা আর সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস। পৃথিবীর কোন প্রান্তে কত মানুষের হত্যা হয়েছে সেই তথ্যের জরিপ মিলেছে এই বইয়ের পাতায়। দুজনের কথোপকথনে উঠে এসেছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ঘটা রাষ্ট্রীয় গণহত্যার বর্ণনা। রাষ্ট্র কখনো জনগণ চায়নি, চেয়েছে একখণ্ড স্বাধীন ভূখন্ড, যেখানে বসবাস করবে শুধুমাত্র রাষ্ট্রের ইচ্ছার অধীনে চলা মানুষ।
কাদের পরিশ্রমের ফসল এই বই?
একবিংশ শতাব্দীর একজন সত্যকথক হলেন অধ্যাপক চমস্কি, যিনি পক্ষপাতহীনভাবে সত্য ইতিহাসকে বলে চলেছেন অর্ধ শতক ধরে। আন্দ্রে ভিচেক অন্যতম আরেকজন বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিক, যিনি গণমানুষের গণহত্যার ইতিহাস খুঁজতে ছুটে বেড়িয়েছেন মরু থেকে মেরু।
প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এই দুজন মানুষ ভ্রমণ করেছেন সব ক’টি মহাদেশ এবং পর্যবেক্ষণ করেছেন সেখানকার রাজনীতি, অর্থনীতি, যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক সম্পর্কগুলোকে। তাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে পৃথিবীর খুনে ইতিহাস। পৃথিবীর এই খুনে ইতিহাস লেখা নেই ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু চমস্কি এবং ভিচেক সেসব ইতিহাস জানিয়েছেন এই বইয়ের মাধ্যমে, যে ইতিহাস পাঠ আমাদের ভাবায়! মনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায় যে, আধুনিক সভ্যতা কি আসলেই মানবিক নাকি মানবিকতা একটি পোশাক মাত্র! শিক্ষা এবং মনুষ্যত্ব কি সেই পোশাকের অলঙ্কার? তবে এটা জেনে রাখা ভাল যে, এটি কোনো প্রথাগত ইতিহাস নয়। বরং ইতিহাসের সাক্ষী এবং খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করা দুজন মানুষের বর্ণনা এই বইটি।
একজন পাঠক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া
বিশ্বরাজনীতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ নিয়ে পড়তে বসেছিলাম বইখানা। কিন্তু থমকে যাই যখন দেখি আমাদের হাত রক্তে রাঙা! আমরা শুধুমাত্র রক্তের স্রোতধারার উপর বেড়ে অঠা এক মানুষ্য প্রজাতি। বিশ্বের অজানা এসব ইতিহাস জানার পর মানুষের এই সভ্যতার ইতিহাসকে কখনো সভ্য বলতে পারবো কি না তা নিয়ে আমি সত্যিই সন্দিহান! যারা পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে খুব একটা জানেন না তাদের জন্য এই বইটি একটি প্রাথমিক পাঠ। একটি সভ্য ও মানবিক সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে পরিণত করে তুলবার জন্য এই বইটি হয়ে উঠতে পারে একটি স্কুলিঙ্গ। পশ্চিমা সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরির ক্ষেত্রে তরুণ পাঠকদের চিন্তার খোরাক মেটাতে পারে এই বইটি।
বিশ্বের অজানা ইতিহাস পাঠে আপনাকে স্বাগতম!
অনলাইনে বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিঙ্কে: